অভিমান
আজ অনেকগুলো দিন রুপম এর সাথে স্বরূপার কোন দেখা নেই। সামান্য একটা ভুল বোঝাবুঝিতে আজ দুজনে দু জায়গায় একইভাবে কষ্ট পেয়ে চলেছে।কিন্তু ইগো ছেড়ে কেউ বেরিয়ে আসতে পারেনি।অথচ প্রতিবছর এই ভ্যালেন্টাইন দিনে সারাটা দিন নানান জায়গায় দুজনে ঘুরে বেড়াতো।আগামীকাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি।খুব মিস করছে স্বরুপা আজ রুপমকে।
দু'বাড়ির থেকেও তাদের এই সম্পর্ককে মেনে নিয়েছিল। রূপমের আগেই স্বরূপা একটা হাই স্কুলে ক্লারিক্যাল পোস্টে চাকরি পেয়ে গেছিল।কিন্তু রুপম চাকরি না পেয়ে বিয়ে করতে রাজি ছিল না। স্বরূপা চাকরি পাওয়ার পর সেই আগের মত দুজনে ঘুরে বেড়াতে না পারলেও স্কুল ছুটি থাকলে তারা দুজনে বেরিয়ে পরতো।কখনো ভিক্টোরিয়া, কখনো গঙ্গার পাড়, কখনো বা কোন মুভি দেখা।যেহেতু বাড়ির সকলেই সম্পর্কটাকে মেনে নিয়েছিল তাই সময় মেনে বাড়ি ফেরার কোন তাড়া স্বরুপার ছিল না।একটু বেশি রাত না হলেই হল। সকাল আটটায় বেরিয়ে স্কুল করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে স্বরুপার রোজ আটটা সারে আটটা হয়ে যেত। স্কুলটা বাড়ি থেকে বেশ একটু দুরে। তাই স্কুল থাকাকালীন সময়ে সে কখনোই ইচ্ছা থাকলেও রুপম এর সাথে দেখা করতে পারত না। রুপম তখন নানান জায়গায় চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়ে চলেছে।আর এই পরীক্ষাগুলো অধিকাংশ দিন পরে রবিবার করেই।আর যার ফলে দুজনের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎটা প্রায় কমেই গেছে।রোজ রাতে ফোনেই যা একটু কথা হয়। তাও স্বরূপা বেশিক্ষণ ফোনে কথা বলে না।তার কারণ হচ্ছে চাকরির পরীক্ষাগুলো দেওয়ার জন্য রুপম রাত জেগে পড়াশোনা করে।প্রথম থেকেই রূপমের রাত জেগে পড়াশোনা করা একটা অভ্যাস।দিনে ও পড়তে পারে না।ওর নাকি দিনে পড়লে পড়া ওর মাথায় থাকে না।রাতেই স্কুল কলেজ লাইফে পড়াশোনা করতো আর আজকে চাকরির পরীক্ষার জন্য সেই রাতেই পড়াশোনা করে।
একদিন স্বরুপা স্কুল ছুটির পর বাসে উঠে বসার একটু জায়গা পায়।সেদিন বাসটাও খুব ফাঁকা ছিল। সে রুপমকে ফোন করে।কিন্তু রূপমের ফোন রিসিভ করে একটি মেয়ে। স্বরূপা খুব অবাক হয়ে যায় মেয়েটির গলার আওয়াজ শুনে।
প্রথমে সে ভাবে হয়তো ভুল করে অন্য কোন নাম্বার ডায়াল করে ফেলেছে।ফোনটা কান থেকে নামিয়ে কন্টাক্টটা দেখে নেয়। না ঠিকই তো আছে।সে জানতে চাই,
--- কে বলছেন আপনি?
--- আগে বলুন আপনি কি কারনে রুপমকে ফোন করেছেন? রুপন এখন খুব ব্যস্ত।সে আপনার সাথে এখন কথা বলতেই পারবেনা। আপনি যে স্বরূপা সেটা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু আপনি রুপমের কি হন সেটা একটু কাইন্ডলি বলবেন?
চড়াৎ করে স্বরুপার মাথাটা গরম হয়ে যায়।সে কান থেকে ফোনটা নামিয়েই ফোনটা কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পরে রূপমের সেল থেকে ফোন আসে।স্বরূপা ফোনটা ধরে তাকে বলে,
--- এখন কি খুব ব্যস্ত আছো তুমি?তাই নিজের ফোনটা নিজের রিসিভ করতে পারোনি?অন্যকে দিয়ে রিসিভ করিয়েছো?
--- আরে ও একটা পাগলী ---
কথা শেষ হয়না রূপমের।স্বরূপা যেহেতু বাসের ভিতরে রয়েছে তাই চাপা স্বরে বলে ওঠে,
--- তাহলে তোমার ওই পাগলিকে নিয়ে সময় কাটাও।
দুজনের মধ্যে মান-অভিমানের সেই শুরু।রুপম কিছুতেই স্বরুপাকে বুঝাতে পারেনা যে রীনা তার দূরসম্পর্কের বোন। আর ও একটু এরকমই।স্বরুপার কথা রীনা সবকিছুই জানে। জেনেশুনেই জাস্ট একটু ইয়ার্কি মারতে চেয়েছিল। ইয়ার্কিটা যে এতোটা সিরিয়াস হবে কেউ বোঝেনি।
সেদিন কথার মাঝখানেই স্বরূপা রূপমের ফোন কেটে দিয়েছিল।তারপর রুপম বহুবার ফোন করেছে কিন্তু স্বরুপা ধরেনি। রাগ করে রুপমও বেশ কিছুদিন আর ফোন করেনা। একটা একটা করে দিন এগিয়ে যেতে থাকে আর একটু একটু করে স্বরুপার রাগ কমতে থাকে।আগামীকাল ভ্যালেন্টাইন্স ডে।সব অভিমান ভুলে রূপমকে একটা মেসেজ করে,
--- কাল একবার দেখা করা যাবে?
কিছুক্ষনের মধ্যেই উত্তর আসে --
--- কেন?
--- কেন মানে?কাল তো ভ্যালেন্টাইনস ডে একবার দেখা করবো না?
--- রাগ কমেছে?
--- আমি মোটেই রাগ করিনি।আমার বড্ড অভিমান হয়েছিল। আমি তোমায় ফোন করলাম আর সে ফোন অন্য একজনের ধরলো। আমার অভিমান হবে না?ভালোবাসি বলেই তো অভিমান হয়।ভাল না বাসলে আমি রাগ করতাম।
--- তার মানে স্বীকার করছো আমায় তুমি ভালোবাসো।
--- বাসি বাসি বাসি। আর কতবার বলবো আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।অবশ্য আমি জানি আমি যতটা তোমাকে ভালোবাসি তুমি ততটা আমায় ভালোবাসো না।
--- অনেক কিছু জেনে-বুঝে আছো। যেটা জানো না সেটা আমি কাল তোমায় জানিয়ে বাকিটা বুঝিয়ে দেবো। তাড়াতাড়ি করে খুব সেজেগুজে চলে আসবে কিন্তু।কতদিন দেখিনা বলতো?
--- সাজতে আমার বয়েই গেছে।আমায় যেমন দেখতে সেই ভাবেই সারা জীবন আমায় নিয়ে তোমার থাকতে হবে।আর হ্যাঁ আমি কিন্তু একটুও অপেক্ষা করে থাকতে পারবো না। কালকে যদি আমাকে অপেক্ষা করাও তাহলে কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই আমার রাগ হবে।
স্বরুপার কথা শুনে রুপম খুব হাসতে থাকে ফোনের অপরপ্রান্তে।
--- পাগলী আমার !খামোখা রাগ করে এই কটা দিন নিজেও কষ্ট পেলো আর আমাকেও কষ্ট দিল।আমিতো এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করে আছি কবে আমার পাগলির রাগ পড়বে।একটা ভালো খবর দেওয়ার আছে।আমার চাকরির একটা ইন্টারভিউ এসেছে।পরীক্ষাটা ভালই দিয়েছিলাম। এবার ভাইভাটা ভালোভাবে হলেই ঈশ্বর যদি মুখ তুলে তাকান।তাহলে বেশি দিন আর তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে না।আজ তাহলে রাখি বাকি কথা কাল হবে।
অনেকদিন পর স্বরুপা চোখের জল না ফেলে রাত্রিটা ভালোভাবে ঘুমালো।মনেমনে ভাবলো কাল স্কুলে আর যাবে না,তাহলে অনেক দিন পর অনেকটা সময় রূপমের সাথে থাকতে পারবে।
No comments:
Post a Comment