Monday, March 21, 2022

সন্তানের ভালোবাসা

সন্তানের ভালোবাসা

   এক প্লেট পকোড়া!!দুই ভাইবোন আনন্দে উচ্ছল হয়ে মায়ের হাতে পকোড়ার প্লেট দেখে তক্তপোষ থেকে সঞ্জীব আর লাবনী মায়ের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।মা লতিকা বলে 
-- এর মধ্যে দশটা পকোড়া আছে।এক এক জনের পাঁচটা করে।
 লাবনীর বয়স এই আট বছর।আর সঞ্জীব ছয়।লাবনী তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
--- তোমার আছে মা?
--- আছে রে আছে।আমারটা রান্নাঘরে রেখে এসেছি।আমি চা করতে করতে খেয়ে নেবো।তোরা দুজনে এটা খেয়ে পড়তে বসবি।
  কথা কটি বলে লতিকা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।আজ মনটা তার খুবই ভালো আছে।অনেকদিন পর ছেলেমেয়ের মনের আশা পূরণ করতে পেরে সে খুবই খুশি।
  আজ দুবছর হল তপন হার্ট অ্যাটাকে হঠাৎ করেই চলে গেছে।সামান্য একটা দোকানে কাজ করে যে অল্প বিস্তর টাকা তপন রোজগার করতো তাতে কষ্ট করে দুই সন্তান সহ তারা ভালোই ছিলো।অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী কিন্তু তার মধ্যেও ভালোবাসার কোন খামতি ছিল না।বাড়িটা ছিলো নিজেদের। বংশ পরম্পরায় জমি দখল করে থাকতে থাকতে কোন এক সময় সে বাড়িটা নিজেদেরই হয়ে গেছে।সরকার থেকে এই দখলকৃত জমির উপর তৈরি করা বাড়ির মালিকদের মালিকানা স্বত্ব স্বরূপ দলিলও দিয়েছে।
 হঠাৎ করেই তপনের চলে যাওয়ার পরে লতিকা অথৈ সমুদ্রে পড়ে।জমানো পুঁজি তো কিছুই নেই।কোনরকমে পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর পরই লতিকা দুটো বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থা করে নেয়।এখন সে বেশ কয়েকটি বাড়িতেই রান্নার কাজ করে।দুবেলা অন্নের অভাব তার নেই ঠিকই।বাচ্চা দুটিকে স্কুলেও ভর্তি করে দিয়েছে শুধু নয় একজন গৃহ শিক্ষকের কাছে তাদের পড়তেও পাঠায়।এখন সে চারটে বাড়িতে শুধুমাত্র রান্নার কাজ করে।রোজই কোন না কোন বাড়ি থেকে কিছু না কিছু খাবার সে পায়।সেগুলো সব সময়ের জন্যই সে বাড়িতে নিয়ে আসে।কিন্তু অনেক সময় ছেলেমেয়ের সখ,আহ্বলাদগুলো পূরণ করে উঠতে পারে না।তাই মাঝে মধ্যে তার মনটা খারাপ হয়ে যায়।
 এবারে পুজোর সময় বেরিয়ে বাচ্চাদুটি ফুটপাথের উপরে পকোড়া বিক্রি হচ্ছে দেখে দুজনেই পকোড়া খেতে চেয়েছিল।লতিকা এগিয়েও গেছিলো কিনবে বলে।পকোড়াগুলো ছিল বেশ বড় বড়।এক একটা দাম ছিলো কুড়ি টাকা করে।ব্যাগ খুলে লতিকা দেখে তার ব্যাগে আছে মাত্র তিরিশটি টাকা।তাই সেদিন সে তাদের আর পকোড়া কিনে দিতে পারে না।কিন্তু মনের মধ্যে থেকে যায় একটা ভীষণ চাপা কষ্ট!
 আজ ছিল রমেনবাবুর ছেলের মুখেভাত।সেই প্রথম থেকেই এই বাড়িতে লতিকা কাজ করছে।রমেনবাবু এবং তার স্ত্রী লতিকাকে খুবই ভালোবাসেন বিপদে-আপদে নানানভাবে লতিকাকে সাহায্যও করেন।সকাল থেকে অনুষ্ঠান বাড়িতে যন্ত্রের মত খেটে চলেছে লতিকা।এই অনুষ্ঠানে স্টাটারে পকোড়া ছিল।নিমন্ত্রিত অতিথিদের অনেকেই না আসাতে প্রচুর খাবার বেঁচে যায়।অনেকেই খেয়ে আবার পার্সেল নিয়ে বাড়ি ফেরে। লতিকাও তিনটে পার্সেল পায়।সাথে বেশ কয়েকটা পকোড়া।
 সঞ্জীব আর লাবনী পকোড়া খেতে খেতে হঠাৎ তাদের মনেহয় মা বোধহয় তাদের মিথ্যা কথা বলেছে।মায়ের জন্য মনেহয় পকোড়া নেই।দুজনেই দুটি পকোড়া হাতে নিয়ে রান্নাঘরে ছুটে আসে।মাকে দুজনে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে মুখের সামনে পকোড়া ধরতেই লতিকা দুজনকেই দুহাতে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,
--- তোরা দুজনে মন ভরে পকোড়া খা আর আমার জন্য থাক তোদের এই ভালোবাসাটা।


No comments:

Post a Comment