সংসারের লক্ষী
--- ওহ্ বৌদি,তোমার এত ছোট ছোট বাটি মাজতে হয় কেন গো?এত বাটি দিয়ে তুমি রোজ কি করো?
রান্নাঘরে কাজ করতে করতে রুলিমি গৃহকর্তী অপরুপাকে কথাটা বলে।
-- আরে আমি তো বাটিতে বাটিতে সকলেরটা ঢেলে রাখি রে।
আসলে একসাথে বসে খেতে গেলে খেতে খেতে হাতায় করে খাবার দেওয়াটা আমি একদম পছন্দ করি না।আর তাছাড়া তোর দাদা,ছেলেমেয়ে যাকে যেটা দেবো ভাবি সেটা কড়ায় থেকে তুলে না রাখলে আমি পড়ে খুঁজেই পাই না।
--- মেয়ে,তোমারটাও আলাদা করে রাখো ?
--- ওমা!মেয়েটা আমি সকলের আগে তুলে রাখি।আমি সবসময় একটা কথা ভাবি মেয়েটা আমার পরের ঘরে চলে যাবে।কি খাবে?তাকে কি খেতে দেওয়া হবে সেতো কোনদিন মুখ ফুটে কোন কথা পরেরবাড়িতে বলতে পারবে না।যা দেবে তাই খেতে হবে তাকে।আর যখন তার সম্পূর্ণ নিজের সংসার হবে তখন সে সন্তান,স্বামীকে খাইয়ে যা থাকবে তাই তাকে খেতে হবে।আর ছেলে তো সবসময় আমি যতদিন সংসারে আছি আমার হাতেই খাবে।শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও ভালো খাবারটা খাবে।তাই আমার মনেহয় সংসারে ছেলেদের না মেয়েদেরকেই মায়ের ভালো খাবারটা দেওয়া উচিত।কিন্তু মানুষ সেটা বোঝে না।অধিকাংশ বাড়িতেই ছেলেদেরকেই ভালো খাবারটা দেয়।
--- আমিও তো তাই করি গো বৌদি।আগে ছেলের বাপের জন্য তুলে রাখি তারপর যেটা ভালো থাকে ছেলেটাকে দিই।আমরা মা,মেয়ে ভাগযোগ করে অল্পই খাই।
--- কেন করিস এটা?মেয়েটা বিয়ে হলে পরের ঘরে চলে যাবে।তাকে গুছিয়ে ভালো খাবারটা কে দেবে?সারাদিন পরিশ্রমের পর সে খাবে সকলের খাওয়ার পর যেটা পড়ে থাকবে সেটা।জামাই নিয়ে যখন তোর কাছে আসবে তখনও তুই জামাইকেই বড় মাছের পিসটা দিবি।মেয়েরা কি অপরাধ করে পৃথিবীতে এসছে যে তাদের ভালো খাবার,ভালো থাকার কোন অধিকার নেই?সংসারের ভালো সবকিছুতেই ছেলেদের অধিকার?না,আমি এই নীতিতে বিশ্বাসী নই।মেয়েরা হচ্ছে সংসারের লক্ষী।তাদের অবহেলা করলে সংসারে অমঙ্গল হয়।আমি একথা কখনোই বলছি না যে ছেলেকে আমি অবহেলা করি ।আমার বক্তব্য দুজনকেই আমি পেটে ধরেছি।আমার কাছে দুজনেরই সমান গুরুত্ব।একজনের জন্য আর একজনকে আমি অবহেলা করতে পারবো না।একদিন ছেলেকে বড় মাছের পিসটা দিই তো পরেরদিন মেয়েকে।আর ঠিক তার পরেরদিন তোর দাদাকে।
--- আর তুমি?
--- আমার মায়ের কাছ থেকে এ শিক্ষা পেয়েছি।মা দাদাকে আর আমাকে সমানভাবেই সবকিছু ভাগ করে দিতেন।তাই খাবারের প্রতি আমার কোন আর লোভ নেই।প্রচুর খেয়েছি বাপের বাড়িতে।তবে হ্যাঁ ওরা যদি খেয়াল করে আমার থালায় কম সব্জি বা ছোট মাছের পিস রয়েছে তখন তিনজনে মিলেই আমার থালায় তাদের খাবারের থেকে দিতে শুরু করে দেয়।
তারপর হাসতে হাসতে বলতে লাগেন,
--- কার্যক্ষেত্রে তখন দেখা যায় আমার খাবারটাই বেশি হয়ে গেছে।কাউকে তুলে দিতে গেলেই তার মুখ হাড়ি হয়ে যায়।তবে কি জানিস সংসারটাই হচ্ছে মানবিকতা,মনুষ্যত্ববোধ শেখার প্রাথমিক স্থর।সংসারে একজনের সঠিক মূল্যায়ন তুই যখন করবি সেও কিন্তু তোর সঠিক মূল্যায়নটা করবে।
--- বাব্বা বৌদি পেটে একটু বিদ্যে ছিল তাই তোমার এই বড় বড় কথাগুলি বুঝতে পারলাম।তবে একটা জিনিষ খুব ভালো বুঝেছি আমরা মেয়েরা নিজেদের সংসার থেকেই মেয়েদেরকে বঞ্চিত করতে থাকি।তোমার মত চিন্তাধারা যদি সকলের থাকতো তাহলে হয়ত অনেক মেয়ের জীবনেই দুঃখের পাহাড় জমা হত না।আমি আজ থেকেই তোমার কথাগুলি মাথায় রেখে মেয়েটার খাবারদাবারের দিকে লক্ষ্য রাখবো।
--- শুধু খাবারদাবারই নয় ছেলের জন্য যা যা করছিস ঠিক তাই তাই মেয়েটার জন্যও করিস।আরে তুই তো মা।তোর দায়িত্ব কর্তব্য দুজনের প্রতিই সমান।
--- বৌদি, আজকে তোমায় একটা প্রণাম করি।আমি জানি তুমি প্রণামট্রনামে বিশ্বাস করো না।কিন্তু আজ আমায় বাঁধা দিও না।তোমার কথাগুলো আমার মনের একটা অন্ধকার দিক খুলে দিয়েছে।
রুলিমি ঢিপ হয়ে অপরূপাকে প্রণাম করে।
No comments:
Post a Comment