Saturday, December 28, 2019
Friday, December 27, 2019
কিছু সম্পর্কের নাম হয়না
Sunday, December 22, 2019
পাশে আছি
Friday, December 20, 2019
বিভ্রান্ত
Wednesday, December 18, 2019
জানি আছিস
Saturday, December 14, 2019
বুঝতে শিখেছি
Monday, December 9, 2019
পাথর চাপা
গহীনে
পাথর চাপা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
এখন আমার আর কান্না আসেনা
চোখের জল শুকিয়ে গেছে
বা হয়তো কাঁদতেই ভুলে গেছি|
অনুভূতিগুলো মৃয়মান হয়ে যাচ্ছে
মনের বা শরীরের যন্ত্ৰণা
কোনোটাই বুকে আর চেপে বসেনা|
চারিদিকের সমাজের এই অবক্ষয়
আমার সকল অনুভূতিকে
দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে দিয়ে
আমাকে বোবা ও কালা করেছে|
Tuesday, December 3, 2019
মনেপড়ে
পেরেছি
Monday, December 2, 2019
ব্লাকবেল্ট
Sunday, December 1, 2019
একেই বলে ভাগ্য
একেই বলে ভাগ্য
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
-- একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছো?কয়েক মাসের মধ্যে সাহাবাবুদের কেমন হালচাল পাল্টে গেছে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ড্রয়িংরুমে ঢুকতে ঢুকতে কর্তার উর্দেশ্যে কথাগুলি বললেন ঘোষগিন্নী।
বাজার করে এসে এককাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে সবেমাত্র পেপারটা নিয়ে বসেছেন বিমলঘোষ।বয়স ষাটের উপরে।পেটানো শরীর।লম্বা ছ'ফুটের উপরে।দেখলে কে বলবে যে তার এতো বয়স।অপরিচিত মানুষজন পঞ্চাশের নীচে বলেই চালিয়ে দেবে।খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে সোফার উপর গাটা এলিয়ে দিয়ে ঘোষবাবু বললেন,
---এটা যে আমিও ভাবিনা তা নয়।শুধু আমি কেন পাড়ার অনেকেই এই ব্যাপারটা নিয়ে কানাঘুষা করেই চলেছে।কিছু একটা তো ঘটেছে কিন্তু সেটা কি এটাই জানার বিষয়।ওই তো সামান্য একটা মুদির দোকান।জিনিসপত্র সেখানে নেই বললেই চলে।অভাবের সংসার।এখন তো বাজারের সেরা মাছটা তরকারিটাই কেনেন।আগের থেকে ভালো আছেন এটা ভালো কথা।কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভব হোল সেটাই ভাবাচ্ছে।
গিন্নী এতক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,
---আচ্ছা কোন দিক থেকে কোন বিষয় সম্পত্তি বা টাকা পয়সা পেলেন নাকি।
---আরে না,বহুবার সাহাবাবু বলেছেন তাদের দুইপক্ষেরই কোন আত্মীয়স্বজন নেই।ব্যাপারটা একটু ঘোলাটে।তবে প্রতিবেশি ভালো আছে এটাই সবথেকে বড় কথা।
---আমাকে ব্যাপারটা খুঁজে বের করতেই হবে।একটা কথা মনে আছে তোমার?বছর খানেক আগে একজন ভদ্রলোক যাকে আগে কোনদিনও ওনাদের বাড়ীতে দেখিনি অথচ হঠাৎ করেই তিনি এসে ওই বাড়িতেই মারা গেলেন।তার সৎকারও করলেন পাড়ার ছেলেদের সহায়তায়।আমরা যখন জানতে চাইলাম বললেন,'ছেলেবেলার বন্ধু।'ক'দিন বেড়াতে এসেছিলেন।হঠাৎ স্ট্রোক করেছে।'তারপর থেকেই কিন্তু দু'জনেই নিজেদের পাড়ার থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।তুমি যাই বলোনা কেন আমার মনেহয় গ্যাড়াকলটা ওখানেই।
স্বামী একমনে পেপার পড়ে যাচ্ছেন তার কথার কোন উত্তর দিলেননা দেখে তিনিও রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন।
বিকাল হলেই ঘোষগিন্নীদের পাড়ার বটতলায় একটা পিএনপিসির আড্ডা বসে।ঘোষগিন্নী হলেন তার মধ্যমণি।কার মেয়ে কি করলো,কার ছেলে কোথায় মারপিট করলো,কোন মেয়েটাকে নিয়ে ঘুরে বেরালো,কার ছেলের বউ সংসারে কতটা কাজ করলো---এগুলোই তাদের মুখ্য আলোচ্য বিষয়।কিন্তু আজ কিছুদিন ধরে আরও প্রাধান্য পেয়েছে সাহাবাবুর পরিবার।হঠাৎ তাদের এই বড়লোকী চালটা।সেদিন আবার রাজমিস্ত্রীকেও বাড়ীতে ঢুকতে দেখেছেন ঘোষগিন্নী।সাহাগিন্নীকে জিজ্ঞাসাও করেছিলেন,
---কি গো দিদি ছাদ দেবেন বুঝি?কথাটার মধ্যে যে একটু ব্যঙ্গ মিশ্রিত ছিলো সেটা সাহাগিন্নীও বুঝেছিলেন।তিনিও হাসি হাসি মুখে উত্তর দিয়েছিলেন,
---দেবো দিদি।তবে ক'দিন পর।কর্তা বলেছেন আগে তিনি দোকানটাকে সাজাবেন।তাই দোকানে আগে মিস্ত্রী কাজ করবে।এই দেখুন না দোকানের সবকিছু এনে বাড়ীতে জমা করেছে।হিমশিম খাচ্ছি সবকিছু সামলাতে।
না,ঘোষগিন্নী আর কিছু বলার সুযোগ পাননি কারণ কাজ সামলানোর অজুহাতে তিনি দ্রুতবেগে সেখান থেকে সরে পড়েন।আর ঘোষগিন্নী অপেক্ষা করতে থাকেন তাদের বিকালের মজলিসের।
দোকানের ছাদ , রং,ফার্নিচার হয়ে দোকান নূতনভাবে সেজে উঠলো।পাড়াপ্রতিবেশিরা এখন প্রায় সবাই সাহাবাবুর মুদিখানার দোকান থেকেই জিনিসপত্র কেনে।কেউ একটু সস্তার আশায় আবার কেউ তার এই হঠাৎ বড়লোক হয়ে উঠার কোন গন্ধ পেতে।না -সাহাবাবু বা তার গিন্নী এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এটেই থাকলেন।আর তাদের তো একটিমাত্র মেয়ে বহুদিন আগেই সেই বিহারে বিয়ে হয়ে গেছে।বছরে একবার আসে সেই জামাইষষ্ঠীতে।
দোকান সাজানোর ঠিক ছ'মাসের মাথায় সাহাবাবু তার ঘরের টালি সরিয়ে ছাদ দিলেন সিঁড়ি সমেত।পাড়াপ্রতিবেশীরা আরও যেন চক্ষু ছানাবড়া করে তাদের না জানা কথাগুলি জানার জন্য দোকানে মাল কিনতে যাওয়া আর তাদের নূতন বাড়ি দেখতে যাওয়ার প্রতিযোগীতা শুরু করলেন।কিন্তু তারা যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই রয়ে গেলেন।
কেটে গেছে বেশ কয়েকটি বছর।সাহাবাবু ও তার গিন্নীর বয়সের ভারে অনেক কাজই নিজেরা আর করতে পারেননা।দোকান এখন রমরমিয়ে চলে।বিহার থেকে বিশ্বস্ত দুটি ছেলেকে মেয়ে জামাই এনে দিয়েছে।থাকা,খাওয়া আর সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে তারা তাদের কাজ করে যাচ্ছে।বাড়ীতেও একজন রান্নার লোক রেখেছেন।সাহাগিন্নীর এখন পুরো বিশ্রাম।কিন্তু সময় পেলেই দুজনে সেই রাতের কথা আস্তে আস্তে আলোচনা করেন।সেদিন যদি ঝড় জলের রাতে ওই অপরিচিত লোকটাকে আশ্রয় না দিতেন তাহলে এতো আরাম আয়েশে তাদের শেষ বয়সটা কাটতোনা।সেদিন সন্ধ্যা থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়।ঘনঘন বাজ পড়ার শব্দ।এতো জোরে ঝড় হচ্ছিলো দুজনের মনেই আশঙ্কা ছিলো টালি উড়িয়ে নিয়ে যাবে।একটা ছোট বাল্ব জ্বালিয়ে স্বামী,স্ত্রী দুজনে খাটের উপর বসে ছিলেন।হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ।প্রথমে তারা ভেবেছিলেন হাওয়ার দাপট।কিন্তু কিছুক্ষণ পরে শুনতে পান,
---একটু দরজাটা খুলুন না।আমি খুব বিপদে পড়েছি।
গিন্নী নিষেধ করলেও সাহাবাবু দরজা খুলে লোকটিকে ঘরে আনেন।কাকভেজা অবস্থায় তিনি ঘরে ঢোকেন।পিঠে একটা বড় ব্যাগ।সাহাবাবু তার একটা লুঙ্গি আর ফতুয়া পরতে দিলেন।সাথে একটি গামছা।ভদ্রলোক তখন ঠকঠক করে শীতে কাঁপছেন।সাহাবাবু তাকে নিয়ে পাশের ঘরটাতে গেলেন।গিন্নির অনেক মুখঝামটা সর্ত্বেও নিজেদের খাবার থেকে দুটো রুটি আর একটু আলুর তরকারী নিয়ে ভদ্রলোককে দিলেন।কিন্তু সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টিতে ভিজে ভদ্রলোকের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসাতে তিনি কিছুই খেতে পারেননা।সাহাবাবু তখন কি আর করবেন?গরীব মানুষ ঘরে কোন ওষুধপত্র ও নেই।বাইরে প্রবল ঝড়জল।এই অবস্থায় বাইরে বেরোনোও মুশকিল।কোথার থেকে কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেননা।তবুও ভাবলেন কাল সকালে ঝড়বৃষ্টিটা কমলে যদি একটা ডাক্তার ডাকা যায়।
কিন্তু সে সুযোগ তিনি আর পেলেননা।সকালে আগন্তুকের কাছে গিয়ে কোন সারাশব্দ না পেয়ে তিনি ডাক্তার ডেকে আনেন।ডাক্তার এসে জানান তিনি ভোর রাতেই মারা গেছেন।তারপর থানা পুলিশ ক্লাব অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে।ইতিমধ্যে সাহাগিন্নি আগন্তুক মারা যাবার পর তার ব্যাগটি খুলে দেখতে যান কোন মোবাইল বা ঠিকানা পাওয়া যায় কিনা।ব্যাগ খুলে তো তিনি হতবাক।ব্যাগ ভর্তি টাকার বাণ্ডিল।তিনি তার স্বামীকে ডেকে দেখান।দুজনেই ঠিক করেন এ কথা তারা গোপন রাখবেন।এমনকি মেয়েকেও এ কথা জানাবেন না।নাম ধাম গোত্রহীন একজন এক ব্যাগ টাকা নিয়ে এসে তার বাড়ীতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা থেকে চিরজীবনের জন্য চলে গেলেন একে তারা মা লক্ষ্মীর কৃপা বলেই মেনে নিলেন।পুলিশের সহায়তা নিয়ে পাড়ার ছেলেদের মাধ্যমে তিনি ভদ্রলোকের দাহকাজ সম্পন্ন করেন।
তারপরই তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়।আর তাদের এই হঠাৎ বড়লোক হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনী সকলের অগোচরেই ঠেকে যায়।