সুলতা পাড়ার জেঠিমার কথা শুনে প্রচণ্ড অবাক হয়ে যায়। বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে জানতে চায়,
-- কোথায় ছিল এই দু'টোদিন?
-- সে সব তো কিছু বলতেই পারছে না। খুব দূর্বল। রাস্তা দিয়ে টলতে টলতে বাড়িতে গেছে। আমরা অনেকেই ওর পিছন পিছন যেতে যেতে জানতে চেয়েছি। কিন্তু ও কারো কথার উত্তর করেনি।
-- জেঠি, তাহলে আমি এখুনি যাই। পরে তোমার সাথে কথা বলবো।
রজতের বাড়ির দিকে রওনা হয়েও সে আগে বাড়ি গিয়ে ঢোকে। কারণ রাত অনেক। বাবা,মা দু'জনেই চিন্তা করছেন তার ফিরতে দেরি দেখে। বাড়িতে ঢুকে সব জানিয়ে মাকে সাথে নিয়ে সে রজতের বাড়ির দিকে এগোতে থাকে দু'দিন পরে তার মনেহচ্ছে যেন তার নিশ্বাস-প্রশ্বাস সেই আগের মত চলছে। এই দু'দিন যেন সে দম বন্ধ করেই ছিল। খুব দ্রুত হেঁটে তারা রজতদের বাড়ি পৌঁছালো। দরজা খোলা ছিল কারণ কিছু পাড়াপ্রতিবেশী রজতদের বাড়িতে তখনো ছিলেন। সকলেই সামনে ঘরে বসে। সুলতা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকেই রজতের বাবার কাছে জানতে চাইলো,
-- কখন ফিরেছে ও?
-- তোমার সাথে ফোনে আমি কথা বলার কিছুক্ষণ পর।
-- কোথায় ছিল এ দু'দিন?
-- সেতো কথা বলার মত অবস্থায় নেই। প্রচণ্ড দুর্বল। তার মা তাকে একগ্লাস গরম দুধ খাইয়ে সাথে নিয়ে গিয়ে তার ঘরে শুইয়ে দিয়েছে। প্রচণ্ড ভাবে কাঁপছে। মনেহয় খুব ভয় পেয়েছে। তুমি যাও ওর ঘরে। ওর মা ওর কাছেই আছে।
সুলতা মায়ের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,
-- তুমি যাবে মা?
-- না,তুই যা আমি এখানেই বসি।
সুলতা প্রায় দৌড়ে গিয়ে রজতের ঘরে ঢোকে। গিয়ে দেখে সে পাশ ফিরে শুয়ে আর তার মা রজতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ইশারা করে জানতে চায় রজত ঘুমাচ্ছে কিনা? রজতের মা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলেন। সুলতা চুপচাপ এসে খাটের উপর কিছুক্ষণ বসে থাকে। রজতের মা উঠে দাঁড়িয়ে ইশারাতেই সুলতাকে ওর পাশে বসতে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। রজতের মা বেরিয়ে গেলে সুলতা এসে রজতের মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কিন্তু রজত গভীর ঘুমে তখন আচ্ছন্ন। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর ওর মনেহয় ভাস্কর সেনকে একবার ফোন করে বিষয়টা জানানো দরকার। সুলতা রজতের ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোনে এসে ভাস্কর সেনকে ফোন করে ,
-- স্যার আমি সুলতা সেন বলছি। রজত বাড়িতে ফিরে এসেছে
ভাস্কর সেন কথাটা শুনেই একনাগাড়ে বলে যেতে লাগলেন,
-- কখন ফিরলেন? তিনি কী নিজেই কোথাও গেছিলেন নাকি কেউ তাকে তুলে নিয়ে গেছিলো? তিনি কি কাউকে চিনতে পেরেছেন? কী কারণে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল জানতে পারলেন? তিনি কি --
ভাস্কর সেনের কথার মাঝখানেই তাকে থামিয়ে দিয়ে সুলতা বললো,
-- সে খুব দূর্বল। কথা বলার মত অবস্থায় নেই। এখন ঘুমাচ্ছে। আমরা কেউ কিছুই এখনো জানতে পারিনি। আমি জানতে পারলে কাল আপনাকে ফোন করে সব জানাবো।
-- তাহলে কাল সন্ধ্যায় দিকে আমি একবার আসি? বিষয়টা খুব একটা স্বচ্ছ বলে মনে হচ্ছে না -
-- হ্যাঁ সে আপনি আসতেই পারেন। কিন্তু আসবার আগে একটা ফোন করে আসবেন। ওকে নিয়ে কাল অফিস থেকে ফিরে একবার ডাক্তার দেখাতে যাবো।
-- ওকে, আমি তোমায় ফোন করেই যাবো।
সুলতা ফোন কেটে দিয়ে রজতের মায়ের কাছে যায়। তিনি তখন দুধ গরম করছেন। সুলতা রান্নাঘরে ঢুকে জানতে চাইলো,
-- তোমাদের খাওয়া হয়নি এখনো?
-- আমাদের খাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু রজত তো একগ্লাস দুধ খেয়েছে। ও যা অঘোরে ঘুমাচ্ছে তাতে ওকে ডেকে তুলে বসিয়ে খাওয়ানো যাবে না। তাই ভাবছি গরম দুধে রুটি দিয়ে চটকে খাইয়ে দেবো। তুই আর একটু বোস। খাবারটা তৈরি করে দিচ্ছি তুই একটু খাইয়ে দে ওকে। আমিও আসছি কিন্তু তুই থাকলে আমার একটু সুবিধা হবে।
রজতের মা খাবার রেডি করে সুলতার হাতে দিয়ে বলেন,
-- তুই নিয়ে যা। আমি আসছি।
সুলতা খাবার নিয়ে রজতের ঘরে ঢুকে দেখে সে তখনো অসারে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। সে মাথার চুলে হাত বুলাতে লাগে। কিন্তু রজতের ঘুম ভাঙে না। বেশ কয়েকবার তাকে গায়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ডাকে কোন সারা পায় না। বুকটার ভিতর ধরাস করে ওঠে তার। সে নাকের কাছে হাত রেখে নিশ্বাসপ্রশ্বাস চালু আছে কিনা দেখে একটু স্বস্তি পায়। ইতিমধ্যে রজতের মা এসে ঘরে ঢোকেন।
-- ডেকে সারা পাসনি?
-- না, অকাতরে ঘুমাচ্ছে।
-- দাঁড়া এভাবে হবে না। আমার হাতে বাটিটা দে। তুই ওকে গলার পিছনের দিকে হাত দিয়ে মাথাটা একটু তোল।
-- এভাবে কী করে খাওয়াবে?
-- ও ঘুমের মধ্যে মুখের কাছে ধরলে ঠিক খেয়ে নেবে। ওকে অনেক বড়বেলা পর্যন্ত না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে এভাবেই খাওয়াতাম।
ক্রমশ