Tuesday, January 31, 2017

একুশে    ( অনুকবিতা )
                  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বিশ্বে বাঙ্গালী জাতী যত দিন থাকবে ,
একুশে ফেব্রূয়ারীর রক্তবন্যা ,
 ইতিহাসের পাতায় -
স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে -
জাতিভেদ প্রথায় বাঙ্গালী জাতীর ,
পার্বন পালন আলাদা ,
একুশে ফেব্রূয়ারী সকল দেশের -
বাঙ্গালী হয়ে যায় একটাই জাতী ,
সেখানে নেই কোনো বিরোধ ,
নেই কোনো দ্বন্ধ -
"আমরা বাঙ্গালী ,মাতৃ ভাষা বাংলা" |
নন্দা    9.30 পাম  30.1.17

Monday, January 30, 2017

একুশে    (অনুকবিতা )
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
একুশ এলে -
কানে ভেসে আসে ,
মায়ের বুকফাঁটা আত্মনাদ ,
একুশ এলে -
স্মৃতির অলিন্দে ,
বাজে সুর আনন্দে ,
একুশ এলে -
মনেপরে যায় ,
রাজপথে রক্তের প্লাবন ,
একুশ এলে -
অহংকার আর গর্বে ,
ভরে থাকে শুধু মন |
                                  নন্দা  30.1.17    8-30PM.

Friday, January 27, 2017

অসহায়া গর্ভধারিনী
                     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
অনেক আশা ,বহু সাধনার পর ,
এসেছিলি কোলে তুই -
যত্নে করেছি বড় তোকে ,
মানুষ করতে পারিনি রে !
ছোট দু'টি হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ,
থাকতিস আমার বুকে ,
কত বিনিদ্র রাত কেটেছে ,
শুধু তোকে চুমে মুখে |
স্বপ্নের জাল বুনেছি মনেমনে ;
অনেক বড় মানুষ হবি ,
পথেঘাটে লোকে বলবে আমাকে ,
কত বড় মানুষের মা !
গর্বে আমার বুকটি উঠবে ফুলে ,
গুনকীর্তন করবে সকলে তোর ,
আমি সেখান থেকে চলে গেলে |
আমার স্বপ্ন সফল হয়েছে ,
বড় হয়েছিস তুই অনেক !
অনেক হয়েছে বড় গাড়ি বাড়ি ,
ঝি ,চাকরে রয়েছে ছড়াছড়ি |
কয়েক মাস অন্তর পুরনো  আসবাব ,
পাল্টে ফেলিস ঘরে ,
বাড়িতে বহু পার্টি দিস ,
আমায় তালা দিয়ে অন্য ঘরে !
হৈ ,হুল্লোড় ,চিৎকার ,চেঁচামেচি -
সব আসে আমার কানে ,
আমি ফিরে যাই তোর ছেলেবেলায় ,
চোখ দু'টি ভরে থাকে জলে |
হয়তো কোনোদিন ভুলে যাস তোরা -
খুলতে তালা ঘরের ,
না খেয়েই সারারাত কাটে -
ভাবি মনে আমি ,
স্বপ্ন পূরণে কি  এখনো রয়েছে   বাকি ?
সেদিন শুনলাম বৌমার গলা ,
পাঠিয়ে দেবে আমায় অন্যখানে ,
থাকতে দেবে না,আমাকে তার বাড়ি ,
আমায় সে জঞ্জাল মনে করে |
এ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকা ,
ইচ্ছা আমার নেই ,
এখন থেকেই চলে যাবো আমি ,
তোদের কোনো ভয় নেই !
কাগজে লিখেছি ,"স্বইচ্ছায় আমি চলে গেলাম"-
পুলিশ এলে দেখাস কাগজ ,
জঞ্জাল নিজেই সাফ করে দিলাম !
দাদুভাইকে বড় শুধু নয় ,
করিস মানুষ তাকে ,
সন্তানের অবহেলা বাবা,মায়ের যে -
বড়ই বুকে বাজে |
যে কষ্ট আমি পেলাম বুকে ,
তুই বড় হলে বাবা ,
বাবা,মায়ের কাছে এর চেয়ে বড় -
নেই কোনো আর সাজা !
নন্দা   27.1.17 9.15 PM
কেন করলে
                  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
স্বপ্ন যখন  ম্লান হোলো ,
স্মৃতি ধূলার তলে ,
হারিয়ে গেছে সকল আশা ,
ভাঙ্গছে বুক প্রতি পলে ,পলে |
আঁধার হলো চলার পথ ,
নেইতো পাশে কেউ ,
ঝিঁঝিঁ পোকাও যায়না দেখা ,
থামবে না আর জীবন ঢেউ !
কিছুটা পথ হাঁটলে যখন ,
আমার হাতটি ধরে -
কার ইশারায় ছাড়লে এ হাত ?
জীবন নদীর মাঝপারে !
চেয়েছিলাম তোমায় আমি ,
বেসেছিলাম ভালো ,
আমায় ছাড়াই তুমি এবার ,
তোমার জীবন গড়।
নন্দা   ২১.১.১৭  রাত ১-৩০
জীবনের রেললাইন
               নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
জীবনের রেললাইন ধরে -
অনেকটা পথ একা একাই হেঁটেছি ,
কখনো হোঁচট খেয়েছি ,
কখনো বা থমকে গেছি !
হেঁটে চলেছি এক সুদূর গন্তব্যে ,
জানিনা আমি কোনো ঠিকানা ,
কিছু মানুষের সাথে পরিচয় ,
একসাথেই হাঁটা ,ভালোবাসা ,
সুখ ,দুঃখগুলি ভাগ করে নেওয়া ,
হঠাৎ করেই কেউ পৌঁছে গেছে গন্তব্যে !
আঘাত পেয়েছি ,ভালোবাসা পেয়েছি ,
কিন্তু হাঁটছি যেন একা একাই |
কবে থামবে এ হাঁটা আমি জানিনা ,
শুধু এটুকুই জানি -
যেদিন আমি এই পৃথিবীতে থাকবো না -
জীবনের রেললাইনটাও সেখানেই শেষ হবে |
নন্দা  27.1.17  12-5AM.

Monday, January 23, 2017

অন্তরে আছো
                    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
এখনো সাঁঝের আকাশ ,
আবীরে হয় লাল -
এখনো প্রভাতে পাখি গায় গান ;
এখনো আমি সন্ধ্যা হলে -
জানলা দিয়ে সুদীর্ঘ পথ দেখি অবিরাম |
পরদেশী তুমি ,ভুলে গেছো বুঝি ?
তাই ফিরলেনা আর !
কিশোরী মনে দোলা দিয়ে তুমি ,
হলে কেন দেশান্তর ?
জীবন কারও থেমে থাকেনা ,
থামবেনা আমারও জীবন ,
প্রথম ছোঁয়ার পরশ নিয়ে -
মনে রাখবো তোমায় আমরণ |
নন্দা  23.1.17
পরজন্মে মিলন                 নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী                          শীতের অমাবশ্যার রাত | বেশ জাঁকিয়ে ঠান্ডাও পড়েছে | অফিসের শেষে একটা মিটিং সেরে ফিরতে বাড়িতে একটু দেরিই হয় রীতার  | বড় রাস্তার থেকে বাড়ি মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ | বাস থেকে নেমে চাদরটাকে ভালো করে গায়ে জড়িয়ে রীতা হনহন করে শুনশান রাস্তা দিয়ে বাড়ির দিকে এগোতে শুরু করে | হঠাৎ তার মনেহয় কেউ যেন তার পিছন পিছন আসছে | ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে - কৈ কেউ নাতো ! আবার হাঁটা শুরু করে |  "হ্যাঁ -ঠিকই তো ! কেউ যেন পিছন পিছন আসছে "| এবার একটু ভয়ই পেয়ে যায় রীতা | পিছন দিকে তাঁকাতে আর তার সাহস হয়না | সে প্রায় ছুটতে ছুটতেই বাড়িতে এসে পৌঁছায় |মা চাবি হাতেই জানলা খুলে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন |রীতাকে দেখতে পেয়েই তিনি গ্রীল দেওয়া বারান্দার তালা খুলে দিলেন | রীতা হাঁফাতে হাঁফাতে ঘরে ঢুকেই ঢগঢগ করে এক গ্লাস জল খেয়ে নেয় | মা তাকে জিজ্ঞেস করেন ,"কিরে কি হয়েছে তোর ?ভয় পেয়েছিস নাকি ?"  "কই নাতো !হঠাৎ তোমার ভয় পেয়েছি বলে মনে হলো কেন ?"  "আরে তুই তো রীতিমতো কাঁপছিস !"   রীতা হেসে পরে বলে ," মা - আমি কি তোমার সেই ছোট্ট রীতা আছি নাকি ? যে এখনো ভয় পাবো ?" এরপর রীতা প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যায় | মা ,মেয়ে একসাথে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন | রীতার বাবা নেই ; বছর পাঁচেক হলো মারা গেছেন | রীতা আর তার মা | বাবার মৃত্যুর বছর দুয়েকের মধ্যেই রীতা ম্যানেজমেন্টে বেশ উচ্চপদে চাকরী পেয়ে যায় | তারই সহকর্মী দিলীপের সাথে তার একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে |কয়েকদিনের মধ্যেই দুজনেই বুঝতে পারে তারা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছে | মাকে রীতা সব কথায় বলে |দিলীপের কথাও সে মাকে এসে জানায় | মা সব শুনে দিলীপকে দেখতে চান | রীতা সে কথা তাকে জানালে সে ছুটির দিন দেখে মাসিমার সাথে দেখা করে যায় | এরই মাঝে দিলীপকে অফিসের কাজে কানাডা যেতে হয় | রীতার সাথে কথা হয় ,কানাডা থেকে ফিরে তারা বিয়েটা সারবে |            দিলীপ কানাডা যাওয়ার সময়ই রীতাকে বলে যায় - অফিসের কাজে যেহেতু সে ব্যস্ত থাকবে ফোনটোন আর এই দশদিনে সে করবেনা ,মাত্র দশদিন দেখতে দেখতে কেটে যাবে ; ফিরে এসেই কথা হবে | রীতাও তাতে সায় দেয় |   পরেরদিন অফিস ছুটির পর সে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামতে যায় ,হঠাৎ তার পা পিছলে যায় | কিন্তু তার মনে হলো কেউ যেন তার হাত টেনে ধরে তার পড়ে যাওয়াটাকে আটকালো | পিছন ফিরে দেখে একদম তার কাছে এক ভদ্রলোকও নামছেন | রীতা তাকে বলে ,"থ্যাক্স" | ভদ্রলোক একটু হক্চকিয়ে যান | তিনি জানতে চান ,"কেন বলুন তো ?"  " বারে  আমি পরে যাচ্ছিলাম ,আপনি তো আমাকে পরে যাওয়া থেকে আটকালেন |"  " কই নাতো ! আমি তো দেখতেই পাইনি আপনি পরে যাচ্ছিলেন |" রীতা অবাক হয়ে ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাঁকালো | ভদ্রলোকও তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেলেন |      রীতা ভাবতে থাকে কি হচ্ছে তার সাথে এসব ?কোনোদিনও ভুত ,প্রেত বিশ্বাসী ছিলোনা | কিন্তু তার সাথে যা সব ঘটছে তা বিশ্বাস না করেও কোনো উপায় সে দেখতে পারছেনা | কেউ তাকে সর্বক্ষণ নজরে রেখেছে |সেটা তার ক্ষতি করবার জন্য নয়  |তাকে ভালোবাসে বলেই | 'ভালোবাসা -' কথাটা মনে হতেই দিলীপের মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে | আর মাত্র তিনদিন পরেই দিলীপ ফিরছে |নানান কথা ভাবতে ভাবতে সে বাড়িতে পৌঁছে এই দুদিনের  ঘটনা এবার তার মাকে খুলে বলে |তিনিও কথাগুলি শুনে খুব অবাক হন | তারপর তিনি মেয়েকে সাহস দিয়ে বলেন ,"ছেড়ে দে মা,  এসব নিয়ে ভাবিসনা | যেই করুকনা কেন , সেতো তোর কোনো ক্ষতি করছেনা |"                            কিন্তু না,  একটা ভয় আর একটা মস্তবর আশঙ্খায় বুকটা  রীতার কেঁপে ওঠে | সে ঠিক করে পরদিন অফিসে যেয়ে বসকে দিয়ে যে ভাবেই হোক দিলীপের খবর নেবে | পরেরদিন সে একটু তাড়াতাড়িই অফিসে পৌঁছায় | বস অফিসে ঢোকার সাথে সাথেই রীতা তাঁর রুমে প্রবেশ করে | রীতা এই দ্বিতীয়বার বসের মুখোমুখি হয় | নির্মাল্যবাবু বয়স্ক মানুষ | নিপাট ভদ্রলোক | দিলীপ ও রীতার ঘটনাটা তিনি জানতেন | রীতা তাঁর রুমে ঢোকার সাথে সাথেই তিনি বলেন ,"বলুন মিস মজুমদার ,এই আমিও আজ ভাবতে ভাবতেই আসছিলাম -দিলীপবাবুর সাথে অফিসিয়ালি একটু যোগাযোগ করে কাজটা কতদূর এগোলো জানতে চাইবো | পরশুই তো ফিরছেন উনি | নাকি আপনার অন্য কোনো কথা আছে ?" রীতা সলজ্জ হেসে বলে,"না স্যার এটা জানার জন্যই এসেছি |" "একটু বসুন আমি দেখছি |" নির্মাল্যবাবু তাঁর ল্যাপটপ খুলে মিনিট দশ বাদে সেটিকে রীতার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন | "কি স্যার ?"  "আপনি এটা দেখুন |" রীতা লেপ্টপটাকে নিজের দিকে আরও একটু ঘুরিয়ে নিয়ে যা দেখলো তাতে তার আশংখায় সত্যি হলো | দিলীপ গতকাল কানাডার অফিসের কাজ সব শেষ করে ফেরার পথে লিফটে ভিড় থাকার দরুন সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো | আচমকা পরে যেয়ে মাথায় আঘাত পায় |সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় কিন্তু ইন্টারন্যাল হেমারেজ ! মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে গতকাল রাতেই তিনি মারা যান | তার যদি ভারতে পাঠানোর সমস্ত  ব্যবস্থা তাদের অফিস করছে |
রীতার অজানা আশংখা সত্যি বলে প্রমাণিত হলো | সারাজীবন ধরে সে যে দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলো ; মৃত্যুর পরেও সে সেই দায়িত্ব থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটেনি ! তাকে যে দিলীপই অলৌকিকভাবে রক্ষা করে চলেছে এটা বুঝতে রীতার একটুও কষ্ট হলোনা | রীতা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো | খুব একটা ভালো দেখতেও পারছেনা | বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার যেন চোখের কোল বেয়ে বয়ে চলেছে | " স্যার আমি আজ ছুটি নিচ্ছি " - "আপনি বসুন ,আমার ড্রাইভার আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসছে |" সঙ্গে সঙ্গেই রীতা আবার চেয়ারে বসে পড়লো | নির্মাল্যবাবু ফোন করে ড্রাইভারকে সব বুঝিয়ে দিলেন | রীতাকে ধরে নিয়ে যেয়ে ড্রাইভার গাড়িতে বসিয়ে দিলো | গাড়ি ছুটে চললো রীতার বাড়ির উর্দেশ্যে | বড় রাস্তার মোড় থেকে যখন গাড়িটা ভিতরের দিকে ঢুকবে ,ড্রাইভার পিছন ঘুরে রীতার কাছে জানতে চায় ঠিক গলিতে ঢুকছে কিনা | কিন্তু সে দেখে রীতা চোখ বন্ধ করে গাড়ির পিছনের গদিতে হেলান দিয়ে আছে | মনেভাবে ম্যাডাম মনেহয় ঘুমাচ্ছেন | সাহেবের লেখা ঠিকানা দেখে ঠিক বাড়ির সামনে এনে গাড়িটা দাঁড় করায় | গাড়ির দরজা খুলে  ম্যাডামকে ডাকতে যেয়ে কোনো সারা না পেয়ে বেল বাজিয়ে রীতার মাকে ডেকে আনে |

ডক্টর এসে জানিয়ে দেয় রিতার ষ্ট্রোকেই মৃত্যু হয়েছে | দিন গড়িয়ে রাত নেমে আসে | এদিকে দিলীপেরও বডি এসে প্রথমে অফিস তারপর বাড়িতে পৌঁছায় | একই চুল্লিতে কিছুটা আগে পরে দুটি দেহ পুড়ে অদৃশ্য হয়ে যায় সকলের জল ভরা চোখের সামনে | কেউ কেউ বলাবলি করতে লাগলো -এ জীবনে তাদের মিলন হলোনা ঠিকই কিন্তু পরজন্ম বলে সত্যিই যদি কিছু থাকে তাদের মিলন হবেই !

নন্দা    3.1.17  8.45PM.

Sunday, January 22, 2017

সব হারিয়েও কিছু পাওয়া       
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 
 মাত্র কয়েকদিনের আলাপেই কবিতা ভালোবেসে ফেলে অভিষেককে | কিন্তু কিছুতেই একথা অভিষেককে বলতে পারেনা | কবিতা জানে অভিষেকের উপরেই সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব | মা ,একদিদি ও একবোন | বাবা মারা গেছেন অনেকদিন আগেই | চাকরী সে ভালোই করে | কবিতার মনেহয় অভিষেকও তার প্রতি দুর্বল | কিন্তু সেও কবিতাকে কখনোই ধরা দেয়না |   কবিতার মা ,বাবা আর সে | নুতন ভাড়া এসেছে অভিষেকদের বাড়ির কাছেই | অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই দুটি পরিবারের মধ্যেই বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে কবিতা মনে মনে অভিষেককে নিয়ে স্বপ্নের বীজ বুনতে লাগে | হয়তবা অভিষেকও | কিন্তু কর্তব্যের পাহাড় মাথায় চেঁপে থাকায় তার দিক থেকে কোনো সারা কবিতা পায় না | কিন্তু সেও ধর্য্য ধরে অপেক্ষাতেই থাকে |
  বেশ চলছিল দিনগুলি | কিন্তু সব কিছুই যেন গোলমাল পাকিয়ে যায় 1971 সালের 25শে মার্চ অধিক রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন | দেশের এই চরম বিপর্যয়ের দিনে অসংখ্য মানুষের সাথে কবিতারও পশ্চিমবঙ্গে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে | হঠাৎ করেই ঝড়ের মতো মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে জীবনের সব ওলোটপালোট হয়ে যায় |বহু আত্মীয়স্বজনের মত অভিষেকরাও জীবন থেকে হারিয়ে যায় | শুধু রেখে যায় টুকরো টুকরো কিছু স্মৃতি | পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছে কিছুদিন খোলা আকাশের নীচে ,কিছুদিন শরনার্থী শিবিরে থাকতে থাকতে কবিতার বাবা রেললাইনের পাথর সরানোর কাজে নিযুক্ত হন সামান্য রোজের বিনিময়ে | যিনি ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজ পেটের দায়ে তিনি হলেন দিনমজুর | বাংলায় এম.এ. করা কবিতাও বসে থাকে না | সে ছোটছোট ছেলেমেয়েদের সামান্য টাকার বিনিময়ে পড়াতে শুরু করে | আস্তে আস্তে তারা বস্তির একটি ঘর ভাড়া করে উঠেও আসে |ভারত সরকার এবং ব্রিটিশ সরকার বেতারযোগে পাকবাহিনীর প্রায় তিনলক্ষ নিরীহ বাঙ্গালীকে হত্যার কথা  বিশ্ববাসীকে অবহিত করেন | ভারতীয় ও বাংলার মুক্তিফৌজের মিলিত আক্রমনে পাকিস্তানীফৌজ দিশেহারা হয়ে পরে বিনাশর্তে দীর্ঘ ন'মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় | রেডিও ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে কবিতা প্রতিনিয়ত খবরাখবর রাখতো | প্রতিটা শরণার্থী শিবির  ঘুরে ঘুরে অভিস্রক ও তার পরিবারের লোকজনকে খুঁজে বেড়িয়েছে ; কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই সে বিফল হয়েছে |
  আবার শুরু হয় দেশে ফিরে যাওয়ার তোড়জোড় |নিজের মাতৃভূমিতে ফেরার আনন্দ ,একবুক ভালোবাসা হয়তোবা তারও বেশি আশঙ্খা নিয়ে বাবা ,মায়ের সাথে কবিতা তার দেশের মাটিতে পা রাখে | ফিরে আসে নিজেদের  বাড়ি খুলনা জেলার পিলজঙ্গ গ্রামে | যেখানে শুধু ভিটেটাই আছে ! বাড়িঘর পুড়িয়ে ,জ্বালিয়ে তছনচ করে দিয়েছে | পাশের বাড়ির ফজলু সাহেব সাদরে তাদের আপ্যায়ন করে নিজের বাড়িতেই থাকতে বলেন ;যতদিন না পর্যন্ত নিজেদের ভিটায় তাদের মাথার উপর চাল হচ্ছে | শুরু হয় কবিতার বাবা ,মায়ের নুতন করে সংসার গোছানোর পালা |   পনের ,কুড়ি দিনের মধ্যেই তারা হোগলার ছাউনি দিয়ে ,কাঁচা বাঁশের বেড়া করে পোড়ো ভিটার উপর একখানা ঘর তুলে চলে আসেন | কিন্তু খাবেন কি ? টাকা ,পয়সা হাতে নেই - বাগানের কলা ,সুপারী বা নারকেল বিক্রি করে কটা টাকায় বা হাতে পান !আর পেলেই বা কি ? যুদ্ধ বিধস্ত্ব বাংলাদেশে তখন খাবারের বড়ই আকাল | দিশেহারা হয়ে পড়েন কবিতার মা ,বাবা | কবিতাই বাবাকে বলে ," শহরে যেয়ে থাকতে পারলে অন্তঃত কিছু রোজগার করার চেষ্টা করা যেত | অনিমেশবাবু অথ্যাৎ কবিতার বাবা বেশ কয়েক বিঘা ধানীজমি ফজলু সাহেবের কাছে বিক্রি করে দেন | চলে আসেন তারা সাতক্ষীরা শহরে | আগে যেখানে থাকতেন ঠিক তার কাছাকাছি |   একটু একটু করে বঙ্গবন্ধু তখন তার সোনার বাংলাকে সাজাতে শুরু করেছেন | পথে-ঘাঁটে তখন অসংখ্য নারী ,পুরুষ ও শিশু | অন্ন ও বস্ত্রের জন্য সর্বত্র হাহাকার ! ভাতের ফ্যানটুকুও তখন অমিল | নানান জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে কবিতা একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় নাম লেখায় | রোজগার বলতে দুএকটি টিউশনি ,সারাদিন স্বেসচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে এখানে ওখানে সরকারি সাহায্য বিতরণ করা | সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে টিউশনিতে যাওয়া | নিজের খাওয়া বলতে সকালে মায়ের হাতের আলুসেদ্ধ ,ভাত আর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার থেকে পাউরুটি ,কলা বা হাতে গড়া রুটি | কোনোদিন খেয়েছে বা কোনোদিন বাড়িতে এনে  বাবা ,মায়ের সাথে সামান্য টিফিন করেছে | এইভাবে চলতে চলতে অনিমেশবাবু শিক্ষক হিসাবে পুনঃবহাল হন | মাসের শেষে হাতে সামান্য কিছু পেলেও ডালভাত ,নুনভাতের কোনো অভাব হচ্ছিলোনা | কবিতাও আস্তে আস্তে বেশ কয়েকটা টিউশনি পেয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যায় বাড়িতেই কোচিং সেন্টারের মত করে নেয় | এরই মাঝে সে অভিষেকদের খোঁজা কিন্তু বন্ধ করেনা | অনেক খুঁজেও তাদের সন্ধান সে পায়না | 
   যুদ্ধের সময় নারীদের প্রতি শারীরিক লাঞ্ছনার ফলে অনেক নারীই মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরেন | জাতির জনক দেশের অনেক জায়গাতেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন | এমনই একটি জায়গায় কবিতা যেয়ে আবিষ্কার করে অভিষেকের ছোটবোন অর্চনাকে | উসকো ,খুসকো চুল ,পরনে মলিন পোশাক | কবিতার পায়ের তলা থেকে মাটি যেন সরে যেতে থাকে | এ কাকে দেখছে সে ! অভিষেকদের বাড়ির সকলের আদরের অর্চনা ? একি সেই অর্চনা ? যার সামান্য অভিমানেই বাড়ির সকলে মিলে তার অভিমান ভাজ্ঞাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো ; হা ঈশ্বর ! কি অপরাধে নিষ্পাপ মানুষগুলির এই শোচনীয় পরিণতি ? অর্চনার কাছে এগিয়ে যেয়ে তার কাঁধে হাত রাখে কবিতা | ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে অর্চনা তাকায় কবিতার দিকে | কবিতা বলে ,"আমায় চিনতে পারছো ?" কিন্তু কোনো উত্তর সে পায়না |দেখে শুধু অর্চনার দুচোখের  কোল বেয়ে জল পরে যাচ্ছে | সেখানকার চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে অর্চনা জানতে পারে , প্রচন্ড মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনে ওর বাকশক্তি হারিয়ে গেছে | একবার নয় ,দিনের পর দিন ওর উপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে | যদি কখনো কোনো প্রিয়জন বা পরিচিত স্থান - যা ওকে খুব আনন্দ দেবে, হয়তো তখনই ও আবার আগের মতই কথা বলতে পারবে |   বাড়িতে এসে মা ,বাবার সাথে কথা বলে নিজের দায়িত্বে সে অর্চনাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে | কখনো বা কবিতা অর্চনাকে নিয়ে তাদের পুরানো বাসস্থান অথ্যাৎ আগে যেখানে ওরা থাকতো সেখানেও নিয়ে যায় | কিন্তু অবস্থার কোনোই পরিবর্তন হয়না | তবে আগে যেমন কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধুই চোখের কোল বেয়ে জল পড়তো ,এখন সে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ না উত্তর করে |

  •    এইভাবেই বেশ কয়েকটা মাস কেটে যায় | হঠাৎ একদিন সংবাদপত্রের মাধ্যমে কবিতা জানতে পারে বঙ্গবন্ধু খুলনার বাগেরহাট শহরে আসছেন | সেখানে তিনি ডাকবাংলোয় উঠবেন | তারপর তিনি নানান ত্রান শিবিরে যাবেন | কিন্তু জাতীর জনকের পাশে এ কার ছবি ? এ- তো অভিষেক ! সেনাবাহিনীর পোশাক পড়া | হ্যাঁ ঠিকই | এটা অভিষেকই | এতদিন পরে অভিষেককে দেখতে পেয়ে আনন্দে তার চোখে জলে ভর্তি হয়ে গেলো | নিজেকে সামলে  মা ,বাবার অনুমতি নিয়ে নিদৃষ্ট দিনে সে অর্চনাকে সাথে নিয়ে সাতক্ষীরা থেকে বাগেরহাট এসে পৌঁছায় | যথাসময়ে জাতির জনক  হেলিকপ্টার করে বাগেরহাট স্টেডিয়ামে নেমে   সতর্ক প্রহরার মাধ্যমে ডাকবাংলোর গাড়িতে করে নিদৃষ্ট জায়গায় পৌঁছান | সামনে ,পিছনে প্রায় আট ,দশটা গাড়ির সারি | এক একজন করে গাড়ি থেকে নামছেন আর কবিতা তীর্থের কাকের মত তাদের দিকে তাকিয়ে দেখছে | গাড়ির থেকে যারা নামছেন তাদের অধিকাংশ সামরিক বাহিনীর পোশাক পড়া , মাথায় টুপি বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে নেমেই জনতার উদেশ্যে হাত উঁচু করে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান | স্বচক্ষে জাতির জনককে দেখতে পেয়ে কবিতা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় | কিছুটা অন্যমনস্কও হয়ে পরে | সম্বিৎ ফিরে আসতেই সে দেখে অর্চনা ভিড়ের দিকে ছুটছে | কিছু না বুঝেই কবিতাও তার পিছনে "দাড়াও অর্চনা ,দাড়াও -" বলে ছুটতে থাকে | ধাক্কাধাক্কি ,ধস্তাধস্তি করে ভিড়ের মধ্য দিয়ে ঢুকে অর্চনা এক আর্মিকে জড়িয়ে ধরে প্রচন্ড কাঁদতে থাকে ঘটনার আকসিকতাই সেনাবাহিনীরঅফিসারও কিছুটা হক্চকিয়ে যান | কবিতাও তখন অনেকটা কাছে এগিয়ে এসেছে | মুখ থেকে তার কথা বেরিয়ে যায় ,"অভিষেক"- কবিতা দাঁড়িয়ে পরে | ভিড়ের ভিতর থেকে অভিষেক অর্চনাকে নিয়ে অপেক্ষাকৃত একটু ফাঁকা জায়গায় এনে মুখটা তুলে দেখে তার আদরের ছোট বোন | আবার সেও অর্চনাকে জড়িয়ে   ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে | কবিতা বোন আর দাদার এই মিলন দৃশ্য দেখে সমানে আঁচল দিয়ে চোখ মুছে যায় | কবিতা অবাক হয় অর্চনাকে তার দাদার সাথে কথা বলতে দেখে | তারমানে অর্চনা সুস্থ্য হয়ে গেছে | খুব খুশি হয় সে | কিছুপরে অভিষেকের চোখ পরে কবিতার দিকে | কবিতাকে দেখে অভিষেক পকেট থেকে একটা কাগজের টুকরো  বের করে দিয়ে শুধু একটা কথায় বলে ,"এই কাগজে ঠিকানাটা লিখে দিয়ে ওকে নিয়ে বাড়ি যাও |এখন ডিউটিতে আছি | আমি বাড়ি যেয়ে সব বলবো এবং শুনবো |" কবিতা অবাক হয় কি অবলীলায় অভিষেক তাকে 'তুমি'- বলে সম্মোধন করলো | সে ঠিকানাটা লিখে দিয়ে অর্চনাকে নিয়ে সাতক্ষীরা ফেরার জন্য বিকালের ট্রেন ধরে | অর্চনা এবার কবিতাকে চিনতে পারে | অনেক কথা বলতে বলতে দু'জনে সাতক্ষীরার ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসে |    সেদিন আর অভিষেক আসার সময় পায়না | পরদিন খুব ভোরে অভিষেক এসে হাজির হয় | অভিষেকের কাছ থেকেই কবিতার শোনে ফেলে আসা জীবনের সকরুণ কাহিনী | জাতীর জনকের আহ্ববানে সারা দিয়ে দেশের মুক্তিবাহিনীর খাতায় সে নাম লিখিয়ে ছিলো | গ্রামে ,গ্রামে তখনও পর্যন্ত শহরের মত অত অত্যাচার শুরু হয়নি | তাই সে মা ও বোন ও দিদিকে  গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছিলো |  হঠাৎ করে সে জানতে পারে রাজাকারেরা তাদের বাড়িতে ঢুকে তাদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে জ্বালিয়ে তার মাকে সেই ঘরে বন্ধ করে জীবন্ত দগ্ধ করেছেখবর পেয়ে সে যখন গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন মার হাড়-কঙ্কাল আর দিদির উপর নৃশংস্ব অত্যাচারের পরে তার বুকে ছুড়ি বসিয়ে খুন করে গেছিলো ;যা কুকুর ,শকুন ,চিল মিলে দিদির দেহটাকে ছিড়ে খেয়েছে সেই বীভৎস দৃশ্য দেখে | মৃত্যুর পরেও দিদি রেহায় পায়নি ! ওই খন্ড ,বিখন্ড দেহ নিয়ে নিজের হাতে মাটি চাপা দিই | অভিষেক ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে | শান্তনা দেবার ভাষা কারও মুখে নেই | সবাই চুপ | শুধু দুই ভাইবোন একে অপরকে জড়িয়ে এতদিনের জমানো কান্না কেঁদে চলেছে | এইভাবে কিছুক্ষন চলার পর অভিষেক নিজেকে সামলে অর্চনার মুখটা ধরে কপালে চুমু করে বলে ,"অনেক খুঁজেছি ,কিন্তু কোথাও পাইনি | দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কর্তব্যের খাতিরে যেখানেই গেছি ,শরণার্থী শিবিরগুলি কোনোটাই বাদ দেইনি | তবে বিশ্বাস ছিলো যদি ও বেঁচে থাকে তাহলে একদিন অবশ্যই ওকে খুঁজে পাবো | হঠাৎ করেই তোমাদের সাথে আলাপ ,হঠাৎ করেই হারিয়ে গেলে | মন বলতো তোমার সাথে ,মাসিমা ,মেসোমশায়ের সাথে দেখা হবেই | ভাবতে পারো কবিতা  বিদেশী শক্তি আমাদের মাতৃভূমিকে আক্রমন করেছে ,নিরীহ মানুষগুলির প্রাণ নিয়েছে ,অত্যাচার করেছে ; আর তাদের মদত দিতে দেশীয় কিছু মানুষ রাজাকার নাম নিয়ে নিজের দেশের মানুষদের প্রতিই অত্যাচার করে গেছে | ঈশ্বর এদের কোনোদিন ক্ষমা করবেন না ; এদের পাপের শাস্তি দেবেনই | জীবনে অনেককিছু হারিয়ে সামান্য যা ফিরে পেয়েছি ,তা আর আমি হারাতে চায়না |"  "কিন্তু দাদা,আমি তো ---|" কবিতা অর্চনার মুখটা চেঁপে ধরে | একই সঙ্গে অভিষেকও বোনের মুখটা চেঁপে ধরে | হাতটা কবিতার হাতের উপরেই পরে | অভিষেক হাতটা সরিয়ে নেয় | কবিতা অর্চনাকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে বলে ," তোমার একটাই পরিচয় ,তুমি আমাদের বোন | পুরানো কথা সব ভুলে যাও | নূতনভাবে বাঁচতে হবে এখন |" অভিষেক বোনকে হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে বলে ,"কবিতা ঠিক বলেছে | পুরান কথা সব ভুলে যা বোন | সব হারিয়েও তোদের ফিরে পেয়ে আজ আবার দু'হাত উপরে তুলে ঈশ্বরকে ডাকতে ইচ্ছা কোরছে | তারপ্রতি সমস্ত বিশ্বাস চলে গেছিলো | আমরা আবার বাঁচবো ,বুক ভোরে নিঃস্বাস নেবো | অনেককিছু হারিয়েও যেটুকু ফিরে পেয়েছি তাইদিয়ে নিজেদের স্বপগুলিকে পূরণ করে নেবো |

-------------------শেষ---------------

Thursday, January 19, 2017

#আধুনিকা                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী                     আজকের সমাজের সাথে তাল মেলাতে গেলে মা ,ঠাকুমার ধ্যান,ধারণাগুলিকে বিসর্জন দিয়ে চলতে হয় | আজকের যুগের ছেলেমেয়েদের কাছে ওগুলো কুসংস্কার নামকরণে ভূষিত   | কিন্তু তাদের কিছু  ধ্যান ,ধারণা সুজাতার কাছে কুসংস্কার  মনে হলেও পারতঃপক্ষে সুজাতা তাদের সামনে সেগুলিকে মেনে চলতো | বাবাহারা এম .এ . করা শিক্ষিত ,সুন্দরী ,আধুনিকা সুজাতার এই বিশাল পৃথিবীতে মা আর ঠাকুমা ছাড়া আর কেউ নেই |অতি আধুনিকা  হওয়া সত্বেও মা ,ঠাকুমার সামনে তাদের সংস্কারকে সে মেনেই চলতো | তারা মনে আঘাত পান এমন কোনো কাজই সে করতো না | কারণ তাদেরও যে সে ছাড়া আর কেউ নেই |                   কিন্তু বাইরে তার অন্যরূপ | আজীবন কো .এডে .পড়া সুজাতা অনেক ছেলের সংস্পর্শে এসেছে | সুতরাং অসভ্য ,অভব্য ছেলেদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় এটা তার নখদর্পনে | প্রফেসর সুজাতাকে সহকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীরা রাগী বলেই জানে | ক্লাস ছাড়া অফিসরুমে অধিকাংশ সময়ে বই এ  মুখ গুজেই থাকে | মহিলা সহকর্মীদের মধ্যে অনেকে আবার অহংকারীও বলে থাকেন  | তাতে অবশ্য সুজাতার কিছু যায় আসেনা | এককান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয় | শুধু একটা ব্যাপারেই সে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে -আর সেটা হচ্ছে কুসংস্কার | সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এতো লেখাপড়া শিখেও কুসংস্কার আচ্ছন্ন | তখন সে তার যুক্তিতর্ক দিয়ে বুঝিয়ে দেয় ,বহুদিন ধরে চলে আসা এটা একটা 'মিথ' | সে তাদের বোঝাতে সক্ষম হয় -প্রতিটা দেশেই সংস্কার আছে এটা ভালো ,কিন্তু কুসংস্কার দেশ ,জাতী ও ব্যক্তির পক্ষে ক্ষতিকর | তারমধ্যেও কিছু সংস্কার আছে যেগুলি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে গেলে জীবনযাত্রার পক্ষে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় | সেই সংস্কারও কুসংস্কারের নামান্তর | এসব যুক্তিতর্ক শুনেসুজাতার আড়ালে আবডালে অনেকেই বলাবলি করে  সব কিছুতেই সে স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতার কাটে  |   সুজাতার ঠাকুমার মৃত্যুর পর তার সহকর্মীরা ঠাকুমার শ্রাদ্ধবাসরে এসে পুরোহিতের সকল কথা নিষ্ঠাভরে পালন করতে দেখে তাদের বিস্ফোরিত নেত্র তার নেত্রঅগোচর থাকেনা | তাই পরবর্তীকালে সে কলেজে এসে তার কারণও ব্যাখ্যা করে তাদের কাছে | যতই সে লেখাপড়া শিখুকনা কেন ,যতই সে আধুনিক হোকনা কেন - কোনো অবস্থাতেই মায়ের ধ্যান ,ধারণাকে অগ্রাহ্য করে তাঁকে সে আঘাত দিতে পারেনা | চলনে ,বলনে সে যতই আধুনিক হোকনা কেন কিছু পুরানো লোকাচার আর বাঙালি সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে নয় |   বেশ কয়েক বছর পর ---------------------------                   এহেন সুজাতার জীবনেও প্রেম আসে | তারই সহকর্মী সুবিনয়কে দেখে তার খুব ভালো লাগে কিংবা ভালোবেসেও ফেলে | সুবিনয় নারী স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে বলতে একদিন তাকে বলেছিলো ,"আজকের সমাজে মেয়েরা আধুনিকা হতে যেয়ে ভুলে যাচ্ছে লাজলজ্জা - আধুনিকা হতে চাইছে তারা পোশাকে ; মন ও মানষিকতায় নয় - ভুলে যাচ্ছে বাঙ্গালী ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি | আধুনিকা হতে যেয়ে হয়ে পড়ছে স্বেচ্ছাচারী | ধুমপান ,মদ আর পুরুষ বন্ধুর সাথে হৈহৈ করে বেড়ানোটাই আধুনিকতা নয় | "কথাগুলি সুজাতার মনকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো |                          বছর খানেকের মধ্যেই দুজনের মন দেওয়া নেওয়ার ঘটনাটা জানাজানি হয়ে যায় |আঁড়ালে  আবডালে এনিয়ে কানাঘুষোও চলে | মা গত হয়েছেন সুজাতার বছর দু'য়েক হবে | সুতরাং এখন বিয়েটা করে ফেললে এই কানাঘুষোটা বন্ধ হবে | কথাহয় এখান  থেকে অন্যত্র বদলী হয়ে তারা মন্দিরে বিয়েটা সারবে | দু'জনেই বদলীর চেষ্টা করতে থাকে | কিন্তু আগে সুজাতার অর্ডার লেটারটা আসে | কোয়াটারও পেয়ে যায় | সুজাতা জামশেদপুর চলে যায় | মাস দুয়েকের মধ্যে সুবিনয়ও বদলীর চিঠি পেয়ে যায় | তারা ঠিক করে কালীঘাট মন্দিরেই বিয়েটা সারবে | ছেলেবেলায় মা ,বাবাকে হারিয়ে ঠাকুমার কাছেই মানুষ সে | সেই ঠাকুমাও বেশ কয়েক বছর হলো তাকে ছেড়ে চলে গেছেন | বিয়ের আগেরদিন সুবিনয় সুজাতার কাছে চলে যায় ;পরদিন তাকে নিয়ে কালীঘাট মন্দিরে আসার জন্য | কলকাতা আসার জন্য সুজাতা একটা গাড়ি ভাড়া করে | অনেক রাত অবধি তারা গল্পগুজব ও ভবিৎসৎ পরিকল্পনায় তারা হাওয়ায় ভাসতে থাকে | কেউই ঘুমায় না বললেই হয় | খুব ভোরেই তারা বেড়িয়ে পরে | কিন্তু অকস্যাৎ আসে সেই দুর্যোগ মুহুর্ত | ভোরের রাস্তায় লড়ির সাথে তাদের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্স | ঘটনাস্থলেই সুবিনয়ের মৃত্যু | সুজাতার সামান্য চোট | ভেঙ্গে যায় জীবনের সব স্বপ্ন | অসহায় ,পাগলিনী প্রায়  সুজাতা অব্যক্ত যন্ত্রনায় নিজেকে মাসখানেক ঘরবন্দি করে রাখে | পনেরদিন তার ছুটি নেওয়াই ছিলো - আরও পনেরদিন সে ছুটি বাড়ায় |  এরই মাঝে খাবারের প্রতি অনীহা ,দুর্বল লাগা ,মাঝেমাঝে মাথা ঘুরানো - সুজাতার বুঝতে বাকী থাকেনা তার জীবনে কি ঘটতে চলেছে | সে প্রেগন্যান্সি প্লেট এনে জানতে পারে তার আশঙ্খায় সত্যি ,সে মা হতে চলেছে | সুবিনয় চলে যাওয়ার আগের রাতে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী দু'টি নরনারী তাদের ভালোবাসায় এক ও অভিন্ন হয়ে গেছিলো |কিন্তু সুজাতা তার অনাগত সন্তানকে ভ্রূনেই হত্যা করতে পারেনি | ঈশ্বরের দূত হিসাবে তার বেঁচে থাকার রসদ মনেকরে তার গর্ভেই তিলতিল করে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয় | আধুনিকা  সুজাতার থেকে অনাগত সন্তানের মা সুজাতা হয়ে ওঠে সে | এখানে সেই সংস্কার ,কুসংস্কার ,শিক্ষাদীক্ষা ,আধুনিক মনস্কতা - সবকিছুই চাপা পরে যায় তার মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণের কাছে |
নন্দা   1.1.17

হায়রে সমাজ
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
শীতের নিঝুম রাত ,
শিশিরের চাদর জড়ানো রাস্তা ,
লাইটপোস্টের নীচে প্লাস্টিক ঝুলিয়ে ,
শয়ে শয়ে মানুষের বাস |
কেউ আধপেটা কেউবা না খেয়ে ,
শীতে জবুথবু হয়ে শুয়ে |
এদেরই কারও যুবতী মেয়ে -
চোখে কাজল এঁকে ,ঠোঁট রাঙ্গিয়ে ,
মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে -
কারও আসার অপেক্ষায় |
দামি গাড়ি চড়ে -
মখমলের বিছানায় রাত্রি যাপন !
দিনের আলোতে আবার সেই -
প্লাস্টিক ঝুলানো ফুটপথে |
সারারাত অন্যের কাছে নিজেকে বিক্রি !
পরিবারের সবাইকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে যে !
সমাজের চোখে মেয়েটি বেশ্যা ,
আর ওই মানুষটি ?
যে তাকে নিয়ে সারারাত ফুর্তি করেছে ,
সমাজের কাছে  সে তথাকথিত ভদ্রলোক !(?)
নন্দা   16.1,17  1 AM.

Wednesday, January 18, 2017

আমার ব্যথা
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
অশ্রু যখন ঝরে ,
আমার নয়ন হতে ,
সেও তখন শুধু ,
তোমার কথা বলে |
ভালো যত বেসেছিলাম -
আঘাত পেলাম বেশী ,
তবুও আমি এখনো তোমায় ,
একই রকম ভালোবাসি |
হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম ,
তোমার বুকের মাঝে -
বিনিময়ে আমার বুকে ,
তোমার আঘাত বাজে |
নন্দা  18.1.17  12-30AM

Monday, January 16, 2017


ভালোবাসা হলো - গাছে ফুঁটে থাকা একটা সুন্দর ফুল | তাকে দূর থেকে দেখতেই সুন্দর লাগে | ফুলটিকে ছিঁড়ে হাতে নিলে  কিছুক্ষনের মধ্যে প্রথমে সে নুইয়ে পড়ে তারপর একটা একটা করে পাপড়ি ঝরে যায় | কোনো একসময় ঝরে যাওয়া পাপড়িগুলিও শুকিয়ে যায় |
উল্টোদিক থেকে চিন্তা করলে মানুষের জীবনে ভালোবাসাটাও তাই | ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে পরিণতি বিয়ে | কিন্তু এই বৈবাহিক জীবনে কখনো কখনো এমন একটা সময় আসে যখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  দেখা যায়  দুজনের মধ্যে নানান কারণে মতের অমিল - যেটা হয়তো বিয়ের আগে ছিলোনা | কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবিশ্বাসের কালো ছায়াও পরে | তখন ফুলের একটা একটা করে ঝরে যাওয়া পাপড়ির মতোই ভালোবাসাটাও একটু একটু করে হারিয়ে যায় |
ফুলটাকে গাছ থেকে তুলে এনে কিছুটা জলের মধ্যে রেখে আপ্রাণ চেষ্টা করা হয় তাকে কিছুদিন তাজা রাখতে | ভালোবাসতেও যখন চিড় ধরে তখন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ; দুজনের কেউ না কেউ (কখনো বা দুজনেই ) ভালোবাসাটাকে টিকিয়ে রাখতে কিছুটা হলেও সচেষ্ট হন | অনেকক্ষেত্রে সংসারটা এতে টিকে যায় আবার কিছু ক্ষেত্রে ফুলের পাপড়ির মতই শুকিয়ে ভালোবাসাটা কোথায় যেন হারিয়ে যায় ,ছিঁড়ে  যায় ভালোবাসার সুতোয় বোনা  সংসারের সব স্বপ্ন , অচেনা হয়ে পরে দুটো চিরপরিচিত মানুষ পস্পরের কাছে |
জীবন থেকে ভালোবাসা হারিয়ে গেলে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় আমরা ভেঙ্গে পড়ি ,কিছু মানুষ তার সুন্দর জীবনটাকে অসুন্দর করে তোলে | আবার কিছু মানুষ এতটাই ভেঙ্গে পরে যে নিজেকেই এই সুন্দর পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয় | কিন্তু কেন ?? যে সংসারটা ভেঙ্গে গেলো সেই ভালোবাসার পরিণতি যদি বিয়ে অবধি না গড়াতো ; তাহলে কিন্তু এই ভালোবাসা আমৃত্যু   মনের গভীরে জায়গা করে নিতো | যা থাকতো সকলের অগোচরে - অদৃশ্য | আর এখানে যে কথাটা না বললেই নয় - সব সময় ভোগেই সুখ নয় ,ত্যাগেও সুখ আছে ------|
নন্দা  11.1.17

Saturday, January 14, 2017


হারিয়েছে লজ্জা
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
হায়রে নারী ! তোমার পোশাক ,
      কেন হোলো   ছোট ?
লজ্জা যে নারীর ভূষণ ,
    পোশাকগুলো কেন তবে ,
করলে  এত খাটো ?
বঙ্গনারী ,মাতৃময়ী -
    শাড়িতেই তুমি সুন্দরী ,
জিন্স ,টপে বুঝাতে  চাও কি ?
    তুমি আধুনিকা এক নারী !
আধুনিকা হও মন ও মননে ,
    লজ্জা আনো পোশাকে ও চোখে ,
রাস্তা ,ঘাটে চোখ খোলা রেখে চলো ,
    ছেলেগুলো আজ বড় বখাটে |
ধর্ষণ আজ এখানে ওখানে ,
    পোশাক কি মোটেই দায়ী নয় ?
শালীনতা বজায় রেখে চলো ,
   জানি, এই কথাটাতেই বিতর্ক হয় |
বঙ্গনারী,  সংস্কার মানো -
   ঐতিহ্যকে বজায় রেখে পোশাক পড় ;
জিন্স ,টি শার্ট ছেড়ে এবার -
সালোয়ার কামিজ আর শাড়ি ধরো |
নন্দা    13.1.17    11-30pm.


     

Tuesday, January 10, 2017

কাছের মানুষগুলিকে মাঝে মাঝে বড় অচেনা মনেহয় | আর দূরের মানুষের সাথে ফোনেও বেশী কথা বললে মতের অমিলে ঝামেলায় জড়াতে হয় | যাদের ছোট থেকে দেখে আসছি -হঠাৎ তাদের পরিবর্তন ভীষণ চোখে লাগে ;আবার যাদের ছোট দেখেছি তারা বড় হয়ে সংসার জীবনের জটিলতায় মাঝে মাঝেই তাদের মেজাজ হারিয়ে দুর্ব্যবহার করে ফেলে | এটা যে শুধু অন্যের ক্ষেত্রেই তা কিন্তু নয় ; আমিও এর বাইরে নই | অর্থচাহিদা ,রোগ ,দুঃখ ,যন্ত্রনায় - সবাই যেন এক একটা মেশিন | সর্বদা স্রোতের প্রতিকূলেই সবাইকে যেন সাঁতার কাঁটতে হচ্ছে |ফলে সুস্থ্য ,সুন্দর সম্পর্কের মাঝে তৈরী হচ্ছে একটা বিশাল ফাঁটল | আর তারই ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে অবিশ্বাস ,অশ্রদ্ধা আর ঘৃণা | ভালোবাসা ,বিশ্বাস আর সুন্দর অনুভূতিগুলি হারিয়ে যাচ্ছে |
                            নন্দা 10.1.17  9-40 PM.

Wednesday, January 4, 2017


শেষ দেখা
            নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
হলোই যদি দেখা আবার ,
আর একটু আয়না কাছে ,
স্বপ্নগুলো যে এখনো বেঁচে ,
আমার বুকের মাঝে |
হঠ্যাৎ করেই কিশোর বয়সে ,
এলো ঝড় ডাইনী ছদ্মবেশে ,
ছিট্কে গেলাম দু'জনেই আমরা ,
বাংলারই দুই দেশে |
এপার ওপার দুই পারে বাস ,
মাঝে কাঁটাতারের বেড়া ,
পারিনা ডিঙ্গতে সেই কাঁটাতার ,
চতুর্দিকে সতর্ক পাহাড়া |
বয়স এখন অনেক আমাদের ,
মনটা রয়েছে সেই কিশোর ,
একবার তোকে দেখি ভালোভাবে ,
জীবন থেকে নিতে হবে যে অবসর !
দিলাম কথা আজ তোকে আমি ,
যদি যাই আগে উপরে ,
থাকবো বসে তোরই আশায় ,
হবেই মিলন-তোর আর আমারই |
নন্দা  3.1.17  1-30AM.


অপত্য স্নেহ-----              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
     শ্বাশুড়ীর মৃত্যুর   পর থেকেই সকলেই একটু ভয়ে ভয়ে থাকে | প্রত্যেকেই বলে ,মা মারা যাওয়ার পর থেকেই সন্ধ্যার পরে গাটা কেমন ভার হয়ে থাকে | কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু রৌনক | দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে | ঠাকুমার আদরের নাতী | ঠাকুমার ঘরেই দুটি খাট পাতানো ছিলো | একটিতে রৌনক শুতো অন্যটিতে সুহাসিনীদেবী | পড়ার টেবিলটায় রৌনকের ছিলো ঠাকুমার ঘরে | নাতী ,ঠাকুমার ভালোবাসাটা ছিলো অত্যন্ত গাঢ় | কিন্তু সুহাসিনীদেবীর দুই ছেলে পারতপক্ষে মায়ের ঘরে যেতনা বললেই হয় | কারণ পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে তারা খুব ব্যস্ত থাকতো | রাতে ক্লান্ত হয়ে যখন তারা ঘরে ফিরতেন তখন অসুস্থ্য মা যেতেন ঘুমিয়ে | ছেলে রৌনক সে ঘরে টেবিল ল্যাম্পের আলোতে পড়াশুনা করতো | মায়ের ঘুম আর ছেলের পড়াশুনার ব্যঘাত হবে ভেবে কেউ  মায়ের ঘরে অধিকাংশ দিন আর ঢুকতেন না |    বড় ছেলে দেবাংশু বিয়ে করেননি | এখন আর বিয়ের বয়সও তার নেই | ছোটছেলে সীতাংশুর ওই একটিমাত্র সন্তান | বাড়ির সকলের চোখেরমনি । ঠাকুমাকে সে নিজের প্রাণের থেকেও হয়ত একটু বেশী ভালোবাসে ।   রৌনকের মা অনুভাদেবী খুব একটা সুবিধার মানুষ নন । রৌনক বাড়িতে থাকাকালীপ সময়ে তিনি পঞ্চব্যঞ্জনে তিনবেলা ঠিক সময় করেই শ্বাশুড়ীর খাবার দোতলায় যেয়ে দিয়ে আসতেন । কারন যতক্ষন না ঠাকুমার খাওয়া হবে ততক্ষন পর্যন্ত সে কিচ্ছুটি খাবেনা । কিন্তু রৌনক বাড়িতে না থাকলে সেই খাবার দেবার সময় ঘন্টা দু'য়েক সামনের দিকে এগিয়ে যেত ।যেমন সকালের খাবার দুপুর বারোটাই দুধ,মুড়ি ;নামেই দুধ জলের পরিমানটা বেশী আবার দুপুরের খাবার বিকাল চারটেই , কোনোদিন ঘি, আলুসিদ্ধ আবার কোনোদিন ডাল,আলুসিদ্ধ । এ ভাবেই চলতো । কিন্তু সুহাষিনীদেবী কখনোই কারও কাছে কোনোদিনও কোনো অভিযোগ করতেন না।ভিতরে ভিতরে তিনি খুব কষ্ট পেতেন । এভাবই দিন এগিয়ে যেতে থাকে । কখনো কখনো অনুভাদেবী কারনে অকারনে শ্বাশুড়ীর উপর চড়াও হতেন রৌনকের অনুপস্থিতে ।তারও অবশ্য একটা কারন ছিলো । আর সেটা হল - বড় এক বাক্স গয়না ছিলো সুহাষিনীদেবীর । কিনতু অনুভাদেবী জানতেন না ,ঐ গয়না বাক্সের অধিকাংশ গয়নাই তিনি তার ছোটবোন আশারানীর মেয়ের বিয়েতেই দিয়ে দিয়েছেন ; পুত্রবধূটির উপর রাগ করেই ।একটি বেশ মোটা মাছের কাঁটার  চেন পেয়েছেন সুহাষিনীদেবীর মৃত্যুর পর তার বালিশের তলায় একটি কাগজ জড়ানো । কাগজটাই লেখা ,"এটা রৌনকের বৌয়ের ।"সুহাষিনীদেবীর মৃত্যুর চারদিনের মাথায় সন্ধ্যায় যখন সকলে ঘরে বসে চা খাচ্ছে ঠিক তখনই সকলে শুনতে পারলো রান্নাঘরে বাসন পড়ার ঝন্ঝন্ আওয়াজ । অনুভাদেবী একা সাহষ পেলেন না ,তিনি স্বামীকে নিয়েই রান্নাঘরে গেলেন । যেয়ে দেখলেন সবই তো ঠিক আছে , তবে সবাই কিসের আওয়াজ পেলেন ? ভাবতে ভাবতেই বেড়িয়ে আসতে যাবেন ঠিক তখনই উপরের ব্যাঙ্কার থেকে একটা বড় হাঁড়ি অনুভাদেবীর মাথায় দুম করে এসে পড়লো ।'আহ্হ্ '- বলে চিৎকার করে তিনি স্বামীকে জড়িয়ে ধরলেন । হাঁড়িটা পরে এমনভাবে কেঁটে গেলো যে দুটি সেলাই পড়লো ।  সেদিনের মত ঘটনা ওখানেই শেষ হলো ।দু'দিন বাদে তিনি যখন বাথরুম থেকে স্নান সেরে বেড়োতে যাবেনহঠ্যাৎ তার মনে হল কেউ যেন ধাক্কা মেরে তাকে ফেলে দিলো | "কে রে ?"- বলেই পিছন ঘুরে দেখেন কেউ না | কোমড় এবং পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেলেন | আবার তার আর বুঝতে বাকি থাকলো না ,এটা তার মৃত শ্বাশুড়ির কর্মকান্ড | ভয়ে একদম সিঁটিয়ে গেলেন |
শ্রাদ্ধের দিনতিনেক আগে সব কাচাকুচির পর সেগুলি শুকালে সন্ধ্যার দিকে জামাকাপড়গুলি গুছিয়ে পাটপাট করে তাদের খাটের একদিকে রেখে রান্নাঘরে গেলেন চা করতে | হঠ্যাৎ তার মনে হল তাদের শোবার ঘরের দিক থেকে একটা পোড়া গন্ধ বেড়োচ্ছে | ঢিম লাইটটা জ্বালানোই ছিলো  ,কিন্তু যেয়ে দেখলেন ঘরের লাইট বন্ধ এবং ধোঁয়াটা খাটের উপর থেকেই আসছে | চিৎকার ,চেঁচামেচিতে পাড়াপ্রতিবেশীরা ছুটে আসলো | কিন্তু আগুন লাগার কারণ কেউই বুঝতে পারেনা | হঠ্যাৎ করেই আবিষ্কার হয় ঢিম লাইটটাই ফেটে দেওয়ালের কিছুটা অংশ কালো হয়ে আছে | খাটের উপর যত কাপড়চোপড় ভাঁজ করা ছিলো সবই প্রায় পুড়ে গেছে কিন্তু অদ্ভুতভাবে রৌনকের জামাপ্যান্টগুলি মেঝেতে ভাঁজ করা অবস্থাতেই অক্ষতভাবে গড়াগড়ি খাচ্ছে |
সকলের আলোচনা শুনেই রৌনকও এবার বুঝতে পারে এটা তার ঠাকুমারই কাজ | সে সকলের অলক্ষে নিঃশব্দে উপরে উঠে যেয়ে ঠাকুমার খাঁটের উপরে যেয়ে বসে | ঠাকুমার ছবিটার দিকে একদৃষ্টে তাঁকিয়ে থেকে বলতে থাকে ," ঠাকুমা ,আমি জানি মা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছেন | কিন্তু তিনি তো আমার মা | আমি যেমন তোমায় খুব ভালোবাসতাম ,এখান ও বাসি ,মাকেও তো আমি খুব ভালোবাসি | মা কষ্ট পেলে আমি যে খুব কষ্ট পাই ঠাকুমা ! তুমি তো আমায় খুব ভালোবাসতে ,আমি কষ্ট পেলে তোমার ও তো খুব কষ্ট হত | তবে এখন কেন আমার কষ্টটা তুমি বুঝতে পারছোনা ?" হঠ্যাৎ রৌনকের মনে হল তার মাথায় কেউ হাত রাখলো |
রৌনককে নীচুতে দেখতে না পেয়ে সকলে ছুটতে ছুটতে উপরে এসে সুহাসিনীদেবীর ঘরে ঢুকে দেখে রৌনক জ্ঞান হারিয়ে খাঁটের উপর পরে আছে | মাথায় এমনভাবে বালিশ রয়েছে যে দেখে মনে হচ্ছে সে ঘুমাচ্ছে | কিছুক্ষনের চেষ্টায় রৌনকের জ্ঞান ফিরে আসে | কিন্তু ঘটনাটা সে বাড়ির সকলের কাছেই লুকিয়ে যায় | তারপর থেকেই সুহাসিনীদেবীর আত্মার আর কোনো অস্তিত্ব কেউ টের পাইনি | সকলের নিষেধ স্বর্তেও রৌনক তার ঠাকুমার ঘরেই থাকতো | ঠিক এক বছরের মাথায় একটু বেশী বয়সেই রৌনকের একটা সুন্দর ফুটফুটে বোন তার মায়ের কোল আলো করে আসে | আর কেউ না জানুক রৌনক জানে এ তার ঠাকুমা | কারণ তিনি সেদিন রাতে তার মাথায় হাত রেখে এমন কথায় রৌনককে শুনিয়েছিলেন | রৌনক আদর করে বোনের নাম রাখে - "শোভা"-  |
9.12.16

Monday, January 2, 2017

তবু মনে রেখো
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
জীবনের দীপ নিবু নিবু প্রায় ,
পৌঁছে গেছি বুঝি  তীরে ,
হিসাবের খাতা ভুলে ভরা শুধু ,
মিলাতে পারিনি আমি যে তারে !
হয়তো জীবনে চেয়েছি যা -
পাইনি তারই কিছু ;
যা পেয়েছি- চাওয়া থেকে বেশি ,
ফিরে গেছি তবু বারে বার পিছু |
অভিনয় তাই সাঙ্গ হল প্রায় ,
চলে যেতে শুধু চাই -
আমি চলে গেলে হিসাবের খাতা ,
আমারই সাথে পুঁড়ে  হবে ছাঁই ।
আমার অপরাধ ভুলে যেও সব ,
কিছু মনে রেখো না ,
যদি কিছু করে থাকি তোমাদের জন্য ,
আমার নামটি কিন্তু ভুলো না |
নন্দা   2.12.17   6-30 PM.
নুতন বছর মানে
                     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
পুরানো বছরের সকল গ্লানি ,
ধুঁয়ে যাক ,মুছে যাক -
হৃদয়ে রাখবো সেই সময়কে ,
যার স্মৃতিচারণে মন ভরে থাক |
যা কিছু পেয়েছি  সঞ্চয় করে ,
সামনে এগিয়ে চলা ,
যতন করে রেখে সে সব ,
মনেমনে তাদেরই সাথে কথা বলা |
এমনি ভাবে  এক এক করে ,
জীবন থেকে যাবে একটি বছর চলে ,
আস্তে আস্তে এগিয়ে যাবো সবাই ,
জীবন নদীর তীরে !
নুতন বছর এসেছে বলে -
আনন্দে মাতি সবাই ,
কখনো ভাবিনা নুতন বছর এলে ,
জীবনের আয়ু একটি বছর কমায় |
নন্দা    2.1.17    12.30am.