Sunday, April 26, 2020

ছোটগিন্নী ( পঞ্চম পর্ব )

ছোট গিন্নী (৫ম পর্ব)
              নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

    সেদিন রাতে রুমাদের ভালোবাসা মিশ্রিত   আতিথেয়তায় মুগ্ধ অরুন বলে গেলো,"বৌদি আমি কিন্তু আবার আসবো। এতদিন  আমার  কোন  আত্মীয়স্বজন  ছিলোনা  এখন  আমি  শমিতদাকে পেয়ে  গেছি  মাঝে  মধ্যেই  বিরক্ত  করতে  চলে  আসবো |"
--- হ্যাঁ হ্যাঁ ভাই  নিশ্চয়ই  আসবে | আমাদেরও  তো  সেরকম  কেউ  নেই  , তুমি  আসলে  আমাদের  সকলের  খুব  ভালো  লাগবে |
 রুমার  কথা  শেষ  হলেই  শমিত তার  কানের  কাছে  মুখটা  নিয়ে  বলে  উঠলো ,
--- আসার  উদ্দেশ্য  কি  শুধুই  আমাদের  সাথে  গল্প  করা ? নাকি  অন্য উদ্দেশ্যও  আছে  ---?
--- ওর  কানে  কানে  আবার  কি  বলছো ? 
 রুমা  শমিতের দিকে  তাকিয়ে  বলে  ওঠে  |
  আর  অরুনের  তখন  'ছেড়ে  দে  মা  কেঁদে  বাঁচি' পরিস্থিতি | সে  তাড়াতাড়ি  দরজার  দিকে  পা  বাড়ালো  ' আসছি ' বলেই  |
 শমিত মনেমনে  বললো , ' একটু  সবুর  করো  সব  ব্যবস্থায়  আমি  করবো |'

   অরুনের বড় ভাই বরুন ছিলো শমিতের বন্ধু।অরুনের কাছ থেকে শমিত  জানতে পারে অফিসের কাজে বরুন আমেরিকায় গেছিলো। সেখানে  সে  পনেরদিন  মত  ছিল  | অফিসের  সমস্ত  কাজ  গুছিয়েও  নিয়েছিল  | কিন্তু  যেদিন  সে  আসবে  সেদিনই  এয়ারপোর্ট  আসতে গিয়ে  হঠাৎই  তার  একসিডেন্ট  হয়  | স্পট  ডেথ  | সেদিন  সারারাতের  অপেক্ষার  পর  অফিস  মারফত পরদিন   সন্ধ্যা  নাগাদ  সব  খবর  জানা  যায়  | 
   এই শোক তাদের মা,বাবা সামলাতে পারেননা।তারা দুজনেই ছ'মাসের ব্যবধানে অরুনকে রেখে না ফেরার দেশে চলে যান।এখন অরুন সম্পূর্ণ একা।একজন বয়স্ক মহিলা দু'বেলা এসে রান্না ও ঘরের কাজ করে যান।অফিস আর বাড়ি।চিরদিনের মেধাবী ছাত্র অরুন চাকরী পাওয়ার পর বছর তিনেকের মধ্যেই অফিসের উচ্চপদে চলে যায়। 
 অল্প বয়সে  এইরূপ  একটা  পদে  চাকরি  করা  চাট্টিখানি  কথা  নয়  যেখানে  রয়েছে  তার  অনেক  সিনিয়র | তাই  অফিস  চত্বরের  মধ্যে  বাধ্য  হয়ে  তাকে  রসকষহীন  একটা  মুখোশ  পরে  থাকতে  হয় | কিন্তু  মনটা  তার  শিশুর  মত  সরল | কোনদিন  কোন  মেয়ের  মুখের  দিকে  তাকিয়ে  দেখেছে  বলে  তার  মনেপড়ে  না  | কিন্তু  এই  মিস  সোমা  এসেই -----|
        এদিকে রাতে রুমা শমিতকে বলে,"এই দেখো না গো -ছেলেটাকে খুব ভালো মনে হল,টুকুনের সাথে যদি ওর ---"
কথাটাকে শমিত শেষ করতে দেয়না-
---দেখো,ছেলেবেলায় ওর সত্যকথার জন্য বাবার হাতে প্রাণটা চলে যাচ্ছিলো।তখন ওর নাম দিয়েছিলাম যুধিষ্ঠির।এখন তো আমাকে আগে জানতে হবে ও যুধিষ্ঠির থেকে দুঃশাসন হয়ে গেছে কিনা।তাছাড়া আমার মনে হোল আমার ছোটগিন্নী একটু হলেও অরুনের বুকে দোলা দিয়েছে।আগে দু'জনেই মনে মনে একটু দোল খাক।তুমি না সত্যি খুব বেরসিক!ভুলে গেলে (শমিত রুমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে)আমরা কলেজে পড়ার সময় দু'জনে কেমন দুলছিলাম।বিয়ে করলাম ব্যস দোলা বন্ধ হয়ে গেলো।ওদের একটু রোমান্স করতে দাও।তবে সবার আগে আমাকে জানতে হবে ভায়া আমার সেই আগের মত যুধিষ্ঠিরই  আছে নাকি দুঃশাসন হয়ে গেছে। 
---দূর!তুমি কোনদিনই সিরিয়াস হবেনা।আমার ঘুম পেয়েছে।আমি ঘুমাচ্ছি।তুমি মহাভারত লেখো। 
  কথাগুলো বলে রুমা পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। 
  পরেরদিন নিত্যদিনের মত শালী ভগ্নিপতি এক সাথেই অফিস বেরোলো।শমিত ঘর থেকে বেরোনোর আগে টুকুনকে কাছে ডেকে মাথায় একটু থুথু দিয়ে বললো,"যেভাবে বস পিছনে লেগেছে এবার আমার ছোটগিন্নী আমায় ছেড়ে চলে যাবে।"
 --- ওই  বদমেজাজি, রাগী বসকে  বিয়ে  করার  থেকে  সারাজীবন  আইবুড়ো  থাকা  অনেক  ভালো | এতদিন  হয়ে  গেলো  অফিসে  চাকরি  করছি  কোনদিন  একটু  হাসি  দেখলামনা  উনার  মুখে --- | 
---- খুব  অন্যায়  কথা | আমার  সুন্দরী  ছোটগিন্নীকে  দেখেও  একটু  হাসেনা --- যাক  গে যাক  --- আমরা  বসের  দিকে  এগোবোই  না | অন্য ছেলে  দেখে  বিয়ে  দিয়ে  শ্বশুরবাড়ি  পাঠিয়ে  দেবো |
---আমি যে বাড়িতেই  যাইনা কেন তোমাদের দু'জনকে সঙ্গে নিয়েই যাবো।তানাহলে তাকেই বলবো আমাকে বিয়ে করতে হলে এখানেই এসে থাকতে হবে।(জিজুর একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে টুকুন কথাগুলো বলে।)
শমিত কথাটা শুনে চশমাটা খুলে জলভর্তি চোখটা মুছে নিয়ে রুমার উদ্দেশ্যে হাক দেয়,"কই গো দরজাটা দাও আমরা বেরোচ্ছি। 
    দুপুরের দিকে কিছু দরকারী ফাইলপত্র সই করাতে টুকুন বস অরুনের রুমে ঢুকলো।অরুন রোজের মত হাতের ইশারায় তাকে বসতে বলে।নিজের হাতের কাজটা সেরে নিয়ে টুকুনের দিকে হাত বাড়ালো ফাইলটা নিতে।ঠিক সেই মুহূর্তে টুকুন একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলো।কারন সে ভাবছিলো কি অভদ্র লোকটা!কাল গিয়ে খেয়েদেয়ে আনন্দ করে আসলো আর আজ এমন ভাব দেখাচ্ছে যে আমি শুধুমাত্র তার অফিসের সামান্য মাইনের এক অধস্তন  কর্মচারী মাত্র। 
---কই ফাইলটা দিন। মনেহচ্ছে  কিছু  ভাবছেন ?
 --- নো  স্যার  , বলেই  ফাইলটা  সামনে  এগিয়ে  দেয় | 
 টুকুন  খেয়াল  করে  এক  একটা  কাগজ  উল্টে  সই  করছেন  ঠিকই  কিন্তু  অন্যদিনের  তুলনায়  যেন  সময়  একটু  বেশি  লাগছে | মনেহচ্ছে  লোকটা  কিছু  বলতে  চাইছে  অথচ  বলতে  পারছেনা | কি  ধরণের মানুষ  মাইরি --- কাল  নিজের  থেকে  ডেকে  গাড়িতে  তুলে  নিয়ে  বাড়ি  পর্যন্ত  পৌঁছে  দিলো | ভালোমন্দ  পেট  ভরে খেয়ে  আসলো  আর  আজ  ---
 অরুন  ফাইলগুলো  একসাথে  করে  টুকুনের  সামনে  এগিয়ে  দিয়ে  আবার  মুখ  নিচু  করে  নিজের  কাজে  মন  দেয় |

  চলবে  :-

No comments:

Post a Comment