সুখে থেকো
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বেকার অসীমের জীবনে ভালোবাসার পরিনতি বিয়ে পর্যন্ত গড়ালোনা ! কুড়িতেই তা ঝরে গেলো । বিয়ে হয়ে গেলো তার প্রেমিকা বনানীর । বনানী তার প্রেমিককে অনেক বুঝিয়েছিলো -আজ না হোক কাল সে তো চাকরী পাবেই ;সে অপেক্ষায় থাকবে । কিণ্তু চাকরীর বাজারের আকালের কারনে কবে সে চাকরী পাবে সেই কারনে বনানীর জন্য আসা এতো সুন্দর সম্মন্ধ সে ভেঙ্গে দিতে পারেনি ; পারেনি তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সাথে বনানীর জীবনকে বেঁধে রাখতে । আপ্রান চেষ্টায় নিজের চোখের জলকে বাঁধ দিয়ে বনানীর চোখের জল নিজ হাতে মুছিয়ে বলেছিলো ,"ভাগ্যকে কেউ খন্ডন করতে পারেনা ! তোমার জীবনে এতো সুখ লেখা রয়েছে , তুমি কেনো আমার মত বেকার , গরীব এক মানুষের জীবনের সাথে নিজেকে জড়াবে ? আমাকে ভুলে যেও এ কথা আমি বলবোনা তবে ভুলে থাকার চেষ্টা কোরো ।"
সময়ের সাথে সাথে দিন , মাস , বছর গড়িয়ে গেছে । বনানীর সাথে অসীম আর কোনোই যোগাযোগ রাখেনি । অসীম ভেবেছে সংসার জীবনে বনানী তার কথা আস্তে আস্তে ভুলে যাবে বা স্মৃতির পাতায় একটা আস্তরণ পড়বে যা বনানীকে সামনের দিনগুলিতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে । বনানীর বিয়ের তিন বছর পরে অসীম এক সরকারী হাসপাতালে আউটডোর ডিপার্টমেন্টে ক্লারিক্যাল পদে ছোট একটি চাকরী পায় । মাইনে সামান্য হলেও ভরসা একটিই সেটি সরকারী চাকরী ।
হাসপাতালের বহিঃবিভাগে টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন । একে একে রোগীরা আসছেন নাম , বয়স , ঠিকানা ডিপার্টমেন্ট লিখে টিকিট অসীম রোগীর হাতে দিয়ে দিচ্ছে । হঠাৎ একটি মেয়ের গলা ও নাম শুনেই অসীম মেয়েটির দিকে তাকায় । সেকি ভুল দেখছে ? বনানী না ? হ্যাঁ বনানীই তো ! গাইনী ডিপার্টমেন্টে দেখাতে এসছে । কিণ্তু এ কি চেহারা হয়েছে বনানীর ? বনানী আমার সাথে কথা বললনা কেনো ? নাকি ভুলেই গেছে !
বনানীর টিকিটের ঠিকানা ছিলো ওর বাপের বাড়ির । সন্ধ্যাতেই অসীম হাজির হলো সেখানে । হাসপাতালে একটা রঙ্গীন শাড়ি পড়ে গেলেও বাড়িতে এসে বনানী একটা সাদা ছাপা শাড়ি পড়েছে যা অসীমের নজর এড়ায়না ।
অসীম বনানীর মায়ের কাছ থেকে যা জানতে পারলো তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায় -তিন মাসের সন্তান পেটে থাকতে তার জামাই অরূপ স্ট্রোকে মারা যায় । শ্বশুর, শ্বাশুড়ী বনানীর ছিলোনা । পৈতৃক ব্যবসাতেই অরূপ ও তার ভাই নিয়োজিত । অরূপের মৃত্যুর দু'মাসের মধ্যে চরিত্রের বদনাম দিয়ে তারা বনানীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় । কিণ্তু সেই থেকেই বনানী চুপচাপ হয়ে যায় । প্রয়োজন না হলে সে কারও সাথেই কথা বলেনা ।
অসীমকে বনানীর মা আগে থাকতেই চিনতেন । আর এটাও জানতেন অসীম তার বনানীকে পছন্দ করে । কিণ্তু বেকার ছেলের সাথে তো আর মেয়ের বিয়ে দিতে পারেননা ;তাই জেনেশুনেও মুখ বন্ধ রেখেছিলেন । এখন ঘটনা জানানোর সময় কিছুটা ক্ষীণ আশা নিয়েই অসীমকে প্রাণ খুলে বনানীর বিবাহিত জীবনের তিন বছরের সব কথা খুলে বলেন । আর তার যে এই ক্ষীণ আশা যে অমূলক ছিলোনা সেটা তিনি সাতদিনের মধ্যেই টের পেয়েছিলেন ।
বনানী , অসীম , তাদের তিন বছরের ছেলে আর দু'বছরের মেয়েকে নিয়ে আজ ভরা সুখের সংসার ।
শেষ
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী