Thursday, April 23, 2020

ছোটগিন্নী ( প্রথম পর্ব )

ছোটগিন্নী ( প্রথম  পর্ব  )

  শমিত ফোনটা পেয়ে  চুপ  করে  বসে  থাকে  | রবিবার  বলে  একটু  দেরিতেই  ঘুম  থেকে  ওঠে  সে  আজ | রুমার  চিৎকার  চেঁচামেচিতে  বাজারের  ব্যাগটা  নিয়ে  বেরোতে  যাবে  এরই  মধ্যে  ল্যান্ডফোনটা  বেজে  ওঠে | অপরপ্রান্ত  থেকে  যে  কথাটা  সে  শুনতে  পায় তা  সে  স্বপ্নেও  কল্পনা  করেনি | কি  করবে  সে  এখন ?কেমন  করে  রুমাকে  সে  এই  দুঃসংবাদটা  দেবে ?ভাবতে ভাবতেই  সোফার  উপর  বসে  পরে | রুমা  শমিত বেরিয়ে  গেছে  ভেবে  দরজা  দিতে  আসে | কিন্তু  শমিতকে সোফার  উপর  চুপচাপ  বসে  থাকতে  দেখে  চিৎকার  করে  বলে  ওঠে," তুমি  এখনো  বেরোও নি ? এরপর  তো  কিছু  পাবেনা আর  বাজারে | তোমাকে  নিয়ে  সত্যি  আমি  আর  পারিনা | বললে  চা  খেয়েই  বাজারে  বেরোবে--- চুপচাপ  বসে  কি  ভাবছো  বলোতো --- ?"
 শমিত রুমার  হাতটা  ধরে  নিয়ে  তার  পাশে  বসায় | খুব  আস্তে  বলে ,
-- রুমা  মাথা  ঠান্ডা  করো | চুপ  করে  আমার  একটা  কথা  শোনো |
 শমিতের এই  ব্যবহারে  রুমা  ভয়  পেয়ে  ওর  মুখের  দিকে  তাকিয়ে  বলে,
--- কি  হয়েছে  গো ? শরীর  ঠিক  আছে তো? ফোনের  আওয়াজ  পেয়েছিলাম  কোন  খারাপ  খবর---
 রুমার  কথার  মাঝখানেই  শমিত ওর  হাতদুটো  শক্ত  করে  ধরে  বলে,
 --- আমি  ঠিক  আছি , কিন্তু  আমাদের  এক্ষুনি  একবার  মধ্যমগ্রাম  যেতে  হবে |
 মধ্যমগ্রাম  রুমার  বাপেরবাড়ি | সঙ্গে  সঙ্গে  রুমা  বলে  ওঠে ,
--- কারও শরীর  খারাপ  করেনি  তো ? মা, বাবা, টুকুন,  সবাই  ঠিক  আছে  তো ?
 শমিত এবার  রুমাকে  আরও কিছুটা  কাছে  টেনে  নিয়ে  বলে ,
--- দেখো  যা  হয়েছে  তা  হয়ে  গেছে | এতে  আমাদের  কারও কোন  হাত  নেই | এটা আমাদের  দুর্ভাগ্য  ছাড়া  আর  কিছুই  নয়  | কিন্তু  আমাদের  দেরি  হয়ে  যাচ্ছে , চলো  বেরিয়ে  পড়ি  |
 রুমা  কাঁদতে  কাঁদতে  জানতে  চায় ,
--- আরে কি  হয়েছে  আমায়  খুলে  বলো --|  আমি  তো  কিছুই  বুঝতে  পারছিনা  |
 শমিত নিজেকে  কিছুটা  সামলে  নিয়ে  রুমার  মাথাটা  নিজের  বুকের  উপর  নিয়ে  বললো,
--- একটা  একসিডেন্ট --- বাবা  আর  মা  দুজনেই  সকালে  বাজার  করতে  বেরিয়েছিলেন , বাজার  শেষে  দুজনে  একটা  রিক্সা করে  বাড়ি  ফিরছিলেন | তখন  পিছন  থেকে  একটা  প্রাইভেটকার  ধাক্কা  মারে | দুজনেই  দুদিকে  ছিটকে  পড়েন | কিন্তু  আমাদের  দুর্ভাগ্য  কেউই  আর---
 রুমা  ডুকরে  কেঁদে  ওঠে | শমিত দুহাতে  রুমাকে  বুকের  সাথে শক্ত  করে চেপে  ধরে রাখে | কিছুক্ষণ সময়  এভাবেই  কেটে  যায় | রুমা  কাঁদতে  কাঁদতে  একসময়  শান্ত  হয়ে  নিস্তেজ  হয়ে  পরে | শমিত রুমার  মাথায়  হাত  বুলাতে  বুলাতে  বলে ,
--- আমাদের  দেরি  হয়ে  যাচ্ছে | চলো  আমরা  বেরিয়ে  পড়ি | টুকুনটা  একা রয়েছে  | ওকে  শান্তনা দেওয়ার  মতোও পাশে  কেউ  নেই | আমরা  যত দেরি  করবো  ওর  কষ্টটা  তত  বাড়বে | এই  মুহূর্তে  ওর  যে  আমাদের  খুব  দরকার  | 
 টুকুন  ওরফে  সোমা | রুমার  ছোটবোন | বেশ  অনেকটাই  ছোট | রুমার  যখন  বিয়ে  হয়  তখন  টুকুনের  বয়স  কত  আর  -- এই  দশ  কি  এগারো  বছর  হবে | রুমার  বিয়ে  হয়েছে  বছর  সাতেক | কোন  সন্তান  হয়নি | চিকিৎসারও  কোন  ত্রুটি  শমিত রাখেনি | দোষটা রুমারই | শমিত এটা দুর্ভাগ্য  বলেই  মেনে  নিয়েছে | শমিতের যেহেতু  কোন  ভাইবোন  নেই  তাই  সে  প্রথম  থেকেই  টুকুনকে  খুব  ভালোবাসে | ওরা আর  সময়  নষ্ট  না  করে  সেই  মুহূর্তেই  একটা  ট্যাক্সি  ধরে  মধ্যমগ্রামের  উদ্দেশ্যে  বেরিয়ে  পরে | ওদের  বাড়ির  ভিতর  ঢুকতে  দেখেই  টুকুন  দৌড়ে  গিয়ে  তার  জিজুকে জড়িয়ে  ধরে  হাউহাউ  করে  কাঁদতে  থাকে | শমিত টুকুনকে  নিয়ে  একটি  খাটের উপর  বসে  তার  মাথায়  হাত  বুলাতে  বুলাতে  বলে ,
--- ভাগ্যের  উপর  কারও কোন  হাত  নেই  | এই  একটা  জায়গায়  মানুষ  বড্ড  অসহায় | বাবা , মায়ের  শূন্যস্থান  কেউ  কখনোই  পূরণ করতে  পারেনা | আমি  আর  তোমার  দিদি  দুজনে  মিলে চেষ্টা  করবো  ভালোবাসা  দিয়ে  তোমার  এই  শূন্যস্থানটা কিছুটা  হলেও ভরিয়ে  দিতে | 
তারপর  কিছুটা  সময়  চুপ  করে  থেকে  আবারো  বলতে  শুরু  করে, "তোমরা  দুবোন  মিলে যদি  এতো  কান্নাকাটি  করো  তাহলে  তাদের  আত্মা  শান্তি  পাবেনা যে --- | অনেকটা  পথ  এখনো  তোমায়  এগোতে  হবে | আমি  কথা  দিচ্ছি  তোমার  এই  জিজু  সারাজীবন  তোমার  সাথে  থাকবে |
 দিন  পনেরর মধ্যে  এখানকার  যাবতীয়  কাজ  সেরে  তারা  টুকুনকে  সাথে  নিয়েই  কলকাতা  ফিরে  আসে |
 সে  থেকে  টুকুনের  যাবতীয়  সবকিছু  অথাৎ  সে  কোন  কলেজে  ভর্তি  হবে , কোন  প্রফেসারের কাছে  পড়লে  ভালো  হবে  সবই  শমিত দেখাশুনা  করে |r রুমা  মোটেই  এসবের  ভিতর  ঢোকেনা | সে  তার  বোনের  ব্যাপারে  সম্পূর্ণভাবে  শমিতের উপর  নির্ভরশীল | শমিত ,রুমার  বিয়ের  পর  থেকেই  সে  টুকুনকে  ছোটগিন্নী  বলে  ডাকে | রাস্তাঘাটে  শমিত যখন  এই  নামে টুকুনকে  ডাকে  তখন  টুকুন  প্রচন্ড  ক্ষেপে  যায় | মাঝে  মধ্যে  চিৎকার  করে  বলে  ওঠে , " জিজু  এটা কিন্তু  একদম  ঠিক  হচ্ছেনা | লোকে  ভাবছে  আমার  মত  সুন্দরী  অল্পবয়সী মেয়ের  বর এই  বুড়ো  লোকটা |"
 " আরে ছোটগিন্নী ঘাবড়াচ্ছো  কেন? বাইরেটা  আমার  বুড়ো  দেখতে  হলে  হবে  কি  --- ভিতরটা  একদম  কচি |"
 " দিদি , এটা কিন্তু  একদম  ভালো  হচ্ছেনা |"
 রাস্তার  মধ্যেই  শালী , ভগ্নিপতির  ঝগড়া  শুরু  হয় | রুমাকেই  তখন  সালিশি  করতে  হয় | বলা  বাহুল্য  রুমা  সবসময়  তার  বোনের  দিকেই  ঝুলে  থাকে | তানাহলে  তো  আবার  তার  মুখ  ফুলে  লাল  হয়ে  যায় | বাড়িতে  ফিরে  তো  দিদি  আর  জিজুকে  জব্দ  করার  একমাত্র  উপায়  'খাবোনা' - বলে  শুয়ে  পড়া | সে  না  খেলে  যে  অন্য মানুষদুটিও  খেতে  পারেনা | স্বামী , স্ত্রী  দুজনেই  জানে  টুকুনের  এটা ঠিক  রাগ   নয়  | একটু  অভিমান | টুকুনও এতে  যেমন  মজা  পায় রুমা , শমিতও এই  মান অভিমানের  পালাটি  বেশ  উপভোগ  করে | নিঃসন্তান  জীবনে  টুকুনই  যেন  তাদের  জন্য  আলোর  বন্যা  নিয়ে  এসেছে |

No comments:

Post a Comment