পরজন্মে মিলন নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী শীতের অমাবশ্যার রাত | বেশ জাঁকিয়ে ঠান্ডাও পড়েছে | অফিসের শেষে একটা মিটিং সেরে ফিরতে বাড়িতে একটু দেরিই হয় রীতার | বড় রাস্তার থেকে বাড়ি মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ | বাস থেকে নেমে চাদরটাকে ভালো করে গায়ে জড়িয়ে রীতা হনহন করে শুনশান রাস্তা দিয়ে বাড়ির দিকে এগোতে শুরু করে | হঠাৎ তার মনেহয় কেউ যেন তার পিছন পিছন আসছে | ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে - কৈ কেউ নাতো ! আবার হাঁটা শুরু করে | "হ্যাঁ -ঠিকই তো ! কেউ যেন পিছন পিছন আসছে "| এবার একটু ভয়ই পেয়ে যায় রীতা | পিছন দিকে তাঁকাতে আর তার সাহস হয়না | সে প্রায় ছুটতে ছুটতেই বাড়িতে এসে পৌঁছায় |মা চাবি হাতেই জানলা খুলে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন |রীতাকে দেখতে পেয়েই তিনি গ্রীল দেওয়া বারান্দার তালা খুলে দিলেন | রীতা হাঁফাতে হাঁফাতে ঘরে ঢুকেই ঢগঢগ করে এক গ্লাস জল খেয়ে নেয় | মা তাকে জিজ্ঞেস করেন ,"কিরে কি হয়েছে তোর ?ভয় পেয়েছিস নাকি ?" "কই নাতো !হঠাৎ তোমার ভয় পেয়েছি বলে মনে হলো কেন ?" "আরে তুই তো রীতিমতো কাঁপছিস !" রীতা হেসে পরে বলে ," মা - আমি কি তোমার সেই ছোট্ট রীতা আছি নাকি ? যে এখনো ভয় পাবো ?" এরপর রীতা প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যায় | মা ,মেয়ে একসাথে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন | রীতার বাবা নেই ; বছর পাঁচেক হলো মারা গেছেন | রীতা আর তার মা | বাবার মৃত্যুর বছর দুয়েকের মধ্যেই রীতা ম্যানেজমেন্টে বেশ উচ্চপদে চাকরী পেয়ে যায় | তারই সহকর্মী দিলীপের সাথে তার একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে |কয়েকদিনের মধ্যেই দুজনেই বুঝতে পারে তারা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছে | মাকে রীতা সব কথায় বলে |দিলীপের কথাও সে মাকে এসে জানায় | মা সব শুনে দিলীপকে দেখতে চান | রীতা সে কথা তাকে জানালে সে ছুটির দিন দেখে মাসিমার সাথে দেখা করে যায় | এরই মাঝে দিলীপকে অফিসের কাজে কানাডা যেতে হয় | রীতার সাথে কথা হয় ,কানাডা থেকে ফিরে তারা বিয়েটা সারবে | দিলীপ কানাডা যাওয়ার সময়ই রীতাকে বলে যায় - অফিসের কাজে যেহেতু সে ব্যস্ত থাকবে ফোনটোন আর এই দশদিনে সে করবেনা ,মাত্র দশদিন দেখতে দেখতে কেটে যাবে ; ফিরে এসেই কথা হবে | রীতাও তাতে সায় দেয় | পরেরদিন অফিস ছুটির পর সে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামতে যায় ,হঠাৎ তার পা পিছলে যায় | কিন্তু তার মনে হলো কেউ যেন তার হাত টেনে ধরে তার পড়ে যাওয়াটাকে আটকালো | পিছন ফিরে দেখে একদম তার কাছে এক ভদ্রলোকও নামছেন | রীতা তাকে বলে ,"থ্যাক্স" | ভদ্রলোক একটু হক্চকিয়ে যান | তিনি জানতে চান ,"কেন বলুন তো ?" " বারে আমি পরে যাচ্ছিলাম ,আপনি তো আমাকে পরে যাওয়া থেকে আটকালেন |" " কই নাতো ! আমি তো দেখতেই পাইনি আপনি পরে যাচ্ছিলেন |" রীতা অবাক হয়ে ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাঁকালো | ভদ্রলোকও তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেলেন | রীতা ভাবতে থাকে কি হচ্ছে তার সাথে এসব ?কোনোদিনও ভুত ,প্রেত বিশ্বাসী ছিলোনা | কিন্তু তার সাথে যা সব ঘটছে তা বিশ্বাস না করেও কোনো উপায় সে দেখতে পারছেনা | কেউ তাকে সর্বক্ষণ নজরে রেখেছে |সেটা তার ক্ষতি করবার জন্য নয় |তাকে ভালোবাসে বলেই | 'ভালোবাসা -' কথাটা মনে হতেই দিলীপের মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে | আর মাত্র তিনদিন পরেই দিলীপ ফিরছে |নানান কথা ভাবতে ভাবতে সে বাড়িতে পৌঁছে এই দুদিনের ঘটনা এবার তার মাকে খুলে বলে |তিনিও কথাগুলি শুনে খুব অবাক হন | তারপর তিনি মেয়েকে সাহস দিয়ে বলেন ,"ছেড়ে দে মা, এসব নিয়ে ভাবিসনা | যেই করুকনা কেন , সেতো তোর কোনো ক্ষতি করছেনা |" কিন্তু না, একটা ভয় আর একটা মস্তবর আশঙ্খায় বুকটা রীতার কেঁপে ওঠে | সে ঠিক করে পরদিন অফিসে যেয়ে বসকে দিয়ে যে ভাবেই হোক দিলীপের খবর নেবে | পরেরদিন সে একটু তাড়াতাড়িই অফিসে পৌঁছায় | বস অফিসে ঢোকার সাথে সাথেই রীতা তাঁর রুমে প্রবেশ করে | রীতা এই দ্বিতীয়বার বসের মুখোমুখি হয় | নির্মাল্যবাবু বয়স্ক মানুষ | নিপাট ভদ্রলোক | দিলীপ ও রীতার ঘটনাটা তিনি জানতেন | রীতা তাঁর রুমে ঢোকার সাথে সাথেই তিনি বলেন ,"বলুন মিস মজুমদার ,এই আমিও আজ ভাবতে ভাবতেই আসছিলাম -দিলীপবাবুর সাথে অফিসিয়ালি একটু যোগাযোগ করে কাজটা কতদূর এগোলো জানতে চাইবো | পরশুই তো ফিরছেন উনি | নাকি আপনার অন্য কোনো কথা আছে ?" রীতা সলজ্জ হেসে বলে,"না স্যার এটা জানার জন্যই এসেছি |" "একটু বসুন আমি দেখছি |" নির্মাল্যবাবু তাঁর ল্যাপটপ খুলে মিনিট দশ বাদে সেটিকে রীতার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন | "কি স্যার ?" "আপনি এটা দেখুন |" রীতা লেপ্টপটাকে নিজের দিকে আরও একটু ঘুরিয়ে নিয়ে যা দেখলো তাতে তার আশংখায় সত্যি হলো | দিলীপ গতকাল কানাডার অফিসের কাজ সব শেষ করে ফেরার পথে লিফটে ভিড় থাকার দরুন সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো | আচমকা পরে যেয়ে মাথায় আঘাত পায় |সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় কিন্তু ইন্টারন্যাল হেমারেজ ! মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে গতকাল রাতেই তিনি মারা যান | তার যদি ভারতে পাঠানোর সমস্ত ব্যবস্থা তাদের অফিস করছে |
রীতার অজানা আশংখা সত্যি বলে প্রমাণিত হলো | সারাজীবন ধরে সে যে দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলো ; মৃত্যুর পরেও সে সেই দায়িত্ব থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটেনি ! তাকে যে দিলীপই অলৌকিকভাবে রক্ষা করে চলেছে এটা বুঝতে রীতার একটুও কষ্ট হলোনা | রীতা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো | খুব একটা ভালো দেখতেও পারছেনা | বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার যেন চোখের কোল বেয়ে বয়ে চলেছে | " স্যার আমি আজ ছুটি নিচ্ছি " - "আপনি বসুন ,আমার ড্রাইভার আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসছে |" সঙ্গে সঙ্গেই রীতা আবার চেয়ারে বসে পড়লো | নির্মাল্যবাবু ফোন করে ড্রাইভারকে সব বুঝিয়ে দিলেন | রীতাকে ধরে নিয়ে যেয়ে ড্রাইভার গাড়িতে বসিয়ে দিলো | গাড়ি ছুটে চললো রীতার বাড়ির উর্দেশ্যে | বড় রাস্তার মোড় থেকে যখন গাড়িটা ভিতরের দিকে ঢুকবে ,ড্রাইভার পিছন ঘুরে রীতার কাছে জানতে চায় ঠিক গলিতে ঢুকছে কিনা | কিন্তু সে দেখে রীতা চোখ বন্ধ করে গাড়ির পিছনের গদিতে হেলান দিয়ে আছে | মনেভাবে ম্যাডাম মনেহয় ঘুমাচ্ছেন | সাহেবের লেখা ঠিকানা দেখে ঠিক বাড়ির সামনে এনে গাড়িটা দাঁড় করায় | গাড়ির দরজা খুলে ম্যাডামকে ডাকতে যেয়ে কোনো সারা না পেয়ে বেল বাজিয়ে রীতার মাকে ডেকে আনে |
ডক্টর এসে জানিয়ে দেয় রিতার ষ্ট্রোকেই মৃত্যু হয়েছে | দিন গড়িয়ে রাত নেমে আসে | এদিকে দিলীপেরও বডি এসে প্রথমে অফিস তারপর বাড়িতে পৌঁছায় | একই চুল্লিতে কিছুটা আগে পরে দুটি দেহ পুড়ে অদৃশ্য হয়ে যায় সকলের জল ভরা চোখের সামনে | কেউ কেউ বলাবলি করতে লাগলো -এ জীবনে তাদের মিলন হলোনা ঠিকই কিন্তু পরজন্ম বলে সত্যিই যদি কিছু থাকে তাদের মিলন হবেই !
নন্দা 3.1.17 8.45PM.
রীতার অজানা আশংখা সত্যি বলে প্রমাণিত হলো | সারাজীবন ধরে সে যে দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলো ; মৃত্যুর পরেও সে সেই দায়িত্ব থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটেনি ! তাকে যে দিলীপই অলৌকিকভাবে রক্ষা করে চলেছে এটা বুঝতে রীতার একটুও কষ্ট হলোনা | রীতা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো | খুব একটা ভালো দেখতেও পারছেনা | বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার যেন চোখের কোল বেয়ে বয়ে চলেছে | " স্যার আমি আজ ছুটি নিচ্ছি " - "আপনি বসুন ,আমার ড্রাইভার আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসছে |" সঙ্গে সঙ্গেই রীতা আবার চেয়ারে বসে পড়লো | নির্মাল্যবাবু ফোন করে ড্রাইভারকে সব বুঝিয়ে দিলেন | রীতাকে ধরে নিয়ে যেয়ে ড্রাইভার গাড়িতে বসিয়ে দিলো | গাড়ি ছুটে চললো রীতার বাড়ির উর্দেশ্যে | বড় রাস্তার মোড় থেকে যখন গাড়িটা ভিতরের দিকে ঢুকবে ,ড্রাইভার পিছন ঘুরে রীতার কাছে জানতে চায় ঠিক গলিতে ঢুকছে কিনা | কিন্তু সে দেখে রীতা চোখ বন্ধ করে গাড়ির পিছনের গদিতে হেলান দিয়ে আছে | মনেভাবে ম্যাডাম মনেহয় ঘুমাচ্ছেন | সাহেবের লেখা ঠিকানা দেখে ঠিক বাড়ির সামনে এনে গাড়িটা দাঁড় করায় | গাড়ির দরজা খুলে ম্যাডামকে ডাকতে যেয়ে কোনো সারা না পেয়ে বেল বাজিয়ে রীতার মাকে ডেকে আনে |
ডক্টর এসে জানিয়ে দেয় রিতার ষ্ট্রোকেই মৃত্যু হয়েছে | দিন গড়িয়ে রাত নেমে আসে | এদিকে দিলীপেরও বডি এসে প্রথমে অফিস তারপর বাড়িতে পৌঁছায় | একই চুল্লিতে কিছুটা আগে পরে দুটি দেহ পুড়ে অদৃশ্য হয়ে যায় সকলের জল ভরা চোখের সামনে | কেউ কেউ বলাবলি করতে লাগলো -এ জীবনে তাদের মিলন হলোনা ঠিকই কিন্তু পরজন্ম বলে সত্যিই যদি কিছু থাকে তাদের মিলন হবেই !
নন্দা 3.1.17 8.45PM.
No comments:
Post a Comment