Sunday, May 15, 2022

কঠোর কর্তব্য (৩০০ +শব্দ)

কঠোর কর্তব্য (সাহিত্যের সৌজন্যে)
  নন্দা মুখার্জী
  পড়ন্ত বিকেলের অস্তগামী লাল আভাটা পশ্চিম দিকের দেয়ালে এসে দেয়ালটাকেও লাল করে দিয়েছে।বিধাতা শুধু জীবনের লাল রংটা মুছে দিয়েছে সুজাতার জীবন থেকে। আটমাসের প্রেগন্যান্ট সুজাতা। বিয়ে হয়েছে মাত্র দুবছর। বিএসএফ এ কর্মরত সুকমলের মৃতদেহ সকালের উড়ানে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দুপুরের আগেই সেনাবাহিনীর লোকেরা সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেছে।নিজের লোক বলতে সুজাতার দূর সম্পর্কের এক দাদা ছিল সাথে।সুকমলের মা শয্যাশায়ী। প্রাণটাই শুধু আছে।কথা বলা বা কোনকিছু বোঝার ক্ষমতা বছর খানেক আগেই একটা অ্যাটাকের পর বন্ধ হয়ে গেছে।ঈশ্বর এখানে সুজাতাকে রক্ষা করেছেন যে ছেলের মৃত্যু সংবাদটা অন্তত নিজমুখে ছেলের মাকে দিতে হয়নি।
 তিনমাসের মধ্যেই সেনাবাহিনীর অফিস থেকে সমস্ত টাকাপয়সা সুজাতা পেয়ে যায়।ঠিক আরও তিনমাস পরে সুকমলের অফিসে সুজাতা চাকরি পেয়ে যায়।সুজাতার বিধমা মায়ের কাছেই কমলিকা থেকে যায়।ছমাস ট্রেনিং শেষে সুজাতার পোষ্টিং হয় বর্ডার এড়িয়ায়।মেয়ে কমলিকা তিনবছর বয়স থেকেই দার্জিলিং বোডিংয়ে।
 জীবনতরীর নৌকাটা যাত্রার শুরু হতেই যে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ভেঙ্গে না পড়ে শক্ত হাতে কষ্টটাকে বুকে চেপে রেখে সুজাতা তার হালটা নিজহাতে ধরেছিল বলেই সে আজ সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী আর মেয়ে কমলিকা সকলের সকল অনুরোধ উপেক্ষা করে মেডিকেল পাশ করেই সেনা ছাউনির একজন তরুণী ডক্টর।
 কয়েক বছর হল সে দিদিমাকে হারিয়েছে।অল্প বয়সেই এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসারেরা মা ও মেয়ের পোষ্টিং একই জায়গায় দিয়েছেন।কিন্তু তা স্বর্তেও কমলিকাকে যখন তখন যে কোন জায়গায় যেতে হয়।
  কমলিকা এখানে আসার পর থেকেই লক্ষ্য করে মায়েরই এক সহকর্মী মায়ের প্রতি বেশ দুর্বল।সে একটু অগ্রণী হয়েই তার সাথে বন্ধুত্ব করে জানতে পারে তিনিও অবিবাহিত।সারাজীবন একাই কাটিয়েছেন।  
 নিজেদের কোয়ার্টারে অধিক রাতে মায়ের একটি ফোন আসায় মা উঠে গিয়ে চাপাস্বরে তার সাথে কথা বলায় বুদ্ধিমতী কমলিকা বুঝে ফেলে মায়েরও সেই চাকরিতে জয়েন করার প্রথম থেকেই তার প্রতি দুর্বলতা রয়েছে।শুধুমাত্র মেয়েকে মানুষ এবং সমাজের ভয়ে একটা পবিত্র প্রেম পূর্ণতা পেলো না এতদিন।
  অনেক ঝড়-ঝাপটা,তর্ক-বিতর্ক আর ঝামেলার পর সে তার মাকে রাজি করাতে সমর্থ হয়।সারাজীবন যে মানুষটা একা একাই কাটিয়েছে এই বয়সে এসে নতুন করে জীবন থেকে কিছু পাওয়ার তার নেই।তবুও শেষ বয়সে শুধুমাত্র একজন সঙ্গী যার সাথে অন্তত দুটো মনের কথা বলা যায়।
 কোনদিন বাবা বলে কাউকে ডাকতে পারেনি সে।তাই মায়ের বিয়ে দিয়ে সাবলীলভাবেই মায়ের স্বামীকে বাবা ডেকে তার সারাজীবনের মনের খিদেটা মেটাতে পেরে আজ সে সত্যিই খুব খুশি।
 এখন তিনজনেই একই কোয়ার্টারে থাকেন।
  
  

No comments:

Post a Comment