Thursday, November 30, 2017

নুতন সকালের অপেক্ষায়
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

একটা সুন্দর সকালের অপেক্ষায় বসে,
যে সকাল বলবে, আমরা সবাই মানুষ;
থাকবেনা কোন জাতিভেদ ;
এনে দেবে প্রত্যেক ক্ষুদার্তের জন্য অন্ন ;
অসুস্থ্য মানুষের চিকিৎসার সুব্যবস্থা, 
ঘরে ঘরে বেকারের মুখে ফুটবে হাসি,
যে যার যোগ্যতা অনুসারে পাবে চাকরী,
যেখানে থাকবেনা কোন কোটাসংরক্ষণ! 
ভয়ার্ত অন্ধকার, জীবন থেকে চলে যেয়ে,
নূতন সূর্যের মত সব হাসবে;
চারিদিকে বিরাজ করবে সাম্যবাদ আর শান্তি,
পারবে কি এমন একটা সকাল দিতে ?

@ নন্দা

Saturday, November 25, 2017

তুমি নেই
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

স্মৃতিগুলি এখনো কাঁদায়,
বিকেল হলেই মন খারাপ,
একা থাকতেই ভালোলাগে,
হৃদয়েই হয় আলাপ!
নিশুতি রাত ঘুমহীন চোখ,
মনেহয় আছো পাশে,
দগদগে ঘা প্রলেপ দিতে -
একটুখানি পরশ !
তাতেই খুশি আমি,
নিদ্রায় এলিয়ে পড়ি,
ঘুমের মাঝেও তুমি,
শুধু বাস্তবে অস্তিত্বহীন! 

@ নন্দা                            মানবী


Wednesday, November 22, 2017

একটু ভেবো
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমি সেই মেয়ে -
ভ্রুণেই হত্যা করতে চেয়েছিলো পরিবার ,
তিনমাসের অন্তসত্ত্বা মা অত্যাচার সইতে না পেরে-
রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলো ,
এক ভ্যানচালক তাকে আশ্রয় দিয়েছিলো
তার বস্তির বেড়ার ঘরেই আমার জম্ম !
মা লোকের বাড়ি কাজ করে আমায় মানুষ করার চেষ্টা করেছেন ।
ভ্যানচালক দাদুও আমার জন্য অনেক করেছেন ,
ঈশ্বর আমার সবকিছু কেড়ে নিলেও -
সাথে জিদটা দিয়েছিলেন একটু বেশী !

আজ আমি ডাক্তার -
আমর অপারেশান টেবিলে যে পুরুষ শায়িত -
মায়ের লুকিয়ে রাখা বাক্সে তার ছবি আমি দেখেছি ,  প্রাণভিক্ষা চাইছে !
আমি নাকি তার কাছে ভগবান !
ঈশ্বর কি অপরাধে তাকে আমার মত একটি মেয়ে দিলেন না !
এটাই তার আক্ষেপ !
ঘরে ঘরে আমার মত কন্যা কেনো থাকেনা -
 তিনি বারবার  ঈশ্বরের কাছে জানতে চান ! !

@ নন্দা
অশ্রু দিয়ে লেখা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অতীতের কিছু কিছু কথা ,
হয়ে যায় কখনো কবিতা ,
বেদনার অশ্রু ঝরে পরে ,
রূপ নেয় ভাষাক্ষরে ,
কলমের কালি দিয়ে নয় ,
এ লেখা অশ্রু দিয়ে হয় ।
বারবার ফিরি অতীতে আমি ,
নুড়ি , পাথর কুড়িয়ে আনি ,
ছিলে অতীতে সঙ্গে আমার !
বর্তমানে খুলে রাখি দ্বার !

@নন্দা   22-11-17 

Tuesday, November 21, 2017


তবু মনে রেখো
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

জীবনের দীপ নিবু নিবু প্রায় ,
পৌঁছে গেছি বুঝি  তীরে ,
হিসাবের খাতা ভুলে ভরা শুধু ,
মিলাতে পারিনি আমি যে তারে !

হয়তো জীবনে চেয়েছি যা -
পাইনি তারই কিছু ;
যা পেয়েছি- চাওয়া থেকে বেশি ,
ফিরে গেছি তবু বারে বার পিছু |

অভিনয় তাই সাঙ্গ হল প্রায় ,
চলে যেতে শুধু চাই -
আমি চলে গেলে হিসাবের খাতা ,
আমারই সাথে পুঁড়ে  হবে ছাঁই ।

আমার অপরাধ ভুলে যেও সব ,
কিছু মনে রেখো না ,
যদি কিছু করে থাকি তোমাদের জন্য ,
আমার নামটি কিন্তু ভুলো না |

নন্দা   2.12.17   6-30 PM.
সুখে থেকো

    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

           বেকার অসীমের জীবনে ভালোবাসার পরিনতি বিয়ে পর্যন্ত গড়ালোনা ! কুড়িতেই তা ঝরে গেলো । বিয়ে হয়ে গেলো তার প্রেমিকা বনানীর । বনানী তার প্রেমিককে অনেক বুঝিয়েছিলো -আজ না হোক কাল সে তো চাকরী পাবেই ;সে অপেক্ষায় থাকবে । কিণ্তু চাকরীর বাজারের আকালের কারনে কবে সে চাকরী পাবে সেই কারনে বনানীর জন্য আসা এতো সুন্দর সম্মন্ধ সে ভেঙ্গে দিতে পারেনি ; পারেনি তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সাথে বনানীর জীবনকে বেঁধে রাখতে । আপ্রান চেষ্টায় নিজের চোখের জলকে বাঁধ দিয়ে বনানীর চোখের জল নিজ হাতে মুছিয়ে বলেছিলো ,"ভাগ্যকে কেউ খন্ডন করতে পারেনা ! তোমার জীবনে এতো সুখ লেখা রয়েছে , তুমি কেনো আমার মত বেকার , গরীব এক মানুষের জীবনের সাথে নিজেকে জড়াবে ? আমাকে ভুলে যেও এ কথা আমি বলবোনা তবে ভুলে থাকার চেষ্টা কোরো ।"

                সময়ের সাথে সাথে দিন , মাস , বছর গড়িয়ে গেছে । বনানীর সাথে অসীম আর কোনোই যোগাযোগ রাখেনি । অসীম ভেবেছে সংসার জীবনে বনানী তার কথা আস্তে আস্তে ভুলে যাবে বা স্মৃতির পাতায় একটা আস্তরণ পড়বে যা বনানীকে সামনের দিনগুলিতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে । বনানীর বিয়ের তিন বছর পরে অসীম এক সরকারী হাসপাতালে আউটডোর ডিপার্টমেন্টে ক্লারিক্যাল পদে ছোট একটি চাকরী পায় । মাইনে সামান্য হলেও ভরসা একটিই সেটি সরকারী চাকরী ।

               হাসপাতালের বহিঃবিভাগে টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন । একে একে রোগীরা আসছেন নাম , বয়স , ঠিকানা ডিপার্টমেন্ট লিখে টিকিট অসীম রোগীর হাতে দিয়ে দিচ্ছে । হঠাৎ একটি মেয়ের গলা ও নাম শুনেই অসীম মেয়েটির দিকে তাকায় । সেকি ভুল দেখছে ? বনানী না ? হ্যাঁ বনানীই তো ! গাইনী ডিপার্টমেন্টে দেখাতে এসছে । কিণ্তু এ কি চেহারা হয়েছে বনানীর ? বনানী আমার সাথে কথা বললনা কেনো ? নাকি ভুলেই গেছে !

              বনানীর টিকিটের ঠিকানা ছিলো ওর বাপের বাড়ির । সন্ধ্যাতেই অসীম হাজির হলো সেখানে । হাসপাতালে একটা রঙ্গীন শাড়ি পড়ে গেলেও বাড়িতে এসে বনানী একটা সাদা ছাপা শাড়ি পড়েছে যা অসীমের নজর এড়ায়না ।

              অসীম বনানীর মায়ের কাছ থেকে যা জানতে পারলো তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায় -তিন মাসের সন্তান পেটে থাকতে তার জামাই অরূপ স্ট্রোকে মারা যায় । শ্বশুর,  শ্বাশুড়ী বনানীর ছিলোনা । পৈতৃক ব্যবসাতেই অরূপ ও তার ভাই নিয়োজিত । অরূপের মৃত্যুর দু'মাসের মধ্যে চরিত্রের বদনাম দিয়ে তারা বনানীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় । কিণ্তু সেই থেকেই বনানী চুপচাপ হয়ে যায় । প্রয়োজন না হলে সে কারও সাথেই কথা বলেনা ।

             অসীমকে বনানীর মা আগে থাকতেই চিনতেন । আর এটাও জানতেন অসীম তার বনানীকে পছন্দ করে ।  কিণ্তু বেকার ছেলের সাথে তো আর মেয়ের বিয়ে দিতে পারেননা ;তাই জেনেশুনেও মুখ বন্ধ রেখেছিলেন । এখন ঘটনা জানানোর সময় কিছুটা ক্ষীণ আশা নিয়েই অসীমকে প্রাণ খুলে বনানীর বিবাহিত জীবনের তিন বছরের সব কথা খুলে বলেন । আর তার যে এই ক্ষীণ আশা যে অমূলক ছিলোনা সেটা তিনি সাতদিনের মধ্যেই টের পেয়েছিলেন ।

           বনানী , অসীম , তাদের তিন বছরের ছেলে আর দু'বছরের মেয়েকে নিয়ে আজ ভরা সুখের সংসার ।

                    শেষ

নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

Sunday, November 19, 2017

ভাগ্যকে মানতেই হয়
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

                     (1)

         পাঁচ ব্যাটারীর টর্চের আলোতে পুলিশ ইন্সপেক্টর বাইরের গেট , ঘরের বাইরে কোলাপ্সীবেল গেট ও সর্বশেষে ঘরে ঢোকার দরজার তালা একের পর এক ভাঙ্গার পরে চারজন পুলিশ কর্মীকে নিয়ে দোতলার বিশাল ড্রয়িংরুমের ভিতর এসে দাঁড়ালেন ।  অন্ধকার ঘরের লাইটের সুইচ পেতে তাদের বিশেষ বেগ পেতে হলোনা কারন পাঁচ ব্যাটারীর দু'দুটি টর্চ তাদের সাথে ছিলো । সন্ধ্যা তখন প্রায় হয় হয় । পাড়ার জনৈক ব্যক্তির ফোনে তাদের এখানে আসা ।  জনৈক ব্যক্তি পুলিসকে জানান,  বাংলোসম বিশাল দোতলা বাড়ি থেকে  কয়েকদিন ধরেই পঁচা দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ! ঘরের ভিতর ঢুকেই প্রত্যেকেই নাকে রুমাল চাপা দেন । অগ্রহায়ণের শীতের সন্ধ্যা ;বেশ জাঁকিয়ে ঠান্ডাও পড়েছে ।  সকাল থেকেই কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়েছে প্রকৃতি । এই ঠান্ডার মাঝেও ওই বাড়ির বাইরে পুরুষ ও মহিলা গিজগিজ করছে ।  সকলের ভিতরই একটি চাপা ফিসফিসানি !  এখানে তো পারমান্যান্টলি কেউ থাকেনা ;মাঝে মাঝে রাতের দিকে লাইট জ্বলতে দেখা যায় !  কিণ্তু সেভাবে কাউকে কোনদিনও দেখা যায়নি ।  চারিদিকে উঁচু প্রাচীরে ঘেরা ।  সামনে অনেকটা জায়গা জুড়ে ফুলের বাগান ।  মাঝে মাঝে এক বৃদ্ধকে ওই বাড়িতে দেখা যায় বটে কিণ্তু সে নিজেকে ওই ফুল বাগানের মালি বলেই পরিচয় দেয় । বাড়ির বাইরেও বিশাল পুলিশ বাহিনী দাঁড়িয়ে ;যাতে করে কোন পাড়ার লোক ভিতরে ঢুকতে সাহস না পায় ।

                ইন্সপেক্টর উত্তম মজুমদার ও তার সহকর্মীরা ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে বিভৎস দৃশ্য দেখে কয়েক সেকেন্ড কেউই কথা বলতে পারেননি । সারাঘর রক্তে ভেসে গেছে যদিও সেই রক্ত এখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে । মধ্য বয়স্ক দুই ভদ্রলোক -একজন সোফার কাছে আর একজন বাথরুমের দরজার কাছে পরে আছেন । দুজনকেই ছুরিকাঘাত করে মারা হয়েছে । ঘরের মধ্যে ইতস্তত মদের বোতল , গ্লাস , নানান ধরনের খাবার দাবার ছড়ানো ছিটানো । বোঝায় যাচ্ছে মৃত দুই ব্যক্তির সাথে আরও এক বা একাধিক লোক ছিলো । যে বা যারা বচসার জেড়ে এদের দু'জনকে খুন করে সকলের অলক্ষ্যে এই বাড়ি থেকে ধীর স্থির ভাবেই বেরিয়ে গেছে ।  সমস্ত ঘর সার্চ করে সন্ধেহজনক কিছুই চোখে পরেনা কারও । বডি দুটিকে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে বাড়িটা সিল করে ইন্সপেক্টর তার দলবল নিয়ে থানার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ।

                      (2)

                ছোটবেলা থেকেই চন্দন পড়াশুনায় খুব ভালো । প্রতি বছরই সে প্রথম হয়ে উপরের ক্লাসে ওঠে । স্কুলের শিক্ষকেরা প্রত্যেকেই চন্দন সম্পর্কে উচ্চ ধারনা পোষণ করেন ও তার উজ্জ্বল ভবিষৎ চোখের সম্মুখে দেখতে পান । মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সে 90% নম্বর নিয়ে পাশ করে বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয় । কিণ্তু উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সে রেলের চাকরীর পরীক্ষা দিয়ে রেলে চাকরী পেলেও তার বাবা তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হতে বলেন ।  বাধ্য চন্দন বাবার ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয় । ফলে তার জীবনে স্বইচ্ছায় লক্ষ্মী এসে ধরা দিলেও ভাগ্যের পরিহাসে তাকে তা খোয়াতে হোলো । তিন ভাই বোনের বড় চন্দন ।  বড় ছেলের উজ্জ্বল ভবিষৎ বাবাও কল্পনা করেছিলেন । ছোট ছেলে ও মেজ মেয়েটি পড়াশুনায় ছিলো মোটামুটি । হুগলির প্রত্যন্ত গ্রামে সামান্য যা কিছু জমিজমা ছিলো তিনি সকলের অজান্তেই ছোট ছেলের নামে উইল করে রাখেন ।  তার ধারনা অনুযায়ী চন্দন পাশ করে বেরিয়েই চাকরী পাবে আর তখন সে গ্রামে থাকবেও না ;নিজেরটা নিজে চালিয়ে নিতে পারবে ।  তাই অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছোট ছেলেকেই তিনি তার সম্পত্তির পুরোটা লিখে দেন । যেহেতু সরকারী খরচে চন্দন  পড়াশুনা করতো তাই তাকে নিয়ে তার বাবার কোন চিন্তা ছিলোনা । টুকটাক হাত খরচ সে টিউশনি করেই জোগাড় করতো ।  চন্দনের ইঞ্জিনিয়ারিং এ যখন তৃতীয়বর্ষ তখন তার বোন চারুলতার বেশ অবস্থাপন্ন ঘরেই বিবাহ হয়ে যায় ।  চন্দনের স্কুল শিক্ষক বাবা মেয়ের বিয়ের ঠিক এক বছরের মধ্যেই মারা যান । চন্দন ভালভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পাশ করে চাকরীর জন্য হন্যে হয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে লাগলো ।  কিণ্তু কোথায় চাকরী ? চাকরীর চাবীতো সব নেতাদের হাতে ! সরকারী থেকে বেসরকারী ! গ্রামের ছেলে চন্দনের তো কিছু ভালো সর্টিফিকেট ছাড়া আর কিছুই নেই । তাই চাকরীও তার মেলেনা । সাথে আলোচনা করে ঠিক করে ভায়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেই গ্রামের জমিজমা বিক্রি করে তারা কলকাতায় ছোটখাটো একটা ভাড়া বাড়িতে এসে উঠবে । ভাইকে কলকাতার কলেজেই ভর্তি করবে ;নিত্য সে প্রাইভেট কোম্পানীগুলিতে চাকরীর চেষ্টা করার সাথে সাথে কিছু টিউশনি করতেও পারবে । মাকে দিয়ে বাড়ির দলিল বের করিয়ে উইল দেখে সে হতভম্ব ! বাবা তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন !  কিণ্তু কেনো ?  কি তার অপরাধ ছিলো ? বাবা কেনো এটা করলেন ?

                  ভয়ানক অভিমান থেকে চন্দন পরদিন সকালেই মা , ভাইকে কিচ্ছুটি না জানিয়েই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে ।  সে কলকাতা শহরে নানান জায়গায় চাকরীর চেষ্টা করতে লাগে । বলা বাহুল্য তার এই মনের ইচ্ছা পূরণ হয়না । একদিন রাতের আঁধারে স্টেশনে নিজের অজান্তেই একটি খুনের স্বাক্ষী থেকে যায় ।  খুনীদের  সেটা নজর এড়ায় না ।  চন্দনকেও তারা মেরে ফেলতে যায় । চন্দনের কাকুতি মিনতিতে দয়াপরোবশ হয়ে তারা চন্দনের চোখ বেঁধে তাদের বসের কাছে নিয়ে যায় । চন্দনের কাছে তাদের পারিবারিক ঘটনা জেনে ও তার কোন পিছুটান নেই শুনে তিনি বস তাদের দলে ওকে ভিড়িয়ে নেন ; নাহলে খুনের ঘটনার স্বাক্ষী থাকার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড !
চন্দন আস্তে আস্তে হয়ে উঠে কুখ্যাত ডাকাত শমশের খান ।

                          (3)

          ক'দিন আগেই বেলেঘাটার জনবহুল এলাকায় ব্যাঙ্ক ডাকাতির সূত্র ধরে প্রশাসন জানতে পারেন সেদিনের বিলাসবহুল ওই বাড়ির দুই ব্যক্তির খুনের সাথে ব্যাঙ্ক ডাকাতির সংযোগ রয়েছে । ব্যাঙ্কের গোপন সি.সি.ভি. টিভির মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে যে দুই ব্যক্তি খুন হয়েছেন তারা ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতির তিন মূল মাথার দুই মাথা । মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা থাকলেও দুঁদে পুলিশ অফিসারদের মৃত দুই  ব্যক্তির মুখের সাথে তাদের মিল খুঁজে পেতে একটুও অসুবিধা হয়না  ! সাথে আর যে তিন চারজন ছিলো তাদের খুঁজতে খুঁজতেই প্রসাশনের কালঘাম ছুটে যায় ।


                  (4)

          কর্তব্যনিষ্ঠ পুলিশ অফিসার তার সমস্ত রকম সোর্স কাজে লাগিয়ে জানতে পারেন ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতির সাথে কুখ্যাত সমাজ বিরোধী শমসের খানের যোগসাজোগের কথা ।  সেদিন ব্যাঙ্ক ডাকাতির পর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রাসাদোপম ওই বাঙ্গলো বাড়িতে যার মালিক আমেরিকায় থাকেন ;বাড়িটি দেখভালের জন্য ওই মৃত এক ব্যক্তির নিকট  বাড়ির চাবী ন্যস্ত থাকে । সমস্ত খবরাখবর নিয়ে বিশেষ সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে এস্প্লানেডের নামকরা বার থেকে শমসের খানকে গ্রেপ্তার করতে যেয়ে হতভম্ব হয়ে যান ! এ কাকে দেখছেন তিনি ? শমসের খান নামে পরিচিত কুখ্যাত সমাজ বিরোধী , খুন , রাহাজানি , ব্যাঙ্ক ডাকাতি , প্রশাষনের সন্ত্রাস , ধনীব্যক্তির রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মূল ব্যক্তি -একদা মেধাবী ছাত্র , সকলের প্রিয় , ইঞ্জিনিয়রিং এ ফাস্ট ক্লাস পাওয়া তার দাদা চন্দন মজুমদার ? সামান্য অভিমান থেকে দাদার আজ এই চরম পরিনতি ? কিণ্তু কেন ?  কি কারনে দাদা এই অন্ধকার পথ বেছে নিলো ?  তবে কি বেকারত্বের জ্বালা ? কিণ্তু কিছুই জিগ্গাসা করতে সে পারলোনা ! পুলিশকে অ্যারেস্ট করার অর্ডার দিয়ে দাদার চোখ ভর্তি জলের দিক থেকে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলেন যাতে তার নিজের চোখের জল তার অতি প্রিয় দাদার চোখে ধরা পরে না যায় । তিনি ভালোভাবেই জানেন শমসের খান বা তার দাদার কি চরম শাস্তি হতে পারে । দু'জনের মনেই নানান প্রশ্ন !  কিণ্তু জিগ্গাসা করার অধিকার আজ আর কারও নেই কারন একজন আইনের রক্ষক আর একজন আইনের ভক্ষক !

গাড়ি ছুটলো থানার উদ্দেশ্য ।


নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

Friday, November 17, 2017

পরিবর্তন
        নন্দা  মুখার্জী রায় চৌধুরী

চারিপাশের বাতাস আজ দুষিত ,
নিশ্বাসে বিষ ঢোকে শরীরে -
ধর্ষিতার আত্মচিৎকার , পঁচাগলা লাশের গন্ধ -
ছোপ ছোপ রক্তের দাগ ,
মাটিতে পা দেওয়ায় দায় !
মর্গে মৃত শরীর রাখার জায়গা নেই ,
সেখানেও চলছে রাজার নীতি !
চলছে কন্যাভ্রূণ হত্যা !
বাকী জম্মের পরে অত্যাচারিতা হয়ে মৃত্যুবরণ !
সুন্দর পৃথিবীর মানুষগুলো যেন -
মানুষরুপী কিছু নরপশু !
স্বার্থের তাগিদে সবাই অন্ধ !

জীবনের মূল্য যে সব থেকে বেশী !

 @ নন্দা   17-11-17

Thursday, November 16, 2017

আমার মিনতি
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমি চাতক হয়ে মেঘের কাছে ,
চাই একটু জল -
আমি চাঁদের কাছে আপন হয়ে ,
হাসবো অনর্গল !
আমি মেঘের কাছে দু'হাত জুড়ে ,
একটু রোদ চাই -
হৃদয় মাঝের জমানো ক্ষত  ,
রোদেই  শুকাই   !
কালবৈশাখী ঝড়ের কাছে -
মিনতি করে বলি ,
ফিরিয়ে দে  স্বপ্নগুলো ,
নুতন ভাবে চলি !

নন্দা   16-11-17 

Wednesday, November 15, 2017

শিউলি ফুটেছে শিশিরের ছোঁয়ায় ,
গাছের ডালে পাখির কূজন ,
পথের দিকে তাঁকিয়ে আছি -
সুপ্রভাত-বলবে কখন সুজন !
শুভ সকাল বন্ধুরা
@নন্দা 

Sunday, November 12, 2017

সকালবেলা সূর্য্য উঠে ,
বলছে আমায় হেসে ,
আমার মতই জেগে ওঠ ,
জীবন কাটা হাওয়ায় ভেসে  ।
সকালবেলা মধুর থাকি ,
দুপুরবেলা রাগী -
সন্ধ্যা হলে নেতিয়ে পড়ি ,
পশ্চিমেতে ভাগি !
                             শুভ সকাল বন্ধুরা 
অর্থহীন জীবন
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

জীবন সীমানার খুব কাছে ,
তবুও মায়া কাটাতে পারিনা ,
ব্যথার চাদর গায়ে জড়ানো ,
যেতে চাই তার কাছে !
ছোট্ট হাতগুলি আঁচল ধরে টানে -
মায়ায় জড়ানো এই সংসার ,
প্রতিটা কোণায় কোণায় স্মৃতি !
অনুভবে থাকে সাথে সাথে -
ছুঁতে মন চায় অবিরত !
অভিমানে দূরে সরে যায়
বন্ধ চোখের সামনে  অনুভব করি !
চোখ খুললেই হারিয়ে যায় !
ভাবনায় মন থাকে উদাসীন -
বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন মনেহয় !

@ নন্দা  26-10-17

Friday, November 10, 2017

কেন হলো
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তুমি চলে গেছো অনেকদিন ,
তোমার লাগানো শিউলীগাছে ,
আগের মতই ফুল ফোটে ,
যে ফুল সকাল হলেই -
দু 'হাত ভরে তুলে আনতে আমার জন্য ।
তোমার সাধের ছাদের বাগান ,
খাদ্যের অভাবে আজ মৃতপ্রায় !
কোন গাছই আজ আর হাসেনা ;
সবাই তোমার শোকে পাথর ।
ছেলের ফেলে দেওয়া খাতাগুলির -
সাদাপাতা কেউ আর যত্নকরে -
আমার কবিতা লেখার জন্য ছিড়ে রাখেনা -
পাতাগুলি বিবর্ণ হয়ে কেজি দরে বিক্রি হয়ে যায় -
লিখতে লিখতে কলমের কালি শেষ হলে-
আশ্চর্য প্রদীপের মত আর একটা সামনে পাইনা,
টেবিলের উপর সবকিছু ছড়িয়ে থাকে -
সেগুলো গুছানো আর দেখতে পাইনা !
কাজের শেষে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লে ,
শিয়রে এসে কেউ আর বসেনা -
"শরীর খারাপ লাগছে ? ওষুধগুলি খেয়েছো-"
কেউ আর জানতে চায়না -

জীবনের চলার পথটা হঠাৎ করেই থমকে গেলো !

@নন্দা     10th নভেম্বর 17

Wednesday, November 8, 2017

ভালো কথাগুলিই ভাবি
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

    বিয়ের পর বারটা বছর কেটে গেলেও অতসী ও সুনীলের সংসার আলো করে কোন সন্তান না আসায় তারা শেষ পর্যন্ত একটা পুত্রসন্তান দত্তক নেয় ।প্রাইভেট কোম্পানীর চাকরী সুনীল বেশ মোটা অঙ্কের টাকা মাস গেলে হাতে পায় ।

            অতসীর হাতে ছিলো এক সময় প্রচুর সময় ।এখন সে রাতে ঘুমানোর সময়টুকুও পায়না ।ছোট্ট নীল সারাটারাত কাঁদে ।মাঝে মাঝেই তাকে ফিডিং বোতলে পাতলা দুধ করে খাওয়াতে হয় ।দুধের শিশু ,তিনমাস মাত্র বয়স ।যদিও ডক্টর বলেছেন , রাত দশটার পর কৌটার দুধ আর দেবেননা ; কিণ্তু কি করবে অতসী ?তার আদরের নীল খিদেতে যে কাঁদতেই থাকে ।সব সময় ফ্লাক্সে জল ফোটানোই থাকে ।ঘড়ি ধরে কুড়ি মিনিট করে ফিডিংবোতল ,চামচ ,বাটি ফুটতে থাকে  ।আবার জলও ঠিক তাই ।

         সকালে সুনীলের অফিস থাকে ।নীল যেদিন সারারাত কাঁদে সেদিন জোর করে অতসী সুনীলকে অন্যঘরে ঘুমাতে পাঠায় । অনিচ্ছা সর্ত্বেও সুনীল যেতে বাধ্য হয় । আস্তে আস্তে দিন গড়িয়ে যেতে থাকে । নীল যেদিন প্রথম মা বলে অতসীকে ডাকে -অতসী সেদিন আনন্দে আত্মহারা ! সুনীল অফিস থেকে ফিরবার সাথে সাথেই দরজা খুলেই তার এই খুশির খবরটা দেয় । সুনীলও খুব খুশি হয় । সে হাত ,মুখ ধুয়েই নীলকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলে ,"কিরে আমায় কবে বাবা বলে ডাকবি?" অতসী তার ছেলের দিকে তাঁকিয়ে বলে ,"দেখলি তো নীল তোর বাবা কত হিংসুটে !"

        নীলের ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে সারা ঘরময় দৌড়ত্ব , মাঝে মাঝে কোন জিনিস ভেঙ্গে ফেলা -দিনগুলি যেন ঝড়ের গতিতে শেষ হয়ে গেলো । মাধ্যমিক ,উচ্চমাধমিক , গ্রাজুয়েশান কমপ্লিট করেই নীল এস.এস.সি. তে বসে ব্যাঙ্কে চাকরী পেয়ে যায় । ঠিক তার দুমাসের মাথায় সুনীল স্ট্রোকে মারা যান ! এ সময় অফিস ছাড়া যেটুকু সময় নীল বাড়িতে থাকতো সে তার মায়ের কাছে কাছেই থাকতো ।

       এখন অতসীর বয়স প্রায় সত্তর বছর ।চোখে খুব একটা ভালো দেখেননা, কানেও কম শোনেন । বৃদ্ধাশ্রমের অনেকের মধ্যে তিনিও একজন ! নীলের বিয়ের কয়েকমাস যেতে না যেতেই অতসীর অনেক দোষত্রুটির কথা নীলের কানে উঠতে উঠতে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে নীল তার মাকে আর সহ্যই করতে পারতোনা । অধিকাংশ সময়ই অতসী চুপ করেই থাকতেন । কিণ্তু এক হাতেও যে তালি বাজানো সম্ভব নীল এবং তার বৌ সেটা প্রমাণ করেই ছাড়লো । স্বইচ্ছাই অতসী তাদের বাড়িটি লিখে দেন , কারন তার মনে হয়েছিলো বাড়িটি লিখে দিলে হয়তো অশান্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন । কিণ্তু তার ধারনা ভুল প্রমাণ করে ছেলে, বৌ তার ঠিকানা করে  দিলো বৃদ্ধাশ্রম ।

         অতসী কোন আপত্তিই করেননি । আর করলেও বা শুনতো কে ? অতসী শেষ জীবনে একটু স্বস্তি চেয়েছিলেন ;জীবনের  প্রথম থেকে ভাবলে তার সবকিছুই কেমন গুলিয়ে যায় ! মাঝে মাঝে মনের কোণে উঁকি দেয় একটি প্রশ্ন -নীলের গর্ভধারিণী হলেও কি নীল তার সাথে এইরূপ আচরণ করতে পারতো ? পরক্ষণেই ভাবেন হয়তো এর থেকেও খারাপ কিছু হতে পারতো ! মনকে প্রবোধ দেন এই বলে আর ক'টা দিনই বা বাঁচবো ? একসময় এই নীলকে বুকে জড়িয়েই তো অনেক সুখের সময় কেটেছে । সেগুলি তো মিথ্যা ছিলোনা ।আজকের কথাগুলি না ভেবে সেগুলিই ভাবি আর সেগুলি ভাবতে ভাবতেই জীবনের বাকী দিনগুলি কাটিয়ে দিই ।

@নন্দা   1-11-17 
ভিন্নতা
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

পথেঘাটে, অলিগলিতে শয়েশয়ে লোক চলে ,
কেউ কারও মনের খবর রাখেনা ,
রোগশোকে, দুঃখে কাতর -
কারও খুশির মাত্রা ছাড়িয়ে যায় সীমানা ,
রাতের আঁধারে শুধু টাকার ফোয়ারা !
অভাবের তাড়নায় নারী তার সুখ বিক্রি করে ,
কেউ ফেরে অট্টালিকায় ,কেউ কুঁড়েঘরে,
কারও ঠিকানা ফুটপাথ বা স্টেশনে -
রাতদিনের খাবারে কারও টেবিল ভর্তি ,
কেউ খায় শুকনো রুটি ,
কারওবা তাও জোঠেনা !
দিনরাত ক্ষিদের যন্ত্রনা, জলই একমাএ সম্বল ,
সৃষ্টির একই রূপ !
সৃষ্টিতে নেই ভেদাভেদ !
শুধু জম্মের পরেই ধনি দরিদ্রতার ভিন্ন রূপ !

এই ভিন্নতাকেই মানুষ দেয় কপালের দোহাই !
নাকি পূর্ব জম্মের ফল !!
পূর্বজম্ম বলে সত্যিই কি কিছু আছে ?

***নন্দা*** 6-11-17 

Saturday, November 4, 2017

জারজ সন্তান কেনো বলে
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তোর ভালোবাসার অর্থ আমি খুঁজে পেলাম না,
কিণ্তু শরীরের প্রতিটা ভাঁজে স্মৃতিচিন্হ একে দিয়েছিস !
তোর ক্ষুদা মেটাতে আমার শরীরটাকে নিয়ে খেলেছিস !
কয়েক মাস পরে আমি হবো কুমারী মা !
আমার গর্ভে তিলতিল করে বড় হচ্ছে তোর সন্তান ,
তোর স্বীকারোক্তি নেই বলে-
সমাজের চোখে কেনো সে জারজ হবে বলতে পারিস ?
আমি তো জানি কে তার পিতা ,
সমাজ কি তাকে খেতে পড়তে দেবে ?
কিণ্তু কথা শুনাতে সমাজ ছাড়বেনা !
সমাজের কাছে যথেষ্ট নয় কি ও আমার ভালোবাসার ফসল !
পুরুষটির স্বীকারোক্তিই সব ?
নারীর কষ্ট ,নারীর ভালোবাসার কোনই মূল্য নেই সমাজের কাছে ?
একজন পুরুষ ব্যতীত একজন নারী মা হতে পারেনা ,
পুরুষটি যদি হয় ধোয়া তুলসীপাতা -
নারী কেনো তবে নষ্টামেয়ে ?
সমাজ কেনো ভাবেনা কে তাকে নষ্ট করলো ?
আর ওই সন্তান ?
শুধু পুরুষটি স্বীকার করলোনা বলেই সে জারজ !
মানিনা আমি এই সমাজ কে -
যে সমাজ শুধু নারীর দোষ দেখে পুরুষের নয় !

@নন্দা 31-10-17
কে দেবে উত্তর
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

গুণীর কদর আজ আর নেই ,
উপকৃত না হলে তোলে বদনামের ঢেউ !

গাছের ফুল ভালবাসে সবাই ,
গন্ধ না থাকলে সে ফুলের কদরও নেই !

সম্পর্কগুলি ততক্ষণই সুন্দর -
যতক্ষণ অর্থ আর চাহিদা মাথা চাড়া না দেয় !

আঘাত সইতে সইতে মানুষ পাথর হয় ,
তারপরও আঘাত পেলে সে কি কষ্ট পায়না ?

@নন্দা