Friday, April 26, 2024

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (১৭ তম পর্ব)

বাস থেকে নেমেই হাঁফাতে হাঁফাতে এসে থানায় ঢোকে সুলতা। একজন পুলিশ অফিসার তাকে দেখে জানতে চায়,
-- আপনি সুলতা সেন তো?
-- হ্যাঁ 
-- স্যার একটা বিশেষ দরকারে বেড়িয়েছেন, আপনাকে বসতে বলে গেছেন।
 অফিসার বসার জন্য একটা চেয়ার দেখিয়ে দেন। সুলতা সেখানে গিয়ে বসে। মাথার মধ্যে নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। এখানে পৌঁছানোর আগে একটি পরিচিত ছেলেকে দিয়ে বাড়িতে খবর পাঠিয়ে দিয়েছে যে সে থানায় যাচ্ছে বাড়িতে জানিয়ে দিতে। কিছুতেই সুলতা বুঝতে পারছে না কেন এবং কিসের জন্য তাকে থানায় ডাকা হল? যদি রজতের কোন খবর থাকতো তাহলে তো তিনি ফোনেই জানাতে পারতেন। তবে কী জানাতে তিনি থানায় ডেকে আনলেন? 
  হঠাৎ ব্যাগের মধ্যে ফোনটা বেজে ওঠায় তার সম্বিৎ ফিরে। ফোনটা বের করে দেখে রজতের বাবা ফোন করেছেন। কী খবরই বা সুলতা তাকে দেবে? তবুও ফোনটা ধরে হ্যালো বলতেই অপর প্রান্ত থেকে বৃদ্ধ কাঁপা কন্ঠ স্বরে জানতে চাইলেন,
-- কোন খবর আছে? তোমায় থানায় ডেকে পাঠালো কেন?
 সুলতার বুঝতে অসুবিধা হল না পাড়ার ওই ছেলেটির মাধ্যমেই বোধহয় রজতের বাড়ি পর্যন্ত খবর গেছে সুলতাকে থানায় ডেকেছে। রাত প্রায় ন'টা তখন। ওসি তখনও আসেননি। বাস থেকে নেমে সারাদিনের পরিশ্রমের পর থানায় এসে বসে থেকে থেকে সুলতার ঝিমুনি এসে গেছে। যেহেতু ওসির পরিচিত তাই একসময় একটু কাগজের ছোট্ট কাপে এককাপ লাল চা পেলো সাথে দুটো বিস্কুট। খিদে পেয়েছে খুব। ইতস্তত করতে করতে বিস্কুট দু'টো নিয়েই নিলো। ওখানে বসে বসে কত মানুষের কত রকম সমস্যা শুনতে লাগলো। রাত প্রায় দশটা। ভাস্কর সেন আসলেন থানায়। ভিতরে ঢুকে সুলতাকে বসে থাকতে দেখে মৃদু হাসি নিয়ে বললেন,
-- সরি, অনেকটা দেরি হয়ে গেলো।একটা ঝামেলায় ভীষণভাবে ফেঁসে গেছিলাম। তুমি আর একটু বসো। চিন্তা করো না আমি নিজেই তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেবো। আমি এখুনি আসছি।
 তিনি ভিতরে ঢুকে ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে এলেন। এসেই বললেন, 
-- চলো 
-- কোথায়?
-- যেখানে নিয়ে যাবো বলে তোমায় আসতে বলেছিলাম সেখানে এত রাতে তোমায় নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
-- না,না আমার কোন অসুবিধা নেই। আপনি চলুন। 
 কথাটা বলে ভাস্কর সেনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-- কিন্তু কোথায় নিয়ে যেতে চাইছেন আমায়?
 ভাস্কর একটু ইতস্তত করতে করতে বললেন,
-- রাত হয়ে গেছে কালই যাবো
-- কিন্তু জায়গাটা কোথায় বললেন না তো?
-- মর্গে 
-- মানে? সেখানে কেন? 
-- এখান থেকে কিছুটা দূরের এক স্টেশনে ক্ষতবিক্ষত একটা লাশ পাওয়া গেছে। পরিচয় জানা যায়নি। তাই আর কী --
-- এটা অসম্ভব! এটা হতেই পারে না। 
 সুলতা ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে। ভাস্কর সেন তার মাথায় হাত রেখে বলেন,
-- আমিও চাই এটা যাতে সত্যি না হয়। কিন্তু যেহেতু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এটা একটা নিয়মই মনে করো।
-- না, এ নিয়ম আমি মানতে পারবো না। প্রয়োজনে আপনি আরও সোর্স লাগান। কিন্তু আমি মর্গে কিছুতেই যাবো না। রজতের এরূপ কোন ঘটনা ঘটতেই পারে না। তাহলে আমি টের পেতাম।
ভাস্কর সেন কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। এদিকে ড্রাইভার গাড়িতে উঠে গাড়ির জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললো,
-- স্যার উঠুন।
 ভাস্কর সেন গাড়িতে উঠে সুলতার দিকে তাকিয়ে বলেন,
-- গাড়িতে উঠে এসো। অনেক রাত হয়েছে। তোমায় বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসি। যা ভাবার বা করার সকালে করবো।
 সুলতা গাড়িতে উঠে বসে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে ভাস্কর বললেন,
-- এত ভেবো না। রজতবাবুর কোন খারাপ খবর আছে সেইজন্য কিন্তু তোমায় বডি সনাক্ত করতে মর্গে যেতে বলা হয়নি। যেহেতু এই মুহুর্তেই তিনি নিখোঁজ আর এখনই ওই অজ্ঞাত পরিচয় বডিটা পাওয়া গেছে সেই হিসাবেই নিয়মমাফিক তোমায় মর্গে যেতে হবে। খোঁজ তো আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। 
 সুলতা কোন উত্তর দেয় না ভাস্কর সেনের কথার। গাড়ি এসে সুলতাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বড় রাস্তার মোড়ে থামে। দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভাস্কর সেনের দিকে তাকিয়ে শুধু "আসছি" - বলে এগিয়ে যায়।
 পুলিশের গাড়ি থেকে সুলতাকে নামতে দেখে অনেকেই কৌতূহল দৃষ্টিতে অত রাতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। সুলতা কোন দিকে না তাকিয়ে আনমনাভাবে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করে। সুলতাকে দেখতে পেয়ে একজন বয়স্ক মহিলা বেশ কয়েকবার তার নাম ধরে ডাকেন। কিন্তু অন্যমনস্ক থাকার ফলে সে ডাক সুলতার কানে পৌঁছায় না। কিন্তু তিনি ডাকতে ডাকতে তার পিছন পিছন আসতে থাকেন। সুলতা এবার শুনতে পায়। সে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভদ্রমহিলা হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলতে শুরু করেন
-- এত রাত পর্যন্ত তুমি হন্যে হয়ে রজতের খবরের জন্য ছুটাছুটি করছো অথচ তোমার ফোন বন্ধ। তুমি কি জানো রজত ফিরে এসেছে কিছুক্ষণ আগে।
-- এ্যা 

ক্রমশ 

No comments:

Post a Comment