নজরুল বিষয়ক প্রবন্ধ
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে একজন পরম শক্তিমান কবি। যে যুগে নজরুল সাহিত্যচর্চা শুরু করেন সে যুগটি ছিলো একটি উত্তাল আন্দোলনের যুগ।স্বাধীনতার জন্য মানুষ তখন সংগ্রাম মুখর,আলোড়নে বিক্ষুব্ধ।নজরুল কাব্যে এই মুক্তি আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি অতিমাত্রায় ধরা পড়েছে। আধুনিক বাংলা কাব্যের ক্ষেত্রে বিশ্বকবির পরেই কবি নজরুলের নামই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।যাকে আমরা বিদ্রোহী কবি হিসাবেই চিনি।তাঁর অসাধারন সৃজনী-প্রতিভা সর্বজনস্বীকৃত। অভাবনীয় তারুণ্যের বিজয় পতাকা উদ্দীন করে তিনি সহসা একদিন সকলের সম্মুখীন এসে দাঁড়ান।নজরুলের 'প্রলয়োল্লাস' কবিতার তিনটি ছত্র -"তোরা সব জয়ধ্বনি কর,ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখী ঝড়।"এই কথাগুলি কবির অতর্কিত আবির্ভাবে তিনি অদৃষ্টপূর্ব নূতনের জয়ধ্বজা উড়ালেন তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতার প্রকাশ বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।এই একটি মাত্র কবিতা কবির খ্যাতি দেশময় পরিব্যাপ্ত করে দেয়।
তিনি বাঙ্গালীর মন ও মননে প্রবেশ করেছিলেন 'ধূমকেতুর' মত। তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক।গণবিক্ষোভ ও জন-জাগরণের যুগে নজরুলের শ্রেষ্ঠ কবিতার অনেকগুলিই রচিত হয়। আর তখনই তিনি উচ্চারণ করেন বন্ধনহারা মুক্তজীবনের সঙ্গীত;উদাত্ত কন্ঠে তিনি দেশের মানুষকে আহ্বান করেন সত্যের দুর্গম পথে, বীর্যদীপ্ত মহান ত্যাগের ক্ষেত্রে।সেদিনের রাজরোষ কবির উদ্ধত শিরকে অবনত করতে পারেনি,তাঁর লেখনীকে স্তব্ধ করতে পারেনি, সাম্প্রদায়গত কিংবা জাতিভেদমূলক কোন প্রশ্ন নজরুলকে সংকীর্ণতার পথে পরিচালিত করতে পারেনি।তাঁর কাছে মানুষই ছিলো বড় কথা।"মানুষের চেয়ে বড় কিছু নয়,নহে কিছু মহীয়ান।"কবি মনুষ্যত্বের পূজারী,মানুষের বেদনাকে তিনি ছন্দায়িত ভাষায় ব্যক্ত করেছেন।যুগের বেদনা ও উন্মাদনা তিনি অন্তরে গভীরভাবে উপলব্দি করেছেন।সমগ্র জাতিকে নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সেদিন তিনি তাঁর লেখনী হাতে তুলে নিয়েছিলেন।
তিনি শুধু বিদ্রোহী কবিই ছিলেননা, তিনি ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক কবি , পাগলপারা প্রেমিক কবি।তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সেন পরিবারের গিরিবালাদেবীর একমাত্র মেয়ে প্রমীলাকে।এই প্রমীলা নামটি কবি নজরুলেরই দেওয়া।তিনি তার স্ত্রীকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন।প্রমীলা নজরুল মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হলে এক দরবেশের কথামত তিনি কচুরিপানা ভর্তি একটি পুকুরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে তাবীজ এনে তার প্রাণের অধিক প্রিয় স্ত্রীকে দিয়েছিলেন।ডাক্তার, বদ্যি কোনোকিছুই বাদ রাখেননি।আমৃত্যু তার শ্বাশুড়ীমাতা তার কাছেই ছিলেন এবং কবির বাড়িতেই পূজার্চনা করতেন। নানান ধরনের ইসলামিক গীতের সাথে সাথে তিনি প্রচুর শ্যামাসঙ্গীতও লিখে গেছেন।
আজ এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যুগে বিদ্রোহী কবির মত কোন কান্ডারী আমাদের পাশে এসে যদি সেই সুরে সুর মেলাতেন ,"মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। "
তাহলে হয়তো মানব হত্যালীলা কিছুটা বন্ধ হত।
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে একজন পরম শক্তিমান কবি। যে যুগে নজরুল সাহিত্যচর্চা শুরু করেন সে যুগটি ছিলো একটি উত্তাল আন্দোলনের যুগ।স্বাধীনতার জন্য মানুষ তখন সংগ্রাম মুখর,আলোড়নে বিক্ষুব্ধ।নজরুল কাব্যে এই মুক্তি আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি অতিমাত্রায় ধরা পড়েছে। আধুনিক বাংলা কাব্যের ক্ষেত্রে বিশ্বকবির পরেই কবি নজরুলের নামই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।যাকে আমরা বিদ্রোহী কবি হিসাবেই চিনি।তাঁর অসাধারন সৃজনী-প্রতিভা সর্বজনস্বীকৃত। অভাবনীয় তারুণ্যের বিজয় পতাকা উদ্দীন করে তিনি সহসা একদিন সকলের সম্মুখীন এসে দাঁড়ান।নজরুলের 'প্রলয়োল্লাস' কবিতার তিনটি ছত্র -"তোরা সব জয়ধ্বনি কর,ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখী ঝড়।"এই কথাগুলি কবির অতর্কিত আবির্ভাবে তিনি অদৃষ্টপূর্ব নূতনের জয়ধ্বজা উড়ালেন তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতার প্রকাশ বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।এই একটি মাত্র কবিতা কবির খ্যাতি দেশময় পরিব্যাপ্ত করে দেয়।
তিনি বাঙ্গালীর মন ও মননে প্রবেশ করেছিলেন 'ধূমকেতুর' মত। তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক।গণবিক্ষোভ ও জন-জাগরণের যুগে নজরুলের শ্রেষ্ঠ কবিতার অনেকগুলিই রচিত হয়। আর তখনই তিনি উচ্চারণ করেন বন্ধনহারা মুক্তজীবনের সঙ্গীত;উদাত্ত কন্ঠে তিনি দেশের মানুষকে আহ্বান করেন সত্যের দুর্গম পথে, বীর্যদীপ্ত মহান ত্যাগের ক্ষেত্রে।সেদিনের রাজরোষ কবির উদ্ধত শিরকে অবনত করতে পারেনি,তাঁর লেখনীকে স্তব্ধ করতে পারেনি, সাম্প্রদায়গত কিংবা জাতিভেদমূলক কোন প্রশ্ন নজরুলকে সংকীর্ণতার পথে পরিচালিত করতে পারেনি।তাঁর কাছে মানুষই ছিলো বড় কথা।"মানুষের চেয়ে বড় কিছু নয়,নহে কিছু মহীয়ান।"কবি মনুষ্যত্বের পূজারী,মানুষের বেদনাকে তিনি ছন্দায়িত ভাষায় ব্যক্ত করেছেন।যুগের বেদনা ও উন্মাদনা তিনি অন্তরে গভীরভাবে উপলব্দি করেছেন।সমগ্র জাতিকে নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সেদিন তিনি তাঁর লেখনী হাতে তুলে নিয়েছিলেন।
তিনি শুধু বিদ্রোহী কবিই ছিলেননা, তিনি ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক কবি , পাগলপারা প্রেমিক কবি।তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সেন পরিবারের গিরিবালাদেবীর একমাত্র মেয়ে প্রমীলাকে।এই প্রমীলা নামটি কবি নজরুলেরই দেওয়া।তিনি তার স্ত্রীকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন।প্রমীলা নজরুল মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হলে এক দরবেশের কথামত তিনি কচুরিপানা ভর্তি একটি পুকুরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে তাবীজ এনে তার প্রাণের অধিক প্রিয় স্ত্রীকে দিয়েছিলেন।ডাক্তার, বদ্যি কোনোকিছুই বাদ রাখেননি।আমৃত্যু তার শ্বাশুড়ীমাতা তার কাছেই ছিলেন এবং কবির বাড়িতেই পূজার্চনা করতেন। নানান ধরনের ইসলামিক গীতের সাথে সাথে তিনি প্রচুর শ্যামাসঙ্গীতও লিখে গেছেন।
আজ এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যুগে বিদ্রোহী কবির মত কোন কান্ডারী আমাদের পাশে এসে যদি সেই সুরে সুর মেলাতেন ,"মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। "
তাহলে হয়তো মানব হত্যালীলা কিছুটা বন্ধ হত।
No comments:
Post a Comment