Saturday, March 31, 2018

আগে বুঝিনি 
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

ভালো তোমায় এত বেসেছিলাম, 
বুঝতে পারিনি আগে;
চলে যেয়ে বুঝালে আমায়, 
বিরহ কেমন লাগে! 

বেদনার রাত বড় কষ্টের, 
হতে চায়না ভোর;
অস্থির মন করে ছটফট,
আঁধারে জীবন মোর! 

তোমার স্মৃতির পরশ টানে, 
ছুটে যাই বহুদূর, 
নিদ্রিত চোখের স্বপ্নগুলো-
বড় বেশি সু-মধুর। 

৩১-৩-১৮   সকাল ১-২৫ .
 

Monday, March 26, 2018



রাখবে কি মনে
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

সবকিছু ছেড়ে, যাবো যেদিন চলে-
রাখবে কি তোমরা, আমায় মনে ?

হাঁটবোনা আর, চেনা পথ ধরে,
বসবোনা তোমাদের সাথে, খাবার টেবিলে!

পূজার সময় আমার জন্য,কিনবেনা নূতন কিছু,
সেজেগুজে বেরোবোনা, তোমাদের পিছু পিছু।

তুলসীমঞ্চে প্রদীপ জ্বলবে, অন্যের হাতে,
সবকিছুই থাকবে,থাকবোনা আমি সাথে।

#নন্দা

নন্দা  24-3-18


Tuesday, March 20, 2018


স্মৃতির বোঝা বড্ড ভারী 
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

তুমি বাতাস হয়ে শরীরে জড়িয়ে থাকো, 
ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আমায় কাছে রাখ, সমুদ্রের ঢেউ এর হুংকার তুলে বুকে আছড়ে পড়, 
ঘুমের মাঝে স্বপন দেখিয়ে আমায় আপন কর। 
আমার সকল কাজের মাঝে সঙ্গী তুমি হও, 
মন খারাপে সুরের জাদুতে আমায় গান শোনাও। 
জোস্না রাতে বাতায়নে যখন একলা থাকি বসে, 
হাজার তারার ভিড়ে থেকেও আমায় দেখে-ওঠো হেসে;
হারিয়ে যায় তখন আমার সকল মন খারাপ, 
আপন মনেই জুড়ি তখন তারার সাথে আলাপ। 

হয়তো সবই কল্পনা আমার তবুও থাকি ভালো, 
আজীবন তুমি এভাবেই-আমার সঙ্গে চলো। 
মানব জীবন ত্যাগ করেছো সময় হয়েছে তাই, 
টানলে সুতো সবাই একদিন এভাবেই চলে যায়। 
স্মৃতিগুলি বড্ড ভারী টানতে বড় কষ্ট! 
স্মৃতিরা সব থাকবে কাছেই হবেনা কিছুই নষ্ট।
একটু শুধু ধর্য্য ধরে অপেক্ষাতে থাকো, 
মন খারাপে শুধু আমার কথায় ভাবো। 
আসছি আমি তোমার কাছেই আর নেবোনা সময়, 
তোমায় ছেড়ে একা আমার করে শুধুই ভয়। 

স্মৃতির বোঝা বড্ড ভারী 
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

তুমি বাতাস হয়ে শরীরে জড়িয়ে থাকো, 
ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আমায় কাছে রাখ, সমুদ্রের ঢেউ এর হুংকার তুলে বুকে আছড়ে পড়, 
ঘুমের মাঝে স্বপন দেখিয়ে আমায় আপন কর। 
আমার সকল কাজের মাঝে সঙ্গী তুমি হও, 
মন খারাপে সুরের জাদুতে আমায় গান শোনাও। 
জোস্না রাতে বাতায়নে যখন একলা থাকি বসে, 
হাজার তারার ভিড়ে থেকেও আমায় দেখে-ওঠো হেসে;
হারিয়ে যায় তখন আমার সকল মন খারাপ, 
আপন মনেই জুড়ি তখন তারার সাথে আলাপ। 

হয়তো সবই কল্পনা আমার তবুও থাকি ভালো, 
আজীবন তুমি এভাবেই-আমার সঙ্গে চলো। 
মানব জীবন ত্যাগ করেছো সময় হয়েছে তাই, 
টানলে সুতো সবাই একদিন এভাবেই চলে যায়। 
স্মৃতিগুলি বড্ড ভারী টানতে বড় কষ্ট! 
স্মৃতিরা সব থাকবে কাছেই হবেনা কিছুই নষ্ট।
একটু শুধু ধর্য্য ধরে অপেক্ষাতে থাকো, 
মন খারাপে শুধু আমার কথায় ভাবো। 
আসছি আমি তোমার কাছেই আর নেবোনা সময়, 
তোমায় ছেড়ে একা আমার করে শুধুই ভয়। 

Saturday, March 17, 2018

"দায়বদ্ধতা", প্রতিলিপিতে পড়ুন :
https://bengali.pratilipi.com/story/PnO7bjco3jRm&utm_source=android&utm_campaign=content_share
ভারতীয় ভাষায় অগুনতি রচনা পড়ুন,লিখুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন,সম্পূর্ণ নিঃশুল্ক

Tuesday, March 13, 2018

"মামার কীর্তি"  (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী )   

    বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন | অমিতবাবু অনেকক্ষন আগেই এসে গেছেন তার আদরের বোন রোহিণীর বাড়ি | বোনঝির বিয়ে ঠিক হয়েছে ,আজ ছেলের আশীর্বাদ | তিনি যাবেন | একমাত্র মামা তিনি | তার বোনের ইচ্ছা তার দাদাই তার হবু জামাইকে আশীর্বাদ করুক | অমিতবাবুদের আদিবাড়ি ছিলো বাংলাদেশের খুলনা জেলার পিলজঙ্গ গ্রামে | একদম খাঁটি বাঙাল তারা | বোনটির বিয়েও দিয়েছেন বাঙ্গাল  ঘরেই | বলতে গেলে যেহেতু তিনি নিজে বাঙ্গাল  তাই তিনি নিজেও বাঙ্গালদের একটু পছন্দ করেন বেশি এবং দাদা ,বোন দুজনেই মা ,ঠাকুমাদের মতো দেশের গায়েঁর নিয়ম ,নীতি এক কথায় বলতে গেলে সংস্কার মেনে চলেন | মামার হাতে ভাত খাওয়া ,মামার হাতে হাতে খড়ি দেওয়া ,মামার হাতে বোনঝি জামাই এর আশীর্বাদ ,মামার হাতে সম্প্রদান - তাহলে নাকি ছেলেমেয়ে মেধাবী  ও সুখী হয় | খুলনা জেলার মানুষের মধ্যে এরূপ একটি ধারণা প্রচলিত আছে | তাই অমিত ব্যানার্জী একেবারে কুঁচানো ধুতি ,পাঞ্জাবী আর গলায় মোটা সোনার চেনে নিজেকে সাজিয়ে সকাল সকাল বোনের বাড়ি এসে হাজির ভাগ্নি জামাই আশীর্বাদের প্রস্তূতি নিয়ে | কিন্তু ভাগ্নির মুখটা তিনি আবিষ্কার করেন একটু থমথমে | আলাদা করে অন্য ঘরে তাকে ডেকে নিয়ে যান | দরজা বন্ধ করে কাছে টেনে  তাকে জিজ্ঞেস করেন ," কিরে রিঙ্কু , তোর কি এই বিয়েতে মত নেই ?" রিঙ্কু মুখ নীচু করে থাকে আর চোখের থেকে তার টপটপকরে তার জল পড়তে থাকে | তিনি রিংকুকে বলেন ," আরে এখনো সময় আছে তো ! আমাকে সব কিছু খুলে বল ,দেখি কিছু করা যায় কিনা ?"রিংকু কাঁদতে কাঁদতে তার মামাকে জানালো - যে ছেলেটার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে ,তার ছোট ভাইকে সে ভালোবাসে | যেহেতু সে চাকরিতে পার্মানেন্ট হয়নি তাই যিনি সম্মন্ধ এনেছেন তার কথামতো তার দাদার সাথেই বিয়ে ঠিক করেছেন | কিন্তু মা ,বাবা জানে না যে সে অজয়কে ভালোবাসে | ভয়ে কোনো কথা সে মা ,বাবাকে বলতেও পারেনি |         অমিত বাবু সব শুনে একপ্রস্ত হাসলেন |রিংকু তাকে বললো, "তুমি হাসছো মামা ?"  " দূর পাগলী তুই আগেই আমাকে সব জানালিনা কেন ?"
---কেমন করে সব বলতাম তোমায় বলো ?
 ---আচ্ছা তুই এক কাজ কর , অজয়কে ফোন করে বল আমি কথা বলবো |
 ---মানে ? কি বলবে তুমি ? 
---যখন বোলবো তখন শুনবি | ফোনটা করে বল ,মামা কথা বলবে |  রিংকু মামার স্বভাব জানে | এখুনি যদি সে কাজটা না করে তাহলে ক্ষেপে বোম হয়ে যাবে |সে অজয়কে ফোনটা করে মামাকে ধরিয়ে দিলো |      ছেলের বাড়িতে সবাই এসে হাজির হলেন |শাঁখ ,উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে সকলে যেয়ে ঘরে ঢুকলেন | শুরু হলো অতিথি আপ্যায়ন | অজয়ের দাদা ইশারায় অমিতবাবুকে   জানিয়ে দিলো সে বিজয় | ইশারায় অনেক কথায় অমিতবাবু ও বিজয়ের মধ্যে হলো ঘরে কেউ কিছ্ছুটি টের পেলেন না | আশীর্বাদের জন্য আসন পাতা হলো | বিজয়কে সকলে আসনে বসতে বলছেন | কিন্তু বিজয় কিছুতেই বসে না | অমিতবাবু তখন বললেন ," কি হলো বাবা বস "|  "কিন্তু আমি তো এ বিয়ে করতে পারবো না |"   ঘরের ভিতরে যেন বজ্রপাত হলো | সকলে চম্কে উঠলো | বিজয়ের মা অবাক হয়ে জানতে চাইলেন ," এ তুই কি বলছিস বাবা ? বিয়ের মাত্র সাতদিন দেরী | কার্ড চাপানো ,নিমন্ত্রণ করা ,সব কিছু অর্ডার করা পর্যন্ত হয়ে গেছে | পরিবারের মান, সম্মান ধূলিসাৎ হয়ে যাবে ; এ রকম করিসনা সোনা |"বিজয় বললো ," কেনো তোমরা ভায়ের বিয়ে দাও এখানে ,ভাই ও তো চাকরী পেয়েছে | কয়েকমাসের মধ্যেই ওর ও তো পার্মান্যান্ট হয়ে যাবে | কোনো অসুবিধা নেই তো |  " কিন্তু ওরা কেন রাজি হবে?" বিজয়ের মা বললেন |   অমিতবাবু তার ভগ্নিপতিকে আঁড়ালে ডেকে বললেন,"রমেন তুমি রাজি হয়ে যাও | মেয়ে তোমার সুখী হবে | এই পরিস্থিতিতে আমাদের আর কিছুই করার নেই |"   রমেনবাবু ভগ্নিপতির কথায় সায় দিলেন | কারণ তিনি এই মুহুর্ত্বে অন্য কিছুই ভাবতে পারছিলেন না |  অজয় এসে আসনে বসলো | শুরু হলো আশীর্বাদ | অমিতবাবু তাঁর আশীর্বাদ শেষ করে আস্তে আস্তে বললেন , " কেমন ম্যানেজ করলাম সব ! খুব তো ভয় পাচ্ছিলে , তোমার দাদাকে বুঝিয়ে বললাম , তোমার হবু বৌ তোমার ভাইকে ভালোবাসে | বিয়ের পর তুমি যদি জানতে পারো - তোমার বৌটি তোমার ভায়ের প্রেমিকা ছিলো ,তখন তোমার কেমন লাগবে ? ব্যস বাজিমাত ! " অজয় ফিসফিসকরে মামাশ্বশুরের কানেকানে বললো ," কিন্তু মামা দাদার নামে তো কার্ড ছাপা হয়ে গেছে ,আপনি তো তখন দাদার ই-মেল আই .ডি . টা নিলেন ,দিদির ছবি পাঠিয়ে দেবেন বললেন ,পাঠিয়েছেন কি ? দাদা কিছু জানিয়েছে ?"  "আমি তো পাঠিয়েছি বাবা কিন্তু তার মতামত এখনো জানতে পারিনি | কি করি বলতো বাবা ?"

রমেনবাবু দু'জনের এই ফিসফিসানি শুনে বললেন ," মনে হচ্ছে মামাশ্বশুর ,জামাই দু'জন দু'জনকে আগে থাকতেই চেনে ; সে চিনুক ক্ষতি নেই কিন্তু দাদা তুমি এখন ওঠো এবার আমরা আশীর্বাদ করবো |"

অমিতবাবু ফোনে বিজয়ের সাথে কথা বলে তার মেয়ের ছবিটা ই-মেলে পাঠিয়ে দিলেন | এও বললেন ,"যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে ছবিটা দেখো আর তোমার মতামতটা জানিও | এই কারণে বলছি বাবা ,তোমার বন্ধু বান্ধব মহলে সকলেই তো জানে তোমার বিয়েরদিন স্থির  হয়ে গেছে ;তাই যদি তোমার আপত্তি না থাকে ,আমার মেয়েটিকে তুমি ওই দিনেই বিয়ে করতে পারো ; যদি তোমার পছন্দ হয় | মেয়ে আমার খারাপ দেখতে নয় ,লোকে তাকে সুন্দরীই বলে | মাস ছয়েক হলো সে বাংলা বিভাগে অধ্যাপিকা হিসাবে কাজে যোগদান করেছে | "

      অমিতবাবু ছবিটা পাঠান ঠিকই কিন্তু বিজয় খুলে আর দেখে না | ভায়ের যখন আশীর্বাদ হচ্ছে কিছুটা কৌতূহল বশতঃই সে মেলটা খোলে | খুলেই চমকে উঠে | "একি এতো নিবেদিতা"- নিজের মনেই বলে ওঠে | একই কলেজে দু'জনে পড়তো | বিজয়ের থেকে এক বছরের জুনিয়র ছিল নিবেদিতা | খুব ভালো লাগতো নিবেদিতাকে বিজয়ের | কথাবার্তাও বলতো | কিন্তু বিজয় যেদিন নিবেদিতাকে প্রপোজ করে ,নিবেদিতা সেদিন তাকে বলেছিলো ,"সব ছেলেরাই একই ধরণের ! একটু হেসে কথা বললেই মনে করে তার প্রেমে পরে গেছি | প্রেম করে বিয়ে করার ইচ্ছা আমার নেই | আমার মা ,বাবা যাকে  পছন্দ করে আমার সামনে এনে দাঁড় করবেন বিনা দ্বিধায় আমি তার গলায় মালা পড়াবো |"   এরপর যতদিন দু'জনে কলেজে পরস্পরকে দেখেছে হাই ,হ্যালোতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে | সে বছর ছয়েক আগের কথা | পাশ করে বেড়োনোর পর আর দেখা হয়নি | ছবিটা দেখে কথাগুলি ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলো বিজয় | হঠ্যাৎ মায়ের গলার আওয়াজে তার চমক ভেঙ্গে ,
  ---কি রে ,ভাইকে আশীর্বাদ করতে যাবিনা ?
  ---হ্যাঁ চলো - 
---বাবা ,হঠ্যাৎ করে বিয়েতে বেঁকে বসলি  কেন ?দাদা থাকতে আগে ছোট ভায়ের বিয়ে দিলে লোকে কি বলবে ?
 ---কি আর বলবে ? বিজয় হাসতে হাসতে বলে , তা মা এক কাজ করো ওই একই দিনে একটা মেয়ে দেখে আমার বিয়েটাও দিয়ে দাও |
 ---এ আবার কি কথা ! তা তুই এই বিয়েটাই করতে চাইলিনা কেন ?
   ---মা ,মেয়েটি আমার থেকে খুব ছোট | ওকে ভায়ের সাথেই মানাবে | এতদিন বলবো বলবো করেও বলা হয়নি | আজ তো আর না বললেই নয় | তাই আজ বলতে বাধ্য হলাম |
 ---এখন আমি ভালো মেয়ে তোর জন্য কোথায় পাই বলতো ? দেখি ওখানে যেয়ে কথাটা পাড়ি | উনাদের সন্ধানে যদি কোনো ভালো মেয়ে থাকে | 
  স্বামী ,স্ত্রী দু'জনেপরামর্শ করে অজয়ের আশীর্বাদ হয়ে গেলে কথাটা পারলেন | সঙ্গে সঙ্গেই অমিতবাবু কথাটা লুফে নিলেন | তিনি বললেন ," আমার একটি কন্যা আছে ,প্রফেসারী করে | আমার মোবাইলে তার ছবিও আছে | দেখতে পারেন |" অমিতবাবুর মোবাইল সকলের হাতে হাতে ঘুরে বেড়াতে লাগলো | শেষে বিজয়ের মা মোবাইলটা নিয়ে এসে ছবিটা বিজয়কে দেখতে বললেন | বিজয় ছবিটার দিকে না তাঁকিয়েই বললো ,"তোমরা যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেটাই মেনে নেবো |"   অমিতবাবু তার গলার মোটা সোনার চেন দিয়ে বিজয়কে আশীর্বাদ করে গেলেন | কথা স্থির হলো ওই একই দিনে একই বাড়িতে দু'টি বিয়ের অনুষ্ঠানই হবে |   নিবেদিতা বাবার এই সিদ্ধান্তকে হাসি মুখে মেনে নিলো | মা একটু অসন্তুষ্ট হলেও নিবেদিতাই মাকে বুঝালো ,"বাবা কখনোই আমার খারাপ চাইতে পারেন না | তিনি নিশ্চয় বুঝেছেন ছেলে ভালো এবং আমি সেখানে সুখী হবো |"
  ---তুই আজকের যুগের মেয়ে হয়েও বিয়ের আগে ছেলেটিকে একটু দেখবি না ?   ---বাবার প্রতি সে বিশ্বাস আমার আছে | আর কি করবো আমি তাকে দেখে ? আমার পছন্দ না হলেও বাবার মুখের উপর আমি না বলতে পারবো না | বাবা যেটা ভালো বুঝেছেন ,সেটাই করেছেন | তুমি মন খারাপ করোনা | তোমার মেয়ে সুখিই হবে |  বিয়ের দিন দেখতে দেখতেই এসে গেলো | একই বাড়িতে দুটি বিয়ে | সুতরাং লোকসমাগমও একটু বেশী | শুভ দৃষ্টির সময়ে নিবেদিতা বিজয়ের মুখের দিকে যখন তাঁকালো তখন মনে মনে ভাবলো ,বাবা তো তার জন্য রাজপুত্র ঠিক করে গেছেন | কিন্তু ছেলেটিকে এত চেনা চেনা লাগছে কেন ? মনে হচ্ছে কোথায় যেন  দেখেছি | কিছুতেই মনে পড়ছে না | কারণে অকারণে সে বিজয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে অনেকবার মনে করবার চেষ্টা করেছে | কিন্তু মনে করতে পারেনি |   ফুলশয্যার রাতে সকলে বেড়িয়ে যাওয়ার পর বিজয় এসে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ কোরে খাঁটের উপর যেয়েপা ঝুলিয়ে  চুপ করে বসে থাকলো | নিবেদিতায় প্রথম কথা বলে ,

--- মুখটা এত চেনা ,চেনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছি না -

---বিজয় হেসে দিয়ে বলে ,মনে রাখবার মত কোনোদিন তোমার জীবনে কোনো রেখাপাত তো আমি করতে পারিনি ; আমার জীবনে প্রথম ভালবাসা তুমি ,স্বপ্নেও ভাবিনি সেটাই ঘুরে ফিরে শেষ ভালোবাসা হয়ে আসবে | একমাত্র তোমাকেই আমি আমার ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলাম  কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলাম | কিন্তু  ভাগ্য দেখো ,সেই আমাকেই তুমি তোমার বাবার পছন্দ করা পাত্র হিসাবে চোখ বন্ধ নয় ,চোখ খুলেই মালা পড়ালে |

নিবেদিতার আর বুঝতে বাকি থাকলো না , কার সাথে সে জীবনের গাঁটছড়া বেঁধেছে |

--- আমি চিনতেই পারিনি | আসলে সেই তুমি আর আজকের তুমির মধ্যে আকাশ-পাতাল প্রভেদ ! তখনকার তুমি ছিলে -রোগা ,চ্যাংড়া আর এখন .........

নিবেদিতা চুপ করে গেলো , " কি হলো ? বললে না তো ,এখন কি ?

নিবেদিতা সলজ্জ হেসে বলল ," এখন তুমি অনেক সুন্দর !"

---আমার ভালোবাসা ছিল নিষ্পাপ ,তোমায় আমি খুব ভালোবেসেছিলাম হয়তো ওই বয়সে প্রথম ভালোবাসা এরূপই হয় | তুমি আমায় প্রত্যাখান করেছিলে ,কষ্ট পেয়েছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করো - তোমার বাবার প্রতি তোমার ভালোবাসা ,শ্রদ্ধা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম  ।তোমাকে জীবনসাথী হিসাবে পাওয়া ,পুরোটাই কাকতালীয় | এজন্য তোমার বাবার কাছে আমি চিরঋণী |

---আমি জ্ঞান হওয়া থেকে বাবাকে কখনো কোনো অন্যায় করতে দেখিনি | কারও কাছে কথা দিয়ে কথা রাখেননি - এমনটা কখনোই হয়নি | ভীষণ এক কথার মানুষ । তাই যাতে কষ্ট না পাই নিজের মনের দুর্বলতাগুলোকে কোনোদিন প্রশ্রয় দিইনি | আজ বলতে কোনো লজ্জা নেই ; কলেজে থাকাকালীন সময়ে তোমার প্রতি যে আমার দুর্বলতা গ্রো করেছিলোনা ,তা কিন্তু নয় | কিন্তু আমি সেই দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দিতে পারিনি আমার বাবার কথা ভেবে | নিজে যেমন কষ্ট পেতে চাইনি ,বাবাকেও কষ্ট দিতে চাইনি ; তাই শুরুতেই সব শেষ করে দিয়েছিলাম | কিন্তু কি অদ্ভুত দেখো বাবা কিন্তু সেই তোমাকেই আমার সামনে এনে দাঁড় করলেন |

---আর তুমি বিনা বাক্যে চোখ দু'টি খুলেই আমাকে মালা পরিয়ে দিলে | একেই বলে ভাগ্য !

এবার বিজয় এগিয়ে যেয়ে নিবেদিতার দু'টি হাত ধরে বলল , " আজ আমি খুব খুশি ,ভীষণ সুখী - জীবনে যাকে নিজের করে পেতে চেয়েছিলাম ,তাকেই পেয়েছি | নিবেদিতা আস্তে আস্তে বিজয়ের বুকে মাথা রাখে |

~~~~~~~~~~~~~~শেষ ~~~~~~~~~~~~~~
নন্দা   25.11.16
                                             
অনু গল্প ;- 'অপূর্ণ জীবনবোধ'   (নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ) _______________

    মোহিনী কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি তার নিজের বোন তার এই চরম সর্বনাশ করবে | বাবার মৃত্যুর পর চরম অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিল তার অপর দুই বোন নন্দিনী ,বনানী আর তাদের মা | মোহিনীর স্বামী সঞ্জয় প্রথমে কিছুতেই রাজি হয়নি এত বড় দায়িত্ব নিতে | দিনের পর দিন মোহিনী সঞ্জয়কে বুঝিয়েছে ,কান্নাকাটি করেছে ,মাঝে মধ্যে না খেয়েও থেকেছে ;কারণ তার মা এবং ছোট বোনেরা হয়তো না খেয়েই আছে এই কথা ভেবে | শেষমেষ সঞ্জয় রাজি হতে বাধ্য হয় | কলকাতার ভাড়া করা বাড়ি থেকে শ্রাবনী দেবী তার দুই মেয়েকে নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে অভাবের তাড়নায় চলে আসতে বাধ্য হন |বকখালীর থেকে অনেকটা ভিতরে বেশ কয়েক বিঘা ধানিজমি  , তিনটে পুকুর , দুটি বড় বড় ঝিল ;যেখানে সারা বছর মাছ চাষ হয় , কোটা বাড়ি | বড় মেয়ে মোহিনী বেশ সুখেই ছিলো | জামাইয়ের পারিবারিক ব্যবসা ইঁটভাটার | অর্থের কোনোই অভাব ছিলো না | বাড়ির সদস্য বলতে জামাই ,মেয়ে আর তাদের পাঁচ বছরের ছেলে |   মেয়ের বাড়িতে আসার পর থেকে বেশ হাসি ,আনন্দের মধ্য দিয়েই দিনগুলি কেটে যাচ্ছিলো |পাঁচ বছরের নাতিটিকে শ্রাবণীদেবী চোখের আড়াল হতেই দিতেন না | এর-ই মাঝে সঞ্জয় দেখেশুনে মেজ শালী নন্দিনীর জন্য একজন স্কুল শিক্ষক পাত্র হিসাবে নির্বাচন করে | নিদৃষ্ট দিনে পাত্র পক্ষ নন্দিনীকে দেখতে আসে | দেখেশুনে বাড়িতে পৌঁছে তারা খবর পাঠায় যদি সঞ্জয়ের ছোটশালী বনানীকে তারা দেন ,তাহলে এই বিয়েতে তাদের কোনো অমত নেই এবং সম্পূর্ণ এক বস্ত্রে তারা বনানীকে পুত্রবধূ হিসাবে গ্রহণ করবেন |   নন্দিনীর গায়ের রংটা ছিল চাপা |চোখ ,নাক ,মুখ - তিনবোনেরই খুব ভালো |সঞ্জয় এসে একথা যখন তার শ্বাশুড়ীকে জানায় তখন তার শ্বাশুড়ি সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যান | মায়ের ইচ্ছাতে মোহিনীও সায় দেয় | কিন্তু নন্দিনীর এতে রাগ হয় মা ও দিদির উপর |সে মুখে কিছু বলে না | কিন্তু মনে মনে ফুঁসতে লাগে | বড়দিদি থাকতে মা ও দিদি কি করে বনানীর বিয়ে ঠিক করলেন ?নিদৃষ্ট দিনে বনানীর বিয়ে হয়ে যায় দেবরাজের সঙ্গে | দেবরাজ উচচ বংশের শিক্ষিত ছেলে | কন্যা বিদায়ের দিন সে নন্দিনীকে দিদি বলে সম্মোধন করে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে | নন্দিনী কিন্তু কোনো কথা বলে না ,যেটা মোহিনীর খুব খারাপ লাগে |    কিছুদিনের মধ্যেই মোহিনী তার স্বামীকে নন্দিনীর জন্য ছেলে দেখতে বলে | সঞ্জয় তাকে জানায় ,
 --ছটা মাস যেতে দাও | সবে তো বনানীর বিয়ে দিলাম ;আমায় একটু সময় দাও সব কিছু গুছিয়ে নিতে |
 ---কিন্তু ওর হাব- ভাব আমার মোটেই  ভালো লাগে না | দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে |
 --কেন কি করেছে ও ?
 --সে অনেক কথা | এতো কথা আমি তোমায় এখন বলতে পারবো না | তবে আমার সব থেকে যেটা খারাপ লাগে - যখন তখন ও আমরা দুজনে ঘরে থাকতে ঘরে ঢুকে পড়ছে ,কিছু বললেই মুখ ঝামটা দিয়ে কথা বলছে - আমি বলছি তুমি ওর জন্য সম্মন্ধ দেখো |    লাগাতার মোহিনী বলতে বলতে নন্দিনীর জন্য সঞ্জয় এক পাত্রের সন্ধান আনে | প্রচুর জমিজমা ,পুকুর ,বড়বাড়ি ,ছেলেও শিক্ষিত | কিন্তু রোজগার বলতে কিছু প্রাইভেট টিউশন | তাদের যা জমিজমা আছে তাতে ধান ,সব্জিপাতি তারা পাইকারি দরে বিক্রি করে ,রোজগার না করলেও চলে | দুই ভাই | শুধু বসে বসে সময় কাটানোর থেকে দুজনেরই ওই টিউশন করা | নন্দিনীকে তারা পছন্দও করে | সে এ বিয়েতে কোনো আপত্তি করে না | বনানীর বিয়ের মাস চারেকের মধ্যেই শুভ দিন দেখে নন্দিনীর বিয়ে হয়ে যায় |কিন্তু 'ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন -' ছমাসের মাথায় নন্দিনীর স্বামী বিষধর সর্পের কামড়ে মারা যায় | অলক্ষ্মী অপবাদ নিয়ে বিধবা হয়ে নন্দিনী পুনরায় দিদির সংসারেই আশ্রয় নেয় | কিছুটা হলেও প্রথম দিকে সে চুপচাপ হয়ে যায় | এ ভাবেই দিন এগিয়ে যেতে থাকে | বছর খানেক এভাবে চলার পর মোহিনী যা নিজ চোখে দেখলো তা সে কোনোদিন কল্পনাও করেনি | একদিন ছেলেকে ও মাকে নিয়ে গ্রামের এক বাড়িতে নারায়নপূজা উপলক্ষে সন্ধ্যার সময় বেড়িয়ে ঘন্টা দুয়েক পরে বাড়িতে ফিরে এসে মোহিনী দেখে তার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ |কি মনে হলো সে তাঁর জানলার ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে দেখলো ,সঞ্জয় আর নন্দিনী ------------মুহূর্তে মাথাটা ঘুরে গেলো মোহিনীর | হাত ,পা অবশ হয়ে গেলো ; ধপ্ করে মাটিতে পড়ে  যেয়ে জ্ঞান হারালো | হাতে ধরা সিন্নির কাঁসার বাটি পড়ে যেয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে গেলো | শব্দ পেয়ে নন্দিনী তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেড়িয়ে এসে দেখে তার দিদি বারান্দায় পড়ে আছে | সঞ্জয় ও তার শ্বাশুড়ি এসে মোহিনীর জ্ঞান ফেরালো | কিন্তু জ্ঞানই ফিরলো ; প্রচন্ড মানসিক  আঘাতে মোহিনী তার বাক শক্তি হারিয়ে ফেললো |

মাস ছয়েক এ ভাবে কাটার পর তার ঠাঁই হোলো পাগলা গারদে |

নন্দা   18.10.16. 10PM.

Monday, March 12, 2018

আমি ভালো নেই
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমি ভালো নেই!
সন্ধ্যাগুলো আগেরমত আর প্রিয় মনেহয়না,
বিকালে চা খাওয়ার চির অভ্যাসটাও হারিয়ে গেছে,
একাএকা কাপ হাতে ব্যলকনিতে দাঁড়াতে ভালোলাগেনা!
এখন জানলা দিয়েই দূরের আকাশটাকে দেখি,
সেই একই রকম!
শুধু আমার জীবনের ছন্দটাই হারিয়ে গেছে!
নিজের অজান্তেই কখনো চলে যাই এক  স্বর্গীয় পরিবেশে,
সেখানে দেখা পাই তোমার;
আপনমনে তোমার সাথেই কথা বলি,
একটু একটু করে গভীরে আরও গভীরে হারাই,
আমার ভাবনার আকাশে ছেদ পড়ে-
যখন তুমি ছায়ামূর্তি হয়ে আমার সামনে দাঁড়াও!
হাত বাড়িয়ে তোমায় ছুঁতে যাই-
কিংতু কোথায় তুমি?
জীবনের ছন্দ হারানোর মতই-
ভাবনার ছন্দটাও হারিয়ে যায় এক নিমেশে!
মনেপড়ে তুমি তো আর নেই!

#  নন্দা    ১১-৩-১৮ 

Saturday, March 10, 2018

আমি জানিনা
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ফোনে নম্বরটা আজও সেভ করা,
ছবিটাও সাম্প্রতিক কালের,
আমি জানি ওই নম্বর থেকে-
আর কোনদিনও ফোন আসবেনা!
চিরপরিচিত গলা শুনতে পাবোনা!
তবুও থাকবে ফোনে ওটি সেভ আমৃত্যু!
কোন প্রতীক্ষা নেই কলটির জন্য!
মাঝে মাঝে নিজেই কল করি ওই নম্বরে,
জানি শুনতে পাবো 'সুইচ অফ'-
তবুও করি -কিনতু কেন তা জানিনা।

@নন্দা   ৯-৩-১৮ 

Wednesday, March 7, 2018

যখন বিদায় নেবো
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আমার সাধের বাড়িঘর,
রইবে সবই পরে,
আপন জনের কাঁধে চড়ে,
যাবো আমি ওপারে।

সস্তা দামের খাটিয়ার উপর,
রাখবে আমার দেহ!
চন্দন আবার পড়াবে কপালে,
যাবেনা সাথে কেহ!

বিয়েতে সাজায় চন্দন দিয়ে-
মরলে পরেও চন্দন,
ফুলসাজে সাজিয়ে আমায়,
প্রিয়জনেরা করবে ক্রন্দন।

সাদাফুলে সজ্জিত আমি,
চোখে সবার জল,
পুড়বে দেহ হবে ছাই,
আত্মা বলবে বিদায়।

# নন্দা  ২-৩-১৮

Tuesday, March 6, 2018


স্মৃতির বোঝা বড্ড ভারী 
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

তুমি বাতাস হয়ে শরীরে জড়িয়ে থাকো, 
ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আমায় কাছে রাখ, 
সমুদ্রের ঢেউ এর হুংকার তুলে বুকে আছড়ে পড়, 
ঘুমের মাঝে স্বপন দেখিয়ে আমায় আপন কর। 
আমার সকল কাজের মাঝে সঙ্গী তুমি হও, 
মন খারাপে সুরের জাদুতে আমায় গান শোনাও। 
জোস্না রাতে বাতায়নে যখন একলা থাকি বসে, 
হাজার তারার ভিড়ে থেকেও আমায় দেখে-ওঠো হেসে;
হারিয়ে যায় তখন আমার সকল মন খারাপ, 
আপন মনেই জুড়ি তখন তারার সাথে আলাপ। 

হয়তো সবই কল্পনা আমার তবুও থাকি ভালো, 
আজীবন তুমি এভাবেই-আমার সঙ্গে চলো। 
মানব জীবন ত্যাগ করেছো সময় হয়েছে তাই, 
টানলে সুতো সবাই একদিন এভাবেই চলে যায়। 
স্মৃতিগুলি বড্ড ভারী টানতে বড় কষ্ট! 
স্মৃতিরা সব থাকবে কাছেই হবেনা কিছুই নষ্ট।
একটু শুধু ধর্য্য ধরে অপেক্ষাতে থাকো, 
মন খারাপে শুধু আমার কথায় ভাবো। 
আসছি আমি তোমার কাছেই আর নেবোনা সময়, 
তোমায় ছেড়ে একা আমার করে শুধুই ভয়। 

Saturday, March 3, 2018


আমার জীবন

https://kabitabitan.blogspot.com/b/post-preview?token=FXty7GEBAAA.ZNcHB4JxeCAFlatcXZzHhimydjmVPgJlFncgJJ2oQT9Q3PvjN6gcLlC58XcRBqtRybeWLO6gkOosKW7v1Z6MOg.x9hynaGTvBJFrD9CvmjG7Q&postId=5448822359099314440&type=POST&m=1

দায়বদ্ধতা
         নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
     
                সমস্ত মেলা ও গ্রাম তোলপাড় করেও যখন মেলাতেই হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে অবিনাশ খুঁজে পেলোনা তখন সে ঠিক করে কলকাতা যাবে ছেলেকে খুঁজতে।কারন এই মেলায় কলকাতা থেকেও অনেক মানুষ আসে।যদি তাদের কেউ নিয়ে যেয়ে থাকে!অন্যের জমিতে চাষ করে দিন আনি দিন খাওয়া অবিনাশ সাহা একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে উন্মাদ প্রায়। স্ত্রী কল্পনাদেবীরও একই অবস্থা। হতদরিদ্র পরিবারে পাঁচ বছরের ছেলে হেমন্তই ছিলো ভাঙ্গা ঘরে চাঁদের আলো। ছেলেকে মেলা দেখাতে নিয়ে যেয়ে বিনা মেঘে বজ্র পাতের মত বাবা অবীনাশের হাত ফস্কে কখন যে ছেলে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলো অবিনাশ তা বুঝতেই পারলোনা। সমস্ত মেলায় পাগলের মত হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ালো।কোথায় ছেলে? মধ্য রাতে সে খালি হাতে বাড়িতে ফিরে আসে।

                এত বড় শহর কলকাতায় কোথায় খুঁজে পাবে সে তার হারানো মানিক হেমন্তকে!তবুও সে দিনের পর দিন মাসের পর মাস এগলি ওগলি,এ রাস্তা ও রাস্তা ছেলেকে খুঁজে বেড়াতে লাগলো।জীবনটা যদি সিনেমার মত হত হয়ত অনায়াসেই সে তার ছেলেকে খুঁজে পেত।ছ'মাস ধরে রাস্তা ঘাটে, রেলস্টেশনে কুলিগিরি করে কখনও মুড়ি,রুটি আবার কোনদিন বা শুধু বিস্কুট জল খেয়েই যেখানে সেখানে রাত কাটিয়ে শেষমেষ যখন সে ছেলেকে পেলোনা তখন তাকে খুঁজে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে গ্রামের বাড়ির উর্দেশ্যে রওনা হোল।

            কিংতু বাড়িতে তার জন্য আরও ভয়ানক কিছু অপেক্ষা করে ছিলো তা সে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি।সে তার বৌকে কথা দিয়ে গেছিলো ছেলেকে নিয়েই সে ফিরবে।কিনতু শূন্য হাতে তাকে ফিরতে হোল তাই মনের মধ্যে বৌকে বলার জন্য অনেককিছুই উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল।প্রশ্নকর্তা নিজে হয়ে উত্তরদাতাও নিজেই হচ্ছিল কারন কি প্রশ্নের সম্মুখীন তাকে হতে হবে সে নিজেই বুঝতে পারছিলো না।

           গ্রামের মানুষের উৎসুক দৃষ্টি এড়িয়ে যখন সে তার বেড়ার ঘরটির সামনে এসে দাঁড়ালো;তখন তার বুকটা ধপাস করে কেঁপে উঠলো।পুরো বাড়ি আগাছায় ভর্তি। ঘরের দরজা হাট করে খোলা। ভিতরে কিছু নেই বললেই চলে-মানুষ তো দূরহস্ত!ঘরের ভিতর তক্তপোষটা শুধু পরে আছে।তার বুঝতে বাকি রইলোনা জীবনের আর একটা দিকও সে চিরদিনের মত হারিয়ে ফেলেছে।

           গ্রামে সামান্য যা জমিজমা ছিলো অবিনাশ মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সবকিছু বিক্রি করে কলকাতার উর্দেশে পূনরায় রওনা দেয় সেই একই আশা নিয়ে যদি ছেলেকে সে খুঁজে পায়!

            কেটে গেছে এক যুগেরও বেশি সময়।না-ছেলেকে সে খুঁজে পায়নি।সে এখন রমেন চৌধুরীর বাগানের মালি।সকাল ও বিকালে সে বাগানে কাজ করে। রমেন চৌধুরীর গাড়ির ড্রাইভারের পাশের ঘরেই তার থাকার জন্য একটি ঘর।খাবার স্টোভে নিজের হাতে রান্না।দু'বছর ধরে এখানে সে আছে;একমাত্র বাড়ির মালিক ও ড্রাইভার নির্মল ছাড়া আর কারও সাথেই তার কথা হয়না,দেখা হয়না বললেও চলে। শুনেছে মালিকের একটি মাত্র ছেলে।পড়াশুনায় খুবই ভালো।বাগানে কাজ করবার সময়ে কখনো সখনো মালকিন বা তার ছেলেকে দূর থেকে সে একটু দেখলেও সামনাসামনি কোনদিন দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি।

         গত কয়েকদিন ধরে সে লক্ষ্য করছে দিন নেই রাত নেই ড্রাইভার নির্মল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আর রাতে কখন ফিরছে অনেক সময় তাও সে জানতে পারছেনা। একদিন সকালে নির্মলের সাথে দেখা হয়ে যাওয়াতে নির্মলের কাছে অবিনাশ জানতে চায়,

----কি ব্যপার বলো তো?বাড়িতে কারও কিছু হয়েছে?

--- সাহবের ছেলের শরীর খুবই খারাপ!
---কেন কি হয়েছে?
---শুনেছি দু'টি কিডনীই নাকি নষ্ট হয়ে গেছে।এখন কিডনী ট্রান্সফার না করলে নাকি ছেলেটাকে বাঁচানোই যাবেনা।সাহেব ও মালকিন দু'জনেই কিডনী দিতে চেয়েছিলেন।কিনতু কি সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তারবাবুরা বলেছেন উনারা দিলে হবেনা।যদি রক্তের সম্পর্কের কোন আত্মীয় দেয় তাহলে হলেও হতে পারে।কিনতু কোথায় পাবেন ওই ছেলের রক্তের সম্পর্কের কোন আত্মীয়?

---কেন ? উনাদের রক্তের সম্পর্কের কোন আত্মীয় নেই?

---থাকবেনা কেন?অনেকেই আছেন।তুমি জানোনা অবিনাশদা,কাউকে কোনদিনও বোলোনা;উনারা আমাকে খুব বিশ্বাস করেন আর আমার কেউ নেই বলেই আজ বহু বছর ধরে আমি উনাদের সাথে আছি।ছেলেটি তো উনাদের নিজের নয়।
---সেকি?

---তবে শোন-সে এক ইতিহাস।প্রথমে সাহেবরা থাকতেন দুর্গাপুরে।বিয়ের বেশ কয়েক বছর পরও যখন কোন বাচ্চা তাদের হলোনা তখন শুরু হোল মালকিন ও সাহেবের দেবতার দরজায় দরজায় ঘুরে মাথা খোটা।যেখানেই শুনেছেন মন্দিরের দেবতা খুব জাগ্রত সেখানেই ছুটে গেছেন তাদের সঙ্গে আমি। একবার কারও কাছ থেকে জানতে পারেন হাওড়ার প্রত্যন্ত শিউলিপুর গ্রামে রাসমেলা উপলক্ষে বিশাল মেলা হয়।মেলা চলে সাতদিন ধরে।ওখানে প্রতিদিন মা কালির পূজা হয়।

এটুকু বলেই নির্মল অবীনাশের দিকে তাকিয়ে দেখে অবিনাশ প্রচন্ডভাবে ঘামছে!

---কি হোল তোমার অবিনাশদা? শরীর খারাপ লাগছে?

---থামলে কেন?আমার কিছু হয়নি তুমি বলো।

---হ্যাঁ যা বলছিলাম।একথা শুনে সাহেব ও মালকিন মেলার সময়ে সেখানে যেয়ে পুজো দিয়ে ফেরার জন্য গাড়িতে উঠতে  যাবেন ঠিক তখনই দেখেন ছোট্ট ফুটফুটে একটি ছেলে এই সাড়ে চার কি পাঁচ বছর বয়স হবে গাড়ি থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।সাহেব তার সাথে অনেক্ষন কথা বলেন।সে তার বাবার নামটাও তখন পরিস্কার করে বলতে পারেনি।তারপর তিনি তাকে কোলে নিয়ে মেলার মধ্যে অনেক্ষন তার বাড়ির লোকের সন্ধান করেন।বহুক্ষন ঘোরাঘুরি করেন ওই এক রত্তি ছেলেটিকে নিয়ে।কিনতু তার বাড়ির লোকের সন্ধান পাননা।শেষমেষ তিনি ছেলেটিকে কোলে নিয়েই পুনরায় গাড়ির কাছে ফিরে আসেন। ছেলেটিকে একা ফেলে রেখেও আসতে পারছেন না। অবশেষে ছেলেটিকে দেবতার আশীর্বাদ বলে মনে করে তাকে নিয়েই বাড়ি ফেরেন। নিজের ছেলের মত তাকে মানুষ করতে লাগেন। পাড়ার লোকের কথা এড়াতে দুর্গাপুরের বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় এই বিশাল বাড়ি কেনেন।ছেলেটিকে কাছে পাওয়ার পর তারা সব দুঃখ ভুলে যান।

          আর কখনো তারা সন্তান লাভের আশায় পাগলের মত মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়াননি। এখন কি ভয়ানক বিপদের মধ্যে তারা পড়েছেন!এখন কে এই বিপদ থেকে তাদের উদ্ধার করবে বলতো?
       অবিনাশ অন্যমনস্ক ভাবেই বলে,"আমি"।

               কিছুক্ষন স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়ে নির্মলের ঘরে বসে থেকে নিজেকে সংযত করে আস্তে আস্তে সে এই প্রথম সাহেবের ড্রয়িংরুমে এসে পৌঁছালো।রমেন চৌধুরী তখন ছেলের কাছে নার্সিংহোম যাবেন বলে বেরোতে যেয়ে অবিনাশকে দেখে জানতে চাইলেন,
---কিছু বলবে অবিনাশ?
---আপনি আমার কিডনী দু'টি নিয়ে ছেলেটিকে বাঁচান।আমি নির্মলের কাছে শুনলাম ও খুব অসুস্থ্য তাই এই কথাটি বলতেই আমি এসেছি।

---কিডনী একটা দিলেই হয়।আর বললেই তো আর কিডনী দেওয়া যায়না।অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা আছে।যদি সে সব ঠিকঠাক মিলে যায় তবেই কিডনী দেওয়া যায়।মানুষ একটা কিডনী নিয়েই বেঁচে থাকতে পারে।তাতে কোনই অসুবিধা নেই। কিনতু তোমার সাথে সবকিছু মিলে যাবে তারও তো কোন গ্যারান্টি নেই।

---মিলবে স্যার।আপনি দেখবেন সব মিলে যাবে।আমার মন বলছে।আপনি এখনই আমায় সাথে নিয়ে চলুন।

          ছেলের অসুস্থ্যতায় পাগল প্রায় রমেনবাবু অবিনাশকে সাথে নিয়েই নার্সিংহোম আসেন।অবিনাশ সাহেবের ছেলেকে একটু দেখতে চায়।অবিনাশকে নিয়ে যান রমেনবাবু ছেলের কাছে।অবীনাশের তখন ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে, এতো কাছে থেকেও নিজের ছেলেকে সে কেন চিনতে পারেনি এই ভেবে।ছেলের মাথার উপর হাত রাখতেও সে সাহস পায়নি!কারন সে এখন মনিবের ছেলে আর সে ওই বাড়ির সামান্য এক মালি মাত্র।তার হেমন্তের বয়স এখন চব্বিশ বছর।ছোট বেলার মুখের সাথে কোনই মিল নেই।ভ্রুরুর কাছে কাটা দাগটা এখনো মিলায়নি।জলভর্তি পিতলের কলসির উপর পরে যেয়ে কেটে গেছিলো।উফ্ফ কি রক্ত বেরিয়েছিলো।গ্রামীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেয়ে তিনখানা সেলাই দিয়ে তবে রক্ত বন্ধ হয়।আজ এতগুলো বছর বাদে নিজের সেই হারানো মানিককে চোখের সামনে দেখেও তাকে ছোঁয়ার কোন অধিকার তার নেই।শুধু জলভরা চোখে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মনেমনে বললো,"বাবা হয়ে তোর জন্য কোনদিন কিছুই করতে পারিনি। উল্টে তোর মায়ের বুক থেকে তোকে আলাদা করে দিয়েছি।তুই সুস্থ্য হয়ে উঠবি একটুও ভাবিসনা।নিজের জীবন দিয়েই তোকে আমি সুস্থ্য করে তুলবো।তোর সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট আমার রিপোর্টের সাথে মিলবেই -আমি যে তোর বাবা।" ধীর পায়ে অবিনাশ ছেলের কাছ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো।

        তিন মাসের মাথায় বাবার দেওয়া কিডনী ছেলের দেহে প্রতিস্থাপন হোল।ছেলে ভালো আছে জানতে পেরে অপারেশনের তিনদিন পর রাতের আঁধারে সকলের অলক্ষে শরীরের যত জায়গায় নল লাগানো ছিলো অবিনাশ একে একে সব খুলে ফেললো।বেঁচে থাকলে কখনো যদি তার মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় যে আজকের সৌম্য চৌধুরী তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে হেমন্ত!অবিনাশ নিজের জীবন দিয়ে তার হেমন্তের জীবন রক্ষা করে নিশ্চিন্ত মনে হেমন্তের মায়ের কাছে চলে গেলো।সে তার ছেলেকে খুঁজে পেয়েছে আর তার মা কোনো প্রশ্নবানে অবিনাশকে জর্জরিত করতে পারবেনা।এটাই তার চরম শান্তি।

                              শেষ

Friday, March 2, 2018

শুধু খুঁজি
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

নিস্তব্ধ পৃথিবী,
চারিদিকে আঁধার,
ঘুমে অচেতন সব,
আমি একা জেগে,
হাজার তারার মেলা,
আকাশে করছে খেলা,
জোনাকীরা সব জেগে,
মিটিমিটি শুধু জ্বলে,
ওদের জীবনের সাথে-
আমার জীবনই মেলে!
বাতাস নিজের মনে,
চলে শুধু বয়ে,
উদাসী দৃষ্টি আমার,
খোঁজে শুধু তোমারে!

# নন্দা    ২১-২-১৮