Saturday, May 11, 2019

আমার গ্যাংটক ঘোরার পঞ্চম দিন

     হোটেল থেকে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সব বেরিয়ে পড়লাম।এখানে বলা হয়নি যে আমরা ঋষিখোলা গিয়ে ওই হোটেল থেকেই যে গাড়ি ভাড়া করেছিলাম সেই গাড়ির পাইলট ছেলেটি এতো ভালো তাকে আর আমরা ছাড়িনি।এটা অবশ্য আমার ছেলেরই পরামর্শ।একটা ২৬ কি ২৭ বছরের ছেলে।প্রচন্ড মিশুকে। গাড়িটাকে গ্যাংটক গ্যারেজে রেখে দিয়েছিলো।রোজ গাড়ি ভাড়া করার কোন হ্যাপা ছিলোনা।ও আমাদের সাথে সারাদিন ঘুরতো,আমাদের না জানা অনেক জায়গায়ই ও আমাদের নিয়ে গেছে।কোন হোটেলে খাবার খাবো,কোথায় কফি বা চা খাবো সেটা ও নিজেই ঠিক করতো।ছেলেটির নাম নরেশ।আমাদের সাথে পুরো ও মিশে গেছিলো।namchi থেকে ফেরার পথে(ঘটনার বিবরণ পরে দিচ্ছি) যখন সকলেই গাড়ির ভিতর এ ওর গায়ের উপর ঘুমে ঢুলে পড়ছে তখন নরেশ গাড়ি থামিয়ে রাস্তার উপর নাচতে শুরু করে দিয়েছে।তাকে দেখাদেখি মেয়েরা,জামাইরা, ভগ্নিপতি সব গাড়ি থেকে নেমে জোড়ে গান চালিয়ে নাচতে লেগেছে।মুহূর্তের মাঝে সকলের ক্লান্তি কর্পূরের মত উবে গেছে।
     প্রথমেই গ্যাংটক থেকে গাড়ি ছাড়ার তিন ঘন্টা পর আমরা 'নামচি টি গার্ডেন' এ এসে কিছু ছবি তুলে একটু টিফিন করে আবার রওনা দিই।আগেরদিন বৃষ্টি হওয়ার ফলে চা বাগানের ঢালু জমিতে দু'একজন পরেও গেলো আবার কেউ কেউ পড়তে পড়তে না পরেই বেঁচে গেলো।আমি এই দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি।ছেলে খপ করে হাতটা ধরে নেওয়ার ফলে এই বয়সে আপতত পড়ার হাত থেকে এ যাত্রা রেহাই পাই।
     টি গার্ডেন থেকে বেরিয়ে আমরা প্রথমেই যাই 'namchi honuman ji ka mondir'। এখানে হনুমান জির বেশ কয়েকটি মুর্তি আছে।কথিত আছে যে ভগবান রামকে বাঁচানোর জন্য হনুমান যখন মৃতসঞ্জীবনী নিয়ে ফিরে আসছিলেন তখন এখানেই বিশ্রাম নিয়েছিলেন। যেখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন মূল মন্দিরটি সেখানে আর সঞ্জীবনী যেখানে পরে গেছিলো (অনেকের মতে যেখানে উনি পর্বতটিকে রেখেছিলেন )সেখানে একটি বড় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা।মূল ঘটনা যাই হোকনা কেন আজীবন শুনে আসা পৌরাণিক কাহিনীর এই জায়গাগুলো স্বচক্ষে দেখে ভীষন ভালো লেগেছে,মানসপটে ফ্লাশব্যাকের মত ওই জায়গায় দাঁড়িয়েই যেন সবকিছু দেখতে পারছিলাম।এক অপার অনুভূতিতে শরীর ও মন জুড়িয়ে গেলো।মানুষের ঘুরতে আসার প্রয়োজনীতা যেন জীবনে প্রথমবার উপলব্ধি করলাম।
    এরপর আমরা পৌঁছালাম 'চার ধামে' শিবমন্দিরে।কয়েক হাজার সিঁড়ি।এই সিঁড়িগুলি উঠতে একটুও কষ্ট হয়না।কারন ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশটা সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠার পর একটা করে শিবমন্দির।
যে কোন দর্শনার্থী যাতে বাবার মাথায় জল ঢালতে পারেন তার সুন্দর ব্যবস্থা সেখানে রয়েছে। প্রতিটা মন্দিরে একটা করে সিসিটিভি বসানো যাতে মন্দিরের ভিতর কেউ কোন ছবি তুলতে না পারে।এখানে সব কিছুতেই জরিমানা।থুতু ফেললে দুশো,পানের পিক ফেললে পাঁচশ(এটা নিয়েই আমার ছেলেমেয়ের চিন্তা বেশি ছিলো), জুতো পরে গেলে দুশো,কোন খাবারের প্যাকেট ফেললে দুশো -এইরূপ অনেককিছুই।
    মূল মন্দিরটি সবার উপরে।মন্দিরের উপরে বিশাল মুর্তি শিবঠাকুরের।বাইরে থেকে ছবি তুলতে তুলতেই মেঘ এসে ওই বিশাল শিবমুর্তিকে ঢেকে দিলো।নামার সময়ও বিশেষ কষ্ট হয়না কারন সিঁড়িগুলি বেশ বড়বড় কয়েকটা সিঁড়ি নেমেই বেশ কয়েক কদম হাঁটা আবার সিঁড়ি।নামবার সময়ে ইচ্ছা হলে যে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠা হয়েছে সেটা দিয়ে নামা যায় আবার অন্য সিঁড়িও ব্যবহার করা যায়।অনেকগুলো শিবমন্দির ওখানে।(সংখ্যাটা জানা হয়নি)নানান ধরনের ফুল,গাছপালায় ভর্তি।অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ।যে কোন মানুষেরই সবকিছু দেখে মন জুড়িয়ে যাবে।
     ওখানে সাঁইবাবারও একটা বড় মন্দির আছে। আছে বুদ্ধদেবের ও এক বিশাল মন্দির ।ওখান থেকে বেরিয়ে আসার পথে সাঁইবাবার যে আর একটি বড় মন্দির পরে তার পাশেই একটি হোটেল আছে যেখানে নিরামিষ খাবার খুব ভালো এবং দামও খুব কম।নরেশের কথামত আমরা ওই হোটেলেই খাই।ফেরার পথে প্রচন্ড বৃষ্টিতে গাড়ির ভিতর সব গান করতে করতে রাত আটটা ত্রিশ নাগাদ হোটেলে ফিরি।

ক্রমশঃ

No comments:

Post a Comment