Tuesday, October 30, 2018

নাইবা পেলাম
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

নাইবা পেলাম তোমায় আমি
নিজের করে কাছে,
সারাজীবন কাটবে আমার
তোমায় ভালোবেসে।
তোমার পরশ পড়লে মনে
লজ্জায় আজও লাল,
সেই ছোঁয়া রেখে মনে
কাটবে আমার কাল।
ভালোবাসা মানে কি আর
শুধুই কাছে পাওয়া?
প্রিয় আমার থাকবে সুখে
এটাই শুধু চাওয়া।


#   নন্দা 

Monday, October 22, 2018

চিরকুট 
তোমার কাছে আমি পরাজিত, 
ভেঙ্গেছ আমার অহংকার, 
তোমার দুর্বার ভালোবাসার কাছে, 
আমি নতজানু। 
আমার ক্ষুদ্রতা সব ঢেকে, 
আমকে করেছো রাজরানী, 
তোমার কাছে আমি চিরঋণী। 

NMRC   মানবী 

Sunday, October 21, 2018

বাঁচাটাই অর্থহীন
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

জীবনের ঝড়-ঝাপটাগুলি মোকাবেলা করেছি দু'জনে,
আজ আমি একা,
চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।
সবকিছু আজ স্মৃতি!
পুজোর দিনগুলিও ঘরে থাকি বন্ধি,
চারিদিকের এতো কোলাহলের মাঝেও-
মন থাকে উদাসীন।
ঘরের প্রতিটা কোণায় স্মৃতিরা দৌড়ে বেড়ায়।
চেতন-অবচেতনে স্মৃতিরাই ঘিরে থাকে।
আলমারী ভর্তি ঠাসা জামা কাপড়,
কোনটা এখনও নূতন, খোলা হয়নি ভাজ।
তোমার কলম,তোমার ঘড়ি নিত্য ব্যবহার্য জিনিস-
সবকিছুই আছে সেই আগের মতই-
চোখের সম্মুখেই শুধু তুমি নেই!
এভাবে কি বাঁচা যায়?

# নন্দা 

বন্ধন 
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

---এই মেজদি তুই কি করছিস এতক্ষণ বাথরুমে?মেয়েটার ক্ষিদে পেয়েছে তো!
     বাথরুমের কাছে দাঁড়িয়ে রেখা চিৎকার করতে থাকে।কিন্তু ভিতর থেকে কোন সারা না পেয়ে সে ভয় পেয়ে যায়।কাল রাত থেকেই মেজদি শরীরটা খারাপ বলছিলো।জোরে জোরে বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে রেখা।না,কোন সারা নেই।দুই বোনই বাপের বাড়ি এসছে এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে।দুজনেরই দুটি মেয়ে।রেখা ছোট হলেও রেখার মেয়েটি তার মেজদি শিখার মেয়ের থেকে একবছরের বড়।বড়দির শ্বশুরবাড়ি চেন্নাই।বড়দির কোন ছেলেমেয়ে হয়নি।রেখা ও শিখার শ্বশুরবাড়ি কলকাতাতেই।যখন বাপের বাড়িতে তারা আসে দুজনে একসাথেই আসে যাতে দেখা হয়।কথায় বলে,"গাঙ্গে গাঙ্গে দেখা হয় তো বোনে বোনে দেখা হয়না।"কিন্তু ছোটবেলা থেকেই এই দুই বোনের খুব মিল।তারা সবসময় ফোন করে একদিনেই আসে।আর এর ফলে ওই দুটি বাচ্চার মধ্যেও খুব মিল।একজনের বয়স চার আর একজনের পাঁচ।  
    সেই মুহূর্তে বাড়িতে অন্য কেউই ছিলোনা।রেখাদের বাড়ির সামনেই রাস্তার ওপারে ছিলো ক্লাব।সে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে যেয়ে ক্লাবের ছেলেদের ডেকে আনে।ছেলেগুলো এসে বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে ফেলে।কিন্তু ততক্ষণে যা অঘটন ঘটা ঘটে গেছে। 
       সঙ্গে সঙ্গেই শিখাকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়।কিন্তু ডাক্তার জানান প্রায় ঘন্টা খানেক আগেই শিখার মৃত্যু হয়েছে।
        রেখার বাবা নেই।বৃদ্ধা মা ও অবিবাহিত ভায়ের সংসার।বাচ্চাটিকে নিয়ে রেখা অথই সমুদ্রে পড়ে।এদিকে ভগ্নিপতিও একা মানুষ।তার ওফিস রয়েছে।সেও বাচ্চাটিকে নিয়ে যেতে পারবেনা।বাড়িতে কে দেখবে তাকে?শেষমেষ রেখা ঠিক করে সেই ওকে মানুষ করবে।আজ থেকে না হয় ভাববে তার দুটি মেয়ে।ছোট্ট রিয়া বুঝতেও পারলোনা সে জীবনে কি হারিয়ে ফেললো।খবর পেয়েই চেন্নাই থেকে চলে আসেন ওদের বড়দি বিশাখা।তিনি এসেই মা হারা মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,"ঈশ্বর তোমার কাছে আমি যে ভাবেই হোক একটি সন্তান চেয়েছিলাম কিন্তু আমি তো এভাবে মা হতে চাইনি।এটা তুমি কেন করলে?তুমি সব আগে থাকতেই ঠিক করে রাখো সবাই বলে।তাই কি তুমি আমার কোল এতদিন রিয়ার জন্যই ফাঁকা রেখেছিলে?কেন করলে এটা?এই ছোট্ট বয়সে কেন ওকে মাতৃহারা করলে?"বিশাখা জ্ঞান হারালো।নানানভাবে তখন সবাই চেষ্টা করে তার জ্ঞান ফেরালো।রিয়াকে কোলে নিয়ে সে তার মেজ ভগ্নিপতিকে ডেকে বললো,"অনল তোমার বয়স কম। পুরো জীবন তোমার পড়ে রয়েছে। কিছুদিন পড় তুমি পূনরায় বিয়ে করবে হয়তো। তখন এই মা হারা শিশুটির কি হবে বলতে পারো?মেয়েটিকে দেখাশুনা করারও কেউ নেই তোমার বাড়িতে এখন ।বিয়ের পর ওর সৎমা ওকে দেখবে কিনা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই । আমি ওকে দত্তক নিতে চাই।তোমার কোন আপত্তি নেই তো?"        
           বিশাখা রিয়াকে দত্তক নিয়ে পূনরায় তার শ্বশুরবাড়ি ফিরে গেলো।বিশাখার সংসারে অর্থের কোন অভাব নেই অভাব ছিলো শুধু একটি বাচ্চার।রিয়া তার ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় আর বিশাখার চোখের থেকে অশ্রু ঝরে পড়ে তা আনন্দ আর ছোট বোনকে হারানোর বেদনার।রিয়ার সবকিছুতেই সে খুঁজে পায় তার বোন শিখাকে।
       নিজের মনের মত করে সে রিয়াকে মানুষ করে।আজ রিয়ার বিয়ে।রিয়া জানে সে বিশাখার মেয়ে নয়।কিন্তু মায়ের অভাব সে কোনদিনও অনুভব করেনি। 
        হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী মেয়েকে প্রথম শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় কাঁধের উপর থেকে চাল দিয়ে মাতৃ ঋণ শোধ করতে হয়।কিন্তু রিয়া তা করেনি।সে বলেছে,"যে ঋণ বুকের তাজা রক্ত দিয়েও শোধ করা যায়না সে ঋণ আমি কিছুতেই এভাবে লোক দেখানো কথা বলে নাটক করতে পারবোনা।"
        বিশাখার এখন অনেক বয়স।স্বামী বেশ কয়েক বছর গত হয়েছেন।এখন তিনি তার আদরের রিয়ার বাড়িতে তার দুই নাতি নাতনীকে নিয়ে সবসময় আনন্দে মেতে থাকেন।কারন মাকে রিয়া একা রাখতে ভয় পায়।জামাই বাড়িতে থাকতে না চেয়ে যতবারই নিজের ঘরে বিশাখা ফিরতে চেয়েছেন রিয়া তার কোন আপত্তিই কানে তোলেনি। 
                                 (শেষ)



  একটি সত্য ঘটনা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

   সেদিনটি ছিলো কুয়াশাচ্ছন্ন শরতের সকাল।পূর্বদিকের জানলাটা আমি খুলেই ঘুমাই।আমার বাড়ির ঠিক পূর্বদিকেই মন্দিরার নিজ হাতে লাগানো শিউলি গাছটি বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে।সারাবছরই গাছটাতে দু'চারটি ফুল ফুটলেও পুজোর সময় শিউলিতলা ফুলে ভর্তি হয়ে থাকে।আর তার মিষ্টি সুবাস  পুবের জানলা দিয়ে আমার ঘরে ঢুকে রোজ সকলে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়।
      সেদিন ছিলো অষ্টমীর সকাল।ঘুম ভেঙ্গে আমি এসে আমার সাধের ছোট্ট ব্যালকনিতাতে দাঁড়ালাম।রাস্তার পারে প্রাচীরের গা গেষে একটি নারকেল গাছে বেশ কয়েকটি পাখি বসে আপনমনে তাদের নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় মগ্ন।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই এই সময়টা আমি একটু প্রাণায়াম করি।আমি আমার নিত্য কর্মে মন দিলাম।হঠাৎ একটি কোলাহল কানে এলো।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সামনের রাস্তা দিয়ে একটি শববাহী গাড়ি আসছে আর তার পিছনে পরিচিত মানুষের ঢল।মুহূর্তে সবকিছু ভুলে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসি।কে চলে গেলো?অকালেই কি অঘটন ঘটে গেলো?এই কোলাহল আনন্দউৎসবের দিনে কার বাড়িতে এতো বড় অঘটন ঘটলো?শরীর মন শিউরে উঠলো।মৃত্যু মানুষের জীবনে এমন একটা পরিণতি মানুষ সেখানে দম দেওয়া পুতুল মাত্র।প্রেমপ্রীতি দিয়ে গড়া এই সংসার,সবথেকে কাছের মানুষগুলো,আত্মীয়স্বজন সব কিছু ছেড়ে একদিন চিরতরে চলে যেতেই হবে।এটাই বিধাতার লিখন।যাওয়ার সময় হলে কেউ তাকে ধরে রাখতে পারবেনা।সংসার সমুদ্রের একপাড়ে জীবন অপর পাড়ে মৃত্যু।বিশ্বজয়ী শক্তি,অতুল সম্পদ আকাশচুম্বী কীর্তি -কোনকিছুই মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি।কবি তো বলেই গেছেন,
"মরণ কি টেনে দেবে আঁখিকোণে অন্ধ আবরণ,
এপার ওপার মাঝে রবেনাকো' স্মৃতির বন্ধন।
      পরিচিত একজনকে দেখে জানতে চাইলাম ঘটনার বিবরণ।যা শুনলাম তাতে মাথাটা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো।এতো অল্প বয়সে এমন দুটি তাজা প্রাণ চলে গেলো?নিজের অজান্তেই চোখের থেকে জল বেরিয়ে আসলো।
   'পরিবার মানবজীবনে সব চাইতে বড় শিক্ষাকেন্দ্র আর মাতাপিতা সবচাইতে বড় শিক্ষক,-কিন্তু সত্যিই কি আজকের যুগে সে কথা খাটে? পরিবারের সব শিক্ষা কি সব সন্তানেরা নিতে পারে?দেখা যায় একই পরিবারের তিনটি সন্তান একই শিক্ষা পেয়েও তিন রকম ভাবে বেরে ওঠে।কোনটি খুব ভালো আবার কোনটি খুব খারাপ।বাবা মায়ের শিক্ষা কি সব সময় কাজে আসে?কোনো বাবা মা কি চান তার সন্তান কূপথে যাক?অল্প বয়সী ছেলেমেয়ের মধ্যে দোষ দেখলেই আমরা অধিকাংশই বাবা মায়ের কোন শিক্ষা নেই বলে চেঁচাতে শুরু করি।কিন্তু কেন করি?নিজের সন্তানটিকেই কি নিজের মনের মত করে মানুষ করতে পারি?তবে অন্যের সন্তানের ক্ষেত্রে তার মাতা পিতাকে কেন টেনে আনি?
      রবীন সেনের দুই ছেলে।বড়টি ইঞ্জিনিয়ার।ছোটটিও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।বাড়ির থেকেই কলেজে যাতায়াত করে।একটু ত্যাঁদড় গোছের।কিন্তু বড় ছেলেটি খুবই ভালো।ভদ্র, বিনয়ী এবং অমায়িক।ছোট ছেলে অসিত এই পুজোর সময়ে সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত বন্ধুদের সাথেই রোজ কাটাচ্ছে।বাড়িতে এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও পুজোর সময় বিশেষ কোন বাঁধা ছিলোনা।অষ্টমী পুজোর রাতে পাড়ার প্যান্ডেলেই ছিলো।কয়েকজন বন্ধু এসে পড়ায় ছ সাতজন মিলে তিনটি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।রাতে সেদিন একটু বৃষ্টিও হয়েছিলো।চাকা পিছলে যেয়ে অসিত সহ বাকি দুটি ছেলে বাইক থেকে পড়ে যায়।ঘটনাস্থলেই অসিত সহ আর একটি ছেলের মাথা পুরো থেঁতলে যায়।স্পট ডেড।ভোর রাতেই বাড়িতে খবর আসে।জানা যায় প্রত্যেকটি ছেলে ড্রিংক করেছিলো।অল্প বয়সে অধঃপতন যাওয়ার ফল ভুগতে হোল বাবা মা ও পরিবারের বাকি সদস্যদের।
     মৃত্যু অবধারিত।কিন্তু এ কেমন মৃত্যু?ফুল ফোঁটবার আগেই যে ঝরে যায়!তাকে কি মেনে নেওয়া যায়?এটা একটা দুর্ঘটনা ঠিক কিন্তু তাই বলে এই অল্প বয়সী ছেলেটির মৃত্যুর পরেও তার বাবা মায়ের কষ্টের কথা না ভেবে তাদের শিক্ষা নিয়ে কথা বলতে হবে?আর যারা সেটা করেন বা এই ঘটনার পর করছেন তাদের মানুষ ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।বেশিক্ষণ আর পথের মধ্যে দাঁড়িয়ে ওইসব কথা শোনার মত মনের অবস্থা আমার ছিলোনা।আস্তে আস্তে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।হঠাৎ করেই শরতের নীলাকাশটা আমার কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠলো।
   

Wednesday, October 17, 2018

চিরকুট
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

পুজোর দিনেও মন যদি থাকে বিষন্ন,
নিরিবিলি জানলার কাছে বসেও-
শব্দমালা গাঁথা হয়ে ওঠেনা।
চারিদিকে কোলাহল,ঢাকের আওয়াজ,
মনকে শান্ত করতে পারেনা!
ফিরে যাই বারবার সেই অতীতে,
যেখানে তুমি ছিলে আমার পাশে।

  # নন্দা 

Monday, October 15, 2018

তুমি নেই


মাধবীর লড়ায়
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     মাধবীর যখন অনিন্দ্যর সাথে বিয়ের কথা হচ্ছিলো তখন অনেকেই মাধবীর ভাগ্যকে হিংসার চোখে দেখেছিলো।পাড়াপ্রতিবেশী মুখে কেউ কিছু না বললেও যাদের ঘরে বিবাহযোগ্যা মেয়ে আছে তাদের অনেকেই ঘটনাটিকে ভালো চোখে মেনে নেননি।
     দুর্গাপদ সাহার মেয়ের বিয়েতে শহরের এক আত্মীয়ের আগমন ঘটেছিলো।সেখানেই মাধবীকে দেখে ওই আত্মীয়ের পছন্দ হয়।তিনি তার একমাত্র ডক্টর ছেলের জন্য একটি ঘরোয়া মেয়ে খুঁজছিলেন।বাপ আর ছেলের সংসারে প্রয়োজন ছিলো একটি লক্ষীমন্ত মেয়ের।মাধবীকে দেখে নীলকান্তবাবুর খুব পছন্দ হয়।মাধবীর বাবা-মাকে সে কথা জানাতে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন।তারা যে স্বপ্নেও কল্পনা করেননি এমন একটি ছেলের সাথে তাদের মেয়ের বিয়ে হতে পারে।গ্রামের স্কুল থেকে মাধবী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে।সে কথা নীলকান্তবাবুকে জানাতে তিনি বলেন,"আমার ঘরের লক্ষ্মী তো চাকরী করতে যাবেনা।ওই টুকুতেই আমার চলবে।"
         শুভ দিন দেখে মাধবী ও অনিন্দ্যর বিয়ে হয়ে গেলো।কিন্তু মাধবীর ভাগ্যকে লোকে হিংসা করলেও বিধাতা পুরুষ তার কপালে লিখেছিলেন অন্যকিছু।খুব ধুমধাম করে বৌভাত মিটে গেলো।শুধু অনিন্দ্যর ঘরটিকেই নয় পুরো বাড়িটাই নীলকান্তবাবু সাজিয়েছিলেন টাটকা ফুল দিয়ে।কোন কাগজের বা প্লাস্টিকের ফুল নয়। তাজা ফুলের গন্ধে বাড়িটা ম ম করছিলো।ফুলশয্যার ঘরে আনুসঙ্গিক কাজ মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনেরা যে যার ঘরে চলে যান।অনিন্দ্যও দরজা বন্ধ করে খাটে এসে বসে।নানান কথাবার্তার মাঝে সে মাধবীকে বোঝাতে চাইলো বাবা ই তার জীবনের সব।বাবাকে সে ঈশ্বর জ্ঞানে ভক্তি করে।মাধবীর ব্যবহারে তিনি যেন কোনদিন কখনোই কোন কষ্ট না পান।মাধবীও ফুলশয্যার রাতে তার স্বামীকে কথা দেয় তার জীবন থাকতে সে কোনদিন তার শ্বশুরমশাইকে কষ্ট দেবেনা।
                        (2)
     ঘটনার দশ বছর পর আবারও সে রোগশয্যায় শায়িত শ্বশুরমশাই এর হাতদুটো ধরে কথা দেয় সে তার জীবনটাকে নূতনভাবে শুরু করবে।ফুলশয্যার রাতেই নিওরো সার্জন অনিন্দ্য হাসপাতালের ইমার্জেন্সি কলে সদ্য বিবাহিতাকে ছেড়ে ছুটে যেতে বাধ্য হয়েছিলো সরকারী দায়িত্ব পালনের জন্য।কিন্তু রোগীকে সে বাঁচাতে পারলেও নিজেকে সে বাঁচাতে পারেনি।নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলো।হাসপাতালে সেদিন তার আন্ডারে থাকা রোগীর জরুরী অপারেশান করতে হয়েছিলো।সারাদিনে বাড়িতে অথিতি সমাগমের ধকল,হাসপাতালের রোগীকে নিয়ে টেনশান, অপারেশান -সব মিলিয়ে সে ছিলো প্রচন্ড টায়ার্ড।সেই অবস্থায় ড্রাইভিং সিটে বসে একটা পাঞ্জাব লরির সাথে প্রচন্ড ধাক্কায় পূরো শরীরটা তার পিষে যায়।আর পরিণতি ঘটনাস্থলেই মৃত্যু।
                      (3)
আত্মীয়স্বজনেরা মাধবীকে অপয়া আখ্যা দিলেও নীলকান্তবাবু কিন্তু তাকে বুকের ভিতর চেপে রেখে শান্তনা দিয়ে গেছেন।মাধবীর জন্য তিনি তার ছেলেকে হারিয়েছেন এ কথা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করেন না।তিনি তার ভবিতব্যকে মেনে নিয়েছেন।তিনি মেনে নিয়েছেন তার অনিন্দ্যর ওই পর্যন্ত আয়ু ছিলো।মাধবীকে ভালো রাখতে তিনি আস্তে আস্তে আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ পর্যন্ত করেন।কারন সকলেই মাধবীকে কুনজরে দেখে;অলক্ষ্মী,অপয়া বলে।মাধবী নীলকান্তবাবুর পরিবারে ছেলের বৌ নয় আদরের কন্যা।মাধবীর বাবা মা তাকে জানিয়েই দিয়েছিলেন ওই অ  লক্ষ্মী মেয়েকে গ্রামে তারা আর ফিরিয়ে নেবেননা।
      নীলকান্তবাবু মাধবীকে পূণরায় পড়াশুনা শুরু করান।বছর পাঁচেকের মধ্যে মাধবী কলেজে ইংরাজীর প্রফেসার পদে নিযুক্ত হয়।তিনি মেয়েকে বারবার বিয়ের কথা বললেও মাধবীর সেই এক কথা,
---তোমায় ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা।
---কিন্তু মা আমি যখন থাকবোনা তখন তোকে দেখবে কে ?
---তখনকার কথা নাহয় তখন ভাববো বাবা।এখন এসব ভেবে তুমি তোমার শরীর খারাপ কোরনা।আমার ভাগ্যকে পরাজিত করে তুমি আমায় বাঁচার রাস্তা দেখিয়েছ।তুমি আমার কাছে ঈশ্বর।সেই ঈশ্বরকে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবোনা।
                       (5)
      মাধবী তার ঈশ্বরকে ছেড়ে না গেলেও মাধবীর ঈশ্বর মাধবীকে ছেড়ে চিরদিনের মত পরপারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তাকে সম্পূর্ণ একা করে দিয়ে।মাধবীর তখন পঁয়ত্রিশ বছর বয়স।আজ পর্যন্ত সে কোন ছেলের সন্ধান সে পায়নি যাকে সে ভালবাসতে পারে।একটা রাতের জন্য হলেও স্বামীকে সে কোনদিনও ভুলতে পারেনি।ফুল শয্যার রাতে তার মনে হয়েছিলো বহু জনমের তপস্যার পূণ্যফলে সে অনিন্দ্যর মত স্বামী পেয়েছে।কিন্তু নিয়তি বুঝি তার এই ভাবনা বুঝতে পেরে অলক্ষ্যে হেসেছিলেন।মাত্র কয়েকটা ঘন্টা অনিন্দ্যর সাথে কাটিয়ে সে তার সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলো।কিন্তু তার কপালে ভালোবাসা সইলোনা।অনিন্দ্যকে দেওয়া কথা সে পালন করতে পেরেছে কিন্তু তার শ্বশুরকে দেওয়া কথা সে এই বয়সে এসে রাখবে কেমন করে?চাকরী আর শ্বশুরের মস্তবড় বাড়ি এই হোল আজ মাধবীর জীবন।

    # নন্দা

Friday, October 5, 2018

সবই ভুল
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অধিক রাতের স্বপ্নগুলো বড্ড বেদনাময়,
ঘুমের মাঝেও বারবার আর্তনাদ করে উঠি,
কল্পনায় তুমি এসে সামনে দাঁড়াও!
একবুক জ্বালা নিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি,
বুকের পাঁজরে তখন কুঠারাঘাত হয়!
বাস্তবের সাথে যার কোন মিল নেই।
দম বন্ধ হয়ে আসে,
চিৎকার করে বলতে চাই-
'এই তো তুমি আছো
তুমি তো হারিয়ে যাওনি।'
মুখ থেকে আওয়াজ বের হয়না,
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।
হাত-পা অসার হয়ে পরে।

ঘুম ভেঙ্গে বাস্তবে ফিরে আসি;
যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকি।
তোমার ভালোবাসার স্বপ্নগুলো-
পূণরায় বাক্সবন্ধি করে একসময় ঘুমিয়ে পড়ি।

    # নন্দা 

Thursday, October 4, 2018

খোকার পুজো
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ঢ্যাংকুড়কুড় বাদ্য বাজে,
ঢাকের মিষ্টি বোল-
বাজছে কাঁসর বাজছে শাঁখ,
বাজছে ঢুলির ঢোল।
আনন্দে সবাই নাচছে পুজোয়,
সাজছে নানান সাজে,
ব্যস্ত সবাই প্যান্ডেলেতে,
পুজোর নানান কাজে।
ঢুলি এসেছে গ্রাম থেকে,
সাথে ছোট্ট ছেলে ,
ছেঁড়া জামা গায়ে দিয়ে-
পুজো দেখবে বলে।
নিত্য নূতন পড়ছে জামা,
ছোট বড় সবাই,
নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবে,
আমরা পয়সা কামাই!
মায়ের সামনে দু'হাত জোড়ে,
দাঁড়িয়ে ঢুলির ছেলে,
মনেমনে ভাবে শুধু,
তার দুখিনী মায়ের যদি,
একটি কাপড় মেলে।
কত কাপড় মায়ের পায়ে,
দিচ্ছে জমা সবাই!
চোখের জলে ভাবে ছেলে,
মায়ের একটি কাপড় চাই।
'থাকনা আমার ছেঁড়া জামা,
কিবা এসে যায়?
মাকে যেন একটি কাপড়,
মা দুর্গা দেয়।'

# নন্দা

Tuesday, October 2, 2018

দাম্পত্য
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
😁😁😁😁😁😁😁😁😁
ভালোবাসি ভীষন ভাবে,
তুমিও নও কম;
একটু দূরে সরলেই-
মন করে আনচান।
তুমি ছাড়া সবই তুচ্ছ,
ভালোবাসায় পুরে হই ভস্ম,
পানের থেকে খসলে চুন-
রেগে দুজনেই আগুন।

রাত যত গভীর হয়,
রাগ তত পড়তে থাকে,
পাশ ফিরে দু'জনেই-
কে কাকে আগে ডাকে। 😁