সমাজের কাজ
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
ঝাঁ চকচকে গাড়ি থেকে নামলো রীতা ।এখন অবশ্য তার নাম রীতা নয় -রিটা ।পাড়ায় জ্ঞানী,গুণীজন বলে পরিচিত কিছু বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে ।অল্প বয়স্ক কিছু ছেলেও আছে ।তাদেরই মধ্যে একজন বলে উঠলো ,"ওই যে এসে গেছে ।" তারা সকলে এসে রীতার বাড়ি যাওয়ার পথ আঁটকে দাঁড়ালো ।"এতো রাতে কোথা থেকে রোজ আসো ?কি ভাবো ,আমরা কিছু বুঝিনা ? কিচ্ছুটি জানিনা ? ভদ্রলোকের পাড়ায় থেকে এসব বেহেল্লাপানা আমরা কিছুতেই বরদাস্ত করবোনা । এখানে থাকতে গেলে ভদ্রভাবে থাকতে হবে -----------" নানান প্রশ্ন ,নানান কটূক্তি ! শান্ত ,নরম স্বভাবের রীতা বাবার মৃত্যুর পর এই পাঁচ বছরে অনেক পাল্টে গেছে । বলা ভালো পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে । জীবন যুদ্ধের কাছে পরাজয় স্বীকার না করে ছোটবেলা থেকে শেখা নাচ আর রূপকে সম্বল করে সে শুধু একা নয় পরিবারের অন্য চারটি সদস্যকেও বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে ।ছোট বোনদুটির বিয়েও দিয়েছে কলকাতা থেকে অনেক দূরে যাতে করে তাদের শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা জানতে না পারে সে হোটেল নর্তকী ! ভাইকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি করেছে ,পেটপুরে তিনবেলা খেতে পারছে ।বাবা যেদিন হঠাৎ মারা গেলেন সেদিন এইসব ভদ্রলোকেরা কোথায় ছিলো ?আজ যারা এসে ভদ্রলোকের পাড়া বলে চিৎকার, চেঁচামেচি করছে সেদিন তো কোন ভদ্রলোক এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি ? দিনের পর দিন ছোট ভাইবোনগুলিকে নিয়ে না খেয়ে থেকেছি সেদিন তো কোন ভদ্রলোকের টিকিটিও দেখতে পাইনি ! আজ যখন নিজের জীবনের সুখ,স্বচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে পরিবারের প্রত্যেকের জীবনে বিন্দুমাত্র সুখ এনে দিতে পেরেছি তখন ভদ্রলোকেরা (?) এসছে পাড়া ছাড়া করতে ! এরা কি মানুষ ? এদের কি মনুষ্যত্ব আছে ? কি চায় এরা ? আছে কি এদের পাড়ার মাথা হয়ে বেঁচে থাকার অধিকার ? এরাই সমাজের ন্যায় অন্যায়ের বিচার করে ? সমাজ বা সমাজের মানুষকে এরা অপমান আর অপবাদ ছাড়া কি দিতে পারে ? পরিবারের কোন একজন নারীর সামনে অন্য সদস্যরা না খেয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে আর মায়ের জাত হয়ে সতীপনার খোলসের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রেখে পরিবারের একটা একটা করে খুব কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলবে এটাই কি সমাজ চায় ? যদি পরিবারের সকলেই অনাহারে মারা যায় ;তাহলে সেই সতীত্ব নিয়ে কাদের সাথে সে বেঁচে থাকবে ? কি লাভ সেই সতীত্ব নিয়ে বেঁচে থাকা ? একটা জীবনের বিনিময়ে যদি আর চারটে জীবন বাঁচানো যায় কি ক্ষতি আছে তাতে ? সমাজ , ভদ্রলোক এরা তো আছে শুধু কথা শুনাতে ; এই জীবনগুলোর মূল্য তো তাদের কাছে নেই !
বাবার মৃত্যুর পর মা লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করতে শুরু করেন । কিণ্তু তাতে পাঁচ পাঁচটা পেট চলতো না । মায়ের দেখে দেওয়া বাড়িতে রীতাও ঠিকা ঝিএর কাজ আরম্ভ করে । বাড়ির থেকে পা বাড়িয়েই সমাজের ভদ্রলোকদের লোলুপ দৃষ্টির সম্মুখীন হয়েছে । কুপ্রস্তাবে সারা না দেওয়ায় বাসন মাজা ,ঘর মোছার কাজগুলো পর্যন্ত চলে গেছে । লোকচক্ষুর আড়ালে বা রাতের আঁধারে যাদের এক রূপ তাদেরই লোকালয়ে বা দিনের আলোতে আর এক রূপ ! এটাই কি সমাজ ? আর এরাই কি সেই সমাজে বসবাসকারী ভদ্রলোক ?
তারস্বরে চিৎকার,চেঁচামেচির মধ্যে দাঁড়িয়ে রিতা কথাগুলি ভাবতে থাকে । হঠাৎ একজন বলে ওঠেন ,"কি কথা নেই কেন মুখে ?" রীতা তাঁকিয়ে দেখে বয়স্ক সাধন মজুমদার । যার বাড়িতে রীতা পনের দিনের মত ঝিয়ের কাজ করেছে । যিনি স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সুযোগ বুঝে রীতার উপর চড়াও হয়েছিলেন !মদ খেয়ে চুড় হয়ে বাথরুমে কাপড় কাঁচার সময়ে রীতাকে ঝাপটে ধরেছিলেন । রীতা এক ধাক্কা দেওয়াতে ওই অবস্থায় টাল সামলাতে না পেরে তিনি বাথরুমের ভিতর পরে যান । রীতা দৌড়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে সোজা বাড়ি চলে আসে ।পরে জানতে পারে সাধন মজুমদারের বাম গোড়ালির হাড় ভেঙ্গে গেছে । বুড়ো হাড় আর জোড়া লাগেনি ;এখন একটু খুঁড়িয়েই হাঁটেন । এখানে আজ তার হম্বিতম্বিটাই বেশী ! রীতা অত্যন্ত শান্তভাবে সাধন মজুমদারকে জিগ্গাসা করে ,"সাধনকাকু আপনার পায়ে কি হয়েছে ? খুঁড়িয়ে হাঁটছেন যে ? পরে গেছেন ? তা কোথায় পরে গেলেন ?" সাধন মজুমদার আমতা আমতা করে ভিড়ের ভিতর মিলিয়ে যান ।
এবার নিজেকে শক্ত করে নিয়ে ভিড়ের ভিতর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সকলের কাছে জানতে চায়, " হ্যাঁ ,কি যেন জানতে চাইছিলেন ? আমি এতো রাতে ফিরি কেন ? আপনারা সব্বাই জানেন তো ! যদি কেউ না জেনে থাকেন -তাহলে শুনুন ,আমি একটি হোটেলে গান গেয়ে ,নেচে টাকা রোজগার করি ।আর এই টাকাতেই আমি আমার বোনদের বিয়ে দিয়েছি ,তারা সুখী আছে , ভাইকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছি -আমরা খেয়েপড়ে বেঁচে আছি । এই হোটেলগুলোতে যে সব ভদ্রলোকেরা(?) যায় তারা তো দিনের বেলায় যেতে পারেনা ! তাহলে সমাজ তাদের গায়ে থুথু দেবে যে ! তারা যদি দিনের বেলায় পয়সা খরচ করে আমার নাচ দেখতে ও গান শুনতে যেত তাহলে আমাকে এতো রাত করে ভদ্রলোকের পাড়ায় ফিরতে হতনা ! কি করবো বলুন ! সমাজের অধিকাংশ ভদ্রলোকের কাজ কর্মই তো রাতের বেলায় ! তারা যদি ধোয়া তুলসী পাতা হয় -তাহলে পেটের দায়ে তাদের গান শুনিয়ে টাকা রোজগার করি বলে আমার কাজটাকে আপনারা বেহেল্লাপনা বলবেন ? আমার বাবার মৃত্যুর পর এই পাড়ায় ঝিয়ের কাজ করতে যেয়ে অসম্মানিত হয়নি ? জানেন তো আপনারা সব ! দিনের পর দিন মা ,ভাইবোনদের নিয়ে উপোস করে থাকিনি ? কই তখন তো কেউ খোঁজ নিতে আসেননি ? আজ যখন খেয়েপরে বেঁচে আছি তখন এসছেন আমার কাজের কৈফিয়ত নিতে ? কে আপনারা ? আর কেনইবা আমার কাজের কৈফিয়ত আপনাদের দেবো ? কখনো কোন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আপনারা ? জোগাড় করে দিন ভদ্রলোকদের একটা চাকরী , কথা দিচ্ছি এই কাজ আমি ছেড়ে দেবো । আপনারা কি চান বলুন তো ? একটা পরিবারের সকল সদস্য না খেয়ে মারা যাক ! এটাই আপনাদের সমাজ ? এটাই আপনাদের মত ভদ্রলোকদের মূল বক্তব্য ?দুঃসময়ে পাশে এসে না দাঁড়িয়ে সুসময়ে এসে আমার ঘরে আগুন লাগিয়ে সকলকে মেরে ফেলতে চাইছেন ? এ সমাজ আমি মানিনা । যান আপনারা পুলিশের কাছে যেয়ে আমার বিরুদ্ধে ডায়রী করুন । পাড়ার ভদ্রলোকদের মুখোশ আমি এক এক করে খুলে দেবো ।"
ভিড়ের ভিতর থেকে সাধন মজুমদার বেড়িয়ে বাকী সকলকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলতে গেলে এক রকম জোর করেই সকলকে বাড়ি যেতে বাধ্য করেন । রীতাও বাড়ির দিকে দ্রুত পা চালায় কারণ অনেকটা সময় দেরী হয়ে গেলো ,মা খুব চিন্তা করছেন ,এখনও না খেয়েই বসে আছেন ।
@নন্দা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
ঝাঁ চকচকে গাড়ি থেকে নামলো রীতা ।এখন অবশ্য তার নাম রীতা নয় -রিটা ।পাড়ায় জ্ঞানী,গুণীজন বলে পরিচিত কিছু বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে ।অল্প বয়স্ক কিছু ছেলেও আছে ।তাদেরই মধ্যে একজন বলে উঠলো ,"ওই যে এসে গেছে ।" তারা সকলে এসে রীতার বাড়ি যাওয়ার পথ আঁটকে দাঁড়ালো ।"এতো রাতে কোথা থেকে রোজ আসো ?কি ভাবো ,আমরা কিছু বুঝিনা ? কিচ্ছুটি জানিনা ? ভদ্রলোকের পাড়ায় থেকে এসব বেহেল্লাপানা আমরা কিছুতেই বরদাস্ত করবোনা । এখানে থাকতে গেলে ভদ্রভাবে থাকতে হবে -----------" নানান প্রশ্ন ,নানান কটূক্তি ! শান্ত ,নরম স্বভাবের রীতা বাবার মৃত্যুর পর এই পাঁচ বছরে অনেক পাল্টে গেছে । বলা ভালো পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে । জীবন যুদ্ধের কাছে পরাজয় স্বীকার না করে ছোটবেলা থেকে শেখা নাচ আর রূপকে সম্বল করে সে শুধু একা নয় পরিবারের অন্য চারটি সদস্যকেও বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে ।ছোট বোনদুটির বিয়েও দিয়েছে কলকাতা থেকে অনেক দূরে যাতে করে তাদের শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা জানতে না পারে সে হোটেল নর্তকী ! ভাইকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি করেছে ,পেটপুরে তিনবেলা খেতে পারছে ।বাবা যেদিন হঠাৎ মারা গেলেন সেদিন এইসব ভদ্রলোকেরা কোথায় ছিলো ?আজ যারা এসে ভদ্রলোকের পাড়া বলে চিৎকার, চেঁচামেচি করছে সেদিন তো কোন ভদ্রলোক এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি ? দিনের পর দিন ছোট ভাইবোনগুলিকে নিয়ে না খেয়ে থেকেছি সেদিন তো কোন ভদ্রলোকের টিকিটিও দেখতে পাইনি ! আজ যখন নিজের জীবনের সুখ,স্বচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে পরিবারের প্রত্যেকের জীবনে বিন্দুমাত্র সুখ এনে দিতে পেরেছি তখন ভদ্রলোকেরা (?) এসছে পাড়া ছাড়া করতে ! এরা কি মানুষ ? এদের কি মনুষ্যত্ব আছে ? কি চায় এরা ? আছে কি এদের পাড়ার মাথা হয়ে বেঁচে থাকার অধিকার ? এরাই সমাজের ন্যায় অন্যায়ের বিচার করে ? সমাজ বা সমাজের মানুষকে এরা অপমান আর অপবাদ ছাড়া কি দিতে পারে ? পরিবারের কোন একজন নারীর সামনে অন্য সদস্যরা না খেয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে আর মায়ের জাত হয়ে সতীপনার খোলসের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রেখে পরিবারের একটা একটা করে খুব কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলবে এটাই কি সমাজ চায় ? যদি পরিবারের সকলেই অনাহারে মারা যায় ;তাহলে সেই সতীত্ব নিয়ে কাদের সাথে সে বেঁচে থাকবে ? কি লাভ সেই সতীত্ব নিয়ে বেঁচে থাকা ? একটা জীবনের বিনিময়ে যদি আর চারটে জীবন বাঁচানো যায় কি ক্ষতি আছে তাতে ? সমাজ , ভদ্রলোক এরা তো আছে শুধু কথা শুনাতে ; এই জীবনগুলোর মূল্য তো তাদের কাছে নেই !
বাবার মৃত্যুর পর মা লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করতে শুরু করেন । কিণ্তু তাতে পাঁচ পাঁচটা পেট চলতো না । মায়ের দেখে দেওয়া বাড়িতে রীতাও ঠিকা ঝিএর কাজ আরম্ভ করে । বাড়ির থেকে পা বাড়িয়েই সমাজের ভদ্রলোকদের লোলুপ দৃষ্টির সম্মুখীন হয়েছে । কুপ্রস্তাবে সারা না দেওয়ায় বাসন মাজা ,ঘর মোছার কাজগুলো পর্যন্ত চলে গেছে । লোকচক্ষুর আড়ালে বা রাতের আঁধারে যাদের এক রূপ তাদেরই লোকালয়ে বা দিনের আলোতে আর এক রূপ ! এটাই কি সমাজ ? আর এরাই কি সেই সমাজে বসবাসকারী ভদ্রলোক ?
তারস্বরে চিৎকার,চেঁচামেচির মধ্যে দাঁড়িয়ে রিতা কথাগুলি ভাবতে থাকে । হঠাৎ একজন বলে ওঠেন ,"কি কথা নেই কেন মুখে ?" রীতা তাঁকিয়ে দেখে বয়স্ক সাধন মজুমদার । যার বাড়িতে রীতা পনের দিনের মত ঝিয়ের কাজ করেছে । যিনি স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সুযোগ বুঝে রীতার উপর চড়াও হয়েছিলেন !মদ খেয়ে চুড় হয়ে বাথরুমে কাপড় কাঁচার সময়ে রীতাকে ঝাপটে ধরেছিলেন । রীতা এক ধাক্কা দেওয়াতে ওই অবস্থায় টাল সামলাতে না পেরে তিনি বাথরুমের ভিতর পরে যান । রীতা দৌড়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে সোজা বাড়ি চলে আসে ।পরে জানতে পারে সাধন মজুমদারের বাম গোড়ালির হাড় ভেঙ্গে গেছে । বুড়ো হাড় আর জোড়া লাগেনি ;এখন একটু খুঁড়িয়েই হাঁটেন । এখানে আজ তার হম্বিতম্বিটাই বেশী ! রীতা অত্যন্ত শান্তভাবে সাধন মজুমদারকে জিগ্গাসা করে ,"সাধনকাকু আপনার পায়ে কি হয়েছে ? খুঁড়িয়ে হাঁটছেন যে ? পরে গেছেন ? তা কোথায় পরে গেলেন ?" সাধন মজুমদার আমতা আমতা করে ভিড়ের ভিতর মিলিয়ে যান ।
এবার নিজেকে শক্ত করে নিয়ে ভিড়ের ভিতর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সকলের কাছে জানতে চায়, " হ্যাঁ ,কি যেন জানতে চাইছিলেন ? আমি এতো রাতে ফিরি কেন ? আপনারা সব্বাই জানেন তো ! যদি কেউ না জেনে থাকেন -তাহলে শুনুন ,আমি একটি হোটেলে গান গেয়ে ,নেচে টাকা রোজগার করি ।আর এই টাকাতেই আমি আমার বোনদের বিয়ে দিয়েছি ,তারা সুখী আছে , ভাইকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছি -আমরা খেয়েপড়ে বেঁচে আছি । এই হোটেলগুলোতে যে সব ভদ্রলোকেরা(?) যায় তারা তো দিনের বেলায় যেতে পারেনা ! তাহলে সমাজ তাদের গায়ে থুথু দেবে যে ! তারা যদি দিনের বেলায় পয়সা খরচ করে আমার নাচ দেখতে ও গান শুনতে যেত তাহলে আমাকে এতো রাত করে ভদ্রলোকের পাড়ায় ফিরতে হতনা ! কি করবো বলুন ! সমাজের অধিকাংশ ভদ্রলোকের কাজ কর্মই তো রাতের বেলায় ! তারা যদি ধোয়া তুলসী পাতা হয় -তাহলে পেটের দায়ে তাদের গান শুনিয়ে টাকা রোজগার করি বলে আমার কাজটাকে আপনারা বেহেল্লাপনা বলবেন ? আমার বাবার মৃত্যুর পর এই পাড়ায় ঝিয়ের কাজ করতে যেয়ে অসম্মানিত হয়নি ? জানেন তো আপনারা সব ! দিনের পর দিন মা ,ভাইবোনদের নিয়ে উপোস করে থাকিনি ? কই তখন তো কেউ খোঁজ নিতে আসেননি ? আজ যখন খেয়েপরে বেঁচে আছি তখন এসছেন আমার কাজের কৈফিয়ত নিতে ? কে আপনারা ? আর কেনইবা আমার কাজের কৈফিয়ত আপনাদের দেবো ? কখনো কোন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আপনারা ? জোগাড় করে দিন ভদ্রলোকদের একটা চাকরী , কথা দিচ্ছি এই কাজ আমি ছেড়ে দেবো । আপনারা কি চান বলুন তো ? একটা পরিবারের সকল সদস্য না খেয়ে মারা যাক ! এটাই আপনাদের সমাজ ? এটাই আপনাদের মত ভদ্রলোকদের মূল বক্তব্য ?দুঃসময়ে পাশে এসে না দাঁড়িয়ে সুসময়ে এসে আমার ঘরে আগুন লাগিয়ে সকলকে মেরে ফেলতে চাইছেন ? এ সমাজ আমি মানিনা । যান আপনারা পুলিশের কাছে যেয়ে আমার বিরুদ্ধে ডায়রী করুন । পাড়ার ভদ্রলোকদের মুখোশ আমি এক এক করে খুলে দেবো ।"
ভিড়ের ভিতর থেকে সাধন মজুমদার বেড়িয়ে বাকী সকলকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলতে গেলে এক রকম জোর করেই সকলকে বাড়ি যেতে বাধ্য করেন । রীতাও বাড়ির দিকে দ্রুত পা চালায় কারণ অনেকটা সময় দেরী হয়ে গেলো ,মা খুব চিন্তা করছেন ,এখনও না খেয়েই বসে আছেন ।
@নন্দা