অসহায়
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
গ্রামের অতি সাধারন ঘরের মেয়ে বর্ণালী।কিন্তু স্বপ্ন তার আকাশ ছোঁয়া।কঠিন দারিদ্রের মধ্য থেকে বড় হতে থাকা বর্ণালী পড়াশুনাটাকে জীবনে তার স্বপ্ন পূরন হওয়ার একমাত্র হাতিয়ার হিসাবেই মনে করে।সুন্দর মুখশ্রীর অধিকারী সে নয় কিন্তু চোখ দু'টি তার কথা বলে।গায়ের রং চাপা।তেলের অভাবে মাথার চুল উস্কোখূস্কো।বাবা,মা আর ছোট ভায়ের সংসারে সে বড় সন্তান।বাবা তার গ্রামের সামান্য ভ্যানচালক।দিন এনে দিন খেয়ে কোন রকমে দিন কাটিয়ে দেওয়া।যেদিন বাবা অসুস্থ্যতার কারনে ভ্যান নিয়ে বেরোতে পারেননা সেদিন বর্ণালী নিজে গ্রামের পথে ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে সকলের খাবার জোগাড় করার ব্যবস্থা করে।তাতে অবশ্য তার কোন খেদ নেই।স্বপ্নকে বাস্তবের মাটিতে দাঁড় করাতে,নিজের প্রানের থেকেও প্রিয় বাবা,মা আর ভায়ের জন্য সে তার জীবনে কোন কাজকেই ছোট করে দেখতে নারাজ।
সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যার সময় হারিকেনের আলোতে পড়তে বসা।এই সন্ধ্যা থেকে সকাল অবধি তার নিজের।মা বা অন্য কেউ তাকে এইসময় বিরক্ত করেননা।তারা ও ভাবেন মেয়েটা লেখাপড়া শিখে একটা কিছু করতে পারলে সংসারের হাল একটু ফিরবে। অন্তত পেট পুরে দুবেলা খাবার সংস্থান তো হবে।স্কুলটাও নিয়মিত যেতে পারেনা যেদিন ভ্যান নিয়ে তাকে বেরোতে হয়।শত কষ্টের মাঝে এইভাবেই সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে।মাধ্যমিক পাশ করার পরেই সে গ্রামের কিছু ছোট ছেলেমেয়েকে পড়াতে শুরু করে।পরীক্ষায় ভালো ফল করার ফলে স্কুল থেকে মাষ্টারমশাইরা সকলে মিলে তাকে একটি সাইকেল কিনে দেন।গ্রাম থেকে দু'ঘন্টা যেতে আবার দু'ঘন্টা আসতে মোট চার ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে সে একটা কম্পিউটার সেন্টারে ভর্তি হয়।
স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছেও স্বপ্নকে সে ছুঁতে আর পারলোনা।হারিয়ে গেলো, শিকার হোল বর্তমান অসহায় সমাজ ব্যবস্থার কিছু অমানুষের লোলুপ দৃষ্টির।সারারাত উৎকন্ঠা আর দুশ্চিন্তায় কাটিয়ে সকালে খুঁজে পেলেন বাবা,মা তাদের আদরের বহ্নিকে একটা ঝোপ জঙ্গলের মাঝে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় মৃত।
বহ্নি আকাশ ছোঁয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলো তার চোখের দিকে তাকিয়ে পরিবারের আর যে তিনজন ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলো কোন এক অদৃশ্য ঝড় হঠাৎ করেই গোটা পরিবারটাকে মাটিতে আছড়ে ফেললো।
এখন এভাবেই হারিয়ে যায় বহ্নিরা।কোন বিচার হয়না।দেশের প্রশাসন কর্মকর্তারা থাকে নিশ্চুপ!আর অমানুষেরা আবারও ওৎ পেতে থাকে আবার কোন বহ্নির স্বপ্নকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলার নেশায়।আমরা শুধু অসহায়!
# নন্দা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
গ্রামের অতি সাধারন ঘরের মেয়ে বর্ণালী।কিন্তু স্বপ্ন তার আকাশ ছোঁয়া।কঠিন দারিদ্রের মধ্য থেকে বড় হতে থাকা বর্ণালী পড়াশুনাটাকে জীবনে তার স্বপ্ন পূরন হওয়ার একমাত্র হাতিয়ার হিসাবেই মনে করে।সুন্দর মুখশ্রীর অধিকারী সে নয় কিন্তু চোখ দু'টি তার কথা বলে।গায়ের রং চাপা।তেলের অভাবে মাথার চুল উস্কোখূস্কো।বাবা,মা আর ছোট ভায়ের সংসারে সে বড় সন্তান।বাবা তার গ্রামের সামান্য ভ্যানচালক।দিন এনে দিন খেয়ে কোন রকমে দিন কাটিয়ে দেওয়া।যেদিন বাবা অসুস্থ্যতার কারনে ভ্যান নিয়ে বেরোতে পারেননা সেদিন বর্ণালী নিজে গ্রামের পথে ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে সকলের খাবার জোগাড় করার ব্যবস্থা করে।তাতে অবশ্য তার কোন খেদ নেই।স্বপ্নকে বাস্তবের মাটিতে দাঁড় করাতে,নিজের প্রানের থেকেও প্রিয় বাবা,মা আর ভায়ের জন্য সে তার জীবনে কোন কাজকেই ছোট করে দেখতে নারাজ।
সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যার সময় হারিকেনের আলোতে পড়তে বসা।এই সন্ধ্যা থেকে সকাল অবধি তার নিজের।মা বা অন্য কেউ তাকে এইসময় বিরক্ত করেননা।তারা ও ভাবেন মেয়েটা লেখাপড়া শিখে একটা কিছু করতে পারলে সংসারের হাল একটু ফিরবে। অন্তত পেট পুরে দুবেলা খাবার সংস্থান তো হবে।স্কুলটাও নিয়মিত যেতে পারেনা যেদিন ভ্যান নিয়ে তাকে বেরোতে হয়।শত কষ্টের মাঝে এইভাবেই সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে।মাধ্যমিক পাশ করার পরেই সে গ্রামের কিছু ছোট ছেলেমেয়েকে পড়াতে শুরু করে।পরীক্ষায় ভালো ফল করার ফলে স্কুল থেকে মাষ্টারমশাইরা সকলে মিলে তাকে একটি সাইকেল কিনে দেন।গ্রাম থেকে দু'ঘন্টা যেতে আবার দু'ঘন্টা আসতে মোট চার ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে সে একটা কম্পিউটার সেন্টারে ভর্তি হয়।
স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছেও স্বপ্নকে সে ছুঁতে আর পারলোনা।হারিয়ে গেলো, শিকার হোল বর্তমান অসহায় সমাজ ব্যবস্থার কিছু অমানুষের লোলুপ দৃষ্টির।সারারাত উৎকন্ঠা আর দুশ্চিন্তায় কাটিয়ে সকালে খুঁজে পেলেন বাবা,মা তাদের আদরের বহ্নিকে একটা ঝোপ জঙ্গলের মাঝে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় মৃত।
বহ্নি আকাশ ছোঁয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলো তার চোখের দিকে তাকিয়ে পরিবারের আর যে তিনজন ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলো কোন এক অদৃশ্য ঝড় হঠাৎ করেই গোটা পরিবারটাকে মাটিতে আছড়ে ফেললো।
এখন এভাবেই হারিয়ে যায় বহ্নিরা।কোন বিচার হয়না।দেশের প্রশাসন কর্মকর্তারা থাকে নিশ্চুপ!আর অমানুষেরা আবারও ওৎ পেতে থাকে আবার কোন বহ্নির স্বপ্নকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলার নেশায়।আমরা শুধু অসহায়!
# নন্দা
No comments:
Post a Comment