Wednesday, July 4, 2018


উত্তর খুঁজি
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

মানুষের এই ক্ষুদ্র জীবনে স্মৃতির খাতায় কত কথা জমা থাকে।তার কিছু আনন্দের আর কিছুটা বা বেদনার।আনন্দ বা বেদনা যায় হোকনা কেন কিছু কিছু ঘটনা মানুষ সহজেই ভুলে যায়।আর কিছু স্মৃতি আছে যা কখনোই ভুলা যায়না।সেইসব স্মৃতির খাতায় ময়লা জমলেও অক্ষরগুলি স্পষ্ট হয়ে থাকে সারাজীবন।
             এখন আমার বয়স প্রায় বাষট্টি বছর।আজও সেসব কথা ভাবলে আমি শিউরে উঠি।বাবা ছিলেন কলেজের প্রফেসার।আমাকে ও মাকে নিয়ে শহরে একটি ঘরভাড়া নিয়ে থাকতেন।আমার স্কুল ও বাবার কলেজ ছুটি  পড়লেই তিনজনে মিলে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতাম।মনেপড়ে যেদিন গ্রামের বাড়িতে যাবো বলে ঠিক থাকতো তার আগের রাতে সারাটা রাত ঘুমই আসতোনা।কখন সকাল হবে আর বাড়ি যাবো এই ভাবনায় সারাটা রাত প্রায় জেগেই কাটাতাম।শহরে যে বাড়িটিতে আমরা ভাড়া থাকতাম সেটিকে বলতাম বাসা আর বাড়ি বলতে আমরা গ্রামের বরীতীকেই বুঝতাম।বাড়িতে যাওয়ার সময় আমি ট্রেনের কামরার ভিতরে বরাবর জানলার কাছেই বসতাম।আম,কাঁঠালের গাছ,ঝোপঝাড়-বাঁশঝাড় পেরিয়ে ট্রেন ছুটছে আর আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে কটা স্টেশন বাকি তার হিসাব কষে চলেছি।
              ট্রেন নিদিষ্ট স্টেশনে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই দশ মিনিটের রাস্তা আমি দৌড়ে পাঁচ মিনিটেই পৌঁছে যেতাম।লালুর বিল,চৌধুরীদের বাগান,পালবাড়ির পুকুর সব ছড়িয়ে দৌড়াচ্ছি আর মনেহচ্ছে ওদের ভালোবাসার ছোঁয়া পাচ্ছি।ওরা যেন আমার আসার অপেক্ষাতেই ছিলো। আমাদের বাড়িতে ঢোকার মুখেই রাস্তার পাশেই 'মনসাতলা'।শ্রাবনমাসের শেষ দিনে এখানে খুব বড় করে পূজা হয়।পুরোপাড়া এই পূজায় অংশগ্রহন করে।ছোটখাটো দোকানপাটও বসে।বেতের বড় বড় ঝুড়ি যাকে গ্রাম্যভাষায় ধামা বলে এই সব বড় বেশ কয়েকটা ধামায় ন্যাড়া মাখা হত।প্রচুর নাড়ুও ভাজা হত পূজার দিনে।বলাবাহুল্য সমস্ত খরচ ছিলো আমাদের বাড়ির অথাৎ আমার ঠাকুরদা।এই সব কাজে গ্রামের সকল মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়তেন কিন্তু কোন পারিশ্রমিক তারা নিতেননা। ওই মনসাতলায় দেখেছি সারাদিনের পূজার পর ঠিক সন্ধার দিকে মনসা গাছটার দুপাশ থেকে দুটি কেউটে সাপকে।যারা কলাপাতার উপরে দেওয়া দুধ, কলার উপরে বারকয়েক মুখ রাখতো।ছেলেবেলা এবং বড় হয়েও এ ঘটনার স্বাক্ষী বহুবার থেকেছি।বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করার ফলে পরবর্তীতে জেনেছি সাপ চুষে কিছু খেতে পারেনা।কিন্তু এই অলৌকিক ঘটনার উত্তর আমি বা আমার বাবা এমনকি গ্রামের শিক্ষিত মানুষজন কোনদিন পায়নি।
       রাস্তা থেকে আমাদের বাড়ির মেইন দরজা বেশ খানিকটা দূরে।বাড়ির সীমানায় ঢুকতে গেলে ছোট ছোট বাঁশের তৈরি (যা কঞ্চির ! থেকে একটু মোটা)একটা গেট থাকতো।যাকে গ্রামের ভাষায় বলা হত 'আরকাঠা'।অনেক মোটা পাটের দড়ি দিয়ে এটা তৈরি করা হত।বাঁশগুলিকে পরপর বাঁধা হত ।একটা বাঁশের থেকে আর একটা বাঁশের দূরত্ব থাকতো প্রায় একফুট।এটা চওড়ায় হত প্রায় দশ থেকে বারোফুট।এত বড় করার কারন ছিলো গরুর গাড়িতে করে যখন দূর-দূরান্তের ধান আসতো এটাকে খুলে রাখা হত আর সারিসারি ধান বোঝায় গরুর গাড়ি বাড়ির ভিতরে ঢুকে বড় উঠানে ধান ফেলে বাড়ির পিছনের ছোট উঠান দিয়ে আমাদের জমির অন্য রাস্তা দিয়ে মূল রাস্তায় গাড়িগুলো উঠতো।ছেলেবেলায় সিঁড়ি ভাঙ্গার মত কতবার যে ওই 'আরকাঠা'-বেয়েবেয়ে উপরে উঠতাম তার কোন হিসাব নেই।অবশ্য বড়দের চোখে পড়লে চোখ রাঙ্গানিও খেতে হত।রাস্তার অপরদিকে ছিলো আমাদের বাড়ির বড় পুকুর।এই পুকুরে গ্রামের প্রচুর মানুষ স্নান করতো।মাছ চাষও হত।শীতকালে এই পুকুরের জল থাকতো গরম।তার কারন হিসাবে সকলে বলতো আশেপাশে কোন বড় গাছ না থাকাতে যেহেতু পুরো রোদটা পেত তাই জল গরম থাকে।আমাদের বাড়িতে মূলত তিনটি পুকুর ছিলো।

রাস্তার উপরের পুকুরটাকে বলা হত বড় পুকুর।বাড়ির ভিতরের পুকুরের নাম ছিল ছোট পুকুর।মুলত এই পুকুরে বাড়ির মা,জ্যেঠিমারাই ব্যবহার করতেন।
বাসনমাজা,কাপরকাচা,স্নান করা আর রান্নার জলের জন্য।কিছু মাছ চাষ এখানেও করা হত।আর একটা পুকুর যা বাড়ির শেষ প্রান্তে ছিল তার নাম ছিল
"ভিটের পুকুর"।এই পুকুরে কোন মাছ চাষ করা হতো না।কিন্তু এখানেই পাওয়া যেতো নানান ধরনের মাছ।বিশেষত শিং,মাগুর,কৈ,বড় বড় সরপুঁটি।
বর্ষাকালে যখন নদীনালা ,খাল-বিল সব জল ভর্তি হয়ে যেত তখন সেই সব জায়গায় মাছ সব এই ভিটের পুকুরে এসে জমা হত।লোক দিয়ে সেই সব মাছ মেরে গ্রামের মানুষদের বিলিয়েই তারপর খাওয়া হত।
                  "আড়কাঠা" পার হয়েই কিছুটা এগিয়ে গেলে পড়তো আমার ঠাকুরদার বৈঠকখানা।তারপরেই একটা ডিপ টিউবয়েল।কয়েক মাইল হেঁটে যেয়ে গ্রামের মানুষের খাবার জল আনতে হতো বলে  ঠাকুরদার পরামর্শে আমার বাবা এই  টিউবয়েলটির  ব্যবস্থা করেছিলেন।বিকেল হলেই গ্রাম্য বধূরা আলতাপায়ে,বেশ বড় করে সিঁদুরের টিপ পড়ে তেল চপচপে মাথায় খোঁপা করে কল থেকে যে জল নিতে আসতেন দেখলে মনে হতো এ বাড়ি আমাদের স্বর্গপুরী। বাড়ির ঘরগুলির চারপাশেই ছিল উঠান।আর এই উঠানগুলিতে শীতকালে আঁটি বাঁধা বাঁধা ধানের বোঝা থাকতো।দূর থেকে দৌড়ে এসে এই আঁটি বাঁধা ধানের বোঝা গুলির উপরে উঠার বৃথায় চেষ্টা করতাম।কারন তার আগেই ধানের আঁটির কোনো একটি খাপে পা বেঁধে ধপাস।সারা শরীর খুব চুলকাতো ঐ ধানগুলি গায়ে লেগে।কিন্তুু কোন ভ্রূক্ষেপ ছিলনা।ঘরের পাশেই ছিল বিরাট বড় একটা লিচু গাছ ও ফুলের বাগান।বাদুর ও নানান ধরণের পাখিতে পাকা লিচু খেয়ে যেতো বলে একটা বড় তেলের টিনের ভিতর মোটা এক কাঠি কি অদ্ভুতভাবে বেঁধে বিশাল বড় এক পাঁটের দড়ি ঐ টিনের ভিতর থেকে টেনে বাড়ির বারান্দায় কিছু একটার সাথে বেঁধে রাখা হত।আর বাড়ির লোকেরা ঘুরতে ফিরতে ঐ দড়িটা ধরে টান দিতে টিনটা খুব জোরে  জোড়ে বেজে উঠতো।তাতেই বাদুর এবং পাখিরা উড়ে চলে যেতো।
            ঘটনাগুলি মনে হয় এইতো সেদিনের কথা। তারপর আস্তে আস্তে বড় হলাম।চাকরি পেলাম।পদোন্নতি হতে হতে একসময়ে আমার এই "ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়গুলি" ছেড়ে বিদেশে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে বাধ্য হলাম।ততদিনে ঠাকুরদা,ঠাকুমা,,জ্যেঠিমা মারা গেছেন।বাবার একটাই কথা আমাদের কথা ভেবে নিজের ভবিষ্যৎ কে জলাঞ্জলি দিয়োনা।বাবাও রিটায়ার করে মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে এসেছেন।ততদিনে গ্রামের হাল-হকিকত অনেক পালটেছে।গ্রামে ইলেকট্রিক এসেছে, যে কাঁচা রাস্তা ধরে আমি ট্রেন থেকে ছুটে বাড়িতে ঢুকতাম তা এখন পাকা হয়েছে।ঐ রাস্তা দিয়ে এখন বাস অটো চলাচল করে।গত তিন বছরে দুবার আমি গ্রামের বাড়িতে এসছি।সুইডেনে থাকাকালীন সময়ে আমি প্রবাসী এক বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করি।মা,বাবাকে আসার কথা বললে বাবা জানান,
  ..."সংসার তুমি করবে,আজীবন তাকে নিয়ে তুমি থাকবে।তোমার যদি মনে হয়ে মেয়েটি ভালো তা হলে আমাদের মত রইলো তুমি বিয়ে করো।আমাদের আশীর্বাদ সব সময় তোমার সাথে থাকবে"।
                 দুবছর হয়েছে বিয়ে করেছি।অনেক কষ্টে একমাসের ছুটি বন্দোবস্ত করেছি।অনেকদিন বাবা মা কে দেখিনা ।আগের মতো রোজ আর ফোন ও
করা হয়ে ওঠে না।এবার ইচ্ছে অঞ্জলিকে নিয়ে বাড়িতে যাব।দিন সাতেক আগেই বাবা মায়ের সাথে কথা হয়েছে।চমকে দেবো বলেই বাড়ি যাওয়ার কথাটা
গোপন করেই গেছি।
             অনেকদিন পর দেশে ফিরে মনটা বেশ ফুরফুরে। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা হাওড়া  স্টেশন। ট্রেন থেকে নেমে আগে যেপথটুকু দৌড়ে যেতাম এখন সেই পথ পেড়িয়ে আরও দূরে যাওয়ার জন্য সরাসরি অটো দাঁড়িয়ে।ব্যাগ-পত্র প্রচুর ছিল।একটা অটো ভাড়া করে নিলাম।অটো এসে মনসা গাছ তলায় দাঁড়ালো।দুই হাত জোড় করে প্রণাম করলাম।আমার দেখা দেখি অঞ্জলি ও প্রণাম করে কারণ এই দুই বছরে আমাদের বাড়ির খুঁটিনাটি সকল কথা অঞ্জলির  সাথে শেয়ার করেছি।অটো মালিক কে অনুরোধ করলাম আমাদের যাতে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায় ।আরকাঠা বহুদিন আগেই ভেঙ্গে চূড়ে গেছে তা গতবার এসেই দেখেছি।ধানী জমি-জামা বাবা একটু একটু করে বিক্রি করে ব্যাঙ্কে আমার নামেই টাকা গচ্ছিত রেখেছেন।এসব বাবা ফোনেই আমায় জানিয়েছেন।
                 উঠোনে এসে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ডাকলাম মা, ও বাবা আ আ ...
হন্ত দন্ত হয়ে দুজনে বেরিয়ে এলেন।এসেই মা হাসতে হাসতে বললেন,
 ...ওমা তোরা এসে গেছিস?
 ...এমনভাবে বলছো যেন আগে থাকতেই জানতে আমরা আসব!।
 ...ওমা  জানব না কেন?আমরা যে তোর মা,বাবা। সন্তানের সব খবর যে মা বাবার কাছে আগেই আসে।
     অঞ্জলি এগিয়ে গিয়ে বাবা,মাকে প্রণাম করে।তা দেখে বাবা খুব খুশি হয়ে বলে ওঠেন,
 ...তোমার তো বিদেশেই জন্ম শুনেছি মা।তা এখনো এসব তোমাদের বাড়িতে চল আছে? রবিনের পরে আমার বিশ্বাস ছিলো।ও যে মেয়েকে পছন্দ করেছে সে আমাদের পরিবারের উপযুক্ত বউ হবেই। ওগো শুনছো?।যে জন্য অপেক্ষায় আছো সেটা করো।তোমার গৃহলক্ষ্মী কে বরন করে ঘরে তোলো।মা,বাবা বাইরে দাঁড়িয়েই অঞ্জলিকে ধান,দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করে ঘরে নিয়ে যান।আমিও ব্যাগ গুলি নিয়ে পিছন পিছন ঘরে ঢুকি।
     মা তার হাতের মোটা নোয়া বাঁধানোটা খুলে অঞ্জলি কে পড়াতে গেলে আমি বাঁধা দিই-
     ...মা এটা কি করছো? এটা তোমার হাতেই থাক।বাবা এখনো বেঁচে রয়েছেন,বাবার অমঙ্গল হবে।
বাবা বলে উঠলেন,
 ... আর মঙ্গল অমঙ্গল।যা হবার তাতো হয়েই গেছে।তুই আর বাঁধা দিস না রবি।তোর মার যা ইচ্ছা করতে দে।বউমা আমাদের কতো আদরের সবই তো
তোদের।হাতের বাঁধানো নোয়াটি অঞ্জলি কে পড়িয়ে কথা বলতে বলতেই আলমারি খুলে মা গয়নার বাক্স টা বের করে অঞ্জলির হাতে দেন।
আমি বলে উঠি।সব এখুনি কেনো করতে হবে মা?একমাস থাকবো।এসব পরে করলেও চলবে।আমার কথার কোনো উত্তর মা বাবা দেন না।মা শুধু বলেন,
 ... অনেক রাত হলো।তোরা হাত মুখ ধুয়ে নে।খেয়ে দেয়ে গল্প করা যাবে।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলো।কিছুক্ষণ বসে আড্ডা মারলাম সকলে।বাবা একটা টিনের বাক্সো দেখিয়ে বললেন,
  ...রবি সময় মতো এটা খুলে দেখিস।নে এবার ঘুমিয়ে পর তোরা।আমরাও যাই।কয়েকটা দিন তোর একটু পরিশ্রম যাবে বাবা।এমনিতে সব ঠিকই আছে।যেটুকু না করলে নয় সেটুকুই করিস।
 ... কি কাজ করতে হবে বাবা?তুমি বলো আমি ঠিক-ঠাক সব করে নেবো বাবা।
  ...সে আমি জানি বাবা।নে এবার তোরা শুয়ে পড়।বড় শান্তি পেলাম আজ।
পরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি অঞ্জলি অকাতরে ঘুমাচ্ছে।মা,বাবার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ বন্ধ বলে মনেহল ।তারমানে তারাও ঘুমাচ্ছেন।আমি দাঁত ব্রাশ করে বেরিয়ে পড়লাম।এতদিন পরে বাড়িতে ফিরে কি যে এক আনন্দ অনুভব করছি বোঝাতে পারবনা।রাস্তটা দিয়ে হাঁটছি তো হাঁটছি। হটাৎ দেখা নারায়ণ খুঁড়োর সাথে।
 ... কেমন আছো খুঁড়ো?
 ...কে?গলাটা খুব চেনা চেনা লাগছে।
চশমাটা ভালো করে হাতে ধরে নিয়ে মুখের কাছে মুখটা নিয়ে নারায়ণ চক্রবর্তী বললেন,
...রবি না?তা খবর পেয়েই এলে বুঝি?কখন এলে?
 ... কি খবর খুঁড়ো?
     কথাটা খুঁড়ো শুনতে পাননি বুঝতে পারলাম,তার পরবর্তী কথা শুনে।
 ... আজকালকার ছেলে তোমরা।তা এসেই যখন পড়েছো নিয়মকানুন গুলো তো মানতে হবে বাপু।
 ...আমি কিছুই না বুঝে খুঁড়োর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। খুঁড়ো আবার শুরু করলেন,
 ...তুমি বাড়িতে যাও।আমি সব ব্যবস্থা  করছি।কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না আমরা। তোমার বাবা,মা বড়পুকুর থেকে স্নান করে রাস্তা পার হচ্ছিলেন।তোমার বাবা রাস্তা পার হয়ে মনসা গাছতলায় দাঁড়িয়ে প্রণাম করছিলেন।তোমার মা হঠাৎ ভিজে কাপড়ে মা বেঁধে রাস্তার উপরে পরে যান।শব্দ হওয়াতে তোমার বাবা সেটা দেখতে পেয়ে দ্রুত এগিয়ে যান তুলতে।আমাদের খগেন তোমারই বয়সই মনে আছে নিশ্চয়ই সে তখন মাঠ থেকে
ফিরছিলো।হঠাৎ করে একটা বাস দ্রুত গতিতেই আসছিলো। চেষ্টা করেছিলো ব্রেক কষতে কিন্তু পারেনি।দুজনকেই জায়গায় পিষে দিয়ে চলে যায়।কিন্তু রবি এত তাড়াতাড়ি তুমি আসলে কি করে বাবা?
আমি তখন বাকরুদ্ধ।কি ভাবে কথা বলতে হয় সেটাই ভুলে গেছি।কিন্তু গতকাল রাতে...
কথা শেষ হওয়ার আগেই খুঁড়ো বললেন,
  ...ও গতকাল রাতে এসেছ? ঘটনাটা তো পরশু দিন ঘটেছে।সে যাই হোক।এসে তো পড়েছো।এবার কাজটা ভালো ভাবে করে নাও।
আর একমুহূর্ত সেখানে সময় নষ্ট না করে ছেলেবেলার মতো দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি ঢুকেই দেখি অঞ্জলি উঠে দাঁত ব্রাশ করছে।আমি তার দিকে একবার তাকিয়েই চলে গেলাম মা বাবার ঘরের কাছে।বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিলাম।দরজা ভেজানো ছিলো। উদভ্রান্তের মতো ঘরে ঢুকে মা,বাবা বলে চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম।অনেক পুরনো বাড়ি।কিছু কিছু জাগায়ট ইট বেরিয়ে গেছে। তখন আমার মনে হচ্ছে নিয়তি যেনো দাঁত বার করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।খাটের উপর মা ও বাবার আটপৌড়ে জামাকাপড় রয়েছে।স্নান করে এসে পড়বেন বলে হয়তো রেখে গেছিলেন।আমার চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ শুনে অঞ্জলি তড়িঘড়ি ঘরে ঢুকে বললো,"কি হলো  এতো চেচাচ্ছো কেনো?বাবা,মা কোথায়?আরে তুমি এত কাঁদছো কেনো?
আমি সব কিছু অঞ্জলি কে খুলে বললাম যা আমায় তিনি বলেছেন।অঞ্জলি শুনে পাথর!বার বার সে তার হাতের নোয়া টাকে নিয়ে নড়াচাড়া করতে লাগলো।
একটু পড়ে খুঁড়ো এলেন সব জিনিস পত্র নিয়ে।বড়পুকুরে যেয়ে স্নান করে ধড়া পড়ে বাড়ি ফিরলাম।খুঁড়ো যে ভাবে যা বললেন সেই ভাবে সব করলাম।
সুইডেনে ফেরার আগে গ্রামের স্কুল ট্রাষ্ট বোর্ডকে বাবার সমস্ত সম্পত্তি দান করে আসি।
    ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে।দাদু,ঠাকুমা ও হয়ে গেছি।কিন্তু অঞ্জলি আর আমি যখন ই একজাগায় নিরিবিলি বসি সেই রাতের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।যার উত্তর আজ ও আমরা খুঁজে পাইনি।যতদিন বাঁচবো এই খোঁজা আমাদের চলতেই থাকবে।
                       শেষ


 


 


   

   
   








No comments:

Post a Comment