ছোট গিন্নী (সপ্তম পর্ব)
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
শমিতের গলার আওয়াজে রুমা এসে ঢোকে।অরুনকে দেখে বলে,
---ওমা তোমরা একসাথে এলে বুঝি?
---আরে না -আমি তো এসে দেখি ছোটগিন্নী কিছুতেই বসকে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেনা।আর বস ও জোর করে যাচ্ছে সে ভিতরে ঢুকবেই। এসে দেখি দু'জনে ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি ......আমি তো শেষে ....শমিতের কথা শেষে হবার আগেই টুকুন চেঁচিয়ে ওঠে,
---জিজু ভালো হচ্ছেনা কিন্তু!উনি কাজের মানুষ।কাজের কথা ছাড়া বেশি কথা একদম পছন্দ করেননা।কি দরকারে উনি তোমার কাছে এসেছেন সেটা জেনে নাও।
অরুন বুঝতে বুঝতে পারে তাকে 'ঘা' দেবার জন্যই সোমা কথাগুলো বলেছেন।
শমিত অরুনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
---আমার কাছে?না,না ছোটগিন্নী,তুমি ভুল করছো,তুমি দু'দিন অফিস যাওনি-তোমার বস ভেবেছেন,তোমার শরীর খারাপ।উনি তোমায় দেখতে এসেছেন ছোটগিন্নী,আমায় নয়।আর তাছাড়া আমার কাছে ওর কি কাজ থাকবে?কাজ তো সব তোমার কাছে।
টুকুন কৃতিম রাগ দেখিয়ে বললো,
---হ্যাঁ তা যা বলেছো জিজু,ওনার তো আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই,ওনার অধস্তন কর্মচারী কেন অফিস যাচ্ছেনা তাই বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিয়ে বেড়ান।খুব ভালো মানুষ আর কি!
---ঠিক কথাটা একদম ঠিক বলেছো ছোটগিন্নী,তা ভায়া তুমি সত্যিই আমার কাছে এসেছো?না -না -না আমি জোর দিয়ে একথা বলতে পারি......
রুমা চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে শমিতের কথাটা তার কানে যাওয়ায় সে শমিতের কাছে জানতে চায়,
---কি জোর দিয়ে বলতে পারো গো?
শমিত প্রসঙ্গটা পাল্টে দিয়ে বলে,
---চা এসে গেছে।এবার সকলে গরমাগরম চা খাও।
শমিতের এই খোলামেলা কথাবার্তায় অরুন ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পরে | কিন্তু কিচ্ছু করার নেই --- নিজের বোকামিতে এখন নিজেই লজ্জা পাচ্ছে |
শমিত চা শেষ করে অরুনকে বলে,
---বসো ভায়া,আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসি।তুমিও টিফিনটা নিয়ে এসো।(রুমার দিকে তাকিয়ে শমিত ইশারায় রুমাকেও চলে যেতে বলে।)
ওরা চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে টুকুনও উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য।
---একটা কথা ছিলো।
টুকুন যেতে যেতে দাঁড়িয়ে পড়লো।
অরুন বলতে শুরু করলো,
---আমি ঠিক গুছিয়ে কারও সাথে কথা বলতে পারিনা।অফিসে আমি ঠিক আছি।কিন্তু যে কথাগুলি বলবো বলে এসেছি -কিভাবে সেটা শুরু করবো সেটাই ভাবছি।
টুকুন এবার বসে পড়লো।"যেভাবে খুশি বলুন,আমি নাহয় আপনার এলেমেলো কথাগুলি গুছিয়ে নেবো।"
---আসলে আপনি ক'দিন অফিস যাননি তো-আমার না কেন জানিনা পুরো অফিসটাই ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো।কত কর্মচারী রোজ অফিসে আসেনা,কিন্তু কোনদিনও এটা আমার মনে হয়নি।এই প্রথম কারও ক্ষেত্রে আমার এইরূপ মনে হচ্ছে।আপনি তো পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বেশি আমার রুমে থাকেনও না।তবে কেন এটা মনে হচ্ছে আপনি জানেন?
কথাগুলো শেষ করে নিজের মাথায় নিজেরই বারী মারতে ইচ্ছা করছে | কি হচ্ছে তার আজ ?যা বলতে চাইছেনা তাই বলে ফেলছে | আর বলার পরে বুঝতে পারছে প্রত্যেকটা কথা কেমন বোকা বোকা -- |
টুকুন দুষ্টুমিভরা চাউনিতে বললো,
"আচ্ছা আপনার কেন এটা মনে হচ্ছিলো সেটা আমি কি করে জানবো?আপনার মনের খবর জানা কি আমার পক্ষে সম্ভব?"
---হ্যাঁ সেটা তো একদম ঠিক কথা।আসলে আপনার কাছে জানতে চাইলাম আপনি না থাকাতেই তো এটা মনে হচ্ছিলো তাই।কিছু মনে করবেননা কথাটা বললাম বলে।
---না না এতে মনে করার কি আছে?(আর মনে মনে বললো বুদ্ধু একটা!ভালোবাসে এই কথাটাও বুঝতে পারছেনা।)তা এই কথাটা বলার জন্যই এসেছিলেন?
---না শুধু এটা নয়।অনেক কথা বলবো বলেই এসেছিলাম।কিন্তু সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।(কোনরকম দ্বিধা না করে অরুন টুকুনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে) আপনি কাল অফিস যাবেন তো?
"হ্যাঁ হ্যাঁ যাবে।ওর শরীর মন সব ঠিক হয়ে গেছে", কথাগুলো বলতে বলতে শমিত এসে সোফায় বসে।টুকুন উঠে দাঁড়ায় ভিতরে যাবার জন্য।শমিত হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়।"পালাচ্ছ কোথায় ছোটগিন্নী? বসো,সকলে মিলে একটু আড্ডা মারি।ওই যে তোমার দিদি টিফিন নিয়ে আসছে,আজ খুব খিদে পেয়েছে।এবার খেতে খেতেই সকলে মিলে গল্প করি।ভায়া,খেয়েদেয়েই যাবে কিন্তু।"
---না না শমিতদা আজ নয়।আবার পরে একদিন।আজ একটু তাড়া আছে।
শমিতের অনেক জোরাজুরি সত্ত্বেও অরুন রাজি হয়না সেদিন।বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে অরুন বেরিয়ে পরে।আর সঙ্গে সঙ্গেই শমিত টুকুনের পিছনে অরুনকে নিয়ে লেগে পরে।
আসলে অরুনের সেদিন কোন কাজই ছিলোনা।কিন্তু টুকুনের সামনে অরুনের কেমন জানি একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো।অনেক কথা তাকে বলতে ইচ্ছা করছিলো,একটু নিরিবিলি পাশপাশি বসে গল্প করতে মন চাইছিলো।কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে কোনটাই সম্ভব ছিলোনা।তাই কাজের বাহানায় সে বেরিয়ে পরে।
ভালোবাসা মানুষের জীবনে যখন আসে অনেক সময় মানুষ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা | হয়তো সে যা করতে চায়নি তা করে ফেলে বা হয়তো যা বলতে চায়নি তা বলে ফেলে | আবেগে নিজের অজান্তেই ঘটে যায় কত ঘটনা | পরে যখন সে স্থির মস্তৃষ্কে তার করা বা বলা কথাগুলো মনেমনে চিন্তা করে তখন নিজেকে নিজে পৃথিবীর সবথেকে বুদ্ধুরাম বলেই গালি দেয় | অরুনের পরিস্থিতিও ঠিক এইরকমই |
চলবে :-
No comments:
Post a Comment