Friday, November 25, 2016

"বিরহের রাত কাটে না "( অনু কবিতা )
                    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বিরহের রাত কাটে  নাগো কাটেনা -
সব কিছু যে ভুলে থাকা যায় না ,
রাত যত গভীর হয় ,
স্মৃতিগুলি জেগে যায় ,
চোখেতে ঘুম যে আসেনা আসেনা ,
জানালারও ফাঁক দিয়ে ,
দেখা যায় চাঁদ একফালি ,
সেও বুঝি বিরহে -
রাত জাগে একাকী ,
ভালোবাসার বিনিময়ে পদাঘাত পেয়েছি ,
স্মৃতিগুলি নিয়ে শুধু ,
আমি বেঁচে রয়েছি |
নন্দা  13.11.16  1.30am

Thursday, November 24, 2016

"শুভ দৃষ্টি"                                  
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী   
রাত পোহালেই বিয়ে | সোমা অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই তার কাকা ,কাকিমাকে বলতে পারলো না ,তার আর অরুনের সম্পর্কের কথা | আর কি করেই বা বলবে ? মা ,বাবা মারা যাওয়ার পর কাকু ,কাকিমা যদি তাঁদের কাছে  সোমাকে না নিয়ে আসতেন তাহলে তো তার কোনো অস্তিত্বই আজ আর থাকতো না | এত বড় অকৃতজ্ঞ সে কি করে হবে ? ভুলেই তো গেছিলো সে অরুনের কথা | অনেক বছর আগে যখন মা ,বাবা দু'জনেই বেঁচে তখন অরুনেরা থাকতো সোমাদের বাড়ির কাছে | কতই বা  বয়স হবে সোমার তখন | নবম শ্রেণীর ছাত্রী সে | বাবার হঠ্যাৎ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর পর মা বছর খানেকের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন | বিছানা ছেড়ে আর ওঠেননি | কাকু ,কাকিমা তখন দেশের বাইরে | ফোন করে অরুনই সোমার কাকুকে জানিয়েছিলো সোমার মায়ের অসুস্থ্যতার কথা ; সেটা সোমার মায়ের নির্দেশেই | লন্ডন থেকে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসা চারটিখানি কথা নয় | দেওরকে ফোন করার দিন সাতেকের মধ্যেই সোমার মা মারা যান | সোমা তখন সম্পূর্ণ একা | অরুনের মায়ের সাথে সোমার মায়ের একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো পাশাপাশি বাস করার সুবাদে | তিনি সোমাকে তার নিজের কাছেই নিয়ে রাখেন , ছেলেকে দিয়ে দুষসংবাদটি সোমার কাকুকে ফোন করে জানিয়ে দেন | সোমার মা মারা যাওয়ার আট ,ন দিন বাদে তার কাকু ,কাকিমা এসে সোমাকে নিয়ে যান | এই ক'দিনে সোমার সাথে অরুনের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে | সেটা সম্পূর্ণ ভাবেই একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক |সদ্য মা হারা সোমা সব সময় মন খারাপ করে থাকতো বলে অরুন সব সময় চেষ্টা করতো তাকে নানান ধরণের গল্পের মাঝে ডুবিয়ে রাখতে ; যাতে তার কষ্ট কিছুটা অন্তত কমে | সোমার চলে যাওয়ার আগেরদিন অরুন তাকে বলেছিলো ," যেখানেই থাকিনা কেনো - তোমার কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে | আমি ছেলেবেলা থেকেই খুব আশাবাদী মানুষ | পৃথিবীটাতো গোল ; একদিন না একদিন তোমার সাথে আমার আবার দেখা হবেই "|সোমা সে কথার কোনো উত্তর দিয়েছিলো না ; শুধু চলে আসার সময় সকলের সামনে অরুনের দিকে তাঁকিয়ে বলেছিলো ,"আসি" |    এরপর দীর্ঘ দশ বছর পর তাদের দেখা | কাকু রিটায়ার করে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন | সল্টলেকে একটি সুন্দর ফ্লাট ও কিনেছেন | তাদের একমাত্র ছেলে লন্ডনই থেকে গেছে | তার মেমবৌ কলকাতা আসতে চায়নি | তাই সোমাকে নিয়েই তারা দেশে ফিরে এসেছেন | একদিন সন্ধ্যায় সোমা নিউ মার্কেট থেকে কিছু মার্কেটিং করে ফিরছিলো , হঠ্যাৎ একটি সুদর্শন ছেলে সোমার দিকে এগিয়ে এসে বললো ," আপনাকে খুব চেনা মনে হচ্ছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা |" সোমার ছেলেটিকে গায়ে পড়া মনে হলো | সে ছেলেটির দিকে কটাক্ষ দৃষ্টিপাত করে বললো ," তাহলে যেদিন মনে পড়বে আর আবার আমার সাথে দেখা হবে সেদিনই বলবেন |" মেয়েটির এরূপ ব্যবহার পাবে অরুন তা বুঝতে পারেনি | সে কোনো কথা না বলে সোমার পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে যায় |   তারপর হঠ্যাৎ একদিন সেই নিদৃষ্ট জায়গাতেই দেখা | প্রথমে সোমাই দেখে অরুনকে | ভাবে অরুন বুঝি তাকে ফলো করছে | সে দ্রুত দোকান থেকে বেড়িয়ে যেতে যায় ; আর ঠিক তখনই সোমাকে অরুনের চোখে পরে | সে সরাসরি সোমাকে প্রশ্ন করে , "আপনার নাম সুমনা না ? ডাক নাম সোমা বাড়ি ছিল বালিগঞ্জে , পরে কাকুর সাথে লন্ডন চলে যাওয়া , কি আমি সব ঠিক বলছিতো ?"  -- হ্যাঁ ,সব কিছু ঠিকঠাক |  কিন্তু আপনি কি করে জানলেন ?--- সেটা তো ছেলেবেলা থেকেই জানি | মাঝে মনে করতে একটু সময় লেগেছে | আসলে কি জানেন ? পৃথিবীটা তো গোল ,আমরা ঠিক ঘুরতে ঘুরতেই পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে যাই |         অনেকদিন আগের কথা | কিন্তু এই কথাটাই সোমার মনে পড়েছে বারবার | ভেবেছেও একদিন না একদিন হয়তো অরুনের সাথে হয়তো দেখা হবে | কলকাতায় এসে অনেক পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে | আজ অরুনের সাথে দেখা হয়ে সোমার এই প্রথম মনে হলো মনের কোনো একটি জায়গায় যেন অরুনের জন্য একটু জায়গা ছিলো ; যেটা হয়তো তার নিজেরও অজান্তেই ছিলো | তানাহলে অরুনকে দেখে সোমার এতটা আনন্দ হচ্ছে কেন ?-- আপনি ,মানে তুমি অরুন ?                অরুন হাসতে লাগে | আর হাসতে হাসতেই বলে ,"সেদিনই মনে পড়েছিলো কিন্তু ততক্ষনে বাড়িতে পৌঁছে গেছি |                  ব্যস সেই শুরু | তারপর প্রায়  রোজই দেখা ,গল্প করা ,এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ানো ,ফোনে যখন তখন কথা চলতেই থাকে | অরুনের কাছ থেকেই সোমা জানে অরুনের মা বছর দুই আগে মারা যান | তিনি চেয়েছিলেন তার বৌ দেখে যেতে ,চেষ্টাও করেছিলেন - দু ,একটি মেয়ে দেখেছিলেনও কিন্তু অরুন দেখে সব 'পছন্দ হয়নি '-বলে মাকে জানিয়ে দিয়েছে | বেশ হাসি ,খুশিতেই দিনগুলি চলে যাচ্ছিলো | কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো অরুনের হঠ্যাৎ "বাইরে যাচ্ছি ,কাজ আছে কদিন দেখা করতে পারবোনা ,ফোনে কথা হবে -" বলে অন্তর্ধান আজ নিয়ে পনেরদিন সোমা অরুনের কোনো খবর জানে না | অরুনের এই ব্যবহার সোমার কাছে কেমন হেঁয়ালী লাগে | দু ,একদিন ফোনে কথা হলেও এখন ফোন সব সময় 'নট রিচেবেল' | আর এই কদিনের মধ্যেই সোমার কাকু ,কাকিমা তাড়াহুড়ো করে  তার বিয়ের সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলেছেন | কিন্তু সোমা কাকু ,কাকিমার ভালোবাসার প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে পারেনি | জানাতে পারেনি অরুনের কথা | বুক ফেঁটে চৌচির হয়ে গেলেও মুখে জোড়করে হাসি এনে কাকু ,কাকিমার সর্ব কাজে সম্মতি দিয়েছে |   বর বিয়েবাড়ি পৌঁছে গেছে | শাঁখ ,উলুধ্বনি সব কিছুই সোমার কানে আসছে | কনে সাজে আত্মীয় পরিবিষ্ট হয়ে আপ্রাণ চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে |  সাতপাঁক ঘুরে শেষ | এবার  শুভদৃষ্টি |সোমা পানপাতা কিছুতেই মুখ থেকে সরাচ্ছে না দেখে স্বয়ং কাকুই যেয়ে সোমার কানে কানে বললেন ,
--- মা রে একটু ছেলেটার মুখটার দিকে তাকিঁয়ে দেখ মা ,আমি কি তোকে কষ্ট দিতে পারি ? ওর মুখটা দেখলেই তোর সব কষ্ট কর্পূরের মতো উবে যাবে মা |
                     সোমা পানপাতা সরিয়ে  দেখে অরুন তার দিকে তাকিঁয়ে মিটিমিটি হাসছে | তখন সোমার কষ্ট চলে যেয়ে রাগে সর্বশরীর জ্বলে যাচ্ছে | মনে হচ্ছে একটা লাঠি দিয়ে অরুনকে বেশ করে কয়েক ঘা বসিয়ে দেয় আর কি ! কিন্তু ফুলশয্যার আগে অরুনকে একাকী পাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয় | অগত্যা নিজের রাগ নিজের মনের মধ্যে পুষিয়ে রাখা | মাঝে মাঝে তার সাথে চোখাচোখি হতেই অরুন দুস্টুমির হাসি হাসছে আর সোমার রাগ দ্বিগুন বেড়ে যাচ্ছে |
                  ফুলশয্যার রাত | অরুন ঘরে ঢুকে যেইনা দরজা বন্ধ করেছে ,অমনি সোমা বাঘিনীর মতো অরুনের হাত ধরে টেনে নিয়ে খাঁটের উপর বসিয়ে বলে ,"বল ,কেনও আমায় কষ্ট দিলে এত ?"
                অরুন দু'হাত দিয়ে সোমাকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে বলে ," আর কখনো কোনোদিন যাতে তোমাকে ,আমাকে কষ্ট পেতে না হয় ; সেই জন্যই এই ব্যবস্থা | তুমি কাকুর সাথে চলে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি তোমায় আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম | যারফলে মার পছন্দ করা কোনো মেয়ে আমার পছন্দ হত না | তোমার কাছ থেকে তোমাদের ঠিকানা জেনে একদিন তোমার অনুপস্থিতিতে সোজা তোমার কাকুর কাছে যেয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তোমাকে  নিজের  করে পেতে চাইলাম |তোমার মত আছে জেনে কাকু ,কাকিমাও রাজি হয়ে গেলেন | ভাবলাম তোমার কাছে কথাটা গোপন রাখি ,কাকুকেও তাই বললাম | আর একটা কথা ভেবেছি - এই কারণে তুমি আমায় আজ খুব আদর করবে !
                সোমা অরুনের দু'বাহু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অরুনের বুকে ,পিঠে কিল ,ঘুষি মারতে মারতে বললো ," আদর ? তোমাকে আমি আজ এত মারবো -- এত মারবো ----"অরুন হোহো করে হাসতে হাসতে সোমাকে আবার বুকের সাথে চেঁপে ধরে |
নন্দা  21.3.2010

"থাকে না সে"
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
শুকনো পাতা উড়ছে ধূলায় ,
কাঁপছি সবাই উত্তুরে হাওয়ায় ,
ভড়বে ধান চাষীর গোলায় ,
আনন্দে চাষীর মন যে দোলায় |
সব্জি ভরা ক্ষেতের পাশে ,
যাচ্ছে বধূ হেসে হেসে ,
তুলবে স্বামী সব্জি এসে ,
খাওয়াবে রেঁধে সকলকে সে |
অভাব রবে না ক'টাদিন ঘরে ,
আসবে মেয়ে বহুদিন পরে ,
হবে নবান্ন হাঁড়ি ভড়ে ,
খাবে সবাই পেটটি পুড়ে |
খুশির এই দিনগুলি ও-রে
সুখপাখির মতই আসে উড়ে ,
যায় যে চলে ফুড়ুৎ করে ,
সারাবছর কেনো থাকে নারে ?
নন্দা 21.11.16

Monday, November 21, 2016

"বিশ্বাসে ভালোবাসা"
                        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
প্রজাপ্রতি রঙ্গিন পাখায় ,
               ভরটি দিয়ে উড়ে -
মানুষ আমরা বেঁচে আছি ,
                স্বপ্ন নিয়ে মনে |
দূর দিগন্তে হারিয়ে যেতে ,
                 পাখির নেইকো মানা -
মনের মানুষ পেলে কাছে ,
                  স্বপ্নের জাল বোনা |
নন্দা   17.11.16  9-15 AM.

Saturday, November 19, 2016

""কি পেলাম"                      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী   বিকালের দিকে   মমির ফোন পেয়ে রাহুল একটু অবাকই হয় | হঠ্যাৎ করেই.মমি বলে ," রাহুল , আমার সাথে তুমি আজই দেখা করবে |রাত যতই হোকনা কেনো ,অফিস থেকে ফেরার পথে আমাদের বাড়ি আসবে | " বিয়ের সব কেনা কাটা শেষ | চারদিন মাত্র বিয়ের বাকি | মমির সাথে কথা হয়েছে এই চারদিন দেখা ,সাক্ষ্যাৎ হবেনা ,শুধু ফোনে কথা হবে | মমি একজন বেশ বড় সংগীত শিল্পী | বেশ নামডাক তার | মনামী মজুমদার - এক ডাকেই সকলে তাকে চেনে | কিছুদিন ধরেই নুতন করে রেকডিং এর কোনো ডেট নিচ্ছে না , বিয়ের আগে বেশ কিছুটা সময় বাবা ,মায়ের সাথে কাটানো আর বিয়ের পরে হানিমুনের প্রোগ্রামটাও রেডি হয়ে আছে - সে কাউকে কোনো বিপদে ফেলতে চায়না বলেই সব কাজ একবারে শেষ করে আবার ফিরবে তার প্রিয় গানের জগতে | মমি তার বাবামায়ের একমাত্র সন্তান | রাহুল ভেবেই পাইনা কি এমন হলো যে জরুরী তলব ! রাহুল রাত আটটা নাগাদ মমিদের বাড়ি গেলো | ড্রয়িংরুম পার হয়েই মমির মাবাবার ঘর ,ঠিক তার পরের ঘরটা মমির | সে ড্রয়িংরুমের ভিতর ঢুকে "মাসিমা"- বলে জোড়ে ডাক দিলো | মমির মা তার ভেজানো দরজার ঘরের ভিতর থেকেই বললেন ,"যাও  বাবা ,মমি ঘরেই আছে | রাহুল মমির ঘরে ঢুকে দেখলো জিনিসপত্র একটু অগোছালো , কিন্তু বেশ বড় ,বড় দুটি ব্যাগ গুছানো | " কি ব্যাপার বলো তো ?" মমি পিছন ফিরে কি একটা করছিলো- রাহুলের গলা শুনে বললো ," ও এসে গেছো তুমি ?তোমার সাথে খুব দরকারি একটা কথা আছে | "  "হ্যা- বলো , তোমার জরুরি তলব পেয়ে শুনতেই তো আসলাম |"রাহুল ,আমার জীবনে এত বড় সুযোগ কোনোদিন আসবে আমি তা স্বপ্নেও ভাবিনি | আমি খুব বড় একটা বিদেশী  কোম্পানি থেকে রেকডিং এর অর্ডার পেয়েছি | তারজন্য আমায় আমেরিকায় যেতেই হচ্ছে | তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো | এই বিয়েটা আমি করতে পারছি না | তুমি অনায়াসে অন্যকোনো ভালো মেয়ে পেয়ে যাবে | ওই তারিখেই বিয়েটা সেরে ফেলো | তাহলে --মমির কথার মাঝেই রাহুল চিৎকার করে ওঠে  -  " কি পাগলামি হচ্ছে এগুলি ? বাড়িতে ডেকে এনে ইয়ার্কি হচ্ছে ? "  " এটা পাগলামি বা ইয়ার্কি নয় ,যা সত্যি তাই বলছি | আমার কথা শেষ এবার তুমি আসতে পারো |" রাহুল হতভম্ব | দীর্ঘ চার বছরের সম্পর্ক ওদের | এ ভাবে সবকিছু কিভাবে শেষ হয়ে যায় ? সে উঠে যেয়ে মমিকে ধরতে যায় | মমি একটু সরে যেয়ে বলে ," আসলে কি জানো রাহুল ? আমি আগে বুঝতে পারিনি আমার জীবনে গান ছাড়া অন্য কাউকেই ভালোবাসতেই পারিনা | গানই আমার প্রথম ও শেষ প্রেম | অনেকদিন ধরেই আমি বুঝতে পারছিলাম বিয়ে করে গুছিয়ে সংসার আমার দ্বারা হবে না | আমি গান পাগল মানুষ | গানই আমার জীবনে সব | বলবো ,বলবো করেও কথাগুলি বলতে অনেক দেরী করে ফেললাম | তারজন্য আমাকে ক্ষমা কোরো | নাও - অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে | প্রচুর গোজগাছ   বাকী | তুমি এবার বেড়িয়ে পর |"    প্রেমে প্রত্যাখ্যাত ,অপমান ,লজ্জা ,আবেগ - সব কিছু মিলেমিশে রাহুল বাকরুদ্ধ | কিছুক্ষন পরে রাহুল খেয়াল করে মমি ঘরে নেই | এত বড় অপমান ! কি করে করলো মমি ? এইতো সেদিন দু'জনে মিলে কত প্লান করলো তাদের নুতন জীবন নিয়ে | কোথায় হানিমুনে যাবে তাও পর্যন্ত ঠিক করে ফেললো দু'জনে| কত স্বপ্ন দু'জনের অন্তর জুড়ে | মমির ভিতর সে স্বপ্নের কোনো কৃপণতা কখনোই রাহুলের চোখে পড়েনি | প্রায় ত্রিশ মিনিট রাহুল একা ঘরে বসে | মমি ফিরছে না দেখে রাহুলের নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগলো | সে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো | মাসিমাদের ঘরের কাছে এসে বুঝতে পারলো এবার দরজা ভিতর থেকে বন্ধ | কি ঘটে গেলো কিছুই বুঝতে পারলো না সে | শুধু আশাহত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এলো | কিন্তু কেন জানি তার মনে হতে লাগলো ,মমি যা বলছে তা ঠিক নয় | এটা কিছুতেই সত্যি হতে পারেনা | ও মিথ্যা বলছে সব | সারারাত ছটফট করতে করতে ভোর হতেই সে বেড়িয়ে পড়লো মমিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে | সেখানে পৌঁছে সে অবাক হয়ে গেলো | মমিদের বাড়িতে বাইরে থেকে তালাবন্ধ | কিন্তু কেন ? কোথায় গেলো সবাই  ? আশেপাশে জিজ্ঞাসা করেও কোনো সদুত্তর সে পেলোনা | সব কিছুই রহস্যের আবরণে ঢাকা পরে থাকলো | মন থেকে এক মুহূর্তের জন্যও মমির প্রতি কোনো খারাপ ধারণা তার আসছে না | কিন্তু কি এমন হলো যা মমি তাকে জানাতে পারলোনা !অফিস ,বাড়ি আর মমির এই অসংলগ্ন কথাবার্তা সব মিলেমিশে একাকী জীবনে রাহুল উদভ্রান্তের মতো হয়ে গেলো | কোনো বন্ধুবান্ধব ,আত্মীয়স্বজন কেউই মমিদের কোনো খবর রাহুলকে দিতে পারলোনা |

এইভাবে প্রায় ছ'মাস কেটে গেলো | হঠ্যাৎ একদিন অফিসে এক বন্ধুর ফোন ; বন্ধুটি তাকে জানালো আজকের খবরের কাগজটা যেন সে দেখে | " কেন কি আছে কাগজে ?" "তুই দেখ ,আমি পরে তোকে ফোন করছি |" বলেই ফোনটা কেটে দিলো | রাহুল খেয়াল করেছে আজ অফিসে আসার পর থেকে সকলে তার আঁড়ালে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে | পেপারটা চাওয়াতে একজন অনিচ্ছা সমেত তার হাতে পেপারটা ধরিয়ে দিলো | রাহুল কাগজটা ধরেই প্রথম পৃষ্টায় খবরটা দেখে চমকে ওঠে | "বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মনামী মজুমদার দীর্ঘ ছমাস রোগভোগের পর মুম্বাই ক্যান্সার হাসপাতালে আজ ভোর চারটে নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন |"বিস্তারিত পড়বার ক্ষমতা রাহুলের আর থাকে না | চশমার কাঁচ চোখের জলে ঝাপসা হয়ে যায় | আর পরিষ্কার হয়ে যায় মমির ছমাস আগের অসংলগ্ন কথাবার্তা | সব পুরানো স্মৃতি আবার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করতে থাকে | কিন্তু মমি এটা কি করলো ? এই ছ'টা মাস তো একসাথেই আমরা থাকতে পারতাম ! সেই হারানোর কষ্টটা তো আমাকে পেতেই হলো | এত বড় সঙ্গীত শিল্পী তুমি ,তোমার মৃত্যুতে শুধু আমি কেনো -সারাদেশ জানবে এটা তুমি একবারও ভাবলেনা ? তুমি কি ভেবেছিলে মমি ? আমাকে আঘাত করলে ,অপমান করলেই আমি তোমাকে ভুলে যাবো ? তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হবো ? আমার সমস্ত মন ,প্রাণ জুড়ে একটাই নাম -'মমি' ; যাকে ছাড়া আমার কল্পনার জগতও অন্ধকার | আমার ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে না পেরে দীর্ঘ ছ'মাস আমার কাছ থেকে দূরে থাকলে --আর এখন তো সারা জীবন !! কিন্তু আমি কি পেলাম ?

নন্দা   12.1.15

Thursday, November 17, 2016

"ছিলাম-থাকবো"
                    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যদি দেখো -
পাশে আমি নেই ,
জ্বালাবে না আলো, চোখ বুজে তুমি ,
আমার পরশ নিও |
দুরগগনে ঘন আবীরে ,
সন্ধ্যা যখন নামবে ,
ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে তুমি ,
মন খারাপে একা একা বসে থাকবে ,
প্রদীপের দিকে চোখ রেখে দেখো -
হাসিমুখ আমার দেখতে তুমি পাবে |
সোহাগ তোমার ছেড়ে এসেছি ,
সময় আমার ফুরিয়েছে তাই ,
ভালোবাসা মোদের আজও রয়েছে ,
মনে রেখো তুমি সদাই |
আমার তরেতে কেঁদে তুমি ওগো ,
হোয়োনা যেন আকুল ,
আঁখিজল তোমার মুছাতে পারবোনা ,
আত্মা মোর হবে যে ব্যাকুল |
পড়পারে আবার হবে যে মিলন ,
থাকবো দু'জনে একসাথে -
সুখ ,দুঃখের উপরে গিয়ে ,
রাখবো হাত অপরের হাতে |
নন্দা   17.11.16   10-10PM.

Monday, November 14, 2016

"যা বাস্তব"
             নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
এই দুনিয়া এক রঙ্গশালা ,
  ভালোমন্দ মিশিয়ে এক মিলনমেলা |
ভালোর চেয়ে মন্দ বেশী ,
  হোকনা সে দেশী বা বিদেশী |
সামনে কথা বলছে হেসে ,
  পিছনে যেয়েই হাসির সাথে নিন্দা মেশে  ,
কথা যে সব হাওয়ায় ভাসে ,
  পরক্ষনেই সে সব কানে আসে |
জীবনটা এক কঠিন অঙ্ক ,
  এখানে চলে শুধুই রঙ্গ ,
হবেনা কখনো এ রণে ভঙ্গ ,
  যতই উঠুক জীবনে  তরঙ্গ |
সময় হলেই যেতে হবে ,
  নেই হাতে ক্ষমতা সময়কে রুখবে ,
উপর থেকে যখনই ডাক আসবে ,
   নূতনকে ফেলে পুরানরা পালাবে |
নন্দা  12.11.16  9-30 PM.

Friday, November 11, 2016

"কেন"
              নন্দা মুখাৰ্জী রায় চৌধুরী
কত প্রতিজ্ঞা করেছি দু'জনে ,
ছেড়ে যাবোনা কেউ কাউকে ,
তবুও কেন এতগুলো বছর বাদে -
ছেড়ে গেলাম পরস্পরকে ?

    ক্ষমা করো মোরে -
কেউ একবার, বলতাম যদি অপরকে ,
   কোনো ক্ষতি হোতো না ,
দু'জনেই বাঁচতাম একে অপরকে আঁকড়ে |
অনেকটা পথ দু'জনে হেঁটেছি একসাথে ,
সরলপথে হাঁটতে হাঁটতেই পথ যেন গেলো বেঁকে ,
সামান্য ভুল বোঝাবুঝি এতদূর গড়ালো -
মিমাংসা করতে পৌঁছাতে হোলো আদালতকক্ষে |
পড়ন্ত বিকেল ,জীবনের শেষ অধ্যায় ,
কেমন আছো তুমি জানিনা ,
হয়তো কখনো নির্জনে একাকী ,
ভাবছো আমারই কথা,নিয়ে একরাশ বেদনা |
নন্দা    11.11.16   12-30AM.

Wednesday, November 9, 2016

"বন্ধি জীবন"
                নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
বনের পাখি বনে বনে ,
তোর নেইকো উড়ায় মানা ,
যেথায় খুশি সেথায় তুই ,
মেলতে পারিস ডানা |
আমার তো বন্ধি জীবন ,
অট্টালিকায় করি বাস ,
পায়ে শুধু নেইকো বেড়ি ;
দুখী আমি বারোমাস |
অলিখিত চুক্তি আমার ,
থাকবো শুধু সংসার নিয়ে ,
নিজের কষ্ট বুকে চেপে ,
অন্যের সেবা কোরবো গিয়ে |
একটু উড়ে আয়না কাছে ,
বসনা আমার পাশটি ঘেঁষে ,
তোকেই বলি সকল কথা ,
যা আছে মোর মনে ব্যথা |
নন্দা   9.11.16  10PM.
             



 
"জাগিও না"
                    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

রাত যতই গভীর হয় ,
 ততই তোমায় মনে পড়ে ,
নিস্তব্ধ অন্ধকার ঘরে -
টের পাই তোমার উপস্থিতি
চোখ বন্ধ করলে নি:শ্বাসে তোমার গায়ের গন্ধ পাই।
তবু তোমায় ছুঁতে পারিনা , চোখ মেললে দেখতে পাইনা |
সারাদিন অপেক্ষায় থাকি -
মধ্যরাতের গভীরতার আশায়
কখন সবাই ডুব দেবে ঘুমে,
আর তুমি আসবে কাছে!
প্রতিটা নিঃশ্বাসে তোমার গায়ের গন্ধ পেতে পেতে -
একসময় নিজে ঘুমিয়ে পড়ি ,
ঘুমেই তোমার সাথে গল্প বুনি
বেড়াই, হাসি, মান অভিমান
সব চলে |

হোক সে স্বপ্ন ! তবু তোমায়
আমি তো নিজের করে পাই |

নন্দা   7.11.16  1.20AM.

Monday, November 7, 2016

"বাঁচতে চাই"                 (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী)                বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে বাদল যেদিন প্রাইমারী স্কুলে যেদিন যোগদান করতে যায় সেদিন মা দু'হাত কপালে ঠেকিয়ে বলেছিলেন ,"এবার সুন্দর লক্ষ্মীমন্ত দেখে একটা বৌ আনবো | ব্যস তাহলেই আমার ছুটি |" বাদল মাকে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে বলেছিলো ,"তোমায় ছুটি আমি কোনোদিনও দেবো না | তুমি ছুটি নিলে আমায় কে দেখবে ? তোমার আগে যেন আমি ছুটি পাই এই পৃথিবী থেকে |"  সরলাদেবী ছেলেকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে বলেছিলেন ,"বালাই ষাট !! একথা আর কখনো মুখে আনবি না বাবা |"             আজ বড্ড মনে পড়ছে মায়ের কথা |সত্যিই মা তো আগেই ছুটি নিয়ে চলে গেলেন সারাজীবের জন্য | হাসপাতালের বেডে শুয়ে বাদল হিসাব কষতে থাকে তার জীবনের পাওয়া না পাওয়া গুলিকে নিয়ে | তার জীবনের আয়ু মাত্র কয়েকমাস | কয়েক মাসই বা কেন ? হয়তো যেকোনো সময়ই সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারে |        গ্রামের অতি সাধারণ সরল ছেলে বাদল | অভাবের সংসার | মা ,বাবা , আর সে | গ্রাজুয়েট হওয়ার পর তাকে বেশিদিন বসে থাকতে হয়নি | গ্রামেরই একটা স্কুলে শিক্ষতায় সে নিযুক্ত হয় | মায়ের জোড়াজুড়িতে চাকরীর দু'মাসের মাথায় সে বিয়েতে মত দেয় | মা নিজে পছন্দ করে তার বাদলের বৌকে বরণ করে ঘরে তোলেন | মীনা খুব সংসারী না হলেও বাদলের   মা যথাসম্ভব চেষ্টা করতেন ঝামেলা যাতে না হয় | তাই তিনি সংসারের কোনো কাজের দায়িত্ব মীনার উপর ছাড়েন না | নিজে হাতে রান্নাবান্না করা , খেতে দেওয়া সব করতেন | বাদলের বাবা ছিলেন অসুস্থ | তারএ্যাজমা ছিলো ;তাই সর্বদায় শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে  কষ্ট পেতেন | বাদলের বিয়ের প্রায় আটমাস বাদে তিনি মারা যান | তখন বাদলের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা | নির্দিষ্ট সময়ে তাদের একটি সুন্দর ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয় | সুখে ,দুঃখে ,অভাব ,অনটনের মধ্য দিয়ে বছর চারেক কেটে যায় বাদলের বিবাহিত জীবন | এরই মাঝে বাদলের মাতৃ বিয়োগ হয় | সে শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই হঠ্যাৎ করেই বাদলের শরীরটা খারাপ যেতে থাকে | গ্রামের ডাক্তারের হেফাজতে থেকে দিন পনের বাদেও যখন অবস্থার কোনো  উন্নতি সে দেখতে পায় না , তখন সে শহরে এসে বড় ডাক্তার দেখায় | নানান পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পরে বাদলের ব্লাড ক্যান্সার | সে বাড়িতে ফিরে এসে তার বৌ মীনাকে বলে ,"যে ক'কাঠা ধানীজমি আছে তার থেকে দু'কাঠা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করাবো ভাবছি |" শুনেই মীনা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে | সে চিৎকার করে তার স্বামীকে জানিয়ে দেয় ,"যে রোগ কোনোদিনও ভালো হবে না ,তার জন্য ভিটামাটি বিক্রি করে দিলে মেয়েকে নিয়ে তো আমাকে পথে বসতে হবে |" চিরশান্ত বাদল ঝগড়ার ভয়ে একথার কোনো উত্তর দেয় না |          বাদল তার স্কুলে যেয়েসহকর্মীদের তার অসুস্থতার কথা জানায় | স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে বেশ কয়েক হাজার টাকা চাঁদা তুলে তারা বাদলের হাতে তুলে দেয় | বাদল তার গ্রামের কাউন্সিলারের সহায়তায় কোলকাতার এক কাউন্সিলারের মাধ্যমে কলকাতায় এক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় | সমস্ত চেষ্টা ,তদ্বির সে ওই অসুস্থ্য শরীর নিয়েই করে | মাঝে মধ্যে কখনো সখনো স্কুলের কোনো সহকর্মী তাকে সঙ্গ দেন | কিন্তু মীনা একবারের জন্যও তার অসুস্থ্যতা সম্পর্কে কোনো খোঁজ নেওয়া বা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় তার সাথে যাওয়া কোনোটাই কখনোই সে করে না | উল্টে সে মেয়েকে বাদলের কাছে আসতে নিষেধ করে দেয়  | মেয়েও মায়ের বকুনি এবং মার খাওয়ার ভয়ে মা থাকতে বাদলের কাছে ঘেঁষতে সাহস পেতো না |                                   হাসপাতালের বেডে শুয়ে নানান সময়ে নানান কথা ভাবতে ভাবতে তার দু'চোখের কোল বেয়ে জল পড়তে থাকে | সেই যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তদ্বির করতে এসে ভর্তি হয়ে সেখানেই থেকে যায় - আজ এক মাসেরও বেশী হতে আসলো মীনা বা তার বাপের বাড়ির কেউই একবারের জন্যও দেখতে আসেনি | এখানে ভর্তি হওয়ার পরেই সে স্কুলে ফোন করে জানিয়েও দিয়েছিলো যাতে তার বাড়িতে খবর দিয়ে দেওয়া হয় ; সে কোন হাসপাতালে ভর্তি আছে | বাদল নিশ্চিত বাড়িতে স্কুল থেকে জানিয়ে গেছে | কিন্তু কেউই আসেনি |                                       মৃত্যু নিশ্চিত জেনে বাদল ভাবে যে কটাদিন বাঁচবে সে তার মেয়ের কাছেই যেয়ে থাকবে | মীনা তাকে না দেখুক অন্তঃত মেয়েকে তো সে সবসময় চোখের সামনে দেখতে পাবে | পালাবে - হাসপাতাল থেকে আজই সে পালাবে |কারণ তার যে শারীরিক অবস্থা তাতেকরে হাসপাতাল থেকে তাকে বাইরে বেড়োতে বা তারা কিছুতেই ছুটি দেবে না | রাত গভীর | সবাই ঘুমে অচেতন | বাদল বিছানা ছেড়ে আস্তে আস্তে বাইরে বেড়িয়ে আসে | হাপাতালের গেটের থেকে রাস্তায় বেড়িয়ে কিছুটা হেঁটে এসে সে খুব হাঁফিয়ে যেয়ে একটা ইটের পরে বসে পরে | আস্তে আস্তে দিনের আলো ফুটতে শুরু করলে সেও উঠে দাঁড়িয়ে একপা ,দু'পা করে বাস রাস্তায় এসে দাঁড়ায় | বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে এগোলেও দুর্বল শরীরে তার মাথার ভিতর ঝিমঝিম করতে থাকে ;মনেহচ্ছে এক্ষুনি বুঝি সে পড়ে  যাবে | হঠ্যাৎ তার নজরে আসে সুন্দর ফুঁটফুঁটে একটি মেয়ে ঠিক যেন তার মেয়ের বয়সী রাস্তার উপর থেকে ছুটে আসছে | সঙ্গে সঙ্গে তার যেন শিরদাঁড়া সোজা হয়ে যায় | মুহূর্তেই ভুলে যায় সে অসুস্থ্য | দৌড়ে যেয়ে মেয়েটাকে বুকে চেঁপে ধরে এপারে এসে বসে হাঁফাতে লাগে | বাচ্চা মেয়েটিও তার বুকের সাথে লেপটে থাকে | খুব সকাল , রাস্তায় বেশী একটা যানচলাচল ও লোকজনও নেই | পথচলতি দু'একজন আঁড়চোখে তাঁকিয়ে দেখে চলে যাচ্ছে | হঠ্যাৎ এক সাহেব এসে বাদলের কাঁধে হাত রেখে তাকে ধন্যবাদ জানান | এবং মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে বাদলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন | বাদলের কাঁপাকাঁপা হাতটি ধরে সাহেব ভদ্রলোক ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় জানতে চাইলেন  ,"তুমি কি অসুস্থ্য ?" বাদল তার অসুস্থ্যতার কথা জানাতেই তিনি তাকে বলেন ,"কোথায় ট্রিটমেন্ট করছো ? তোমার বাড়ি কোথায় ? কে ,কে আছেন তোমার ?"  বাদল কথাগুলির উত্তর দেওয়ার আগেই মাথাটা তার ঘুরে গেলো |সাহেব তাকে খপ করে ধরে ফেললেন | যখন বাদলের জ্ঞান ফেরে সে তখন একটা নার্সিংহোমে সাহেব গলায় স্টেথিস্কোপ ঝুলিয়ে তার নাড়ী দেখেছেন ,অন্য সকল ডক্টরেরা তাকে স্যার বলে সম্মোধন করছেন | বাদল হতভম্বের মত সাহেব ডাক্তারের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে দেখে সাহেব হেসে পরে বললেন ," কোনো ভয় নেই ,আমি ডক্টর এডওয়ার্ড পিটার ,এমেরিকায় থাকি , তোমার নামটা কি ?" সাহেবের এই অমায়িক ব্যবহারে বাদলের দু'চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো | বাদল সাহেবকে  তার নাম বলার পর তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বাদলকে যা বললেন তার সারমর্ম কললে দাঁড়ায় - প্রতিবছর তিনি কলকাতায় আসেন কারণ এখানে তার শ্বশুরবাড়ি | এই নার্সিংহোমের মালিক তার শ্বশুর ধনঞ্জয় ব্যানার্জীর | সাহেব ও তার স্ত্রী দু"জনেই ক্যান্সার স্পেশালিস্ট | কিন্তু বাদলের এখন যা শারীরিক অবস্থা তা এখানে থেকে ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব নয় | বাদল তার একমাত্র মেয়েকে বাঁচিয়ে তাকে ঋণী করেছে | ঈশ্বর তাকে অনেক দিয়েছেন | মানব সেবায় তিনি তার জীবনের মূলমন্ত্র বলে মনে করেন | যদি বাদল তাকে একটা সুযোগ দেয় ,তাহলে তাকে সাথে করে এমেরিকায় নিয়ে যেয়ে তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে তিনি রাজি আছেন | কারণ এখনো ঠিকভাবে চিকিৎসা করাতে পারলে সে আরও কয়েকবছর বেঁচে যেতে পারে |   জীবনের শেষ সূর্যাস্তযখন দোরগোড়ায় উপস্থিত তখন অকস্যাৎ নুতন করে সূর্য্য উদয়ের সম্ভাবনাকে সে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে তাকে চোখের জলে সানন্দে গ্রহণ করলো | তার মনেহলো যেন স্বয়ং ভগবান তার সামনে উপস্থিত |   বাদল পাড়ি দিলো আমেরিকায় ডক্টর পিটার ,তার স্ত্রী ও তার একমাত্র কন্যার সাথে | দীর্ঘ তিন বছর ডক্টর পিটার ও তার স্ত্রীর তত্বাবধানে থেকে বাদল নুতন করে বাঁচার দিশা পেলো | এই তিন বছরে ডক্টর পিটারের বাঙালি ব্রাহ্মণ ডক্টর স্ত্রী মধুরিমা বাদলকে ভায়ের আসনে বসিয়ে দিদির মতই তার সমস্ত দুঃখ ,কষ্টগুলি জেনে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে সেগুলিকে ভুলিয়ে রাখার | বাদলও অনেকদিন পর মায়ের জায়গায় কাউকে বসাতে পেরে নিজের জীবনের সমস্ত কষ্টগুলি উজাড় করে বলতে পেরেছে | যন্ত্রনাদায়ক ঘটনাগুলি ভুলে যেতে না পারলেও দিদির সামনে ভুলে থাকার অভিনয় সে করে গেছে | যাতে দিদি তার ভায়ের জন্য কষ্ট না পায় | ছোট্ট লিজা তার আঙ্কেলকে খুব ভালোবাসে | ধীরেধীরে বাদল অনেকটাই সুস্থ্য হয়ে উঠে | দেশে যখন সে আসতে চাইলো ডক্টর পিটার তাকে জানালেন , তাঁরা যখন কলকাতায় আসবেন তখন বাদলকে সঙ্গে নিয়েই আসবেন | কিন্তু বাদলকে কথা দিতে হবে আবার তাঁরা যখন ফিরবেন তখন তাকেও ফিরতে হবে কারণ এই রোগের চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না এবং এটা খুবই ব্যয়বহুল | প্রয়োজনে সে তার স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে তাদের সাথে ফিরতে পারে ,তিনি বাদলের জন্য রোজগারের কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেবেন | ডক্টর পিটারকে যত দেখে বাদল তত যেন তার মনেহয় উনি মানুষরূপী ভগবান | পূর্বজন্মে কোনো পূর্ণের ফলে তার মতো মানুষের সাথে তার দেখা হয়েছে |বলা বাহুল্য এই তিনবছরে পিটার ফ্যামিলি মাত্র একবার কলকাতায় এসেছিলেন |

নুতন করে বাঁচার আশা নিয়ে বাদল যখন তার গ্রামে পা রাখলো ;সকলেই যেন ভুত দেখার মতো চমকে উঠে | তাদের ছোট খাটো কথার জবাব দিয়ে বাদল তার নিজের বাড়িতে পা রাখলো | কিন্তু একি ?বাড়ির চেহারা তো পুরোটাই পাল্টে গেছে | দারিদ্রের ছাপ কোথাও তো নেই ! হঠ্যাৎ চোখে পরে নিজের আট বছরের মেয়েকে | ইশারা করে কাছে ডাকে | কিছুটা সময় নিলেও বন্যা বাবাকে ঠিক চিনতে পারে | মেয়ের কাছেই সে জানতে পারে একজন কাকু তাদের সাথে থাকেন ,যাকে মা বহুবার বাবা ডাকতে  বলেছেন ,কিন্তু সেতো জানে এটা তার বাবা না - তাই সে তাকে কাকু বলেই ডাকে | কিন্তু স্কুলে বন্ধুরা মাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করে |

সিদ্ধান্ত নিতে বাদলের মুহূর্ত সময় লাগলো না | সে তার মেয়ে বন্যাকে বললো ," তুই আমার সাথে যাবি মা ?"
"কোথায় যাবে বাবা -তুমি আমায় নিয়ে ?"
বাদল আকাশের দিকে তাঁকিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে একটা আঙ্গুল আকাশের দিকে তুলে বললো ,"ওই আকাশ পথে অনেক দূরে ....যেখানে আমি আর তুই থাকবো |"

নুতন করে বাঁচার স্বপ্ন  নিয়ে নিজের মেয়েকে সকলের অলক্ষে বলতে গেলে তাকে চুরি করে নিয়ে পিছন ফিরে আর না তাঁকিয়ে নুতন ঠিকানার উর্দ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো |

বি: দ্রঃ - একজনের অনুরোধে আমার এই গল্পটি লেখা | জানিনা আমার সেই ফেসবুক ভায়ের ভালো লাগবে কিনা | আমি বাদলকে মেরে ফেলতে পারিনি ; কারণ আমি চাই কাকতালীয়ভাবে হলেও আমার সেই ভাইটি সুস্থ্য হয়ে যাক | তোমরা সকলে তাকে আশীর্বাদ কোরো |
নন্দা  2.11.16  9-40pm.

Saturday, November 5, 2016

অনেকদিন আগের একটা লেখা খুঁজে পেলাম ..সেটাই তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম ...22.8.10  2PM.
"ফিরে পেতে চাই"
                            ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলি -
        চাই যে ফিরে পেতে ,
হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলি -
        চাই যে কাছে পেতে |
স্মৃতির খাতায় অক্ষরগুলো -
        পড়েছে ধুলোর তলে ,
ভাসছে যেন চোখের পরে ,
        যাচ্ছে ধুয়ে চোখের জলে |
কেমন করে চলে যায় ?
       কাছের মানুষ অন্যখানে ,
কেমন করে গড়ে সব -
       পুরানোকে ভুলে নুতন করে   ?
জীবনটা এক রঙ্গমঞ্চ ,
        হেথায় করে সবাই অভিনয় ,
ভালোবাসার নামটি নিয়ে ;
        মুখোশ পরে রায় |
অধিকার আর দাবী নিয়ে ,
       তোলে শুধুই আলোড়ন ,
ভুলেও কেউ ভাবেনা কিছু ,
       হারিয়ে যায় ভালোবাসার মান |
ভালোবাসার বিনিময়ে কষ্ট কেন দেয় ?
       মুখের ভাষা , মনের কথায় -
এত ফারাক হয় ?

নন্দা
"চলে যেতে চাই না"
                          ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
    মৃত্যু অনিবার্য -
তবুও বাঁচবার যে উদগ্র বাসনা ,
   সেটাই নয় কি আশ্চর্য ?
     সংসার যেন একটি সমুদ্র ,  
যার একপাড়ে  জীবন ,
     অপর পাড়ে আছে মৃত্যু |
      আবার বলা যায় -
সংসার একটি তাসের ঘর ,
যে ঘর ভেঙ্গে দেয় মহাকাল ;
এখানে সকলেই আপন ,প্রিয়জন ,
      অথচ কেউ কারও নয় |
তিলে তিলে গড়ে তোলা সম্পর্কগুলিকে -
মৃত্যু এসে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায় ,
      তখন সকলেই অসহায় ,
প্রিয়জনের  বিয়োগ বেদনায় কাতর ,
কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনতে অপারগ |
জীবনকে যদি কল্পনা করি একটি পদ্মফুল ,
      আয়ুটা হলো পদ্মপত্রের নীর -
যে কোনো মুহূর্তেই ঝরে যেতে পারে ,
কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছা করে ,
"মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে ........"
নন্দা   4.11.16   1-30AM.

Thursday, November 3, 2016

"এটাই জীবন"
                    (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )
প্রতিদিন জীবনে ঘটে কত ঘটনা ,
সব কিছু কি আর মনে রাখা যায় ?
বাঁচার তাগিদে নিয়ত লড়াই -
মাঝে মাঝে অকালেই কেউ হেরে যায় |
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ,
দাঁড়িয়ে আছি আমরা সবাই ,
একটুখানি পিঁছলে গেলেই ,
জীবন মোদের শেষ হয়ে যায় |
সরল জীবনের জটিল অঙ্ক ,
পারিনা মিলাতে কেউ -
করছি লড়াই বাঁচার তাগিদে ,
জীবনে যতই উঠুক সমুদ্রসম ঢেউ |
   কেউ কারও নয় -
তবুও বাঁচি একে অন্যের তরে ,
বিপদে কেউ পড়লে পরে ,
বোঝা যায়- কে কত ভালোবাসে কাহারে !
জীবনের সংগ্ৰাম থামেনাতো কখনো ,
আমৃত্যু চলছে , চলবে -
কোনো ফল পাবেনা হিসাব করে ,
কি পেলে আর কি পাবে |
নন্দা   3.11.16  4PM.

Tuesday, November 1, 2016

"পরোয়া করলে না"
                        ( নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )

লোকলজ্জা ,সমাজের ভয় ,
  নাইবা করলে মা ,
জানি ভালোবেসে বিয়ে করলেও বাবাকে ,
  সুখী তুমি ছিলেনা |
তোমার আকাশসম চাহিদা ছিলো -
 পূরণে ,বাবা ছিলো অক্ষম ,
কতবার তোমাকে বলতে শুনেছি ,
  চোখে কি দেখতে পারেনা তোমাকে যম ?
তোমার কথায় সত্যি হোল মাগো ,
  যমেই নিয়ে গেলো তাকে ,
কয়েক মাসের ব্যবধানে ,
 নুতন রূপে সাজালে তুমি নিজেকে |
সারাজীবন শুধু নিজের কথাই ,
 ভাবলে তুমি মা ,
আমরা তোমার দু 'টি সন্তান ,
  আমাদের কথা একটুও ভাবলে না |
জানি মাগো জানি সময়ের সাথে ,
  জীবনও কারও থেমে থাকে না ,
বছর খানেক যেতে দিলে মাগো ,
  খুব বেশী ক্ষতি হত না !
অল্প বয়সে ভালোবেসে নাকি ,
  বিয়ে করেছিলে বাবাকে -
তোমার কাছে ভালোবাসা মানে ,
  বাঁধা ছকে চিনেছো তুমি টাকাকে |
নন্দা   1.11.16  7PM.