বিট্রে
মনের কথা যদি চোখ পড়ে বোঝা যেত তবে জীবনটা অন্য রকম হত - আমার হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে আমি ভালোবেসেছিলাম সৌমেনকে।মনেমনে ভেবেছিলাম সৌমেনও বুঝি আমায় ভালোবাসে।কলেজে পড়াকালীন সময়ে সৌমেন ক্লাসে আমার পাশেই বসতো সবসময়।ক্লাসের অন্যান্যরাও জানতো আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আমরা কেউ মুখ ফুটে কিন্তু কাউকে ভালোবাসার কথা কোনদিন বলিনি।
ভালোলাগা বা ভালোবাসার সব কথা সব সময় মুখ ফুটে সবাইকে বলা হয়ে ওঠে না। অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলেন মনের কথায় নাকি চোখে ফুটে ওঠে।আমি আমার জীবন দিয়ে বুঝেছি সবকিছু সময় থাকতে মুখেই বলে দেওয়া উচিত।সবাই সবকিছু বুঝতে পারে না,সকলের মধ্যে অন্যের অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা থাকে না।তাই জীবনের বড় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় এলে অন্যের বোঝার ক্ষমতার উপর নির্ভর না করে মুখেই বলে দেওয়া উচিত।
কলেজে একসাথে চার বছর পড়ার সুবাদে কারণে-অকারণে দুজনে একসাথে এদিক ওদিক ঘোরার পর শেষ বর্ষে এসে হঠাৎ একদিন সৌমেন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আমায় বলল,
--- আমাকে একটু সাহায্য করবি?
--- হ্যাঁ বল কি করতে হবে?
--- সেদিন নবীন বরণ উৎসবে যে মেয়েটি উদ্বোধনী সঙ্গীত গেয়েছিল ওর সম্পর্কে একটু খোঁজ-খবর চাই ।
--- কেন বলতো?
এরপর সৌমেন যে উত্তরটা দিলো আমি যেন নিজের কোনকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে,চোখে তখন সবকিছু অন্ধকার দেখছি।সৌমেন হাসতে হাসতে আমায় বললো,
--- আসলে ওই মেয়েটাকে দেখে আমার অবস্থা হয়েছে Love at first sight. আমি না মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছি।
আমি হা করে সৌমেনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।আর মাথার মধ্যে নানান প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।তাহলে এতদিন আমার সাথে যেটা করলো সেটা ভালোবাসা নয়?আমার সাথে এই সম্পর্কটার নাম তাহলে কি শুধুই বন্ধুত্ব ছিল? কথায় কথায় হাত ধরা,একসাথে অনেকটা সময় কাটানো,দুজনের মধ্যে সব রকম কথা শেয়ার করা - এগুলো কি ছিল?এগুলো তবে ভালোবাসা নয়?নির্মল বন্ধুত্ব নাকি একটা নারী সঙ্গে শুধুই সময় কাটানো?
আমাকে থ হয়ে বসে থাকতে দেখে সৌমেন আমার হাত দুটি ধরে কাতর স্বরে বললো,
--- দেখ তোকে ছাড়া আর কাকেই বা মনের কথা বলবো।মেয়েটাকে সত্যিই আমার খুব ভালো লেগেছে সেদিন।
সৌমেনের কাছ থেকে হাতটা সরিয়ে নিলাম।সৌমেন বুঝতে পেরে বললো,
--- কি হল?হাতটা সরিয়ে নিলি?তারমানে তুই পারবি না?
আমি নিজেকে অদ্ভুতভাবে সামলে নিয়ে বললাম,
--- এই সাধারণ কথাটা বলতে হাত ধরার কি প্রয়োজন ছিল?আসলে তোরা ছেলেরা মেয়েদের কারণে অকারণে একটু টার্চ করতেই ভালবাসিস।
সৌমেন স্বপ্নেও ভাবেনি আমি এরকম একটা উত্তর দেবো।সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল।আমি তাকে কথাটা বলার সুযোগ না দিয়েই বললাম,
--- আমি চেষ্টা করবো ওর ঠিকুজি-কুষ্ঠী জেনে তোকে জানাতে।তবে একটা কথা তোকে বলি আগে নিজের মনকে প্রশ্ন করিস সত্যিই তুই ওর প্রেমে পড়েছিস কিনা নাকি সময় কাটানোর জন্য সঙ্গী পরিবর্তন করতে চাইছিস?
--- মানে?
আমি সে কথার কোন উত্তর না দিয়ে সৌমেনের কাছ থেকে উঠে চলে আসি।বলা ভালো আর বেশিক্ষন সৌমেনের সামনে বসে থাকলে চোখটা সৌমেনের মতনই বিট্রে করতো।
No comments:
Post a Comment