নুতন ঠিকানা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
নিজের দুমাসের শিশু পুত্রকে চুরি করে রাতের আঁধারে মনীষা অনিদৃষ্ট পথে পা বাড়ায়।অনেকটা পথ হেঁটে আসার পর সে একটা ট্যাক্সি দেখতে পায়।তার উদ্দেশ্য শিয়ালদহ স্টেশনে এসে একটা দূরপাল্লার ট্রেনে উঠে বসতে পারলেই সুজিত ও তার বাড়ির লোকের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারবে। ট্যাক্সিড্রাইভারের মুখের দিকে তাকিয়েই মনীষা থমকে যায়।
--একি ! রাহুল না ?
--মনীষা না ?একা একা এত ভোরে কোথায় যাচ্ছ ?
--রাহুল সব বলবো, আমাকে আপাতত এখান থেকে নিয়ে চলো।
--হ্যাঁ,উঠে বসো।
ট্যাক্সি ছুটলো।একবার ঘাড় ঘুরিয়ে রাহুল জেনে নিলো মনীষা কোথায় যেতে চায়।গাড়ির ভিতর মনীষা ফিরে গেলো দু'বছর আগের কলেজ জীবনে।শুধু মনীষা কেন রাহুলও তখন সেই একই কথা ভাবছে।মেধাবী গরীব রাহুল ভালোবাসতো ধনীর দুলালী মনীষাকে।মনীষার কোন হেলদোল ছিলোনা।বড় লোকের মেয়ে হওয়ার কারনে তার ভিতর একটা অহংকার কাজ করতো। রাহুলের বন্ধু দেবেশ জানতো সে মনীষাকে ভালোবাসে।রাহুলের আপত্তি সত্বেও দেবেশ মনিষাকে কথাটা জানিয়েছিল।মনীষা হো হো করে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে উঠে বলেছিলো,"ও তো খুব গরীব;আমার স্টাটাসের সাথে ঠিক খাপ খায়না।তাছাড়া আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ছেলে বড় ব্যপসায়ী।ফাইনাল পরীক্ষার পরই আমার বিয়ে।রাহুল কবে চাকরি পাবে আদতেই পাবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই।দুটি অবিবাহিতা বোনের জোয়াল রাহুলের কাঁধে।আমি জেনে বুঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াতে পারবোনা"।
হঠাৎ ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে পরে।রাহুল পিছন দিকে মুখ করে বলে,"মনীষা শিয়ালদহ এসে গেছি।কিন্তু তুই তো কিছুই বললিনা?তোর ট্রেন কটায়?তখন কি বলবি বলছিলি?যদি সময় থাকে তোর হাতে আর কোন আপত্তি না থাকে আমায় খুলে বল কি হয়েছে।তোকে দেখে আমার মনে হচ্ছে ভয়ানক কিছু একটা ঘটেছে।দেখিনা তোর কোন সাহায্য করতে পারি কিনা।"
--না আমার কোন তাড়া নেই।নিদিষ্ট কোন গাড়ির টাইমও নেই।এখানে বসেই তোকে আজ আমার জীবনের কঠিন বাস্তবটা জানিয়ে যাই।
মনীষা বলতে শুরু করে।তোর ভালোবাসাকে দেবেশের মাধ্যমে প্রত্যাখান করে বড়লোকের একমাত্র
ব্যবসায়ী ছেলেকে বিয়ে করে বছর খানেক সুখিই ছিলাম।সুজিতরা ধনী ছিলো ঠিকই কিন্তু ওরা মনের দিক থেকে ছিলো খুবই সংকীর্ন।একবছরের মধ্যেই আমার মা-বাবা দুজনেই এ্যাকসিডেন্ট করে মারা যান।আর ঠিক তখন থেকেই আমি চিনতে শুরু করি সুজিতদের।আমার বাবার বিশাল বাড়ি,টাকা,মায়ের প্রচুর গয়নাগাটি সব সুজিত আস্তে আস্তে হস্তগত করতে থাকে।বাঁধা দিয়েছি,
ঝগড়া-অশান্তি করেছি কিন্তু কোনই লাভ হয়নি।পরে নিজের মনকে নিজেই শান্তনা দিয়েছি আমি আর সুজিত কি আলাদা? ও নিজের নামে করতে চাইছে করুক।একই তো ব্যাপার। আমার নামে থাকলেও যা ওর নামে থাকলেও তাই।কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী এর ভিতর মাথা গলাতেন না।তাদের অঙ্গুলী হেলনেই যে সুজিত এগুলি করতো তা বুঝতে আমার আরও অনেক বেশি সময় লাগে আর তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।আপ্রান চেষ্টা করতে থাকি দাঁতে দাঁত দিয়ে মানিয়ে নেওয়ার।ছ'মাস আগে আমার কোল আলো করে আসে আমার ছেলে।কয়েকদিন আগে ছেলের জ্বর হওয়াতে পাড়ার দোকানে ছেলের জন্য ওষুধ আনতে যাই;বলা ভালো সুজিত নিজে না যেয়ে আমায় পাঠায়।রাত তখন দশটা।লোডশেডিং ছিলো।অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি হঠাৎই একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাঁড়ায়।চার থেকে পাঁচজন লোক গাড়ি থেকে নেমেই আমার মুখ চেপে ধরে।তারপর যখন জ্ঞান ফেরে দেখি আমি একটা ঘরে বন্ধি।শুধু খাবার দেওয়ার সময় ছাড়া কোন মানুষকে ওখানে দেখতে পেতাম না।এখন বুঝতে পারি ওখানে আমি তিনদিন ছিলাম।দরজার কাছে একদিন কান পেতে শুনি ওরা ওখান থেকে আমায় অন্যত্র নিয়ে যাবে মানে বিক্রি করে দেবেএবং এটা সুজিতেরই কথামতো।নিজের কানদুটিকেই বিশ্বাস করতে পারছিলামনা।এর আগেও সুজিত দুটি বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি করায়ত্ত্ব করেছে।সেগুলো ছ থেকে এক বছরের মধ্যে করতে পেরেছে কারন তাদের কোন ইস্যু এসেছিলনা। তখনই জানতে পারি বাবা-মার এ্যাকসিডেন্টটা তারই প্লান মাফিক হয়েছে।পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে।চোখের জল তো অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে।মাথায় তখন একটাই চিন্তা যে ভাবেই হোক পালাতে হবে আর সুজিতকেও শাস্তি দিতে হবে।যেদিন এই কথাগুলো শুনি সেদিন হয়তো ঈশ্বর আমার সহায় ছিলেন তাই সেই রাতেই আমি পালাতে সক্ষম হই।আমাকে খাবার দিয়ে বাইরে বসে কথা বলতে বলতে তারা দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করতেই ভুলে গেছিল।মনে অসীম সাহস সঞ্চয় করে সুজিতের মুখোমুখি একবার দাঁড়ানোর জন্য অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে তার বাড়িতেই ফিরে আসি কারন সেই মুহূর্তে এই ছাড়া আর কোন পথও খোলা ছিলোনা।আমার কাছে এটা পরিস্কার হয়ে গেছিল সুজিতের ধনী হওয়ার পিছনে বড়লোকের মেয়েদের বিয়ে করে নিখুঁতভাবে প্লট সাজিয়ে পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিয়ে সম্পত্তি হাতানোই তার ব্যবসা।পরে মেয়েটিকেও মোটা টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া।তারপরই সেখানকার পাট চুকিয়ে অন্যত্র জালপাতা।
আমাকে দেখতে পেলে সুজিত বা তার বাবা-মা যে ঘরে ঢুকতে দেবেনা এটা আমি জানতাম।তাই শ্বাশুড়ী যখন দরজা খোলে তখন ঘোমটা দেওয়া অবস্থাতেই তাকে ধাক্কা মেরে ঘরে ঢুকে পড়ি।তিনি 'কে কে' বলে রে রে করে এসে আমায় দেখে চুপসে যান।আমতা আমতা করে বলেন, "ঘরের বৌ তিন রাত পরে বাড়িতে এসেছে;এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাও।তোমাকে আর আমরা এই বাড়িতে ঠাঁই দেবোনা।সুজিত তাই বলে গেছে"।জানতে চাই,"সে কোথায়?"তারা জানেননা বলে জানান।ওখানে সেই মুহূর্তে আমি একা কিছু করতে পারবোনা বলে নিজেই নরম সুরে তাদের কাছে একটা রাত্রি আশ্রয় ভিক্ষা চাই।অনেক কাকুতি মিনতির পর তারা ওই রাতটুকু ড্রয়িংরুমে থাকতে বলেন আর এও বলেন সূর্য্য উঠার আগেই যেন আমি বিদায় হই।অনেকবার তারা সুজিতকে ফোন করেন কিন্ত যোগাযোগ করতে পারেননা।আমিও সকলে ঘুমিয়ে পড়লে বাড়ির ল্যান্ডফোন থেকে সুজিতের মোবাইলে ফোন করে সুইচ ওফ পাই।বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর অঘোর ঘুমের মাঝে নিজের সন্তানকে চুরি করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি।এই হচ্ছে আমার জীবনের ইতিহাস।কোথায় যাবো আমি জানিনা শুধু একটা কথায় জানি যেভাবেই হোক সুজিতকে শাস্তি দিতে হবে আর কোন মেয়ের জীবন আমি নষ্ট হতে দেবোনা।এই বিশাল পৃথিবীতে এই ছোট্ট বাচ্চাটি ছাড়া আমার আর কেউ নেই রাহুল।
হঠাৎ করেই রাহুল ট্যাক্সিতেতে স্টার্ট দেয়।মনীষা বলে, "কোথায় চললি?আমায় নামিয়ে দে।"রাহুল গাড়িটা চালাতে চালাতে বলে, "আগে থানায় যাবো তোকে দিয়ে সুজিতের বিরুদ্ধে একটি ডায়রী করাবো তারপর আমার ঠিকানাটা তোকে দেবো।কে বললো এই ছোট্ট শিশুটি ছাড়া তোর আর কেউ নেই?তোকে ভালোবেসেছিলাম বলেই আর কাউকেই আপন করতে পারিনি।চাকরি আমি পাইনি ঠিকই কিন্তু জানিস এই ট্যাক্সিটা আমার কাছে লক্ষ্মী।এটা চালিয়েই দুবোনের বিয়ে দিয়েছি।একা মানুষ কি আর হবে চাকরির চেষ্টা করে?তাই এতদিন আর চাকরির কোন চেষ্টাই করিনি।তবে এখন মনে হচ্ছে যে ভাবেই হোক একটা চাকরি জোগাড় করতে হবে"।রাহুল একটা নির্জন জায়গায় ট্যাক্সিটা দাঁড় করিয়ে পিছন ফিরে বলে,"কিরে এই ট্যাক্সি ড্রাইভারের ঠিকানাটা নিজের ঠিকানা করে নিতে তোর আর আপত্তি নেই তো?"মনীষা হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে।
... শেষ ...
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
নিজের দুমাসের শিশু পুত্রকে চুরি করে রাতের আঁধারে মনীষা অনিদৃষ্ট পথে পা বাড়ায়।অনেকটা পথ হেঁটে আসার পর সে একটা ট্যাক্সি দেখতে পায়।তার উদ্দেশ্য শিয়ালদহ স্টেশনে এসে একটা দূরপাল্লার ট্রেনে উঠে বসতে পারলেই সুজিত ও তার বাড়ির লোকের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারবে। ট্যাক্সিড্রাইভারের মুখের দিকে তাকিয়েই মনীষা থমকে যায়।
--একি ! রাহুল না ?
--মনীষা না ?একা একা এত ভোরে কোথায় যাচ্ছ ?
--রাহুল সব বলবো, আমাকে আপাতত এখান থেকে নিয়ে চলো।
--হ্যাঁ,উঠে বসো।
ট্যাক্সি ছুটলো।একবার ঘাড় ঘুরিয়ে রাহুল জেনে নিলো মনীষা কোথায় যেতে চায়।গাড়ির ভিতর মনীষা ফিরে গেলো দু'বছর আগের কলেজ জীবনে।শুধু মনীষা কেন রাহুলও তখন সেই একই কথা ভাবছে।মেধাবী গরীব রাহুল ভালোবাসতো ধনীর দুলালী মনীষাকে।মনীষার কোন হেলদোল ছিলোনা।বড় লোকের মেয়ে হওয়ার কারনে তার ভিতর একটা অহংকার কাজ করতো। রাহুলের বন্ধু দেবেশ জানতো সে মনীষাকে ভালোবাসে।রাহুলের আপত্তি সত্বেও দেবেশ মনিষাকে কথাটা জানিয়েছিল।মনীষা হো হো করে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে উঠে বলেছিলো,"ও তো খুব গরীব;আমার স্টাটাসের সাথে ঠিক খাপ খায়না।তাছাড়া আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ছেলে বড় ব্যপসায়ী।ফাইনাল পরীক্ষার পরই আমার বিয়ে।রাহুল কবে চাকরি পাবে আদতেই পাবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই।দুটি অবিবাহিতা বোনের জোয়াল রাহুলের কাঁধে।আমি জেনে বুঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াতে পারবোনা"।
হঠাৎ ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে পরে।রাহুল পিছন দিকে মুখ করে বলে,"মনীষা শিয়ালদহ এসে গেছি।কিন্তু তুই তো কিছুই বললিনা?তোর ট্রেন কটায়?তখন কি বলবি বলছিলি?যদি সময় থাকে তোর হাতে আর কোন আপত্তি না থাকে আমায় খুলে বল কি হয়েছে।তোকে দেখে আমার মনে হচ্ছে ভয়ানক কিছু একটা ঘটেছে।দেখিনা তোর কোন সাহায্য করতে পারি কিনা।"
--না আমার কোন তাড়া নেই।নিদিষ্ট কোন গাড়ির টাইমও নেই।এখানে বসেই তোকে আজ আমার জীবনের কঠিন বাস্তবটা জানিয়ে যাই।
মনীষা বলতে শুরু করে।তোর ভালোবাসাকে দেবেশের মাধ্যমে প্রত্যাখান করে বড়লোকের একমাত্র
ব্যবসায়ী ছেলেকে বিয়ে করে বছর খানেক সুখিই ছিলাম।সুজিতরা ধনী ছিলো ঠিকই কিন্তু ওরা মনের দিক থেকে ছিলো খুবই সংকীর্ন।একবছরের মধ্যেই আমার মা-বাবা দুজনেই এ্যাকসিডেন্ট করে মারা যান।আর ঠিক তখন থেকেই আমি চিনতে শুরু করি সুজিতদের।আমার বাবার বিশাল বাড়ি,টাকা,মায়ের প্রচুর গয়নাগাটি সব সুজিত আস্তে আস্তে হস্তগত করতে থাকে।বাঁধা দিয়েছি,
ঝগড়া-অশান্তি করেছি কিন্তু কোনই লাভ হয়নি।পরে নিজের মনকে নিজেই শান্তনা দিয়েছি আমি আর সুজিত কি আলাদা? ও নিজের নামে করতে চাইছে করুক।একই তো ব্যাপার। আমার নামে থাকলেও যা ওর নামে থাকলেও তাই।কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী এর ভিতর মাথা গলাতেন না।তাদের অঙ্গুলী হেলনেই যে সুজিত এগুলি করতো তা বুঝতে আমার আরও অনেক বেশি সময় লাগে আর তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।আপ্রান চেষ্টা করতে থাকি দাঁতে দাঁত দিয়ে মানিয়ে নেওয়ার।ছ'মাস আগে আমার কোল আলো করে আসে আমার ছেলে।কয়েকদিন আগে ছেলের জ্বর হওয়াতে পাড়ার দোকানে ছেলের জন্য ওষুধ আনতে যাই;বলা ভালো সুজিত নিজে না যেয়ে আমায় পাঠায়।রাত তখন দশটা।লোডশেডিং ছিলো।অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি হঠাৎই একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাঁড়ায়।চার থেকে পাঁচজন লোক গাড়ি থেকে নেমেই আমার মুখ চেপে ধরে।তারপর যখন জ্ঞান ফেরে দেখি আমি একটা ঘরে বন্ধি।শুধু খাবার দেওয়ার সময় ছাড়া কোন মানুষকে ওখানে দেখতে পেতাম না।এখন বুঝতে পারি ওখানে আমি তিনদিন ছিলাম।দরজার কাছে একদিন কান পেতে শুনি ওরা ওখান থেকে আমায় অন্যত্র নিয়ে যাবে মানে বিক্রি করে দেবেএবং এটা সুজিতেরই কথামতো।নিজের কানদুটিকেই বিশ্বাস করতে পারছিলামনা।এর আগেও সুজিত দুটি বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি করায়ত্ত্ব করেছে।সেগুলো ছ থেকে এক বছরের মধ্যে করতে পেরেছে কারন তাদের কোন ইস্যু এসেছিলনা। তখনই জানতে পারি বাবা-মার এ্যাকসিডেন্টটা তারই প্লান মাফিক হয়েছে।পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে।চোখের জল তো অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে।মাথায় তখন একটাই চিন্তা যে ভাবেই হোক পালাতে হবে আর সুজিতকেও শাস্তি দিতে হবে।যেদিন এই কথাগুলো শুনি সেদিন হয়তো ঈশ্বর আমার সহায় ছিলেন তাই সেই রাতেই আমি পালাতে সক্ষম হই।আমাকে খাবার দিয়ে বাইরে বসে কথা বলতে বলতে তারা দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করতেই ভুলে গেছিল।মনে অসীম সাহস সঞ্চয় করে সুজিতের মুখোমুখি একবার দাঁড়ানোর জন্য অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে তার বাড়িতেই ফিরে আসি কারন সেই মুহূর্তে এই ছাড়া আর কোন পথও খোলা ছিলোনা।আমার কাছে এটা পরিস্কার হয়ে গেছিল সুজিতের ধনী হওয়ার পিছনে বড়লোকের মেয়েদের বিয়ে করে নিখুঁতভাবে প্লট সাজিয়ে পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিয়ে সম্পত্তি হাতানোই তার ব্যবসা।পরে মেয়েটিকেও মোটা টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া।তারপরই সেখানকার পাট চুকিয়ে অন্যত্র জালপাতা।
আমাকে দেখতে পেলে সুজিত বা তার বাবা-মা যে ঘরে ঢুকতে দেবেনা এটা আমি জানতাম।তাই শ্বাশুড়ী যখন দরজা খোলে তখন ঘোমটা দেওয়া অবস্থাতেই তাকে ধাক্কা মেরে ঘরে ঢুকে পড়ি।তিনি 'কে কে' বলে রে রে করে এসে আমায় দেখে চুপসে যান।আমতা আমতা করে বলেন, "ঘরের বৌ তিন রাত পরে বাড়িতে এসেছে;এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাও।তোমাকে আর আমরা এই বাড়িতে ঠাঁই দেবোনা।সুজিত তাই বলে গেছে"।জানতে চাই,"সে কোথায়?"তারা জানেননা বলে জানান।ওখানে সেই মুহূর্তে আমি একা কিছু করতে পারবোনা বলে নিজেই নরম সুরে তাদের কাছে একটা রাত্রি আশ্রয় ভিক্ষা চাই।অনেক কাকুতি মিনতির পর তারা ওই রাতটুকু ড্রয়িংরুমে থাকতে বলেন আর এও বলেন সূর্য্য উঠার আগেই যেন আমি বিদায় হই।অনেকবার তারা সুজিতকে ফোন করেন কিন্ত যোগাযোগ করতে পারেননা।আমিও সকলে ঘুমিয়ে পড়লে বাড়ির ল্যান্ডফোন থেকে সুজিতের মোবাইলে ফোন করে সুইচ ওফ পাই।বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর অঘোর ঘুমের মাঝে নিজের সন্তানকে চুরি করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি।এই হচ্ছে আমার জীবনের ইতিহাস।কোথায় যাবো আমি জানিনা শুধু একটা কথায় জানি যেভাবেই হোক সুজিতকে শাস্তি দিতে হবে আর কোন মেয়ের জীবন আমি নষ্ট হতে দেবোনা।এই বিশাল পৃথিবীতে এই ছোট্ট বাচ্চাটি ছাড়া আমার আর কেউ নেই রাহুল।
হঠাৎ করেই রাহুল ট্যাক্সিতেতে স্টার্ট দেয়।মনীষা বলে, "কোথায় চললি?আমায় নামিয়ে দে।"রাহুল গাড়িটা চালাতে চালাতে বলে, "আগে থানায় যাবো তোকে দিয়ে সুজিতের বিরুদ্ধে একটি ডায়রী করাবো তারপর আমার ঠিকানাটা তোকে দেবো।কে বললো এই ছোট্ট শিশুটি ছাড়া তোর আর কেউ নেই?তোকে ভালোবেসেছিলাম বলেই আর কাউকেই আপন করতে পারিনি।চাকরি আমি পাইনি ঠিকই কিন্তু জানিস এই ট্যাক্সিটা আমার কাছে লক্ষ্মী।এটা চালিয়েই দুবোনের বিয়ে দিয়েছি।একা মানুষ কি আর হবে চাকরির চেষ্টা করে?তাই এতদিন আর চাকরির কোন চেষ্টাই করিনি।তবে এখন মনে হচ্ছে যে ভাবেই হোক একটা চাকরি জোগাড় করতে হবে"।রাহুল একটা নির্জন জায়গায় ট্যাক্সিটা দাঁড় করিয়ে পিছন ফিরে বলে,"কিরে এই ট্যাক্সি ড্রাইভারের ঠিকানাটা নিজের ঠিকানা করে নিতে তোর আর আপত্তি নেই তো?"মনীষা হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে।
... শেষ ...
No comments:
Post a Comment