Friday, September 30, 2016

"মাতৃ বন্দনা"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
মহালয়ার এই পূর্ণ প্রভাতে -
আনন্দে নেচেছে মন -
শিউলিফুলের গন্ধে মাতাল -
হয়েছে আজ ত্রিভুবন |
পৃথিবীর এই দুর্যোগ ক্ষনে -
মত্যে আসছেন মা -
অসুররূপী জঙ্গিদের তুমি -
কিছুতেই ছেড়ো না |
দেবতাদের তুমি দিয়েছিলে সুখ -
অসুর বিনাশ করে -
মত্যে এবার হোক তোমার বন্দনা -
জঙ্গি দমন করে |
.......
নন্দা   30.9.16  1-30AM.

Thursday, September 29, 2016

"বিষাক্ত বাতাস"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
||||||||||||||||||||||||||||||||
বাতাসে পাই শুধু বারুদের গন্ধ ,
রোদ,বৃষ্টি,ঝড়ে অসহায় ফুটপথে শুয়ে ,
নিঃশ্বাসে বিষ ঢোকে -
ঘুমের মাঝেই মৃত্যুকে আহ্বান করে |
জীবনটা গোলমেলে বুঝে গেছে সকলে -
চারিদিকে আছে শুধু হাহাকার ;
পৃথিবীতে কেউ কারও নয় ,
অসহায়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে সমাজ |
খবরের কাগজে ভর্তি খবর ,
কেউ নেয় না কারও খোঁজ -
টাকার প্রয়োজনে খবর হয় বিক্রি ;
পড়ে থাকে অসহায় সেই তিমিরেই |
মানুষের জীবনে নেই কোনো মূল্য ,
টাকাটাই যেন আজ সব ;
টাকার পিছনে ছুটছে সবাই -
অসহায় মানুষকে ভাবে পশুতুল্য |
...........
নন্দা  29.9.16  2AM.
"ভালোবাসা কারে কয়" (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
++++++++
ভালোবাসা --
মিছে আশা সর্বনাশা ,
ভালোবাসা --
মুখে নয় বোঝো শুধু চোখের ভাষা ,
ভালোবাসা --
বিশ্বাসের ভীত গড় শক্ত করে ,
ভালোবাসা --
রাখো বেঁধে তাকে বাহুডোরে ,
ভালোবাসা --
সারাজীবন থাকো শুধু হাতটি ধরে ,
ভালোবাসা --
সুখ-দুঃখগুলি ভাগ করে নিও নিজেদের মত করে ,
ভালোবাসা --
শুধু পরস্পরের বোঝাপড়া -
সারাজীবন এক সাথে থাকার অঙ্গীকার করা ,
একে অপরের দোষ ত্রূটিগুলি শুধরে নেওয়া ,
জীবনে সকল কাজে ,সকল সময় পাশে থাকা |
এর ই নাম ভালোবাসা --
কি তাই তো ?
 'নন্দা'   28.9.16  2-30AM.

Monday, September 26, 2016


"কেমন মা তুমি"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
~~~~~~~~~~
বছর শেষে মা আসেন বেড়াতে -
একবার বাপের বাড়ি -
আমার বাপের নেই কোনো ঠিক -
আমি শুধু কেঁদে মরি !
নারী চরিত্র খারাপ হলে -
বেশ্যা তাকে বলে -
বেশ্যা আমায় বানিয়েছে যারা -
বলো মা, তাদের কি নামে ডাকে ?
যে বাবুরা আসে রাতের আঁধারে -
আমার গরীব ঘরে -
টাকার বিনিময়ে শরীর কেনে -
কখনো নেয় না নিজের করে  |
মায়ের জীবন যে ভাবে কেটেছে -
আমারও কাটছে তাই -
বাঁচাও মা আমাকে তুমি -
আমি পরিত্রান চাই |
অভাব আমায় করেছে বেশ্যা -
হয়নিকো নিজ থেকে -
আমিও চাই একটি সংসার -
জগৎজননী, একটু দাও সে অধিকার |
নন্দা   26.9.16  2AM.

Sunday, September 25, 2016


ঠিকানা ---(নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ++++++++++===  হাসপাতালের বেডে শুয়ে পুলিসের উচ্চপদস্থ  অফিসারের কথার উত্তরদিতে বারবার হোঁচট  খাচ্ছিলেন প্রণববাৰু  বাবু। কি করে এটা সম্ভব? অজয় ছিল ক্লাসের ফাষ্ট বয় ।প্ৰতি  ক্লাসে সে প্রথম  হয়ে উঠতো। তারমেধা শক্তি নিয়ে  স্কুল  অফিস কক্ষে  কতবার আলোচনা হয়ছে। মাধ্যমিকে ৯৭ শতাংশ নম্বর নিয়েপাশ করেছিল ।উচ্চ মাধ্যমিকের   রেজাল্ট ও  সে খুব ভাল করেছিল ।শিক্ষকদের সম্মানকরা ,তাদের মান্য করা ধীর স্থির  ভাবে কথা বলা -অজয়ের আজ এই পরিনতি কেন?   হাসপাতালে ভর্তি  হওয়ার কিছু দিন আগেআবাসনের কিছু মানুষের    সাথে তিনি ডায়মন্ডহারবার কোন একটি জায়গায় পিকনিকে যান | কিছু কিশোর  কিশোরীও   তার মধ্যে ছিল। সামনেই ছিল গঙ্গা  নদীর পাড় ।খাওয়া দাওয়ার পর ছেলে মেয়েরা ওখানেই হৈচৈ করছিল । সন্ধ্যা হয়ে আসছে সকলকে ফিরতে হবে তিনিও তা্ঁরই মত বয়স্করা মিলে নদীর পাড়ে ওদের খোঁজে যান। হঠাৎ দেখতে পান একটি বাঁশঝাড়ের ভিতর একটি লোককে হাত,পা,মুখ বে্ঁধে কিছু যুবক ছেলে মিলে ধরে রেখেছে। আর এক জনে তার মাথায় পিস্তল ধরে রেখেছে। নির্ভীক প্রণব বাবু সামনে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠেন "এই কি করছ তোমরা ?ওকে মারছোকেন "?সঙ্গে সঙ্গে  পিস্তলের মুখটা ঘুরে যায় প্রণববাবুর দিকে| তিনি আবারও বলেন, `তোমরা ওনাকে ছেড়ে দাও'। হঠাৎ তাদের মধ্যে থেকে একটি ছেলে বলে উঠে, আমাদের ঝামেলার মধ্যে আপনি আসবেন না, "মাষ্টারমশাই" । "মাষ্টারমশাই" তারমানে ছেলেটি আমাকে চেনে! তুমি আমাকে চেন? কেতুমি ? কিনাম তোমার? তাদেরযে মধ্য থেকে আর একটি ছেলে হঠাৎ করে কোমর থেকে পিস্তল বের করেই প্রণববাবুর দিকে তাক করে ট্রিগার  চাপতে চাপতেই বলে ,"বুড়োর অনেক কিছু জানতে ইচ্ছাকরছে। তাই সব জানিয়ে দিলাম।গুলি এসে প্রণববাবুর ডান কাঁধে বিঁধলো।যে ছেলেটি এক জনকে পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে ছিল সে চিৎকার করে উঠলো ,"এটা কি করলি? "উনি আমার মাষ্টার মশাই" দৌড়ে এসে প্রণববাবুকে নীচ থেকে তুলে মাথাটা কোলের উপর নিয়ে বললো, "মাষ্টার মশাই" খুব কষ্ট হচেছ? কিছুই হবে না আপনার ।"আমি আছি তো" ।কোন রকমে তিনি বললেন, "তুমি কে বাবা"? তুমিকি আমার ছাত্র ? "আমি অজয় মাষ্টারমশাই। অজয় স্যানাল।মনেপড়ছে  ?" প্রণববাবুর আবছা  আবছা  সব মনে পড়তে লাগলো। পরক্ষেনেই তিনি জ্ঞান  হারালেন। তারপর তার যখন জ্ঞান ফিরলো  হাসপাতালের বেডে, তখন তিনি পুলিশ অফিসারের সামনে বসে।সে দিন অজয়েরা  দলেমোট চার জন ছিল। তিনজনই পালিয়ে গেছিল ।কিন্তুঅজয় তাদের টানাটানিতেও তার মাষ্টারমশাইকে ঐ অবস্থায় ফেলে যায় না ।প্রণববাবুর অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে সব জেনে পুলিশ অজয়কে গ্রেফতার   করে ।পুলিশ অফিসারএর কথার জবাবে প্রণববাবু বিড়বিড় করতে থাকেন । অফিসার তাঁর কাছে জানতে চান ঘটনার বিবরণ এবং অজয় নামে একটি ছেলেকে যে গ্রেফতার   করা হয়েছে তাও তিনি প্রণববাবুকে জানান ।সে দিন অজয়েরা  দলেমোট চার জন ছিল। তিনজনই পালিয়ে গেছিল ।কিন্তুঅজয় তাদের টানাটানিতেও তার মাষ্টারমশাইকে ঐ অবস্থায় ফেলে যায় না ।প্রণববাবুর অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে সব জেনে পুলিশ অজয়কে গ্রেফতার   করে ।পুলিশ অফিসারএর কথার জবাবে প্রণববাবু বিড়বিড় করতে থাকেন । অফিসার তাঁর কাছে জানতে চান ঘটনার বিবরণ এবং অজয় নামে একটি ছেলেকে যে গ্রেফতার   করা হয়েছে তাও তিনি প্রণববাবুকে জানান ।কিছুক্ষণচুপ করে থেকে প্রণববাবু বলেন,"ঐ ছেলেটি তো কোন দোষকরেনি ।ওতো আমাদের সাথে পিকনিকে গেছিল ।প্রণববাবু এক জন আদর্শবাদী, স্পষ্টভাষী, সত্যবাদী শিক্ষক। জীবনে এই প্রথমবার তিনিমিথ্যা বললেন এবং অন্যায়ের সাথে আপোস করলেন ।চল্লিশ বছরের শিক্ষকতাজীবন দিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর প্রণববাবু বুঝেছিলেন ,অজয়ের মধ্যে এখনও কিছুটা মনুষ্যত্ববোধ লুকিয়ে আছে ।সুযোগ পেলে হয়তো সে তার ভুল টাকে সংশোধন করে নিতে পারবে। তাই দাঁতে দাঁত টিপে  তিনি  অফিসারের  সামনে মিথ্যার আশ্রয়  নিলেন।   প্রমাণাভাবে  অজয় বেকসুর খালাস পেয়ে গেল। প্রণববাবুর ধারনা যে মিথ্যা নয় তার প্রমান  তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়িতেফেরার মাসখানেকের মধ্যে টের পেলেন । একদিনঝড় জল মাথায় করেদুপুরের দিকে অজয়ঠিক তার মাষ্টারমশাইয়ের বাড়িতে উপস্থিত হলো। অকৃতদ্বার প্রণববাবু তার সর্বক্ষনের সঙ্গী  কন্যাসমা ,মা-বাবা মরা কাজের মেয়ে চঞ্চলা  বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে অজয়কে দেখে জানতে চায় সেকিচায় ।জবাবে অজয় তাকে জানায় মাষ্টারমশাইকে গিয়ে বলুন - "অজয়দেখা করতে এসেছে।" ঘরের ভিতর থেকে প্রণববাবু বললেন , "হ্যাঁ ভিতরে এসো আমি তোমার  অপেক্ষাতেই  আছি।ভিতরে ঢুকে অজয় তার মাষ্টারমশাইএর পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে তার  এপথে আসার সমস্ত ঘটনা জানায়। শুনতে শুনতে প্রণববাবুর চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে।            উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ যখন তার ফাইনাল ইয়ার তখন  সে এক দিন বাড়িতে আসে হোষ্টেল থেকে ।ঘটনা চক্রে সেদিনই বাড়িতে ডাকাত  পরে। বাঁধা দিতে গেলে তারা অজয়ের হাত পা বেঁধে দেয় ।মা বাবা এবংতার সামনে অজয়ের ছোট বোনের উপর অত্যাচার করে। চলন শক্তিহীন অসুস্থ বাবা সেই রাতেই হার্ট  এ্যাটাকে মারা যান ।মা , বোনের প্রতি  ঐরকম অত্যাচার দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে রাতের পরে বোন গুম মেরে  যায়। বাকশক্তি  হারিয়ে উন্মাদ বোন  এখন আছে                         এ্যাসাইলামে। কিছু দিনের মধ্যে মা ও মারা যান ।জীবনের প্রতি  বিতৃষ্ণায়, অন্ধ আইনের প্রতি  ঘৃণায় পড়া শুনা ছেড়েদিয়ে নিজের হাতেই আইন তুলে নেয় ।তিন বছর পর খুঁজতে খুঁজতে ঐ ঘটনার নাটের গুরুকে সেদিন নাগালের মধ্যে পেয়েছিল যে তার চোখের সামনে তার বোনের জীবনের চরম ক্ষতি  করেছিল।আস্তে আস্তে প্রণববাবু অজয়ের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করেন , "এখন কোথাই আছো?"  "রাস্তায়।" "সেকি?"  "ওটা তো আমাদের ভাড়া বাড়িছিল । বোন কে এ্যাসাইলামে দেওয়ার পর আমার তো কোন ঠিকানার দরকার ছিল না মাষ্টারমশাই !"  "তুমি আমার কাছে থাকবে এখন থেকে । আমি তো একাই থাকি। গুটিকয়েক ছেলে -মেয়ে পড়তে আসে ।এখন থেকে তুমিই ওদের পড়াবে। জীবনটাকে নতুন করে শুরুকরো।বোনের ভালভাবে চিকিৎসা করে তাকে সুস্থকরে একটা সুন্দরজীবন দাও | আইন তার নিজের পথে চলুক | আমরা সুবিচারের আশায় থাকবো |  যা হয়ে গেছে পিছন ফিরে তাকে আর তাকিয়ে দেখ না। আমি তোমার সাথে আছি। আজ থেকে আমার বাড়িটাই তোমার বাড়ি। আর এটাই তোমার ঠিকানা | "
+++++++++=+=শেষ +++++++++==+
নন্দা

Saturday, September 24, 2016

"ভুতুড়ে কান্ড" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ^^^^^^^^^^^^^^^^^
  বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে কলেজে পড়াকালীন সময়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যহীন ভাবেই বেড়িয়ে পড়লাম | সবাই মিলে প্রথমে আসলাম হুগলি | সেখানে আমার এক কাকার বাড়ি আছে | বাড়িটা একটু ভিতরের দিকে | পাঁচজন যেয়ে সেখানে উপস্থিত হলাম | নানান ধরণের গল্প ,গুজব হতে হতে আমার খুড়তুতো ভাই বললো ওখানেই একটি রাজবাড়ী আছে ; যেখানে শুধুমাত্র  ভুতেরই বাস | অনেকেই নাকি নানান ভাবে তাদের অস্তিত্ব টের পেয়েছেন | সকলেরই বয়স কম , প্রত্যেকেই নিজেদের অসীম সাহসী ভাবি | ঠিক করলাম সকালেই ওই রাজবাড়িতে যাবো |    উঠতে উঠতে একটু বেলায় হয়ে গেলো | কাকিমা বললেন স্নান , খাওয়া ,দাওয়া করে যাতে আমরা বেড়োই | এ সব সারতে সারতে আমাদের প্রায় বারোটা বেজে গেলো | খুড়তুতো ভাইটি আমাদের সাথে গেলো না , পথনির্দেশটা দিয়ে দিলো | অনেকটা পথ পেড়িয়ে আমরা এসে রাজবাড়ীর সিংহদুয়ারে পৌঁছলাম | বিশাল লোহার গেট | খুব বড়ও তালের মতো এক তালা ঝুলছে | ঢোকার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না , এমনকি আশেপাশেও কাউকেই দেখতে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না | খুব মন খারাপ নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়েই সকলে নানান পোজে ছবি তুলতে লাগলাম | হঠ্যাৎ আমাদের সকলকে অবাক করে দিয়ে বেশ মোটা কালো মতো একজন লোক সেখানে এসে হাজির হলেন | ভিতরে ঢোকার চাবি কোথায় পাবো তার কাছে জানতে ছায়ায় তিনি অত্যন্ত মিহি শুরে আমাদের বললেন ,"ওটা আমার কাছেই থাকে |" খুশিতে ডগমগ সব গেটটা খুলে দিতে বললাম | গেট খুলতে খুলতেই উনি আমাদের সতর্ক করে দিলেন যাতে পুরো রাজবাড়ী আমরা বাইরে থেকেই দেখি এবং সন্ধ্যার আগেই যেনো ওই রাজবাড়ী ছেড়ে বেড়িয়ে আসি | পরে রাতে এসে উনি তালা দিয়ে যাবেন | আমরা সম্মত হয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম | রাজবাড়ীর ভিতরে কিছু কিছু জায়গা আগাছায় পূর্ণ | আবার অবাক করে দেওয়ার মতো কিছু জায়গা দেখলে মনেহয় সেখানে যেন নিত্য লোকের আনাগোনা | বিশেষত যে সব জায়গা গুলিতে বসবার মতো ব্যবস্থা রয়েছে |  মনের আনন্দে সকলে সবকিছু ঘুরে দেখছি | হঠ্যাৎ খেয়াল হলো আবার ছবি তোলার | মোবাইল ফোনের তখনও চল হয়নি | ছবি তোলার জন্য আমার দামী ক্যামেরা ইয়াসিকা | পোজ নিয়ে সকলে দাঁড়িয়ে পড়লো | আমি ক্যামেরার পিছনে | কিন্তু একি ? চোখের সামনে যে মানুষগুলিকে দেখতে পাচ্ছি ,ক্যামেরার লেন্সে তাদের দেখতে পাচ্ছি না কেন ? শুধুই কালো আর কালো | সাধের ক্যামেরা আমার নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে নিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো | নষ্ট ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে আবার ঘুরতে লাগলাম | এত বড় রাজবাড়ী যেন শেষই হয়নি ঘোরা | সন্ধ্যা হয় হয় ; এমন সময় ওই লোকের কথা মনে পড়লো | বেড়িয়ে আসতে হবে | পুরোটা ঘুরে দেখা হোলোনা বলে মনটা সকলের খুব খারাপ হয়ে গেলো | আমরা বাইরে বেড়োনোর জন্য পিছন ঘুরে হাটতে লাগলাম | কিন্তু কোথায় বাইরে বেড়োনোর পথ ? যে পথ দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম সে পথই তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না | হঠ্যাৎ কানে এলো ঘুঙঘুর এর আওয়াজ | অতি বড় সাহসী আমি -আমার বুকের মধ্যেও ধুকধুকানি শুরু হোলো | হঠাৎ করেই আমাদের সামনে একজন মহিলা এসে উপস্থিত হলেন | তিনি বললেন ,"আপনারা এত দেরি করলেন কেন ? ঢোকার আগে আমার স্বামী তো আপনাদের বলেই দিলো সন্ধ্যার আগেই এখান থেকে বেড়িয়ে যেতে | আমার পিছন পিছন তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে আসুন |মহিলার সহায়তায় আমরা রাজ্ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম | চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার |কিছুদূর এগিয়ে  তারই মাঝে দেখতে পেলাম একটি ছোট চায়ের দোকান | সেখানে কিছু লোক বসে চা খাচ্ছে ; ওই মানুষগুলির মধ্যে যে আমাদের গেটের তালা খুলে দিয়েছিলেন তিনিও আছেন |আমরা সকলে যেয়ে চায়ের দোকানে চায়ের অর্ডারটা দিয়ে বাইরে বেঞ্চে বসে দাড়োয়ান ভদ্রলোককে  বললাম ,"আপনার স্ত্রী যদি ওই সময় আমাদের কাছে না আসতেন আমরা তো বেড়োতেই পারতাম না | কিন্তু সন্ধ্যার সময় ওখান থেকে ঘুঙঘুরের আওয়াজ কোথা থেকে আসছিলো ?"হঠ্যাৎ চা বিক্রেতা আমাদের দিকে তাঁকিয়ে বললেন ,"আপনারা রাজবাড়িতে গেছিলেন ? আর একটাও কথা ওর কাছে জিজ্ঞেস করবেন না | আপনারা এদিকে উঠে আসুন |" যার সাথে এতক্ষন কথা বলছিলাম মুহূর্তে দেখি সে উধাও | দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম ,"এত তাড়াতাড়ি ভদ্রলোক উঠে কোথায় চলে গেলেন ?"  " উনাকে শুধু আপনারাই দেখতে পারছিলেন এখানে আমরা কেউই তাকে দেখতে পাইনি | উনি মানুষ না | তবে কখনোই কারও ক্ষতি করেন না | কেউ রাজবাড়ী দেখতে আসলে উনি গেট খুলে দেন ; রাত হয়ে গেলে উনার স্ত্রী বাইরে বেড়োনোর পথ দেখিয়েও দেন | দুজনেই ছিলেন রাজার বিশ্বস্ত কর্মচারী | বেঁচে থাকতে তারা যে কাজ করেছেন মরে যেয়ে ভুত হয়েও একই কাজ করে চলেছেন | আর ওই যে ঘুঙঘুরের আওয়াজের কথা বললেন না - সন্ধ্যা হলেই ওখানে মাহফিল বসে | রাজপ্রাসাদের ভিতরে  নানান প্রকারের আলোর রোশনাই, অনেক দূর থেকে সে আলো দেখা গেলেও কাছে গেলে তা ক্রমশ কমতে থাকে | অদ্ভুত একটা গা ছম্ছমে ভাব আসে | যারা দাঁড়োয়ানকে বা তার স্ত্রীকে  একবার দেখেছে পরে তারা আর কখনোই তাকে দেখতে পায় না | কেউ সেখানে গেলে সেদিন দাঁড়োয়ান এখানে আসবেই |" আমরা সকলে হা করে কথাগুলি শুনছিলাম | হঠ্যাৎ আমার বন্ধু বিজন বলে উঠলো , তার মানে আমরা পুরোদিনটা ভুতের সাথেই কাটালাম ?"  "হ্যা আপনারা  রাজপ্রাসাদের কোনো কামরায় ঢোকেননি বলে বেঁচে এসেছেন ; যদি কোনো কামরায় ঢোকার চেষ্টা করতেন তাহলে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতেন না | ওরা কিন্তু আপনাদের সাথে  সাথেই ছিলেন | ওখানে কেউ ছবি তুলতে গেলে কোনো ছবি উঠে না ,কারণ ওরা সাথে থাকে |
অদ্ভুত ব্যাপার হলো সারাদিন আমরা ভুতের সাথে থেকেও কেউ কোনো ভয় পেলাম না | খুশি হলাম এই ভেবে যাক বাবা ! ক্যামেরাটা তাহলে নষ্ট হয়নি | ভুতের ছবি না উঠুক মানুষের ছবি তো উঠবে !!
""""""
নন্দা  24.9.16

Monday, September 19, 2016


"আমার শরৎ"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
 [][][][][][][][][{[{[][]
শরতের আগমনে - 
শিউলির গন্ধে -
 মন মেতেছে - 
কাশফুলের ছন্দে | 
শরতের মাধুর্য -
মনকে দেয় দোলা -
প্রকৃতির অপরূপ শোভায় -
মানুষের অন্তর থাকে খোলা -
শিউলির সৌরভ আনে প্রাণে স্নিগ্ধতা -
শুভ্র- নীলাকাশ নববধূর ন্যায় ;
তাকিয়ে থাকে, মেঘের পর্দা সরিয়ে -
নিয়ে তার অতৃপ্ততা |
নদীর দুকূল উঠে ভরে ,
ধানের ক্ষেত মেলে তার সৌন্দর্যতা -
দোয়েল , কোয়েলের কাকলীতে মুখরিত সব ,
শরতের নীলাকাশে জ্যোস্না যেনো লুটিয়ে পরে |

নন্দা    17.9.16    1-30AP.
"যান্ত্রিক জীবন"
                   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
-----------------
অনেকদিন একসাথে থাকতে থাকতে -
দু'জনের মধ্যে একটা তিক্ততা -
চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে -
বাঁধা ছকে জীবন কাটাতে কাটাতে ,
যেন একটা অসার ক্লান্তি ঘিরে ধরেছে |
ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে -
সবাই যে যার জীবনে প্রতিষ্ঠিত ,
তোমার অবসর জীবনে টি .ভি .
আর আমার মোবাইল ফেসবুক -
একাকিত্বটাকে সঙ্গ দিয়ে ,
সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে |
ডাইনিং টেবিলেও আজ আর-
 কোনো কথা হয়না ,
যে কথা একদিন সারা রাতেও শেষ হত না ;
আজ যেন কারও কিছুই -
বলার বা শুনার নেই |
দিনে দিনে কেমন প্রযুক্তি ,
নির্ভর হয়ে পড়ছি -
সংসারের কাজগুলিও -
যন্ত্রের মতোই শেষ করছি ;
হয়তো এভাবেই কোনোদিন ,
একজন আর একজনকে ফেলে চলে যাবো ,
তখন কিন্তু কাছে না থাকার -
শূন্যতাটা ঠিক গ্রাস করবে !!
==========
নন্দা   18.9.16   1-45AM

Sunday, September 18, 2016

"সুখের আশায়"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) ########################### দু'টো  ধানক্ষেতের মাঝবরাবর যে সরু রাস্তাটা থাকে ,যাকে গ্রামের ভাষায় আল বলে ; সেই রাস্তা ধরে ধীরা জোড় পায়ে হাঁটতে লাগে | যে ভাবেই হোক বিমলকে স্কুল থেকে বেড়োনোর পরেই কথাটা বলতে হবে | আল বরাবর পনের থেকে কুড়ি মিনিট হাঁটার পর বড় রাস্তা | বিমলের স্কুল ছুটি হয় চারটে নাগাদ | বড় রাস্তার উপরেই একটা বেশ বড় বটগাছ | ওই অবধি আসতে ওর সময় লাগে মিনিট দশেক | তার মানে চারটে দশের মধ্যেই ধীরাকে ওই বট গাছের কাছে পৌঁছাতেই হবে | মা ,বাবা যে তার বিয়ের  একদম দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছেন  আজকের মধ্যেই  এটা বিমলকে জানাতেই হবে | বিমলের সাথে পরিচয় সেই ছেলেবেলা থেকে | এক সাথে স্কুলে পড়া ,একসাথে বড় হওয়া | পাশাপাশি দু'টি গাঁয়ে দু'জনের বাস | কখন যে বন্ধুত্ব থেকে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে তা নিজেরাই  বোধকরি কখনো বুঝতে পারেনি | কেউ কোনোদিনও পরস্পরকে "আমি তোমাকে ভালোবাসি"- কথাটাও বলেনি |কিন্তু দু'জনের মনই জানে ওরা একে অপরকে ভালোবাসে |         বিমল খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে | মেধাবী ছাত্র | বি .কম .পাশ করেই গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক পদে নিয়োগ পত্র পেয়ে যায় |এদিকে ধীরারও ইচ্ছা বি.এ. পাশ করার পর স্কুল টিচার হওয়া | সেও চাকরীর চেষ্টা করতে থাকে | কিন্তু হঠ্যাৎ করেই তার বাবা ছেলেবেলার বন্ধুর ছেলের সাথে ধীরার  বিয়ের একদম পাকা কথা দিয়ে বাড়িতে এসে সব জানান | সুভাষ পুলিশে চাকরী করে ,কলকাতার বাইরে থাকে | একা রান্নাবান্না কোরে খেতে হয় বলে তার বাবা ,মা তাকে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে  দিতে চান | সন্ধ্যায় পাড়ার চায়ের আড্ডায় বাল্যবন্ধু সুশোভন চ্যাটার্জী এ কথা পারতেই ধীরার বাবা অখিলেশ বাবু তার নিজের মেয়েটির কথা বলেন | সঙ্গে সঙ্গেই সুশোভন বাবু রাজী হয়ে যান | হাতে মাত্র পনেরো দিন সময় | বাড়িতে এসে তিনি যখন ধীরার মাকে সব জানান ; আড়াল থেকে ধীরা সব শোনে | মাথায় তার বাজ ভেঙ্গে পড়ে | পরের দিনসে বাড়িতে কাউকে কিছুই না বলে বেড়িয়ে পড়ে যেভাবেই হোক বিমলকে সব জানাতে হবে |   বড় রাস্তায় উঠেই সে দেখতে পায় বিমল সাইকেল চালিয়ে আসছে | ধীরাকে দেখেই সে জানতে চায় , -- তুমি এখন এখানে ? --তোমার সাথে দরকারী একটা কথা আছে | ধীরা আস্তে আস্তে বিমলকে সব কথা জানায় শান্ত স্বভাবের বিমল সব শুনে বলে , --তুমি বাড়ি যাও  | আমি মাকে কালই তোমাদের বাড়ি পাঠাবো | --কিন্তু আমার বাবা যদি রাজী না হন ? উনি যে ভীষণ এক কথার মানুষ | --চিন্তা কোরো না | সব ঠিক হয়ে যাবে | --বাবা যদি রাজী না হন ,আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো | বিমল একগাল হেসে বলে , --মাথাটা একদম খারাপ হয়ে গেছে | আরে  জম্ম ,মৃত্যু ,বিয়ে -বিধাতায় ঠিক করে রাখেন | তিনি যদি আমাদের দুজনের মিলন লিখে থাকেন ; তাহলে যে ভাবেই হোক মিলন আমাদের হবেই | ভেবো না , বাড়ি যাও | মাকে আমি সকালেই তোমার বাবার কাছে পাঠাবো |    কিন্তু না ,অখিলেশ বাবু বিমলের মায়ের কথা রাখেন না | যেহেতু তিনি তার বাল্যবন্ধুকে কথা দিয়ে ফেলেছেন তাই তিনি অতি শান্তভাবে হাত জোড় করেই ফিরিয়ে দেন | তবে একথাও তিনি বলেন যে দু'দিন আগে যদি তিনি এ প্রস্তাব নিয়ে আসতেন তাহলে তাকে খালি হাতে ফিরতে হত না |   ধীরার মাকে তিনি বলে দেন ,মেয়েকে জানিয়ে দিতে যদি সে তার সম্মান ক্ষুন্ন করতে না চায় ; তাহলে সে যেন এই বিয়েতে আপত্তি না করে | সে যদি সুভাষের সাথে বিয়েতে  মত না দেয় তাহলে তার বাবাকে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে | জীবনে কোনোদিন কথার খেলাপ আমি করিনি ,গ্রামের ভিতর যেভাবে মাথা উঁচু করে আমি বেঁচে আছি বাকি জীবনটাও যেন সেই ভাবেই বাঁচতে পারি | আমার বাঁচা ,মরা এখন তোমার মেয়ের হাতে | ও যদি চায় বিমলকে বিয়ে করতে পারে তবে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়ে  | তবে সে ক্ষেত্রে তাকে তার বাপের মরা মুখ দেখতে হবে |   অসহায় ,নিরুপায় ধীরা বাপের কথাকেই মেনে নিয়ে ,ছেলেবেলার ভালোবাসাকে গলা টিপে মেরে ,আজম্ম লালিত স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে সুভাষের গলায় মালা পড়ায় |বিয়ের প্রায় মাস খানেক বাদে সুভাষ তার কর্মস্থলে চলে যায় ; টুকিটাকি সাংসারিক জিনিসপত্র কিনে সে সাতদিনের মধ্যেই ধীরাকে তার কাছে নিয়ে যাবে এই কথা বলে | কিন্তু নিত্য সে রাতে ফোন করে ধীরার সাথে কথা বলতো | মেয়েদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেগুলি তারা মেনে নিতে বাধ্য হয় | বুকে পাথর চাপা দিয়ে , ছেলেবেলার ভালোবাসাকে গলা টিপে মেরে ,চোখের জল লুকিয়ে লুকিয়ে মুছে , বাবার মুখের দিকে তাঁকিয়ে - ধীরাও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলো সুভাষকে মেনে নেওয়ার| কিন্তু সুভাষ যাওয়ার পর রাতে  যেদিন প্রথম তার ফোন আসে না ; সেদিন কিছুটা হলেও এক অজানা আশংখায় ধীরার বুকটা কেঁপে উঠেছিল | আর তার এই আশঙ্ক্ষাকে সত্যি প্রমান করে পরেরদিন সকালবেলাতেই ভয়ংকর  দুংসংবাদটি আসে | সুভাষ যেখানে থাকতো অথ্যাৎ গুয়াহাটিতে কোনো একটি শপিংমলে জঙ্গিহানার মোকাবেলা করতে যেয়ে সুভাষ জঙ্গি পুলিশের  সংঘর্ষে প্রাণ হারায় |তিনদিন পর সুভাষের লাশ বাড়িতে আসে | আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই ধীরাকে 'অপয়া' বলেই ভাবতে থাকে | এমনকি অনেকেই তাকে সামনাসামনিও একথা বলে | দেড় মাসের বৈবাহিক জীবন শেষ করে যে মেয়েটি ক'দিন আগেই লালবেনারসী শাড়ি , একমাথা সিঁদুর আর গা ভর্তি গয়না নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে গেছিলো -সেই মেয়েটিই আজ সাদা থান পড়ে নিরাভরণ হয়ে পুনরায় বাপের বাড়িতেই চলে আসে |   এই ঘটনার পনের ,বিশদিনের মাথায় ধীরা বুঝতে পারে সে সন্তান সম্ভাবা | নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্নায় সে রাতের অন্ধকারে নিজেকে শেষ করে দিতে চায় | পুকুরপাড়ে যেয়ে সে যখন জলে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হয় তখন পিছন থেকে হঠ্যাৎ  কে যেন তাকে হাত ধরে টান দেয় | পিছন ফিরে বিমলকে দেখে সে চম্কে যায় | বিমল এত রাতে এখানে এলো কি করে ? তবে কি সে রোজই এখানে আসে ?  --তুমি এখানে ? এত রাতে ? সে কথার উত্তর না দিয়ে বিমল তার কাছে জানতে চায়, --এ কি করতে যাচ্ছিলে তুমি ? --আর তো আমার বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়না | সব দরজায় আমার সামনে আজ বন্ধ | বাবার কথা অনুযায়ী  অসহায়ের মতো নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়েসব কিছু মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম | কিন্তু আমার কপাল মন্দ | তাই দেড় মাসের মধ্যেই আমি বিধবা হলাম | এই বেশেই হয়তো জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতাম | কিন্তু সেখানেও ঈশ্বর বাঁধ সাধলেন ! আমি মা হতে চলেছি - এই ভাবে বাঁচার কোনো অধিকার নেই | সকলে বলে আমি নাকি অপয়া , প্রথম প্রথম এই কথায় খুব কষ্ট পেয়েছি কিন্তু এখন নিজেই নিজেকে অপয়া ভাবি | --তারমানে তুমি দু'দুটি জীবনকে একসাথে মারতে চলেছিল ? আমার প্রতি কি তোমার বিন্দুমাত্র ভরসা নেই ? একবারও তুমি আমার কথাটা ভাবলে না ? দুজনে মিলে এর একটা সমাধান তো আমরা বের করতেই পারি | বিমল খুব শান্তভাবে কথাগুলি ধীরাকে বলে | তারপর ধীরাকে অনেক বুঝিয়ে ভোররাতে ধীরাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়িতে আসে |   সকালবেলা সে তার মাকে বলে , --বাবা মারা যাওয়ার পর তুমি আমাকে অনেক কষ্ট করেই মানুষ করেছো | আমি কোনদিনও তোমার কথার অবাধ্য হয়নি | তুমি তো জানো মা , আমি সেই ছেলেবেলা থেকেই ধীরাকে ভালোবাসি | কিন্তু ধীরার বাবা অন্য জায়গায় কথা দেওয়াতে তোমায় খালি হাতে ফিরতে হয়েছিলো | দেড় মাসের মাথায় ধীরা স্বামী হারা হয় | আমরা কি পারিনা মা, ওর জীবনটাকে সুন্দর ভাবে গড়ে দিতে | --আমরা আর কিবা করতে পারি বাবা ! --আমি যদি ওকে বিয়ে করতে চাই ; তুমি কি আপত্তি করবে ? --তা কি করে সম্ভব ? একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করলে পাড়ার লোক কি বলবে ?  -- কিন্তু মা তাহলে তো দু'টো জীবনই নষ্ট হয়ে যাবে | --দু'টো জীবন মানে ?  --ধীরার এই অবস্থায় আমি তো অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবো না | সেদিক থেকে দেখতে গেলে আমার আর ধীরার দুজনের জীবনই শেষ হয়ে যাবে | পাড়ার লোকের কথা ভাবতে গেলে তোমার ছেলের জীবনটা যে নষ্ট হয়ে যাবে | আমি তোমার দুটি পায়ে পড়ি মা | তুমি আর একবার ধীরার বাবাকে যেয়ে বলো | এবার তোমাকে খালি হাতে ফিরতে হবে না |    অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে বিমলের মা শোভাসিনীদেবী রাজী হন ধীরার বাবার কাছে যেতে |তিনি যেয়ে  অখিলেশ বাবুকে বলেন যে তার সদ্য বিধবা হওয়া কন্যাকে পুত্রবধূ হিসাবে পেতে চান | অবাধ্য অশ্রুতে অখিলেশবাবুর চোখ দু'টি ভোরে গেলো | তিনি শোভাদেবীকে বললেন ,
--বাবা হয়ে মেয়ের সুখ খুঁজতে গিয়ে তার জীবনে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছি | আপনি আবার আমার অভাগী মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে চাইছেন ; এটা তো আমি স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি | এ যে আমার জীবনে চরম পাওয়া | আমাকে আপনি সারাজীবনের জন্য ঋণী করলেন দিদি !

রেজিস্ট্রি করে বিমল ধীরাকে বিয়ে করলো | নিদৃষ্ট সময় মত ধীরার একটি কন্যা সন্তান হয় | বিমল আনন্দে ধীরাকে চুমায় ,চুমায় ভরিয়ে দেয় | কিন্তু ধীরার দু'চোখ বেয়ে জল পড়তে দেখে বিমল বললো ,
-- তুমি খুশি হওনি ?
--কিন্তু ওতো তোমার ----
ধীরার কথা শেষ হয়না | বিমল হাত দিয়ে ধীরার মুখ চেঁপে ধরে বলে ,
-- চুপ ,কখনো আর এ কথা বলবে না | ও তোমার আর আমার সন্তান | ও এসছে বলে আমাদের ভালোবাসার কোনো চিড় ধরেনি |  ওর জন্যই এত তাড়াতাড়ি আমি তোমায় পেয়েছি |
--তুমি মানুষ ? নাকি দেবতা ?
--আমি ?
বলেই হাসতে হাসতে বলে ,
--আমি তোমার স্বামী , আমাদের সন্তানের বাবা | আপাতত এটুকুই আমার পরিচয় |
===========শেষ=============
নন্দা    12.9.16   2AM.
"আমার শরৎ"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
[][][][][][][][][{[{[][]
শরতের আগমনে -
শিউলির গন্ধে -
মন মেতেছে -
কাশফুলের ছন্দে |
নন্দা

Saturday, September 17, 2016

"আগমনী বার্তা"
++++++++++
শরৎ তুমি এসেছো দ্বারে -
মা আসবেন বাপের ঘরে -
আকাশ সেজেছে নীল- সাদায় -
কাশবন যেনো চামর দোলায় |
সকালবেলা ঘাসের আগায় -
শিশির বিন্দু মন যে মাতায় -
শিউলি যেন উঠছে হেসে -
প্রকৃতি সেজেছে রানীর বেশে -
প্রবাসী সব ফিরছে ঘরে -
কাটাবে পুজো যে যার মতো করে |
নন্দা  15.9.16    9-30pm.

Thursday, September 15, 2016


"চিরকুট"
€£¥€£¥€£¥
সাগর সেঁচে মুক্ত আনে -
মানুষের মন পাওয়া যে দায় -
করবে তুমি যাদের তরে -
পিষবে তারাই যাঁতাকলে |
নন্দা

Wednesday, September 14, 2016

সমাধান"                                                             রতন আজ খুব খুশী l  তার মনে হচ্ছে সে তার বাবা আর মামনির জন্য কিছু একটা কোরতে পেরেছে l  এতদিন দুহাত পেতে শুধু বাবা আর মামনির কাছ থেকে নিয়েই গেছে l  বিনিময়ে কিছুই সে কোরতে পারেনি- আর করবেই বা কেমন করে ?  তার তো কোনো উপায় ও ছিলো না l পাচ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে মামাবাড়িতে মানুষ l  দাদু, দিদিমা, আর মাসি l মাকে হারিয়ে বাবার হাত ধরে যেদিন ছোট রতন কনিকার সামনে এসে দাড়ায়; তখন কনিকা দুহাত বাড়িয়ে রতনকে বুকে চেপে ধোরে ডুকরে কেদে  ওঠে l দিদির মৃতুর শোক যেনো ছোট রতনকে দেখে দিগুন হোয়ে বুকে চেপে বসে l দিদির মুখটা যেনো কেঁটে রতনের মুখে বসিয়ে দিয়েছে l দাদু দিদিমা বেচে থাকতেই মাসির পড়াশুনা শেষ হোয়ে যায় l  তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন কণিকার  বিয়ে দেয়ার l কিন্তু কণিকা নাছোরবান্দা l সে চলে গেলে রতনকে কে দেখবে ? রতনও তার মামনিকে পেয়ে মায়ের কষ্টটা আস্তে আস্তে ভুলে যায় l কণিকা রতনকে তাকে মামনি বলে ডাকতে শিখিয়েছে l রতনকে কণিকা চোখে হারায় l হারাধনবাবু কণিকার বাবা অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কেরানী l খুব  স্বচ্ছলতা না থাকার কারণে জামাই অর্থ্যাত রতনের বাবা মানস রায়ের কাছ থেকে তাকে টাকা নিতেই হয় l কারণ কণিকা রতনকে বড়ো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ ভর্ত্তি করেছে l টিউসন ফি ও অন্যান্য খরচ দিয়ে বেশ কয়েক হাজার টাকা বেড়িয়ে যায় l যেটা হারাধন বাবুর পেনসনের টাকায় সংকুলান হয়না l তাই ইচ্ছা না হলেও জামাই এর কাছ থেকে তাকে টাকাটা নিতেই  হয় l কণিকাও গুটিকয়েক ছেলেমেয়েকে বাড়িতে পড়ায় l মানস বাবুও আর বিয়ে করেন না l বড়ো কোম্পানির সেলস ম্যানেজার এর হোম ডেলিভারে ই চলে যায় l লতিকার ব্যবহৃত জিনিস পরতো আজও তিনি যত্ন কোরে আগের মতন ই গুছিয়ে রেখেছেন l কণিকার তত্ত্বাবধানে রতন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক রেকর্ড মার্কস নিয়ে পাশ করে l মানসবাবুর ইচ্ছা ছিলো ছেলেকে ইন্জিনিয়ারিং পড়ানোর l  কিন্তু কণিকার ইচ্ছা রতন ডাক্তারি পড়ুক l মানস বাবু কণিকার ইচ্ছাকেই সম্মান জানান l কালের নিয়মে দিন মাস বছর ঘুরতে ঘুরতে কনিকারও বিয়ের বয়স পার হয়ে যায় রতন ডাক্তারী পাশ করে প্রাকটিস শুরু করে l দাদুর মৃতুর এক বছরের মধ্যে দিদিমাও গত হয়েছেন l এখন কণিকা  ও রতনের ছোট সংসার l মাঝে মাঝে মানস বাবু আসেন l দু একদিন থেকে আবার ফিরে যান l কণিকা চায়, এবার রতনের বিয়ে দিতে l মানসবাবুর ও এতে সম্মতি আছে l কিন্তু রতন ভাবে যে মানুষ দুটি তাকে মানুষ কোরতে নিজেদের সুখ- স্বছন্দ বিসর্জন দিয়েছেন; তাদের এই ঋণ সে তো কোনদিনও শোধ করতে পারবে না  l তাদের জন্য সে কি কিছুই করতে পারে না ? অনেক ভেবে চিন্তে সে ঠিক করে- মামনির সাথে সে বাবার বিয়ে দেবে l তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে l কেউ ই তো রাজী হবে না l কিন্তু যে ভাবেই হোক রাজী তাদের করাতেই হবে l সে উভয়ের সাথেই আলাদা আলাদা কথা বললো l যথারীতি উভয়েই এটা অসম্ভব বলে জানিয়ে দেয় l এবার শুরু হয় রতনের খেলা l প্রথমে রতন তার মামনির সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা বন্ধ কোরে দিলো l কণিকাও বুঝতে পারছে ছেলে তার রাগ করেছে l কিন্তু সে যা বলছে সেটাও বা কিকরে সম্ভব ? এর ই মাঝে রতন একদিন ব্রেকফাস্ট না করেই চেম্বার এ চলে যায় l সে জানতো তার মামনিও না খেয়ে থাকবে l মনেও খুব কষ্ট পাবে l কিন্তু কি করবে সে ? সে তো কোনো সমাধানের রাস্তা খুঁজে পারছে না l কণিকা ছেলের মনের অবস্তা বুঝতে পেরে দুজনের ই খাবার নিয়ে সটান চেম্বার এ যেয়ে হাজিরহয়  যথারীতি রতন খেতে চায়না l বার বার রতনকে পিড়াপিড়ি করার পর ছল ছল চোখে কণিকা রতনকে বলে,  "তুই কি চাস বলতো "? রতন তখন বলে, "যতদিন না তোমরা বিয়েতে রাজী হচ্ছো ততদিন আমি কিছুই খাবো না "l "তুই তো জানিস বাবা তোর খাওয়া না হোলে আমি খেতে পারিনা l" "তুমিও তো জানো আমি খিদে সহ্য কোরতে পারিনা l এখন আমার প্রচন্ড খিদেতে কষ্ট হচ্ছে l আর তা ছাড়া আমি তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবোনা - সেটা তুমি জানো l আর আমিও জানি তুমি আমায় ছেড়ে থাকতে পারবে না l সারাটা জীবন একা একা কাটিয়েছেন আমরা সবাই মিলে একজায়গায় থাকব l" কণিকা চুপ কোরে কথাগুলি শুনে বলে, "সে হবেক্ষণ আমি তোদের সাথেই যেয়ে থাকবো এখন খেয়ে নে বাবা l" "না তাহবেনা, তুমি তোমার যোগ্য সম্মান নিয়েই ঐ বাড়িতে থাকবে যাতে কেউ কোনদিন তোমায় কিছু বলতে না পারে l তোমায় কেউ কিছু বললে আমি তা মেনে নিতে পারবো না l" কণিকা  বুঝতে পারে এটা রতন কার উদেশ্যে বললো l সে বিয়ে কোরলে যদি তার বৌ তার মামনিকে কিছু বলে সে মেনে নিতে পারবে না l                                                                                            অনেক জোড়া জুড়ির পর কণিকা ও মানসবাবু বিয়েতে রাজী হন l তবে পুরোহিত ডেকে মন্ত্র  উচ্চারণের  মধ্য দিয়ে নয় l রেজিস্ট্রি কোরে কয়েকজন নিকট আত্মীয়র সামনে বিয়ে হয়ে গেল l কণিকা তার রতনকে নিয়ে স্বামীর সংসারে চলে গেল l বিয়ের কয়েকদিন আগে রতন এসে তার বাবার সম্মতি নিয়ে তার মায়ের জিনিস পত্র যেগুলি মানসবাবু এতোকাল আগলে ছিলেন, একটা ট্রান্ক ভর্তি করে স্টোরে রেখে যায় l তার মামনিকে যোগ্য সম্মান দিয়ে নিজের বাড়িতে এনে খুব খুশি l তার মনে হচ্ছে যে সে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে l                                                                       এর ঠিক মাস ছয়েক পরে কণিকা নিজে পছন্দ কোরে তার রতনের বৌ সুমনাকে বরণ কোরে ঘরে তোলে l সুমনা ও খুব লক্ষী মন্ত মেয়ে l শ্বসুর শ্বাশুড়ি কে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ভক্তি করে l শ্বাশুড়ি যেনো তার বন্ধুর মত l রতন মনে মনে ভাবে ভাগ্য কোরে সে জম্মগ্রহণ করেছিল l কণিকার সংসার সুখে আনন্দে নুতন ছন্দে কালের গতিতে এগিয়ে চলে l দুবছরের মাথায় রতন ও সুমনার একটি ফুটফুটে ছেলে হয় l কণিকা সংসারের সকল দায়িত্ব সুমনাকে দিয়ে তার দাদুভাই কে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে l                                           ২০ ৯ ১৫

পাথর কাটার যন্ত্র দেখেছ ?                          
শুনেছো কি তার শব্দ ?                              
দেখেছো কি ?                                             কোনো মানুষকে আঘাত আর অপবাদে           
হয়ে যেতে নিস্তব্ধ /.                                                          11.12.15.
"সিঁদুর" (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
প্রথম দেখার সেই যে স্মৃতি ,
    পড়ছে শুধুই মনে -
রচেছিলাম স্বপ্ন সেদিন ,
    শুধুই তোরই সনে |
তুই না বুঝিস ,বুঝেছিলো
    অন্য সকলে -
তাই বুঝি তোকে সরিয়ে দিলো ,
    আমার হতে দূরে |
বাবা,মায়ের কথামতো ,
    করলি যখন বিয়ে -
ভেবেছিলাম সুখী হ তুই ,
    অন্য কাউকে নিয়ে |
শ্বশুড় বাড়ি গেলি তুই ,
    লাল বেনারসীতে সেজে -
বছর ঘুরতেই ফিরে এলি ,
    বিধবার বেশে |
ইচ্ছা করে দৌড়ে গিয়ে ,
    সিঁথি তোর রাঙ্গাই -
তোর কষ্টে কাঁদে প্রাণ ,
    সমাজের ভয়ে পিছাই |
একবার তুই এগিয়ে আয় ,
    ওই চৌকাঠটি পিছনে  ফেলে -
সারাজীবন থাকবো সুখী ,
   তুই আমি মিলে |
নন্দা  14.9.16  9PM.

"নিজেরাই দোষী"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
___________________+______________________
সরল জীবনে জটিল অঙ্ক ,
  মেলে না যেন কিছুতেই ;
হাঁটতে গেলেই হোঁচট খাওয়া ,
  পরস্পরকে ফেলার চেষ্টা নীচুতেই |
বিশ্বাস যেন মরীচিকা আজ ,
  ভালোবাসা হয়েছে সুখপাখি ;
স্নেহ ,ভালোবাসা হারিয়ে গেছে ,
  দিচ্ছে একে অপরকে ফাঁকি |
অর্থ পিপাসু সকলেই আজ ,
  নিজেই হারাচ্ছে নিজের মান ;
গাড়ি ,বাড়ির পিছনে ছুটতে গিয়ে ,
  কলুষিত করছে নিজেরাই সমাজ |
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী  14.9.16   12-30AM

Tuesday, September 13, 2016


"চিরকুট"
&&&&&&&&
স্বপন মাঝেই দেখি তাকে ,
   স্বপ্নেই ছুঁয়ে থাকি ;
চাই না তাকে বাস্তবেতে ,
   যদি দেয় সে ফাঁকি |
'নন্দা'

Saturday, September 10, 2016


"ভুল  যখন ভাঙলো "                              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী                                     ঘরে ঢোকার আজ তার আর কোনো অধিকার নেই ; সে অধিকার  বছর আটেক আগেই হারিয়েছে |তাই সে পর্দার আঁড়ালেই দাঁড়িয়ে তার শ্বাশুড়ীকে দেখছিলো | আগে অবশ্য সে জেঠিমা বলেই ডাকতো | কিন্তু ঈশ্বরের অপার কৃপায় শান্তিদেবী আজ তার শ্বাশুড়ি | পর্দার আঁড়ালেই দাঁড়িয়ে তার মনে পড়তে লাগে অতীত দিনগুলির কথা | মা কাজ করতেন মিলনদের বাড়ীতে | মায়ের যেদিন শরীর খারাপ হতো সেই আসতো মায়ের বাসনমাজা ,ঘর মোছার কাজগুলি  করতে | জেঠিমা তাকে খুবই স্নেহ করতেন | মাধ্যমিক পাশ করে বিদিশা টাকার অভাবে পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছিলো | জেঠিমা তাকে অনেকবার বলেছিলেন ,"তুই পড়াশুনাটা আবার শুরু কর ,আমি তোর সব বইপত্র কিনে দেবো ,তোর মায়ের মাইনেটাও বাড়িয়ে দেবো |" কিন্তু বিদিশা রাজী হয়নি | সে একটা সেলাই স্কুলে ভর্তি হয়ে সেলাই শিখতে শুরু করে | ছ'মাসের কোর্স দেখতে দেখতে ছ'মাস কেটে যায় | সেলাই শিখে প্রথম প্রথম দোকান থেকে ব্লাউজ এনে হেম দেওয়া ,হুক লাগানো ইত্যাদি করতে শুরু করে | অভাবের সংসারে কিছুটা হলেও তাতে উপকার হতে লাগে |                             বিধবা শান্তিদেবীর বড় ছেলে মিলন রাজ্য সরকারের উচচপদস্থ কর্মচারী |বলতে গেলে খুব কমই দেখা হত বিদিশার সাথে মিলনের |মিলন সকাল আটটা নাগাদ বেড়োতো আর ফিরতো রাত আটটা নাগাদ | যে সময়ে বিদিশার মা তাদের বাড়িতে কাজে যেতেন সেই সময় মিলন ঘরে থাকতো না | মায়ের শরীর খারাপ হলে বিদিশা যখন নিজে কাজ করতে যেত ;তখন সে মায়ের কাজের সময়টাকেই অনুসরণ করতো |  হয়তো মিলন কোনোদিন অফিস যায়নি বা তার ছুটির দিনে যদি বিদিশা কাজে যেত,   তখন হয়তো মিলনের সাথে তার দেখা হত | কিন্তু কথা হত খুব কমই | বিদিশা গরীবের মেয়ে হলে কি হবে , তার চেহারা দেখে কেউ সেটা বুঝতে পারবে না | বড়, বড় টানা টানা দুটি চোখ ,কোমর অবধি ঘন কালো চুল ,গায়ের রং ফর্সা - নাকটা ততটা সুন্দর না হলেও মুখের সাথে মানিয়ে গেছে | এক কথায় বিদিশাকে সুন্দরী বলা চলে | মিলন সেভাবে বিদিশাকে কোনোদিনও দেখেনি  ; সামান্য চোখাচোখি যা হয়েছে আর তার ধীর ,স্থির স্বভাবটি মিলনের খুব ভালো লাগে | মিলনও খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে | কিন্তু তার ছোট ভাই মলয় ঠিক তার বিপরীত | সে মাঝে মধ্যেই বিদিশাদির পিছনে খুব লাগতো | দুজনের ভিতর চিৎকার ,চেঁচামেচিও হত | শান্তিদেবী মাঝে মাঝে বলতেন ," তোরা দুটোতে যা কান্ড করিস ,আমার মনে হয় তোরা যেন পিঠাপিঠি ভাইবোন |" শান্তিদেবী বিদিশাকে বড্ডো ভালোবাসতেন | কিন্তু তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি ,মিলন তার মাকে এমন একটা প্রস্তাব দেবে |             মিলনের মা যখন তার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে শুরু করেন  মিলন সরাসরি তার মাকে যেয়ে বলে বিদিশার কথা | মা এ কথা শুনে ছি ! ছি ! করতে লাগেন | একটা কাজের মহিলার মেয়ের সাথে বিয়ে ? না - এটা কিছুতেই তিনি মানতে পারবেন না | মিলন তার মাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে | মিলন তার মাকে বলে যে অভাবের জন্য তারা লোকের বাড়িতে কাজ করে ; খারাপ কোনো কাজ তো করেনা |আমিও তো কাজ করি বিনিময়ে টাকা পাই ; ওরাও তো তাই | তাছাড়া বিদিশা লেখাপড়া জানে ,দেখতেও মন্দ নয় | চেনাজানা একটি মেয়ে - অসুবিধাটা কোথায় ? শুধু ও কাজের মাসির মেয়ে বলে ? শান্তিদেবী কোনো কিছুতেই মিলনের যুক্তি মানতে রাজী নন | কিন্তু এই যে ছেলের ইচ্ছা আর মায়ের অমত - এসব কিছুই বিদিশা বা তার মা জানতেন না | মিলন তার সিদ্ধান্ত থেকে সরবে না বুঝতে পেরে তার মা তাকে জানিয়ে দেন ; বিদিশাকে যদি বিয়ে করতেই হয় , এই বাড়িতে তাদের থাকা চলবে না | বিদিশাকে তিনি কোনোদিনই মেনে নেবেন না |    পরেরদিন যখন বিদিশা কাজে আসেন শান্তিদেবী তাকে শান্ত ভাবেই কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেন | অপরাধ কি জানতে চাওয়ায় তিনি নিশ্চুপ থাকেন | অনেক কাকুতি মিনতি করেও তিনি জানতে পারেন না তার অপরাধটা ঠিক কোথায় ? পয়সাকড়ি যা পাওনা ছিলো তাও মিটিয়ে দেন | সেদিনই সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে মিলন বিদিশাদের ছোট্ট ভাড়া করা বাড়িটায় যেয়ে উপস্থিত হয় | সকল ঘটনা খুলে বলায় তারা মা ,মেয়ে দুজনেই হা হয়ে যায় | বিদিশার মায়ের অনুমতি আছে কিনা মিলন জানতে চায় | তিনি মিলনের দু 'হাত ধরে অঝোড়ে কাঁদতে থাকেন ; তার মেয়ের সৌভাগ্যের কথা ভেবে |কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যান | মিলন বুঝতে পারে বিদিশার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেন তিনি |  মিলন বিদিশার মত জানতে চাইলে সে তাকে জানায় - " মা যা বলবেন তাই হবে | কিন্তু জেঠিমার আশীর্বাদ না পেলে কি সুখী হবো ?"  মিলন বলে , " সেটাও আমি ভেবেছি | তবে আমি জানি মা একদিন ঠিক মেনে নেবেন |"    বিদিশাকে রেজিষ্ট্রি করে বিয়ে করে মিলন ভাড়া বাড়িতে যেয়ে ওঠে | অভিমানী শান্তিদেবী কোনো কিছুতেই আর বাঁধা দেন না | ছ'মাসের মাথায় মিলন বদলী নিয়ে শিলিগুড়ি চলে যায় | ভায়ের সাথে ফোনে যোগাযোগটা থেকেই যায় | ভায়ের কাছ থেকেই মিলন মায়ের খবরাখবর নিত | দেড় বছরের মাথায় তাদের একটি পুত্র সন্তান হয় | ছোট ছেলের মারফত শান্তিদেবী তার নাতি হওয়ার খবরটাও পান | মিলনের বিয়ের বছর চারেক বাদে মলয়ের বিয়ে দেন তার মা | ভালো বংশ ,মেয়ে উচচ শিক্ষিত ,গান জানা মেয়ে নিজে পছন্দ করে বেশ ঘটা করে ছোট ছেলের বিয়ে দেন |   গোলটা বাঁধে তখন থেকেই | মলয়ের বৌ রীনা সংসারের কোনো কাজই জানে না | শান্তিদেবী অনেকবার নিজে হাতে করে তাকে রান্না বান্না শিখাতে গেছেন | কিন্তু সে রান্না ঘরে ঢুকতেই নারাজ | এদিকে তাঁরও বয়স হয়েছে | রান্নার লোক ,কাজের লোক - সবই মলয় রাখতে বাধ্য হয়েছে | কিন্তু তারা সপ্তাহে চারদিন আছে তো তিনদিন আসেনা | সেই সময় শান্তিদেবীকে একা হাতেই সব সামলাতে হয় | এই ভাবে বছর খানেক চলার পর শান্তিদেবী হঠ্যাৎ একদিন বাথরুমের ভিতর পরে যেয়ে কোমরে খুব চোট পান | একেবারেই শয্যাশায়ি তখন | কিন্তু রীনা সংসার আর তার শ্বাশুড়ির যাবতীয় কাজ করতে অস্বীকার করে | মলয়ের সাথে এই নিয়ে ঝামেলা করে সে বাপের বাড়ি চলে যায় | অনোন্যপায় মলয় তার দাদাকে সব জানায় | দু  'দিনের মধ্যেই ছেলে আর বৌকে নিয়ে মিলন কলকাতা চলে এসে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠে | মালপত্র সেখানে রেখেই সে বিদিশার কাকুতি মিনতিতে তাদের নিয়েই মায়ের কাছে আসে |এত বছর পরে মায়ের কাছে এসে সে মায়ের এই অবস্থা দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না | হাউ ,হাউ করে কাঁদতে লাগে | শান্তিদেবী তাকে শান্তনা দিতে দিতে বলেন ," আরে কাঁদছিস কেনো ? আমি তো এখনো বেঁচে আছি রে ! তুই কেমন আছিস ?" কথা বলতে বলতে দেখেন একটি ছোট ছেলে এসে মিলনের গা ঘেসে এসে দাঁড়িয়েছে | পর্দার আড়ালে বিদিশা তার ছেলের হাত ধরেই দাঁড়িয়ে ছিলো | অন্যমনস্কভাবে পুরানো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে খেয়ালই করেনি কখন ছেলে হাত ছেড়ে দিয়ে বাবার কাছে চলে গেছে | শান্তিদেবী মিলনের কাছে জানতে চাইলেন ," এটা তোর ছেলে না ?" "হু" বলেই মিলন মিলন ছেলের দিকে তাঁকিয়ে বললো ,"তুমি ভিতরে এসছো কেন ? যাও মায়ের কাছে যাও "| শান্তিদেবী কথাটা শুনলেন ;কিন্তু একটি হাত বাড়িয়ে দিলেন তার নাতির দিকে | ছোট্ট দীপ হাতটি ধরে বললো ," তোমার কি হয়েছে ঠাকুমা ?"দীপের মুখে ঠাকুমা ডাকটি শুনে শান্তিদেবী খুব খুশি হলেন | আনন্দে তার  দু'চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে লাগলো | তিনি তার নাতিকে বললেন ,"আমি যে তোমার ঠাকুমা ,এটা তোমায় কে বললো?" " কেন মা-ই তো তোমায় দেখিয়ে বললো ,ওই দেখ ওই যে তোর ঠাকুমা | মার কাছে তোমার কত গল্প শুনেছি | তুমি খুব ভালো রান্না করতে পারো , ভালো ভালো গল্প জানো | আচ্ছা ঠাকুমা তুমি কবে আমায় রান্না করে খাওয়াবে ?"  "আমি যে উঠতেই পারিনা ভাই !কি করে রান্না কোরবো ?"  " জানো ঠাকুমা আমার মা না খুব সুন্দর রান্না করে ,তুমি খেলেই সুস্থ্য হয়ে যাবে | কিন্তু মা বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে কেঁদেই চলেছে | ভিতরে আসছে না | আমাকেও শক্ত  করে ধরে রেখেছিলো | কিন্তু আমি তোমার কাছে পালিয়ে এসছি |" মিলন ছেলেকে এক তাড়া দিয়ে বলে ," চুপ করো ,কথা একবার শুরু করলে আর শেষ করো না | যাও এবার মায়ের কাছে যাও | " দীপ বাবার তাড়া খেয়ে মুখ নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে | শান্তিদেবী কিছুক্ষন চুপ করে থেকে দীপকে বলেন ," ভাই ,আমি তো উঠতে পারি না ; তুমি আমার হয়ে একটা কাজ করে দাওতো | বাইরে যেয়ে মায়ের হাতটা ধরে জোড় করে আমার সামনে এনে দাঁড় করাও |" ব্যাস বলার অপেক্ষা ; দীপ এক ছুটে মায়ের কাছে যেয়ে মায়ের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো | বিদিশা কথাটা  শুনতে পেয়েছিলো ; সে ছেলের হাত ধরে ভিতরে এসে দাঁড়ালো | শান্তিদেবী এবার  তাকে বললেন ,"তুই তো এত অবাধ্য ছিলিনা , এতো দূরে দাঁড়িয়ে কেন ? আমার সামনে আয় বলছি | কতদিন তোকে দেখিনা | এখন কেমন দেখতে হয়েছিস , দেখি কাছে আয় |" বিদিশা এসে  শান্তিদেবীর পায়ের কাছে মাথা রেখে কাঁদতে লাগে | তিনি তাকে বলেন  ," কাঁদছিস কেন রে বোকা ! তুই তো কোনো অন্যায় করিস নি | অন্যায় তো আমি করেছি | আমার ছেলে মোহরটা ঠিক চিনেছিল | আমিই বুঝতে পারিনি মা | আয় আমার সামনে আয় | তোদের তিনজনকে একটু একসাথে দেখি | আজ বুঝতে পারি রে - বংশমর্যাদা ,কৌলিন্য এসব বিচার না করে যদি সাধারণ একটা মেয়ে হিসাবে তোকে দেখতাম ; তাহলে মনেহয় আমার এই পরিণতি হত না |"   শান্তিদেবীর কথামতো সেদিন রাতেই মিলন যেয়ে তার বন্ধুর বাড়ি থেকে মালপত্র নিয়ে আসে |তারা তিনজনেই সেদিন থেকে ওই বাড়িতেই থেকে যায় |  বিদিশা একা হাতেই রান্না ,শ্বাশুড়ির সেবা যত্ন করতে  করতে শুরু করে | রান্নার লোকও ছাড়িয়ে দেয় | কিন্তু কাজের মাসিকে মলয় কিছুতেই ছাড়াতে দেয় না | বলে ," তুমি একা হাতে কিছুতেই পেরে উঠবেনা ; এরপর তুমি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে আমরা না খেতে পেয়ে মারা যাবো |" বলেই হাসতে শুরু করে | মলয়কে বলে বলে তাকে পাঠিয়ে  রীনাকে তার বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে বাধ্য করে |খাবার গুছিয়ে রীনাকে খেতে ডাকলে সে এসে খেয়ে যায় | বিদিশা কিছু বললে 'হু' অথবা 'না'- বলে উত্তর সারে | দেখতে দেখতে শান্তিদেবীও কিছুটা সুস্থ্য হয়ে ওঠেন | এখন তিনি বিদিশার সাহায্য নিয়েই খাটের উপর উঠে বসতে পারেন |    এদিকে মিলনেরও ছুটি শেষ | ছেলের স্কুল কামাই হচ্ছে | সে মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি চায় | শান্তিদেবী বেশ রাগত স্বরেই তাকে বলেন ," যেতে হলে তুমি চলে যাও ; দীপ আর তার মা আমার কাছেই থাকবে |" "কিন্তু মা ,দীপের পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে |" "এখানে কোনো ভালো স্কুলে ওকে ভর্তি করে দাও | আর শোনো মায়ের কথা না শুনে যেমন চাকরীতে বদলী নিয়ে চলে গেছিলে ; ঠিক সেই একই ভাবে এবার মায়ের কথা শুনে বদলী নিয়ে মায়ের কাছেই চলে এসো | একা যাও , অফিসের কাজ সেরে খুব তাড়াতাড়ি  বদলী নিয়ে চলে এসো | একবার যে ভুল আমি করেছি ,এবার তা সংশোধন করবার সুযোগ এসছে | এ সুযোগ আমি কিছুতেই হাতছাড়া কোরবোনা |" মা ও ছেলের কথপোকথনের মধ্যে বিদিশা এসে হাজির হয় | সে মিলনকে বলে ,"আমি মায়ের এই অবস্থায় কিছুতেই তোমার সাথে যেতে পারবো না | মা যতদিন না ভালোভাবে হাঁটা চলা করতে পারছেন ততদিন আমি এখানেই থাকবো | "  মিলন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে ,"কিন্তু দীপের স্কুল,পড়াশুনা ?" শান্তিদেবী ওদের কথার মাঝখানেই বলে ওঠেন ,"বললাম তো ওদের আমি যেতে দেবোনা | আর ভুল করতে চাইনা | দীপকে এখানেই কোনো ভালো স্কুলে ভর্তি করে দে | লক্ষ্মী বাবা আমার ; আমার কথাটা শোন | একদিন যে কথাগুলি তুই আমাকে বলেছিলি সেদিন আমি গো ধরে বসে না থেকে যদি তোর কথাগুলি আমি বোঝার চেষ্টা করতাম , তাহলে আমার সংসারটা আজ সোনার সংসার হত |"তিনি হাত বাড়িয়ে বিদিশাকে ডেকে  বালিশের তলা থেকে চাবির গোছাটা বেড় করে বিদিশার হাতে দিয়ে বললেন ," আজ থেকে তুই এই সংসারের কর্ত্রী | পরিবারের ভালো মন্দ সব তোর হাতে |"  বিদিশা হাত পেতে চাবিটা নিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে শ্বাশুড়ির বালিশের তলায় রাখতে রাখতেই বলতে লাগলো ,"এত বড় দায়িত্ব তুমি যতদিন আছো আমি নিতে পারবো না | এটা এখানেই থাক | সংসারের সব দায়িত্ব আমি মাথা পেতে নিলাম | কিন্তু এই সংসারের কর্ত্রী তুমি মা | তুমি যেটা বলবে আমি সেটাই পালন  করবো | কিন্তু মা ,ওই চাবির ভার আমায় দিওনা | আমার ভুল, ভ্রান্তিগুলি শুধরে তোমার মনের মত করে নিও |"

শান্তিদেবী আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন,"আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম রে মা ! তার ফল আমি পাচ্ছি |" বিদিশা এগিয়ে যেয়ে শ্বাশুড়ি মায়ের হাত দু'টি ধরে বলে ,"আর কখনো তুমি পুরানো কথা মুখে আনবে না | আমি তো ভুলেই গেছি এখানে আসার পর সে সব কথা |" শান্তিদেবী বিদিশার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন |

মাস চারেকের মধ্যে মিলন পুনরায় বদলী নিয়ে কলকাতায় চলে আসে | দীপকে একটা ভালো স্কুলে ভর্তিও করিয়ে দেয় | বিদিশার অশেষ সেবা যত্ন ,আর ঘড়ির কাটা ধরে ওষুধ খাওয়ানোর ফলস্বরূপ কয়েক মাসের মধ্যেই শান্তিদেবীও হাঁটাচলা শুরু করেন | এখন বিদিশাকে যেন তিনি চোখে হারান | আর তার মলয়ের বৌ ,যাকে তিনি ভালো বংশ দেখে নিজে পছন্দ করে ঘরে তুলেছিলেন ; তার সাথে দেখা দিনে দু থেকে তিনবার মাত্র হয় , সে যখন খেতে নীচুতে নামে | বিদিশার হাতে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব তুলে দিয়ে পরম নিশ্চিন্তে তিনি তার দাদুভায়ের সাথেই সময় কাটান | বিদিশাও তার শ্বাশুড়ি মায়ের দেওয়া সকল দায়িত্ব সতত মুখে হাসি রেখে পরম নিষ্ঠার সাথে পালন করে |
++++++++++++++শেষ++++++++++++++
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী   2.9.16
"ঝড়"  ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
আকাশ ভেঙ্গে ঝড় যখন ,
 নামে ধরণীতে ,
সকলে তাকে পায় যে দেখতে -
 নিজের আঁখিতে |
হৃদয় ভেঙ্গে যদি চৌচিড় হয় ,
 জানবে নাতো কাছের কেউ ,
সে ঝড়ের যে আরও ভয়ানক সাজ -
 সারাজীবন ধরে শুধু তোলে ঢেউ |
আকাশের ঝড় ভাঙ্গে কত ঘর ,
 আরও ভাঙ্গে  গাছপালা ,
হৃদয়ের ঝড় ভেঙ্গে দেয় মন -
 কেড়ে নেয় জীবন পথের ভেলা |
++++++++++++++++++++
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 9.9.16.  10PM.

Wednesday, September 7, 2016


"আমার স্বপন হলো মিছে" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
+++++++++++++++++
অনেক ছিলো স্বপ্ন আমার -
 যদি আমায় ভালোবাসতে ,
স্বপনগুলো করতাম পূরণ -
 তোমার সাথে হাসতে হাসতে |
অনেক দূরে যাওয়ার ছিলো -
 যদি রাখতে হাতে হাত ,
তোমায় আমি সঙ্গী করেই -
 পেড়িয়ে যেতাম বন্ধুর পথ |
গভীর রাতে আমায় তুমি -
 কাছে যদি ডাকতে ,
জীবনপথে যেতাম না ভেসে  -
 মহাসাগর স্রোতে |
আমায় তুমি কাঁদিয়ে গেলে -
 থাকলে না মোর কাছে  ,
পিছন থেকে ডাকবো না আর  ,
 স্বপ্নগুলো হোক না মোর মিছে |
+=++++++++++++++++++
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 7.9.16 2-40AM

Saturday, September 3, 2016

"কঠিন বাস্তব" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
++++++++++++++++++++
জীবনের চলার পথটা -
আস্তে আস্তে খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে -
সর্বদায় সকলে মরীচিকার পিছনে ছুটছি -
'বিশ্বাস' শব্দটা জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে -
'ভালোবাসা' স্বার্থের  লাঠিতে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে -
ছোটরা বড়দের সম্মান করতে ভুলে যাচ্ছে -
ছেলেমেয়েরা বৃদ্ধ বাবা ,মাকে বোঝা ভাবছে -
অঢেল অর্থ - বাবা,মা সন্তানকে কুপথে চালিত করছে -
সকলেই মনে করছে জীবনে অর্থটাই সব !
টাকার প্রলোভনে মানুষ মানুষকে খুন করছে -
রক্তের সম্পর্ককেউ দিচ্ছে না রেহায়  -
মান ও হুস দুটোই মানুষের মাঝে আজ অমিল -
   যেকোনো উপায়েই -
ভালো থাকা,ভালো খাওয়া,ভালো পড়া,বড় বাড়ি,দামি গাড়ি -
মনুষ্যত্ব বিকিয়ে টাকার পিছনে ধ্বংসের খেলায় মত্ত -
যে যার মতোই আখের গুছাতেই সকলে ব্যস্ত |
+++++++++=+===++++++++====__=
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী  29.8.16 1-20am.

Thursday, September 1, 2016

"আমার কলকাতা" ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
+++++++++++++++++++++++
রাতের মহানগরী আলোকোজ্বল কলকাতা -
কংক্রিটের রাস্তায় লুকানো অনেক ব্যথা -
ফুটপথেতে সংসার পেতেছে ,অনেক পরিবার -
অসহায়ের পানে তাকিয়েও দেখে না কেউ একবার |
রোদ ,বৃষ্টি ,ঝড়ের মাঝেও -
সারা দিনরাত রাস্তায় ;
পথ চলতি মানুষের বিপদ - আপদে
তারাই এগোয় প্রথম অবস্থায় |
কেউবা ঠোঁটে লাল রং মেখে -
দাঁড়িয়ে পথের বাঁকে -
ভদ্রবেশী ,মুখোশধারী নামী পুরুষের ,
ছবি মনে মনে আঁকে |
হয়তো ছোট ভাইবোন আছে ;
আছে অসুস্থ্য বাবা মা ,
বাঁচার তাগিদে চাই যে টাকা ,
শরীর বিক্রির টাকার তরে-
বুকের স্বপ্নগুলো হয়ে গেছে ফাঁকা |
এরা কিন্তু সমাজের চোখে -
অতি খারাপ নারী -
পরিবার বাঁচাতে করছে বিক্রি -
নারী জীবনের দামি সম্পদখানি |
আসছে যারা গাড়ি চড়ে -
টাকার বিনিময়ে কিনছে নারীর শরীর -
দিনের আলোতে তারাই নামী লোক ,
আছে যে তাদের অনেক বড় বাড়ি |
মহানগরী রাতের কলকাতা -
থাকে আলোকোজ্বল ,
কেউ খোঁজ রাখে না -
রাতের আঁধারে শত  অসহায়ের-  
 পড়ে কত চোখের জল   |
"""""""""""""""""""""""""""
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী  31.8.16