ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (১২তম পর্ব)
রজতের বাবা প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক। একজন প্রাইমারী স্কুল শিক্ষকের মাইনে তখনকার দিনে খুব একটা বেশি ছিল না। এই কয়েকমাস হল হুট করে কিছু টাকা বেড়েছে। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে রজতের বাবা,মায়ের খুব একটা বেশি কষ্ট হয়নি। বাড়িটাও ছিল নিজেদের। রজতের বাবাও ছিলেন তার বাবার একমাত্র সন্তান। রজতের সাথে সুলতার ছেলেবেলা থেকেই বন্ধুত্ব। আর এখন এই বন্ধুত্বটা যে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে এটাও তারা ভালোভাবেই জানেন। তাই সুলতাকে পুত্রবধূ হিসাবে মেনে নিতে তাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু রজতের বাবা,মা নিজেদের মধ্যে এটাও আলোচনা করেন সুলতা না থাকলে তার বাপের বাড়ির সংসার অচল হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে তারা তাদের পুত্রের ভবিষ্যত নিয়ে বড়ই চিন্তিত।
সুলতার সাথে রজতের বাবা,মায়েরও খুবই ভালো সম্পর্ক। সুলতা ছুটির দিনে সময় পেলেই রজতের বাড়িতে যায়। একদম ঘরের মেয়ের মত রান্নাঘর থেকে ঠাকুরঘর তার অবাধ বিচরণ। পুজোতে সুলতা আর তার ভাইবোনের জন্য নতুন পোশাকও আসে। ছুটির দিনে ভালো খাবার রান্না হলে সুলতাদের বাড়িতে বড় এক বাটি খাবারও আসে। কিন্তু আজ কিছুদিন ধরেই রজতের বাবা,মা লক্ষ্য করেন সুলতা আগের মত আর এবড়িতে আসে না। যদি তাকে খবর পাঠানো হয় তবে কিছুক্ষণের জন্য একবার এসে ঘুরে যায়। কিন্তু সেই আগের মত প্রাণোচ্ছল সুলতা নয়। একদিন রজতকে ডেকে তার বাবা বললেন,
-- আমরা ভাবছি তোর বিয়েটা এবার দিয়ে দেবো। বয়স হয়েছে।কখন কী হয়ে যায় ; তাই আমরা থাকতে থাকতেই তোকে সংসারী দেখে যেতে চাই।
রজত প্রথমে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
-- এই মুহূর্তে আমি ঠিক বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই বাবা। আর একটু গুছিয়ে নিই। আমার মনেহয় সুলতা এখনই বিয়ে করতে রাজি হবে না। কারণটাতো তোমরা জানো। এখন ওকে বিয়ের কথা বলা মানে ওকে একটা সমস্যার মধ্যে ফেলে দেওয়া। ও ছাড়া ওদের সংসার যে অচল!
-- তোরও তো বয়সটা বেড়ে যাচ্ছে।
রজত হেসে পড়ে বলে,
-- তুমি এমনভাবে বলছো যেন আমি বুড়ো হয়ে গেছি। ওমা, তোমার ছেলেকে বাবা বুড়ো বলছেন তুমি কিছু বলছো না কেন?
- আমি বাবা তোমাদের কথার মধ্যে নেই। তবে আমারও ইচ্ছা তোমার বিয়েটা এখনই আমরা দিয়ে দিই।
-- না,মা এখন কোন অবস্থাতেই এটা সম্ভব নয়। সুলতাকে একটু সময় দিতে হবে। এই মুহূর্তে বিয়ের কথা ওকে আমি কিছুতেই বলতে পারবো না।
রজতের কথা শুনে ওর মা বললেন,
-- তাহলে আমরা যাচ্ছি ওর বাবা,মায়ের কাছে।
-- সেই তো একই ব্যাপার হল মা। আমার বিয়ের চিন্তা এখন বাদ দাও। সময় হলে আমি নিজেই তোমাদের বলবো।
কথা সেদিন এখানেই শেষ হল ঠিকই কিন্তু রজতের মাথার মধ্যে বিষয়টা নিয়ে একটা চিন্তা ঢুকেই থাকলো। পরিবারের দায়িত্ব সুলতা কোনদিন এড়াতে পারবে না। ওর ভাই এখন খুবই ছোট। বোনটা সবে এইটে উঠেছে। এই পুরো দায়িত্ব সামলে উঠতে বেশ কয়েক বছরের ব্যাপার। সেই বয়সে এসে বিয়ে করা না করার সামিল। একমাত্র যদি পরিবারটির দায়িত্ব সে নিজেও নেয় এবং সম্পূর্ণভাবে সুলতা তার রোজগারের টাকা তার নিজের বাবা,মায়ের হাতে তুলে দেয় তবেই সে বিয়েতে রাজি হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে তার বাবা,মা কতটা সহযোগিতা করবেন সুলতার সাথে? সকালে বেরিয়ে রাতে ফেরা, তারউপর পুরো মাইনের টাকা নিজের মায়ের কাছে ( সুলতার মা)দিলে তার (রজতের) বাবা, মা কি মেনে নেবেন? রজত মনেমনে ভাবে এই পুরো বিষয়টা নিয়ে একদিন বাবা,মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। তাঁরা এই ব্যাপারে রাজি হলেই সে সুলতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে।
সেদিন রাতে শুতে গিয়ে সুলতার সাথে রজতের ফোনে কিছুক্ষণ কথা হয়। বলা বাহুল্য এই ফোনটা রজতই সুলতার জন্মদিনে কিনে দিয়েছিল। এরকম মাঝে মধ্যে রজত তাকে তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি গিফট করে। সুলতা নিষেধ করলেও রজত শোনে না। হাসতে হাসতে বলে
-- সময় হলে সুদেআসলে শোধ দিয়ে দিও।
সকালে যে যার মতন অফিসে চলে যায়। কিন্তু সুলতা অফিস থেকে ফেরার পথে স্টেশনে রজতকে না দেখতে পেয়ে ভীষণ অবাক হয়। ওখানে দাঁড়িয়েই ফোন করে। কিন্তু সুইচ অফ পায়। ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। তারপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে বাড়িতে না ঢুকেই চলে যায় রজতদের বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখে রজত তখনও আসেনি।অথচ রজতের ফোনের সুইচ অফ। সবাই ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলো। এতক্ষণ রজতের বাবা,মায়ের কোন চিন্তা ছিল না কারণ তারা জানতেন সুলতা ও তাদের ছেলে একসাথেই ফেরে। কিন্তু সুলতা ফিরে এসেছে রজত আসেনি সাধারণত এটা দু'জনে চাকরি পাওয়ার পর আর ঘটেনি। ফিরলেই যাতে সুলতাকে ফোন করা হয় এ'কথা বলে সুলতা ফিরে আসে নিজের বাড়ি। কিন্তু সারা রাত ধরেও রজতের কোন খবর পাওয়া যায় না। কিন্তু কোথায় গেলো রজত? কিভাবে তাকে খুঁজবে সুলতা?
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment