Thursday, July 7, 2022

মানুষ চেনা বড় দায় (সপ্তম পর্ব)

  বিটু খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারে তাদের এই এস.এস. ই তার বাবা সুভাষ সাহা।এস.এস. ক্লাসে আসলেই বিটু কেমন যেন হয়ে যেত।এত মেধাবী ছেলে হওয়া স্বর্তেও এতটাই অন্য মনস্ক হয়ে পড়ত সে কোন পড়াই তার কর্ণগোচর হত না।দু'একদিন অন্যমস্কতার কারণে ভৎসনার স্বীকারও হয়েছে।কিন্তু বেশিদিন তাকে এই অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি।কলেজে ভর্তি হওয়ার মাস তিনেকের মধ্যেই এস.এস. রিটায়ার করে যান।
  খোঁজ নিয়ে আগেই জানতে পেরেছিল তার একটি সৎবোন আছে।সে পড়াশুনায় খুবই ভালো।ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার মধ্যে বিটু একবারই শুধু বাড়ি গেছিলো তার ঠাকুমা  অত্যন্ত অসুস্থ্য হয়ে তাকে দেখতে চাওয়ার কারণে।মৃত্যুর আগে ঠাকুমা তাকে জানিয়ে গেছিলেন রায় চৌধুরীবাবু তাদের জন্য যথেষ্ঠ করেছেন।ভবিষ্যতে তিনি কিছু বললে তার কথার যেন সে মান্যতা দেয়।বিটু তখন তার ঠাকুমাকে জানিয়ে দেয় যে সে তার বাবার দেখা পেয়েছে।সেকথা জেনে ঠাকুমা তাকে জানান,
-- তার ছেলের কথা জানার কোন ইচ্ছা তার নেই।সে যেন তার মাকে কোনদিন কষ্ট না দেয়।
  মৃত্যুর আগে ঠাকুমার দু'চোখ বেয়ে যে জলের ধারা নামে তাতেই বিটু বুঝে যায় ঠাকুমার চোখের এ জল তার একমাত্র সন্তানের জন্যই!
  কাজ মিটে যাওয়ার পর বিটু ফিরে আসে।দিনরাত এক করে পড়ার ফল সে হাতে হাতেই পায়, ব্যাঙ্গালোরে ভালো চাকরির অফার।মাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইলে মা রাজি হন না।রায় চৌধুরীবাবু এবার তাদের মনের কথা জানান। বিটু দু'বছর সময় চেয়ে নেয়। 
  মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিটু অনেক সময় তার পদমর্যাদার কথা ভুলে শ্রমিকদের সাথে সাধারণ একজন শ্রমিক হিসাবেই কাজে হাত লাগিয়েছে।উপর মহলের চোখ রাঙানি তাকে এ কাজ থেকে বিরত করতে পারেনি।নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে তাদের ভালো টিফিনের ব্যবস্থাও করেছে।চাকরি পাওয়ার প্রথম মাস থেকেই মাকে মাইনের চার ভাগের তিনভাগ টাকা পাঠাতে তার কখনোই ভুল হয়নি।
  দু'বছর বাদে সে তার কথা রাখে রায় চৌধুরীবাবুর খোঁড়া মেয়েটিকে বিয়ে করে সসম্মানে সে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়।

 ক্রমশ 

No comments:

Post a Comment