অনু গল্প ;- 'অপূর্ণ জীবনবোধ' (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) _______________
মোহিনী কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি তার নিজের বোন তার এই চরম সর্বনাশ করবে | বাবার মৃত্যুর পর চরম অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিল তার অপর দুই বোন নন্দিনী ,বনানী আর তাদের মা | মোহিনীর স্বামী সঞ্জয় প্রথমে কিছুতেই রাজি হয়নি এত বড় দায়িত্ব নিতে | দিনের পর দিন মোহিনী সঞ্জয়কে বুঝিয়েছে ,কান্নাকাটি করেছে ,মাঝে মধ্যে না খেয়েও থেকেছে ;কারণ তার মা এবং ছোট বোনেরা হয়তো না খেয়েই আছে এই কথা ভেবে | শেষমেষ সঞ্জয় রাজি হতে বাধ্য হয় | কলকাতার ভাড়া করা বাড়ি থেকে শ্রাবনী দেবী তার দুই মেয়েকে নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে অভাবের তাড়নায় চলে আসতে বাধ্য হন |বকখালীর থেকে অনেকটা ভিতরে বেশ কয়েক বিঘা ধানিজমি , তিনটে পুকুর , দুটি বড় বড় ঝিল ;যেখানে সারা বছর মাছ চাষ হয় , কোটা বাড়ি | বড় মেয়ে মোহিনী বেশ সুখেই ছিলো | জামাইয়ের পারিবারিক ব্যবসা ইঁটভাটার | অর্থের কোনোই অভাব ছিলো না | বাড়ির সদস্য বলতে জামাই ,মেয়ে আর তাদের পাঁচ বছরের ছেলে | মেয়ের বাড়িতে আসার পর থেকে বেশ হাসি ,আনন্দের মধ্য দিয়েই দিনগুলি কেটে যাচ্ছিলো |পাঁচ বছরের নাতিটিকে শ্রাবণীদেবী চোখের আড়াল হতেই দিতেন না | এর-ই মাঝে সঞ্জয় দেখেশুনে মেজ শালী নন্দিনীর জন্য একজন স্কুল শিক্ষক পাত্র হিসাবে নির্বাচন করে | নিদৃষ্ট দিনে পাত্র পক্ষ নন্দিনীকে দেখতে আসে | দেখেশুনে বাড়িতে পৌঁছে তারা খবর পাঠায় যদি সঞ্জয়ের ছোটশালী বনানীকে তারা দেন ,তাহলে এই বিয়েতে তাদের কোনো অমত নেই এবং সম্পূর্ণ এক বস্ত্রে তারা বনানীকে পুত্রবধূ হিসাবে গ্রহণ করবেন | নন্দিনীর গায়ের রংটা ছিল চাপা |চোখ ,নাক ,মুখ - তিনবোনেরই খুব ভালো |সঞ্জয় এসে একথা যখন তার শ্বাশুড়ীকে জানায় তখন তার শ্বাশুড়ি সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যান | মায়ের ইচ্ছাতে মোহিনীও সায় দেয় | কিন্তু নন্দিনীর এতে রাগ হয় মা ও দিদির উপর |সে মুখে কিছু বলে না | কিন্তু মনে মনে ফুঁসতে লাগে | বড়দিদি থাকতে মা ও দিদি কি করে বনানীর বিয়ে ঠিক করলেন ?নিদৃষ্ট দিনে বনানীর বিয়ে হয়ে যায় দেবরাজের সঙ্গে | দেবরাজ উচচ বংশের শিক্ষিত ছেলে | কন্যা বিদায়ের দিন সে নন্দিনীকে দিদি বলে সম্মোধন করে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে | নন্দিনী কিন্তু কোনো কথা বলে না ,যেটা মোহিনীর খুব খারাপ লাগে | কিছুদিনের মধ্যেই মোহিনী তার স্বামীকে নন্দিনীর জন্য ছেলে দেখতে বলে | সঞ্জয় তাকে জানায় ,
--ছটা মাস যেতে দাও | সবে তো বনানীর বিয়ে দিলাম ;আমায় একটু সময় দাও সব কিছু গুছিয়ে নিতে |
---কিন্তু ওর হাব- ভাব আমার মোটেই ভালো লাগে না | দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে |
--কেন কি করেছে ও ?
--সে অনেক কথা | এতো কথা আমি তোমায় এখন বলতে পারবো না | তবে আমার সব থেকে যেটা খারাপ লাগে - যখন তখন ও আমরা দুজনে ঘরে থাকতে ঘরে ঢুকে পড়ছে ,কিছু বললেই মুখ ঝামটা দিয়ে কথা বলছে - আমি বলছি তুমি ওর জন্য সম্মন্ধ দেখো | লাগাতার মোহিনী বলতে বলতে নন্দিনীর জন্য সঞ্জয় এক পাত্রের সন্ধান আনে | প্রচুর জমিজমা ,পুকুর ,বড়বাড়ি ,ছেলেও শিক্ষিত | কিন্তু রোজগার বলতে কিছু প্রাইভেট টিউশন | তাদের যা জমিজমা আছে তাতে ধান ,সব্জিপাতি তারা পাইকারি দরে বিক্রি করে ,রোজগার না করলেও চলে | দুই ভাই | শুধু বসে বসে সময় কাটানোর থেকে দুজনেরই ওই টিউশন করা | নন্দিনীকে তারা পছন্দও করে | সে এ বিয়েতে কোনো আপত্তি করে না | বনানীর বিয়ের মাস চারেকের মধ্যেই শুভ দিন দেখে নন্দিনীর বিয়ে হয়ে যায় |কিন্তু 'ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন -' ছমাসের মাথায় নন্দিনীর স্বামী বিষধর সর্পের কামড়ে মারা যায় | অলক্ষ্মী অপবাদ নিয়ে বিধবা হয়ে নন্দিনী পুনরায় দিদির সংসারেই আশ্রয় নেয় | কিছুটা হলেও প্রথম দিকে সে চুপচাপ হয়ে যায় | এ ভাবেই দিন এগিয়ে যেতে থাকে | বছর খানেক এভাবে চলার পর মোহিনী যা নিজ চোখে দেখলো তা সে কোনোদিন কল্পনাও করেনি | একদিন ছেলেকে ও মাকে নিয়ে গ্রামের এক বাড়িতে নারায়নপূজা উপলক্ষে সন্ধ্যার সময় বেড়িয়ে ঘন্টা দুয়েক পরে বাড়িতে ফিরে এসে মোহিনী দেখে তার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ |কি মনে হলো সে তাঁর জানলার ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে দেখলো ,সঞ্জয় আর নন্দিনী ------------মুহূর্তে মাথাটা ঘুরে গেলো মোহিনীর | হাত ,পা অবশ হয়ে গেলো ; ধপ্ করে মাটিতে পড়ে যেয়ে জ্ঞান হারালো | হাতে ধরা সিন্নির কাঁসার বাটি পড়ে যেয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে গেলো | শব্দ পেয়ে নন্দিনী তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেড়িয়ে এসে দেখে তার দিদি বারান্দায় পড়ে আছে | সঞ্জয় ও তার শ্বাশুড়ি এসে মোহিনীর জ্ঞান ফেরালো | কিন্তু জ্ঞানই ফিরলো ; প্রচন্ড মানসিক আঘাতে মোহিনী তার বাক শক্তি হারিয়ে ফেললো |
মাস ছয়েক এ ভাবে কাটার পর তার ঠাঁই হোলো পাগলা গারদে |
নন্দা 18.10.16. 10PM.
মোহিনী কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি তার নিজের বোন তার এই চরম সর্বনাশ করবে | বাবার মৃত্যুর পর চরম অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিল তার অপর দুই বোন নন্দিনী ,বনানী আর তাদের মা | মোহিনীর স্বামী সঞ্জয় প্রথমে কিছুতেই রাজি হয়নি এত বড় দায়িত্ব নিতে | দিনের পর দিন মোহিনী সঞ্জয়কে বুঝিয়েছে ,কান্নাকাটি করেছে ,মাঝে মধ্যে না খেয়েও থেকেছে ;কারণ তার মা এবং ছোট বোনেরা হয়তো না খেয়েই আছে এই কথা ভেবে | শেষমেষ সঞ্জয় রাজি হতে বাধ্য হয় | কলকাতার ভাড়া করা বাড়ি থেকে শ্রাবনী দেবী তার দুই মেয়েকে নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে অভাবের তাড়নায় চলে আসতে বাধ্য হন |বকখালীর থেকে অনেকটা ভিতরে বেশ কয়েক বিঘা ধানিজমি , তিনটে পুকুর , দুটি বড় বড় ঝিল ;যেখানে সারা বছর মাছ চাষ হয় , কোটা বাড়ি | বড় মেয়ে মোহিনী বেশ সুখেই ছিলো | জামাইয়ের পারিবারিক ব্যবসা ইঁটভাটার | অর্থের কোনোই অভাব ছিলো না | বাড়ির সদস্য বলতে জামাই ,মেয়ে আর তাদের পাঁচ বছরের ছেলে | মেয়ের বাড়িতে আসার পর থেকে বেশ হাসি ,আনন্দের মধ্য দিয়েই দিনগুলি কেটে যাচ্ছিলো |পাঁচ বছরের নাতিটিকে শ্রাবণীদেবী চোখের আড়াল হতেই দিতেন না | এর-ই মাঝে সঞ্জয় দেখেশুনে মেজ শালী নন্দিনীর জন্য একজন স্কুল শিক্ষক পাত্র হিসাবে নির্বাচন করে | নিদৃষ্ট দিনে পাত্র পক্ষ নন্দিনীকে দেখতে আসে | দেখেশুনে বাড়িতে পৌঁছে তারা খবর পাঠায় যদি সঞ্জয়ের ছোটশালী বনানীকে তারা দেন ,তাহলে এই বিয়েতে তাদের কোনো অমত নেই এবং সম্পূর্ণ এক বস্ত্রে তারা বনানীকে পুত্রবধূ হিসাবে গ্রহণ করবেন | নন্দিনীর গায়ের রংটা ছিল চাপা |চোখ ,নাক ,মুখ - তিনবোনেরই খুব ভালো |সঞ্জয় এসে একথা যখন তার শ্বাশুড়ীকে জানায় তখন তার শ্বাশুড়ি সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যান | মায়ের ইচ্ছাতে মোহিনীও সায় দেয় | কিন্তু নন্দিনীর এতে রাগ হয় মা ও দিদির উপর |সে মুখে কিছু বলে না | কিন্তু মনে মনে ফুঁসতে লাগে | বড়দিদি থাকতে মা ও দিদি কি করে বনানীর বিয়ে ঠিক করলেন ?নিদৃষ্ট দিনে বনানীর বিয়ে হয়ে যায় দেবরাজের সঙ্গে | দেবরাজ উচচ বংশের শিক্ষিত ছেলে | কন্যা বিদায়ের দিন সে নন্দিনীকে দিদি বলে সম্মোধন করে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে | নন্দিনী কিন্তু কোনো কথা বলে না ,যেটা মোহিনীর খুব খারাপ লাগে | কিছুদিনের মধ্যেই মোহিনী তার স্বামীকে নন্দিনীর জন্য ছেলে দেখতে বলে | সঞ্জয় তাকে জানায় ,
--ছটা মাস যেতে দাও | সবে তো বনানীর বিয়ে দিলাম ;আমায় একটু সময় দাও সব কিছু গুছিয়ে নিতে |
---কিন্তু ওর হাব- ভাব আমার মোটেই ভালো লাগে না | দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে |
--কেন কি করেছে ও ?
--সে অনেক কথা | এতো কথা আমি তোমায় এখন বলতে পারবো না | তবে আমার সব থেকে যেটা খারাপ লাগে - যখন তখন ও আমরা দুজনে ঘরে থাকতে ঘরে ঢুকে পড়ছে ,কিছু বললেই মুখ ঝামটা দিয়ে কথা বলছে - আমি বলছি তুমি ওর জন্য সম্মন্ধ দেখো | লাগাতার মোহিনী বলতে বলতে নন্দিনীর জন্য সঞ্জয় এক পাত্রের সন্ধান আনে | প্রচুর জমিজমা ,পুকুর ,বড়বাড়ি ,ছেলেও শিক্ষিত | কিন্তু রোজগার বলতে কিছু প্রাইভেট টিউশন | তাদের যা জমিজমা আছে তাতে ধান ,সব্জিপাতি তারা পাইকারি দরে বিক্রি করে ,রোজগার না করলেও চলে | দুই ভাই | শুধু বসে বসে সময় কাটানোর থেকে দুজনেরই ওই টিউশন করা | নন্দিনীকে তারা পছন্দও করে | সে এ বিয়েতে কোনো আপত্তি করে না | বনানীর বিয়ের মাস চারেকের মধ্যেই শুভ দিন দেখে নন্দিনীর বিয়ে হয়ে যায় |কিন্তু 'ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন -' ছমাসের মাথায় নন্দিনীর স্বামী বিষধর সর্পের কামড়ে মারা যায় | অলক্ষ্মী অপবাদ নিয়ে বিধবা হয়ে নন্দিনী পুনরায় দিদির সংসারেই আশ্রয় নেয় | কিছুটা হলেও প্রথম দিকে সে চুপচাপ হয়ে যায় | এ ভাবেই দিন এগিয়ে যেতে থাকে | বছর খানেক এভাবে চলার পর মোহিনী যা নিজ চোখে দেখলো তা সে কোনোদিন কল্পনাও করেনি | একদিন ছেলেকে ও মাকে নিয়ে গ্রামের এক বাড়িতে নারায়নপূজা উপলক্ষে সন্ধ্যার সময় বেড়িয়ে ঘন্টা দুয়েক পরে বাড়িতে ফিরে এসে মোহিনী দেখে তার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ |কি মনে হলো সে তাঁর জানলার ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে দেখলো ,সঞ্জয় আর নন্দিনী ------------মুহূর্তে মাথাটা ঘুরে গেলো মোহিনীর | হাত ,পা অবশ হয়ে গেলো ; ধপ্ করে মাটিতে পড়ে যেয়ে জ্ঞান হারালো | হাতে ধরা সিন্নির কাঁসার বাটি পড়ে যেয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে গেলো | শব্দ পেয়ে নন্দিনী তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেড়িয়ে এসে দেখে তার দিদি বারান্দায় পড়ে আছে | সঞ্জয় ও তার শ্বাশুড়ি এসে মোহিনীর জ্ঞান ফেরালো | কিন্তু জ্ঞানই ফিরলো ; প্রচন্ড মানসিক আঘাতে মোহিনী তার বাক শক্তি হারিয়ে ফেললো |
মাস ছয়েক এ ভাবে কাটার পর তার ঠাঁই হোলো পাগলা গারদে |
নন্দা 18.10.16. 10PM.
No comments:
Post a Comment