Monday, May 6, 2019

এটাই ভালোবাসা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই অতুল দেখে আসছে ঠাম্মার উপর মায়ের অত্যাচার।বাবা অনেকবার প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাননি।এক্ষণ অশান্তির ভয়ে অধিকাংশ সময় চুপ করেই থাকেন।ঠাম্মা কোনদিনও মায়ের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেননি।মাঝে মাঝে এই নিয়ে মায়ের সাথে অতুলের তুমুল ঝামেলা হয়।অতুল প্রতিজ্ঞা করে কোনদিন যদি চাকরী পায় সে তার ঠাম্মাকে নিয়ে আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকবে।
    দু'বছর পরে অতুল চাকরী পেলো এবং ইচ্ছা করেই সে কলকাতার বাইরে চাকরী নিলো।যাওয়ার আগেরদিন সে ঠাম্মাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা সদর্পে সকলকে জানালো।স্বভাবতই মা তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন।সে সরাসরি মাকে জানালো,'তোমার অত্যাচারের হাত থেকে ঠাম্মাকে বাঁচাতে এর থেকে আর কোন ভালো উপায় আমার জানা নেই।'অতুলের বাবা দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন,"সন্তান হয়ে আমি যা পারিনি তুই নাতী হয়ে সহজেই মীমাংসা করে দিলি।'
      কিন্তু যাকে নিয়ে এতো ঘটনা তিনি সকলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,'নারে দাদুভাই আমি তোর বাবাকে ছেড়ে গিয়ে থাকতে পারবোনা।তোর মা আমায় একটু বকাবকি করে ঠিকই কিন্তু এই বাড়ি,তোর মা, বাবা এদের সকলকে ছেড়ে গিয়ে আমি কোথাও ভালো থাকবো নারে!নিজের বাড়িতে কাজ করি আমার একটুও কষ্ট হয়না।জানিস দাদুভাই,একসময় আমিও বৌমাকে কম কষ্ট দিইনি।সেও কিন্তু মুখ বুজে সব সহ্য করতো।এটা আমার পাপের ফল।বৌমার এতে কোন দোষ নেই।মানুষের যখন বয়স কম থাকে আর তখন রক্ত থাকে গরম।যার সাথে যে ব্যবহারই করিনা কেন একদিন না একদিন সেটাই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে।তুই একাই চলে যা আমি আমার ছেলে আর বৌ এর কাছেই থাকবো।তোরাই তো আমার সব রে!বরং তুই বদলি নিয়ে তাড়াতাড়ি করে এখানে চলে আয়।আমরা সবাই একসাথেই থাকবো।তোর মা আমার উপর চেঁচামেচি করলে কি হবে রে ?আমি কি বুঝিনা সে যে আমায় খুব ভালোওবাসে।তিনবেলা সেই তো আমাকে অসুধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়।হ্যাঁ হয়তো তার সে স্বরের মধ্যে কোন মিষ্টতা থাকেনা ঠিকই।সেটাও কিন্তু আমার দোষে।তার হয়তো মনে পড়ে যায় আমার পূর্বতন ব্যবহারের কথা।প্রথম থেকেই আমি যদি তোর মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করতাম তোর মা-ও হয়তো এখন আমার সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারতো।সে যে সেটা পারেনা সেটা আমার দোষে রে!এই তো সেদিন রাত্রিবেলা আমার বাতের ব্যথাটা বেড়েছিলো।তোর মা বাথরুমে যাওয়ার সময় আমার ছটফটানি দেখে অনেকক্ষণ আমার পায়ে তোর বাবার এনে দেওয়া ওষুধটা মালিশ করে দিলো।বকবক করছিলো তোর মা তখন ঠিকই কিন্তু সেই তো ওষুধটা মালিশ করে আমায় ঘুম পারালো।তোর বাবা তখন অঘোরে অন্য ঘরে ঘুমাচ্ছে।আমি বুঝতে পারি সে আমার আগের ব্যবহারের কথা মনে করেই আমার সাথে মিষ্টি করে কথা বলতে পারেনা।এতে ওর কোন দোষ নেই ভাই,দোষী তো আমিই।'
   অতুলের মা এসে শ্বাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো,
-মা,তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।তোমার কথাগুলো একদম ঠিক মা।কিন্তু আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।
-আমি জানি মা।আমিও যে তোকে খুব ভালোবাসি।সেই ছোট্টবেলায় আমার প্রতুলের বৌ হয়ে আমার কাছে এসেছিলি।সংসারের কোন কাজই তুই জানতিসনা।বকাবকি না করলে আজ  মস্তবড় পাক্কা গিন্নী হতে পারতিস?আমি যে তোকে আমার নিজের মেয়ের মতনই দেখি।কোনদিন মন খুলে এই কথাগুলো কারও কাছে বলতে পারিনি।আমার দুর্ব্যবহারের কারনেই যে তুই আমার সাথে দুর্ব্যবহার করিস সেটা প্রতুল না বুঝলেও আমি বুঝি।কাঁদিস না মা।আমরা মা,মেয়ে ভালোবাসার জায়গাটা অক্ষুন্ন রেখে ঝগড়াঝাটি করেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবো।
   পরদিন অতুল তার কর্মস্থলে একাই রওনা দিলো। 

No comments:

Post a Comment