Saturday, May 12, 2018

কেউ ঠেকে শেখে (অনুগল্প)
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

---সারাটাদিন পরিশ্রম করে বাড়িতে এসে কোনদিন একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারলামনা;রোজ এক ঘ্যানঘ্যানানী-প্যানপ্যানানী।আমি তো তোমাকে বলেছি আমার সাথে সংসার করতে হলে আমার মাকে তোমার মেনে নিতেই হবে,আমি মাকে কোনদিনও বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবো না।
---আর আমিও তোমায় বলে রাখলাম উনাকে বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠালে আমি এই বাড়িতে থাকবোনা।
---চলে যাও, কেউ তোমায় বারন করবেনা।
---দক্ষিন দিকের সব থেকে বড় ঘরটা নিয়ে আছেন,কেন বাপু এই বয়সে একাএকা থাকতে ওত বড় ঘরের কি দরকার?
---বাড়িটা বাবা বানিয়েছিলেন,আমি যখন ছোট ছিলাম বাবা,মা আর আমি তিনজনেই ওই ঘরটাতে থাকতাম।ওর ঘরটায় বাবার সব স্মৃতি জড়িয়ে আছে।মা যতদিন বাঁচবেন ওই ঘরটাতেই থাকবেন।
---তাহলে তুমি তোমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়বে না ?
--না।আমার মা আমার কাছেই থাকবেন।

            পরদিন ভোরেই নবনীতা ব্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।শান্তিদেবী বারবার জিজ্ঞেস করাতেও কোন উত্তর দিলোনা।তিনি ছুটে গেলেন ছেলের কাছে।কিছুই না লুকিয়ে রন্জিত সব তার মাকে খুলে বলে।শান্তিদেবী কিছুটা গুম হয়ে বসে থেকে ধীরে ধীরে বললেন,
---তারমানে তোর সংসারটা আমার জন্য ভেঙ্গে গেল।দেনা আমায় পাঠিয়ে যেখানে বৌমা পাঠাতে বলছে।
---তুমি কি পাগল হলে মা?বাবার মৃত্যুর পর আমাকে মানুষ করতে তুমি কত কষ্ট করেছো।আমি চাকরী পাওয়ার পর একটু সুখের মুখ দেখেছো আর আমি তোমায় বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেবো বৌ এর কথায়? না মা,আমি তা পারবোনা।আরে দেখোনা ক'দিন পরেই চলে আসবে।বেশিদিন ওখানে থাকতে পারবেনা তার কারন শ্বশুরমশাই রিটায়ার করেছেন ওর ভাই বৌ ওকে ওখানে থাকতেই দেবেনা।

                        (2)
      বাপের বাড়িতে এসে কয়েকটা দিন খুব ভালোই কাটলো।রাগ করে নবনীতা রন্জিতকে কোন ফোনও করেনা।ননদের ফিরে যাওয়ার কোন লক্ষন না দেখে ভাইবৌ জানতে চাইলো,
---রন্জিত কবে আসবে গো?
---ও কেন আসবে এখানে?আমিই আর ফিরবোনা ওখানে।
    সেদিন রাতে নবনীতার ভাই নবায়ন ও তার স্ত্রী জয়ার ঝগড়া চরমে উঠলো।কত করে বললাম তোমার বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দাও, এখনও তো তার কোন লক্ষন দেখছিনা উপরন্ত তোমার দিদি এসে ঘাড়ে চেপে বসলো।
---আরে বাবা আমি তো চেষ্টা করছি বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর;এককালীন কিছু টাকা লাগবে সেটা তো বাবার কাছ থেকেই নিতে হবে না কি !খামোখা নিজের জমানো টাকা খরচ করে কি লাভ ?
---আর তোমার দিদি ?
---ওটা তুমি সামলাও।একটু চেঁচামেচি-ঝগড়াঝাটি করলেই চলে যাবে দেখো।
         প্রথম দিকে চিৎকারটা এত জোড়ে জোড়ে হচ্ছিল নবনীতা এসে ওদের বন্ধ দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলো।তারপর সমস্ত কথাগুলো শুনে তার চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।বুঝতে পারলো কতবড় ভুল সে করেছে।রঞ্জিতের সাথে নিজের ভায়ের তুলনা করতে যেয়ে মনেমনে ভাবলো নবায়ন এত বড় বৌ ভেঁড়া!বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে রাজি হয়ে গেল ?আর রন্জিত?সে তার মাকে কত ভালোবাসে।এটা আমি ঠিক করিনি।কালই আমি রঞ্জিতের কাছে ফিরে যাবো,পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবো শ্বাশুড়ীমায়ের।তবে যাওয়ার আগে ভাইকে একটা কথা বলে যেতেই হবে -বাবা আর কতদিনই বা বাঁচবেন!চেষ্টা করিস যে কটাদিন উনি বাঁচেন যেন এখানেই থাকতে পারেন।বৃদ্ধাশ্রমে বাবাকে পাঠাসনা।এই বাড়িটা ঘিরে মায়ের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।এই স্মৃতিগুলো সম্বল করেই তো এখনও বেঁচে আছেন , বাকি জীবনটাও এভাবেই কাটাতে দে ।

     #নন্দা 

No comments:

Post a Comment