Wednesday, April 24, 2024

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (১৬ তম পর্ব)

বাস্তবিক ভাস্কর তার বিবাহিত জীবনে সুখী বলা চলে। কিন্তু ভাস্কর যে ধরণের মানুষ তার জীবনে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা সে কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারে না। একাকী থাকলেই সেইসব দিনের কথা ভাস্করকে কুরেকুরে খায়। যে মেয়েটিকে সে ভালবেসেছিল তাকেই সে বিয়ে করতে চেয়েছিল বলেই বারংবার সে অনসূয়াকে কাছে টেনেছে একান্তে দু'টো শরীর এক হয়েছে। অথচ কোন কারণ না দেখিয়েই মেয়েটি এভাবে তাকে অন্ধকারে রেখে কেন অন্যত্র বিয়ে করে নিলো ? কেন বারংবার তারই সাথে শারীরিকভাবে মিলিত হল? সে তো এটা চায়নি। সেতো মন থেকেই অনসূয়াকে ভালবেসেছিল। তাই তার সাথে মিলিত হতে কখনো তার মনে একটুও দ্বিধাবোধ জন্মায়নি। এটা অনসূয়া কেন করলো? 
  কিন্তু এ প্রশ্ন ভাস্করকে তাড়া করে বেড়ালেও মাঝে মধ্যে অনসূয়ার সাথে দেখা হলেও উত্তর কোনদিন জানা হয়ে ওঠেনি। তাই বাবার মৃত্যুর পর চাকরি পাওয়ার পর অফিসে যাতায়াতের অসুবিধা হয় জানিয়ে স্বল্প দামে বাড়ি বিক্রি করে এখান থেকে অন্যত্র চলে যায় যাতে অনসূয়ার সাথে তার দেখা না হয়। 
 এখান থেকে ভাস্কর চলে গেলেও অনসূয়ার খবরাখবর সে রাখে পাড়ার নানান লোকের মাধ্যমে। ভাস্কর এটাও জানে অনসূয়ার শ্বাশুড়ির মৃত্যুর পর অনসূয়া তার স্বামী,সন্তানকে নিয়ে এখন বাবা,মায়ের সাথেই থাকে। 
যেহেতু সুলতার সূত্র ধরে অনসূয়ার সাথে তার পরিচয় তাই সুলতার কথা ভাস্করের আজও মনে আছে। আর এই কারণেই বহুবছর বাদে সুলতাকে দেখে একটুও চিনতে কষ্ট হয়নি ভাস্করের।
 ভাস্কর যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকে রজতকে খুঁজে বের করার। নানান জায়গায় সোর্স লাগিয়ে সে অনবরত খবর নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। 
 রজত যেদিন নিখোঁজ হয় সেদিন ছিল তার পে ডেট। সুতরাং চুরি, ছিনতাইয়ের বিষয়টাও উড়িয়ে দিতে পারছে না। কিন্তু সেতো নয় টাকাপয়সার ব্যাপার। আস্ত মানুষটা সে কারণে উড়ে যেতে তো পারে না।
 ভাস্কর কোনোই কূলকিনারা করতে পারছে না। রোজই অফিস থেকে ফিরে সুলতা তাকে ফোন করে। কিন্তু কোন সদুত্তরই ভাস্কর দিতে পারেন না। এদিকে রজতের বাবা,মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ছেলের চিন্তায় দিনদিন খারাপ হতে থাকে। রজতের মা নাওয়া খাওয়া ভুলে ছেলের জন্য সব সময় ঠাকুরের সামনে চোখ বুঝে বসে। সুলতা একা দুটি পরিবারের মধ্যিখানে পড়ে নাজেহাল অবস্থা। রজতকে না পেয়ে মানসিক দিক থেকে সে ভেঙে পড়লেও দায়িত্ব কর্তব্য থেকে বিন্দুমাত্র সরার কোন উপায় তার নেই। কারণ দুটি পরিবারের মধ্যে সেই একমাত্র কর্মক্ষম। 
 এদিকে ভাস্কর সেন দু'দিন পর বিকেলের দিকে ফোন করে সুলতাকে তার সাথে দেখা করতে বলেন। সুলতা তখনও তার অফিস থেকে বের হয়নি। সে ভাস্করের কাছে জানতে চায়
-- কোন খোঁজ পেলেন?
-- তুমি এসো আসলে সব কথা হবে।
-- আমি এখনো অফিস থেকে বের হইনি। অফিসে একটা ঝামেলা চলছে। আজ কোন অবস্থাতেই আগে বেরোতে পারবো না। আপনি যদি আমাকে ফোনেই বলেন সব আমি চিন্তামুক্ত হতে পারি।
-- তুমি তোমার অফিসের কাজ মিটিয়েই এসো। কোন অসুবিধা নেই।
-- তারমানে এখনো সেরূপ কোন খবর নেই।
 ভাস্কর সে কথার কোন উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
 সেদিন সুলতার অফিসে হিসাবের গণ্ডগোল হওয়ায় ক্যাশিয়ারের সাথে ম্যানেজারের এক চরম ঝামেলা হওয়ার পরে মালিক ও তার ছেলে এসে উপস্থিত হন। তারা এসেই ঘটনার বর্ণনা শুনেই পুলিশে ফোন করেন। অনেক কাকুতিমিনতি করেও ক্যাশিয়ার রেহাই পায় না। তাকে পুলিশ আরেস্ট করে থানায় নিয়ে যায়। ক্যাশিয়ারের দোষগুণ বিচার করবে কোর্ট। কিন্তু সেই মুহূর্তে অফিসের সামনে যে চিৎকার,চেঁচামেচি আর  আরাজগতার সৃষ্টি হয়েছে তার রেশ অফিস ছুটির পরেও ঘণ্টা দেড়েক রয়ে যায়। স্বভাবতই সুলতার বেরোতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। বারবার ম্যানেজারকে সে বেরোনোর কথা জানালেও মালিক থাকায় নিজের চাকরি বাঁচানোর দায়ে তিনি নাকচ করেছেন সুলতার অনুরোধ। কারণ এই বয়সে চাকরি হারালে আর চাকরি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা তার নেই। সংসার অচল হয়ে পড়বে। সুলতাকে তিনি সন্তান স্নেহে দেখলেও আজকে তিনি তার জন্য কিছুই করতে পারেননি।
 সুলতা অফিস থেকে বেরিয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য যে রাস্তাটা সেটা সে হেঁটেই পার হয়। কিন্তু আজ সে অটো ধরে স্টেশনে আসে। কিন্তু এলেই তো আর হল না। ট্রেনের তো একটা নিদ্দিষ্ট সময় আছে। আধাঘন্টা বসে,দাঁড়িয়ে,পায়চারি করে ভিড়ে ঠাসা একটি বগিতে উঠে পড়ে। মাথার মধ্যে সর্বদা একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটা হল যদি ওসি রজতের কোন খবর পান তাহলে তো সরাসরি তাকে ফোনেই জানাতেন। তাহলে কী এমন হল যে তিনি থানাতেই দেখা করতে বললেন? কোন খারাপ খবর কি? তবে কি রজত --।

ক্রমশ

No comments:

Post a Comment