Tuesday, April 23, 2024

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (১৫ তম পর্ব)

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (১৫তম পর্ব)

  ছোট থেকেই ছেলেরা "পুরুষ মানুষকে কাঁদতে নেই" একথা শুনেই বড় হয়। তাই কারো সামনে তারা কাঁদতে পারে না কারণ তাতে যদি তার আত্মসম্মানে আঘাত লাগে লোকে তাকে "মেয়েদের মত স্বভাব" - বলে। কিন্তু কষ্ট তো তাদের হয় তারাও কাঁদে তবে সেটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। অন্ধকার আর বালিশকে সাক্ষী রেখে সারারাত চোখের জলে তারা তাদের কষ্ট নিবারণের বৃথা চেষ্টা করে। কেউ জানতেও পারে না। নারীর নরম মনের মত পুরুষের মনটাও যে নরম এ ধারনাটাই অধিকাংশ মানুষ বুঝতে চেষ্টাও করে না। প্রতিটা পুরুষই একটা কঠিন আবরণে নিজেকে মুড়িয়ে রাখে। মানুষ বাইরের ওই আবরণটাই দেখে। ভিতরের মনটা নয়।
 সেদিন রাস্তায় দেখা হওয়ার পর থেকে বহুবার ভাস্কর সেই রাস্তায় যাতায়াত করলেও অনসূয়ার দেখা সে আর পায়নি। বুক ভেঙে চৌচির হয়ে গেলেও কারো সাথেই ভাস্কর তা শেয়ার করতে পারেনি। বুকের কষ্ট লাঘব করতে অনেক সময় নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথাও ভেবেছে। কিন্তু পরক্ষণেই মায়ের আর বাবার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। 
 একএক করে দিন গড়িয়ে যেতে থাকে কিন্তু অনসূয়ার দেখা ভাস্কর পায় না। কোন এক প্রত্যুষে ভাস্কর দেখে অনসূয়াদের বাড়ির গেট সাজানো হচ্ছে , ক্লাবের মাঠে বড় প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছে। বড় বড় করে গেটের উপর "শুভ বিবাহ" লেখা। সকলেই জানে আজ অনসূয়ার বিয়ে। ভাস্করেরও কানেও সে কথা আসে। সে স্তব্ধ হয়ে যায়। কী এমন হল যে সে ভাস্করের সাথে এরূপ করলো? কী অপরাধ তার? কিসের জন্য, কিসের ভয়ে সে এতবড় বেইমানী তার সাথে করলো? একবার জানানোরও প্রয়োজন বোধ করলো না? এ কেমন ভালোবাসা? এ কেমন কাছে আসা?
 কোন উত্তর ভাস্কর আজ পর্যন্ত পায়নি। কারণ রাস্তাঘাটে দেখা হলেও অনসূয়া কোনদিন ভাস্করের সাথে কথা বলেনি। কোন একদিন ভাস্কর রাস্তায় তাকে দেখে সামনে এগিয়ে গিয়ে জানতে চেয়েছিল তখন অবশ্য অনসূয়ার বিয়ে হয়ে গেছে,
-- কেন করলে আমার সাথে এরকম? কেন আমায় ঠকালে? তোমার উদ্দেশ্য কি ছিল শুধুই মজা নেওয়া?
 অনসূয়া এতবড় কথা শোনার পরেও কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করেই পাশ কাটিয়ে চলে যায়। অনসূয়ার ব্যবহার ভাস্করকে স্তম্ভিত করে দেয়। সে খোঁজ নিয়ে জানে তার সাথে যার বিয়ে হয়েছে তার থেকে অনসূয়া আঠারো বছরের ছোট। বিয়ের আগে প্রায় রোজই তাকে অনসূয়াদের বাড়িতে দেখা যেত। অনসূয়া তাকে দাদা বলেই ডাকতো। ছেলেটি বলা ভালো ভদ্রলোক স্কুল শিক্ষক। খুব দূরে শ্বশুরবাড়ি তার নয়। সুতরাং দেখা মাঝে মাঝেই তাদের হয়। কিন্তু অনসূয়া কখনোই ভাস্করের দিকে তাকিয়েও দেখে না।
 কষ্টের পাহাড় বুকে নিয়েই ভাস্কর পাশ করেই চাকরির চেষ্টা করতে থাকে। পেয়েও যায় একসময়। আস্তে আস্তে প্রমোশন হতে হতে মধ্য বয়স্ক ভাস্কর আজ ওসি। কিন্তু এই জায়গায় আসতে তাকে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে। বয়স যখন তার চল্লিশ তখনও সে বিয়ে করবে না বলেই জিদ ধরে বসে। মায়ের পীড়াপীড়িতে আর তিনি একসময় জিদ ধরে বসলেন ছেলে যতক্ষণ না বিয়ের ব্যাপারে তার মত পাল্টাবে তিনিও খাবার ওষুধ কিছুই খাবেন না। মায়ের  দরজার ছিটকিনি খোলার একমাত্র উপায় ছিল ভাস্করের মত পাল্টানো। একমাসের মধ্যেই বিয়ে। 
 বিয়ের রাতেই ভাস্কর তাকে জানিয়েছিল তার পূর্ব প্রেমের কথা। কারণ ভাস্করের মনে হয়েছিল খুব বেশি দূরত্ব যেহেতু অনসূয়া ও ভাস্করদের বাড়ির মধ্যে নেই তাই কখনো না কখনো একথা তার স্ত্রীর কানে যাবেই। আর মিথ্যে দিয়ে নিজের জীবন সে শুরু করতেও চায়নি। নতুন বউ সব শুনে বলেছিল,
-- তোমার অতীত নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু বর্তমানে তুমি আমায় ভালবাসতে পারবে তো?
-- নিশ্চয় পারবো।
 ভাস্কর সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে সোমাকে ভালবাসলেও আজও যখন সে একাকী থাকে তখন তার অনসূয়ার কথা মনেপড়ে। শত চেষ্টা করেও কিছুতেই সে আজও তাকে ভুলতে পারেনি। কেন অনসূয়া তার সাথে এরূপ করলো আজও সে উত্তর জানার এক তীব্র বাসনা তার মনের মধ্যে কাঁটা হয়ে বসে আছে। সময়ে অসময়ে সেই কাঁটার খোঁচা সে আজও তিলেতিলে অনুভব করে।
 অনসূয়ার বিয়ের পর মানুষের মুখে মুখে অনেক কথাই ছড়িয়েছে। কেউ বলেন অনসূয়ার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার কাছ থেকে অনসূয়ার বাবা কিছু অর্থ ধার নিয়েছিলেন। যা তিনি শোধ দিতে পারেননি। তাই মেয়েকে সম্প্রদান করেছেন। আবার অনেকে বলেন মেয়েকে সামনে দাঁড় করিয়েই লোকটির কাছ থেকে সংসার চালোনোর জন্য নানান সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়েছেন মেয়েকে লোকটির দাবিমত তার হাতে তুলে দিতে। এইরূপ নানান কথা ভাস্করের কানে আসে। কিন্তু ভাস্করের শুধু একটাই প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় "যায় হোক না কেন অনসূয়া তাকে সত্যিটা কেন জানালো না? তার সাথে কেন এরূপ করলো?" 

ক্রমশ

No comments:

Post a Comment