প্রকৃত বন্ধু
সদ্য বাবাকে হারানো আর হঠাৎ করেই স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশায় প্রথম অবস্থায় দোলন ভীষণভাবে মুষরে পড়ে। এত বড় সংসারের দায়িত্ব বিশেষত ভাইবোনগুলোকে কিভাবে একা তাদের জীবনে দাঁড় করাবে এই ভেবেই সে কোন কুল কিনারা পাচ্ছিল না। যদিও মা বেঁচে আছেন কিন্তু তিনি সংসারটা সামলানো ছাড়া আর কিইবা করতে পারবেন?
বাবার মৃত্যুর পর সংসারের সব দায়িত্ব এসে পড়ে দোলনের উপর।দোলন এখন একটা কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক।দীপকের সাথে বছর খানেক ধরে পরিচয়।দু'জন দু'জনকে ভালোবাসলেও কেউই মুখ ফুটে কাউকে বলেনি।
ভালোবাসা যেখানে শুরুর থেকেই গভীর হয় হয়ত সেখানে সত্যিই মুখ ফুটে পরস্পরকে বলার প্রয়োজন হয় না।দোলনের মা, একবোন আর ছোট দুই ভাই।
দোলন ও দীপক যখন মনেমনে ভাবছে তারা এবার একই ছাদের তলায় সংসার গুছিয়ে নেবে ঠিক সেই মুহূর্তেই দোলনের পিতৃ বিয়োগ। পুরো সংসারের দায়িত্ব এসে পড়লো দোলনের উপর।বাবা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করলেও মাইনে ছিল ভালো। সুতরাং বেশ ভালোভাবেই তাদের সংসার চলে যেত। সঞ্চয় খুব বেশি না হলেও মোটামুটি। কিন্তু সঞ্চয় দিয়ে এতগুলো মানুষের শুধু তো খাওয়াপরাই নয় অসুখবিসুখ সর্বোপরি তিন তিনটে ছোট ছোট ভাইবোনদের পড়াশুনার খরচ।
মায়ের সাথে পরামর্শ করে সঞ্চয়ে হাত না দিয়ে দোলন তার মাস মাইনের টাকাটা মায়ের হাতে দিয়ে কোনরকমে সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে বলে।দোলনের পাশে প্রকৃত বন্ধু হয়ে দাঁড়ায় দীপক।দীপকের সাথে এতদিন মিশেও দোলন জানতে পারেনি দীপকের মধ্যে বন্ধুত্বের এক সুন্দর রূপ লুকিয়ে আছে।এতদিন দীপককে কাছে পেয়েছে শুধু একজন প্রেমিক হিসেবে আর আজ দীপক তার কাছে সব চেয়ে কাছের এক বন্ধু।
দীপকের সাথে একান্তে আলাপচারিতায় দীপক দোলনকে জানিয়েছে,
--- ভালোবেসে বিয়ে করে একই ছাদের তলায় থেকে সংসার করার নামই শুধু ভালোবাসা নয়।সুখে-দুখে, বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে থেকে সুখী হওয়া কিংবা সেই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পথ দু'জনে মিলে খুঁজে বের করার নামই ভালবাসা, আজীবন দু'টি মন এক হয়ে থাকার নাম ভালোবাসা।তার জন্য একই ছাদের তলায় থাকার কোন দরকারই পড়ে না। মেশমশাইয়ের অবর্তমানে তুমিই এই সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তার মত করেই সামলাবে। আজীবন আমি তোমার পাশে থাকবো। সব দায়িত্ব, কর্তব্য শেষ হওয়ার পর সকলে যখন যে যার জীবনে দাঁড়িয়ে যাবে তখন নাহয় ভেবে দেখা যাবে আমাদের মাথার উপরের ছাদটা এক হবে কিনা।
দীপক যখন এই কথাগুলি বলছে সে দু'হাত দিয়ে দোলনের হাত দু'টিকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।দোলনের দু'চোখ বেয়ে নীরবেই অশ্রু পড়ে চলেছে।আজ যেন সে নূতন করে আবার দীপককে আবিষ্কার করলো।
স্বামী, প্রেমিক, বন্ধু সকলেই পায়।কিন্তু সেই স্বামী কিংবা প্রেমিক অধিকাংশ নারীর কাছে বন্ধু হয়ে উঠতে পারে না।একজন মানুষ আর একজন মানুষের কাছে যখন প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠতে পারে তাহলেই মনেহয় জীবনে সবকিছু পাওয়া হয়ে যায়।
No comments:
Post a Comment