ছোটবেলা থেকেই দুই ভাই ছিল হরিহর আত্মা।মাত্র দেড় বছরের ছোটবড়।ভায়ের যেমন দাদাকে না হলে চলে না দাদারও ঠিক ভাইকে না হলে একমুহুর্ত চলে না।একসাথে খাওয়া,একসাথে ঘুমাতে যাওয়া সবকিছুই সেই ছেলেবেলা থেকে একসাথেই।বিজয় বড় আর সুজয় ছোট।
বড় জনের বিয়ের পরও এই সম্পর্কের মধ্যে কোন চিড় ধরেনি।বৌদির সাথে সুজয়ের খুবই ভালো সম্পর্ক হয়ে ওঠে।একদম বন্ধুর মত দুজনের কথাবার্তা।বিজয়েরও খুব ভালো লাগে তার স্ত্রীর সাথে ভায়ের এই বন্ধুসুলভ সম্পর্ক।বিজয়ের মা কোনদিনও তার রান্নাঘর ছাড়া অন্য দিকে নজর দেননি ছেলের বিয়ের পরেও না।বড়বৌ আল্পনা রান্নাবান্না করলেও তিনি সব সময়ের জন্যই ওই রান্নাঘরে থেকেই তাকে নানানভাবে সাহায্য করে যান।
সুজয়ের বিয়ে ঠিক হয়।তার বায়নাতেই বৌদি নিজে মেয়ে দেখে পছন্দ করে।বারবার বলা সর্তেও সুজয় মেয়ে দেখতে যায় না তার সেই এক কথা,
--- যেখানে বৌদি মেয়ে পছন্দ করে এসেছে সেখানে আমি কি করতে যাবো?আর এইজন্যই তো আমি বৌদিকে পাঠিয়েছি মেয়ে পছন্দ করতে।আমি কতক্ষণ আর বাড়ি থাকবো?বৌদিই তো তাকে সাথে নিয়ে সব সময় থাকবে।
সুজয়ের বিয়ে হয়ে গেলো।যেহেতু তাদের বাবা নেই তাই সুজয়ের বিয়েতে তার মায়ের কাজ করলো বৌদি আল্পনা।বিজয়ের বিয়েতে অবশ্য মায়ের কাজ করেছিলেন তাদের মামী।এবার সুজয়ের কথামত আল্পনায় সব দায়িত্ব পালন করে।
বিয়ের পরে দিনপনের বেশ আনন্দে হাসিতে জা,ভাসুর,স্বামীর সাথে বিনিতার কেটে গেলেও একদিন হঠাৎ করেই বিনিতা তার স্বামীর প্রতি ক্ষেপে যায়।সুজয়ের একটায় অপরাধ সে অফিস থেকে ফেরার পর বৌদিকে চা করতে বলে বিনিতা তখন নিজে গিয়ে চা করে এনে সুজয়কে দেয়।সুজয় চা মুখে দিয়েই বলে,
--- এটা তো আমার বৌদির হাতের চা নয়!তুমি কেন চা করতে গেলে?অফিস থেকে ফিরে বৌদির হাতের চা না খেলে আমার ঠিক ভালো লাগে না।
ব্যাস শুরু হল সংসারে অশান্তি। জায়ে জায়ে মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধের পথে।মায়ের পরামর্শে দুই ভাই শুধু মাকে জানিয়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে একই সাথে দীঘায় গিয়ে উঠলো।ফোনের সুইচ বন্ধ।
রাতটা কোন রকমে কাটলে সকাল হতেই বিনিতা ছুটে এলো তার বড় জায়ের কাছে।কান্নাকাটি করে হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে দিলো। আল্পনা তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অতি শান্ত স্বরে বললো,
-- আমার মনেহচ্ছে ছোট ওরা দুজনে একসাথেই কোথাও গেছে।আসলে দুই ভায়ের মধ্যে তো খুব ভালো সম্পর্ক কিন্তু কিছুদিন যাবৎ আমাদের জন্য সেই সম্পর্ক একটু হলেও আলগা হয়েছে।ওরা আমাদের জব্দ করতেই এ কাজ করেছে।মা মনেহয় ব্যাপারটা জানেন।তাই তিনি চুপচাপ আছেন।ওরা দুইভাই যদি বন্ধু হতে পারে আমরা দুই জা কেন বন্ধু হয়ে থাকতে পারবো না?আয় আজ থেকে তুই আর আমি একে অপরের বন্ধু হয়ে থাকি।
বিনিতা বললো,
-- তুমি যা বলছো সেটা কি ঠিক?ওর কোন বিপদ হয়নি তো?
--- আরে না, কোন বিপদ হয়নি।আমি মাকে চুপচাপ দেখেই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি।
দুপুরবেলা খাবার টেবিলে দুই জা শ্বাশুড়ীকে দেখিয়ে দেখিয়ে গল্প করে হেসে হেসে একে অপরের গায়ে যেন ঢলে পড়ছে।শ্বাশুড়ী তা দেখে নিজে তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে ঘরে দরজা বন্ধ করলেন।তিনি ফোন করে চাপা স্বরে ছেলেদের সব জানালেন।
রাতে খাওয়ার আগেই কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দুই জা দরজা খুলতে না গিয়ে গল্প করতে বসে গেলো।শ্বাশুড়ী মা গিয়ে দরজা খুললেন।দুই ভাই হাসতে হাসতে এসে ঘরে ঢুকলো।
No comments:
Post a Comment