Friday, April 21, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৬১ পর্ব)

 একদিন ভালোবাসবে (৬১ পর্ব )

   খুব সন্তর্পনে সুজয় ওদের অনুসরণ করতে থাকে। আজ সে জ্যাকেটের উপর একটা শাল গায়ে জড়িয়েছে। মাথার উপর থেকে এমনভাবে শালটিকে মাথার পেঁচিয়ে নিয়েছে দূর থেকে কেউ দেখলে চিনতে পারবে না। সৌম্য এবং দীপিকা দু'জনেই একসাথে শ্রেষ্ঠার বেডের কাছে দাঁড়িয়ে তার সাথে কথা বলছে দেখে। মেয়েটির বয়স তার কাছে ঠিক আট ন'বছরের মধ্যেই হবে বলে মনে হল। সে আর বেশিক্ষণ ওখানে না দাঁড়িয়ে স্ত্রীর কাছে চলে গেলো। কিছুক্ষণ তার কাছে থেকে "শরীরটা ভালো লাগছে না" - বলে এক চুম্বকীয় শক্তির টানে আবার সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ওদের দেখতে থাকে। আরও বেশ কিছুক্ষণ একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ দেখে দীপিকা বেরিয়ে আসছে। ভদ্রলোকটি জোর করে মানিব্যাগ খুলে ওর হাতে কিছু টাকা দিয়ে দেন। দীপিকা বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই সুজয় শ্রেষ্ঠার বেডের কাছে দাঁড়িয়ে অতি স্বাভাবিক ভাবে জানতে চায়,
-- তোমার নাম কী? কী হয়েছে তোমার?
 মেয়েটি সুজয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-- শ্রেষ্ঠা দাস
 সুজয়ের পদবীর সাথে মিলে গেলো। সুজয় আরো আগ্রহী হয়ে উঠলো শ্রেষ্ঠার খুঁটিনাটি জানার জন্য। পরিচয় হল সৌম্যর সাথে। কথা চলছিল কিন্তু হঠাৎ তাকিয়ে দেখে দীপিকা আসছে। মাঝপথে কথা থামিয়ে "কাজের কথা মনে পড়ে গেছে -" বলেই সুজয় দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। 
   সুজয় ঠিক তার পরের দিন ভিজিটিং আওয়ারের অনেক আগেই এসে যায়। যাতে দীপিকারা ঢোকার আগেই সে শ্রেষ্ঠার কাছে পৌঁছাতে পারে। সুজয় শ্রেষ্ঠার জন্য কিছু ফল নিয়ে গিয়ে ওর সাথে এ কথা সে কথার পর জানতে চায় আসল কথা 
-- তোমার বাবার নাম কী মামনি?
মেয়ের মুখে নিজের নাম শুনে আনন্দে, কষ্টে সুজয়ের চোখ থেকে জল পড়তে শুরু করে। শ্রেষ্ঠা তখন আঙ্কেলকে বলে,
-- জানো আঙ্কেল আমার মা'ও আমায় মামনি বলে ডাকে।
 সুজয়ের তখন মনে পড়ে দীপিকার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর নতুন নতুন প্ল্যান প্রোগ্রামের মধ্যে তারা ঠিক করেছিল তাদের প্রথম ছেলে হলে তারা ডাকবে রাজা বলে আর মেয়ে হলে ডাকবে মামনি বলে। 
বাবা মায়ের চাপে পড়ে এত বড় একটা ভুল সে কী করে করলো? ভাবতেই তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। হঠাৎ সুজয় কাচের জানলা দিয়ে দেখতে পায় দীপিকা আসছে। সুজয় তার মেয়ের কাছে আজও জানতে পারলো না কে ওই ভদ্রলোকটি?
  এরপর প্রতিদিন সুজয়কে নেশায় পেয়ে বসলো তার মেয়েকে দেখার। একদিন কথা প্রসঙ্গে মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারে সৌম্য আঙ্কেল ভীষণ ভালো মানুষ। ও আর ওর মা থাকে সৌম্য আঙ্কেল কলকাতা থাকে। ছোট্ট মেয়েটার কাছে এই ছাড়া আর কোন খবর ছিল না আর সুজয়ও বুঝতে পারে শ্রেষ্ঠার কাছে আর কোন কথা জানতে চাওয়া ঠিক হবে না।
  হাসপাতাল রেকর্ড বুক থেকে বাকথাং এর ঠিকানা জোগাড় করে। হাসপাতাল থেকে শ্রেষ্ঠাকে ছেড়ে দেওয়ার পর সৌম্য কলকাতা ফেরে। সুজয়ের স্ত্রীর প্লাস্টার না কাটা অবধি তাকে ওখানে থাকতেই হবে। সে ঠিকানা নিয়ে পাহাড়িয়া রাস্তা পেরিয়ে দীপিকার বাসস্থানে এসে হাজির হয়। দীপিকা তাকে দেখে আঁতকে ওঠে। তার একটাই ভয় যদি সে তার মেয়েকে নিয়ে যেতে চায়। দীপিকা তাকে দেখে জানতে চায় 
-- তুমি এই পর্যন্ত ধাওয়া করেছো। তুমি যা ভাবছো তা কখনোই সম্ভব হবে না। পাহারিয়াদের তো চেনো না। আমার একটা ডাকে তারা ছুটে এসে তোমার লাশ ফেলে দেবে।
-- এতটা কেন ভাবছো? আমি তোমার প্রতি অন্যায় করেছি, মারত্মক ভুল করেছি অন্তত কনফেস করার সুযোগটুকু দাও 
-- আমায় তুমি কোন সুযোগ দিয়েছিলে? একবারও ভেবেছিলে ওই অবস্থায় একটা মেয়েকে মুখের উপর বিয়ে করতে অস্বীকার করলে তার মনের অবস্থা কী হতে পারে?
--- সেই মুহূর্তে না ভাবলেও তুমি চলে যাওয়ার সাথে সাথে ভেবেছি। ছুটে গেছি তোমাদের বাড়িতে। সারাটা রাত খুঁজেছি। থানা,পুলিশ কিচ্ছু বাদ দিইনি। কিন্তু তোমায় খুঁজে পাইনি। তোমার বাবা,মা প্রথম অবস্থায় আমার সাথে সহযোগিতা করলেও পরে তারা আমাকেই দায়ী করে নানানভাবে হেনস্থা করেন। তবে একথা সত্যি আমি তোমার প্রেগনেন্সির ব্যাপারে কাউকে কিছুই বলিনি। 
-- তোমার কোন কথা শুনবার প্রবৃত্তি আমার নেই। তুমি কী জন্য এখানে এসেছো সেটা বলো।
-- আমি জানি শ্রেষ্ঠা আমার মেয়ে। তুমি বিয়ে করোনি তাও বুঝতে পারছি। কিন্তু ওই ভদ্রলোক তোমার কে হন?
-- এসব জানতে চাওয়ার অধিকার যেমন তোমার নেই ঠিক তেমনই আমিও বলতে তোমায় বাধ্য নই। শুধু উনি নন উনার গোটা পরিবার আমার আর আমার মেয়ের কাছে ঈশ্বরের দূত সমান। এর বাইরে একটা কথাও আমি তোমায় বলবো না।
-- বেশ বোলো না। মেয়েকে একটু ডাকো ওকে আদর করেই আমি চলে যাবো।
-- না, আমি চাই না তোমার মত একজন মানুষের সংস্পর্শে ও এক মুহুর্তকাল সময় কাটাক। তুমি এখন যেতে পারো। আর কখনো তুমি এখানে আসবে না। 

ক্রমশ 

  
    

No comments:

Post a Comment