বামুন পুকুরে চাঁদ কাজীর সমাধি
কলকাতা থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে নদীয়া জেলার মায়াপুর ইস্কন মন্দির রেখে বামনপুকুর নামক স্থানে চাঁদ কাজীর সমাধি ক্ষেত্র।সেখানে একটি কাঠালী চাপা গাছ আছে যার বয়স পাঁচশ বছর।এই গাছের নিচে চাঁদ কাজীর সমাধি। চাঁদ কাজীর আসল নাম ছিল মৌলনা সিরাজ উদ্দীন।
গত ডিসেম্বর মাসে মায়াপুর ভ্রমণ কালে আমরা সকলে উপস্থিত হই এই বামুন পুকুরে চাঁদ কাজীর সমাধি দেখতে।সেখানে পৌঁছে যা দেখি এবং যা শুনি তাতে প্রথমে বিস্ময় পরে হতভম্ব হয়ে পড়ি।
মায়াপুর ভ্রমণকালে একটি জায়গায় শ্রী চৈতন্যদেবের সাথে চাঁদ কাজীর কিছু মূর্তি যা মাটির তৈরী পুতুল দেখি এবং তার সাথে স্বল্প কথায় কিছু ইতিহাস লেখা পড়ি।বিস্মিত হই!কিন্তু তখনো জানতাম না এই বিস্ময়ের মাত্রা আরো সুদূর প্রসারিত।
টো টো থেকে নেমে আমরা এগিয়ে যাই বামুন পুকুর চাঁদ কাজীর সমাধি ক্ষেত্রের দিকে।খুব বড় একটি লোহার গেট পার হয়ে গেটের থেকে একটু দূরে জুতো খুলে অপার বিস্ময় নিয়ে এগোতে থাকি।জানতে পারি আগে সমাধি ক্ষেত্রটি মাটির সমান উচ্চতায় থাকলেও এখন কিন্তু সমাধি ক্ষেত্রটির চারিপাশে ইটের গাঁথনি করে তাকে উচুঁ করা হয়েছে। কাঠালী চাপা এবং একটি নিমগাছ দুটি গাছের গোড়ায় ইটের গাঁথনিই ওই ভিতের মধ্যে আছে।ওখানে উপস্থিত এক ভদ্রলোকের (যাকে গাইড বলাই শ্রেয়) মাধ্যমে জানতে পারি --
কংসকে হত্যা করার সময় তিনি যখন কৃষ্ণের কাছে কাতর প্রার্থণা জানাচ্ছিলেন তার প্রাণ ভিক্ষার জন্য,তখন কৃষ্ণ তাকে বলেছিলেন যে তার পাপের ঘরা পূর্ণ হয়ে গেছে।তাকে এই দেহ ত্যাগ করতেই হবে।তবে কলিযুগে তিনি আবার অবতীর্ণ হবেন এই ধরাধামে।তখন তিনিই আবার তাকে পরজন্মে উদ্ধার করবেন।তবে তিনি পরবর্তী জীবনে বিধর্মী হয়ে জন্মাবেন।সেই সময়ে তার মৃত্যুর পর তিনি একটি কাঠালী চাপা গাছ স্বহাতে তার সমাধির উপর লাগাবেন।এবং এই কাঠালী চাপা গাছটি যুগ যুগ ধরে সর্বদা ফুল ফুটবে এবং সেই ফুল ঠিক তার সমাধির উপরেই পড়বে।এটাই তার প্রতি ভগবানের আশীর্বাদ।
পরবর্তীতে নবদ্বীপে শ্রী চৈতন্যের নাম সংকীর্তনের ঘোর বিরোধী ছিলেন জমিদারএই চাঁদ কাজী।শ্রী চৈতন্য যখন তার বিশাল সংকীর্তন বাহিনী নিয়ে নবদ্বীপ থেকে বামুন পুকুরের দিকে যাত্রা করেন তখন চাঁদ কাজী আদেশ জারি করেন তা বন্ধের জন্য।কিন্তু চৈতন্যদেব সে কথা অগ্রাহ্য করেই এগিয়ে যেতে থাকেন।
এর ঠিক আগের রাতে দৈব্য শক্তির বলে চাঁদ কাজী তার পূর্বজন্মের সমস্ত ঘটনা স্বপ্নে দর্শন করেন।চৈতন্যদেব যখন তার বাড়ি লাগোয়া রাস্তায় এসে পড়েন তখন চাঁদ কাজী তার প্রাসাদের ভিতর ভাবে বিহ্বল হয়ে অস্থির হয়ে পড়েন।কোন রকমেই তিনি নিজেকে আর ঘরে বন্দি করে রাখতে পারেন না।দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন এবং শ্রী চৈতন্যদেবের পদতলে এসে আছড়ে পড়েন। চৈতন্যদেব তাকে দুহাতে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেন।নাম সংকীর্তন শুনতে শুনতে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান যে জ্ঞান তার আর ফেরে না।তখন তাকে এই বামুনপুকুরেই সমাধিস্থ করা হয়। চৈতন্যদেব নিজ হাতে ওই সমাধির উপরে একটি কাঠালী চাপা গাছ রোপণ করেন।
পাঁচশ বছর আগে যে কাঠালী চাপা গাছটি রোপণ করা হয়েছে আজও তা জীবিত। বারো মাস এই গাছটিতে একটি হলেও ফুল ফুটবেই।গাছটির শিকড় মাটির উপরে এতটা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত দেখলে মনেহয় খুব বড় কোন কচ্ছপ তার শুরটি ভিতরে ঢুকিয়ে আছে। ডালগুলো যাতে ভেঙ্গে না পরে তার জন্য ইটের গাঁথনি করে সেগুলিকে তার উপর রাখা হয়েছে।
সত্যি মিথ্যা জানিনা।তবে এসব শুনলে গায়ের কাটা শিউরে উঠবেই।আমারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।ভদ্রলোক যখন বলছিলেন পুরোটাই ভিডিও করেছিলাম।শেষে সেই কথাটাই বলবো
" বিশ্বাসে মিলায় বস্তু,তর্কে বহুদূর "।