Sunday, April 9, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৫৫ পর্ব)

 একদিন ভালোবাসবে (৫৫ পর্ব)

 সৌম্য একটু নিজেকে গুছিয়ে নিলো। তারপর বললো,
-- চলো আমরা একটু এগিয়ে ওই চায়ের দোকান থেকে চা খেতে খেতে বাকি কথা বলি।
 তিয়াসারও সেই মুহূর্তে চা খেতে খুব ইচ্ছা করছিলো। সে সৌম্যকে অনুসরণ করে এগিয়ে যায়। ওরা চায়ের দোকানে গিয়ে দুটো চায়ের অর্ডার দিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসে। তিয়াসা কয়েকবার চায়ে চুমুক দিয়ে সৌম্যর দিকে তাকিয়ে তার মনেহল সে যেন একটু অন্যমনস্ক। চুপচাপ চা খেয়ে চলেছে। তিয়াসা পাশে বসা সৌম্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
-- তুমি কী বলবে বলছিলে?
সৌম্য ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-- আসলে যে কথাটা বলতে চাইছি সেটা বলা ঠিক হবে কিনা ভাবছি।
-- এত ভেবো না। আমি জানি তুমি এমন কিছু বলবে না যাতে আমি কিছু মনে করতে পারি। বলো কী বলতে চাও?
-- আসলে আমি ভাবছি - হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার পর নিলয়কে অনেক নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে চলতে হবে ।ওর খাওয়া-দাওয়া,ওষুধপত্র ছাড়াও নিয়মিত চেকআপ আছে। কিছু ভেবেছো এসব নিয়ে?
-- ভাবছি,সব সময় ভাবছি। নিলয়ের চাকরিটা চলে গেলো, ওর ওষুধ-পথ্য,মেয়েটার পিছনে খরচ আছে,সংসার চালনা - এসব ভাবতে ভাবতেই শেষ হয়ে যাচ্ছি।
-- চাকরির চেষ্টা করছো না কেন?
-- কে বললো করছি না। আজ ছ'মাস ধরে চেষ্টা চালিয়েও ছোটখাটো কোন চাকরিও জোগাড় করতে পারছি না।
-- বাড়িতে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারো আমার কোম্পানিতে তাহলে চেষ্টা করতে পারি। তবে ম্যানেজমেন্টের কথায় শেষ কথা। আমি শুধু অনুরোধ করতে পারি।
 সহসা তিয়াসা সৌম্যর হাত দুটি ধরে বলে,
-- চেষ্টা করে দেখো তাহলে। বেঁচে যাবো সকলে সারাজীবন তোমায় দয়ায়।
 সৌম্য তিয়াসার কাছ থেকে আস্তে আস্তে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলে,
-- এভাবে বোলো না। আমার শুনতে ভালো লাগে না। আমি চেষ্টা করবো তোমার চাকরির জন্য। শুধু তুমি নিলয়ের কাছ থেকে অনুমতিটা নিয়ে নাও। তাহলে আগামীকাল এখানে আসবার সময় কাগজপত্রগুলো নিয়ে এসো।
-- নিলয় তো অনেক আগেই চাকরির জন্য আমায় বলেছে।
-- চাকরির জন্য বলেছে। কিন্তু আমার অফিসে চাকরি করতে দেবে কিনা সেটা তো জানতে হবে?
-- অসুবিধা কোথায়? তাছাড়া আজ যে নিলয় সুস্থ হওয়ার পথে হাঁটছে সেতো তোমার জন্যই
-- এসব কথা আর বলবে না। ও আয়ু আছে ও বাঁচবে। এসব বিধাতা আগে থাকতেই ঠিক করে রাখেন। যাহোক আমি যেটা বললাম সেটাই কোরো।
-- দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সৌম্য। আর কোন উপায় নেই। নিলয় কোন অবস্থাতেই তোমার অফিসে চাকরি করা নিয়ে কোন কথা বলবে না। তুমি নিশ্চিন্ত থেকো। তবুও আমি তার কাছে জানতে চাইবো। তুমি কেন বলছো সেটাও আমি বুঝতে পারছি।
 সৌম্য কোন উত্তর দেয় না। আবার ওরা নার্সিংহোম ফিরে আসে। কারণ ডাক্তার রাউন্ডে আসেন ঠিক রাত আটটায়। রোজই তার সাথে দেখা করে নিলয়ের শারীরিক অবস্থার কথা জেনে তবে ওরা ফেরে। তিয়াসাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে তারপর সৌম্য বাড়ি ফেরে। 
  প্রায় একমাস নিলয়কে হাসপাতাল থাকতে হয়। এরমধ্যে বড় জোর এক দু'দিন ছাড়া সৌম্য প্রায় রোজই গেছে। বাড়িতেও সৌম্য তিয়াসার সাথে নিজের গাড়ি করেই নিলয়কে বাড়িতে নিয়ে আসে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এই ক'দিনেই নিলয়ের সাথে সৌম্যর বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সৌম্য প্রয়োজনের একটি কথাও তিয়াসার সাথে বলে না। সেই প্রথম থেকেই। কিন্তু কেমন যেন একটা নেশার মত তাকে পেয়ে বসে রোজ তিয়াসাকে একবার দেখার। নিলয় বাড়িতে আসার পর বেশ কয়েকবার সৌম্য এখানে আসে। কিন্তু নিজের মনকে কন্ট্রোল করতে সে আস্তে আস্তে তাও বন্ধ করে দেয়। নিলয়ের ফোনে ফোন করে খোঁজ-খবর নেয় প্রায় প্রতিদিন। তিয়াসা ব্যাপারগুলো কিছুটা হলেও বুঝতে পারে।।সেও কোন কথা কারো সাথে শেয়ার করে না।
    মাসখানেক হল তিয়াসা সৌম্যর অফিসে জয়েন করেছে। প্রথম মাসের মাইনে হাতে পেয়ে সে পুরো তাজ্জব বনে যায়। এত টাকা এই সামান্য কাজে? পরে জানতে পারে সৌম্য তার সংসারের চাহিদা পূরণ করতেই পার্সোনাল একাউন্ট থেকে একমাত্র তার মাইনের টাকাটাই সে পেমেন্ট করে। অফিসে এমন একটি জায়গায় তিয়াসা বসে যেখান থেকে সৌম্য যাতায়াত করে। কিন্তু সে কখনোই তার চলতি পথে তিয়াসার সাথে কথা বলে না। তিয়াসা নিজের মত অফিসে আসে আবার নিজের মতই ছুটির পর বেরিয়ে যায়। অফিসের কেউই জানে না সৌম্য তিয়াসাকে চেনে। কিন্তু নিলয়ের চেকআপের সময় সৌম্য তার গাড়িতেই তাদের নিয়ে যায়। ওই দিনটি তিয়াসার ছুটি। এরজন্য ম্যানেজমেন্টের কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হয় না। এটাও সৌম্যরই ব্যবস্থা।
  নিলয় আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে। এখন সৌম্য সপ্তাহে মাত্র একদিন তাকে দেখতে আসে। অনেক কিছুই নিলয় বুঝতে পারে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। কিন্তু উপকারীর উপকার সে মনে রাখতেও জানে। এমন কিছু কখনোই তার চোখে পড়েনি যাতে মনে হয় ওদের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে। কিন্তু এটুকুন সে বোঝে এখন মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সেখানে কারো প্রতি শুধু ভালোবাসা কাজ করে না; মানুষটির মনও থাকা দরকার। আর তা সৌম্যর আছে। সেতো প্রতিটা মুহূর্তে বুঝতে পারছে তিয়াসা তাকে পাগলের মত ভালোবাসে। যা কিছু তিয়াসা করেছে শুধুমাত্র তাকে বাঁচানোর জন্যই করেছে। সেখানে সৌম্যর প্রতি তার যদি পূর্ব দুর্বলতা থেকেও থাকে বিয়ের পরে সে সবকিছুই তো ভুলে গেছিলো। এখন যেটা সৌম্যর প্রতি আছে সেটা শুধুই কৃতজ্ঞতা! সেও তো শ্রাবণীকে ভালোবাসতো। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল একসাথে থাকার। কই বিয়ের পরে তো তার কথা সে ভুলেই গেছিলো। আসলে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কিছু অতীত থাকে। জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদে সময় মানুষের সেই অতীতের উপর একটা প্রলেপ ফেলে দেয়। কিন্তু ভুলতে কেউ পারে না।আর এটাই জীবন!

ক্রমশ 


 
   

No comments:

Post a Comment