Tuesday, January 19, 2021

সুখের ঘরে আগুন (১৫)

সুখের ঘরে আগুন (১৫)

   নিলয় ঘরের মধ্যে বসে সাত-পাঁচ ভাবতে থাকে।তাদের কলেজ জীবনের দিনগুলি চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে। নন্দিনীকে যেদিন ও প্রপোজ করেছিল সেদিন নন্দিনী ওকে যে কথাগুলো বলেছিল মনের মধ্যে সেই কথাগুলি তোলপাড় করতে থাকে। খাট থেকে উঠে গিয়ে ব্যাগের ভিতর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে। কিন্তু লাইটারটা কোথাও খুঁজে পায়না। আবার এসে খাটের উপর বসে অপেক্ষা করতে থাকে দোদুলের জন্য। কিছুক্ষণ পরে দোদুল এসে ঘরে ঢোকে।ঘরে ঢুকেই সে দরজাটা দিয়ে দেয়। নিলয়ের সামনে এগোতে এগোতে বলে মাসিমা, মেসোমশাই এর সাথে গল্প করছিলাম।উনাদের লাইট অফ করে আমি তোমার কাছে এলাম; তোমাকে কথা দিয়েছিলাম আমার জীবনের কিছু ঘটনা তোমাকে জানাবো যা আজ পর্যন্ত আমি বা নন্দা কাউকে কোনদিনই বলিনি।কিন্তু কেন জানিনা আমার মনে হল তোমাকে আমি কথাগুলো বলতে পারি, নিজের মনটাকে হালকা করতে পারি।তাই নন্দাকে বলে আসলাম ঘুমিয়ে পড়তে। আমি তোমার কাছেই রাতে থাকবো।যদিও রাতে আমি এই ঘরটাতেই ঘুমাই।হয়তো অবাক হচ্ছে কথাটা শুনে।কিন্তু এটাই সত্যি।

  তারপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে আবারও বলতে শুরু করলো,
 --কেন  জানিনা আমার মনে হল নন্দা কিছুটা হলেও আমার মনোভাব আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই অবাক বিস্ময় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।হঠাৎ করেই বললো,
---  কি এমন গল্প করবে একটা অচেনা মানুষের সাথে ?
আমি কথাটাকে অন্যভাবে ঘুরিয়ে দিয়ে বললাম,
----  এতদিন ধরে দার্জিলিং শহরে আছি কাউকে এত আপন কোনদিন মনেহয়নি। কেউ কোনদিনও আমার বাড়িতে আসতে চায়নি।আমি যে সামান্য একজন ড্রাইভার! নিতান্ত গরীব!তাই কেউ আমাকে হয়তো মানুষ মনে করে না ।কিন্তু এই প্রথমবার কাউকে দেখে আমার মনে হয়েছে সে আমার খুব আপন এবং অতি অল্প সময়ে আমি তাকে ভালবেসে ফেলেছি। মাসিমা, মেসোমশাইও ভীষণ ভালো মানুষ।আর আমার যতদূর মনে হয় আমার প্রতি তাদের ভালোবাসাটা নিঃস্বার্থ।তাই যাইনা একটু গিয়ে নিলয়দার সাথে গল্প করে আসি।
 নিলয় দোদুলের কাছ থেকে লাইটারটা চেয়ে নিয়ে নিজের সিগারেট ধরানোর আগেই দোদুলের হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে দেয়। দোদুল হেসে পড়ে বলে,
---  আমার চলে না দাদা আমি চা ছাড়া অন্য কোন নেশা করি না।
নিলয় একটু অবাক হয়।এই ঠান্ডা জায়গায় দোদুল বিন্দুমাত্র নেশা করে না।তারমানে সে যা মনে করেছিল সেটাই ঠিক।সত্যিই দোদুল খুব ভালো ছেলে।কিন্তু নন্দিনী কি করে দোদুলের স্ত্রী হলো সেটা জানতেই হবে।আর কথা না বাড়িয়ে নিলয় দোদুলকে বলল,
--- এবার বল তুমি তোমার জীবনের কোন কথা আমাকে বলতে চেয়েছো?আমিও শুনতে আগ্রহী।
   দোদুল শুরু করল--
 আমার বাবা আর নন্দার বাবা ছেলেবেলা থেকেই দুই বন্ধু।আমার বাবার মনের ইচ্ছা ছিল নন্দার সাথে আমার বিয়ে দেবেন। কিন্তু তিনি জানতেন না নন্দার বাবার সেটা মনের ইচ্ছে ছিল না। অনেক বছর আগে নন্দার বাবা চাকরি সূত্রে কলকাতা শহরে এসে বসবাস শুরু করেন।আর আমরা গ্রামেই থেকে যাই। মাঝেমধ্যে নন্দাকে নিয়ে তার বাবা-মা গ্রামের বাড়ি যেতেন।আমি মনেমনে নন্দাকে ভালবাসতাম।ভাবতাম নন্দাও বুঝি আমায় ভালোবাসে।কিন্তু সেই  আমিও বুঝতে পারিনি নন্দা শুধু আমাকে বন্ধুর চোখে দেখত ভালোবাসতো না।যে ভালোবাসাটা তার আমার প্রতি ছিলো সেটা হল বন্ধুপ্রীতি।আমি সেটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।তাই যেদিন নন্দার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বিয়ের কার্ড নিয়ে তারা সকলে মিলে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আমাদের নিমন্ত্রন করলো সেদিন বাবার মতো আমিও খুব অবাক হয়েছিলাম।শুধু অবাক নয় ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম।কিন্তু মুখ ফুটে কোন কথা আমি নন্দাকে জানাইনি।কারণ এটা আমার কাছে শুধু ভালোবাসার প্রত্যাখ্যান নয় অপমানও।তাই বাবার মতো আমিও খুব চুপচাপ ছিলাম। আমরা তিনজনেই বিয়েতে এসেছিলাম কাউকে বুঝতে দিইনি আমাদের মনের কথা।
 নন্দার বিয়ের পরে আস্তে আস্তে আমাদের যোগাযোগটা কমতে থাকে।কিন্তু তবুও নন্দার বাবা মাঝেমধ্যে যখন গ্রামের বাড়িতে যেতেন আমাদের বাড়িতে যেতেন,খাওয়াদাওয়া,গল্পগুজব সবই করতেন। তবে নন্দার সাথে আমার সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল। নন্দার বিয়ের দুবছর পর জামাই মেয়েকে নিয়ে নন্দার বাবা একবার গ্রামে যান।নন্দার হাজবেন্ড খুবই ভালো মনের মানুষ।ভদ্রলোক খুব ভালো সরকারি চাকরি করতেন।তার সাথে আমার খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায়।আর তখনই তিনি আমার সাথে ঘুরতে যাওয়ার একটা প্রোগ্রাম ঠিক করেন সেটা দার্জিলিং কিছুতেই আমি তাকে এই ব্যাপারে নিরস্ত্র করতে পারিনা,আমাকে রাজি হতেই হয়। তিনি যেন ছিলেন নাছোড়বান্দা।
   দার্জিলিংয়ের পুরো ট্যুরে নন্দা কিন্তু স্বাভাবিক অথচ আমি কিছুতেই সে সামনে এলে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারিনা।নন্দার স্বামী বিরেশের সাথে আমার ভালই বন্ধুত্ব হয়ে যায়।বিরেশ ভীষণ অমায়িক আর সহজ সোজা মানুষ।
  দার্জিলিং ঘোরা শেষ।আমরা বাড়ির পথে।হঠাৎ এলো সেই দুর্যোগ।আমাদের গাড়িটা আর একটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে চাকা স্লিপ করে।গাড়িটা গড়াতে থাকে আর গাড়ির ভিতরে শুরু হয় আত্মচিৎকার।গাড়িটা গিয়ে কয়েকটা গাছের সাথে আটকে যায়।উদ্দারকারি যখন এসে সেখানে পৌঁছায় তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।গাড়ির ভিতর মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় আমার বাবা,মা,নন্দার বাবা,মাকে।হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে আর নন্দাকে। বীরেশের ও ড্রাইভারের বডি খুঁজে পাওয়া যায় না।
  হাসপাতালে প্রথমে জ্ঞান আসে আমার।ডাক্তার নার্সদের কাছ থেকে জানতে পারি আমার একজন সফরসঙ্গী এই হাসপাতালে ভর্তি। উঠে গিয়ে দেখার মত তখনো আমার পরিস্থিতি হয়নি।ওনাদের কাছে তার বয়স মোটামুটি জেনে বুঝতে অসুবিধা হয়না যে নন্দাও এই হাসপাতালে ভর্তি। তাদের মুখ থেকেই আরো জানতে পারি বাকিদের মধ্যে চারজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এছাড়া গাড়িতে যদি অন্য কেউ থেকে থাকে তাদের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। কথাগুলো শুনে খুব ভেঙ্গে পড়ি।কিন্তু এতটাই অসহায় তখন আমি আমি উঠে গিয়ে নন্দার পাশে দাঁড়ানোর মত আমার কোনো ক্ষমতা নেই।নিজেও তো ক্ষতবিক্ষত!একইসাথে বাবা-মা দু'জনকেই হারালাম।আর নন্দা হারালো বাবা-মা আর তার স্বামীকে। প্রায়  চারদিন পর নন্দার জ্ঞান আসলো। আমি তখন কিছুটা ধাতস্থ। নার্সের সহায়তায় নন্দার কাছে গেলাম।কিন্তু তার কোনো প্রশ্নের উত্তরই আমি সঠিক ভাবে দিতে পারলাম না।নন্দাকে শান্তনা দেওয়ার কোনো ভাষাও আমার জানা ছিল না।আর সেই মুহূর্তেই আমিও যে বিধ্বস্ত! কে কাকে কতটা সান্তনা দিতে পারি?দুজনেই যে সর্বহারা।
   আস্তে আস্তে দুজনেই শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হমাম। সরকারি হাসপাতালে সহায়তায় আমরা কলকাতায় ফিরলাম। দুজনে একসাথে ফিরলাম ঠিকই কিন্তু কোন কথা দুজনের মধ্যে হলনা।সম্পূর্ণ দুটি অপরিচিত মানুষের মত ফিরে এলাম।পাশাপাশি বসে আছি অথচ দুজনের মধ্যে কোন কথা নেই।নন্দাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যখন ফিরে আসছি তখন নন্দা আমায় ডেকে বলল,
-- আমার মন বলে বীরেশ বেঁচে আছে,সে একদিন নিশ্চয়ই ফিরে আসবে।তাই আমাকে তোমার একটু সাহায্য করতে হবে।
 আমি জানতে চাইলাম,
--- কি সাহায্য তুমি চাও বল?আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও তোমাকে সে সাহায্য করতে রাজি আছি।
 নন্দা তখন এমন একটা কথা বলে বসলো যা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।আমাকে বলল ওদের কলকাতার বাড়িটা বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে আর দার্জিলিং শহরের একটা বাড়ি কিনে ও সেখানে বাস করতে চায়।
তোর কথা শুনে আমার পাগলের প্রলাপ মনেহল।কিন্তু ওকে সেটা বুঝতে না দিয়ে আমি বললাম,"বিরেশ যদি কোন দিন ফিরে আসে তাহলে তো এই বাড়িতেই আসবে।তাহলে এখান থেকে যদি তুমি চলে যাও বিরেশ তো তোমাকে খুঁজে পাবে না।তাই আমার মনেহয় বাড়িটা বিক্রি না করে তুমি এখানেই তার জন্য অপেক্ষা করো।"
  কি বুঝলো আর কি ভাবলো আমি জানিনা তবে আমাকে যে বাড়িটা বিক্রির জন্য লোক দেখতেই হবে একথা সে আমার কাছ থেকে আদায় করে নিল।আমি বাড়ি ফিরে গেলাম।ফাঁকা বাড়িতে মন টেকানো দায় হয়ে পড়লো। চারিপাশে বাবা-মায়ের স্মৃতি। বাড়িতে পৌঁছানোর পরের দিন নন্দাকে ফোন করলাম।রিং হয়ে গেল,ফোন ধরলো না।ও হ্যাঁ একটা কথা বলা হয়নি।কলকাতা পৌছেই আমি দুটো ফোন কিনেছিলাম। আমাদের সব ফোনগুলোই তো ওই অ্যাক্সিডেন্টের সময় হারিয়ে গেছিল।তাই কলকাতা পৌঁছেই এক পরিচিতের কাছ থেকে  টাকা ধার করে ফোন দুটো আগে কিনি।একটা নন্দাকে দিয়ে আরেকটা আমি নিয়ে আসি।নন্দার ফোনটায় সিমটা আমি কিনে দিয়ে এসেছিলাম।এটা আমি করেছিলাম আমি বাড়িতে থাকা কালিন সময়ে যাতে নন্দর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি। বারবার নন্দাকে ফোন করেছি কিন্তু নন্দা ফোন ধরেননি। একদিকে বাবা মাকে হারানোর কষ্ট আর অন্যদিকে নন্দাকে নিয়ে চিন্তা। এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে আমারও পাগল হয়ে যাবার জোগাড়। পরপর তিনদিন বারবার ফোন করার পরও যখন নন্দার ফোন ধরল না আমি তার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারলাম না তখন আমি আবারও কলকাতায় নন্দার কাছে ছুটলাম।
   নন্দাদের বাড়িতে ঢোকার মুখেই দেখলাম একটা ছোট সাইনবোর্ড ঝুলানো।আর তাতে লেখা "বাড়ি বিক্রি হইবে" কিছুটা থমকে গেলাম আর মনেমনে ভাবলাম তাহলে নিশ্চয় নন্দা ঠিক আছে। বারবার কলিংবেল বাজানোর পর নন্দা এসে কোনরকমে দরজাটা খুলে দিল।আমি তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি এক মাথা সিঁদুর,কপালে বড় করে লাল টিপ দেওয়া,হাতে শাখা পলা।কিন্তু চুলগুলো উস্কখুস্ক দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে শুয়ে ছিল। আমাকে দেখতে পেয়েই বলল,
---  বাড়ি বিক্রি লোক পেয়েছো?
 আমি বললাম,
---  চেষ্টা করছি, এত তাড়াতাড়ি এত বড় একটা বাড়ি কি বিক্রির লোক পাওয়া যায়?
হঠাৎ দেখি নন্দা দাঁড়াতে পারছে না। ঠকঠক করে কাঁপছে। তাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলাম।জানতে চাইলাম, খাওয়া-দাওয়া করছো কিনা।আমার কথার সে কোন উত্তর দিল না।নন্দাকে সোফায় বসিয়ে রেখে আমি রান্নাঘরে গেলাম।গিয়ে দেখলাম সেদিন ফেরার সময় যেমন দেখে এসেছিলাম রান্নাঘর ঠিক তেমনি রয়েছে।ধুলোবালি আর নোংরায় পরিপূর্ণ। রান্নাঘরের যে কোন কাজ হয়নি সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । শুধু কয়েকটা কৌটো ভর্তি মুড়ি আর বিস্কুট।আমার বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না এই তিনটে দিন নন্দা রান্না না করে ওই মুড়ি বিস্কুট খেয়েই কাটিয়েছে। বহুদিন ধরে এই বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে এ বাড়ির কোথায় কি আছে তা ছিল আমার নখদর্পনে।সেই ছোট্টবেলা থেকে এবাড়িতে আমার আসা যাওয়া।অপটু হাতে রান্নাঘরটা সামান্য পরিষ্কার করে আমি দু'কাপ চা করে তারপর ভাত চাপিয়ে দিলাম। চা নিয়ে এসে দেখি দুর্বলতায় নন্দা সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি তাকে ডেকে চা-বিস্কুট দিলাম। বিনা বাক্য ব্যয়ে সে চা ও বিস্কুট দুটি খেয়ে নিল। তারপর আমি সামনের দোকান থেকে কয়েকটা ডিম আর আলু কিনে আনি। রান্নাবান্না খুব একটা আমি না জানলেও ডিম সেদ্ধ আলু সেদ্ধ ভাত করতে পারতাম।কারণ আমি আমার চাকরির সুবাদে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আমাকে থাকতে হতো।আমি একটা স্কুলে টিচারী করতাম। যেহেতু আমরা গ্রামে থাকতাম আর আমার স্কুলটা ছিল আমাদের বাড়ি থেকে  বেশ খানিকটা দূরে তাই নিত্য যাতায়াত করা খুব অসুবিধা হতো।এই কারণে আমি একটা বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। মাঝেমধ্যে এবং ছুটির দিনে বাড়িতে ফিরতাম।দার্জিলিং থেকে ফিরে এসে আমি স্কুলে জয়েন করেছিলাম।কিন্তু পুনরায় ছুটি নিয়ে নন্দার খোঁজে কলকাতা আসতে বাধ্য হই। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি নন্দাকে নিয়ে পড়লাম ভীষণ ফ্যাসাদে। আমি বুঝতে পারছিলাম নন্দা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছেনা বিরেশ আর নেই। সে যে আস্তে আস্তে একটা ফ্রাস্টেশনে চলে যাচ্ছে এটা বেশ অনুধাবন করতে পারছিলাম। কিন্তু কি করব সেটাই বুঝতে পারছিলাম না।একদিকে আমার চাকরি অন্যদিকে নন্দা।আমি যদি নন্দাকে বলি আমার কাছে গিয়ে থাকার জন্য আমি জানি সে কিছুতেই রাজি হবে না।অথচ চাকরি বাঁচিয়ে নন্দার কাছে এসে আমার থাকাটাও সম্ভব নয়।আর আমি এখানে থেকে গেলে নন্দা কিছুতেই এটা মেনে নেবে না।
  অনেক ভেবে সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে আমি নন্দাকে বলেই বসলাম,
--  যতদিন না বাড়ি বিক্রি হচ্ছে অন্তত সে কটা দিন তুমি আমার বাড়িতে গিয়ে থাকো।
মাথা নাড়িয়ে সে আমাকে জানিয়ে দিল তা সে যাবেনা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিস্থিতি আমার!আমি বুঝতে পারলাম চাকরি আর নন্দা এই দুটোর মধ্যে যে কোন একটাকে আমার বেছে নিতে হবে। নন্দার কথামত তার বাড়ি বিক্রি করে দার্জিলিং গিয়ে তাকে বাড়ি কিনে দিতে হলে আমার বাড়িটাকেও বিক্রি করতে হবে সাথে চাকরিটাকেও ছাড়তে হবে।কারণ নন্দাকে আমি একা ছাড়তে পারবো না।আর নন্দা বিশ্বাস না করলেও এটা যে সত্যি বিরেশ আর নেই।সে কোন দিনও ফিরবে না।আর চাকরি ছেড়ে দিলে খাবো কি? নন্দাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম এই বাড়িতে থেকে বিরেশের জন্য অপেক্ষা করতে।কিন্তু সে কিছুতেই সে কথা বুঝতে চাইল না। আমি তখন বুঝতে পারছি নন্দা আস্তে আস্তে মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছে।তাকে ইমিডিয়েট ডাক্তার দেখানো দরকার।কিন্তু নন্দা যে ডাক্তার দেখাতে রাজি হবে না এটাও আমি ভালোভাবে বুঝতে পারছিলাম। তাই নিজেই একজন সাইকিয়াটিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করে তাকে সব কথা জানালাম। তিনি আমাকে সাজেস্ট করলেন যাতে ওকে দার্জিলিঙে কাছাকাছি কোথাও নিয়ে রাখা হয়।উনি আমাকে এও বললেন যে নন্দার মনের মধ্যে একটা ধারণা হয়েছে বিরেশ দার্জিলিঙে আছে।আর এই কারণেই ও কলকাতা ছেড়ে দার্জিলিংয়ের গিয়ে থাকতে চাইছে। তাই ওকে সুস্থ করতে গেলে ও যেখানে যেতে চায় সেখানেই ওকে নিয়ে যেতে হবে।

ক্রমশঃ 

No comments:

Post a Comment