ছোট গিন্নী (অষ্টম পর্ব)
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
পরদিন অফিসে যথারীতি টুকুন ফাইল নিয়ে সই করাতে অরুনের রুমে ঢোকে।অরুন আজ মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,"বসুন।" ফাইল সই করিয়ে টুকুন যখন নিঃশব্দে রোজের মত বেরিয়ে যাচ্ছে অরুন মৃদু স্বরে বলে ওঠে,"একটা কথা ছিলো।" টুকুন ঘুরে দাঁড়িয়ে পরে।অরুন আবার বলে,
---অফিস ছুটির পর বাইরে আমাকে কিছুটা সময় দেবেন?আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।
---আপনি এখানেই বলুন।সবাই যা আপনাকে ভয় পায় এখানে কেউই আসবেনা।
---না,মানে এখানে বলা যাবেনা।
টুকুনের বুঝতে অসুবিধা হয়না তার বস তাকে কি বলবে।কিন্তু সে ধরা দেয়না।খুব গম্ভীরভাবে বলে,
---সরি স্যার,আজ আমাকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
কথাটা বলেই সে অরুনের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।বাড়িতে ফিরে সে সর্বগল্পের সঙ্গী জিজুকেও কিছু বলেনা।শমিত অনেকবার ইয়ার্কির ছলে জানতে চেয়েছে অরুন তাকে কিছু বলেছে কিনা। কিন্তু টুকুন প্রতিবারই কথাটা পাশ কাটিয়ে গেছে।শমিত নানানভাবে তার আদরিনী শালীর কাছ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করে বিফল হয়েছে।
এদিকে পরেরদিন টুকুন আবার যখন অরুনের রুমে যায় অরুন সেদিনও তাকে একই কথা বলে।টুকুন আজ একটু জোরেই বলে,
---রোজই তো বলছেন একটা কথা বলবেন।কিন্তু বলছেন কোথায়?বলুন আজ আমি আপনার কথা শুনেই যাবো। বলুন ----
---বললাম তো এখানে বলা যাবেনা।
---এখানে বলা না গেলে আপনাকে কথাটা আর আমাকে বলতে হবেনা।অফিসের বাইরে গিয়ে অফিসের বসকে সময় দেওয়ার সময় আমার হবেনা।তাছাড়া লোকে জানলে কি বলবে?
---কিন্তু এটা তো অফিস!
---তাতে কি?অফিসে কাজের কথা ছাড়া অন্য কথা কেউ বলেনা?
---না ঠিক তা নয়।তবে এই কথাটা ---(অরুন আমতা আমতা করতে লাগে)
---কি এমন কথা বলবেন আপনি?এখানেই বলুন,কই বলুন ---আরে বাবা বলেই ফেলুননা---
---হ্যাঁ -এখানেই বলছি।অরুন গলাটা চড়িয়েই বলে, আমি মানে আ-আমি---
অরুন থেমে যায়--
টুকুন কোনরকমে নিজের হাসি চেপে বলে,
---আমি --আমি --এটা আবার কি কথা?কথাটা শেষ করুন!
অরুন তখন পড়েছে মহা ফ্যাসাদে।কথাটা যেন তার গলায় আটকে আছে।না পারছে গিলতে না পারছে উগরাতে। এ কি ধরনের মেয়ে রে বাবা ? বসকেই চাপ দিচ্ছে বললে এখানে বলুন আর না হলে বলতে হবেনা ? কিন্তু আজ তো কথাটা বলতেই হবে নাহলে তো আবার ---| মাথা কাজ করছেনা , পাদুটো কেমন কাঁপছে মনেহচ্ছে | এসি তো চলছে তবে এতো ঘামছি কেন ? দূর বাবা এ কোন বিপদে পড়লাম ভালোবাসতে গিয়ে ? এখন কি করি ?
--- কই স্যার কিছু বলবেন না আমি আসবো ----?
--- হ্যাঁ বলবো তো --- কিন্তু কি করে বলবো তাই ভাবছি ---
--- তাহলে আপনি ভাবুন স্যার ভেবে ভেবে ঠিক করতে পারলে আমায় ডেকে নেবেন | আমার হাতে অনেক কাজ রয়েছে স্যার | কাজগুলো ঠিক সময়ে শেষ নাহলে আবার আপনার বকা খেতে হবে | কিন্তু একটা কথা কিছুতেই মাথায় আসছেনা আপনি কি এমন কথা বলবেন যে আপনার মত একজন রাগী, বদমেজাজি মানুষ কথাটা বলতে গিয়ে এই এসি রুমে থেকেও এভাবে ঘামছেন ? কান , মুখ সব লাল হয়ে যাচ্ছে ?
--- আমার রাগ আর মেজাজটাই শুধু দেখলেন ? আর তার কারণটা বললাম সেটা বুঝতে পারলেননা ?
--- তাহলে স্যার আমি আসি পরে অন্য একদিন নাহয় আপনার কথা শুনবো |
--- কিন্তু আজই আমায় বলতে হবে ---
--- তা বলুন , আমি আজ শুনেই যাবো |
অরুন কিছুটা সময় ঢোক গিলে বেশ কয়েকবার বোকার মত এদিকওদিক তাকিয়ে গড় গড় করে টুকুনের মুখের দিকে তাকিয়ে এক নিশ্বাসে বলে ফেললো,"আমি আপনাকে ভালোবাসি"-বলেই পিছন ঘুরে দাঁড়ালো।
---এই কথাটা বলার জন্য বাইরে কোথাও যেতে চেয়েছিলেন?
অরুন পিছন দিক থেকেই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।
এবার টুকুন তাকে বললো,
---তা চলুন,কোথায় যাবেন বলছিলেন--- অরুন টুকুনের দিকে ফিরে তাকিয়ে কিছুটা অবাক চোখে উত্তর দেয়,
---বলা হয়ে গেছে তো!
---উত্তরটা জানবেন না ?
অরুন এবার টুকুনের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো।টুকুন দুষ্টুমীভরা হাসি নিয়ে অরুনের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে,
--কই চলুন,অবশ্য আপনার যদি উত্তরটা জানতে ইচ্ছা না করে তাহলে যাবেন না।আর যদি উত্তরটা জানতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে।আমি বেরোচ্ছি আপনি গেলে আসুন---কথাগুলি বলে টুকুন বেরিয়ে পরে।
চলবে :-
No comments:
Post a Comment