Thursday, July 7, 2022

অক্ষমতা

 সংসারে পড়ে রইলো তিনটে প্রাণী।একটি শিশু,একজন বয়স্কা আর পূর্ণ যৌবনা এক নারী।অথচ সংসারে উপার্জনক্ষম কোন মানুষ নেই।কামিনী পড়লো মহা ফ্যাসাদে।
 কামিনী গ্রামের অবস্থাপন্ন রায় চৌধুরীদের বাড়িতে গিয়ে তার দুঃখের কথা জানিয়ে ভীষণভাবে কান্নাকাটি করতে লাগলে রায় চৌধুরী গিন্নী তাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কাজে বহাল করেন।নামেই কাজ।গিন্নী মায়ের সাথে সাথে থাকা,ঘণ্টায় ঘণ্টায় পান সেজে দেওয়া আর টুকটাক এদিক-ওদিক কিছু সামান্য কাজ।বিনিময়ে যে টাকা এবং খাবার দিতেন তাকে তাতে তিনটে পেট ভালোভাবে না ভরলেও চলে যেত।প্রথম মাসটা একটু কষ্ট হলেও পরের মাস থেকে ঠিক চলে যাচ্ছিল।কামিনীর ছেলের পড়াশুনার ভালো মাথা দেখে রায় চৌধুরীবাবু নিজের থেকেই তার পড়াশুনার দায়িত্ব নেন।ছেলেবেলার থেকেই কামিনীর আদরের বিটু ভীষণ বুদ্ধিমান আর বোঝদার ছেলে।যে সুযোগ সে পেয়েছে জীবনে তার নির্যাস লাভ তাকে করতেই হবে এই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাবে সে দিনরাত এক করে পড়াশুনা শুরু করে। 
 গ্রামের স্কুল থেকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে সে মাধ্যমিক পাশ করার পর রায় চৌধুরীবাবুর চেষ্টায় কলকাতায় উচ্চমাধ্যমিকও বেশ ভালো রেজাল্ট করে।
 তখন বিটুর ক্লাস নাইন।ছেলেবেলা থেকেই মা ও ঠাকুমার আলোচনা থেকে বাবার সম্পর্কে সব জেনেই সে বড় হয়েছে।একদিন মায়ের অনুপস্থিতিতে মায়ের আলমারির ভিতর থেকে মায়ের অজান্তে টেনে বের করে আনে বাবা,মায়ের একটি ছবি।
  রায় চৌধুরীবাবুর একটি মাত্র কন্যা সন্তান।জন্ম থেকেই তার পায়ে সামান্য অসুবিধা থাকায় সে একটু খুঁড়িয়েই হাঁটে।গ্রামের স্কুল থেকেই সে মাধ্যমিক পাশ করার পর পড়াশুনা আর তার এগোয়নি।রায় চৌধুরী গিন্নী তাকে সংসারের কাজকর্মে পারদর্শী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিটুর প্রতি চৌধুরী পরিবারের দুর্বলতার আরও একটি কারণ দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রায় চৌধুরীবাবু বিটুর মধ্যে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেছেন।যদি তিনি বিটুকে একটু সাহায্য করেন তাহলে ভবিষ্যতে বিটু যে জায়গায় দাঁড়াবে তাতে তার মেয়ে সুখীই থাকবে।
  বিটু তার মেধা শক্তির পরিচয় দিয়ে সরকারিভাবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুযোগ পায়।
  প্রথম দিন ক্লাসে বিটু যাকে ক্লাস নিতে দেখে তাতে সে ভীষণভাবে ঘাবড়ে যায়।

  ক্রমশ -

No comments:

Post a Comment