Tuesday, April 28, 2020

ছোটগিন্নী ( ষষ্ঠ পর্ব )

ছোট গিন্নী (ষষ্ঠ পর্ব)
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

  টুকুন টেবিল  থেকে  ফাইলগুলো  তুলে  নিয়ে  বেরিয়ে  গেলো  | অরুন একটা  দীর্ঘশ্বাস  ছেড়ে মনেমনে বললো, ' নিশ্চয়ই আমায় খুব ছোটলোক ভাবছেন।কিন্তু আমি নিরুপায়।এটা আমার কাজের জায়গা।এখানে আমি কোন কর্মচারির আত্মীয় নই,পরিচিত নই।এখানে শুধু কাজ আর কাজ।' 
  পরদিনও ঠিক  সেই  একই  রুটিং | টুকুন  অরুনের  রুমে  নক  করলো | সেদিকে  না  তাকিয়েই  অরুন  বললো ' ইয়েস' -- টুকুন  ফাইলগুলো  সামনে  রাখলো | টুকুনের  আজ  তার  বসকে  দেখে  মনে  হচ্ছে  লোকটা  একটু  উদ্ভ্রান্ত | কিন্তু  জিজ্ঞাসা  করার  উপায়  নেই  উনি  তো  আবার  রাগী বস | টুকুন  যে  ফাইলগুলো  তার  সামনে  রেখেছে  বোধকরি  মিষ্টার অরুন  মুখার্জী  সেগুলো  দেখতেই  পায়নি  এমনভাবেই  সে  তার  নিজের  কাজ  নিয়ে  ব্যস্ত  আছে  | কিছুক্ষণ অপেক্ষার  পর  টুকুন  বলে ,
--- স্যার  ফাইলগুলো  --?
  হঠাৎ  করেই  অরুন  টুকুনের  মুখের  দিকে  একঝলক   তাকিয়ে  ফাইলগুলো  নিজের  কাছে  টেনে  নিলো | কিন্তু  অরুন  মুখার্জীর  ওই  একঝলক  দৃষ্টিতে  এমনকিছু  ছিল  যা  টুকুন   বুকের  ভিতর  এক  বৈদ্যুতিক  শক অনুভব  করলো  | বসের  সই  শেষ  হলে  কোনরকমে  সে  ওখান  থেকে  দ্রুত  বেরিয়ে  আসলো | যা  কোনদিনও  তার  জীবনে  ঘটেনি  কিন্তু  আজ  সামান্য  দৃষ্টি  বিনিময়ে  ঘটে  যাওয়ায়  সেও  কিছুটা  অন্যমনস্ক  হয়ে  পরে | ভাবতে  থাকে  তবে  কি  সে  তার  বসকে  ভালোবেসে ফেলেছে ?তা  কি  করে  সম্ভব? এইরকম  একজন  মানুষ  যার  সাথে  তার  কোন  মিলই নেই --- তার  আচারআচরণ , অফিস  কলিগদের  সাথে  তার  ব্যবহার  কোন  কিছুই  তো  টুকুনের  পছন্দ  নয় --- তবে  কেন  বস তার  দিকে  আজ  তাকালে  তার  বুকের  ভিতরটা  এমন  ধক করে  উঠলো | কি  ছিল  তার  ওই  দৃষ্টিতে? একদম  যে  এতদিনে  তার  সাথে কোন  দৃষ্টি  বিনিময়  হয়নি  তাতো  একদমই  নয় | কিন্তু  আজ  ওই  দৃষ্টিতে  না  বলেই  যেন  তিনি  অনেককিছু  বলে  দিয়েছেন | তবুও  নিজেকে  সামলে  নিতে  হবে | নিজের  আচারআচরণ বা  ব্যবহারে  কোন  অবস্থাতেই  বসের  সামনে  নিজের  দুর্বলতা  প্রকাশ  করা  যাবেনা | সত্যিই  যদি  তাকে  নিয়ে  বসের  এতটুকু  ভাবনা  থাকে  তা  তার  মুখ  থেকেই  বের  করতে  হবে | 
   পরদিন টুকুন ইচ্ছা করেই অফিস গেলোনা। তাকে  নিয়ে  তার  বস  সত্যিই  কিছু  ভাবছে  কিনা  সেটা  একমাত্র  অফিস  না  গেলেই  প্রমান  পাওয়া  যাবে  | হয়  সে  ফোন  করবে  নাহয়  নিজেই  এসে  উপস্থিত  হবে | 
 সকালে  ছোটগিন্নী অফিসে  বেরোনোর  জন্য  ছুটাছুটি  করছেনা দেখে  শমিত বললো ,
--- বলো  ছোটগিন্নী শরীর  খারাপ  নাকি  মন  খারাপ  কারও জন্য  ?
--- জিজু  ভালো  হবেনা  বলছি | শরীর  মন  দুইই ঠিক  আছে | মুখে  একটা  আগুল দিয়ে  বেশ  ভাবুকের  মত  বললো ,
--- আসলে  আমি  ভেবে দেখলাম  আমি  রোজ  রোজ  অফিস  যাবো  আর  কোম্পানি  আমাকে  মাত্র  একদিন  মাইনে দেবে  --- তাই  মাঝে  মাঝে  একটু  আধটু  ডুব  দেবো ভাবছি |
 শমিত আর  টুকুন  দুজনেই  হাসতে লাগলো | একটু  পরে শমিত বললো, 
--- দেখো  ছোটগিন্নী অফিসে  মাঝে  মাঝে  ডুব  দাও  ক্ষতি  নেই  কিন্তু  ডুবে  ডুবে  জল  খেওনা  --- | এই  হৃদয়ে  ব্যথা  দিওনা |( নিজের  বুকে  একটা  হাত  দিয়ে  কাচুমাচু  হয়ে  বলেই  হেসে  দিলো |)
 টুকুন  বেশ  কয়েকটা  কিল  , ঘুষি  তার  জিজুর  পিঠে  বসিয়ে  দিলো | এদিকে  ওদের  চিৎকার  চেঁচামেচিতে  রুমা  এসে  উপস্থিত  হল |
--- কিগো তোমরা  আজ  কেউ  অফিস  যাবেনা ?
--- না  আজ  আমরা  কেউই  অফিস  যাবোনা  |
--- সে  কি ? তুমিও  অফিস  যাবেনা  জিজু  ?
 ---ছোটগিন্নী,আজ আমিও ডুব দিই। চলো তিনজনে মিলে সিনেমা দেখে খেয়েদেয়ে বাড়ি ফিরি"।টুকুনের ইচ্ছা না থাকলেও জামাইবাবুকে সে কোনদিন মুখের উপর না বলেনি।
   তাই তার কথামত রাজি হয়ে গেলো।অনেক রাতে তিনজনে বাড়ি ফিরে সামান্য গল্প-গুজব করে শুয়ে পড়ে।তারপরেও পরপর দু'দিন টুকুন শরীর খারাপের অজুহাতে অফিস যায়না।দিদি,জামাইবাবুকে বলে,'শরীরটা ভালো লাগছেনা।'কিন্তু মনের মধ্যে অদ্ভুত এক অস্থিরতা বোধ করতে থাকে।কিন্তু কেন তাও বুঝতে পারছেনা।ওই রকম তো সে রোজই মিঃমুখার্জীর রুমে ঢোকে।ফাইলপত্র সই করায় তারপর নীরবেই বেরিয়ে যায়।কোনদিনও মনে হয়না মিঃ মুখার্জী তাকে কিছু  বলতে  চায়  যা  সে  বলতে  পারছেনা  অথচ  তার  দৃষ্টিতে  সে  কথা  প্রকাশ  পাচ্ছে   |
   অরুনও অফিসে পরপর তিনদিন টুকুনকে দেখতে না পেয়ে ভিতরে ভিতরে একটা অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলো। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে কেন তার এরকম হচ্ছে।কিন্তু উত্তরটা অধরায় থেকে যায়।মন কিছুতেই মানছেনা।একবার সোমা চক্রবর্তীর খবরটা তাকে জানতেই হবে।প্রথমদিন অরুনের মনে হয়েছিলো হয়তো কোন কাজে আটকে গিয়ে সোমা অফিসে আসতে পারেননি।কিন্তু তৃতীয়দিনও অফিসে না আসায় অরুন সত্যিই খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।সেদিন অফিস ছুটির পর সোমাদের বাড়িতে যাবে কি যাবেনা ভাবতে ভাবতেই বিশাল এক মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে তাদের বাড়ি হাজির হয়ে যায়।শমিত তখনও বাড়িতে ফেরেনি।রুমা টিফিন করছিলো শমিত ফিরলে সকলে একসাথেই তারা টিফিন করে।এরই মধ্যে বেলের আওয়াজ পেয়ে জিজু ফিরেছে মনে করে টুকুনই দরজা খোলে।কিন্তু অরুনকে দেখতে পেয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।অরুনও কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সাতপাঁচ না ভেবেই বোকার মত প্রশ্ন করে ফেলে, 
---দু'তিনদিন অফিস যাননি কেন? 
  সঙ্গে সঙ্গে টুকুন খুব মৃদু স্বরে দিদি যাতে শুনতে না পায় অরুনের দিকে চোখ তুলে গম্ভীরভাবে বলে, 
---আপনি বুঝি আপনার অফিসের কর্মচারীরা অফিস না গেলে বাড়িবাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়ে বেড়ান কে,কেনো, কিসের জন্য অফিস যায়নি।"
    অরুনও খুব লজ্জা পেয়ে যায় এরকম একটা বোকার মত প্রশ্ন সে করলো কি করে? আমতা  আমতা  করতে  থাকে  |এরই মধ্যে শমিতের প্রবেশ।
---আরে যুধিষ্ঠির যে? ছোটগিন্নী,তুমি ওকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছো কেন?চলো ভায়া ভিতরে চলো। 
 শমিত মুচকি  মুচকি  হাসতে থাকে  |

 চলবে :-

    

No comments:

Post a Comment