বিশাখার বিয়ের একবছরের মাথায় সুমিতের বিয়ে হয় দীপালীর সাথে।বোনের বিয়েতে সুমিত আসতে পারেনি।বিয়ের সময় এসে সুমিত মাসখানেক ছিল।তারপর দীপালিকে নিয়ে সে সুইডেন চলে যায়।বৃদ্ধ বাবা,মা গ্রামের বাড়িতেই থেকে যান।তবে সুমিত তাদের সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।কিন্তু তারা কেউই রাজি হননি।এমনকি সুমিত বিয়ের পরে প্রথম যেবার টাকা পাঠায় সুমিতের বাবা সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে ফোন করে জানিয়ে দেন
--- তুমি বোনের বিয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছো।সেখানে আমার কোন খরচই হয়নি।সুতরাং আমার যা ক্যাশ ছিল তাতে হাত পড়েনি।এখন আমি ভালোই পেনশন পাই।তোমার দিদি এবং বোন উভয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।তারা দুজনেই চাকরি করে।ভালোই আছে তারা তাদের শ্বশুরবাড়িতে।প্রত্যেক বাবা মায়ের স্বপ্ন থাকে তাদের ছেলেমেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়ার এবং পরবর্তীতে তাদের সংসারী করার।আমরা সে দায়িত্ব পালন করেছি।আমরা সুযোগ দিয়েছি তোমরা তোমাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে সে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছো।তোমাদের কারো কাছে আমাদের কোন চাহিদা নেই।তোমরা ভালো থেকো এটাই শুধু একমাত্র কামনা আমাদের।বছরে একবার করে দেশে এসো তুমি এটাই শুধু চাই।
বাবা মা যতদিন বেঁচে ছিলেন সুমিত বছরে একবার করে দেশে এসেছে বাবার কথা রাখতে।দুই ছেলেমেয়ের বাবা সে।পুরো দুনিয়াটা আজ মানুষের হাতের মুঠোয়।রোজই সুমিত তার দিদি ও বোনের সাথে কথা বলে।বিশাখা নার্সের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন একটা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা।স্বামী,স্ত্রী একই স্কুলে আছে।
বহুদিন পর সুমিত তার এক বন্ধুর শেয়ার কৃত একটি পোষ্ট ফেসবুকে দেখে।কবিতাটা তার খুবই ভালো লাগে।কবির নামটা দেখে বুকের ভিতরে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে।সার্চ করে ঢুকে পড়ে সুচন্দা ঘোষের প্রোফাইলে।স্কোল করতে থাকে।পেয়ে যায় অল্প বয়সী সুচন্দার একটি ছবি।বুকটার ভিতর ধরাস করে ওঠে।সেদিনের সন্ধ্যার স্মৃতি যেন আবার নূতন করে সামনে আসে। শরীরের ভিতর সেই সেদিনের মত অদ্ভুত এক শিহরণ।ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়।কিছুক্ষনের মধ্যেই ফোন অপর প্রান্ত হতে।হাজার হাজার মাইল দূরত্ব থেকে ফোনের দুই প্রান্তে দুটি মানুষ 'হ্যালো' বলেই নীরব হয়ে যায় বেশ কিছুক্ষন। কারো মুখেই কোন কথা নেই।
জীবনে এমন কোন কোন সময় আসে যখন সেই জীবন থেকে নূতন করে আর কিছু চাওয়া বা পাওয়ার থাকে না।সুমিত কিংবা সুচন্দারও সেই সময়টা আগত।তবুও এই বয়সে এসে দুজনেই শুধু একবার দুজনকে চোখে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান।
সুচন্দারও একছেলে,একমেয়ে।মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে,ছেলে ভালো চাকরি করছে।সুচন্দার স্বামী বছর চারেক হল তাদের ছেড়ে চলে গেছে ঘুমের মধ্যেই।লেখালেখি,ছাদ বাগান পরিচর্যা,ছোটখাটো নানান এনজিও সংস্থার সাথে জড়িত থেকে সময় কাটিয়ে দেয় সে।কিন্তু এতগুলো বছর ধরে দিনান্তে একবার হলেও তার সুমিতের কথা মনেপড়ে।পৃথিবীর আর এক প্রান্তে বসে সুমিতেরও ঠিক তাই।
সুমিত ও সুচন্দার রোজ দুবার করে ফোনে কথা বলা যেন একটা নেশার মত দাঁড়িয়ে গেলো।কথা যেন আর শেষই হতে চায়না।সেখানে থাকে অতীতের কথায় বেশি।এই বয়সে এসে দুজনের জীবনে কিছুটা সময় হলেও যে একাকিত্ব নেমে এসেছিলো - তাদের এই কথা সেই একাকিত্বকে সম্পূর্ণভাবে তাদের জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।কথা শেষ হওয়ার পর কথার রেশটাই থেকে যায় বাকি সময়টা।কিন্তু কেউ কারো কাছেই কোন কিছুর প্রত্যাশা না করেই দুজনেই রোজ একবার করে ডুব দেয় সেই ফেলে আসা অতীতে।
তারা ঠিক করে নূতন করে তাদের যখন আবার পরিচয় হয়েছে জীবনে শেষবারের মত একবার তারা যেভাবেই হোক দেখা করবে।কারণ বাবার মৃত্যুর পর সুমিত আর দেশে ফেরেনি বেশ কয়েক বছর।সুমিত আসবে।কিন্তু সে কবে?প্রতীক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয় নূতন করে দুজনের।
শেষ
#টপব্লগকনটেস্ট
No comments:
Post a Comment