Friday, February 24, 2023

একদিন ভালোবাসবে ( দশম পর্ব)

একদিন ভালোবাসবে ( দশম পর্ব) 

 তিয়াসা নিচুতে নেমে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ নিলয় ছাদের সেই এক কোণেই দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ করেই তার শ্রাবণীর কথা মনে পড়ে যায়। আজ তিয়াসাকে শুধুমাত্র দেখেই তার ভিতরে যে পরিবর্তন এসেছে শ্রাবণীকে দীপ্তদের বাড়িতে এত কাছে পেয়েও তার ভিতরে এ আকুল আবেদন আসেনি। তার নিজেকে কন্ট্রোল করতে এক মুহুর্ত সময় লাগেনি। বহুবার সে শ্রাবণীকে কিস করেছে। চেপে জড়িয়ে ধরেছে বুকের সাথে। কিন্তু আজ এত সময় পরেও তার মন আকুলিবিকুলি করছে তিয়াসাকে কাছে পেতে। এই ছাব্বিশ বছর বয়সে প্রথমবার তার জীবনে এমন ঘটনা ঘটলো।
 এক একবার নিজের পরেই নিজের রাগ হচ্ছে। কেন যে ফুলশয্যার রাত্রে সবকিছু বলে দিলো না! এখন নিজের থেকে ওকে কাছে টানা মানেই নিজেকে ওর কাছে হেয় করা। শ্রাবণী তো দিব্যি বিয়ে করে সুখে সংসার করছে। তাহলে ও কেন নিজেকে দাম্পত্য সুখ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবে? 
 ভাবনায় ছেদ পরে পিয়ার ডাকে 
--- আরে নিলয়দা ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী ভাবছো বলো তো? নিচুতে কত লোক এসেছে নতুন জামাই দেখবে বলে। চলো নিচুতে চলো।
--- হ্যাঁ তুমি যাও আমি চেঞ্জ করেই আসছি।

 বসবার ঘরে প্রচুর লোকের সমাগম। সকলের মধ্যমনি হয়ে বসে আছে তিয়াসা। ঘরে ঢুকেই সে প্রথমে তিয়াসাকে লক্ষ্য করে। দু'জনের চোখাচোখি হয়ে যায়। এই তিন চারদিনের মধ্যে অনেকবার নিলয়ের সাথে তিয়াসার দৃষ্টি বিনিময় হয়েছে। কিন্তু আজকে তিয়াসা নিলয়ের দিকে তাকানোর সাথে সাথেই নিলয়ের বুকের ভিতর কে যেন হাতুড়ি পিটিয়ে দিলো। কেন এমন হচ্ছে আজকে এরূপ নিলয় কিছুতেই বুঝতে পারে না। একঘরে থেকেও তো এ কটাদিন এরূপ কোন ফিলিংস ওর আসেনি। আজ কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না কেনো? 

 নিলয়ের জন্য রাখা নিদ্দিষ্ট চেয়ারটিতে সে গিয়ে বসে পরে। নিজেকে নিজেই সংযত করে কিছুতেই সে আর তিয়াসার দিকে তাকাবে না। কিন্তু একটু পরে পরেই নিজের অজান্তেই সে তিয়াসার দিকে তাকিয়ে পড়ছে। তিয়াসাও যেন কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে বলেই মনে হয়। সেও ইচ্ছাকৃত ঘন ঘন নিলয়ের দিকে তাকিয়ে যাচ্ছে। নিলয় মূলত পিয়ার সাথেই কথা বলছে বেশি। আর এদিকে যে যা প্রশ্ন করছে তার উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ নিলয়ের মোবাইলে একটা ফোন আসাতে নিলয় বাইরে বেরিয়ে আসে। পিছন পিছন তিয়াসাও এসে দাঁড়ায়। ফোনে কথা শেষ হলে আবার যেতে গিয়ে দেখে তিয়াসা দাঁড়িয়ে 
--- কিছু বলবে?
-- বলবো বলেই তো এসেছি। তুমি কী ভাবলে কে ফোন করেছে তাই জানতে এসছি?
-- না, আমি তা মিন করিনি 
--- যাক গে যেটা বলতে এসেছিলাম ; মা কিছু জামাকাপড় দিয়ে দিয়েছেন ওগুলো বাবা,মাকে প্রণাম করে দিতে হবে। 
--- পিয়ার জন্য কিছু দেননি মা?
-- হ্যাঁ সেটাও দিয়েছেন। এখন সকলে বেরিয়ে গেলে খেতে বসার আগে এগুলো দিয়ে খেতে বসবে।
-- ওরে বাবা! এখুনি আবার খেতে বসতে হবে?
 নিলয়ের বলার ভঙ্গিমাতে তিয়াসা হেসে দিয়ে ভিতরে চলে গেলো।

  শ্বশুর,শ্বাশুড়ীকে প্রণামী দেওয়ার পর পিয়ার প্যাকেটটা নিয়ে নিলয় তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
-- আগে প্রণাম চাই তারপর জিনিস দেবো 
 সঙ্গে সঙ্গে পিয়া ঢিপ হয়ে একটা প্রণাম করেই হাত পাতে তার প্রাপ্য নেওয়ার জন্য। নিলয়ের কান্ড দেখে সবাই হাসতে থাকে। নিলয় তার শ্যালিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,"আশীর্বাদ করি যেন আমার মত একটা হ্যান্ডসাম বর কপালে যোঠে। 
--- ভেবো না যাকে পছন্দ করে রেখেছি সে তোমার থেকেও হ্যান্ডসাম।
 বলেই পিয়া হাসতে শুরু করে দেয়। নিলয় চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে বলে
-- এ তো একদম ঝুনো নারকেল দেখছি
  পিয়া হাসতে হাসতে নিজের প্যাকেটটা খুলতে থাকে। এক একটা জিনিষ বের করে আর কখনো চোখের সামনে আবার কখনো বা গায়ের উপর ধরে "ওয়ও" করে চেঁচিয়ে উঠছে। নিলয় মনেমনে ভাবে দেখতেই মেয়েটা বড় হয়েছে এত শিশুদের মত সরল।

  টেবিলের খাবার দেখে মনেহচ্ছে ফাইবস্টার হোটেলে খেতে হয়েছে। হরেক রকম পদ দিয়ে সাজানো টেবিল। নিলয় চেয়ারে বসেই বলে উঠলো,
--- এত খাবার কী একদিনে খাওয়া যায়। এখন তো যাওয়া আসা লেগেই থাকবে। অল্প পদ হলে তাড়িয়ে তাড়িয়ে তার টেস্ট নেওয়া যায়। এখন এত সব খাবার খেলে এন্টাসিডেও কাজ হবে না ।
 নিলয়ের কথা শুনে শ্বশুরমশাই বললেন,
--- জামাই বাড়িতে আসলে শ্বাশুড়ীরা ভাবেন কিভাবে আর কত রকম রান্না করে তাদের খেতে দেওয়া যায়। পদ যত বাড়বে জামাই আপ্যায়ন তত বেশি হবে। জামাইয়ের যে কী হাল হয় সে ভুক্তভোগীরা ছাড়া বোঝে না।
  তন্দ্রা চোখ বড় বড় করে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
--- উল্টোপাল্টা কথা বলা আবার শুরু হল তোমার? এবার খেতে দাও ওদের।
--- তোমার কী মনেহচ্ছে গিন্নি আমি ওদের হাত চেপে ধরে রেখেছি?
--- তুমি দয়া করে এবার থামো। নতুন জামাইয়ের সামনে যা মুখে আসছে তাই বলছে।
 আসা থেকে নিলয় শ্বশুর, শ্বাশুড়ীর এই কথোপকথন বেশ উপভোগ করছে।সে হাসতে হাসতে বললো,
--- আমার কিন্তু বেশ ভালো লাগছে বাবার এই কথাগুলো।
 সবাই একসাথে হেসে উঠলো। নিলয়ের পাশের চেয়ারেই তিয়াসা বসেছিল। নিলয় খেতে খেতে তার মুখের দিকে না তাকিয়ে তার হাতের দিকে তাকিয়ে থাকছে। শ্বাশুড়ীর খাওয়ার জন্য জোরাজুরিতে একবার তিয়াসা বলে ওঠে,
-- মা,এত জোর কোরো না। আছি তো আর একদিন। শেষে হজমে গন্ডগোল হলে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না।
 পিয়া দিদির কথা শুনে তার নিলয়দার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।
 খাওয়া শেষ করে তিয়াসা উঠে যাওয়ার সময় নাইটিতে বেঁধে পরে গিয়ে ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে এঁটো হাতে নিলয় তাকে ধরতে গেলেও সামলাতে পারে না। ধপ করে তিয়াসা মেঝেতে পরে যায়। ছুটে গিয়ে নিলয় বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে তাকে মেঝে থেকে তুলতে গিয়ে দেখে তিয়াসা দাঁড়াতেই পারছে না। দুই হাতে তাকে সকলের সামনেই কোলে তুলে নেয়। তিয়াসা একদৃষ্টে নিলয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। পিয়া বলে ওঠে,
-- দিদি তুই নিলয়দার গলাটা জড়িয়ে ধর। তাহলে নিতে সুবিধা হবে। নিলয়দা দিদিকে তুমি বাবার খাটে শুইয়ে দাও। নিলয় তিয়াসাকে নিয়ে গিয়ে শ্বাশুড়ীর খাটে শুইয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি পায়ের কাছ থেকে নাইটিটা তুলে দেখতে যায় কোথায় লেগেছে। তিয়াসা বাঁধা দিয়ে বলে,
--- গোড়ালিতে লেগেছে।মনেহচ্ছে মচকে গেছে।
 ততক্ষনে পিয়া ফ্রীজ থেকে বরফ নিয়ে এসে দিদির গোড়ালিতে দিতে গেলে নিলয় বলে ,
--- পিয়া আমাকে দাও আমি দিয়ে দিচ্ছি। 
তিয়াসা একমনে নিলয়ের উৎকণ্ঠা দেখে চলেছে। শ্বশুরমশাই চুপচাপ খাটে বসা আর শ্বাশুড়ী মা কোনরকমে খাবারগুলো ঢেকে রেখে এসে বললেন,
-- কী কাণ্ডটা বাঁধলি বলতো? হ্যাগো ডাক্তারকে ফোন করবে?
 নিলয় বলে উঠলো,
-- আমার মনেহয় ডাক্তার লাগবে না। আপনি একটু চুন,হলুদ গরম করে নিয়ে আসুন।
 শ্বাশুড়ি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলেন রান্নাঘরে। যাওয়ার আগে পিয়াকে বললেন,
-- রমলামাসি তো পান খায়। তুই ছুটে গিয়ে তার কাছ থেকে একটু চুন নিয়ে আয়।

 গরম চুন,হলুদের বাটিটা শ্বাশুড়ীর হাত থেকে নিয়ে নিলয় অতি যত্ন সহকারে তিয়াসার পায়ে লাগাতে লাগলো। শ্বশুর,শ্বাশুড়ি দু'জনেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। পিয়া দিদির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
-- দিদি নিলয়দার অবস্থা দেখে মনেহচ্ছে ব্যাথাটা তোর পায়ে লাগেনি ওটা লেগেছে নিলয়দার বুকে।
 তিয়াসা বোনের কথা শুনে বলে উঠলো,
--- সে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
 নিলয় গভীর দৃষ্টি নিয়ে তিয়াসার দিকে তাকালো। সে দৃষ্টিতে এমন কিছু তিয়াসা দেখলো যে সে মুখ ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য হল। কারণ তখন তার বুকের ভিতর ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে।

 ক্রমশ 

No comments:

Post a Comment