Thursday, May 31, 2018


হেরে গেলাম
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমার চোখের জল,
বলে তোমার কথা,
নীরবে সহি সকল বেদনা,
ভিজে থাকে চোখের পাতা।

কষ্টকে নিয়েছি আপনার করে,
হারিয়ে ফেলেছি জীবনের সুখ,
বসে থাকি,ছবি পানে চেয়ে,
যদি হয়,লাঘব কিছু দুখ!

অমানিশা আজ সকল সময়,
ভাসে চোখে শুধু স্মৃতি,
হেরে গেছি জীবন সংসারে,
গাইবোনা আর সুখ গীতি।

চিরনিদ্রায় যাবো যেদিন,
কাঁদবে সেদিন সবাই,
মরনের ওপার হতে-
দু'হাতে জড়াবে আমায়।

# মানবী ৩০-৫-১৮  রাত ১-৪০
নুতন ঠিকানা
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

       নিজের দুমাসের শিশু পুত্রকে চুরি করে রাতের আঁধারে মনীষা অনিদৃষ্ট পথে পা বাড়ায়।অনেকটা পথ হেঁটে আসার পর সে একটা ট্যাক্সি দেখতে পায়।তার উদ্দেশ্য শিয়ালদহ স্টেশনে এসে একটা দূরপাল্লার ট্রেনে উঠে বসতে পারলেই সুজিত ও তার বাড়ির লোকের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারবে। ট্যাক্সিড্রাইভারের মুখের দিকে তাকিয়েই মনীষা থমকে যায়। 
--একি ! রাহুল না ?
--মনীষা না ?একা একা এত ভোরে কোথায় যাচ্ছ ?
--রাহুল সব বলবো, আমাকে আপাতত এখান থেকে নিয়ে চলো।
--হ্যাঁ,উঠে বসো।
    ট্যাক্সি ছুটলো।একবার ঘাড় ঘুরিয়ে রাহুল জেনে নিলো মনীষা কোথায় যেতে চায়।গাড়ির ভিতর মনীষা ফিরে গেলো দু'বছর আগের কলেজ জীবনে।শুধু মনীষা কেন রাহুলও তখন সেই একই কথা ভাবছে।মেধাবী গরীব রাহুল ভালোবাসতো ধনীর দুলালী মনীষাকে।মনীষার কোন হেলদোল ছিলোনা।বড় লোকের মেয়ে হওয়ার কারনে তার ভিতর একটা অহংকার কাজ করতো। রাহুলের বন্ধু দেবেশ জানতো সে মনীষাকে ভালোবাসে।রাহুলের আপত্তি সত্বেও দেবেশ মনিষাকে কথাটা জানিয়েছিল।মনীষা হো হো করে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে উঠে বলেছিলো,"ও তো খুব গরীব;আমার স্টাটাসের সাথে ঠিক খাপ খায়না।তাছাড়া আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ছেলে বড় ব্যপসায়ী।ফাইনাল পরীক্ষার পরই আমার বিয়ে।রাহুল কবে চাকরি পাবে আদতেই পাবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই।দুটি অবিবাহিতা বোনের জোয়াল রাহুলের কাঁধে।আমি জেনে বুঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াতে পারবোনা"।
           হঠাৎ ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে পরে।রাহুল পিছন দিকে মুখ করে বলে,"মনীষা শিয়ালদহ এসে গেছি।কিন্তু তুই তো কিছুই বললিনা?তোর ট্রেন কটায়?তখন কি বলবি বলছিলি?যদি সময় থাকে তোর হাতে আর কোন আপত্তি না থাকে আমায় খুলে বল কি হয়েছে।তোকে দেখে আমার মনে হচ্ছে ভয়ানক কিছু একটা ঘটেছে।দেখিনা তোর কোন সাহায্য করতে পারি কিনা।"
--না আমার কোন তাড়া নেই।নিদিষ্ট কোন গাড়ির টাইমও নেই।এখানে বসেই তোকে আজ আমার জীবনের কঠিন বাস্তবটা জানিয়ে যাই।
            মনীষা বলতে শুরু করে।তোর ভালোবাসাকে দেবেশের মাধ্যমে প্রত্যাখান করে বড়লোকের একমাত্র
ব্যবসায়ী ছেলেকে বিয়ে করে বছর খানেক সুখিই ছিলাম।সুজিতরা ধনী ছিলো ঠিকই কিন্তু ওরা মনের দিক থেকে ছিলো খুবই সংকীর্ন।একবছরের মধ্যেই আমার মা-বাবা দুজনেই এ্যাকসিডেন্ট করে মারা যান।আর ঠিক তখন থেকেই আমি চিনতে শুরু করি সুজিতদের।আমার বাবার বিশাল বাড়ি,টাকা,মায়ের প্রচুর গয়নাগাটি সব সুজিত আস্তে আস্তে হস্তগত করতে থাকে।বাঁধা দিয়েছি,
ঝগড়া-অশান্তি করেছি কিন্তু কোনই লাভ হয়নি।পরে নিজের মনকে নিজেই শান্তনা দিয়েছি আমি আর সুজিত কি আলাদা? ও নিজের নামে করতে চাইছে করুক।একই তো ব্যাপার। আমার নামে থাকলেও যা ওর নামে থাকলেও তাই।কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী এর ভিতর মাথা গলাতেন না।তাদের অঙ্গুলী হেলনেই যে সুজিত এগুলি করতো তা বুঝতে আমার আরও অনেক বেশি সময় লাগে আর তখন অনেক  দেরি হয়ে গেছে।আপ্রান চেষ্টা করতে থাকি দাঁতে দাঁত দিয়ে মানিয়ে নেওয়ার।ছ'মাস আগে আমার কোল আলো করে আসে আমার ছেলে।কয়েকদিন আগে ছেলের জ্বর হওয়াতে পাড়ার দোকানে ছেলের জন্য ওষুধ আনতে যাই;বলা ভালো সুজিত নিজে না যেয়ে আমায় পাঠায়।রাত তখন দশটা।লোডশেডিং ছিলো।অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি হঠাৎই একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাঁড়ায়।চার থেকে পাঁচজন লোক গাড়ি থেকে নেমেই আমার মুখ চেপে ধরে।তারপর যখন জ্ঞান ফেরে দেখি আমি একটা ঘরে বন্ধি।শুধু খাবার দেওয়ার সময় ছাড়া কোন মানুষকে ওখানে দেখতে পেতাম না।এখন বুঝতে পারি ওখানে আমি তিনদিন ছিলাম।দরজার কাছে একদিন কান পেতে শুনি ওরা ওখান থেকে আমায় অন্যত্র নিয়ে যাবে মানে বিক্রি করে দেবেএবং এটা সুজিতেরই কথামতো।নিজের কানদুটিকেই বিশ্বাস করতে পারছিলামনা।এর আগেও সুজিত দুটি বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি করায়ত্ত্ব করেছে।সেগুলো ছ থেকে এক বছরের মধ্যে করতে পেরেছে কারন তাদের কোন ইস্যু এসেছিলনা। তখনই জানতে পারি বাবা-মার এ্যাকসিডেন্টটা তারই প্লান মাফিক হয়েছে।পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে।চোখের জল তো অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে।মাথায় তখন একটাই চিন্তা যে ভাবেই হোক পালাতে হবে আর সুজিতকেও শাস্তি দিতে হবে।যেদিন এই কথাগুলো শুনি সেদিন হয়তো ঈশ্বর আমার সহায় ছিলেন তাই সেই রাতেই আমি পালাতে সক্ষম হই।আমাকে খাবার দিয়ে বাইরে বসে কথা বলতে বলতে তারা দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করতেই ভুলে গেছিল।মনে অসীম সাহস সঞ্চয় করে সুজিতের মুখোমুখি একবার দাঁড়ানোর জন্য অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে তার বাড়িতেই ফিরে আসি কারন সেই মুহূর্তে এই ছাড়া আর কোন পথও খোলা ছিলোনা।আমার কাছে এটা পরিস্কার হয়ে গেছিল সুজিতের ধনী হওয়ার পিছনে বড়লোকের মেয়েদের বিয়ে করে নিখুঁতভাবে প্লট সাজিয়ে পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিয়ে সম্পত্তি হাতানোই তার ব্যবসা।পরে মেয়েটিকেও মোটা টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া।তারপরই সেখানকার পাট চুকিয়ে অন্যত্র জালপাতা।
         আমাকে দেখতে পেলে সুজিত বা তার বাবা-মা যে ঘরে ঢুকতে দেবেনা এটা আমি জানতাম।তাই শ্বাশুড়ী যখন দরজা খোলে তখন ঘোমটা দেওয়া অবস্থাতেই তাকে ধাক্কা মেরে ঘরে ঢুকে পড়ি।তিনি 'কে কে' বলে রে রে করে এসে আমায় দেখে চুপসে যান।আমতা আমতা করে বলেন, "ঘরের বৌ তিন রাত পরে বাড়িতে এসেছে;এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাও।তোমাকে আর আমরা এই বাড়িতে ঠাঁই দেবোনা।সুজিত তাই বলে গেছে"।জানতে চাই,"সে কোথায়?"তারা জানেননা বলে জানান।ওখানে সেই মুহূর্তে আমি একা কিছু করতে পারবোনা বলে নিজেই নরম সুরে তাদের কাছে একটা রাত্রি আশ্রয় ভিক্ষা চাই।অনেক কাকুতি মিনতির পর তারা ওই রাতটুকু ড্রয়িংরুমে থাকতে বলেন আর এও বলেন সূর্য্য উঠার আগেই যেন আমি বিদায় হই।অনেকবার তারা সুজিতকে ফোন করেন কিন্ত যোগাযোগ করতে পারেননা।আমিও সকলে ঘুমিয়ে পড়লে বাড়ির ল্যান্ডফোন থেকে সুজিতের মোবাইলে ফোন করে সুইচ ওফ পাই।বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর অঘোর ঘুমের মাঝে নিজের সন্তানকে চুরি করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি।এই হচ্ছে আমার জীবনের ইতিহাস।কোথায় যাবো আমি জানিনা শুধু একটা কথায় জানি যেভাবেই হোক সুজিতকে শাস্তি দিতে হবে আর কোন মেয়ের জীবন আমি নষ্ট হতে দেবোনা।এই বিশাল পৃথিবীতে এই ছোট্ট বাচ্চাটি ছাড়া আমার আর কেউ নেই রাহুল।
         হঠাৎ করেই রাহুল ট্যাক্সিতেতে স্টার্ট দেয়।মনীষা বলে, "কোথায় চললি?আমায় নামিয়ে দে।"রাহুল গাড়িটা চালাতে চালাতে বলে, "আগে থানায় যাবো তোকে দিয়ে সুজিতের বিরুদ্ধে একটি ডায়রী করাবো তারপর আমার ঠিকানাটা তোকে দেবো।কে বললো এই ছোট্ট শিশুটি ছাড়া তোর আর কেউ নেই?তোকে ভালোবেসেছিলাম বলেই আর কাউকেই আপন করতে পারিনি।চাকরি আমি পাইনি ঠিকই কিন্তু জানিস এই ট্যাক্সিটা আমার কাছে লক্ষ্মী।এটা চালিয়েই দুবোনের বিয়ে দিয়েছি।একা মানুষ কি আর হবে চাকরির চেষ্টা করে?তাই এতদিন আর চাকরির কোন চেষ্টাই করিনি।তবে এখন মনে হচ্ছে যে ভাবেই হোক একটা চাকরি জোগাড় করতে হবে"।রাহুল একটা নির্জন জায়গায় ট্যাক্সিটা দাঁড় করিয়ে পিছন ফিরে বলে,"কিরে এই ট্যাক্সি ড্রাইভারের ঠিকানাটা নিজের ঠিকানা করে নিতে তোর আর আপত্তি নেই তো?"মনীষা হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে।

                     ... শেষ ...

Saturday, May 26, 2018

মায়ের ভালোবাসা
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     বিধান চৌধুরী যখন মারা যান তখন ছেলের উচ্চমাধ্যমিক চলছে।স্বভাবতই পড়াশুনার ক্ষতি হয়।দীর্ঘ দুবছর রোগভোগের পরে তার মৃত্যু সংসারে বিনামেঘে বজ্রপাতের মত হয়ে দাঁড়ায় । চিকিৎসা চলছিল কিন্তু কেউই ভাবেনি এরূপ একটি ঘটনা ঘটবে !সরকারী চাকরির সুবাদে ফ্যামিলি পেনশনের কারনে খাওয়া পড়ায় মা, ছেলের কোনই অসুবিধা হয়না।মেয়েটির বিয়ে তিনি অসুস্থ্য অবস্থায়ই দিয়ে গেছিলেন।ছেলের রেজাল্ট খুব একটা ভালো না হওয়ায় ছন্দাদেবী বেশ মনঃকষ্ট পেলেন কিন্তু ছেলেকে কিছুই বুঝতে দিলেননা ।
        কিন্তু সুখের বিষয় তার ছেলে রাহুল সরকারী সুযোগেই হোটেল ম্যানেজমেন্টে  পড়ার সুযোগ পেলো।ছেলেকে ছেড়ে থাকতে পারবেননা বলে তিনি নিজের বিশাল বাড়িঘর ছেড়ে ইনস্টিটিউশনের কাছেই দুকামরা ঘর নিয়ে থাকতে শুরু করেন।দেখতে দেখতে তিনটি বছর কেটে গেলো।ক্যাম্পাস থেকেই ছেলে চাকরি পেলো কিন্তু পোষ্টিং বাইরে।ছেলে বেঁকে বসলো মাকে ছাড়া সে কিছুতেই যাবেনা।বিপদে পড়লেন ছন্দাদেবী।স্বামীর ভিটে বিক্রি করতে তার যেমন মত নেই ছেলেও চায়না বাবার সাথে তার ছেলেবেলার স্মৃতি জড়িত এই বাড়ি বিক্রি হোক।অনেক বুঝিয়েও তিনি ছেলেকে রাজি করাতে পারলেননা।ছেলে মাকে বললো,"আমায় ছেড়ে কষ্ট করে হলেও আমার ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে তুমি থাকতে পারলেও আমি পারবোনা তোমায় ছেড়ে থাকতে , আমায় তুমি আর বোলোনা মা।আমার মা একাএকা থাকবে আমি তার কাছে থাকবোনা এটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনা।রোজ সকালে উঠে তোমার মুখটা দেখতে পাবোনা এটা ভাবলে আমার বুকের ভিতরটা ফাঁকা হয়ে যায় মা।আগেও এটা ছিলো কিন্তু বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে এটা বেশি করে মনেহয়।আমার মন বলে বাবা যেন প্রতিটা মুহূর্তেই আমায় বলেন 'তুই কিন্তু তোর মাকে ছেড়ে কোথাও যাসনা।"ছন্দাদেবী কাঁদতে কাঁদতে দুহাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন।ছেলেও কাঁদে, মাও কাঁদে!একসময় ঠিক হয় পূণরায় সেই বাড়িভাড়া করেই মা ও ছেলে চাকরির স্থলে থাকবেন।
 
        দুমাস হোল তারা বাড়ির বাইরে।রাহুল প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে মায়ের পায়ের উপর শুয়ে থাকে আর মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।আসলে কি জানো মা,"তোমার হাতের খাবার শুধু নয় তোমার এই আদর, এখনও তোমার হাতের কানমলা এগুলো না পেলে আমার ঠিক ভালো লাগেনা।তাই তো তোমায় ছেড়ে থাকতে পারিনা।"ছন্দাদেবী বলেন, "মা কি কারও সারাজীবন বেঁচে থাকে রে! " রাহুল দুই হাতে ছেলেবেলার মত মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,"আমার মা আমি যতদিন বাঁচবো ঠিক ততদিনই বাঁচবেন।"স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে দু'চোখ বেয়ে ছন্দাদেবীর জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। ছেলে দেখতে পেয়ে বলে,"মা, আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু তোমার চোখের জল কিছুতেই মানতে পারিনা।বাবার মৃত্যুর পর আমি তোমার সামনে কোনদিনও কাঁদিনি শুধুমাত্র তুমি আমার চোখের জল সইতে পারবেনা বলে।তাই বলে কি বাবার জন্য আমার কষ্ট হয়নি?বুকের ভিতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে, সারাটা রাত চোখের জলে বালিশ ভিজেছে কিন্তু তোমাকে ও দিদিকে বুঝতে দিইনি।শুধু তোমরা যাতে শক্ত থাকো।মাগো,তোমার ছেলে সেই আগের মত আর ছোট্টটি নেই সে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে ,বলতে পারো বাবা চলে যাবার পর আমার বোধশক্তিটাকে তাড়াতাড়ি বাড়িয়ে দিয়েছেন।" মা স্তব্ধ তার বাইশ বছরের ছেলের কথা শুনে।সেদিনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন আর কখনোই ছেলের সম্মুখে তিনি স্বামীর জন্য চোখের জল ফেলবেন না।

# নন্দা

Friday, May 25, 2018


      ভুলের বোঝা
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
                    (১)

        প্রায় দু'যুগ পর প্রাণের বন্ধু অতীনের সাথে দেখা।অতীন দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,"কতদিন পরে দেখলাম তোকে।হঠাৎ কি এমন হয়েছিলো যে কাউকে কিছুই না জানিয়ে বলতে গেলে পালিয়ে গেলি ?"
---তোদের কাছ থেকে পালায়নি রে!পালিয়েছিলাম নিজের কাছ থেকে।ছাড় ওসব কথা, কেমন আছিস বল।
---আর কেমন থাকবো বল ? পরিবারের সবাইকেই তো হারিয়ে ফেলেছি।বোনের  ক্যানসার ধরা পড়ার পর ডাক্তার বললেন ছ'মাস;কিন্তু বোন তিন মাসের মধ্যেই চলে গেলো। তারপর মা সেই শোক সামলাতে না পেরে আমায় ছেড়ে গেলেন।
---কি বলছিস কি তুই ? অতসীর ক্যান্সার হয়েছিলো আমায় জানাসনি তো?
---কি করে জানাবো?যেদিন জানতে পারলাম তারপর থেকে তো আর তোকে দেখতেই পাইনি।কোথায় আছিস এখন?
--দিল্লী।
                      (২)
       মনে পড়ছে সুদীপের-অতসী যেদিন ডাক্তার দেখাতে যাবে বলেছিলো ঠিক তার পরেরদিন ওদের দেখা হলে অতসী ওকে প্রত্যাক্ষান করেছিলো।কারনও দেখিয়েছিলো সুদীপ বেকার।বেশ অপমানজনক কথাও বলেছিলো।সুদীপের সেদিন কষ্টের থেকে অভিমানটা বেশি হয়েছিলো।পিতৃমাতৃহীন সুদীপ থাকতো একটা মেসে।খরচ চালাতো টিউশন করে।পরদিনই সে মেস ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।মনের ভিতর অতসীর প্রতি একটা ঘৃনা থেকে পুরো নারীজাতির প্রতি  ঘৃনায় আজীবন একাই থেকে যায়।আজ নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। কতটা ভালবাসলে একজন মৃত্যুপথযাত্রী তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে এরূপ ছলনার আশ্রয় নিতে পারে।ছি! ছি! এতটা নির্বোধ আমি? একটু তলিয়ে ভাবতেও পারলামনা?এতদিন ধরে অতসীকে ভুল বুঝে শুধু ঘৃনায় করে গেলাম!আমায় ক্ষমা কর অতসী।তোমার ভালোবাসাকে আমি চিনতেই পারিনি।তুমি যেখানেই থাকো শান্তিতে থেকো।পরজম্ম বলে যদি সত্যিই কিছু থাকে তোমার সাথে দেখা করে আমি ক্ষমা চেয়ে নেবো।একটু অপেক্ষা কর ধর্য্য ধরে -আমাদের মিলন হবেই।
 
     #নন্দা  


নজরুল বিষয়ক প্রবন্ধ
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে একজন পরম শক্তিমান কবি। যে যুগে নজরুল সাহিত্যচর্চা শুরু করেন সে যুগটি ছিলো একটি উত্তাল আন্দোলনের যুগ।স্বাধীনতার জন্য মানুষ তখন সংগ্রাম মুখর,আলোড়নে বিক্ষুব্ধ।নজরুল কাব্যে এই মুক্তি আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি অতিমাত্রায় ধরা পড়েছে। আধুনিক বাংলা কাব্যের ক্ষেত্রে বিশ্বকবির পরেই কবি নজরুলের নামই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।যাকে আমরা  বিদ্রোহী কবি হিসাবেই চিনি।তাঁর অসাধারন সৃজনী-প্রতিভা সর্বজনস্বীকৃত। অভাবনীয় তারুণ্যের বিজয় পতাকা উদ্দীন করে তিনি সহসা একদিন সকলের সম্মুখীন এসে দাঁড়ান।নজরুলের 'প্রলয়োল্লাস' কবিতার তিনটি ছত্র -"তোরা সব জয়ধ্বনি কর,ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখী ঝড়।"এই কথাগুলি কবির অতর্কিত আবির্ভাবে তিনি অদৃষ্টপূর্ব নূতনের জয়ধ্বজা উড়ালেন তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতার প্রকাশ বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।এই একটি মাত্র কবিতা কবির খ্যাতি দেশময় পরিব্যাপ্ত করে দেয়।

        তিনি বাঙ্গালীর মন ও মননে প্রবেশ করেছিলেন 'ধূমকেতুর' মত। তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক।গণবিক্ষোভ ও জন-জাগরণের যুগে নজরুলের শ্রেষ্ঠ কবিতার অনেকগুলিই রচিত হয়। আর তখনই তিনি উচ্চারণ করেন বন্ধনহারা মুক্তজীবনের সঙ্গীত;উদাত্ত কন্ঠে তিনি দেশের মানুষকে আহ্বান করেন সত্যের দুর্গম পথে, বীর্যদীপ্ত মহান ত্যাগের ক্ষেত্রে।সেদিনের রাজরোষ কবির উদ্ধত শিরকে অবনত করতে পারেনি,তাঁর লেখনীকে স্তব্ধ করতে পারেনি, সাম্প্রদায়গত কিংবা জাতিভেদমূলক কোন প্রশ্ন নজরুলকে সংকীর্ণতার পথে পরিচালিত করতে পারেনি।তাঁর কাছে মানুষই ছিলো বড় কথা।"মানুষের চেয়ে বড় কিছু নয়,নহে কিছু মহীয়ান।"কবি মনুষ্যত্বের পূজারী,মানুষের বেদনাকে তিনি ছন্দায়িত ভাষায় ব্যক্ত করেছেন।যুগের বেদনা ও উন্মাদনা তিনি অন্তরে গভীরভাবে উপলব্দি করেছেন।সমগ্র জাতিকে নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সেদিন তিনি তাঁর লেখনী হাতে তুলে নিয়েছিলেন।

   তিনি শুধু বিদ্রোহী কবিই ছিলেননা, তিনি ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক কবি , পাগলপারা প্রেমিক কবি।তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সেন পরিবারের গিরিবালাদেবীর একমাত্র মেয়ে প্রমীলাকে।এই প্রমীলা নামটি কবি নজরুলেরই দেওয়া।তিনি তার স্ত্রীকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন।প্রমীলা নজরুল মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হলে এক দরবেশের কথামত তিনি কচুরিপানা ভর্তি একটি পুকুরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে তাবীজ এনে তার প্রাণের অধিক প্রিয় স্ত্রীকে দিয়েছিলেন।ডাক্তার, বদ্যি  কোনোকিছুই বাদ রাখেননি।আমৃত্যু তার শ্বাশুড়ীমাতা তার কাছেই ছিলেন এবং কবির বাড়িতেই পূজার্চনা করতেন। নানান ধরনের ইসলামিক গীতের সাথে সাথে তিনি প্রচুর শ্যামাসঙ্গীতও লিখে গেছেন।

  আজ এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যুগে বিদ্রোহী কবির মত কোন কান্ডারী আমাদের পাশে এসে যদি সেই সুরে সুর মেলাতেন  ,"মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। "
  তাহলে হয়তো মানব হত্যালীলা কিছুটা বন্ধ হত।
আমার নজরুল
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
(প্রতিযোগিতার জন্য)

তুমি দুর্বার,তুমি দুরন্ত!
তুমি বিজয় কেতন নেড়ে,
আবির্ভূত হয়েছ 'বিদ্রোহী'রূপে।
হাতে তুলে নিয়েছ 'অগ্নিবীণা',
বাজিয়েছ 'বিষের বাঁশি',
'ভাঙ্গার গান'গেয়ে-
'প্রলয় শিখা,জ্বালিয়ে-
টেনেছ 'সর্বহারা'দের কাছে।
তুমি 'ধূমকেতু'র মত-
তরুনদের উচ্ছ্বল উদ্দামতায়,
বুঝিয়েছ 'সাম্যবাদ'কে ।
'চাঁদনী রাতে'করেছ 'বধূবরণ',
'দারিদ্র্য'কে পিছনে ফেলে। 
'গোপন প্রিয়া'ছেড়ে গেছে তোমায়,
ভেঙ্গেছে প্রেমের 'রাখীবন্ধন'।
'সন্ধ্যাতারা'র মাঝে খুঁজেছ-
হারিয়ে যাওয়া 'বিজয়িনী'কে।
তোমার কাছে মানুষই 'ঈশ্বর',
'কুলি-মজুর'সব সমান।
'কোরবানী'রাতে সজাগ করেছ-
'কান্ডারী হুঁশিয়ার'।
এতকিছু মাঝেও 'চিরশিশু'হয়ে-
ভেঙ্গেছ 'কারার ঐ লৌহ কপাট'।

Wednesday, May 23, 2018

শব্দ মিছিলে হারিয়ে যাওয়া-
আমি একজন,
কবি নইকো মোটেই-
তোমাদের আপনজন। 😘

সংসার সীমানার লিখি ঘটনা,
তাই নিয়ে হয় নানান রটনা,
কেউ বোলোনা আমায় গল্পকার,
পাশে থেকো হয়ে আপনার। 😍

Tuesday, May 22, 2018

"ভালোবাসা তুমি কার?"
"আমি সকলের।"
"কোথাও যে তোমার দেখা পাইনা"
"বিশ্বাস না থাকলে আমি চলে যাই!"

     পৃথিবীতে মীরজাফরের অভাব নেই।তুমিও মীরজাফর! কিন্তু মীরজাফরও একসময় প্রতারিতই হয়েছিলো!তাই সতর্ক থেকো বন্ধু! "তুমি অধম,তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবোনা কেন?"- শুভাকাংখীর সতর্ক বার্তাটি মনে রেখো। 

Saturday, May 12, 2018

কেউ ঠেকে শেখে (অনুগল্প)
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

---সারাটাদিন পরিশ্রম করে বাড়িতে এসে কোনদিন একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারলামনা;রোজ এক ঘ্যানঘ্যানানী-প্যানপ্যানানী।আমি তো তোমাকে বলেছি আমার সাথে সংসার করতে হলে আমার মাকে তোমার মেনে নিতেই হবে,আমি মাকে কোনদিনও বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবো না।
---আর আমিও তোমায় বলে রাখলাম উনাকে বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠালে আমি এই বাড়িতে থাকবোনা।
---চলে যাও, কেউ তোমায় বারন করবেনা।
---দক্ষিন দিকের সব থেকে বড় ঘরটা নিয়ে আছেন,কেন বাপু এই বয়সে একাএকা থাকতে ওত বড় ঘরের কি দরকার?
---বাড়িটা বাবা বানিয়েছিলেন,আমি যখন ছোট ছিলাম বাবা,মা আর আমি তিনজনেই ওই ঘরটাতে থাকতাম।ওর ঘরটায় বাবার সব স্মৃতি জড়িয়ে আছে।মা যতদিন বাঁচবেন ওই ঘরটাতেই থাকবেন।
---তাহলে তুমি তোমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়বে না ?
--না।আমার মা আমার কাছেই থাকবেন।

            পরদিন ভোরেই নবনীতা ব্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।শান্তিদেবী বারবার জিজ্ঞেস করাতেও কোন উত্তর দিলোনা।তিনি ছুটে গেলেন ছেলের কাছে।কিছুই না লুকিয়ে রন্জিত সব তার মাকে খুলে বলে।শান্তিদেবী কিছুটা গুম হয়ে বসে থেকে ধীরে ধীরে বললেন,
---তারমানে তোর সংসারটা আমার জন্য ভেঙ্গে গেল।দেনা আমায় পাঠিয়ে যেখানে বৌমা পাঠাতে বলছে।
---তুমি কি পাগল হলে মা?বাবার মৃত্যুর পর আমাকে মানুষ করতে তুমি কত কষ্ট করেছো।আমি চাকরী পাওয়ার পর একটু সুখের মুখ দেখেছো আর আমি তোমায় বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেবো বৌ এর কথায়? না মা,আমি তা পারবোনা।আরে দেখোনা ক'দিন পরেই চলে আসবে।বেশিদিন ওখানে থাকতে পারবেনা তার কারন শ্বশুরমশাই রিটায়ার করেছেন ওর ভাই বৌ ওকে ওখানে থাকতেই দেবেনা।

                        (2)
      বাপের বাড়িতে এসে কয়েকটা দিন খুব ভালোই কাটলো।রাগ করে নবনীতা রন্জিতকে কোন ফোনও করেনা।ননদের ফিরে যাওয়ার কোন লক্ষন না দেখে ভাইবৌ জানতে চাইলো,
---রন্জিত কবে আসবে গো?
---ও কেন আসবে এখানে?আমিই আর ফিরবোনা ওখানে।
    সেদিন রাতে নবনীতার ভাই নবায়ন ও তার স্ত্রী জয়ার ঝগড়া চরমে উঠলো।কত করে বললাম তোমার বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দাও, এখনও তো তার কোন লক্ষন দেখছিনা উপরন্ত তোমার দিদি এসে ঘাড়ে চেপে বসলো।
---আরে বাবা আমি তো চেষ্টা করছি বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর;এককালীন কিছু টাকা লাগবে সেটা তো বাবার কাছ থেকেই নিতে হবে না কি !খামোখা নিজের জমানো টাকা খরচ করে কি লাভ ?
---আর তোমার দিদি ?
---ওটা তুমি সামলাও।একটু চেঁচামেচি-ঝগড়াঝাটি করলেই চলে যাবে দেখো।
         প্রথম দিকে চিৎকারটা এত জোড়ে জোড়ে হচ্ছিল নবনীতা এসে ওদের বন্ধ দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলো।তারপর সমস্ত কথাগুলো শুনে তার চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।বুঝতে পারলো কতবড় ভুল সে করেছে।রঞ্জিতের সাথে নিজের ভায়ের তুলনা করতে যেয়ে মনেমনে ভাবলো নবায়ন এত বড় বৌ ভেঁড়া!বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে রাজি হয়ে গেল ?আর রন্জিত?সে তার মাকে কত ভালোবাসে।এটা আমি ঠিক করিনি।কালই আমি রঞ্জিতের কাছে ফিরে যাবো,পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবো শ্বাশুড়ীমায়ের।তবে যাওয়ার আগে ভাইকে একটা কথা বলে যেতেই হবে -বাবা আর কতদিনই বা বাঁচবেন!চেষ্টা করিস যে কটাদিন উনি বাঁচেন যেন এখানেই থাকতে পারেন।বৃদ্ধাশ্রমে বাবাকে পাঠাসনা।এই বাড়িটা ঘিরে মায়ের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।এই স্মৃতিগুলো সম্বল করেই তো এখনও বেঁচে আছেন , বাকি জীবনটাও এভাবেই কাটাতে দে ।

     #নন্দা 

Friday, May 11, 2018

ঋণ (ছোট গল্প)
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

        অফিস থেকে ফিরতে সেদিন খুব রাত হয়েছিল, হরতাল, রেলঅবরোধ;শেষ ট্রেনের যাত্রী হয়ে যখন সুশান্তবাবু ষ্টেশনে পৌঁছান তখন ছোট ছোট গুমটিগুলি বন্ধ হয়ে গেছে।চারিদিকে একটা শ্মশানের নিস্তব্ধতা।কিছু কুকুর শুধু অবিরাম ডেকে চলেছে।তিনি বাড়ির পথে পা বাড়ান।হঠাৎ তার নজরে পড়ে ষ্টেশন চত্বরেই একজন ভিখারীনী শুয়ে আছে আর একটি বাচ্চা তার বুকের উপর পড়ে মাতৃদুগ্ধ পান করে চলেছে, তাদেরকে ঘিরেই কুকুরগুলোর চিৎকার।একটু অবাক হলেন সুশান্তবাবু।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ান।তখন তিনি অদ্ভুত একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন।কয়েকটি সারমেয় এসে তার পথ আগলে দাঁড়ায় ও চিৎকার করে ডাকতে থাকে।তিনি বুঝতে পারেন তারা তাকে কিছু বলতে চায়।তিনি আবার ওই ভীখারীনীর কাছে এগিয়ে যান।অদ্ভুতভাবে সারমেয়গুলিও তাকে অনুসরণ করে।তিনি মহিলার কাছে এসে মা,মা করে বেশ কয়েকবার ডাকেন কিন্তু সাড়া না পাওয়াতে নীচু হয়ে মহিলাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে উঠানোর চেষ্টা করেন।সেটাও নিস্ফল হয়।অদ্ভুতভাবে কুকুরগুলোর ডাক বন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু ওখান থেকে তারা নড়েনা।তিনি মহিলার হাতটি ধরে নাড়ির স্পন্দন বুঝতে চেষ্টা করেন।মহিলা যে বেঁচে নেই এটা বুঝতে তার একটুও অসুবিধা হয়না আর সারমেয়গুলি এটা বুঝতে পেরেই এত রাতে বাচ্চাটিকে পাহারা দিতেই এখানে জড়ো হয়েছে।মানুষের মধ্যে আজ যে মনুষত্ব হারিয়েছে তা বুঝি আজ পশুদের মধ্যে প্রবলভাবে জেগে উঠেছে।দু, আড়াই বছরের ছেলেটিকে কোলে তুলে তিনি মধ্যরাতে বাড়ি ফেরেন।

                    (2)
              স্বামীর মৃত্যুর পর সরলাদেবী বড় সন্তান অয়নের কাছেই থেকে যান।বড়ছেলে অর্নব চাকরীর সুবাদে দিল্লীতে থাকে।সারাটাদিন বড় বৌমার নানান কটুক্তি আর ফারফরমায়েশ পালন করতে করতেই দিন গুজরান করা।নীরবে চোখের জল মোছা ছাড়া অন্য কোন উপায় তিনি খুঁজে পাননা।হঠাৎ করেই একদিন ছোট ছেলে অর্নব এসে মাকে তার কাছে নিয়ে যেতে চায়।ছোট ছেলে রাজি হলেও বড় বৌমা বেঁকে বসে।সে তার দেওরকে পরিস্কার করেই বলে যে মায়ের মোটা পেনশনের লোভে সে মাকে নিতে এসেছে।অর্নব হেসে পরে বলে,"কালই মায়ের পেনশনেরর এটিএম কার্ডের ব্যবস্থা করবে।ডাকযোগে কার্ডটা আসলে তুমি প্রতিমাসে টাকাটা তুলে নিও।তাহলে তো কোন আপত্তি নেই তোমার?
                     ( 3)
            ছোট ছেলের বাড়িতে পৌঁছে ড্রয়িংরুমে ঢুকেই স্বামীর বড় করে বাঁধানো একটি ছবি দেখতে পাআর ঠিক তার পাশেই দুই ছেলেকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর একটি পুরান ছবি।অনেক পুরনো স্মৃতি চোখের সামনে ভিড় করে দাঁড়ায়।এই ছেলেকে বুকে চেপে অত রাতে যখন স্বামী বাড়িতে আসেন তখন উদার মনের পরিচয় সেদিন সরলাদেবী দিতে পারেননি।কিন্তু অনেক বুঝিয়ে সুশান্তবাবু সেদিন তাকে রাজি করিয়েছিলেন।তিনি এও বলেছিলেন, "আমি যখন থাকবনা দেখবে এই ছেলেই একদিন তোমায় মাথায় করে রাখবে।"পরবর্তীতে যদিও তিনি কখনোই দুই ছেলেকে আলাদা চোখে দেখেননি তবুও তার মধ্যে একটা কিন্তু থেকেই গেছে।অর্নব পিছন থেকে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, "কাঁদছো কেন মা?দাদার জন্য কষ্ট হচ্ছে?তুমি মাঝে মাঝে দাদার কাছে যেও কিন্তু বলে দিচ্ছি বেশিদিন থাকতে পারবেনা।তুমি আমায় পেটে ধরনী বলে আমাকে ছেড়ে তুমি শুধু দাদার কাছে থাকবে এটা হবেনা" সরলাদেবী কেঁপে ওঠেন!যা কেউ কোনদিন জানেনা তা তুই কি করে জানলি ?এই জন্য আমরা বাড়ি বিক্রি করে ভাড়াবাড়িতে যেয়ে উঠেছিলাম।"ছোটবৌমা চা, জল খাবার নিয়ে ঢোকে।"একি তুমি একাই মার আদর খাচ্ছো?আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি মা?"আবদারের সুরে নীতা কথাগুলি বলে।সরলাদেবী হাত বাড়িয়ে নীতাকে বুকে টেনে নেন।একটু পরেই অর্নবের কাছে জানতে চান,"কি করে জানলি বললিনা?" "বাবা মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগে আমাকে একটা ডায়রী দেন আর বলেন তিনি যখন থাকবেন না তখন যেন আমি ডাইরিটা পড়ি।ভুলেই গেছিলাম।কয়েকদিন আগে ডাইরিটা চোখে পরে আর ওটা পরেই আমার মনেহল আমার মাকে আমি আমার নিজের কাছেই রাখবো।তিনি জগৎজননী ।এই মাকে এতদিন আমি কাছছাড়া করে রেখেছিলাম ? তোমার একটাই কাজ এখানে রোজ আমাকে সেই আগের মত আদর করা আর অন্যায় করলে শাষন করা।" নীতা চিৎকার করে উঠলো, "মা তোমার এই আদরের মধ্যে যেন আমি আর তোমার ছোট্ট নাতনীটাও পড়ি" দুহাত দিয়ে চোখ মুছে খাট থেকে নাতনীকে বুকে জড়িয়ে ধরেন সরলাদেবী।

    #নন্দা

                   


Wednesday, May 9, 2018

কবি তো নই
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমার লেখাগুলো ঠিক কবিতা হয়ে ওঠেনা,
কবিতা লিখতে পারিনা,লিখতে চাইও না,
আমার কষ্ট,বিরহ-বেদনা,আমার দুঃখ-
সবকিছু নিয়ে ভাষাক্ষরে মালা গাঁথি।
আমার ভাবনা,চিন্তাধারা হয়তো কারও সাথেই মিলবেনা,
এগুলি লিখে মনটাকে তো হালকা করতে পারি!
আমাকে কেউ কবি ভেবোনা,সাহিত্যিকও নয়;
কোনটাই আমি হতে চাইনা,চাইনা কোন যশ-
আমার লেখার মধ্যদিয়ে কষ্টটাকে ছড়িয়ে দিই কেবল,
আমি ভালো আছি,শুধু মনটা আমায় জ্বালায়।

 @ নন্দা
বেশ কয়েক বছর আগে একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত -_-

বঙ্গ নারী
 নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী       

    আজ সুমনার গাড়ি হয়েছে ,দু'হাজার স্কোয়ার ফিটের ফ্লাট হয়েছে ,কিন্তু মাকে সে তার কাছে কিছুতেই আনতে পারেনি ।  ছেলের বয়স এখন তার পাঁচ বছর । ছেলের জম্মের পরেও এ সব তার কাছে দুঃস্বপ্ন ছিলো  নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময় থেকেই মলয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব । এক পাড়াতে না হলেও রোজই তার সাথে সুমনার দেখা হতো  সুমনা খুবই সুন্দরী ।  সুন্দরীদের ভিতর যে একটা অহংকার বোধ চেহারার ভিতরই লুকিয়ে থাকে ;সুমনার ভিতর সেটা ছিলো না ,তার চেহারার ভিতর একটা লক্ষ্মী সুলভ ভাব ছিলো ।  তাই স্বভাবতই পাড়ার ছেলেদের তার উপর একটু অন্য নজর ছিলো ।  অবশ্য সুমনার সেদিকে কোনোই ভ্রূক্ষেপ ছিলো না ।  কিন্তু বে-পাড়ার ছেলে মলয়কে তার ভালো লাগতে শুরু করে । এই ভালোলাগা থেকেই মলয়কে সে ভালোবেসে ফেলে। মলয়ও ঠিক তাই । কিন্তু সুমনার ইস্পাত কঠিন মনের মানুষ বাবা এটাকে কিছুতেই মানতে পারেন না। পাড়ার তাসের আড্ডা থেকেই তিনি জানতে পারেন ,কোন বাড়ির ছেলের সাথে মেয়ে মেলামেশা করছে । তখন সুমনার সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে । প্রশান্ত বাবুকে তার নিত্যদিনের তাসের আড্ডা থেকে সময়ের আগেই ঘরে ফিরতে দেখে কমলাদেবী বুঝতেই পারেন -একটা কিছু ঘটেছে । বিশ বছরের বিবাহিত জীবন তার । বিয়ে হয়েছে ,সংসার করতে হয় তাই করছেন ।  মেয়ে হয়েছে ,ছেড়ে গেলে লোকে কি বলবে - তাই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে  প্রশান্তবাবুর শারীরিক ও মানষিক অত্যাচার তিনি মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছেন । দাম্পত্য সুখ কি তিনি আগেও বুঝতে পারেননি ; সন্তান হবার পরেও না।  স্বশুর ,শ্বাশুড়ি কেউই নেই / ঐ হীনমনা মানুষটির জন্য তিনি বিয়ের পর থেকে  একদিনের জন্যও শান্তি পাননি । অ-কথ্য ,কু-কথ্য ভাষায় গালিগালাজ ,কথায় কথায় বাপ ,মাকে তুলে কথা বলা ;প্রতিবাদ করতে গেলে শারীরিক নির্যাতন  তাই মুখ বুজেই সব সহ্য করা।             
    আজ যখন তিনি তার স্বামীকে তার ঘরে ফেরার সময়ের  আগেই ফিরতে দেখেছেন ;তখনি তিনি বুঝে গেছেন কিছু একটা ঝামেলা করতেই তিনি এই অসময়ে ফিরেছেন । ঘরে ফিরেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন ,"কোথায় তোমার আদরিনী মেয়ে ? মুখ দেখাবার তো জো রইলো না ; ভবেশবাবুর ছেলের সাথে সে তো কেচ্ছা করে বেড়াচ্ছে "। কমলাদেবী জানতেন যে মেয়ে মলয়কে ভালোবাসে ।  মাঝে মধ্যে তার নজরে পড়েছে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছে ।  তিনি যে জানতে পেরেছেন তা তিনি মেয়েকে বলেননি ।  কারণ তিনি জানতেন মলয় ছেলেটি ভালো এবং ভালো ঘরের সন্তান । তিনি শান্ত সুরে স্বামীর কাছে জানতে চাইলেন ,"কি কেচ্ছা করেছে সেটা কি জেনেছো ?সারাজীবন আমাকে জ্বালাচ্ছ এবার আমার মেয়ের পিছনে লাগলে ?কি করেছে সে ?"এই নিয়ে দু'এক কথায় স্বামী ,স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া।  সুমনা বাবাকে ছোট থেকেই খুব ভয় পায় ।  তাই বাপ ,মায়ের এই চিৎকার চেঁচামেচিতে সে ঘর থেকে বেড়োয় না । প্রশান্তবাবু হুকুম দিলেন ,"ওর আর পড়াশুনার দরকার নেই ,ও যেন বাড়ি থেকে এক পা ও না বেরোই । একবার যদি দেখি ও বাড়ি থেকে বেরিয়েছে তাহলে ওকে আমি আর বাড়িতে ঢুকতে দেবো না;এটা তোমার আদরিনীকে জানিয়ে দিও।"  কথা ক'টি বলে আবার তিনি বাইরে বেড়িয়ে গেলেন /কমলাদেবী উঠে মেয়ের ঘরের কাছে যেয়ে তাকে ডেকে আনলেন নিজের কাছে । তার কাছে মলয়ের সম্মন্ধে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জানতে চাইলেন । মলয় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ।  ছ মাস হলো একটা চাকরীতে ঢুকেছে ।  বড়োলোকের একমাত্র ছেলে ।  ওর বাবা এখনো চাকরী করেন । সব শুনে তিনি বললেন ,"তোর বাবা কিছুতেই ওকে মেনে নেবে না।  তোরা পরস্পরকে যদি সত্যিই ভালোবাসিস আর বিয়ে করতে চাস তাহলে তোকে পালাতে হবে । হ্যা আমি মা হয়ে তোকে বলছি ও যদি রাজি থাকে তাহলে বুঝতে হবে ও তোকে সত্যিই ভালোবাসে । আমার জীবনটাতো নষ্ট হয়েই গেছে । তোর জীবনের প্রতি তোর বাবাকে আমি নাক গলাতে দেবো না। কাল যখন তোর বাবা কাজে বেরোবে তখন তুই ওকে আসতে বলবি । তুই এক্ষুনি ওকে ফোন কোরে বল ; দেরি করিসনা ।  কোথার থেকে কি একটা ধরে এনে তোকে তার ঘাঁড়ে চাঁপিয়ে দেবে - তার ঠিক নেই  আমি মানুষটাকে একদম বিশ্বাস করি না । সুমনা মায়ের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে ভাবে - যে মা, বাবার ভয়ে সব সময় ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে তার আজ এ কি রূপ ! মাকে বলে ," কিন্তু মা এমন হলে বাবা তো তোমায় ছাড়বে না ; খুব মারবে । " "তোর বাবার হাতে মার খেতে খেতে এখন আমার আর ব্যথা লাগে না। কিন্তু তোর কোনো ক্ষতি আমি তোর বাবাকে কিছুতেই কোরতে দেবোনা। যা মা- আমি যা বলছি তাই কর । তাড়াতাড়ি ফোনটা কর।"

        এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই সুমনা মায়ের কথামতো মলয়ের সাথে পালিয়ে যেয়ে কালীঘাট মন্দিরে বিয়ে করে মলয়দের বাড়িতে যায় ।  কিন্তু মলয়ের বাবা ,মা কিছুতেই এ বিয়ে মেনে নেননা। সেই রাতে মলয় সুমনাকে নিয়ে তার এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয় ।  পরেরদিন একটা ছোট ঘর ভাড়া করে আস্তে আস্তে নিজেদের সংসারটাকে গুছিয়ে নেয়।  তিনটে বছর খুব কষ্ট করেছে ওরা ।  তার মধ্যেই ওদের ঘর আলো করে আসে সুমন। সুমনের জম্মের কিছু দিনের মধ্যেই মলয়ের বড়ো কোম্পানিতে ভালো মাইনের চাকরী।

      মলয় যখন ফ্লাট কিনবে ঠিক করছে  ; সুমনা যেয়ে সরাসরি তাকে বললো ,"আমার মায়ের জন্য যেন একটা বেডরুম থাকে। " মলয় কথাটা শুনে তার মুখের দিকে তাকিঁয়ে বলে ," একদম আমার মনের কথাটা বলেছো । আমিও কিন্তু এটা ভেবেছি । "  সুমনার বড়ো ফ্লাট হোলো । মায়ের ঘরটা নিজের হাতে সাজালো ।  কিন্তু মাকে আসার কথা বললে মা বললেন ,"যাবো নিশ্চয় যাবো - আগে একটা গাড়ি কেন । তোর বাবার নাকের ডগা দিয়ে তোদের গাড়ি চড়ে দাদুভায়ের কাছে চলে যাবো। " বছর খানেকের মধ্যে গাড়িও কিনলো মলয় ।এবার সে নিজেই শ্বাশুড়িমাকে তাদের কাছে যাওয়ার জন্য বললো ।শুনে কমলাদেবী বললেন,  "বাবা ,এই বয়সে উনাকে রেখে আমি কি তোমাদের কাছে যেয়ে নিঃশ্চিন্তে দিনের পর দিন থাকতে পারি ?মানুষটাতো নিজে কিছুই পারেনা ; শুধু রাগটাই তার সম্বল । এখন তো আমি তোমাদের কাছে আসছি ,যাচ্ছি - তা নিয়ে তো সে কিছুই বলেনা।  আগের থেকে তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমার আর কোনো কষ্ট নেই । তোমরা ভালো আছো ,সুখী আছো - এর থেকে আমার জীবনে আর কি চাই বলো ? আমাকে নিয়ে তোমরা ভেবোনা। আমি এখন খুব ভালো আছি। একমাত্র মৃত্যু ছাড়া ঐ মানুষটাকে ছেড়ে যে আমি কোথাও যেয়ে থাকতে পারবো না বাবা !!"

নন্দা মুখার্জী   19.7..16    1AM.
আমার কবি প্রনাম ---

          ১৫৭তম জম্মদিনে বিশ্ববরেণ্য -কবি,সাহিত্যিক,দার্শনিক,শিল্পী,গীতিকার,সুরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সশ্রদ্ধ প্রনাম।বাঙ্গালীর জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবস্থান তার ঠাকুরঘরে।বাঙ্গালী সমাজ তাঁর জম্মদিন এই ২৫শে বৈশাখ দেবতার উৎসব হিসাবে পালন করেন।প্রতিটা মানুষের মনের গোপনকথা,বিরহ,প্রেম,হাসি-আনন্দ,উচ্ছ্বলতা -মানুষের অন্তর থেকে টেনে বার করে এনেছেন অবলীলায়।বাঙ্গালীর জীবনের শ্রেষ্ঠতম সন্তান নিজেই বলে গেছেন,
   "মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক,
          আমি তোমাদেরই লোক।"

Saturday, May 5, 2018

বিশ্বাসঘাতকতা
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
 
           মিলন,মনীষ আর রাহুল তিন বন্ধু। এদের মধ্যে রাহুলের অবস্থা একটু ভাল। পড়াশুনা শেষ করে চাকরীর দুর্মূল্য বাজারে কেউই কিছু করে উঠতে পারেনা। তিনজনে মিলে রাহুলদের বাড়িতেই একটি ব্যাগ তৈরির কারখানা শুরু করে।মিলন ও মনীষ সামান্য কিছু আর বাকিটা বলতে গেলে রাহুলই দিয়ে ব্যবসাটা দাঁড় করাতে চেষ্টা করে।কথা হয় লভ্যাংশ থেকে কিছুকিছু করে রাহুলকে তারা শোধ করবে।তিনবন্ধু মিলে কাঁচামাল সংগ্রহ করা,নানান মার্কেটে ঘুরে ঘুরে বিক্রির জন্য দোকান ঠিক করা সবই আস্তে আস্তে গুছিয়ে নেয়।বেশ ভালোই চলতে লাগে ব্যবসা।ইতিমধ্যে রাহুলের মাতৃবিয়োগ হয়। তাকে মায়ের কাজের পূর্ব পর্যন্ত ব্যবসা নিয়ে ভাবতে নিষেধ করে অপর দুই বন্ধু মনীষ ও মিলন।এরই মাঝে মিলন চাকরীর  একটি পরীক্ষা দিতে চেন্নাই যায় দিন সাতেকের জন্য।মনীষ হয়তো এমন একটি সুযোগের অপেক্ষায় করছিলো বা এমন সুযোগ আসাতে সে এটাকে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগায়।সে নিজের নামে বিলবই ছাপায় একটি প্যাডও তৈরি করায়;প্রতিটা দোকানে পেমেন্ট আনতে যেয়ে নিজেকে মালিক ও রাহুল, মিলনকে কর্মচারী বানিয়ে সই-সিল সমেত তাদের রসিদ দেয় পুরো টাকা আদায়ের পর।বলাবাহুল্য পুরো টাকাটাই সে নিজ হস্তগত করে।

       মায়ের পারলৌকিক কর্ম শেষ হয়, এদিকে মিলনও চেন্নাই থেকে চাকরীর পরীক্ষা শেষে ফিরে আসে।কাজের বাহানা দিয়ে মনীষ, রাহুল ও মিলনকে পেমেন্টের জন্য মাকেটে পাঠায়।সেখানে পৌঁছে তারা সবকিছুই জানতে পারে এও দেখে মনীষ একার নামেই ট্রেডলাইসেন্স বের করেছে বিলবুক,প্যাড সবকিছুতেই শুধু মনীষের নাম।হতভম্ভ হয়ে যায় দুই বন্ধু।এত বড় বিশ্বাসঘাতকা!শুধুমাএ টাকার লোভে ছেলেবেলার বন্ধুত্বকে অস্বীকার করা?এত লোভ মনিষের? ছি! ছি! এর একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে এটা ভেবেই দুই বন্ধু বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।কিন্তু যতই তারা বাড়ির কাছাকাছি আসতে থাকে ততই তাদের রাগ কমতে থাকে;একসাথে তিনবন্ধুর কাটানোর সময়গুলি মনে পড়তে থাকে।একসময় রাহুল ও মিলন দুজনেই একসাথে হেসে ওঠে সেই পুরানো দিনের কথা মনেকরে।

          বাড়িতে ফিরে রাহুল ফোন করে মনীষকে জানায়,"যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কারখানাটি অন্যত্র সরিয়ে নিস;কারন আমার ও মিলনের মাথায় অন্য একটি ব্যবসার প্লান এসছে।"

   # নন্দা 

Tuesday, May 1, 2018

তুমি আছ
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

রাতে সকলেই যখন নিদ্রাচ্ছন্ন,
আমি তখন কবিতা লিখতে বসি-
তোমার প্রিয় ব্যালকনিটাই বসে।
ফুলের টব দিয়ে ব্যালকনিটা সাজিয়েছিলে,
প্রতিটা গাছে এখন ফুল ফোঁটে,
ফুল-সৌরভের মাঝেও তোমার গায়ের গন্ধ পাই,
তোমায় কাছে পেতে ইচ্ছা করে আগের মত।
ফাঁকা চেয়ারটার দিকে বারবার তাকাই,
মন বলে তুমি ওখানেই আছ!
লেখা আমার আর হয়না,
তোমাকে কাছে পাইনা ঠিকই,
তোমার উপস্থিতি টের পাই।

# নন্দা