Sunday, February 26, 2023

একদিন ভালোবাসবে (১২তম পর্ব)

একদিন ভালোবাসবে (১২ তম পর্ব)

 ধনীর দুলাল অরুণাভ দাশগুপ্ত ছেলেবেলা থেকেই ভালোবাসে পাড়ার গরীব ঘরের মাধ্যমিক পাশ করা সুন্দরী অঞ্জলীকে। অঞ্জলীর অরুণদাকে ভালো লাগলেও কোনদিন ভয়ে মুখ ফুটে বলতে পারেনি। অরুণদা ধনী পরিবারের একমাত্র সন্তান। বাবার বিশাল ব্যবসা। এমন একজন মানুষকে সামান্য লেড কারখানার কর্মচারীর মেয়ে ভালোবাসে একথা যদি শুধু অরুণদা কেন পাড়ার যেই শুনবে সেই ছি ছি করবে। লজ্জায় আর মুখ দেখাতে পারবে না পরিবারের কেউ। অঞ্জলী তাই তার ভালোবাসার কথা নিজের মনেই রেখে দেয়। বাবা অঞ্জলীর বিয়ে ঠিক করেন। পাত্র নিজে দেখে পছন্দ করে যাওয়ার পর বাড়ির সকলে এসে অঞ্জলীকে দেখে যায়। গরীবের ঘরে জন্ম হলেও অঞ্জলী শুধু রূপই নয় গুনেও ছিল অনন্যা। জন্মগত সুন্দর একটি গানের গলা ছিল। কোনদিনও গান শেখেনি কিন্তু যে গানটাই শুনতো বিশেষত সন্ধ্যা মুখপাধ্যায়ের গান সে অবলীলায় গেয়ে দিত। পাড়ার ছোটখাটো ফ্যানশানেও মাইক্রোফোন হাতে দিব্যি বাদ্য যন্ত্রের সাথে সুর,তাল,লয় ঠিক রেখে হাততালি কুড়িয়েছে। কিন্তু গরীবের ঘরে জন্ম হওয়ার ফলে মাধ্যমিকের পর আর বেশীদুর পড়ার সুযোগ তার হয়নি গান তো দূরহস্ত।

   পড়াশুনায় খুব ভালো না হলেও কোনদিন ফেল সে করেনি। অরুণাভ অঞ্জলীর শুধু রূপেই নয় তার গানের এই অসাধারণ গুনেও ছিল মুগ্ধ।
  অরুণাভ ছিল একটু মুখচোরা স্বভাবের ছেলে। ফর্সা, ছ'ফুটের উপর হাইট, একমাথা ঝাঁকড়া চুল, সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত দু'টি চোখ। বাবা,মায়ের বাধ্য সন্তান। একই পাড়ায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে অরুণাভর মায়ের সাথে অঞ্জলীর একটা সুসম্পর্ক ছিল। বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলেই অরুণাভর মা অঞ্জলীদের বাড়ির সকলকে নিমন্ত্রণ করতেন আর অঞ্জলীকে বলে দিতেন,
--- তুই আগে গিয়ে আমার হাতে হাতে একটু কাজ করে দিবি। 
 এই কাজ করতে গিয়েই অরুণাভর সাথে যা দু'একটা কথা হত। একদিন কোন একটা কাজে অরুণাভর ঘরে ঢুকে অঞ্জলী দেখে টেবিলে ঝুঁকে অরুণদা কিছু একটা করছে। আস্তে আস্তে তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় অঞ্জলী। অরুণাভ তখন সুচিত্রা সেনের একটি ছবি আঁকছে সুচিত্রা সেনের ছোট্ট একটা ফটোকপি দেখে। অরুণাভ তার কাজ নিয়ে এতটাই মগ্ন ছিল যে অঞ্জলী তার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সে বুঝতেই পারেনি।অঞ্জলী ঝুঁকে পরে অরুণাভর আঁকা দেখছিল। ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস পড়ছে তবুও অরুণাভর কোন খেয়াল নেই। ছবিটা একমনে দেখতে দেখতে অঞ্জলী হঠাৎ বলে উঠলো,
--- অরুণদা, তুমি কী সুন্দর ছবি আঁক। আমার একটা ছবি এঁকে দেবে?
 অরুণাভ তার ওই সুন্দর চোখদুটি দিয়ে গভীর ভাবে যখন অঞ্জলীর দিকে তাকালো তখন অঞ্জলীর বুকের ভিতর যেন শুন্য হয়ে গেছে। শরীরের ভিতরে একটা কম্পন শুরু হয়েছে।
 অরুণাভ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অঞ্জলীর দিকে তাকিয়ে তার অবস্থা দেখে বুঝতে পারে অঞ্জলীর মনের কথা। সে অঞ্জলীর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-- আমি জানি তোমার বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু আজকে তোমাকে দেখে আমার মনেহচ্ছে এই বিয়েতে তোমার খুব একটা মত নেই। তুমিও মনেহয় আমারই মত বোকা।মুখ ফুটে কোন কথা বলতে পারো না। ঈশ্বর আজ আমাদের দু'জনকে এইখানে দাঁড় করিয়েছেন যাতে দু'জনে দু'জনার মনের কথাগুলো শেয়ার করতে পারি।
 এরপরই আচমকা অঞ্জলীর একটি হাত ধরে বলে,
-- তোমায় এই আমি ছুঁয়ে আছি।আমি জানি আমায় ছুঁয়ে তুমি মিথ্যে বলবে না।সত্যি করে বলো তো তুমি আমায় ভালোবাসো তাই না?
 অঞ্জলী তখন ঠকঠক করে কাঁপছে। ফর্সা গায়ের রং লাল হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই মায়াভরা চোখ দু'টি থেকে টপ টপ করে জল পড়তে লাগলো।
-- বোকা মেয়ে! ভালোবাসার কথা বলতে কেউ কাঁদে?
-- আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। আমরা যে খুব গরীব। আর বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন তো।
-- গরীব বলে কী ভালোবাসা আসতে পারে না জীবনে?
--- কিন্তু তোমাদের সাথে আমাদের কোনই মিল নেই। তোমরা কত বড়লোক।
-- এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। ওসব আমার চিন্তার বিষয়। এখন যেটা কথা হচ্ছে সেটা হল বিয়েটা ঠিক হয়ে গেছে। মাকে আমি রাজি করিয়ে ফেলবো। আর মায়ের কথাতে বাবাও রাজি হবেন। কিন্তু তোমাদের বাড়িতে কেউ রাজি হবেন না কারণ বিয়ের তারিখটাই ফাইনাল হয়ে গেছে। এই কটাদিন শুধু সুযোগ খুঁজেছি কখন তোমায় একা পাবো। কিন্তু কিছুতেই তোমার দেখা পাচ্ছিলাম না। তাছাড়াও ভাবছিলাম তুমি আমায় নিয়ে কিছু ভাবছো কিনা। দেখো আজ ঠিক সুযোগ পেয়ে গেলাম। ঈশ্বরই এ সুযোগটা আমাদের করে দিয়েছেন।তিনিও চান আমরা এক হই।
  অরুণাভ দু'হাতে অঞ্জলীকে বুকের মাঝে চেপে ধরে। অঞ্জলী বিনা বাঁধায় নিজেকে সমর্পণ করে অরুণাভর বুকে। অরুণাভ অঞ্জলীর মুখটা একটু উপরে তুলে নিয়ে তার ঠোঁট দু'টিতে গভীর চুম্বন করে বলে,
--- ওই তারিখের আগেই আমরা বিয়ে করবো। তুমি কিচ্ছু ভেবো না। আগে আমি মায়ের সাথে কথা বলি তারপর তার কথামত আমরা কাজ করবো। ভয় পাবে না একদম। মা তোমায় খুব পছন্দ করেন আমি জানি। আমাদের ডিসিশন নিতে শুধু একটু দেরি হয়ে গেলো এই যা -। তবে ভেবো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

  সেদিন রাতেই অরুণাভ মাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। বিয়েটা ঠিক হয়ে যাওয়াতেই মায়ের যা একটু আপত্তি। কিন্তু তিনি তার ছেলেকে কথা দেন যেভাবেই হোক তার বাবাকে রাজি করাবেন। 

  অরুণাভর বাবারও সেই একই কথা। বিয়েটা তো ঠিক হয়ে গেছে। এখন কেমনভাবে ওই মেয়ের সাথে তিনি ছেলের বিয়ের জন্য রাজি হবেন?
-- এতদিন তোমার ছেলে কি ঘুমাচ্ছিল। একদম শেষ মুহূর্তে এসে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়া মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে।
-- জানোই তো তোমার ছেলে কী ধরনের। মুখ ফুটে কোন কথা পরিষ্কার করে কখনোই বলে না। 
-- তা আমাকে এখন কী করতে হবে? অঞ্জলীর বাবা,মায়ের কাছে গিয়ে হাত জোড় করে দাঁড়াতে হবে?
-- সে কথা কখন বললাম আমি? তুমি শুধু রাজি আছ কিনা সেটাই বলো। যা করার আমি করবো। মেয়েটিকে আমিও খুব ভালোবাসি। কী লক্ষীমন্ত স্বভাব। আমার ঘরে বউ হয়ে আসলে ঘর আলো করে থাকবে।
-- তা তুমি যেভাবে তোমার ঘর আলো করতে চাও করো। আমার কোন আপত্তি নেই। কারণ আমার অনু কষ্ট পাক সেটা আমার কাছেও কষ্টদায়ক হবে। তবে ভেবেচিন্তে কাজ কোরো পুলিশের হ্যাপা যাতে না হয়।

ক্রমশ 

No comments:

Post a Comment