Saturday, February 24, 2018

জীবনের সব চাওয়া পাওয়াগুলি,
 পুড়ে হলো ছাই;
বেড়েছে ঋণ শুধু হৃদয়ের কাছে,
রোদেলা সুখে সোনালী সুতোই বোনা দিন,
ফিরবেনা আর কখনো!
#নন্দা 

কেউ পায় কেউ পায়না
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 

   সানাইয়ের সুর একটু আগেই থেমে গেছে। লাল বেনারসী, কপালে চন্দনের কারুকার্য শোভিত কলকে দেওয়া, এক গা ভর্তি গয়না পরে সেই সন্ধ্যা থেকে কনে সেজে জয়ীতা অপেক্ষা করে আছে কখন অরূপ আসবে।এখন রাত এগারোটা।এখনো অরূপের দেখা নেই! লগ্ন চলে গেছে অনেক আগেই। লগ্নভ্রষ্টা মেয়েকে কেউ বিয়েও করবেনা। আর তাছাড়া যা অরূপ ছাড়া আর কেউই জানেনা সে যে অরূপের সন্তানের মা হতে চলেছে! তাই দু'মাসের মধ্যেই তাড়াহুড়ো করে এই বিয়ের আয়োজন। কিনতু অরূপ তো সবই জানতো তাহলে ও এরকম করলো কেন? কোন খারাপ কিছু ঘটেনিতো!ভালো আছে তো অরূপ? যদি ভালোই থাকে তাহলে এভাবে ঠকালো কেন?না, আর ভাবতে পারছেনা জয়ীতা! যা করার এক্ষুনিই করতে হবে। একটু আগেও বাড়ি ভর্তি লোক গমগম করছিলো।এখন পুরোই ফাঁকা। গয়নাগুলো একটি একটি করে খুলে খাটের উপর রাখলো জয়ীতা। বাবা, মা অনেক কষ্ট করে অভাবের সংসারে এগুলি তৈরি করেছিলেন। জীবনটাই যখন রাখবেনা তখন এগুলি সাথে নিয়ে যাওয়ারও কোন অর্থ হয়না। 

          বাড়ির পিছনের দরজা খুলে জয়ীতা বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়। মফস্বল শহর। এতো রাতে রাস্তায় লোকজনও নেই। এ মুখ আর বাবা মাকে সে দেখাবেনা।তারা যখন জানতে পারবেন যে সে মা হতে চলেছে তারা দু'জনেই তো এই চরম পথ বেছে নেবেন।না -তা কিছুতেই হতে পারেনা!আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো সে একটা ঝিলের কাছে। ঝিলটা ভীষন বড় আর গভীর। একসময় এখান থেকেই মাটি তুলে ইটভাটার  কাজ চলতো। এখন ইটভাটাটা নেই কিনতু ইটভাটার স্বাক্ষী হিসাবে ঝিলটা পরে আছে। 

           না, সেদিন জলে ডুবে আর মরতে পারেনি জয়ীতা। দেবদূতের মত পিছন থেকে কেউ একজন ঝাঁপটে ধরেছিলেন। বাইরের সকল লোকের কাছে জয়ীতা ও সাইকিয়াটিস্ট ডক্টর অশোক রায় স্বামী, স্ত্রী আর মানসিক দিক থেকে তারা  একে অপরের বন্ধু। পাঁচ বছরের একটা ফুটফুটে ছেলে তাদের দু'জনের  জীবনের চেপে রাখা  সমস্ত দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে। সে অবশ্য ডক্টর রায়কে বাবা বলেই জানে। 

    ডক্টর রায়ের জীবনটাও একটি এ্যাকসিডেন্টের পর সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যায়। বাবা, মায়ের সাথে নিজের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছিলেন। ব্রেক ফেল করে গাড়িটি এ্যাকসিডেন্ট করে। ঘটনাস্থলেই ডক্টর রায়ের মা ও বাবা দুজনেই মারা যান আর মরতে মরতে বেঁচে যান ডক্টর রায়।কিনতু সুন্দর পৃথিবীর অনেককিছুই থেকে তিনি বঞ্চিত হন। ডক্টর তাকে জানিয়ে দেন তিনি কোনদিন বাবা হতে পারবেননা!

           জয়ীতাকে সেদিন অনেক বুঝিয়ে তিনি নিজের বাড়ি কলকাতা টালিগঞ্জে এনে তোলেন। টালিগঞ্জ চত্বরে নামকরা নার্সিংহোম 'মানবী'র মালিক ডক্টর অশোক রায়। বছর চারেক ধরে পরিচয়হীন মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক তার হেফাজতে চিকিৎসাধীন। আজকের দিনে যেখানে নার্সিংহোমগুলি অসৎ পথে টাকা রোজগারের ধান্ধায় মৃত মানুষকেও ভেন্টিলেশনে রেখে অর্থ উপার্জন করছে;সেখানে ডক্টর রায় রাস্তাঘাট থেকে অসুস্হ্য মানুষকে তুলে এনেও বছরের পর বছর বিনা পয়সায়  চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। 

       যে যুবকটিকে তিনি গত চার বছর ধরে চিকিৎসা করে চলেছেন;তার নামটি পর্যন্ত সে বলতে পারেনি।হাসপাতালে তার নাম সাতাশ নম্বর বেডের পেসেন্ট।প্রতিবছর নার্সিংহোমের প্রতিষ্টা দিবসে ডক্টর অশোক প্রত্যেক রোগীকে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করেন! এবার তিনি জয়ীতা ও ছেলে অর্পণকেও সাথে নিয়ে আসেন।

      জয়ীতা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে সাতাশ নম্বর বেডে একমাথা ঝাঁকড়া চুল নিয়ে বসে আছে অরূপ।হাত বাড়িয়ে জয়ীতার হাত থেকে খাবারের প্যাকেট নেয়, একটু মুখের দিকে তাকায় পরক্ষণে চোখ নামিয়ে প্যাকেটটা খোলার বৃথা চেষ্টা করতে লাগে।জয়ীতা একদৃস্টিতে তাকিয়ে থাকে অরূপের দিকে।ছোট্ট অর্পণ এগিয়ে যায় অরূপের কাছে।তার গায়ে হাত দিয়ে ডাকে, "আঙ্কেল, তুমি প্যাকেট খুলতে পারছোনা?" চারবছর পর ডক্টর নার্সদের অবাক করে দিয়ে অরূপ বলে ওঠে,"তুমি খুলে দেবে আমার প্যাকেট? "

       বাড়িতে ফিরে জয়ীতা সবকিছুই ডক্টর রায়কে জানায়।তিনি চুপ করে সব শুনে শুধু বলেন,"আমার সমস্ত রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও অরূপকে সুস্থ্য করে তুলবো। "

       এরপরেই ডক্টর রায় মাঝে মাঝেই অর্পণকে সাথে নিয়ে যেতেন অরূপের চিকিৎসার ওষুধ হিসাবে।বেশ কয়েকদিনের মধ্যে তিনি তার ফলও পান। অরূপ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই তার ছুটি হওয়ার মতই সে সুস্থ্য হয়ে ওঠে। 

          ডক্টর রায় অনেক ভেবে অরূপকে জয়ীতা সম্পর্কে সব জানান এবং এও বলেন যে জয়ীতা আজও তারই আছে।সে জয়ীতা ও অর্পণকে নিয়ে নূতন করে জীবন শুরু করুক। কথাগুলি বলতে হয়তো তার বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিল কিনতু সত্য ও ন্যায় ধর্মের পূজারী ডক্টর রায়ের কাছে এ ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিলোনা। 

      জয়ীতা ও অর্পণকে পরদিন হাসপাতালে নিয়ে আসেন ডক্টর অশোক রায়।কিনতু তিনি তার উর্দেশ্য সম্পর্কে কিছুই জয়ীতাকে জানাননা।নিজের চেম্বারে ওদের নিয়ে বসে তিনি সিস্টারকে বলেন, সাতাশ নম্বর বেডের পেসেন্টকে ডেকে আনতে।সিস্টার এসে জানান তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা , তিনি একটা চিঠি ডক্টর রায়ের হাতে ধরিয়ে দেন।উপরে ডক্টর রায়ের নাম লেখা দেখে তিনি চিঠিটা খুলে দেখেন জয়ীতাকেই উর্দেশ্য করে সেটি লেখা।তিনি জয়ীতার হাতে খামটি তুলে দেন।

     চিঠিতে অরূপ জয়ীতাকে জানায়, পাঁচ বছর আগে বিয়ের দিনে তিন বন্ধু সমেত গাড়িতে করে আসবার সময় ব্রীজের উপরে একটা বড়লড়ির সাথে ধাক্কা লেগে গাড়িটা ব্রীজের নীচে পরে যায়। তারপর তার আর কিছুই মনে নেই।এখন সে বুঝতে পারছে এই পাঁচ বছর তার স্মৃতিভ্রংশ হয়েছিলো।ডক্টর রায় যেভাবে তাকে দেবতার মত সারিয়ে তুলেছেন ঠিক সেই একইভাবে জয়ীতা ও তার সন্তান অর্পণকে বটবৃক্ষের সুশীতল ছায়া হয়ে আগলে রেখেছেন।সে কিছুতেই পারবেনা দেবতার কাছ থেকে তাদের আলাদা করতে!তবে একবার জয়ীতাকে দেখতে তার খুব ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু তাকে দেখে সে যদি দুর্বল হয়ে পরে তাই সেই লোভ সে সংবরণ করেই চলে যাচ্ছে।অর্পণ যে তারই ছেলে তা ডক্টর রায় না বললে সে জানত না।এহেন মানুষকে সে কিছুতেই দুঃখ দিতে পারবেনা।

     জয়ীতা চিঠিটা পড়া শেষ করে ডক্টর রায়ের হাতে ধরিয়ে দেয়। ডক্টর রায় সেটি পড়া শেষ করে জয়ীতার মাথায় একটি হাত রেখে বলেন, "ভেবোনা আমি ঠিক ওকে খুঁজে আনবো"।জয়ীতা এই প্রথম ডক্টর রায়ের কোমড় দু'টি জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে।
ফাগুনেই ভেসে যাই
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তোমায় আমি ভালোবাসি,
বলতে পারিনি কখনো;
তোমার পৌরুষে পাগলিনী,
হৃদয়ে আছ আজও।

আমার লেখা প্রেমের কবিতা,
সবই তোমায় নিয়ে,
কবিতাতে সুর দিয়ে আমি,
উঠি গান গেয়ে।

ফাগুনের হাওয়া শীতল করে,
যেন কাছে পাই তোমায়,
যেদিকে তাকাই সেদিকেই তুমি,
ফাগুন এলেই ভালোবাসো আমায়।

যতই দূরে থাকো তুমি,
ফাগুন এলেই আসবে জানি,
জীবনের কিছু চাওয়া অপূর্ণই থাক,
ভালোবাসা আমার ভাবনায় ভেসে যাক।

# নন্দা  ২২-২-১৮ 

Friday, February 23, 2018

গিয়েছি ভুলে
             নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

লিখবো আমি শেষ চিঠি তোমায়,
যা পারিনি বলতে মুখে লাজে;
কিছু শব্দের অনুনাদ আজও-
একই ভাবে বুকে বাজে।

কিছু চাওয়া কিছু আশা,
আছে হৃদয়ে অব্যক্ত হয়ে;
সেদিনও যা হয়নি বলা,
অনভ্যাসে লেখা হয়না আজও!

শব্দের সব অনুবাদ হয়,
হৃদয়েই হয় বিশ্লেষন;
ঠিকানা রাখতে গিয়েছি ভুলে,
শুধু করি অন্বেষন!

# নন্দা     ২৩-২-১৮



Wednesday, February 21, 2018

ফিরে এসো
    নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ফিরে এসো তুমি ,
জাগিয়ে দাও আমার প্রেম,
সেই আগ্নেয়গিরির মত!
তোমার ছোঁয়ায় একটু একটু করে,
মোমের মত আমি গলতে চাই।
অসীম শূন্যতায় দিশেহারা আজ!
প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত -
তুমি বীনা কাটে------!
ফিরে এসো তুমি-
পুনরায় সুখসমুদ্রে ডুব দেবো আমরা,
তুমিহীন এ পৃথিবীটা বড় নিষ্ঠুর,
বড় কষ্টের, খুব খুব বেদনাময়!

# নন্দা 20-2-18

Monday, February 19, 2018

জীবনের সব চাওয়া পাওয়াগুলি,
 পুড়ে হলো ছাই;
বেড়েছে ঋণ শুধু হৃদয়ের কাছে,
রোদেলা সুখে সোনালী সুতোই বোনা দিন,
ফিরবেনা আর কখনো!
#নন্দা 
জীবনের সব চাওয়া পাওয়াগুলি,
 পুড়ে হলো ছাই;
বেড়েছে ঋণ শুধু হৃদয়ের কাছে,
রোদেলা সুখে সোনালী সুতোই বোনা দিন,
ফিরবেনা আর কখনো!
#নন্দা 

Friday, February 16, 2018

 চুপ
   নন্দা  মুখার্জী রায় চৌধুরী


        ভোরের বেলা কাক না ডাকতেই শুরু হোল রাস্তার মাঝে হৈ,চৈ, ।বাস রাস্তার উপরেই আমাদের বাড়ি।দোতলার ব্যালকনি দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম নীচের একটি চায়ের দোকান ঘিরে জটলা।দোকানের সাথে বাঁশের বেড়া দেওয়া একটি ঘর ছিলো;এখন সেটা ভেঙ্গেচুরে গেছে। মাস ছ'য়েক আগেও ওখানে ছিলো আনিসের থাকার আস্তানা। খুব ভালো ছেলে আনিস। সারাদিন চায়ের দোকানে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর অন্য দোকান থেকে কিনে আনা রুটি, তরকারি খেয়ে রাত এগারো সাড়ে এগারোটাই কবিতা লিখতে বসে। ছেলেবেলা থেকেই এই কবিতা লেখা তার একটা নেশা। গ্রামের ছেলে, দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়েছে। বাবা লোকমান রহমান গ্রামের সামান্য এক ভ্যানচালক। সামান্য রোজগার;অর্থাভাবে ছেলের পড়াশুনা বন্ধ। মা সাহেলা খাতুনের খুব ইচ্ছা ছিল ছেলেকে পড়াশুনা শিখিয়ে মানুষ করা।সম্ভব হয়নি! বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা! আনিসকে বাধ্য হতে হয়েছে পেটের দায়ে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে কলকাতা এসে চায়ের দোকানে কাজ নিতে। মাস গেলে সামান্য যা হাতে পায় সাপ্তাহিক দোকান বন্ধের কোন একদিন গ্রামের বাড়িতে যেয়ে মায়ের হাতে টাকাক'টি দিয়ে পরদিন খুব ভোরের ট্রেন ধরে আবার কলকাতায় তার নিজের কাজের জায়গায় ফেরা। খুব সুন্দর কবিতা লিখতো আনিস।হাতের লেখাটাও ছিল ঠিক যেন ছাপার অক্ষরের মত। আনিস আমারই সমবয়সী। আমি মাঝে মাঝে দোকানে চা খেতে গেলে অনেক গল্প হত ওর সাথে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমার সাথে কথা বলতো। একদিন আনিস আমাকে বলে,"দাবাবু, আজ দোকান বন্ধ হওয়া অবধি তুমি একটু বসোনা"। "কেনোরে?" "দোকান বন্ধ করে তোমায় আমি আজ আমার ঘরে নিয়ে যাবো। তোমায় একটা জিনিস দেখাবো।"


              মায়ের ডাকে পিছন ফিরি। হন্তদন্ত হয়ে মা বলেন,"জানিস সোনা আনিস সুইসাইড করেছে!" আমি আকাশ থেকে পড়ি!

---কিনতু সেতো অনেকদিন এখান থেকে চলে গেছে।

---জানি তো! কিনতু সবাই বলছে ওই ভাঙ্গাচোরা বেড়ার ঘরেই আনিসের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

---কি করে সম্ভব এটা?
       মা চিৎকার করে বললেন,"তুই নীচুতে নেমে একটু দেখনা!
    মার কথা শুনে উদভ্রান্তের মত ছুটে ঘরে  ঢুকে আলনা দিয়ে একটা জামা টেনে নিয়ে দু'তিনটি করে সিঁড়ি লাফ দিয়ে দিয়ে  দোকানের উদ্দেশ্যে দৌঁড়াতে লাগলাম। মা পিছন থেকে চিৎকার করতে লাগলেন,"আস্তে যা বাবা, সাবধানে নাম।"কথাগুলি কানে আসলেও মাথায় ঢুকলো না।

    না-মা যা বলেছেন সেটাই ঠিক। আনিস বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে! কেউই বুঝতে পারছেনা কেন? যে ছেলেটা ছ'মাস আগে এখান থেকে চলে গেছে সে সেই গ্রাম থেকে এসে এখানে সুইসাইড করলো কেন? বিষয়টি নিয়ে চাপা গুঞ্জন চলতেই লাগলো। কিনতু যেহেতু চায়ের দোকানের এক সামান্য কর্মচারীর মৃত্যু আর লাশেরও কোন দাবিদার নেই তাই এ নিয়ে কারও কোনই মাথাব্যথা ছিলোনা!পুলিশ বডি পোষ্টমর্টেম করতে পাঠিয়ে দিলো তারাই যা করার করলো।
                          (2)

            পরদিন সকালবেলা মা একটা চিঠি নিয়ে এসে আমার হাতে দিলেন।আমারই নাম লেখা খামের উপর। সাধারনত বাবার নামেই চিঠি আসে বাড়িতে। এই প্রথম আমার নামে কোন চিঠি এলো। একটু অবাকই হয়ে গেছিলাম চিঠিটি মা এনে দিলে। স্কুল ড্রেস পড়ছিলাম তখন। চিঠিটা হাতে নিয়ে নাড়িয়ে চারিয়ে বুঝলাম বাইপোষ্টে চিঠিটা আসেনি। কেউ লেটার বক্সে চিঠিটা ফেলে দিয়ে গেছে। মুক্তোর মত ঝকঝকে হাতের লেখা। ছিড়ে ফেললাম খামটি। সম্ভোধনটা দেখেই চমকে উঠলাম! 'দাবাবু'-আনিস তো এই নামেই আমায় ডাকতো!চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম।পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার গলাটা চেপে ধরেছে। স্কুল টাইটা হাত দিয়ে খুলে ফেললাম। প্রচন্ডভাবে ঘামছি। খাটটার উপর ধপাস করে বসে পড়লাম।আমার স্কুল বেরোনোর দেরী দেখে মা ঘরে ঢুকে আমাকে দেখে চিৎকার করে বাবাকে ডাকলেন। বাবা এসে কি হয়েছে আমার কাছে জানতে চাইলে আমি আনিসের চিঠিটা বাবার হাতে ধরিয়ে দিলাম।

                       (3)

           কেটে গেছে এর পর চার বছর।গাম্য সরল কিশোর আনিসের কথা কেউ মনেও রাখেনি!কিনতু আমি আজও তাকে ভুলতে পারিনি।মাঝে মাঝে একা হলেই মনে পড়ে তার কথা তার লেখা কবিতার কথা। সুন্দর একটা প্রতিভা অকালেই হারিয়ে গেলো ভেবে মনের ভিতর চাপা একটা কষ্ট মাঝে মাঝেই অনুভূত হয়।চায়ের দোকানটা আজও আছে সেখানে এ কয়েক বছরে অনেক ছেলেই কাজে এসছে কিনতু আনিসের মত অত সুন্দর ব্যবহার কারোই না।আনিস চলে যাওয়ার পর থেকে ওই দোকানে আর চা খেতে যাইনি।

             কবিতা গল্প পড়ার নেশা আমার ছেলেবেলা থেকেই। এখন নূতন নূতন কত কবি লেখকেরা কেউ কেউ খুব সুন্দর লেখেন।ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকের লেখায় পড়ি। কিছু কিছু বেশ ভালোই লাগে। এখনও হায়ারস্টাডি শেষ হয়নি।সুতরাং নিজস্ব কোন রোজগারও নেই।বাবার কাছ থেকেই টাকা চেয়ে আমার এই বই কিনে পড়ার শখ মেটানো।এবার সাহিত্যে একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন কবি অমল চৌধুরী।বেশ কয়েকদিন অনেক সংবাদ পত্রিকায় ও টিভির নানান চ্যানেলে ভদ্রলোককে দেখা গেছে সম্বধনার বন্যায় ভাসছেন! চোখে দামী ফ্রেমের চশমা দেখলে মনেহয় ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেননা।তার জীবনে প্রথম প্রকাশিত বই এইটি।আর প্রথম প্রকাশিত বইটিতেই একাডেমী পুরস্কার!

                 রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে পড়ার বই এর দিকে আর না এগিয়ে কবিতার বইটি নিয়ে বসলাম।বইটি যেন আমাকে চুম্বকের মত টানছে। প্রথম দু'টি কবিতা পড়ে মন খুশিতে নেচে উঠলো। কি সুন্দর লেখা!খেটে খাওয়া মানুষের জীবন কি সুন্দরভাবে ছন্দের মাদকতায় ছবির মত তুলে ধরেছেন। তিন নম্বর কবিতাটা পড়তে যেয়েই থমকে গেলাম।এ কবিতা আমার আগের পড়া।তারপর যতই পাতা উল্টাচ্ছি বুঝতে পারছি সেদিন আনিসের লেখা ঠিঠির মমার্থ! বাবা, মাকে ঘুম থেকে ডেকে সব বললাম।

                          (4)

              আনিস সেদিন যা চিঠিতে লিখেছিলো সংক্ষেপে বললে দাঁড়ায়;এক ভদ্রলোক সে যে দোকানে কাজ করতো সেখানে মাঝে মাঝে চা খেতে আসতেন। কোন কোনদিন অনেকক্ষন বসে গল্পও করতেন দোকানের মালিক আর আনিসের সাথে। ভদ্রলোক একটু আধটু সাহিত্যচর্চা করতেন। আনিস কথায় কথায় বলেছিলো যে সেও কবিতা লেখে। আনিসের লেখা কবিতার খাতা তিনি দেখতে চান।সরল কিশোর তার কবিতা লেখা খাতাটি অমলবাবুকে দেখতে দেয়। আনিসের লেখা কবিতা দেখে তিনি বুঝতে পারেন-'এ অমূল্য রতন'। তিনি আনিসকে তার কার্ড দিয়ে যান আর বলেন, আনিসের কবিতা তিনি নিজে টাকা খরচ করে ছাপাবেন।এর কিছুদিন পরে আনিস অমলবাবুর সাথে দেখা করে তার প্রানের চেয়েও প্রিয় কবিতার খাতাটি তার হাতে তুলে দিয়ে আসে।তিনি আনিসকে জানান বই বের করতে মাস চারেক সময় লাগবে। সে যেন চার মাস পরে এসে আবার দেখা করে।এরপরে আনিস বাড়িতে যায় মাসের টাকা দিতে মাকে।কিনতু বাড়িতে যেয়ে সে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে।আনিসের বাবা পুকুরে স্নান করতে যেয়ে বিষধর সর্পের কামড়ে মারা যান।মাকে একা ফেলে আনিস বাড়ি থেকে আসতে পারেনা।কয়েক মাস পরে আনিস কলকাতায় এসে অমলবাবুর সাথে দেখা করতে যেয়ে দেখা পায়না।চায়ের দোকানে যেয়ে দেখে নূতন ছেলে নেওয়া হয়েছে।সে পুনরায় গ্রামে ফিরে যায়।

                   আনিসের মা ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ একদিন মারা যান। ডাক্তার জানান 'স্ট্রোক'!গ্রামের পাট চুকিয়ে সে কলকাতায় ফিরে আসে অন্য কোন কাজের আশায়। আর দু'চোখে স্বপ্ন নিয়ে তার কবিতার বই ছাপানো হবে।যেদিন সে সুইসাইড করে সেদিন তার অমল চৌধুরীর সাথে দেখা হয়।তিনি সম্পূর্ণই অস্বীকার করেন যে আনিস তাকে কোন কবিতার খাতা দেয়নি!ভীষন ভেঙ্গে পড়ে সে!কবিতাগুলো ছিলো তার প্রাণ।তাই সে বেঁচে থাকার অর্থটাই হারিয়ে ফেলে।তারপরই তার এই চরম সিদ্ধান্ত!

             আমায় সে খুবই ভালোবাসতো। এত বড় শহরে আমি ছাড়া আর কাউকেই সে সেভাবে চিনতো না।তাই সমস্ত ঘটনা সে আমায় জানিয়ে রাতের আঁধারে চুপি চুপি এসে লেটার বক্সে চিঠিটা রেখে যায়। যে বেড়ার ঘরটায় সে থাকতো সেখানে পরে আর কেউই থাকতোনা।ওই ভাঙ্গা ঘরেই ইঁদুর মারা বিষ খেয়ে তার সন্তানসম কবিতাগুলি হারানোর দুঃখ ভুলে থাকতে চেয়েছে আনিস!

            হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলাম। মা,বাবাকে যেয়ে ঘুম থেকে ডেকে তুললাম।সব শুনে বাবা আমায় বুকের সাথে চেপে ধরে বলতে লাগলেন, "মানুষ বড় সার্থপর রে!নিজেকে উপরে তুলতে যে কোন রকম নোংরা কাজ সে করতে পারে।আগেকার দিনে গদির লোভে রাজাকে খুন করে আর একজন গদিতে বসতেন।আজও তার ব্যতিক্রম নয়।অর্থ, যশ, আর ক্ষমতার লোভে আজও মানুষ কত যে নীচুতে নামতে পারে আমরা সাধারণ মানুষ তা চিন্তাও করতে পারিনা। প্রতিবাদ করতে গেলেই হয় খুন হতে হবে  নুতবা একপেশে হয়ে থাকতে হবে।তাই নিজেদেরকে বাঁচাতে অন্যায় দেখে সব বুঝেও চুপ করে থাকতে বাধ্য হই ;বাঁচার তাগিদে।

   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী ।


Thursday, February 15, 2018

ভালোবাসা তুমি কি
  নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ভালোবাসা -
             তুমি কি মরীচিকা?
নাকি বালুচরে বাঁধা ঘর?
            কেন তুমি নিলজ্জ?
কখনো তুমি শরমে লাল!
ভালোবাসা-
              তুমি জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড!
কখনো বরফ ঠান্ডা শীতল!
             বুকের ভিতর ধূধূ মরুদ্যান,
তোমার পরশে হৃদয় কম্পমান!
ভালোবাসা-
             তোমায় ঘিরে আছে সবাই,
তুমি এত কেন অধরা?
              কিসের এত গরব তোমার?
এত কেন ভঙ্গুর তুমি? 

# নন্দা        29-12-17 

Tuesday, February 13, 2018

আবার বলবো সব
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ভাবতে খুব ভালো লাগে,
কেউ একজন অপেক্ষা করে আছে,
এপারে না হোক-ওপারেতেই হোক!
ক্ষতি কি! সেতো অপেক্ষায় আছে,
ভাবছে আমার কথা!
কত যন্ত্রণা, কত নিরাশা-
দেখা হলে উজাড় করে বলবো!
সে আমার চোখ দু'টি মুছিয়ে বলবে,
"কাঁদছো কেন?এই তো আবার আমি তোমার পাশে।"
কত কথা জমা হয়ে আছে বুকের মাঝে,
কতদিন পাশাপাশি বসে গল্প করিনি;
আমার বেদনার হাহাকার, আমার অশ্রুধারা-
কত-কতদিন সে কাছে টেনে মুছিয়ে দেয়নি,
"এত ভাবছো কেন?আমি তো আছি পাশে"!
শুনিনি-বহু-বহুদিন আমি শুনিনি।

সেই ক্ষণটুকুর জন্য অপেক্ষায় আছি,
আমার কষ্ট, আমার দুঃখ-উজাড় করে বলবো তাকে,
পরম যত্নে আমায় বলবে,"ভাবছো কেন আমি তো আছি পাশে। "

# নন্দা    ২৫-১-১৮

Monday, February 12, 2018

কথা রাখলেনা
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আজ নাকি 'রোজ ডে ' !
কথা দেবার দিন,
যেদিন তুমি কথা দিয়েছিলে-
সেদিন তো 'রোজ ডে ' ছিলোনা।
ছাদনাতলায় চোখে চোখে বলেছিলে-
"একসাথে থাকবো চিরদিন"।
কই, তুমি তো কথা রাখনি!
সেই তো চলেই গেলে আমায় ফেলে!
আসলে কথা দিয়ে কেউ কথা রাখেনা।

@ নন্দা  11-2-18

Saturday, February 10, 2018

একবার এসো
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

আর কখনো ডাকবে নাগো,
  আমার নামটি ধরে,
আর কখনো বসবো নাতো,
  তোমার কাছে যেয়ে,
হাতটি নিয়ে হাতের মাঝে-
  বলবেনা আর কথা,
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে,
  ভুলাবেনা আর ব্যথা!
আমার পাওয়া আঘাতগুলি-
  শুনবেনা আর কেউ;
বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে,
  থামাবেনা আর ঢেউ!
খাবার খেতে চেয়ারে তুমি,
  বসবেনা আর এসে-
তোমার আসন ফাঁকায় আছে-
  একবার যাও দেখে।

  @ নন্দা   8-2-18

Friday, February 9, 2018

'মানবী'আমার প্রকাশিত দ্বিতীয় গল্পসংকলন

আমায় প্রতিলিপিতে অনুসরণ করুনঃ http://bengali.pratilipi.com/user/%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A7%80-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%9A%E0%A7%8C%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%80-ufjoeteayk?utm_source=android&utm_campaign=myprofile_share ভারতীয় ভাষায় অগুনতি রচনা পড়ুন,লিখুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন,সম্পূর্ণ নিঃশুল্ক

Thursday, February 8, 2018



নীরব ভালোবাসা  
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী 
                  
                নিজেই গাড়ি চালিয়ে সুপ্রিয় নার্সিংহোম থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার মাঝ খানে একটা জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। গাড়ি থেকে নেমে ভীর ঠেলে এগিয়ে যায় । একটা  এক্সিডেন্ট ! নীরব দর্শকদের মাঝ খান থেকে আহত যাত্রীকে  গাড়িতে  তুলে ,তার বাচ্চা মেয়েটিকে নিয়ে সোজা একেবারে নার্সিংহোম । ছোট মেয়েটিকে একজন নার্সের হেফাজতে দিয়েই আহত মেয়েটির চিকিৎসা শুরু করে দেয় । সারা রাত সেদিন সুপ্রিয় আর বাড়ি ফিরতে পারে না ।  ভোরের দিকে মেয়েটির জ্ঞান ফেরে ।  চোখ খুলেই সে তার মেয়ে সুরুতি কে দেখতে চায় ।  সুপ্রিয় তাকে মেয়ের ব্যপারে আস্বস্ত করে ।  একটু পরে মেয়েকে নিয়ে এসে তার সাথে দেখা করিয়ে নিয়ে যায় ।জানতে চায় তাদের বাড়ির ঠিকানা ,তার নাম ।  মেয়েটি তাকে জানায় - তার নাম দেবীকা ।  বাড়িতে চিন্তা করবার মত তার কেউ নেই ,কারণ মেয়ে ছাড়া তার আর কেউ নেই ।  সুপ্রিয় অবাক হয়ে কথাগুলি শোনে। বিকালের দিকে সুরুতি কে তার মায়ের সাথে দেখা করিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় দেবীকা কে বলে যায় ,যতদিন না সে সুস্থ্য হচ্ছে ততদিন তার মেয়ে সুপ্রিয়র কাছেই থাকবে । দেবীকার মুখের থেকে কোনো কথা সরে না । শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে সুপ্রিয়র মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সুরুতি কে নিয়ে সে তার বাড়ি নিয়ে আসে ।  বাড়ি বলতে সে আর তার কাজের মাসি । সুপ্রিয় সারাজীবন ই একটু পরোপকারী ।  এর মাঝে একদিন সে সুরুতি ও দেবীকার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনে নিয়ে আসে ।  নিজের মনেই ভাবে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলছে নাতো ?এই ভাবে প্রায় দিন   পনের কেটে যায় ।  দেবিকারও  ছুটি হয়ে যায় ।  তার আপত্তি স্বর্তেও সে দেবীকাকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে ।  নার্সিংহোম এ থাকাকালীন সময়ে সে দেবিকার কাছ থেকে তার সম্মন্ধে মোটামুটি সব জেনে নেয় । ভালোবেসে মা বাবার অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল । অরুন মানে দেবীকার স্বামী ছিলো বেসরকারী সংস্থার একজন সামান্য চাকুরীজীবি সুখেই ছিলো তারা ।  অভাব থাকলেও দুজনের ভালোবাসার মধ্যে তা কখনোই প্রভাব ফেলতে পারেনি । মেয়ের যখন চার বছর বয়স ;তখন হঠাৎ করেই অরুনের ক্যানসার ধরা পরে । বলতে গেলে প্রায় বিনা চিকিৎসায় অরুন মারা যায় । কয়েকটি টিউশনি আর দোকানে দোকানে সেলাই করেই কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে আছে ।
                                          
           দেবীকা ও তার মেয়ে সুপ্রিয়র বাড়িতেই থেকে যায়  দেবীকার সাথে সুপ্রিয়র খুব একটা দেখা হয় না বললেই চলে । শুধু রোজ বেরোনোর আগে খাবার টেবিলে একবার দেবীকার সাথে সুপ্রিয়র দেখা হত ;সুপ্রিয়  বুঝতে পারে আস্তে আস্তে সে দেবীকার প্রতি দুর্বল হোয়ে পড়ছে । সুরুতি কেও যতটুকু সময় সে ঘরে থাকে তাকে সে কাছ ছাড়া করতে চায় না ।  সুরুতি ও ডাক্তার আঙ্কেল কে খুব ভালোবেসে ফেলেছে ।  অধিকাংশ রাতে সে আঙ্কেল এর ঘরেই বসে থাকতে থাকতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরে। পরে তার মা এসে তাকে নিয়ে যায় বা সুপ্রিয় এসে তাকে পৌঁছে দিয়েই চলে আসে।    

     কাজের মাসির কাছ থেকে সুপ্রিয়র অতীতের কথা আস্তে আস্তে দেবীকা সব জেনে নেয় । সুপ্রিয়র বাবা ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী । প্রায়ই ব্যবসার কাজে তাকে বাইরে যেতে হত। একদিন ব্যবসার কাজে শিলিগুড়ি যাওয়ার মাঝপথ থেকেই তিনি অসুস্হ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।  সুপ্রিয় তাকে বড় নার্সিংহোমে ভর্তিও করে। কিনতু সকলের সব চেষ্টা বিফল করে চিরদিনের মত চলে যান। হঠাৎ করে স্বামীর এই চলে যাওয়াকে সুপ্রিয়র মা কিছুতেই মানতে পারেননা ; তিনি খুবই ভেঙ্গে পারেন ও তিন মাসের মধ্যে তিনিও বিদায় নেন । সুপ্রিয়ও তখন সম্পুর্ন একা ঐ পৃথিবীতে । 

     সুপ্রিয় যে নার্সিংহোমে চাকরী করে সেখানেই আয়ার কাজ করতেন তার এই কাজের মাসি। অধিকাংশ সময়েই সুপ্রিয় কাজের শেষে নার্সিংহোম থেকে বাড়ি ফিরে যেতনা। নাওয়া , খাওয়া ঘুম কোনোকিছুরই ঠিক ছিলোনা। দুমাস এভাবে কাটার পর এই মাসিই তাকে বলে , "ডাক্তারবাবা আমার তো এখন আর কেউ নেই ;একটা মেয়ে ছিলো তুমি টাকা পয়সা খরচ করে তার বিয়ে দিয়ে দিয়েছো। তোমাদের আশীর্বাদে সে ভালোই আছে। এই বয়সে আমার আর চাকরি করে কি লাভ ? আমাকে তোমার সাথে তোমাদের বাড়ি নিয়ে চলো। তোমাকে দুটি রান্না করে দেবো আর নিজে দুটি খাবো। 

                    মহিলা তার ডাক্তারবাবাকে খুবই ভালোবাসেন কারন সুপ্রিয় ভীষন পরোপকারী ছেলে। মানুষের বিপদ দেখলেই সে ঝাঁপিয়ে পরে। মহিলার মুখে এই কথা শুনে ও তার কাতর মিনতিতে তাকে সে তার বাড়িতে নিয়ে আসে।আর সেই থেকে এই মাসিই সুপ্রিয়র বাড়ির সর্বময় কত্রী। দেবীকা মনেমনে ভাবে মানুষটা দেখি সব হারিয়ে আমার মতই দুখী পৃথিবীতে। এ রকম মনের মানুষ আজকের দিনে পৃথিবীতে দুর্লভ! এইভাবে সময় পেলেই মাসির কাজের ফাঁকে দেবীকা সুপ্রিয় সম্পর্কে আনেক কিছুই জেনে নেয়। অনেক সময় মাসির কাজের সাহায্যের জন্য দেবীকা এগিয়ে গেছে। কিনতু মাসি তাকে কোনই কাজ করতে দেয়নি যেহেতু তার ডাক্তারবাবা তাকে নিষেধ করে দিয়েছেন। 

      একদিন  নার্সিংহোম থেকে সুপ্রিয় সন্ধ্যা নাগাদ বাড়িতে ফিরে এসে সুরুতি কে নিয়েই  তার  ঘরে সময় কাটাতে থাকে । হঠাৎ কাজের মাসি এসে তাদের লুচি ,আলুরদম টিফিন দিয়ে যায় ।  সুপ্রিয় একটু অবাক হয়েই মাসির কাছে জানতে চায় ,"তুমি এটা করলে মাসি "? "আমি না দিদিমনি করেছে "- কথাটা বলে মাসি বেড়িয়ে যায় ।  খাওয়া শেষ কোরে সে অপেক্ষা কোরতে থাকে কখন দেবীকা সুরুতি কে ডাকতে আসে আর সে তার মনের কথাগুলি তাকে বলতে পারে। কিন্তু না - ডাক পড়লো একেবারে খাবার টেবিলে ।আজ দেবীকাই সুপ্রিয় ও সুরুতিকে খেতে দিলো । 
সুপ্রিয় জানতে চাইলো মাসিকে দেখতে পারছে না কেনো ?"মাসিকে আজ আমি খেয়ে শুয়ে পড়তে বলেছি । 
আমি আছি তো -আপনার কোনো অসুবিধা হলে আমায় বলুন না !দেবীকার কথায় সুপ্রিয় তার দিকে তাকালো । 
পরক্ষনেই মুখটি নীচু কোরে নেয় -পাছে তার দুর্বলতা ওই ডাগর চোখ দুটিতে ধরা পড়ে যায় । খেতে খেতেই সে বুঝতে পারে এটা মাসির রান্না নয় ।  সে দেবীকার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ,"খামোখা অসুস্থ্য শরীরে এই পরিশ্রম করার কোনো দরকার ছিল "? "আপনি এতো কিছু করলেন আমাদের জন্য আর আমি একবেলা রান্না কোরে খেতে দিলাম এটা খামোখা হোলো ?"সুপ্রিয় কোনো উত্তর দেবার মত ভাষা খুঁজে পেলো না । বার বার বলা সর্তেও দেবীকা একসাথে খেতে বসে না । টেবিল ছাড়ার আগে সুরুতির হাত ধরে চলে যেতে যেতে সে বললো ,"তুমি খেয়ে সুরুতি কে নিয়ে এসো"।   

       পরদিন সকাল বেলা সুপ্রিয় যখন তৈরী হচ্ছে নার্সিংহোম যাবার জন্য ;তখন মেয়ের হাত ধরে দেবীকা তার ঘরে ঢুকেই ঢিপ হয়ে তাকে এক প্রনাম করলো । মায়ের দেখাদেখি মেয়েও তাকে অনুসরণ করলো । সুপ্রিয় তাকে কোলে তুলে নিয়ে দু গালে দুটি চুমু করলো । সুরুতি তাকে বলল ,"দেখো আঙ্কেল মা কিছুতেই আমার কথা শুনছে না ,বলছে -আজ ই বাড়ি চলে যাবে । তুমি মাকে একটু বুঝাও না ,আমার তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না "। সুপ্রিয় এ কথা শুনার জন্য মোটেই প্রস্তূত ছিলো না । সুরুতি কে কোল থেকে নামিয়ে দাঁড়িয়েই থাকলো। যখন ঘোড় কাটল দেখে মেয়ের হাত ধরে দেবীকা ঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে । মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে সুরুতিকে বললো ,"আচ্ছা তুমি একটু ওই ঘরে যাও -আমি মাকে বুঝিয়ে বলছি । "সুরুতি চলে গেলো । সুপ্রিয় দেবীকার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো । দেবীকা মাথা নীচু করেই আছে ।
-- "কোথায় যাচ্ছ "? --"জানিন,তবে আর কতদিন থাকবো এখানে ?যেতে তো হবেই । 
--"কেনো যেতেই হবে কেন ?কে তোমাদের যেতে বলছে ?তোমাদের কিছুতেই যাওয়া হবে না ।"
সুপ্রিয় আর একটু দেবীকার কাছে এগিয়ে যায় ,আলতো কোরে  তার  মুখটি তুলে ধরে বলে ,"আমার দিকে তাকাও দেবী "
দেবীকা তার জল ভরা ডাগর চোখ দুটি মেলে সুপ্রীয়র মুখের দিকে তাঁকিয়েই ফুঁফিয়ে কেঁদে ওঠে ।মূহূর্ত্বে  সে সুপ্রীয়র পায়ের কাছে বসতে যায় ।  সুপ্রিয় শক্ত হাতে দেবীকাকে তুলে নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলে ,
--"তোমার জায়গাটা ওখানে নয় ;তোমার জায়গা এখানে। 
এতো বোকা তুমি ?নিজের মনের কথাটা না হয় বলতে পারছ না ;আমার মনের কথাটা ও কি বুঝতে পারছ না ?যাওয়ার কথা বোলছ কি করে ?আমারও তো কেউ নেই । সেই কবে সবাইকে হারিয়েছি । তোমাদের পেয়ে আমিও আমার জীবনকে খুঁজে পেয়েছি । একাকিকত্ব  থেকে মুক্তি পেয়েছি  । সব কিছু হারানো দুটি মানুষ আমরা । একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছি । তা হলে কেনও এই চলে যেতে চাওয়া ?না -কিছুতেই হবে না এটা । আমি এ কটা দিনে বুঝে গেছি -তোমাদের ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না । ওই মিষ্টি ছোট্ট মেয়েটার মুখ থেকে আমি বাবা ডাক শুনতে চাই । তোমাকে নিজের কোরে পেতে চাই ;আমায় বঞ্চিত কোরো না -দেবী"। 
দেবীকা  সুপ্রিয়র বুকের উপর মাথা রেখে শুধু কেঁদেই চলে ,মুখে কোনো কথা বলে না ।সুপ্রিয় তার মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলাতে থাকে । 
    

           কতটা সময় এভাবে দুজনের কেটে গেছে কেউই তা বুঝতে পারেনি । এদিকে সুরুতি অপেক্ষা করে করে আর না পেরে 'মা' 'মা' ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢোকে। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে, "মা তুমি কাঁদছো কেন? "সুপ্রিয় তার কথার উত্তর দেয়, "মাকে খুব বকেছি। তাই তো মা কাঁদছে"।কথা বলতে বলতে সে সুরুতিকে কোলে তুলে নেয়। আর বলে, 
--মা আর যেতে চাইবেনা বলেছে। এখন থেকে এখানেই থাকবে বলেছে। কিনতু মা এও বলেছে তারজন্য তোমাকে একটি কথা শুনতে হবে। 
দেবীকা অবাক হয়ে সুপ্রিয়র মুখের দিকে তাকায়।সুপ্রিয় একটু হেসে আবার সুরুতিকে বলতে শুরু করে, 
--মা যে কথাটা বলেছেন তুমি শুনবে তো ? 
--হ্যাঁ , মা যা বলবে আমি তাই শুনবো। কিন্তু ডাক্তার আঙ্কেল আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবোনা। 
--না না তুমি যদি মায়ের কথাটা শোনো তাহলে আমায় ছেড়ে তোমায় কোনদিনও কোথাও যেতে হবেনা। শুধু এই ডাক্তার আঙ্কেলটা বলা যাবেনা। 
--তাহলে কি শুধু নাম ধরে ডাকবো? 
সুরুতির কথায় ওরা দুজনেই হেসে ফেলে। সুপ্রিয় সুরুতির মুখে একটা চুম্বন করে বলে, 
---না , নাম ধরে ডাকবেনা ;আমাকে তুমি বাবা বলে ডাকবে। 
দেবীকা কথাটা শুনে হেসে দেয়! সুরুতি তার মাকে বলে, 
--আমারও না মা ডাক্তার আঙ্কেলকে বাবা বলে ডাকতে ইচ্ছা করে। ডাকবো মা ? 
দেবীকা মাথা নেড়ে তার সম্মতি জানায়। সঙ্গে সঙ্গেই সুরুতি সুপ্রিয়র গলা জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, 'বাবা'।
"আর একবার বলো?" সুরুতি মুখটা অন্য কানের কাছে নিতে নিতে বলে,"এবার এই কানটাই বলবো, "বা --বা"। সুপ্রিয় তাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে, "আর কোথাও তোমাদের যেতে হবেনা। এখন থেকে আমরা তিনজনেই একসাথে এই বাড়িতেই থাকবো। "দেবীকা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সুপ্রিয় তাকে বলে, "আজ মনে হচ্ছে নার্সিংহোম আর যাওয়া হবেনা।"
উত্তরে দেবীকা হেসে পরে আর হাসতে হাসতেই বলে, "সেটা আমি আগেই বুঝেছি। " সুপ্রিয় খুব জোরে হেসে উঠে। সুপ্রিয়র এত জোরে হাসি দেখে সুরুতি আবাক হয়ে যায়। 
---তুমি এত জোড়ে  হাসতে পারো বাবা? 
--তুমি আর তোমার মা দুজনে মিলে এভাবে আমার হাসির রাস্তাটা তৈরী করে দিলে যে মা! আমি তো হাসতেই ভুলে গেছিলাম। কোনদিন যে এভাবে আবার হাসতে পারবো সেটা তো স্বপ্নেও ভাবিনি!
দেবীকা কিছুক্ষণ চুপচাপ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।চলে যাওয়ার সময় বলে যায়, ''ব্রেকফাস্টটা করে নিলে হতনা?'' 
--হ্যাঁ চলো। 
মেয়েকে কোলে নিয়ে সুপ্রিয় ডাইনিংএর দিকে এগিয়ে যায়। 

      দু'দিন পর সুপ্রিয় এক ভদ্রলোককে নিয়ে বাড়িতে আসে। দেবীকার কাছে এসে বলে' , 
--দেবী, সব থেকে আগে যেটা দরকার সেটা হোল সুরুতিকে আগে একটা স্কুলে ভর্তি করা। ওকে আমি দত্তক নিতে চাই ;তাই এক উকিলবাবুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। আমি চাই ও আমার পরিচয়ে পরিচিতি পাক। তোমার কোন আপত্তি নেই তো ? 
দেবীকা অবাক দৃষ্টিতে সুপ্রিয়র দিকে তাকিয়ে থাকে। সুপ্রিয় আবার তাকে বলে, 
--কই উত্তর দিলেনা ? 
--আপনি যদি এখনও আমাকে এইসব বলেন তাহলে আমি কিনতু খুব কষ্ট পাই! ও তো আপনাকে বাবা বলে ডাকে সুতরাং ও আপনারাই মেয়ে;তাহলে আমার কাছে জিগ্গেস করা কেন ?যাতে ওর ভালো হবে আমার থেকে আপনিই তো ভালো বুঝবেন। আপনি ওঘরে যান আমি আসছি। 
--আমার বুক থেকে একটা ভারী পাথর নামিয়ে দিলে তুমি।খুব টেনশানে ছিলাম যদি তুমি আপত্তি করো। কিনতু দেবী একটা ব্যাপারে কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারছিনা। 

          দেবীকা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সুপ্রিয়র মুখের দিকে তাকালো। সুপ্রিয় হাসতে হাসতে বললো, 
---মেয়ে তো বাবা বলছে কিনতু মেয়ের মা তো সেই আপনিতেই দাঁড়িয়ে আছে;কি করি বলো তো? 
দেবীকা একগাল এসে পরে সুপ্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলে, 
---মেয়ের মা সময় মতো ঠিক বলবে! 
মেয়েকে দত্তক নেওয়া, নামী স্কুলে ভর্তি করানো-একে একে সবই হয়ে যায়। 
 সুপ্রিয় দেবীকার ইচ্ছানুযায়ী ম্যারেজ রেজিস্টারকে তার বাড়িতেই নিয়ে আসে। অনাড়ম্বর পরিবেশে সুপ্রিয়র এক মাসি ও মেসোকে স্বাক্ষী রেখে দেবীকা ও সুপ্রিয় দুজনে মিলে এক হয়ে যায়। 

           সেই রাতে ওই মাসি সুপ্রিয়কে ডেকে বলেন জে ওই রাতটা সুরুতি তাদের কাছেই থাকুক।কিনতু সুপ্রিয় এতে মত দেয়না।সে তাদের অবাক করে দিয়ে বলে, "ও যতদিন না বড় হচ্ছে ততদিন ও রাতে আমাদের কাছেই থাকবে। কতক্ষণ সময় আমি আর বাড়িতে থাকি! এই সময় টুকুর এক মুহুর্ত আমি আমার মেয়েকে কাছছাড়া করতে চাইনা।" কথাগুলি সবই দেবীকার কানে যায়। সে ভাবে গত জম্মের কোন পুর্ণ্যের ফলেই এ জীবনে সুপ্রিয়র মত মানুষের সাথে তার দেখা হয়েছে।ইতিমধ্যে সুপ্রিয় ঘরে ঢোকে। দেবীকা গলায় বস্ত্র নিয়ে ভক্তিভরে তাকে প্রনাম করে। 
----এটা কি হোল ?আমি তো আগেই তোমাকে নিষেধ করেছি! 
দেবীকা উঠে দাঁড়ানোর আগেই সুপ্রিয় তার বাহুদুটি ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়। 
---ভগবানকে তো চোখে দেখিনি আপনি আমার কাছে ভগবান স্বরূপ! 
---এসব বলবেনা দেবী। আমি ভগবান নই;অতি সাধারণ একজন মানুষ! যার পৃথিবীতে তোমরা দুজন ছাড়া কেউ নেই। তাই তোমাদের পেয়ে আমি খড়কুটোর মত আগলে ধরেছিলাম।যাক ওসব কথা। একটা কথা আমায় বলতো -এখনও কি সেই সময় আসেনি যে তুমি আমায় 'তুমি'বলবে ? 
দেবীকা সলজ্জ দৃষ্টিতে সুপ্রিয়র মুখের দিকে তাকিয়েই আবার মুখটা নীচু করে বলে, "হ্যাঁ এসেছে।"  সুপ্রিয় দেবীকার একমাথা সিঁদুর, গা ভর্তি গয়না, লাল ঢাকায় জামদানী শাড়িতে দেবীকার অপূর্ব সাজের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দুহাত বাড়িয়ে নিজের বুকে টেনে নেয়। তারপর আলতো করে মুখটি তুলে ধরে বলে,"সত্যি বলছি দেবী, এই তোমাকে ছুঁয়ে বলছি, ভগবান যদি তোমাদের আমার কাছে পাঠিয়ে না দিতেন -জীবনের মানেটাকেই আর খুঁজে পেতামনা।ছ মাসের ব্যবধানে মা, বাবা দুজনকেই হারিয়ে আমার আর বাঁচার ইচ্ছা ছিলোনা। ওই মাসি যদি চাকরী ছেড়ে দিয়ে আমার কাছে চলে না আসতো আমি মনেহয় এতদিনে শেষ হয়ে যেতাম। মাসি আমায় খুব ভালোবাসে আর আমিও মাসিকে খুব শ্রদ্ধা করি। আমার ভাগ্যটা যে এতো ভালো হবে তোমাদের কাছে না পেলে আমি তা কোনদিনও অনুভব করতে পারতামনা। আজ আমি খুব খুশি, খুব সুখী।"
দেবীকা সুপ্রিয়র বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ভাবে,'আমিই কি কোনদিন ভেবেছি আমার জীবনের ওই চরম দুর্যোগের পর স্বয়ং ভগবান এসে আমার হাতদুটি ধরবেন;আমার সমস্ত দুঃখ, কষ্ট ভুলিয়ে দিয়ে আমার মেয়েকে, আমাকে নিজের করে নিয়ে আমাদের কাছে টেনে নেবেন। আমার জীবন থাকতে আমি আর কোনদিন তোমায় কোন কষ্ট পেতে দেবোনা সুপ্রিয়। সারাটা জীবন আমরা মা, মেয়ে তোমায় ঘিরে থাকবো। আর তুমি থাকবে আমাদের জীবনে ঠিক বটগাছের ছায়ার মত। দেবীকা আরও নিবিড়ভাবে সুপ্রিয়কে জড়িয়ে ধরে। 

                               শেষ

Friday, February 2, 2018

সাগরের ঢেউ আমায় ডাকে ,
আমি এগিয়ে যাই ,
 আমাকে ছেড়ে সে,
 পাথরের বুকে আছড়ে পরে !
# নন্দা