Thursday, April 13, 2023

একদিন ভালোবাসবে (৫৭ পর্ব)

অঞ্জলী বেশ কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করেন ছেলে বাড়িতে থাকলে কিংবা অধিক রাতে ফিসফিস করে ফোনে কার সাথে যেন গল্প করে। তিনি একদিন অরুণাভকে ডেকে বলেন,
-- তোমার ছেলে প্রেম করছে। এবার ওর বিয়েটা দিয়ে দিতে হবে ওই মেয়ের সাথেই।
 অরুণাভ তার অঞ্জলীর মুখের দিকে নীরবে তাকিয়ে আছেন দেখে অঞ্জলী নিজেই আবার শুরু করেন -
-- অনেকদিন তোমাদের কাছ থেকে একটা কথা লুকিয়ে রেখেছি। আজ সেটা বলবো।
-- বেশ কয়েক যুগ তোমার সাথে সংসার করছি। তুমি যে কোন কথা লুকিয়ে রাখতে পারো আমি তো ভাবতেই পারছি না 
-- আসলে কী জানো তুমি যখন মেয়েটিকে নিয়ে বাড়িতে আসো আমি সত্যিই ওকে আমাদের কুহু ভেবেছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে আমি কয়েক মাসের মধ্যেই সবকিছু মনে করতে পারি। আমাদের কুহু যে নেই সে যে আর কোনদিন ফিরে আসবে না এই সত্যিটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু ততদিনে আমি কুহু ভেবে মেয়েটিকে আমার কুহুর জায়গাটা দিয়ে ফেলেছি। খুব ভালো মেয়ে ও। এমনভাবে ও আমাকে মা বলে ডাকতো  তখন একবারের জন্যও আমার মনে হয়নি ও আমার নিজের মেয়ে নয়। কিন্তু আমি তোমাদের ইচ্ছে করেই ধরা দিইনি। ওকে কুহু বলে ডাকতেই আমার ভালো লাগতো।
  অরুণাভ চুপচাপ অঞ্জুর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শুনে যাচ্ছেন। অঞ্জলী যখন তাকে কথাগুলো বলছেন তার দু'চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অরুণাভ তবুও যেন দেখতে পারছেন অঞ্জুর মুখে এক প্রসন্নতা। 
 -- মেয়েটির পরিচয় জানার জন্য মনটা উসখুস করতো । একদিন তুমি ব্যবসার কাজে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। সমস্ত ফাইলপত্র খাট আর টেবিলে ছড়ানো-ছিটানো ছিল। সেগুলো গুছাতে গিয়ে একটা ফাইলের উপর আমি শ্রাবণী নামটা দেখে সেটা খুলে দেখি ওর সমস্ত কাগজপত্র। কিন্তু সবকিছু আমি তোমাদের কাছে গোপন করে যাই। ওকে ছাড়তে আমার মন মোটেই সায় দেয় না। তখন থেকেই আমি ভেবে রেখেছিলাম অতুর সাথে ওর বিয়ে দেবো। কিন্তু প্রথম দিকে অতুর সাথে ওর সম্পর্ক ছিল সাপ আর নেউলের।আমি জানতাম একদিন না একদিন ওরা নিজেদের মধ্যে সব মিটমাট করে নেবে। আর ওদের মিটমাট হয়ে গেলেই আমি ওদের বিয়ের কথা ভাববো।
-- তাই বলে এতদিন ধরে আমাকেও অন্ধকারের মধ্যে রেখে দিলে? অবশ্য আমরা বাপ,বেটা দু'জনেই বুঝেছিলাম ওই ছাব্বিশে জুন পুজোর নাম করে জন্মদিন পালন করার ঘটা দেখে। 
-- কই তোমরা তো কিছু বলনি তখন?
  অরুণাভ তখন হাসতে হাসতে বললেন,
-- তোমার মত আমরাও লুকিয়ে গেছিলাম।
    দু'জনের কাউকে কিছু না জানিয়েই বিয়ের বাজার করতে শুরু করে দিলেন। না জানে অসিত ,না জানে শ্রাবণী। অসিত অফিসে বেরোনোর পর পরই দু'জনে শপিং করতে বেরিয়ে পড়েন। শ্রাবণীর কাছে এক দু'দিন অন্তরই জানতে চান সে কবে নাগাদ ছুটি পাবে? 
  পাক্কা ছ'মাস পরে পুজোর ছুটিতে শ্রাবণী বাড়ি আসবে জানায়। সঙ্গে সঙ্গে পাঁজি নিয়ে আশ্বিন মাসেই বিয়ের দিনক্ষণ তারা ঠিক করে রাখেন। যেদিন শ্রাবণী বাড়িতে আসে সেদিন রাতেই খাবার টেবিলে সুখবরটা অঞ্জলী নিজেই ওদের দেন। বিয়ে বেশ ধুমধাম সহকারেই হয়। যেহেতু শ্রাবণীর কেউ নেই সেইহেতু বিয়ে বৌভাত সবকিছুরই আয়োজন এই বাড়ি থেকেই হয়। শ্রাবণীর ছুটির সমস্যার কারণে হানিমুন মাত্র তিনদিনের জন্য পুরী। জয়েন করেই কলকাতা ট্রান্সফার নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। প্রায় বছর খানেক যাতায়াতের পর সে কলকাতা আসতে সমর্থ হয়।
  এদিকে নিলয়ের অসুস্থ্যতার খবরে অসিত বেশ কয়েকবার তাকে নার্সিংহোম দেখতে গেছে। বিয়ের আগে এবং পরে বেশ কিছুদিন মনে পড়লেও নিলয়কে দেখতে যাওয়ার সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি তার। নিলয় পুণরায় যে অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এ খবর সে জানতে পেরেও শ্রাবণীর শিপটিং ডিউটির জন্য যাওয়া হয়ে উঠছে না। কারণ তার এবার ইচ্ছে সে তার বউকে সাথে নিয়েই যাবে। 
  শ্রাবণী একদিন মর্নিং ডিউটি করে বাড়ি আসার পর অসিত ঠিক করে সে অফিসে যাবে না। নিলয়কে দেখতে যাবে দু'জনে। অসিতের মুখে নামটা শুনে প্রথমে শ্রাবণী একটু চমকে উঠলেও পরে ভাবে একই নামে তো কত মানুষই থাকতে পারে। তবুও তার মনের মধ্যে কোথায় যেন একটা খচখচ করতে থাকে। কিন্তু অসিতকে তো কিছুই বলা ঠিক হবে না ভেবে সেও চুপচাপ থাকে।
  বেরিয়ে পড়ে দু'জনে একদিন বিকেল বিকেল নিলয়কে দেখতে। সেদিন তিয়াসা একাই ছিলো। অন্যেরা আসলেও সকলেই একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেছিলো। শুধু পিয়াসা থেকে গেছিলো দিদি একা আছে বলে। অসিতের সাথে তিয়াসার আগেই পরিচয় ছিলো। শ্রাবণীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো অসিত। পিয়া নিলয়ের কাছে ভিতরেই ছিলো। তিয়াসা ওকে ডেকে বাইরে আসতে বললো। অসিত ও শ্রাবণী এগিয়ে গেলো নিলয়ের দিকে। 

ক্রমশ -

No comments:

Post a Comment