Saturday, July 9, 2022

সময় মানুষকে বুঝতে শেখায়

সময় মানুষকে বুঝতে শেখায় 

  তিন বছর হল তিয়াসার বিয়ে হয়েছে।বাবা,মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে খুশি মনেই মেনে নিয়েছে।কলেজ লাইফে জয়কে পছন্দ করলেও কোনদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনি তিয়াসা।জয়ের নায়কোচিত চেহারা কলেজের সব মেয়েদের পছন্দের প্রথম কারণ ছিলো।সকলেই জয়কে দেখলে কেমন যেন হ্যাংলার মত ঘিরে ধরতো যা তিয়াসা কোনদিন পারেনি।জয়ের ভূত মাথার থেকে সেদিনই নেমেছে তিয়াসার যেদিন সে নিজ চোখে দেখেছে কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতর নিরিবিলি জায়গায় তিয়াসার ক্লাসমেট সুপর্ণাকে জয় জড়িয়ে ধরে কিস করেছে।
  কলেজ লাইফে এরপর শুধু জয় কেন অন্য কোন ছেলের দিকে তিয়াসা আর কোনদিন ফিরেও তাকায়নি।সাধারণ ভাবেই গ্র্যাজুয়েশনের পর বাড়িতে শুয়ে,বসে আর মাঝে মাঝে মাকে রান্না আর ঘরের কাজে সাহায্য করেই সময় কেটে যাচ্ছিল।বাবার রিটায়ারমেন্ট এর দিনে বাবার নির্দেশমত মাকে নিয়েই অফিসে উপস্থিত হয়েছিল।সেখানেই বাবার এক সহকর্মী তিয়াসাকে দেখে পছন্দ করেন তার একমাত্র ছেলের জন্য।
  কথাবার্তা এগোতে লাগে। তিয়াসা ও পলাশ পরস্পরকে চেনে,জানে। দু'জনেরই দু'জনকে ভালো লাগে।
  কিন্তু বিয়ের পর তিয়াসা দেখে, যে পলাশকে সে ছ'মাস ধরে চিনেছে,জেনেছে আর যে পলাশকে সে বিয়ে করেছে সে সম্পূর্ণ আলাদা।বিয়ের আগে ঘুরতে গিয়ে পলাশের যে কেয়ারিং মনোভাব সে দেখেছে বৌভাতের দু'দিন যেতে না যেতেই পলাশের সেই মনোভাব আর সে খুঁজে পায়নি।কিছুটা গায়ে পড়া হয়ে ছ'মাস আগে চেনা পলাশকে খুঁজতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
 প্রথম প্রথম বেশ কটাদিন তিয়াসার মন খারাপ করলেও পড়ে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।সংসারে মানুষ তো তিনজন।সকালে পলাশ অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তার শ্বশুরমশাইও বেরিয়ে যান।সারাটাদিন তিয়াসা একাই।ঘর গুছিয়ে,শুয়ে-বসে তার সময় কাটে।শ্বশুর আগেই ফেরেন অফিস থেকে।তিনি প্রতিদিনই ফেরার পথে কিছু না কিছু খাবার কিনে আনেন।এসেই বাচ্চাদের মত তার আদরের বৌমাকে প্যাকেটটা দিয়ে বলেন,
-- বৌমা,দু'কাপ চা করে আনো তাড়াতাড়ি। পুলু ফেরার আগেই এককাপ খেয়ে নিই ও আসলে আর এক কাপের সাথে তখন তিনজনে মিলে জমিয়ে টিফিন করবো।আমি বেশি চা খেলে ব্যাটা আজকাল বেশ চিল্লায়। 
 কথাটা বলেই হাসতে থাকেন।পলাশ বাড়িতে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে বাবার আনা টিফিন খেতে খেতে বলে,
-- বাড়িতে এসে ক'কাপ চা খেলে? রোজ রোজ এত তেলে ভাজা এখন তোমার খাওয়া ঠিক নয় বাবা।
 একথা শুনে অনেক সময় তিয়াসা বলে উঠেছে,
-- সেকথা আমিও বাবাকে বারবার বলেছি।কিন্তু বাবা কথাই শোনেন না।টিফিনটা তো আমিই বানাতে পারি রোজ।
-- বানাতে পারি নয় এখন থেকে তুমিই বানিয়ে রাখবে।
    এইভাবেই চলতে থাকে দিন।বিয়ের পর থেকে পলাশ তিয়াসার ব্যাপারে যেমন উদাসীন ছিলো তার কোন পরিবর্তন হয় না।এরই মাঝে একদিন তিয়াসার শ্বশুর অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন তিয়াসার ভীষণ জ্বর।বাড়িতে ফিরেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে ফোন করেন।পলাশ বাড়িতে ফিরে দেখে জ্বরে বেহুস তার স্ত্রী আর বাবা তার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন।সে কোনরকমে হাত,মুখ ধুয়ে বাবাকে কিছুটা মুড়ি আর চা করে দিয়ে তিয়াসার কাছে গিয়ে বসে।আগেই তাকে জ্বরের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।তখন ঘাম দিয়ে জ্বর কমছে। তিয়াসা উঠে বসার চেষ্টা করে।পলাশ তাকে বলে,
-- একদম না।যেমন শুয়ে আছ তেমন ভাবেই শুয়ে থেকো।আমি দু'টি ভাত ফুটিয়ে নিতে পারবো।
-- কিন্তু বাবা তো রাতে রুটি খান।
-- আজ ভাত খেয়ে নেবেন।তুমি আগে সুস্থ্য হও পরে এসব দেখবে।
 সেদিন রাতে যতবার তিয়াসার ঘুম ভেঙেছে সে অনুভব করেছে পলাশের একটা হাত ঘুমের মধ্যেও তার চুলে বিলি কেটে চলেছে। তিয়াসা একটু নড়লেই পলাশ উঠে বসে জানতে চেয়েছে,
-- শরীর খারাপ লাগছে?
 পরদিন শ্বশুর,স্বামী কেউ আর অফিস যায় না।সারাটা দিন বাপ,ছেলে কেউই তাকে বিছানা ছেড়ে নামতে দেয় না।মাথাটাও পলাশ ধরে নিয়ে গিয়ে বাথরুমে ধুইয়ে নিয়ে আসে।খাবার টেবিলে ভাত গুছিয়ে ঘরে এসে তিয়াসাকে ধরে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসায়।
 তিয়াসা বুঝতে পারে পলাশকে সে যেমন দেখেছিল ঠিক তেমনই সে আছে।সেই তাকে বুঝতে ভুল করেছিল।আসলে মানুষ বিপদে না পড়লে কাছের মানুষগুলিকে ঠিক চিনতে পারে না।মানুষ বিপদে পড়লে কাছের মানুষগুলির ভালো - মন্দ উভয় দিকই জলের মত পরিস্কার হয়ে যায়। তবে এ কথাও মানতেই হবে একটি ছেলে যখন একটি মেয়ের সাথে প্রেম করে তখন পরস্পরকে কাছে পাওয়ার যে অদম্য ইচ্ছা কাজ করে, চার দেওয়ালের মধ্যে তাকে সম্পূর্ণভাবে নিজের করে পেয়ে যাওয়ার পর সেই ইচ্ছেটা যখন পূরণ হয়ে যায় তখন কিছুটা হলেও তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয়ে থাকে।আর এটাই বাস্তবতা। কারণ ভালোবাসাটা তখন সহবাসে পরিণত হয় আর দায়িত্ববোধটা ভীষণভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

#মানবী

 
    

No comments:

Post a Comment