সংসার কাহন (পর্ব ১)
পরিবারের সকলের ছোট আর অতি আদরের নন্দিতার বিয়ে হল অতি সাধারণ এক সরকারি কেরানীর সাথে।যেহেতু নন্দিতার বাবা সম্প্রতি রিটায়ার করেছেন আর শরীরও খুব একটা ভালো নয়;বড় তিন ছেলের মধ্যে দুজনেই বিবাহিত।তিন ছেলেই সুচাকুরে।কিন্তু নন্দিতার বাবা,মা মনেমনে ভেবেছিলেন তাদের অবর্তমানে যদি নন্দিতার উপরে তার দাদারা কর্তব্যে কোন গাফিলতি করে তাই তারা বেঁচে থাকতেই তাকে পাত্রস্থ করতে চেয়েছিলেন।নন্দিতার ইচ্ছা ছিল সেও নিজের পায়ে দাঁড়াবে।ছিল সব দাদাদের আপত্তি।কিন্তু সমেশবাবু কোন আপত্তিতেই কোন গুরুত্ব না দিয়ে নন্দিতার বিয়ে দিয়ে দেন সুনীলের সাথে।
পরিবারের ছোট মেয়ে যে বাড়িতে বউ হয়ে এলো সেখানে সে বড় বউ।তাই প্রথম প্রথম উঠতে বসতে কাজেকর্মে তাকে প্রতিটা মুহূর্তেই কটূক্তি শুনতে শুনতেই এক সময়ে সে সংসারে পাকা গিন্নী হয়ে উঠলো।কিন্তু যত সহজে কথাটা বলা গেলো তত সহজে সে এই জায়গাটা অর্জন করতে পারেনি।বিয়েদারি ছোট ননদ মাঝে মধ্যে বাপের বাড়িতে এসেও মা ও ছোটভায়ের কান ভারী করে তুলতো। বেচারা সুনীল!সে সকালে উঠেই ছুটতো বাজারে ।সেখান থেকে ফিরেই নাকেমুখে দুটি গুজেই অফিস।ফিরতে ফিরতে রাত নটা।কোন কোনদিন রাস্তাঘাটের কারণে হয়তো দশটাও বেজে যেত।নিজেদের ঘরে ঢুকে জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেস হয়েই চলে যেত মায়ের ঘরে।গল্প করতে করতে চা,বিস্কুট খেত।মায়ের সাথে কি গল্প হত কোনদিন নন্দিতা যেমন দেখতে যায়নি ঠিক তেমনই সুনীলের কাছে জানতেও চায়নি।আর সুনীল নিজের থেকেও তাকে কোনকিছু কোনদিন বলেনি।স্বামী ঘরে ফিরলে সংসারের নানান খুঁটিনাটি বিষয়গুলি কোনদিনও সুনীলের কাছে বলে তাকে বিব্রত করতে চায়নি।অথচ সে বুঝতে পারতো সুনীলের কথাবার্তায় সুনীল ঘটনা যা ঘটেছে হয়ত তার উল্টোটাই শুনে বসে আছে।এটা সে প্রথম প্রমাণ পায় সুনীল একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে এক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে ঘরে ঢোকে।
--- এই বিস্কুটটা আমাদের ঘরেই রেখো।তোমার যখন খেতে ইচ্ছা করবে এর থেকেই খেও।
--- কিন্তু আমি তো সারাদিনে একটা বিস্কুট খাই সকালে চা দিয়ে।আর তো আমি বিস্কুট খাই না।
--- না, মানে বলছিলাম আমাদের বাড়িতে বিস্কুট একটা কৌটোতেই রাখা হয়।
নন্দিতা তখনই বুঝতে পারে শ্বাশুড়ী মা একটা সাধারণ কথা ইনিয়েবিনিয়ে তিনি তার ছেলের কাছে লাগিয়েছেন।সে সুনীলকে বললো,
--- আমি জ্ঞানের থেকে দেখে আসছি আমাদের বাড়িতে যে কোন জিনিষ সংসারের জন্য কিনে আনলেই তা দুটি পাত্রে রাখা হয়।মা বলেন,এক পাত্রে সব ঢেলে রাখলে তাড়াতাড়ি সেটা ফুরিয়ে যায়।তাই তোমার মাকে জিজ্ঞাসা করেই আমি দুটি পাত্রে বিস্কুট রাখি।নিজের খাওয়ার জন্য নয়।তখন তো তিনি আমাকে কিছু বলেননি।এই সামান্য সাংসারিক কথাটাও তোমার কানে দিতে হল?
সুনীল কি বলবে বুঝতে না পেরে চুপ করেই ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।নন্দিতা তাকে ডাক দিয়ে বিস্কুটের প্যাকেটটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
--- এটা ও ঘরে নিয়ে যাও।আর কাল আমার জন্য এক প্যাকেট মুড়ি নিয়ে এসো।কারণ বিস্কুট দিয়ে চা খাওয়ার সখ আমার সারা জীবনের মত মিটে গেছে।
সুনীল সবই বুঝতে পারলো তবুও ব্যাপারটা হালকা করার জন্য বললো,
--- এত রাগ করনা,মায়ের বয়স হয়েছে।সবসময় সব কথা বুঝতেও পারেননা।কি বুঝতে কি বুঝেছেন তাই হয়তো ---
--- তাই বলে সংসারের এইসব ব্যাপার তোমায় বলবেন? আমার ঠাকুমা যতদিন বেঁচে ছিলেন,ঠাকুমার সাথে কি মায়ের ঝামেলা হয়নি?কিন্তু কোনদিন তাকে দেখিনি বাবা অফিস থেকে ফিরলে মায়ের সম্মন্ধে লাগাতে।
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment