Monday, May 27, 2019

#অনুগল্পের ইভেন্ট#
বিষয় -ভূত

      নূতন বৌ বাড়িতে আসার পরে সমস্ত স্ত্রী আচার শেষ করে শ্বাশুড়ী বৌকে নিয়ে তার ঘরে পৌঁছে দিয়ে বললেন,
--বৌমা এবার তুমি একটু ফ্রেস হয়ে নাও।আমি এখন আসি।
শ্বাশুড়ী বেরিয়ে গেলেন।মধুমিতা একটা নাইটি হাতে করে সবে বাথরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে হঠাৎ বয়স্ক এক ভদ্রমহিলা ভিতরে ঢুকে এলেন।মধুমিতা দেখেই তাকে বসতে বলে।কিন্তু তিনি না বসে মধুমিতার হাতে এক গয়নার বাক্স ধরিয়ে দিলেন।
--আমি তোমার ঠাকুমা।অনেকদিন এটা নিজের কাছে রেখেছি।এবার থেকে তুমি এটা সামালাও।এর ভিতর সোনার একটা মল আছে আর বড় একটা বিছে চেন আছে।এদুটি সবসময় পরে থাকবে।এবার আমি আসি।
  পরেরদিন মধুমিতা যখন এগুলি পরে সকলের সামনে যায় তখন সকলেই অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
 
  বছর পাঁচেক আগে লতিকাদেবী মারা যান।তার মৃত্যুর পর তন্নতন্ন করেও লতিকাদেবীর গয়নার বাক্স খুঁজে পাওয়া যায়নি আর।

শব্দ সংখ্যা 124 
#অনুগল্প_ভূত

      নূতন বৌ বাড়িতে আসার পরে সমস্ত স্ত্রী আচার শেষ করে শ্বাশুড়ী বৌকে নিয়ে তার ঘরে পৌঁছে দিয়ে বললেন,
--বৌমা এবার তুমি একটু ফ্রেস হয়ে নাও।আমি এখন আসি।
শ্বাশুড়ী বেরিয়ে গেলেন।মধুমিতা একটা নাইটি হাতে করে সবে বাথরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে হঠাৎ বয়স্ক এক ভদ্রমহিলা ভিতরে ঢুকে এলেন।মধুমিতা দেখেই তাকে বসতে বলে।কিন্তু তিনি না বসে মধুমিতার হাতে এক গয়নার বাক্স ধরিয়ে দিলেন।
--আমি তোমার ঠাকুমা।অনেকদিন এটা নিজের কাছে রেখেছি।এবার থেকে তুমি এটা সামালাও।এর ভিতর সোনার একটা মল আছে আর বড় একটা বিছে চেন আছে।এদুটি সবসময় পরে থাকবে।এবার আমি আসি।
  পরেরদিন মধুমিতা যখন এগুলি পরে সকলের সামনে যায় তখন সকলেই অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
 
  বছর পাঁচেক আগে লতিকাদেবী মারা যান।তার মৃত্যুর পর তন্নতন্ন করেও লতিকাদেবীর গয়নার বাক্স খুঁজে পাওয়া যায়না।
#ইভেন্ট_সহজপাঠ_প্রথমপ্রেম

    প্রেম কথাটা খুবই ছোট।কিন্তু এর ব্যপ্তি বিশাল।প্রেম মানেই একটি নারী ও একটি পুরুষের মনের মিল নয়।প্রেমে পড়া যায় পশুপাখি,গাছপালা,প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অনেককিছুর।সবথেকে ভালো প্রেমে পড়া যায় বই এর।
    #প্রথমপ্রেম বলতে যা বোঝায় আক্ষরিক অর্থে আমি কোনদিনও সেভাবে কোন পুরুষের প্রেমে পড়িনি।তবে একদম যে পরিনি তা কিন্তু নয়।বিয়ের পরে স্বামীর প্রেমে পড়েছি।
#কেন_প্রেম_করতে_ভয়_পেতাম।ছেলেবেলা থেকে গল্পের বই যেমন পড়তাম ঠিক তেমনই দিদিদের সাথে খুব সিনেমা দেখতেও যেতাম।ছবিতে যখন দেখতাম নায়ক,নায়িকার মধ্যে প্রেম হলেই কিছুটা সময় তাদের মধ্যে একটা ভাঙ্গন বা ভুল বুঝাবুঝি অবশ্যম্ভাবী।আর আমি মনেমনে ভাবতাম আমি যদি কারও প্রেমে পড়ি আমাকেও তো এইরূপ কষ্ট পেতে হবে।আবার কখনো ভাবতাম যাকে আমি ভালোবাসবো সে তো আমাকে ভালো নাও বাসতে পারে।আর সত্যিই সে আমাকে ভালোবাসে কিনা আমি কি করে বুঝবো?সে তো আমার সাথে বিট্রেও করতে পারে।না বাবা দরকার নেই আমার প্রেমে পড়ার।আরও ভাবতাম যদি কখনও প্রেমে পড়ি উত্তম কুমারের মত মানুষের প্রেমে পড়বো।সে আমার দিকে আড় চোখে তাকাবে,পিছন দিক থেকে এসে জড়িয়ে ধরবে।কিন্তু কোথায় পাবো আমি উত্তম কুমারের মত আমার প্রেমিক?তাই প্রেমে পড়া আড় হলনা।
#আমার_প্রেমে_কয়েকজনে_পড়েছে।স্কুল ও কলেজ জীবনে সমবয়সী বন্ধুরা প্রেম করতো।দেখতাম তাদের গল্পও শুনতাম।একদিন এক বন্ধু হঠাৎ আমাকে এক প্রেমপত্র দেয় কেউ একজন পাঠিয়েছে বলে।বাড়িতে ফেরার পথে ওটা হাতে পেয়ে ব্যাগে রেখে দিলাম।নিজের ঘরে ঢুকে দুরু দুরু বুকে জীবনের প্রথম প্রেমপত্র খুললাম।ও হরি!খুলে তো আমি থ।হাসবো নাকি কাঁদবো নাকি নিত্য করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।পেটে তখন ছুঁচো ডাকছে।তবুও আবার খুললাম আমার প্রথম প্রেমপত্র।তোমরা নিশ্চয় ভাবছো সেই প্রেমপত্রে কি লেখা ছিলো?হ্যাঁ বলছি শোনো তবে।মান্না দের একটা কিংবদন্তী গানের একলাইন বারবার লেখা ,"ওপারে তুমি রাধা এপারে আমি।মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়।"এটাই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ প্রেমপত্র।তবে আমি কিন্তু তার প্রেমে পরিনি।
#আর_একটা_প্রেম।একাদশ শ্রেণীতে পড়ি।কোএড কলেজ।আমার প্রতি আমার এক সহপাঠীর দুর্বলতা প্রকাশ পেলো।তারই বাবার কাছে আমরা বাংলা পড়তাম।ওই ছেলেটিও পড়তো।যখন ছেলেটির মনোভাব বুঝতে পারলাম সঙ্গে সঙ্গেই স্যারের কাছে নালিশ।বাড়িতে এসে দিদির কাছে সবিস্তারে বললাম।ব্যস সে কোচিং পরদিন থেকে বন্ধ হোল।
ছেলেবেলা থেকে বই এর সাথে আমার একটা অগাধ প্রেম।যে কোন ধরনের গল্পের বই আমার ভীষন প্রিয়।এই প্রেমে কোন কষ্ট নেই,বই আনন্দ দিতে পারবে ছাড়া কোনদিন প্রতারণা করবে না।নির্বিগ্নে সেই প্রথম থেকে আমি বই এর সাথেই প্রেম করে চলেছি।যতদিন বাঁচবো এই প্রেম থাকবে এ কথা আমি বলবো না।এই প্রেম ততদিন থাকবে যতদিন আমার চোখ ও মস্তিস্ক সচল থাকবে।
  (আমি কবিতা লিখতে খুব একটা ভালো পারিনা।এটা সবাই জানেন।কিন্তু যদি কিছু লিখি সেটা সাধারণত প্রেম বা বিরহের উপরেই হয়।যারা ভাবেন প্রেমের কবিতা লিখতে গেলে প্রেমে পড়তেই হয় তাদের ধারণা আমার মতে ঠিক না।লেখাটা সম্পূর্ণ অনুভূতির ব্যপার।গল্পে একটা খুনের কথা লিখতে গেলে লেখককেও যে একজন খুনি হতে হবে এটা মোটেই নয়।ঘটনাগুলো সবই আমার নিজের জীবনের ।  )


শব্দসংখ্যা 409
    

Thursday, May 23, 2019

বদলাতে হয়
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

 --আরে কখন থেকে বলছি বাজার যাও এরপর আর বাজারে মাছ পাবেনা ।
চিৎকার করে স্বামী রতনের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে ওঠে সুপর্ণা।
শ্বাশুড়ীমা শুনতে পেয়ে বললেন,
--বৌমা আজ আর মাছ আনতে হবেনা। একদিন মাছ না খেলে কিছু হবেনা।বাইরে যা রোদ উঠেছে এক্ষুণি এসেই তো আবার অফিস ছুটবে।
--মা,তুমি আর ওকে আস্কারা দিওনা।তোমার ছেলে এমনিতেই খুব কুরে।এই বাজারটাই তো সংসারে শুধু করে।বাকি তো সব আমাকেই সামলাতে হয়।
শোভাদেবী হেসে ফেলেন তার আদরের বৌমার কথা শুনে। রতন বলে,
--কে যেন আমার বিয়ের সম্মন্ধটা দিয়েছিলো মা ?ও পুলিশে চাকরী করতো মা।ওই ঘটক আমাদের কাছে লুকিয়েছে।
শোভাদেবী হাসতে হাসতে বলেন,
--যা পারিস কর তোরা আমি চললাম।
রতনও ব্যাগটা হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
   আজ পাঁচ বছর হয়েছে শোভাদেবীর স্বামী গত হয়েছেন।ছোটবেলা থেকেই মাছ ছাড়া তিনি একবেলাও ভাত খেতে পারেননা।ছেলের বিয়ে দিয়েছেন প্রায় বছর দশেক।একমাত্র নাতী হোস্টেলে থেকেই পড়াশুনা করে।কাছেপিঠে কোন ভালো স্কুল না থাকায় এই ব্যবস্থা।
স্বামীর পারলৌকিক কাজের একদিন পর নিয়ম ভঙ্গের দিনে আত্মীয়-স্বজনরা চলে যাওয়ার পর শোভাদেবী একটু দই ও খই নিয়ে যখন খাওয়ার উদ্দোগ করছেন ঠিক তখনই সুপর্ণা তার শ্বাশুড়ীর সামনে হাজির হয়।
--মা, এসব খাচ্ছ কেন?
--খুব খিদে পেয়েছে মা।
--চলো ভাত খাবে।আমিও তো এখনও খাইনি।আমারও বড্ড খিদে পেয়েছে।তোমার ছেলে ও নাতী তো ওই জ্ঞাতিদের সাথেই বসেছিলো।নাকি নিয়ম আছে।আমাকেও বলেছিলো।আমি তোমায় রেখে কি করে খাই বলো?
--সে কি বৌমা তুমি এখনো খাওনি?
--বাড়িতে আমরা চারটে প্রাণী।একজন না খেয়ে থাকবে আর আমরা সবাই খেয়ে নেবো মা, তাই কি হয় ?
--কিন্তু বৌমা আমি তো ওইসব খাবার খাবোনা।
--আপনি যদি না খান মা আমিও কিন্তু খাবোনা।
--এ তোমার অন্যায় জেদ বৌমা।তুমি কি জানোনা আজ থেকে আমি মাছ,মাংস এসব খাওয়া তো দূরের কথা ছোঁব পর্যন্ত না।
--মা আজকের দিনে এসব আর কেউ মানেনা।আজকের যুগে ঘরে বাইরে মেয়েরা সমান পারদর্শী।সে ঘর,অফিস দুইই সামলাচ্ছে।স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে যদি তাকে মাছ মাংস ছাড়া  একবেলা খেয়ে,একাদশী করে দিনাতিপাত করতে হয় তাহলে তার রোজগারের টাকা দিয়ে তো অন্যেরাও মাছ,মাংস কিনতে  পারেনা।কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা কি হয়?
একজন স্ত্রী মারা গেলে কই সেই স্বামীর তো কিচ্ছুটি ত্যাগ করতে হয়না।তাহলে একজন স্ত্রীকেই বা এসব করতে হবে কেন?
--অতসত বুঝিনা বৌমা।ছোটবেলা থেকে যা দেখে আসছি সেই বিধিনিষেধ থেকে আমি বেরোতে পারবোনা।আমার মা, ঠাকুমাকেউ দেখেছি তারাও স্বামীর মৃত্যুর পর কোনদিন মাছ,মাংস খাননি।
--যুগ পাল্টেছে মা।আগেকারদিনে মেয়েরা অল্প বয়সে বিধবা হত।তারা বাড়ির ভিতরেই থাকতো ঘর সংসার নিয়ে।প্রোটিন জাতীয় খাবার বন্ধ করা হত তাদের রীপুগুলোকে দমিয়ে রাখার জন্য।তারা ছিলো অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত।এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর তাদের কোন মনোবল ছিলোনা।তাই পণ্ডিতের দেওয়া বিধান তারা মানতে বাধ্য হত।
--আমি তোমার সাথে তর্কে পারবোনা।তবে আমি কিছুতেই আর মাছ , মাংস ছোঁবনা।
--তাহলে আজ থেকে আমিও মাছ খাওয়া ছেড়ে দেবো মা।এই বাড়িতে আর মাছ,মাংস আসবেনা।
--ছি, ছি বৌমা। আজকের দিনে এসব কথা বলতে নেই।
--বাবা চলে যাওয়াতে যদি আপনি মাছ ছেড়ে দিতে পারেন তাহলে আমরা কেন পারবোনা?আপনি কি একাই বাবাকে ভালোবাসতেন?আমরা ভালোবাসতাম না?
--উফফ বৌমা চুপ করো তুমি।লোকে শুনলে সবাই নিন্দা করবে।
--লোকের কথায় আমার কিছু যায় আসেনা মা।এ বাড়িতে বৌ হয়ে আসার পর থেকে দেখে আসছি আপনি মাছ ছাড়া একটা দিনও দুপুরে পেট ভরে  ভাত খেতে পারেননা।আপনি যখন আধপেটা খেয়ে খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়বেন তখন কি আপনার ওইসব লোকেরা এসে আপনার পাশে দাঁড়াবে? আপনি কষ্ট পেলে বাবার আত্মা কি শান্তি পাবে?আত্মা বলে যদি সত্যিই কিছু থাকে মা তাহলে বাবা কোনদিনও শান্তি পাবেননা।বাবা আপনাকে কম ভালোবাসতেন না।
  রতন এসে দাঁড়িয়ে সুপর্ণার শেষের কথাগুলো শুনে বললো,
--তোমার বৌমা তো ঠিক কথায় বলছে মা।তুমি যদি মাছ না খাও আমরা তিনজনেও মাছ আর খাবোনা।এই বাড়িতে আর মাছ আনা হবেনা।
--এ কি অন্যায় জেদ তোদের বলতো?
--কোনটা অন্যায় মা?স্বামীর মৃত্যুর পর মাছ, মাংস খাওয়া নাকি যে মাছ ছাড়া খেতে পারেনা তার সামনে বসে তাকে মাছ না দিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মাছ খাওয়া।ঠিক আছে মা।আপনি দই চিড়ে খাবেন তো ওই থেকে আমাকেও একটু দেবেন আজ থেকে আপনি যা যা করবেন আমিও তাই করবো।
--তোমার মুখে কিছুই আটকায় না বৌমা। দাও আমায় কি খেতে দেবো দাও ।যা দেবে আমায় তাই খাবো।দয়া করে তুমি আর ওইসব কথা বোলোনা।আমার রতনের অকল্যাণ হবে।
     সেই থেকে সুপর্ণার বাড়িতে আগের মতই খাওয়াদাওয়া চলতে থাকে।

Monday, May 13, 2019

ভাবতে ভাললাগে
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তোকে ভাবতে ভাললাগে,
স্মৃতিগুলো হয় পুরাতন,
মানুষটা একই থাকে,
তোকে ভাবতে ভাললাগে।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে,
যখন ফিরি ঘরে,
শূন্য ঘরে তুই ই থাকিস,
দেখি তোকে বন্ধ চোখে,
তোকে ছুঁতে ইচ্ছা করে।
তোকে ভাবতে ভাললাগে।
আমার সকল চাওয়ায়-
তুই যে ছিলি,
ঝড়ো হাওয়ায় হারিয়ে গেলি,
দৃশ্যমানেই নেই যে শুধু,
আছিস হৃদয় জুড়ে।
সকল কাজেই দিস যে সাড়া,
নইকো আমি সঙ্গীহারা,
চেতন অবচেতনে থাকিস কাছে,
মিছেই ভাবি স্বপ্নহারা,
তোকে ভাবতে ভাললাগে।




Saturday, May 11, 2019

গ্যাংটক ঘোরার টুকরো কিছু স্মৃতি

       ভ্রমণ মানুষের শিক্ষা লাভের একটি প্রকৃষ্ট পন্থা।ভ্রমণের কৌতুহল মানুষের স্বভাবসিদ্ধ।সৃষ্টির অপরূপ বৈচিত্র্য আমাদের কল্পনাকে আকৃষ্ট করে।হয়তো সেই কারনেই আমরা শারীরিক সমস্যা ও আর্থিক অসুবিধাকে পাত্তা না দিয়েই  ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ি।একটা সময় আমি মোটেই ঘুরতে ভালবাসতাম না।কেন যেন মনের ভিতর একটা আতঙ্ক কাজ করতো।2010 সালে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য একবার সেবক কালীমন্দির পর্যন্ত গিয়েও ফিরে এসেছি।ছেলে,মেয়ে তখন খুবই ছোট।ওদের বাবার সাথে প্রচন্ড ঝামেলা।আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো গাড়িটা খাদে পড়ে যাবে।আর এই ভয় ও আতঙ্ক থেকে প্রচন্ড ঝামেলা করে চারজনে ওখান থেকেই ফিরে আসি।ওই বছর আমরা এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেছিলাম শিলিগুড়ি।এবার আবার যখন সেবক কালীমন্দির যাই পুরনো অনেক স্মৃতি মনের মাঝে ভিড় করে এলো। মানুষটাই শুধু চলে গেছে রেখে গেছে তার সব স্মৃতি।যে স্মৃতি সারাজীবন একান্তে বহন করে চলবো।হাজার মানুষের ভিড়েও তার স্মৃতি সবসময়ের জন্য নিজেকে করে দেয় সম্পূর্ণ একাকী।
    namchi ropeway- ছেলে,মেয়ে,জামাইরা,ভগ্নিপতি,বোনঝি সব্বাই ropeway চড়বে।আমি ও দিদি কিছুতেই উঠবো না।আমার তুতুন তার দিদিকে বললো,"দাঁড়া  মাকে আমি নিয়ে আসছি।" ছেলে এগিয়ে এলো আমার কাছে।হাত ধরে বললো,"চলো।"আমি বললাম না, আমি কিছুতেই যাবোনা।কোথার থেকে কি হয়ে যাবে।ছেলের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর,"আচ্ছা মা,আমি দিদি,রানাদা(ওর ভগ্নিপতি) তিনজনেই যাচ্ছি।সত্যিই যদি কিছু হয়ে যায় তুমি তো এমনিতেই বাঁচবে না।তার চাইতে চলো চারজনে একসাথে যাই।"যুক্তিপূর্ণ কথা।কোন কথা আর না বাড়িয়ে তার সাথে পা মেলালাম।দম বন্ধ করে যেন বসে ছিলাম।সবাই vdo করতে ব্যস্ত।আস্তে আস্তে খাদের ভিতর নামছি তো নামছি।আগে কোনদিন আমি ropeway চড়িনি।ওদের অবশ্য পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে।ওরা সবাই আমাকে হাসানোর চেষ্টা করেই চলেছে।আর আমি মনেমনে বাবা লোকনাথকে স্মরণ করে চলেছি।যেখানে নামলাম সেটা হচ্ছে রকগার্ডেন।পাহাড়ি নানান ফুল ফুটে রয়েছে।অপূর্ব জায়গা।অনেক ছবিও তোলা হোল।ফেরার সময় অবশ্য ভয় লাগেনি।তবে একটা কথা বলতে ভুলে যাচ্ছিলাম।আমরা যখন ropeway থেকে নেমে উপরে উঠবো হঠাৎ একজন সিকিউরিটি আমার ছেলে ও জামাইকে ডেকে ওদের সাথে গল্প জুড়ে দিলেন।কথোপোথনটা ঠিক এইরূপ ছিলো।
---আপনারা কলকাতা থেকে এসছেন?
---হ্যাঁ । আপনি বাঙ্গালী?
---আমার কলকাতাতেই বাড়ি।
---আপনাদের কলকাতা কোথায় বাড়ি?
---বেহালা।
---আমারও বেহালা বাড়ি।আপনারা বেহালা কোথায় থাকেন?আমার বাড়ি বিজি প্রেসে।
   বোঝো কান্ড!আমার বাড়িও তো বিজি প্রেস।সঙ্গে সঙ্গে জামাই আমায় ডেকে নিয়ে আসলো।ভদ্রলোক হয়ে গেলেন আমার ছেলের মামা।অনেকক্ষণ তার সাথে গল্প চললো।অনেকদিন পর এতো দূরে থেকে  বাড়ির কাছের মানুষ দেখে তিনিও আবেগে বিহ্বল হয়ে পড়লেন।আমাদেরও এতো দূরে বাড়ির কাছে পূর্বে বসবাসরত একজন অপরিচিত মানুষ হলেও মুহূর্তেই তাকে খুব আপন মনে হতে লাগলো।কেটে গেলো ভদ্রলোকের সাথে বেশ কিছুটা সময়।তার সাথে কথা বলে খুশি মনে তাকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠলাম।
    আমার গ্যাংটক ঘোরা শেষ হোল। পরদিন রওনা দিলাম বাড়ির পথে।অনেক খুশি,অনেক আনন্দ আর কিছুটা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলাম আমার ' মানবী'তে।
আমার গ্যাংটক ঘোরার পঞ্চম দিন

     হোটেল থেকে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সব বেরিয়ে পড়লাম।এখানে বলা হয়নি যে আমরা ঋষিখোলা গিয়ে ওই হোটেল থেকেই যে গাড়ি ভাড়া করেছিলাম সেই গাড়ির পাইলট ছেলেটি এতো ভালো তাকে আর আমরা ছাড়িনি।এটা অবশ্য আমার ছেলেরই পরামর্শ।একটা ২৬ কি ২৭ বছরের ছেলে।প্রচন্ড মিশুকে। গাড়িটাকে গ্যাংটক গ্যারেজে রেখে দিয়েছিলো।রোজ গাড়ি ভাড়া করার কোন হ্যাপা ছিলোনা।ও আমাদের সাথে সারাদিন ঘুরতো,আমাদের না জানা অনেক জায়গায়ই ও আমাদের নিয়ে গেছে।কোন হোটেলে খাবার খাবো,কোথায় কফি বা চা খাবো সেটা ও নিজেই ঠিক করতো।ছেলেটির নাম নরেশ।আমাদের সাথে পুরো ও মিশে গেছিলো।namchi থেকে ফেরার পথে(ঘটনার বিবরণ পরে দিচ্ছি) যখন সকলেই গাড়ির ভিতর এ ওর গায়ের উপর ঘুমে ঢুলে পড়ছে তখন নরেশ গাড়ি থামিয়ে রাস্তার উপর নাচতে শুরু করে দিয়েছে।তাকে দেখাদেখি মেয়েরা,জামাইরা, ভগ্নিপতি সব গাড়ি থেকে নেমে জোড়ে গান চালিয়ে নাচতে লেগেছে।মুহূর্তের মাঝে সকলের ক্লান্তি কর্পূরের মত উবে গেছে।
     প্রথমেই গ্যাংটক থেকে গাড়ি ছাড়ার তিন ঘন্টা পর আমরা 'নামচি টি গার্ডেন' এ এসে কিছু ছবি তুলে একটু টিফিন করে আবার রওনা দিই।আগেরদিন বৃষ্টি হওয়ার ফলে চা বাগানের ঢালু জমিতে দু'একজন পরেও গেলো আবার কেউ কেউ পড়তে পড়তে না পরেই বেঁচে গেলো।আমি এই দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি।ছেলে খপ করে হাতটা ধরে নেওয়ার ফলে এই বয়সে আপতত পড়ার হাত থেকে এ যাত্রা রেহাই পাই।
     টি গার্ডেন থেকে বেরিয়ে আমরা প্রথমেই যাই 'namchi honuman ji ka mondir'। এখানে হনুমান জির বেশ কয়েকটি মুর্তি আছে।কথিত আছে যে ভগবান রামকে বাঁচানোর জন্য হনুমান যখন মৃতসঞ্জীবনী নিয়ে ফিরে আসছিলেন তখন এখানেই বিশ্রাম নিয়েছিলেন। যেখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন মূল মন্দিরটি সেখানে আর সঞ্জীবনী যেখানে পরে গেছিলো (অনেকের মতে যেখানে উনি পর্বতটিকে রেখেছিলেন )সেখানে একটি বড় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা।মূল ঘটনা যাই হোকনা কেন আজীবন শুনে আসা পৌরাণিক কাহিনীর এই জায়গাগুলো স্বচক্ষে দেখে ভীষন ভালো লেগেছে,মানসপটে ফ্লাশব্যাকের মত ওই জায়গায় দাঁড়িয়েই যেন সবকিছু দেখতে পারছিলাম।এক অপার অনুভূতিতে শরীর ও মন জুড়িয়ে গেলো।মানুষের ঘুরতে আসার প্রয়োজনীতা যেন জীবনে প্রথমবার উপলব্ধি করলাম।
    এরপর আমরা পৌঁছালাম 'চার ধামে' শিবমন্দিরে।কয়েক হাজার সিঁড়ি।এই সিঁড়িগুলি উঠতে একটুও কষ্ট হয়না।কারন ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশটা সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠার পর একটা করে শিবমন্দির।
যে কোন দর্শনার্থী যাতে বাবার মাথায় জল ঢালতে পারেন তার সুন্দর ব্যবস্থা সেখানে রয়েছে। প্রতিটা মন্দিরে একটা করে সিসিটিভি বসানো যাতে মন্দিরের ভিতর কেউ কোন ছবি তুলতে না পারে।এখানে সব কিছুতেই জরিমানা।থুতু ফেললে দুশো,পানের পিক ফেললে পাঁচশ(এটা নিয়েই আমার ছেলেমেয়ের চিন্তা বেশি ছিলো), জুতো পরে গেলে দুশো,কোন খাবারের প্যাকেট ফেললে দুশো -এইরূপ অনেককিছুই।
    মূল মন্দিরটি সবার উপরে।মন্দিরের উপরে বিশাল মুর্তি শিবঠাকুরের।বাইরে থেকে ছবি তুলতে তুলতেই মেঘ এসে ওই বিশাল শিবমুর্তিকে ঢেকে দিলো।নামার সময়ও বিশেষ কষ্ট হয়না কারন সিঁড়িগুলি বেশ বড়বড় কয়েকটা সিঁড়ি নেমেই বেশ কয়েক কদম হাঁটা আবার সিঁড়ি।নামবার সময়ে ইচ্ছা হলে যে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠা হয়েছে সেটা দিয়ে নামা যায় আবার অন্য সিঁড়িও ব্যবহার করা যায়।অনেকগুলো শিবমন্দির ওখানে।(সংখ্যাটা জানা হয়নি)নানান ধরনের ফুল,গাছপালায় ভর্তি।অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ।যে কোন মানুষেরই সবকিছু দেখে মন জুড়িয়ে যাবে।
     ওখানে সাঁইবাবারও একটা বড় মন্দির আছে। আছে বুদ্ধদেবের ও এক বিশাল মন্দির ।ওখান থেকে বেরিয়ে আসার পথে সাঁইবাবার যে আর একটি বড় মন্দির পরে তার পাশেই একটি হোটেল আছে যেখানে নিরামিষ খাবার খুব ভালো এবং দামও খুব কম।নরেশের কথামত আমরা ওই হোটেলেই খাই।ফেরার পথে প্রচন্ড বৃষ্টিতে গাড়ির ভিতর সব গান করতে করতে রাত আটটা ত্রিশ নাগাদ হোটেলে ফিরি।

ক্রমশঃ
আমার গ্যাংটক ঘোরা (৪র্থ দিন)

      ঋষিখোলা থেকে সকাল বেলা টিফিন করে দশটা নাগাদ সব রওনা দিলাম।প্রচন্ড গরম পড়েছিলো।রোদ খাঁ খাঁ করছে।গাড়ির জানালা খুলে রাখলে প্রচুর ধুলো ঢুকছে আর বন্ধ করে রাখলে গরমে হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে।মোট আটজন আমরা । জানলার পাশে যারা বসছে তাদের কাজই হচ্ছে ধুলো উড়লে জানালা বন্ধ করা আর গরম লাগলে জানালা খুলে দেওয়া।এইভাবে আমরা প্রায় বেলা আড়াইটার সময় গ্যাংটকে এসে পৌঁছালাম।কারও কারও স্নান করা বাকি ছিলো।ঠান্ডা এখানেও নেই।তবে জল খুব ঠান্ডা।গরমজলে বাকিরা স্নান করে চারতলা থেকে নেমে ফাষ্ট ফ্লোরে খেতে নামা।দুপুরে নামলেও রাতে আমি, দিদি ও ভগ্নিপতি রুমেই খাই।খাওয়া শেষ হতেই সব তাড়া লাগালো নিউমার্কেট যাবে মার্কেটিং করতে।আমার আপত্তি সত্বেও আমাকে তাদের সাথে যেতেই হোল।গিয়ে বসে থাকলাম একজায়গায় আরও কিছু সিঁড়ি ভেঙ্গে।কেনাকাটা শেষ হলে অন্য রাস্তা ধরে তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে সিঁড়ির পর সিঁড়ি আনুমানিক তিনশ হবেই।তারপর চারতলা।খুব তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে সব শুয়ে পড়ি কারন পরদিন আবার গাড়ি আটটার মধ্যেই আসবে।
      কাল একটা কথা লিখতে ভুলে গেছিলাম;দিদি তো জুলুকে গিয়ে গাড়ির ভিতরই বসে ছিলো কিন্তু আমরা যখন গামবুট খুলতে গিফ্ট শপে ঢুকেছি হঠাৎ দেখি দিদি চেয়ারে বসে প্রচন্ডভাবে কাঁপছে।সঙ্গে সঙ্গেই জামাই তার জ্যাকেট খুলে দিদির গায়ে চাপিয়ে দিলো।পূর্ব থেকেই দিদি একটা মোটা জ্যাকেট পরেই ছিলো।আমিও আমার সোয়েটারটা খুলে দিদির গায়ে বাইরে থেকে পেঁচিয়ে দিয়ে দুইহাত দিয়ে তাকে ঝাপটে ধরে থাকি।ওখানে যত মানুষ ছিলো তারা কেউ পা কেউবা হাতের তালু ম্যাসাজ করতে লাগে।জামাই মেয়ে দৌড়ে গিয়ে গরমজল এনে একটু একটু করে খাওয়াতে শুরু করে।ওখানে সবসময়ের জন্যই হিটার একটা জ্বলে।চেয়ার সমেত দুই জামাই তাকে সেখানে নিয়ে আসে।কিছুক্ষণ পর সে ধাতস্থ হলে তাকে একটা শ্বাসকষ্টের ওষুধ দিয়ে গাড়ি ছাড়া হয়।তাড়াহুড়োর চোটে পুরো ওষুধের পাত্রটাই সেখানে ফেলে চলে আসা হয়।
     জীবনের এই ছোটখাটো সমস্যাগুলিকে মোকাবেলা করেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের আনন্দটুকু খুঁজে নিতে হয়।আমরাও তার ব্যতিক্রম নই।সুন্দর খাওয়াদাওয়া (টাকাটা একটু বেশি লাগে যদিও) আর অপরূপ দৃশ্য দর্শনে সত্যিই খুব খুব আনন্দে আছি। 

   26-4-19

  ক্রমশঃ
আমার গ্যাংটক ঘোরার তৃতীয় দিন

      সকাল আটটা বেজে দশ।রওনা দিলাম ঋষিখোলা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ১৪হাজার ৪০০ফুট উপরে জুলুকের উদ্দেশ্য।প্রথম পারমিশন নিতেই কেটে গেলো 'রঙ্গলী' তে একঘণ্টা।এই এক ঘণ্টার মধ্যে টিফিন হোল, কিছু কেনাকাটা হোল(ঘুরতে আসলেই এটা মাষ্ট)।আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো।ঘন্টায় ঘন্টায় আমাদের পাইলট কাগজপত্র নিয়ে গাড়ি থামিয়ে চেকপোস্ট ছুটে যায়।পথ তো আর শেষ হয়না!গাড়ি এসে থামলো 'কালোঝোরা' চেক পোষ্ট।আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে কালোঝোরার সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম।অপূর্ব সুন্দর এক ঝর্ণা।তার পাদদেশে দাঁড়িয়ে চুড়া ঠাওর করা যায়না।প্রায় সাড়ে চারঘন্টা পর এসে পৌঁছালাম জ্ঞানথ্যাংকের 'Cafe Teria & giftshop'।সেখানে সবাই মিলে দু'পায়ে দুটো করে ভারী পাথর (gumboot) পরে  নিলাম।জীবনে প্রথম এটা পায়ে দিয়ে হাঁটতেই পারছিলামনা।একটু পরেই অবশ্য পায়ে কিছু আছে মনেই হচ্ছিলোনা।পূনরায় গাড়ি চলতে শুরু করলো।চারিপাশে বরফ আর বরফ।গাড়ি চলছে তো চলছেই।শেষে এসে গাড়ি থামলো 'বাবা মন্দির'।চারিপাশে বরফ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনা ।আমরা আসার মিনিট পাঁচেক পরেই শুরু হোল বৃষ্টি।জীবনে প্রথম বরফ পড়ার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে কেউই নিজেদের আর সামলাতে পারলামনা।ছেলেবেলার মত সকলেই ওই বরফ বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে শুরু করলাম।মুহূর্তের মাঝে মনেহল কেউ যেন একটা সাদা ধবধবে চাদর দিয়ে সমস্ত রাস্তাটাকে মুড়ে দিয়েছে।পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে মনে হচ্ছিলো সাদা আর কালো ছাপা (সবুজ পাতাগুলিকে দূর থেকে মেঘলা আকাশে কালো মনে হচ্ছিলো) কোন চাদরে ঢাকা।বরফ নিয়ে সব খেলতে শুরু করে দিলো।২২ডিগ্রি থেকে হঠাৎ করেই পড়লাম দু কিংবা তিন ডিগ্রিতে।তাতে অবশ্য কারও কোন হেলদোল নেই।দিদি গাড়ি থেকে নামেনি।কারন সে খুব একটা সুস্থ্য নয়।ডক্টর দেখিয়ে তাঁর মত নিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
        ওখানে যারা গিয়েছেন সকলেই জানেন হয়তো বেশ কয়েকটি সিঁড়ি আছে সেখান থেকে উপরে উঠে বরফের উপর দিয়ে হাঁটা যায়।গামবুট পরে রাস্তার বরফের উপর থেকে হেঁটে বেশ মজা পেয়ে সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে লাগলাম।সেখানে পৌঁছে দেখি কোন লোকজন নেই।বাবা হরভজন সিং এর ব্যবহৃত আর্মি ড্রেস, বালিশ,টুপি, জুতো ব্যাজ একটি ঘরে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা।তাকে রোজ সকালে যে জলটা দেওয়া হয় অনেকে সেই জল নিয়ে টানা সাতদিন ধরে খেয়ে নাকি   সুস্থ্য হয়ে গেছেন।বাবা হরভজন সিংকে ওখানকার মানুষেরা দেবতা মনে করেন । অনেকেই নাকি আজও তাঁর অশরীরী আত্মার টের পান।তিনি নাকি আজও সীমান্ত পাহারা দিয়ে চলেছেন।সবসময় তাঁর ছবির সামনে ধুপ দীপ জলে।
     গোল বাঁধলো মোবাইলে সময় দেখতে গিয়ে।ঘড়িতে বাজে তিনটে আর মোবাইলে সাড়ে পাঁচটা।তারমানে মোবাইল তখন চীনের টাওয়ার ধরে নিয়েছে।যতক্ষণ আমরা ওখানে ছিলাম সমানে বরফ পরে চলেছে।গাড়ির পাইলট আমাদের তাড়া দিতে লাগলো তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য।বললো,"যা বরফ পড়তে শুরু হয়েছে তাতে যেকোন সময় রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।পাথরের বড় বড় চায় পড়তেও পারে রাস্তার উপর।"আমরা ভয় পেয়ে গেলাম।ওই অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখা ছেড়ে পূণরায় গাড়িতে উঠে বসলাম।অনেকটাই রাস্তা বরফে আবৃত।খুব সাবধানে আস্তে আস্তে পাইলট এগিয়ে যেতে থাকলো।এদিকে রাত হয়ে গেছে,পুরো রাস্তা অন্ধকার।শুধুমাত্র গাড়ির হেডলাইটটা জ্বালিয়ে দু'পাশে খাদ রেখে গাড়ি এগিয়ে চলেছে।মনের ভিতর একটা আতঙ্ক কাজ করলেও গাড়ির জানালা দিয়ে যখনই বাইরের দিকে তাকিয়েছি মনটা আনন্দে নেচে উঠেছে।রাতের বেলা পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে মনেহয় দীপাবলীর সময় মানুষ যেমন মোমবাতি জ্বেলে বাড়ির পর বাড়ি সাজায় তখন ঠিক যেমন দেখতে লাগে পাহাড়ের টিলাগুলিতে বৈদুতিক আলো জ্বলার ফলে ঠিক সেইরূপই মনেহয়।সে আর এক অপরূপ দৃশ্য।আসতে আসতে রাস্তার উপর একটি সুন্দর 'মুনাল'পাখি দেখলাম।গাড়ি এনে তার পাশে দাঁড় করিয়ে যতক্ষণ ছবি তোলা হোল সে দাঁড়িয়েই থাকলো।এই পাখিগুলো দেখতে অনেকটাই ছোট ময়ূরের মত।রাত তখন সাড়ে আটটা।আমরা সকলে হোটেলে ফিরে আসি সেই বিভীষিকাময় রাস্তা দিয়ে।ও বলতে ভুলে গেছি আমরা যে হোটেল বনলতায় ছিলাম ওটা ছিলো সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে। স্নান করছি (ঋষি নদী)সিকিম ,থাকছি পশ্চিমবঙ্গ।দরজা খুলে  বেরোলেই পাহাড়, ঝরনা আর নদী।বড় অপূর্ব জায়গা। আগামীকালের প্লান গ্যাংটক

             25-4-19

ক্রমশঃ
আমার গ্যাংটক ঘোরা ২য় দিন

     যে ট্রেন সকাল 7-30 এ নিউজলপাইগুড়ি পৌঁছনোর কথা ভাগ্যের ফেরে তিনি সকাল 9-30 এ এসে শিলিগুড়ি পৌঁছলেন।দু'ঘন্টা জামাই এর জন্য অপেক্ষার শেষে তিনিও এসে শিলিগুড়ি দেখা দিলেন।তিনজন মিলে গেলেন গাড়ি ভাড়া করতে।পাক্কা এক ঘন্টা ধরে দরাদরি,কষাকষি করে গাড়ি নিয়ে হাজির হলেন।তবে এই তিনজন একসাথে যাননি।প্রথমে আমার জামাই।সে ফিরে আসছেনা ফোনের পর ফোন,  পরে মেয়ে ছুটলো।মেয়ে গিয়ে আরও কুড়ি মিনিট।জামাই নিয়েছে পূর্বেই কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট। এবার শুরু হোল বোনঝি জামাই এর ফোন।দিদি ও রানাদা কেন এতো দেরি করছে তা দেখতে ছুটলো এবার ছোট জামাই।(বোনঝি জামাই)। আমাদের অপেক্ষা মোট একঘণ্টা থেকে সওয়া ঘন্টা।রওনা দিলাম এগারটা নাগাদ সিকিমের ঋষিখোলার হোটেল বনলতার উদ্দেশ্যে।দুটো নাগাদ কোন এক চেকপোষ্ট মারফৎ জানা গেলো আমরা প্রায় কুড়ি কিলোমিটার ভুল রাস্তায় চলে এসেছি।গাড়ি ব্যাক করতে আরও হাফ কিলোমিটার।আমাদের ড্রাইভার খুব ভালো লোক ছিলেন।মাঝে একজায়গায় আমাদের কিছুটা বিশ্রাম ও ছবি তোলার সুযোগও দিলেন।নিজেও কিছু ছবির পোজ দিলেন । এতক্ষণ একনাগাড়ে গাড়িতে বসে থেকে আমাদেরও প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিলো।জলপানের (সাথে পান,সুপুরি ও জর্দা)হোটেল মালিকের সাথে ফোনে রাস্তার বিবরণ শুনে সে যে রাস্তা ধরলো তাতে গাড়ির ভিতর প্রতিটা মানুষ ভয়ে,আতংকে এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম।দুই পাশে ঘন জঙ্গল মাটির এবরো-খেবড়ো সরু রাস্তা শেষই আর হয়না ।  তখন অবস্থা 'ছেড়ে দেমা কেঁদে বাঁচি'!ভাবতেই পারিনি এতো নিচুতে এই ঘন জঙ্গল পার হয়ে এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে।'হোটেল বনলতা' ঠিক তার সামনের থেকে 'ঋষি খোলার' খরস্রোতা নদী 'ঋষি' আপন গর্জনে বয়ে চলেছে।নদীর নামে জায়গার নাম নাকি জায়গার নামে নদীর নাম এটা অজ্ঞাতই থেকে গেলো। হোটেলে পৌঁছে সেই ভয়,আতঙ্ক প্রকৃতিক শোভা দর্শনে এক নিমেষে কোথায় যেন কর্পূরের মত উদাও হয়ে গেলো।বেলা তখন সাড়ে তিনটে।24ঘন্টা জার্নির পরেও কারও বিন্দুমাত্র ক্লান্তি নেই।সকলেই ছুটলাম খরস্রোতা ঋষিতে স্নান করতে।আমার ভগ্নিপতির বয়স প্রায় 67 বৎসর।আনন্দে আটখানা হয়ে নেমে পড়লেন ঋষির জলে।যে যার মত এনজয় করছে।হঠাৎ আমার ছেলে আবিষ্কার করে তার বাবু (মেশো)সকলকে ছাড়িয়ে অনেকটাই দূরে এগিয়ে গেছে।দৌড়ে কাছে গিয়ে মৃদু বকা দেয়,"তুমি এতো দূরে কেন এসেছো?"তিনি কাতর স্বরে আমার তুতুনকে জানান,"বাবা আমি আসিনি, ঋষি আমাকে টেনে নিয়ে এসেছে।"অতি কষ্টের মাঝেও তুতুন হেসে দিয়ে তার বাবুকে কোনপ্রকারে টেনেটুনে উপরে তোলে।বলা বাহুল্য বাকি স্নান ভগ্নিপতি এসে হোটেলের বাথরুমে করে এবং খাওয়ার সময়টুকু ছাড়া তিনি আর সেদিন আশেপাশের প্রকৃতিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে হোটেলের ঘর ছেড়ে আর বের হননা।হোটেলের খাওয়া-দাওয়া ভীষন ভালো,মনেহচ্ছে বাড়ির খাবার খাচ্ছি।আগমীকাল সকালের প্লান জুলুক।

ক্রমশ :-

Friday, May 10, 2019

সুখের ঠিকানা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

    বিয়ের পর থেকেই অতসী দেখে আসছে এ বাড়িতে শ্বাশুড়ী মায়ের কথায় শেষ কথা।আর শেষ কথা হবেই না বা কেন?তিনি কখনো অন্যায় যেমন করেননা আবার কেউ অন্যায় করলেও তিনি তা প্রশ্রয় দেননা।সবসময় ন্যায়ের পক্ষে তিনি।কেউ কোন ভুল করলেই তিনি তাকে দু'কথা শুনাতে কখনোই ছাড়েন না।যুক্তি দিয়ে বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অপরের ত্রুটিগুলি তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দেন।তা সে তার স্বামী,ছেলে,বিয়েদারী মেয়ে বা জামাই যেই হোকনা কেন?
    অতসীর বিয়ে হয়েছে মাত্র একবছর।সবাই তাকে আপন করে নিলেও যে মানুষটার হাত ধরে তার এই বাড়িতে প্রবেশ সেই মানুষটাকেই এই এক বছরেও ঠিক চিনে উঠতে পারেনি।অতসীর প্রতি তার কোন ভালোবাসা আছে বলে সে মনে করেনা।সুবীর কেমন যন্ত্রচালিতের মত।যেটুকু কথা অতসী বলে সেটুকুরই শুধু জবাব পায়।বাড়তি একটা কথাও সুবীর তার সাথে বলেনা।রাতে একই খাটে পাশাপশি দুটি পুরুষ নারী প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী মাঝে মধ্যে মিলিত হয় ঠিকই কিন্তু সে মিলনে ভালোবাসার থেকে শরীরের খিদেটাই যেন বেশি গুরুত্ব পায়।  অতসী এই নিয়ে কোনদিনও কোন অভিযোগ স্বামী বা শ্বাশুড়ীর কাছে করেনি।এটাকে তার ভবিতব্য বলেই মেনে নিয়েছে।ছোটবেলা থেকেই সে খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে। ধনীর দুলালী না হলেও বাপের বাড়িতে খাওয়াপরার অভাব তার কোনদিনও হয়নি।গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে।প্রতিবেশীর এক বিয়ে বাড়িতে তাকে দেখে শ্বাশুড়ীমা সুপ্রভাদেবী পছন্দ করে এক কাপড়ে ছেলে সুবীরের বৌ করে আনেন এক মাসের মধ্যেই।
     আজ কিছুদিন হোল অতসী তার ভিতর দ্বিতীয় এক প্রাণের অস্তিত্ব টের পায়।সুবীর অফিস থেকে ফিরলে সে খুশি মনে সুখবরটা তাকে জানায়।কিন্তু সুবীরের চোখে মুখে সে কোন ভাবান্তর দেখতে পায়না।একটা জড়পদার্থের মত কথাগুলো শুনে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে ড্রয়িংরুমে টিভি চালিয়ে বসে।অতসী অবাক হয়।এতো বড় সুখবরটা শোনার পরও কি করে সুবীর এতো নির্লিপ্ত থাকতে পারে?
     পরদিন সুবীর অফিস থেকে এসে হাত মুখ ধুয়ে ঘরেই বসে থাকে।অতসী চা নিয়ে আসলে কোন ভণিতা না করেই সে অতসীকে জানায়, এ বাচ্চা সে চায়না আর এ নিয়ে কোন কথাও সে বাড়াতে চায়না।নার্সিংহোমে সে কথা বলে এসেছে আগমীকাল অফিস যাওয়ার সময় অতসীকে সাথে নিয়ে গিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে আসবে।অতসী হতভম্ব হয়ে যায়।কিছু বলতে চেষ্টা করে।সেটা বুঝতে পেরেই সুবীর তাকে জানায়,"আমি তো আগেই বলেছি এ নিয়ে আমি কোন কথা শুনতে চাইনা।"কথাকটি বলেই সুবীর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
  ঘর অন্ধকার করে অতসী অনেকক্ষণ চোখের জলে নিজের কষ্টকে লাঘব করার চেষ্টা করে।শ্বাশুড়ীমায়ের ডাকে সে তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘরে এসে রাতের খাবারের তোড়জোড়ে হাত লাগায়।কিছুক্ষণ পর বিচক্ষণ সুপ্রভাদেবীর নজরে আসে তার আদরের বৌমার কাজের অন্যমনস্কতা আর ফোলা চোখ।দু'হাতে টেনে বুকের কাছে নিয়ে জানতে চান,"কি হয়েছে বৌমা?সুবীর কিছু বলেছে তোমায়?"মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে অতসী এই এক বছরের সমস্ত ঘটনা তাকে খুলে বলে।সে যে মা হতে চলেছে এবং সুবীর যে এই বাচ্চা চায়না সে কথাও সে তার শ্বাশুড়ী মাকে জানায়।সুপ্রভাদেবী চমকে ওঠেন সুবীরের এই সিদ্ধান্তের কথা জেনে।অতসীকে যেমন মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেন তিনি আছেন কোন ভয় নেই ঠিক তেমনই মৃদু বকাও দেন কেন এতদিন সে সুবীরের কোন কথা তাকে জানায়নি।
   রাতে খাবার টেবিলে সুপ্রভাদেবী সকলকে জানান আগমীকাল সকালে তিনি তার বৌমাকে নিয়ে কালীঘাট পুজো দিতে যাবেন।ছেলে ও স্বামীর খাবার সকাল সকাল রান্না করে টেবিলে ঢাকা দিয়ে রেখে যাবেন।সুবীর শুনে বলে,
---কিন্তু মা,কাল যে আমি সকালে তোমার বৌমাকে নিয়ে একটু বেরোবো ভাবছিলাম।
সুপ্রভাদেবী দৃঢ় কণ্ঠে ছেলেকে জানান,
---কাল শনিবার।আমি মায়ের মন্দিরে যাবো ওকে নিয়ে।তুমি আর একদিন ওকে নিয়ে বেরিও।
সুবীর আর কোন কথা না বলে খেয়ে তার ঘরে চলে যায়।
        পরদিন শ্বাশুড়ী,বৌ পুজো দিয়ে বাড়িতে আসে।সুপ্রভাদেবী সকলকে জানান বাড়ির সকলের সাথে তার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।আগামীকাল রবিবার তিনি মেয়ে ও জামাইকে দুপুরে এখানে খেতে বলেছেন তারা আসলেই তাদের সামনে তিনি তার প্রয়োজনীয় কথাগুলি বলবেন।একমাত্র শ্বশুর অনিকেতবাবু ছাড়া সুবীর ও অতসী বুঝতেই পারেনা কি এমন কথা যার জন্য মা দিদি ও জামাইবাবুকেও এখানে আসতে বললেন।অতসী তার শ্বাশুড়ীকে এই এক বছরে খুব একটা ভালোভাবে চিনতে না পারলেও এটা সে পরিষ্কার বুঝতে পারছে গতকাল রাতে তার মুখে নিজের ছেলের কথা শুনে তিনি কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন।তবে সেটা কি এবং সে সিদ্ধান্ত তার পক্ষে না বিপক্ষে এটা সে আন্দাজ করতে পারছেনা।আর সুবীর এ ব্যপারে নিশ্চিত এই এক বছরে সে যতটুকু অতসীকে চিনেছে তাতে করে অতসী তার মায়ের কাছে কখনোই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলবেনা।সুতরাং যা হচ্ছে বৃথা না ভেবে তাই হতে দাও।
    দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষ হলে তিনি সকলকে হাতমুখ ধুয়ে এসে ওখানেই থাকতে বলেন।কাজের মাসি এসে টেবিল পরিষ্কার করে যায়।সুপ্রভাদেবী এবার তার কথা শুরু করেন।"এই বাড়িটা তৈরি করেছিলেন আমার শ্বশুরমশাই।তিনি নিজে পছন্দ করে আমায় ঘরের বৌ করে এনেছিলেন।তখন আমার বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর।তার কথা ছাড়া এই সংসারে একটা কাজও হতনা।তোমার বাবা সংসার নিয়ে কোনদিনও মাথা ঘামাতেন না।বাবা আমাকে বলেছিলেন সংসারে শান্তি বজায় রাখতে গেলে সংসারে একজনকে একটু কড়া হতেই হয়।তানাহলে হাতের থেকে কাঁচের প্লেট পড়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হওয়ার মত সংসারও ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়।তিনি নিজে হাতে সর্বদা আমার সাথে সাথে থেকে পরম স্নেহে অতি যত্নে নিজের মনের মত করে সংসারের উপযোগী করে তৈরি করেছিলেন আমায়।আমার শ্বাশুড়ীমা মানে তোমাদের দিদা তিনি আমাকে একমাত্র রান্নাবান্নার দিকটাই দেখিয়েছেন।আর বাকি ঘরে বাইরে যাবতীয় কাজ আমায় সাথে নিয়ে গিয়ে হাতে ধরে শিখিয়েছেন আমার শ্বশুরমশাই।জীবনে কোনদিন তাকে কোন অন্যায় করতে দেখিনি।মৃত্যুকলে তিনি তার সমস্ত বিষয়সম্পত্তি তার ছেলের মানে তোমাদের বাবার অনুমতি নিয়েই আমার নামে দানপত্র করে যান।আমি আজ পর্যন্ত তার শিক্ষার কোন অবমাননা করিনি।তোমাদের বাবার সাথে গতকাল আমার কথা হয়ে গেছে।আমি  আজকে যে সিদ্ধান্তের কথা তোমাদের জানাবো তাতে তার কোন অমত নেই।
    অতসীকে আমি নিজে পছন্দ করে সুবীরের বৌ করে নিয়ে এসেছি।আমি জানি সুবীরের সাথে তার এক অফিস কলিগের একটা সম্পর্ক রয়েছে।যে কিনা বিবাহিত।
সুবীর বলে ওঠে,"কি হচ্ছে মা সকলের সামনে?
সুপ্রভাদেবী হেসে বলেন,
---তুমি একটা অবৈধ সম্পর্ককে সকলের অলক্ষ্যে টেনে নিয়ে যেতে পারছো আর আমি সেটা সকলের সামনে বললেই দোষ?তোমার বিয়ের পর থেকেই আমি কিছুটা আন্দাজ করেছিলাম।কিন্তু বৌমার দিক থেকে কোন সারা না পেয়ে কোন সিন্ধান্তে উপনীত হতে পারছিলাম না।তাইবলে আমি চুপ করে বসেও ছিলামনা।কয়েকদিন আগে সুবীরের মোবাইলে একটা ফোন আসে রেখা নামের কোন মহিলার।একবার নয় বারবার ফোনটা বেজে যায়।সুবীর তখন বাথরুমে ছিলো।আমার কিছুটা সন্দেহ হয়।আমি আমার পরিচিত একজনকে দিয়ে সুবীরের অফিসে খোঁজ নিয়ে সবকিছু জানতে পারি এবং তোমার বাবাকে সব জানাই।কিন্তু অতসীর দিক থেকে কোন সঙ্কেত না পেয়ে আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলামনা।আমার পরিবারে যে নূতন অথিতি আসতে চলেছে সে আসবেই সুবীর না চাইলেও আসবে।সে আসার আগেই আমি আমার সমস্ত স্থাবরঅস্থাবর সম্পত্তি,মায় টাকা পয়সা পর্যন্ত সবকিছু অতসীর নামে লিখে যেতে চাই।আমার মেয়ের যদি প্রয়োজন হত তাহলে তাকেও কিছু অংশ দিতাম কিন্তু তেমন ঘরে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিইনি।আর যতটুকু আমি আমার জামাতাকে চিনি সে শ্বশুরবাড়ি থেকে এক কপর্দকও নেবেনা।
   সুবীর কিছু বলার চেষ্টা করে।সুপ্রভাদেবী আঙ্গুল তুলে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন,"দু'নৌকায় পা দিয়ে চলা যায়না সুবীর।তোমাকে যে কোন একটা দিক বেছে নিতে হবে।তোমাকে যথেষ্ট শিক্ষা দিয়ে বড় করেছি।কিন্তু মানুষ করতে পারিনি বুঝতেই পারছি।যদি তুমি মনে করো সবকিছু বাদ দিয়ে বৌমার সাথে সুখে সংসার করবে তাহলে খুবই ভালো।আর যদি তোমার মনে হয় তুমি ওই মেয়েটির সাথে এ ভাবেই সারাজীবন চলবে তাহলে তোমায় এই বাড়ি এবং আমাদের সকলকে তোমায় ছাড়তে হবে।আমি পনেরদিন তোমায় সময় দিলাম।তুমি তোমার সিদ্ধান্ত আমায় জানাবে।আমি আমার সিদ্ধান্ত সকলের সামনে জানিয়ে দিলাম।তোমাদের কারও কোন বক্তব্য থাকলে বলতে পারো।সুবীর মাথা নীচু করে সেখান থেকে উঠে চলে গেলো।সকলেই সেখানে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বসে থেকে যে যার মত উঠে চলে যায়।অতসী তার ঘরের দিকে পা বাড়ালে তিনি বলেন,"বৌমা আজ থেকে তুমি আমার ঘরে শোবে।তোমার বাবাকে একটা ক্যাপখাট পাতিয়ে দেবো।দুপুরে তুমি তোমার ঘরে থেকো কিন্তু সুবীরের ছুটির দিনগুলি নয়।অতসী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
   সুবীর মনেমনে ভেবেছিলো অতসী ঘরে ঢুকলে তার কাছে সে জানতে চাইবে কেন সে মাকে সব জানিয়েছে?কিন্তু সে সুযোগ সে আর পায়না।পনেরদিনের মাথায় সুবীর তার সামান্য কিছু জামাকাপড় নিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো।এই পনেরদিন সুবীরের সাথে অতসীর মাঝে মাঝে দেখা হলেও কথা হয়নি।দুবেলা খাবার টেবিলে শ্বাশুড়ী বৌ হাজির থাকলেও সুবীরের সাথে মা বা বৌয়ের কোন কথা হয়না।সুবীরকে ব্যাগ নিয়ে আসতে দেখে সুপ্রভাদেবী তার বৌমার উদ্দেশ্যে বলেন,"দরজাটা ভালোভাবে বন্ধ করে দিও বৌমা।"সুবীর বেরিয়ে যায়।হতভম্ব হয়ে অতসী সেখানে দাঁড়িয়েই চোখের জলে ভাসে।শ্বাশুড়ী এসে তাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলেন,"কাঁদিস না মা।কটাদিন একটু কষ্ট কর।আমি তোকে বলছি ও ঠিক ফিরে আসবে।আর যখন ও ফিরবে ঠিক খাঁটি সোনা হয়ে ফিরবে।এসব সম্পর্ক হচ্ছে চোখের খিদে।আসল হিরে ছেড়ে বেশিদিন ও নকল হিরে নিয়ে থাকতে পারবেনা মা।এইছাড়া ওকে ভালো পথে আনার আমার আর কোন পথ জানা ছিলোনা।তুই যদি ভেঙ্গে পড়িস আমার লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে যাবে রে!যে আসছে এবার তুই তার কথা ভাব।দেখবি নূতন অথিতি আসার আগেই সুবীর তার ভুল বুঝতে পারবে এবং ফিরে আসবে।"
      এই ঘটনার ছ'মাসের মধ্যেই সুবীর ফিরে আসে।মা,বাবার কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চায়।সুপ্রভাদেবী রাতে বৌকে নিজে সুবীরের ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসেন। গুমোট গরমের পরে এক পশলা বৃষ্টি যেমন শরীর ও মনকে সতেজ করে এতদিন পর অতসী ও সুবীরের মনেও সেই সতেজতা সেই খুশি ফিরে এলো আর খুঁজে পেলো তারা আসল সুখের ঠিকানা।  

Tuesday, May 7, 2019

আমার গ্যাংটক ঘোরা

    চলমান গঙ্গাট রাবাড়ী থেকে বারোবারের সময় একসাথে জোরালা.আবলিশ মা, চিত্তের সব কিছু লেগেই থাকছে ৮৮-৩০ এ ট্রেন রাশিয়ালদহ এসেছিল, জাম-৪৫ এ এসএসডি দিদি, জামাইবাবু, বোনঝি আর বোণি জামির আগে স্টেশনেটি লিখেছেন। পরে দেখা হয়েছে আমার মেয়ে এবং জামাই রাদু'র মুখোমুখি হলেন মস্তবগড় ঝড় দু'দিকের ওপরে, যদিও সে জড়িত ছিল না! নীলিপ্ত জামায়েতকে জানা গেল, "নোনাবদিদা মা, তুমি এই ট্রানগলকে অনুসরণ করছো।" হুঁশ ঠাকলা! সিট কনফারমেশনে পোস্ট পার্টল মেয়ে, আমি আর বোনঝি এস 1 বগিটি আর টাইস এস এস এর উপর আস্থা রাখি আমাদের এই ঘুরেতে 'আমার জামাই'আমাদের সিটিসিটি বারুইপুরের ট্রেন তার মাইর আইডি প্রুফের কাছে পৌঁছেছে সে নাকি নাকি নাকি নাকি নাকি রাত নাকি রাত রাত রাত রাত রাত রাত নাকি নাকি রাত রাত রাত রাত রাত রাত রাত রাত রাত রাত নাকি রাত। শ। ম
কত কথায় অব্যক্ত থেকে যায়,
সুন্দর মুহূর্তগুলো স্মৃতির খাতায় জমা হয়।
জীবন এগিয়ে চলে ঝড়ের গতিতে,
তবুও সময় মাঝে মাঝে থমকে যায়।
চাওয়া-পাওয়ার হিসাবের ফল শূন্য!
স্মৃতিগুলো সময়ের সাথে সাথে ফিকে হয়ে যায়।
বাঁচার তাগিদে জীবন এগিয়ে চলে,
এতোকিছু সত্বেও জীবনের ঘা টা থাকে দগদগে।
                                    মানবী 

Monday, May 6, 2019

এটাই ভালোবাসা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই অতুল দেখে আসছে ঠাম্মার উপর মায়ের অত্যাচার।বাবা অনেকবার প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাননি।এক্ষণ অশান্তির ভয়ে অধিকাংশ সময় চুপ করেই থাকেন।ঠাম্মা কোনদিনও মায়ের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেননি।মাঝে মাঝে এই নিয়ে মায়ের সাথে অতুলের তুমুল ঝামেলা হয়।অতুল প্রতিজ্ঞা করে কোনদিন যদি চাকরী পায় সে তার ঠাম্মাকে নিয়ে আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকবে।
    দু'বছর পরে অতুল চাকরী পেলো এবং ইচ্ছা করেই সে কলকাতার বাইরে চাকরী নিলো।যাওয়ার আগেরদিন সে ঠাম্মাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা সদর্পে সকলকে জানালো।স্বভাবতই মা তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন।সে সরাসরি মাকে জানালো,'তোমার অত্যাচারের হাত থেকে ঠাম্মাকে বাঁচাতে এর থেকে আর কোন ভালো উপায় আমার জানা নেই।'অতুলের বাবা দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন,"সন্তান হয়ে আমি যা পারিনি তুই নাতী হয়ে সহজেই মীমাংসা করে দিলি।'
      কিন্তু যাকে নিয়ে এতো ঘটনা তিনি সকলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,'নারে দাদুভাই আমি তোর বাবাকে ছেড়ে গিয়ে থাকতে পারবোনা।তোর মা আমায় একটু বকাবকি করে ঠিকই কিন্তু এই বাড়ি,তোর মা, বাবা এদের সকলকে ছেড়ে গিয়ে আমি কোথাও ভালো থাকবো নারে!নিজের বাড়িতে কাজ করি আমার একটুও কষ্ট হয়না।জানিস দাদুভাই,একসময় আমিও বৌমাকে কম কষ্ট দিইনি।সেও কিন্তু মুখ বুজে সব সহ্য করতো।এটা আমার পাপের ফল।বৌমার এতে কোন দোষ নেই।মানুষের যখন বয়স কম থাকে আর তখন রক্ত থাকে গরম।যার সাথে যে ব্যবহারই করিনা কেন একদিন না একদিন সেটাই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে।তুই একাই চলে যা আমি আমার ছেলে আর বৌ এর কাছেই থাকবো।তোরাই তো আমার সব রে!বরং তুই বদলি নিয়ে তাড়াতাড়ি করে এখানে চলে আয়।আমরা সবাই একসাথেই থাকবো।তোর মা আমার উপর চেঁচামেচি করলে কি হবে রে ?আমি কি বুঝিনা সে যে আমায় খুব ভালোওবাসে।তিনবেলা সেই তো আমাকে অসুধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়।হ্যাঁ হয়তো তার সে স্বরের মধ্যে কোন মিষ্টতা থাকেনা ঠিকই।সেটাও কিন্তু আমার দোষে।তার হয়তো মনে পড়ে যায় আমার পূর্বতন ব্যবহারের কথা।প্রথম থেকেই আমি যদি তোর মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করতাম তোর মা-ও হয়তো এখন আমার সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারতো।সে যে সেটা পারেনা সেটা আমার দোষে রে!এই তো সেদিন রাত্রিবেলা আমার বাতের ব্যথাটা বেড়েছিলো।তোর মা বাথরুমে যাওয়ার সময় আমার ছটফটানি দেখে অনেকক্ষণ আমার পায়ে তোর বাবার এনে দেওয়া ওষুধটা মালিশ করে দিলো।বকবক করছিলো তোর মা তখন ঠিকই কিন্তু সেই তো ওষুধটা মালিশ করে আমায় ঘুম পারালো।তোর বাবা তখন অঘোরে অন্য ঘরে ঘুমাচ্ছে।আমি বুঝতে পারি সে আমার আগের ব্যবহারের কথা মনে করেই আমার সাথে মিষ্টি করে কথা বলতে পারেনা।এতে ওর কোন দোষ নেই ভাই,দোষী তো আমিই।'
   অতুলের মা এসে শ্বাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো,
-মা,তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।তোমার কথাগুলো একদম ঠিক মা।কিন্তু আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।
-আমি জানি মা।আমিও যে তোকে খুব ভালোবাসি।সেই ছোট্টবেলায় আমার প্রতুলের বৌ হয়ে আমার কাছে এসেছিলি।সংসারের কোন কাজই তুই জানতিসনা।বকাবকি না করলে আজ  মস্তবড় পাক্কা গিন্নী হতে পারতিস?আমি যে তোকে আমার নিজের মেয়ের মতনই দেখি।কোনদিন মন খুলে এই কথাগুলো কারও কাছে বলতে পারিনি।আমার দুর্ব্যবহারের কারনেই যে তুই আমার সাথে দুর্ব্যবহার করিস সেটা প্রতুল না বুঝলেও আমি বুঝি।কাঁদিস না মা।আমরা মা,মেয়ে ভালোবাসার জায়গাটা অক্ষুন্ন রেখে ঝগড়াঝাটি করেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবো।
   পরদিন অতুল তার কর্মস্থলে একাই রওনা দিলো। 

Saturday, May 4, 2019

আমি একা
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

মেঘলাদিনে উদাস মনে,
মনে পড়ে কত কথা,
স্মৃতির সাগরপারে একা,
ঝড়ের দাপটে খোলে খাতা।

সবকিছু কি আর ভুলে যাওয়া যায়?
সামনে এগিয়ে চলার বৃথা চেষ্টা!
শূন্যঘরে স্মৃতিরা থাকে জড়িয়ে,
তাদের কি কখনো উপরে ফেলা যায়?

মন মানেনা তবু পথ চেয়ে থাকা,
ফিরে তো আসবেনা আর জানি,
চেতন-অবচেতনে সেই মুখ স্মরি,
হাজার মানুষের মাঝে রয়ে গেলাম একা।