আমার গ্যাংটক ঘোরার তৃতীয় দিন
সকাল আটটা বেজে দশ।রওনা দিলাম ঋষিখোলা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ১৪হাজার ৪০০ফুট উপরে জুলুকের উদ্দেশ্য।প্রথম পারমিশন নিতেই কেটে গেলো 'রঙ্গলী' তে একঘণ্টা।এই এক ঘণ্টার মধ্যে টিফিন হোল, কিছু কেনাকাটা হোল(ঘুরতে আসলেই এটা মাষ্ট)।আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো।ঘন্টায় ঘন্টায় আমাদের পাইলট কাগজপত্র নিয়ে গাড়ি থামিয়ে চেকপোস্ট ছুটে যায়।পথ তো আর শেষ হয়না!গাড়ি এসে থামলো 'কালোঝোরা' চেক পোষ্ট।আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে কালোঝোরার সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম।অপূর্ব সুন্দর এক ঝর্ণা।তার পাদদেশে দাঁড়িয়ে চুড়া ঠাওর করা যায়না।প্রায় সাড়ে চারঘন্টা পর এসে পৌঁছালাম জ্ঞানথ্যাংকের 'Cafe Teria & giftshop'।সেখানে সবাই মিলে দু'পায়ে দুটো করে ভারী পাথর (gumboot) পরে নিলাম।জীবনে প্রথম এটা পায়ে দিয়ে হাঁটতেই পারছিলামনা।একটু পরেই অবশ্য পায়ে কিছু আছে মনেই হচ্ছিলোনা।পূনরায় গাড়ি চলতে শুরু করলো।চারিপাশে বরফ আর বরফ।গাড়ি চলছে তো চলছেই।শেষে এসে গাড়ি থামলো 'বাবা মন্দির'।চারিপাশে বরফ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনা ।আমরা আসার মিনিট পাঁচেক পরেই শুরু হোল বৃষ্টি।জীবনে প্রথম বরফ পড়ার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে কেউই নিজেদের আর সামলাতে পারলামনা।ছেলেবেলার মত সকলেই ওই বরফ বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে শুরু করলাম।মুহূর্তের মাঝে মনেহল কেউ যেন একটা সাদা ধবধবে চাদর দিয়ে সমস্ত রাস্তাটাকে মুড়ে দিয়েছে।পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে মনে হচ্ছিলো সাদা আর কালো ছাপা (সবুজ পাতাগুলিকে দূর থেকে মেঘলা আকাশে কালো মনে হচ্ছিলো) কোন চাদরে ঢাকা।বরফ নিয়ে সব খেলতে শুরু করে দিলো।২২ডিগ্রি থেকে হঠাৎ করেই পড়লাম দু কিংবা তিন ডিগ্রিতে।তাতে অবশ্য কারও কোন হেলদোল নেই।দিদি গাড়ি থেকে নামেনি।কারন সে খুব একটা সুস্থ্য নয়।ডক্টর দেখিয়ে তাঁর মত নিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
ওখানে যারা গিয়েছেন সকলেই জানেন হয়তো বেশ কয়েকটি সিঁড়ি আছে সেখান থেকে উপরে উঠে বরফের উপর দিয়ে হাঁটা যায়।গামবুট পরে রাস্তার বরফের উপর থেকে হেঁটে বেশ মজা পেয়ে সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে লাগলাম।সেখানে পৌঁছে দেখি কোন লোকজন নেই।বাবা হরভজন সিং এর ব্যবহৃত আর্মি ড্রেস, বালিশ,টুপি, জুতো ব্যাজ একটি ঘরে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা।তাকে রোজ সকালে যে জলটা দেওয়া হয় অনেকে সেই জল নিয়ে টানা সাতদিন ধরে খেয়ে নাকি সুস্থ্য হয়ে গেছেন।বাবা হরভজন সিংকে ওখানকার মানুষেরা দেবতা মনে করেন । অনেকেই নাকি আজও তাঁর অশরীরী আত্মার টের পান।তিনি নাকি আজও সীমান্ত পাহারা দিয়ে চলেছেন।সবসময় তাঁর ছবির সামনে ধুপ দীপ জলে।
গোল বাঁধলো মোবাইলে সময় দেখতে গিয়ে।ঘড়িতে বাজে তিনটে আর মোবাইলে সাড়ে পাঁচটা।তারমানে মোবাইল তখন চীনের টাওয়ার ধরে নিয়েছে।যতক্ষণ আমরা ওখানে ছিলাম সমানে বরফ পরে চলেছে।গাড়ির পাইলট আমাদের তাড়া দিতে লাগলো তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য।বললো,"যা বরফ পড়তে শুরু হয়েছে তাতে যেকোন সময় রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।পাথরের বড় বড় চায় পড়তেও পারে রাস্তার উপর।"আমরা ভয় পেয়ে গেলাম।ওই অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখা ছেড়ে পূণরায় গাড়িতে উঠে বসলাম।অনেকটাই রাস্তা বরফে আবৃত।খুব সাবধানে আস্তে আস্তে পাইলট এগিয়ে যেতে থাকলো।এদিকে রাত হয়ে গেছে,পুরো রাস্তা অন্ধকার।শুধুমাত্র গাড়ির হেডলাইটটা জ্বালিয়ে দু'পাশে খাদ রেখে গাড়ি এগিয়ে চলেছে।মনের ভিতর একটা আতঙ্ক কাজ করলেও গাড়ির জানালা দিয়ে যখনই বাইরের দিকে তাকিয়েছি মনটা আনন্দে নেচে উঠেছে।রাতের বেলা পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে মনেহয় দীপাবলীর সময় মানুষ যেমন মোমবাতি জ্বেলে বাড়ির পর বাড়ি সাজায় তখন ঠিক যেমন দেখতে লাগে পাহাড়ের টিলাগুলিতে বৈদুতিক আলো জ্বলার ফলে ঠিক সেইরূপই মনেহয়।সে আর এক অপরূপ দৃশ্য।আসতে আসতে রাস্তার উপর একটি সুন্দর 'মুনাল'পাখি দেখলাম।গাড়ি এনে তার পাশে দাঁড় করিয়ে যতক্ষণ ছবি তোলা হোল সে দাঁড়িয়েই থাকলো।এই পাখিগুলো দেখতে অনেকটাই ছোট ময়ূরের মত।রাত তখন সাড়ে আটটা।আমরা সকলে হোটেলে ফিরে আসি সেই বিভীষিকাময় রাস্তা দিয়ে।ও বলতে ভুলে গেছি আমরা যে হোটেল বনলতায় ছিলাম ওটা ছিলো সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে। স্নান করছি (ঋষি নদী)সিকিম ,থাকছি পশ্চিমবঙ্গ।দরজা খুলে বেরোলেই পাহাড়, ঝরনা আর নদী।বড় অপূর্ব জায়গা। আগামীকালের প্লান গ্যাংটক
25-4-19
ক্রমশঃ
সকাল আটটা বেজে দশ।রওনা দিলাম ঋষিখোলা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ১৪হাজার ৪০০ফুট উপরে জুলুকের উদ্দেশ্য।প্রথম পারমিশন নিতেই কেটে গেলো 'রঙ্গলী' তে একঘণ্টা।এই এক ঘণ্টার মধ্যে টিফিন হোল, কিছু কেনাকাটা হোল(ঘুরতে আসলেই এটা মাষ্ট)।আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো।ঘন্টায় ঘন্টায় আমাদের পাইলট কাগজপত্র নিয়ে গাড়ি থামিয়ে চেকপোস্ট ছুটে যায়।পথ তো আর শেষ হয়না!গাড়ি এসে থামলো 'কালোঝোরা' চেক পোষ্ট।আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে কালোঝোরার সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম।অপূর্ব সুন্দর এক ঝর্ণা।তার পাদদেশে দাঁড়িয়ে চুড়া ঠাওর করা যায়না।প্রায় সাড়ে চারঘন্টা পর এসে পৌঁছালাম জ্ঞানথ্যাংকের 'Cafe Teria & giftshop'।সেখানে সবাই মিলে দু'পায়ে দুটো করে ভারী পাথর (gumboot) পরে নিলাম।জীবনে প্রথম এটা পায়ে দিয়ে হাঁটতেই পারছিলামনা।একটু পরেই অবশ্য পায়ে কিছু আছে মনেই হচ্ছিলোনা।পূনরায় গাড়ি চলতে শুরু করলো।চারিপাশে বরফ আর বরফ।গাড়ি চলছে তো চলছেই।শেষে এসে গাড়ি থামলো 'বাবা মন্দির'।চারিপাশে বরফ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনা ।আমরা আসার মিনিট পাঁচেক পরেই শুরু হোল বৃষ্টি।জীবনে প্রথম বরফ পড়ার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে কেউই নিজেদের আর সামলাতে পারলামনা।ছেলেবেলার মত সকলেই ওই বরফ বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে শুরু করলাম।মুহূর্তের মাঝে মনেহল কেউ যেন একটা সাদা ধবধবে চাদর দিয়ে সমস্ত রাস্তাটাকে মুড়ে দিয়েছে।পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে মনে হচ্ছিলো সাদা আর কালো ছাপা (সবুজ পাতাগুলিকে দূর থেকে মেঘলা আকাশে কালো মনে হচ্ছিলো) কোন চাদরে ঢাকা।বরফ নিয়ে সব খেলতে শুরু করে দিলো।২২ডিগ্রি থেকে হঠাৎ করেই পড়লাম দু কিংবা তিন ডিগ্রিতে।তাতে অবশ্য কারও কোন হেলদোল নেই।দিদি গাড়ি থেকে নামেনি।কারন সে খুব একটা সুস্থ্য নয়।ডক্টর দেখিয়ে তাঁর মত নিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
ওখানে যারা গিয়েছেন সকলেই জানেন হয়তো বেশ কয়েকটি সিঁড়ি আছে সেখান থেকে উপরে উঠে বরফের উপর দিয়ে হাঁটা যায়।গামবুট পরে রাস্তার বরফের উপর থেকে হেঁটে বেশ মজা পেয়ে সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে লাগলাম।সেখানে পৌঁছে দেখি কোন লোকজন নেই।বাবা হরভজন সিং এর ব্যবহৃত আর্মি ড্রেস, বালিশ,টুপি, জুতো ব্যাজ একটি ঘরে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা।তাকে রোজ সকালে যে জলটা দেওয়া হয় অনেকে সেই জল নিয়ে টানা সাতদিন ধরে খেয়ে নাকি সুস্থ্য হয়ে গেছেন।বাবা হরভজন সিংকে ওখানকার মানুষেরা দেবতা মনে করেন । অনেকেই নাকি আজও তাঁর অশরীরী আত্মার টের পান।তিনি নাকি আজও সীমান্ত পাহারা দিয়ে চলেছেন।সবসময় তাঁর ছবির সামনে ধুপ দীপ জলে।
গোল বাঁধলো মোবাইলে সময় দেখতে গিয়ে।ঘড়িতে বাজে তিনটে আর মোবাইলে সাড়ে পাঁচটা।তারমানে মোবাইল তখন চীনের টাওয়ার ধরে নিয়েছে।যতক্ষণ আমরা ওখানে ছিলাম সমানে বরফ পরে চলেছে।গাড়ির পাইলট আমাদের তাড়া দিতে লাগলো তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য।বললো,"যা বরফ পড়তে শুরু হয়েছে তাতে যেকোন সময় রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।পাথরের বড় বড় চায় পড়তেও পারে রাস্তার উপর।"আমরা ভয় পেয়ে গেলাম।ওই অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখা ছেড়ে পূণরায় গাড়িতে উঠে বসলাম।অনেকটাই রাস্তা বরফে আবৃত।খুব সাবধানে আস্তে আস্তে পাইলট এগিয়ে যেতে থাকলো।এদিকে রাত হয়ে গেছে,পুরো রাস্তা অন্ধকার।শুধুমাত্র গাড়ির হেডলাইটটা জ্বালিয়ে দু'পাশে খাদ রেখে গাড়ি এগিয়ে চলেছে।মনের ভিতর একটা আতঙ্ক কাজ করলেও গাড়ির জানালা দিয়ে যখনই বাইরের দিকে তাকিয়েছি মনটা আনন্দে নেচে উঠেছে।রাতের বেলা পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে মনেহয় দীপাবলীর সময় মানুষ যেমন মোমবাতি জ্বেলে বাড়ির পর বাড়ি সাজায় তখন ঠিক যেমন দেখতে লাগে পাহাড়ের টিলাগুলিতে বৈদুতিক আলো জ্বলার ফলে ঠিক সেইরূপই মনেহয়।সে আর এক অপরূপ দৃশ্য।আসতে আসতে রাস্তার উপর একটি সুন্দর 'মুনাল'পাখি দেখলাম।গাড়ি এনে তার পাশে দাঁড় করিয়ে যতক্ষণ ছবি তোলা হোল সে দাঁড়িয়েই থাকলো।এই পাখিগুলো দেখতে অনেকটাই ছোট ময়ূরের মত।রাত তখন সাড়ে আটটা।আমরা সকলে হোটেলে ফিরে আসি সেই বিভীষিকাময় রাস্তা দিয়ে।ও বলতে ভুলে গেছি আমরা যে হোটেল বনলতায় ছিলাম ওটা ছিলো সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে। স্নান করছি (ঋষি নদী)সিকিম ,থাকছি পশ্চিমবঙ্গ।দরজা খুলে বেরোলেই পাহাড়, ঝরনা আর নদী।বড় অপূর্ব জায়গা। আগামীকালের প্লান গ্যাংটক
25-4-19
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment